কোথা ছায়ার কোণে দাঁড়িয়ে তুমি কিসের প্রতীক্ষায় কেন আছ সবার পিছে । যারা ধুলা - পায়ে ধায় গো পথে , তোমায় ঠেলে যায় , তারা তোমায় ভাবে মিছে । আমি তোমার লাগি কুসুম তুলি , বসি তরুর মূলে , আমি সাজিয়ে রাখি ডালি— ওগো , যে আসে সেই একটি - দুটি নিয়ে যে যায় তুলে , আমার সাজি হয় যে খালি । ওগো , সকাল গেল , বিকাল গেল , সন্ধ্যা হয়ে আসে , চোখে লাগছে ঘুমঘোর । সবাই ঘরের পানে যাবার বেলা আমায় দেখে হাসে , মনে লজ্জা লাগে মোর । আমি বসে আছি বসনখানি টেনে মুখের'পরে যেন ভিখারিনীর মতো— কেহ শুধায় যদি ‘কী চাও তুমি ' থাকি নিরুত্তরে করি দুটি নয়ন নত । আজি কোন্ লাজে বা বলব আমি ‘তোমায় শুধু চাহি ' , আমি বলব কেমন করে— শুধু তোমারি পথ চেয়ে আমি রজনী দিন বাহি , তুমি আসবে আমার তরে । আমার দৈন্যখানি যত্নে রাখি , রাজৈশ্বর্যে তব তারে দিব বিসর্জন— ওগো , অভাগিনীর এ অভিমান কাহার কাছে কব , তাহা রইল সংগোপন । আমি সুদূর - পানে চেয়ে চেয়ে ভাবি আপন - মনে হেথা তৃণে আসন মেলে— তুমি হঠাৎ কখন আসবে হেথায় বিপুল আয়োজনে তোমার সকল আলো জ্বেলে । তোমার রথের'পরে সোনার ধ্বজা ঝলবে ঝলমল , সাথে বাজবে বাঁশির তান— তোমার প্রতাপ - ভরে বসুন্ধরা করবে টলমল , আমার উঠবে নেচে প্রাণ । তখন পথের লোকে অবাক হয়ে সবাই চেয়ে রবে , তুমি নেমে আসবে পথে ; হেসে দু হাত ধরে ধুলা হতে আমায় তুলে লবে— তুমি লবে তোমার রথে । আমার ভূষণবিহীন মলিন বেশে ভিখারিনীর সাজে তোমার দাঁড়াব বাম পাশে , তখন লতার মতো কাঁপব আমি গর্বে সুখে লাজে সকল বিশ্বের সকাশে । ওগো , সময় বয়ে যাচ্ছে চলে , রয়েছি কান পেতে— কোথা কই গো চাকার ধ্বনি । তোমার এ পথ দিয়ে কত - না লোক গর্বে গেল মেতে কতই জাগিয়ে রনরনি । তবে তুমিই কি গো নীরব হয়ে রবে ছায়ার তলে , তুমি রবে সবার শেষে— হেথায় ভিখারিনীর লজ্জা কি গো ঝরবে নয়নজলে । তারে রাখবে মলিন বেশে ?