পোকা

পোকা

রিক্তা ধীরে-ধীরে উঠে দাঁড়াল। অন্তহীন ক্লান্তি। হৃতসর্বম্বের মতো অবসাদ। বিকেল পাঁচটা বাজে। তার কাজ শেষ হয়েছে। হলঘরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে আরও কয়েকজন ক্লান্ত মানুষ। তাদেরও ছুটি হয়েছে। এবার তারাও বাড়ি যাবে। প্রত্যেকের মাথার পিছনে একটা করে উড়ন্ত পোকা। কেউ কারও সঙ্গে কথা বলল  না, তাকাল না পর্যন্ত। বিষণ্ণ, উদাস মুখে তারা দরজার সামনে এসে দাঁড়াল সারিবদ্ধভাবে। নিশ্ৰুপ। টাইম লক লাগানো দরজা ধীরে সরে গেল। তার পর চলন্ত করিডোর। দুশো মিটার দূরত্বে একটা স্থির প্ল্যাটফর্ম। নিঃশব্দে নেমে পড়ল সবাই। সামনেই এসকালেটার। ক্লান্ত কয়েকজন মানুষ আগুপিছু সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে পড়ল। তাদের মাথার পিছনে, দু-ফুট দূরত্বে সেই পোকা। দেখছে, জরিপ করছে।

দুশো মিটার উচ্চতায় মুক্তি। খোলা আকাশের নীচে পৃথিবী। চারদিকে গাছপালা। প্রথম শীতের হিমেল বাতাস বইছে। অন্ধকার নামছে মিহি ঝরোখার মতো।

পোকাগুলো কখনও শব্দ করে না। শুধু পিছু নেয়, শুধু চেয়ে থাকে, শুধু জরিপ করে।

কখনও একা হতে পারে না রিক্তা, কখনও নিশ্চিন্ত হতে পারে না। সারাক্ষণ ওই পোকা তাকে দেখছে আর দেখছে। তার প্রতিটি পদক্ষেপ, নড়াচড়া, তার হার্টিবিট, রক্তচাপ সব কিছুর খবর পাঠাচ্ছে একটি স্টোর হাউসে। চব্বিশঘণ্টার মনিটারিং। সে শুনেছে, সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কলকবজায় তৈরি এইসব পোকারা মানুষের ইচ্ছাশক্তি, ক্ষুদ্র পিপাসা এবং এমনকী ঘুমের মধ্যে দেখা স্বপ্ন অবধি টের পায়। টের পায় বিষণ্ণতা, আনন্দ, উদ্দীপনা। মাথার পিছনে সবসময়েই উড়ছে, অনুসরণ করছে, এক পলকের জন্যও তাকে এড়ানোর জো নেই।

বাইরে গাছপালার ভিতর দিয়ে সরু একটা রাস্তা। জঙ্গলের ভিতর দিয়ে চলে গেছে। এই রাস্তায় কোনও লোক চলাচল নেই। কোনও গাড়ি চলে না। আলো নেই, পথ ঢেকে যাচ্ছে ঘাসে, আগাছায়। রিক্তা বাঁদিকে মস্ত গ্যারেজে ঢুকল। ভিতরে ঢুকবার দরকার নেই। দরজার মুখেই একটা প্যানেল। তাতে নম্বরের চাবি। সবাই সার দিয়ে দাঁড়িয়ে নিজের নিজের কোড নম্বর স্পর্শ করে বেরিয়ে যাচ্ছে। আর একটা দরজা দিয়ে গ্যারেজ থেকে বেরিয়ে আসছে গাড়ি। আপনা থেকেই।

রিক্তার গাড়িটা আর সকলের মতোই। ছোট, পলকা, গাড়ি চালানোর দরকার হয় না। কোড টিপলেই ছোট গাড়িটা টুক করে ওপরে উঠে গন্তব্যের দিকে ভোঁ করে উড়ে যায়। শব্দ নেই, কাঁপুনি নেই, অন্ধকার, শূন্য ভেদ করে রিক্তার গাড়ি যখন ছুটছে, তখনও বড় অবসাদ আচ্ছন্ন করে আছে তাকে। সে একবার পিছু ফিরে পোকাটাকে দেখল। দু-ফুট দূরত্বে পোকাটা স্থির হয়ে আছে। দেখছে, জরিপ করছে।

আশেপাশে তার মতো আরও অনেক গাড়ি বিভিন্ন দিকে উড়ে যাচ্ছে। এসব গাড়িতে কোনও জ্বালানি নেই। আছে খুব ছোট পরমাণু ইঞ্জিন। আছে আশ্চর্য বুয়োয়েনসি স্ট্যাবিলাইজার। আছে অতি ক্ষুদ্র কম্পিউটার। আছে অত্যাধুনিক যন্ত্র মস্তিষ্ক। আছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ। আছে মিউজিক সিস্টেম, টেলিফোন, টিভি এবং অতি আরামদায়ক আসন। এই গাড়ি কখনও দুর্ঘটনায় পড়বে না। এর যন্ত্র কখনও খারাপ হয় না। আর পরস্পরকে কখনও ধাক্কা মারে না গাড়িরা, বিনীতভাবে কাটিয়ে যায় এ ওকে, ও একে।

রিক্তার কিছু করার নেই। সে চোখ বুজে বসে রইল। রিক্তা তার বাঁ-হাঁটুর কাছে একটা সুড়সুড়ি টের পাচ্ছিল। চোখ চেয়ে যা দেখল, তা আতঙ্কিত হওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। একটা কাঁকড়াবিছে হাঁটুর ওপর উঠে এসেছে পাতলুন বেয়ে। রিক্তা সভয়ে। চেয়ে ছিল। এ ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। কোথা থেকে এল বিছেটা? আচমকাই পোকাটা ছুটে এল সামনে। রিক্তা দেখতে পেল পোকাটার মুখে ঝকঝক করছে একটা সরু ছুঁচের মতো কিছু। চোখের পলকে বিছাটার ওপর গিয়ে পড়ল পোকাটা। তারপর ঘুচে বিধে সেটাকে নিয়ে গেল রিক্তার পিছনে, মাথার দু-ফুট দূরত্বে। রিক্তা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল, পোকার মুখে বিছেটা ছটফট করছে। তারপর। ধীরে ধীরে বিছেটা নির্জীব হয়ে গেল। স্থির হয়ে গেল। তারপর রিক্তা দেখল, বিছের নিথর দেহটা যেন এক তীব্র তাপে কুঁকড়ে ছোট হয়ে যাচ্ছে। অঙ্গার হয়ে যাচ্ছে। ছাইগুলো। খসে পড়ল নীচে। একটা সাকশন যন্ত্র চালু হল পায়ের তলায়।

ছাইগুলো উধাও হয়ে গেল। ঘটনাটার আর কোনও চিহ্ন রইল না। রিক্তা চোখ মেলে বসে রইল। জঙ্গলের ওপর দিয়ে গাড়িটা উড়ে যাচ্ছে। নীচে ঘনায়মান অন্ধকার। জঙ্গল বাড়ছে। পৃথিবী সবুজ হচ্ছে ক্রমে। জনসংখ্যা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। পৃথিবীতে খাদ্য ও সম্পদের আর কোনও অভাব নেই। অভাব নেই স্বাধীনতারও। রিক্ত কি স্বাধীন? সে একবার পোকাটার দিকে ফিরে চাইল। মাথার দু-ফুট পিছনে স্থির হয়ে ভেসে আছে। রক্ষক? না, গত দশ বছরেও রিক্তা ঠিক বুঝতে পারল না পোকাটার সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক তৈরি হয়েছে কি না। এক হাজার মিটার নীচে গাছপালায় ঘেরা একটা বাড়ি হঠাৎ ঝলমল করে উঠল। বাড়ির ছাদের ওপর সবুজ আলোয় লেখা, সেক্টর থ্রি। এটাই রিক্তার বাড়ি। একটা আশিতলা স্বয়ংসম্পূর্ণ আবাস। ছাদে গাড়ি নামা আর রাখার জায়গা। নীচে হাজারো ফ্ল্যাট। নীচের

তলায় বাজার, হাসপাতাল, পোস্ট অফিস, সুইমিং পুল ইত্যাদি।

মানুষ একা থাকে। কারও সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রচিত হয় না। বিয়ে নেই। তবে নরনারীর মিলন অবাধ ও ইচ্ছাধীন। প্রয়োজনে সন্তান হয় বটে, কিন্তু সন্তানের সঙ্গে মায়ের কোনও সম্পর্ক নেই। সন্তান বড় হয় ক্ৰেশে এবং পরবর্তীকালে শিশু নিকেতনে। মা বা বাবার পরিচয় বলে তার কিছু থাকে না। রিক্তার গাড়ি ছাদে নেমে এল। দরজা খুলে গেল। অবসন্ন রিক্তা নেমে এল। পাশেই আর-একটা গাড়ি থেকে দুটি মানুষ নেমেছে। একজন পুরুষ, অন্যজন মেয়ে। তারা কথা বলছে না। নেমে সিঁড়ির দিকে হেঁটে চলে গেল। ওরা হয়তো রাতে একসঙ্গে থাকবে। কেউ কারও নাম বা পরিচয়ও হয়তো জানতে চাইবে না। সকালেই যে যার নিজের জায়গায় চলে যাবে। জীবনে হয়তো আর দেখাও হবে না।

বাড়ির গঠন সাধারণ। যেমনটা হয় আজকাল। একটা চত্বরঘিরে বাড়িটা চৌকোনো গড়ে ওঠে। মাঝখানটা ফাঁকা। অনেকখানি জায়গা মাঝখানে। ওপর থেকে নীচ অবধি দেখা যায়। এই ফাঁকা জায়গাটার মাঝখানে কয়েকটা লিফট বিদ্যুৎগতিতে ওঠানামা করছে। লিফট পর্যন্ত যাওয়ার জন্য আছে সরু ক্যাটওয়ে। ক্যাটওয়েগুলো কাঁচের টিউবের মতো, ওপর–নীচ–আশপাশ সব স্পষ্ট দেখা যায়। আশিতলা থেকে নীচের দিকে তাকালে একটু ভয়-ভয় করে রিক্তার। হাতে সময় থাকলে সে চলন্ত সিঁড়ি দিয়েই নামে। আজ তার শরীরে বড় অবসাদ। সে ক্যাটওয়ে দিয়ে হেঁটে লিফটের কাছে এল। কাঁচের স্বচ্ছ লিফট। রিক্তার ভয়-ভয় করে।

লিফট জানে সে পঁচিশ তলায় যাবে। তার বশংবদ পোকাটা সম্পূর্ণ কোডেড। ওই পোকার কোড বুঝে নিয়ে লিফট নামতে লাগল অনেকটা পতনের মতো দ্রুতবেগে।

তারপর থামল। ক্যাটওয়ে ধরে এসে চলন্ত করিডোরে রাখল সে। নিজের ফ্ল্যাটের সামনে এসে করিডোর থেকে প্ল্যাটফর্মে উঠল।

দরজায় তালা চাবি কিছু নেই। এখানেও কোড। সে দরজার সামনে দাঁড়াতেই দরজা খুলে গেল।

একখানা ছোট বসবার ঘর। একখানা আরও ছোট শোওয়ার ঘর। খেলাঘরের মতো ছোটো একটু রান্নার জায়গা। টয়লেট। কাঁচের শার্সি দিয়ে একটা দেওয়াল তৈরি হয়েছে। পরদার ব্যবস্থা নেই, কিন্তু সুইচ টিপলেই স্বচ্ছ  কাঁচ সম্পূর্ণ অস্বচ্ছ হয়ে যায়। ঘরে ঢুকতেই একটা রোবট এগিয়ে এসে তার পোশাক খুলে দিল। পরিয়ে দিল ঘরের সংক্ষিপ্ত পোশাক। চায়ের জল চড়িয়ে দিল রান্নাঘরের আগুনবিহীন উনুনে। আজকাল আগুনের চল নেই। রান্না হয় একটা ইথারিয় কম্পনে।

রিক্তা দু-চুমুক চা খেল। রোবট বাথরুমে গিয়ে টাবে তার জন্য সঠিক তাপমাত্রায় স্নানের জল তৈরি করল। চালু করল গানের ক্যাসেট। তারপর তার গা ম্যাসাজ করে দিতে লাগল। রোবটের হাতে প্যাড লাগানো। ম্যাসাজটা চমৎকার। ম্যাসাজটা নানারকম হয়। সেইভাবে প্রোগ্রাম করে দিতে হয় রোবটকে।

ম্যাসাজের মাঝপথে হঠাৎ প্রোজেক্ট কোনও সঙ্কেত দিল, টুং, দেওয়ালের গায়ে হঠাৎ একটা চৌখুপি আলোকিত হল। একটা মেয়ের মুখ। একে চেনে না রিক্তা।

মেয়েটা তার দিকে চেয়ে হঠাৎ ধমকের স্বরে বলল , আমি কে?

রিক্তা বলল , তার আমি কী জানি! আই ডি–কে জিগ্যেস করো।

আই ডি হল আইডেন্টিটি ডিপার্টমেন্ট। মানুষ একা থাকতে–থাকতে মাঝে-মাঝে একটু নিজেকে হারিয়ে ফেলে। আজকাল প্রায়ই এটা হয়। আই ডি তখন তার পরিচয় ধরিয়ে দেয়।

মেয়েটা রাগের গলায় বলল , ওরা ভুল বলছে।

কী বলছে? বলছে আমি জবা।

তা হলে তাই।

না। আমি জবা নই। আমি পূর্ণা। আমার সেক্টর ফোর। আই ডি বলছে থ্রি। ওরা ভুল বলছে।

ওরা যা বলছে তাই ঠিক। মেনে নাও।

কী করে মানব? আমি তো পূর্ণা।

না, তুমি জবা।

কিছুতেই না। তুমি দেখতে বেশ সুন্দর তো!

রিক্তা জঁ কোঁচকাল, সুন্দর! সুন্দর দিয়ে আজকাল কিছু হয় না।

কেন হবে না? তুমি সুন্দর।

তুমিও সুন্দর। আজকাল সবাই সুন্দর। যারা সুন্দর নয়, তারাও কসমেটিক সার্জারি করে সুন্দর হয়ে যায়।

না, তুমি অন্যরকম সুন্দর। আমার ঘরে আসবে? একাত্তর তলায়, ফ্ল্যাট বি ফোর। চার নম্বর ক্যাটওয়ে।

আমি খুব টায়ার্ড।

আমি যে জবানই, কী মুশকিল!

না হলেও বা। যা-ই হও, কিছু যায় আসে না।

তুমি কে?

আমি রিক্তা।

আমি তোমার কাছে একটু আসতে পারি?

না। আমি ক্লান্ত। আমি এখন স্নান করব। তারপর ঘুমোব।

ঘুমোবে? কী আশ্চর্য, আমি ঘুমুতে পারি না।

ঘুমোনো তো সোজা। স্বপ্ন–পালঙ্কে শুয়ে পড়লেই ঘুম আসবে।

কত শুয়েছি, তবু ঘুমোতে পারি না।

হতেই পারে না। স্বপ্ন পালঙ্ক অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি। ঘুম হবেই।

আমার হয় না।

তাহলে হাসপাতালে যাও।

ভয় করে।

ভয়! ভয় কীসের?

মন্দিরা তো হাসপাতালে গিয়েছিল। ওরা ওকে পাঁচ বছরের জন্য ঘুম পাড়িয়ে দিল। বলল , ওর যা সব নার্ভের কমপ্লিকেশন তা পাঁচশো বছর ঘুমোলে তবে ঠিক হবে।

আমাকেও যদি তাই করে?

করুক না। ভালোই তো।

আমি অতদিন ঘুমোতে চাই না। ওটা তো মৃত্যু। পাঁচশো বছর পর কি আমার মনে থাকবে আমি কে?

তোমার তো এখনও মনে নেই তুমি কে।

আমি পূর্ণা।

আই ডি তো তা বলছে না।

ওরা ভুল বলছে।

রিক্তা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রোবটকে বলল , ফোনটা অফ করে দাও।

ফোনটা অফ হয়ে গেল।

মাঝে-মাঝে সমস্যাটা রিক্তারও হয়। দিনের পর দিন কেউ তার নাম ধরে ডাকে না। কেউ কথা বলে না। মুখের দিকে তাকায় না। তখন মাঝে-মাঝে হঠাৎ মনে হয়, আরে, আমি কে?

রিক্তা স্নান করল। রোবট তার খাবার তৈরি করে সাজিয়ে দিল টেবিলে। একটু স্যুপ, একটু সবজি সেদ্ধ। খাওয়ার পর রিক্তা তার স্বপ্ন–পালঙ্কে শুয়ে পড়ল। ঘুমের আগে দেখে নিল, পোকাটা তার ব্রহ্মতালুর ঠিক দু-ফুট পিছনে ভেসে আছে।

স্বপ্ন–পালঙ্ক এক আশ্চর্য প্রযুক্তির ফল। এই পালঙ্কে শুলেই একটা মৃদু কম্পন, শব্দ, সুর ও আবেশ মানুষকে আচ্ছন্ন আর শিথিল করে দেয়। তবু মেয়েটার ঘুম আসছে না কেন? রিক্তা ঘুমিয়ে অনেকক্ষণ ধরে একটা স্বপ্ন দেখল। পৃথিবীতে কেউ নেই। সে একা বেঁচে আছে। একদম একা। সে একটা নদীর ধারে মৃদু পায়চারি করছে। তার মাথার পিছনে পোকাটা। দেখছে, জরিপ করছে। হঠাৎ রিক্তা পোকাটার দিকে চেয়ে বলল , এখনও কেন আমাকে অনুসরণ করছ? কার জন্য? আমি তো একা…একা…একা…

পোকাটা তবু বিচলিত হল না।

রিক্তা তখন মিনতি করে বলল , এবার ছাড়ো আমাকে। একবারটি ছাড়ো। আমাকে সত্যিকারের একা হতে দাও। একবারটি…

পোকাটা নড়ল না। রাত দুটোয় ঘুমের চটকটা ভেঙে গেল রিক্তার। সে উঠে বসল। রোবট এগিয়ে এল সঙ্গে সঙ্গে।

রিক্তা বলল , শোনো, জবা নামে মেয়েটিকে ট্র্যাক করো। আমাকে ওর ঘরে প্রোজেক্ট করো।

দেওয়ালে ছবি ভেসে উঠল। জবা চুপ করে একটা চেয়ারে বসে আছে।

জবা! এই জবা!

আমি পূর্ণা।

আমি তোমার ঘরে একটু আসতে পারি?

এসো। আমার খুব অদ্ভুত লাগছে। আমি কি নতুন? জবা এবং পূর্ণা!

জবার ঘরে পৌঁছোতে বেশি সময় লাগল না তার। অবিকল তারই মতো একটা ফ্ল্যাটে থাকে জবা। সব কিছুই একরকম। দরজা খুলে দিল রোবট, কারণ এই দরজা তো রিক্তার কোডে খুলবে না।

আমি রিক্তা।

তুমি খুব সুন্দর।

তোমার ঘুম আসছে না?

না। আজ ঘুম আসছে না। আজ আমার আইডেন্টিটির প্রবলেম হচ্ছে। জানো, আমি পোকাটাকে মেরে ফেলেছি।

রিক্তা স্তম্ভিত হয়ে বলল , মেরে ফেলেছ? কী করে?

আমার কাছে একটা রে গান আছে। তাই দিয়ে।

ও মা! কেন মারলে?

আমাকে একটুও একা হতে দেয় না যে!

সর্বনাশ! এর শাস্তি কী জানো?

জানি ওরা আমাকে বদলে দেবে তো! দিক না। আমার আর এরকম থাকতে ভালো লাগছে না।

ওরা তোমাকে হাফ মেকানিক্যাল হাফ হিউমান ফর্ম দিয়ে পাঠাবে কায়িক শ্রমের জায়গায়। সেখানে অবিশ্রান্ত কাজ আর কাজ।

জানি। তাও ভালো।

রিক্তা হঠাৎ চুপ করে গেল। তার সব কথা ও প্রতিক্রিয়া রেকর্ড হয়ে যাচ্ছে। কাজটা ভালো হচ্ছে না। সে হঠাৎ বলল , তোমার অস্ত্রটা কোথায়?

ওই যে। টেবিলে পড়ে আছে।

রিক্তা হঠাৎ কিছু না ভেবে–চিন্তে অস্ত্রটা তুলে নিল হাতে। তারপর ঘুরে হঠাৎ ট্রিগার টিপে দিল। একটা ঝলকানি। নীলচে বিদ্যুৎ। পরমুহূর্তেই পোকাটা যেন বিস্ফোরিত হয়ে গেল। রিক্তা অবাক হয়ে দেখল, আর নেই। কোথাও নেই। দশ বছর ধরে ছিল। এখন নেই।

রিক্তা জবার দিকে চেয়ে হঠাৎ একটু হাসল।

জবাও হাসল।

তারপর দুজনেই বহু-বহু বছর পর খুব হাসতে লাগল। ভীষণভাবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *