পুরানো কলকাতার দুর্গাপূজা
পুরানো কলকাতার পূজা সম্বন্ধে সবচেয়ে প্রাচীন নথীবদ্ধ প্রমাণ যা আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে, তা হচ্ছে আলেকজাণ্ডার হ্যামিলটনের ‘ভ্রমণ কাহিনী’তে বিবৃত প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা সম্বন্ধে। প্রতিমা শেঠেদের ছিল, কেননা তখন কলকাতার সবচেয়ে ধনীলোক বলতে তাদেরই বুঝাত। আলেকজাণ্ডার হ্যামিলটনের বিবৃতিটা হচ্ছে অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দশকের। তখন অবশ্য কলকাতায় শেঠেরা ছাড়া, আরও ধনী পরিবার ছিল। কিন্তু পয়সায় তারা কেউই শেঠেদের সমতুল ছিল না। যেমন সাবর্ণ চৌধুরীরা, জয়রাম ঠাকুর, নন্দরাম সেন, জগৎ দাস ও পরে বনমালী সরকার ও গোবিন্দরাম মিত্র। বাঙালী বারমাসে তের পার্বণ করত। তার মধ্যে আবার ধনীরা মহাসমারোহে দোল দুর্গোৎসব করত। সুতরাং আমরা অনুমান করতে পারি যে এই সব বড় লোকদের মধ্যে অনেকেই দুর্গোৎসব করতেন। তাতে অবশ্য পয়সা খরচ খুব কম হ’ত না। কেননা, যিনি বাঙলাদেশে প্রথম দুর্গোৎসব করেছিলেন, সেই তাহেরপুরের রাজা কংসনারায়ণ দুর্গোৎসবে আট লক্ষ টাকা ব্যয় করেছিলেন। সুতরাং প্রাচীন কলকাতার দুর্গোৎসবও যে বেশ খরচ করে করা হত, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। তবে গোড়ার দিকে দুর্গোৎসবে পূজা বাড়ীতে সাহেবদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। আমরা জানি যে একবার দোলযাত্রার উৎসবে সাহেবদের হিন্দুর পূজাবাড়ীতে প্রবেশ করার ব্যাপার নিয়ে জোব চার্ণকের সঙ্গে সাবর্ণ চৌধুরীদের নায়েবের সংঘর্ষ হয়েছিল।
পুরানো কলকাতার দুর্গোৎসব সম্বন্ধে দ্বিতীয় নথীবদ্ধ প্রমাণ যা আমরা পাই, তা হচ্ছে ১৭৬৬ খ্রীষ্টাব্দে হলওয়েলের ইনটারেষ্টিং হিসটরিক্যাল ইভেন্টস্’ গ্রন্থে। তখন দুর্গাপূজার রূপটাও পালটে গেছে। ইংরেজদের তখন নিমন্ত্রণ করে পূজাবাড়ীতে নিয়ে আসা হত। হলওয়েল লিখেছেন – “Doorgah Pujah is the grand general feast of the Gentoos, usually visited by all Europeans (by invitation) who are treated by the proprietor of the feast with the fruits and flowers in seasons, and are entertained every evening whilst the feast lasts, with bands of singers and dancers.” হলওয়েলের বিবৃতিটা হচ্ছে রাজা নবকৃষ্ণদেবের সমসাময়িক কালের। তিনিই প্রথম সাহেবদের অনুগ্রহ লাভের জন্য পূজাবাড়ীতে সাহেবদের নিমন্ত্রণ করে আনেন এবং তাদের নাচগান ও ভূরিভোজনে আপ্যায়িত করেন। কেননা, সমসাময়িক কালে নবকৃষ্ণ তাঁর এক বন্ধুকে লিখেছিলেন—”এবার লর্ড ক্লাইভ পূজার সময় আমার বাড়ীতে প্রতিমা দর্শন করতে আসছেন। তোমার এবার আসা চাই- ই।’
তখন থেকেই শুরু হয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সাহেবদের নিয়ে আমোদপ্রমোদ করা। আগেই বলেছি এ সব আমোদপ্রমোদ সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যহীন ছিল না। সাহেবদের ধরে, তাদের মনোরঞ্জন করে কিছু আদায় করে নেওয়াই, এর উদ্দেশ্য ছিল। নবকৃষ্ণের দেখাদেখি, আরও অন্যান্য বড়লোকেরা দুর্গোৎসবে সাহেবদের নিমন্ত্রণ করতেন। ১৭৯২ খ্রীষ্টাব্দের ‘ক্যালকাটা ক্রনিকেল’ পত্রিকায় আমরা অনেক বড়লোকের নাম পাই। নবকৃষ্ণ ছাড়া, সেই তালিকায় ছিল প্রাণকৃষ্ণ সিংহ, কেষ্ট চাঁদ মিত্র, নারায়ণ মিত্র, রামহরি ঠাকুর, বারাণসী ঘোষ ও দর্পনারায়ণ ঠাকুর। এঁরা ছাড়াও, আরও অনেকে দুর্গোৎসব করতেন, যথা রামকান্ত চট্টোপাধ্যায়, রাজা সুখময় রায় ও পরে প্রসন্নকুমার ঠাকুর ও দ্বারকানাথ ঠাকুর। দ্বারকানাথ ঠাকুরের পূজা সম্বন্ধে একটা ঘটনার এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। এই পূজায় নিমন্ত্রণ করবার জন্য দ্বারকানাথ পাঠিয়েছিলেন তাঁর ছেলে দেবেন্দ্রনাথকে রাজা রামমোহন রায়ের কাছে। রামমোহন সৌজন্যের সঙ্গে তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এই নিয়ে সমসাময়িক সংবাদপত্রে তির্যক মন্তব্য করা হয়েছিল।
পুরানো কলকাতার পূজাবাড়ীর আমোদ প্রমোদের একটা বর্ণনা ফ্যানী পার্কস্ তাঁর ‘ভ্রমণ-বৃত্তান্ত’-এ দিয়ে গেছেন। ফ্যানী পার্কস্ এক পূজাবাড়ীতে গিয়ে (১৮২০ খ্রীষ্টাব্দ নাগাদ) দেখেছিলেন—‘পূজা মণ্ডপের পাশের একটা বড় ঘরে নানারকম উপাদেয় খাবার অঢেল পরিমাণে সাজানো রয়েছে। সবই বাড়ীর কর্তার সাহেব-অতিথিদের জন্য। খাবার সরবরাহ করেছেন বিদেশী পরিবেশক মেসার্স গান্টার অ্যাণ্ড হুপার। খাবার জিনিসের সঙ্গে বরফ ও ফরাসী মদও ছিল প্রচুর। মণ্ডপের আর এক দিকে একটা বড় হল-ঘরে সুন্দরী বাইজীদের নাচগান হচ্ছিল। সাহেব ও এদেশীয় ভদ্রলোকেরা চেয়ারে বসে সুরাপান করতে করতে সেই নাচ দেখছিলেন; বাইজীদের গান শোনার জন্য বাইরেও বেশ লোকের ভীড় হয়েছিল। বাইজীদের নাচগান সকলকে বেশ মাতিয়ে রেখেছিল।’
কথিত আছে যে দুর্গোৎসবে বাইজীর নাচগান নদীয়ার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্ৰ প্ৰথম প্রবর্তন করেন। পরে ওটা ভাগীরথীর ধারা ধরে নেমে এসে শোভাবাজারে নবকৃষ্ণদেবের পূজামণ্ডপে প্রবেশ করে। পরে কলকাতার অন্যান্য অভিজাত পরিবার তাঁকে অনুসরণ করেন।
বলা বাহুল্য, কলকাতায় তখন বাইজীদের ছিল পোয়াবারো। কলকাতা শহরের পূজাবাড়ীতে নাচগান করে তারা হাজার হাজার টাকা কামাত। ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকের কলকাতার ইতিহাসে বেশ কয়েকজন বাইজী তাদের নামের ছাপ রেখে গেছে। তাদের নাচগানের আসরে উপস্থিত থাকবার নিমন্ত্রণ পাবার জন্য কলকাতার সাহেব মহল উৎসুক হয়ে থাকত। আবার এই নর্তকীদের নিয়েও সেকালের বাবুদের লড়াই চলত। যে শ্রেষ্ঠ নর্তকীকে আনতে পারবে, সাহেবদের চোখে তারই সামাজিক মর্যাদা সবচেয়ে বাড়বে। সে যুগের শ্রেষ্ঠ নর্তকী ছিল নিকী। প্রতি রাত্রের নাচগানের জন্য তার হাজার টাকা পারিশ্রমিক ছিল। হাজার টাকা পারিশ্রমিক তো সে যুগের যে কোন বড় লোক দিতে পারত, কিন্তু তাকে পাওয়াই ছিল কঠিন। সাহেবদের কাছে নিকীই ছিল সে যুগের প্রধান আকর্ষণ। বোধ হয়, সে জন্যই কলকাতার কোন বড়লোক মাসিক হাজার টাকা বেতন দিয়ে তাকে নিজের তাঁবে রেখেছিল। এটা আমরা তৎকালীন এক সাময়িক পত্র থেকে জানতে পারি। নিকী সে যুগের ইংরেজি সাময়িক পত্রসমূহে আলোচনার বিশেষ বিষয়বস্তু ছিল। ১৮১৬ খ্রীষ্টাব্দের এক সংবাদপত্রে লেখা হয়েছিল—”We had are still no opportunity on Monday evening of discovering in what particular house the attraction of any novelty may be found, but from a cursory view we fear that the chief singers Nikhi and Ashroou who are engaged by Neelmunee Mullick and Raja Ramchandra without rivals in melody and grace” ১৮১৯ খ্রীষ্টাব্দের ‘ক্যালকাটা জার্নাল’-এ এক বিজ্ঞাপন দিয়ে জানানো হয়েছিল যে সে বৎসর পূজার সময় নিকী মহারাজা রামচন্দ্র রায় ও বাবু নীলমনি ও বোষ্টমদাস মল্লিকের বাড়ি বাবুদের অতিথিদের তার নাচগানে আপ্যায়িত করবে। ১৮২৩ খ্রীষ্টাব্দে নিকীর সৌভাগ্য হয়েছিল রাজা রামমোহন রায়ের মানিকতলার বাগানবাড়িতে নাচগান করবার। বস্তুতঃ সে যুগে নিকীর সমকক্ষ আর কোন নৃত্যগীত পটীয়সী বাইজী ছিল না। শ্রোতারা তার গান ও সুরের নেশায় মাতাল হয়ে উঠত। সুরেলা কণ্ঠের জন্য সে যুগে আর যে সব প্রসিদ্ধ বাইজী ছিল, তাদের অন্যতম ছিল বেগমজান। তার গানের হিল্লোলে সকলেই মেতে উঠত। সাহেবরা পর্যন্ত চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে উঠে বাহবা দিত। আর একজন বাইজী যার একই আসরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শ্রোতারা স্তব্ধ হয়ে থাকত, সে হচ্ছে হিঙ্গন। তার কালো হরিণ চোখ ও মিষ্টি গলা শ্রোতাদের স্বপ্ন রাজ্যে নিয়ে যেত।
সে যুগের কলকাতায় শুধু বাইজীদের নিয়েই প্রতিযোগিতা হত না। প্রতিমার উৎকর্ষ নিয়েও প্রতিযোগিতা হত। বিজয়া দশমীর দিন সন্ধ্যার পরেই সমস্ত প্রতিমা এনে হাজির করা হত বালাখানার মাঠে। (এটা অবস্থিত ছিল ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’র সম্পাদক স্বর্গীয় অশোক কুমার সরকার মহাশয়ের বর্তমান আবাসবাটির কিছু দক্ষিণে)। রঙমশালের আলোতে প্রতিমাগুলি সব ঝলমল করত। ওখানে বিচার করা হত, সে বছরের সব চেয়ে শ্রেষ্ঠ প্রতিমা কোন খানা? সেখানে বিচারে শ্রেষ্ঠ বলে যেটা প্রতিপন্ন হত, সে বাড়ীর লোকদের বুক ফুলে দশ হাত হত। আর যে কুমোর সেখানা তৈরী করত সে পেত পুরস্কার
তখনকার দিনে কুমোরটুলীতে এক ক্রীশ্চান কুমোর ছিল, নাম অ্যান্টনি সাহেব একবার এক রাজবাড়ী থেকে ডাক পড়ল অ্যান্টনি সাহেবের। রাজা তাঁর ইচ্ছা প্রকাশ করে বললেন,—‘এমন একখানা ঠাকুর তৈরী করে দিতে হবে যেখানা সে বছরের শ্রেষ্ঠ প্রতিমা বলে স্বীকৃত হবে।’ মন প্রাণ দিয়ে ঠাকুর গড়লেন অ্যান্টনি সাহেব। সে বৎসর অ্যান্টনি সাহেবের প্রতিমাই শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হল। উৎফুল্ল হয়ে রাজা বাহাদূর নিজের গলা থেকে মুক্তা-বসানো হারটা খুলে অ্যান্টনি সাহেবের গলায় পরিয়ে দিলেন। রাজার জয়জয়কার হল, আর শিল্পী পেল তার যোগ্য পুরস্কার (অতুল সুর ‘বাঙলা ও বাঙালী’ পৃষ্ঠা ১৪৭ দ্রষ্টব্য)।
বস্তুতঃ সেকালের পূজার জাঁকজমকের জন্য বড়লোকরা খরচ করতে কুণ্ঠিত হতেন না। সাহেব প্রত্যক্ষদর্শীরা বলে গেছেন যে এক এক পরিবার দুর্গাপূজার উৎসবে পাঁচ- ছয় লক্ষ টাকা খরচ করতেন। অথচ শিবনাথ শাস্ত্রী বলে গেছেন যে সাধারণ গৃহস্থ লোকেরা ৫০/৬০ টাকায় পূজা করতেন।
অনেক সময় হিন্দুদের দুর্গাপূজা ও মুসলমানদের মহরম একই সময় অনুষ্ঠিত হত। তাতে হিন্দুদের পূজা বিঘ্নিত হত ও দাঙ্গাহাঙ্গামা বাঁধত। ১৮২০ খ্রীষ্টাব্দে চাঁদনী চকের সামনে মুসলমানরা শোভাযাত্রাগামী নবপত্রিকা কেড়ে নিয়ে কেটে ফেলে। এই কারণে সে বৎসর কোন বাইজী কলকাতার কোন পূজাবাড়ীতে নাচগান করতে আসে নি। ১৭৮৯ খ্রীষ্টাব্দে একবার অতি ভয়াবহ ব্যাপার ঘটে। পূজার বিসর্জনের দিন মুসলমানরা কোম্পানির প্রসদ্ধি বেনিয়ান ও ধনী রামকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের দুর্গা প্রতিমা ভেঙে চুরমার করে দেয় ও পালকীর মধ্যে অবস্থিত তাঁর পুত্রবধূকে আক্রমণ করে সাংঘাতিকভাবে জখম করে। এর জন্য কয়েকদিন কলকাতায় অরাজকতার সৃষ্টি হয়। (বিশদ বিবরণের জন্য লেখকের ‘কলকাতা : এক পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস’ গ্রন্থের পৃষ্ঠা ৯৬ দ্রষ্টব্য)।
সেকালের পূজায় সব বড়লোকের বাড়ীতে সকলেরই অবারিত দ্বার ছিল না। এটা আমরা ১৮২৯ খ্রীষ্টাব্দের ১০ অক্টোবর তারিখের ‘বঙ্গদূত’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক সংবাদ থেকে জানতে পারি। ওই সংবাদে বলা হয়েছে—‘এই কলিকাতা রাজধানী মধ্যে শারদীয় মহোৎসবে ত্রিবিধ লোকের আলয়েই জগদীশ্বরীর পূজা হয়। সকলে স্ব স্ব মতে ও বিভবানুসারে নানোপচারে তাঁহার আরাধ্ননা করিয়া থাকেন।
কেহ বা ইতরাঙ্গ রাগ-রঙ্গের বাহুল্য? না করিয়া মুখ্যাঙ্গ হোম যাগ যজ্ঞাদি ও বিবিধোপচারে পূজা সাঙ্গ করেন। কেহ রা মহা ঘটাপূর্বক ঝাড়লণ্ঠন বাদ্য নাচ কাঁচের আধিক্যপূর্বক প্রকৃত কার্যপূজা সংক্ষেপেই সারেন। কেহ বা উভয়েই সমান আয়োজন করেন। তন্মধ্যে ক-এক লোক ভবন মধ্যে কিরূপ করেন তাহা দুর্গাই জানেন। কিন্তু বহির্দ্বারে সারজন সন্তরী স্থাপন করিয়া কিয়দ্ব্যক্তি নিমন্ত্রিত ব্যতীত দর্শনাকাঙক্ষী লোকদিগকে ভবন প্রবেশে নিবারণ করেন। কিন্তু দ্বারের সম্মুখবর্তী পথ হইয়া গমন করিলে বিহারের পরিবর্তে গাত্রে বেত্র প্রহার করিয়া থাকেন। বোধ হয় তদ্গৃহপতিরা এই সকল আচরণকেই ভগবতীর সন্তোষের মূল কারণ জ্ঞান করেন। সে যাহা হউক এ বৎসর ৪/৫ স্থানে বৃহৎ সমারোহ হইয়াছিল। বিশেষতঃ স্বর্গীয় মহারাজ নবকৃষ্ণ বাহাদুরের দুই বাটিতে নবমীর রাত্রে শ্রীশ্রীযুত গবর্ণর জেনারেল লর্ড বেন্টিঙ্ক বাহাদূর ও প্রধান সেনাপতি শ্রীশ্রীযুত লর্ড কম্বরমীর ও প্রধান প্রধান সাহেবলোক আগমন করিয়াছিলেন। পরে দুই দণ্ড পর্যন্ত নানা আমোদ ও নৃত্যগীতাদি দর্শন ও শ্রবণ করত অবস্থিতি করিয়া প্রীত হইয়া গমন করিলেন। ইংরেজ লোকের গতিবিধি ঐ রাজার দুই বাটিতে স্বর্গীয় রাজা রামচাদের বাটি ও স্বর্গীয় দেওয়ান শান্তিরাম সিংহের বাটিতে পুজার চিহ্ন জোড়াসাঁকোর চতুরস্র পথে এক গেট নির্মিত হইয়া তদবধি বাটির দ্বার পর্যন্ত পথের উভয় পার্শ্বে আলোক হইয়াছিল, তাহাতে যাঁহারা ঐ বাটির পূজার বার্তা জানেন না, তাঁহারাও ঐ গেট অবলোকন করিয়া সমারোহ দর্শনেচ্ছুক হইয়া অবারিত দ্বার ভবনে গমন করিলেন। আপামর সাধারণ কোন লোকের বারণ ছিল না। উপরে নীচে যাহার যেখানে ইচ্ছা আসনে উপবিষ্ট হইয়া নৃত্যগীতাদি স্বচ্ছন্দে দর্শন শ্রবণ করিলেন। তাহাতে কোন হতাদরের বিষয় নাই।”
কিন্তু পূজার জাঁকজমক কলকাতায় ক্রমশ কমে আসছিল। ওই ১৮২৯ খ্রীষ্টাব্দের ১৭ অকটোবর তারিখের ‘সমাচার দর্পণ’-এ আমরা পড়ি—‘এক্ষণে বৎসর ২ ক্রমে সমারোহ ইত্যাদির হ্রাস হইয়া আসিতেছে। এই বৎসরে এই দুর্গোৎসবের নৃত্যগীতাদিতে যে প্রকার সমারোহ হইয়াছে, ইহার পূর্বে ইহার পাঁচগুণ ঘটা হইত। কলিকাতাস্থ ইংরাজী সমাচার পত্রে প্রকাশ হয় যে কলিকাতাস্থ এতদ্দেশীয় ভাগ্যবান লোকেরা আপনারাই কহেন যে এক্ষণে সাহেবলোকেরা বড় তামাসার বিষয়ে আমোদ করেন না। এ প্রযুক্ত যে হ্ৰাস হইয়াছে, ইহা প্ৰত্যক্ষ প্রমাণ।’ আরও কারণ দেখানো হইয়াছে। ‘কলিকাতাস্থ অনেক বড় বড় ঘর এখন দরিদ্র হইয়া গিয়াছে। যাঁহারা ইহার পূর্বে মহাবাবু এবং সকল লোকের মধ্যে অতিশয় প্রসিদ্ধ ছিলেন, তাঁহাদের মধ্যে অনেকেই এখন সেই নামমাত্র আছে। কেহ সুপ্রীম কোর্টে মোকদ্দমা করিতে নিঃস্ব হইয়াছেন। কেহ বা আপনাদের অপরিমিত ব্যয়ে দরিদ্র হইয়াছেন, কেহ বা অধিকারের যে বংশবলেতে বাঙ্গালিরা ক্রমে ক্রমে হ্রাস প্রাপ্ত হন, তাহা কারণে নির্ধন হইয়াছেন।’ তা ছাড়া, ‘নাচের সময়ে ক-এক বৎসরাবধি অতিশয় লজ্জাকর ব্যাপার হইত এবং যে ইংলণ্ডীয়রা সেস্থানে একত্রিত হইতেন তাঁহারা সাধারণ এবং মদ্যপান কারণে আপনাদের ইন্দ্রিয়দমনে অক্ষম থাকিতেন।’ মনে হয়, এই কারণে কর্তাদের ওপর অন্দরমহলের চাপও পড়েছিল।
তবে পূজাবাড়িতে সাহেবদের আসা-যাওয়া ঊনবিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকের পর থেকে সরকার আর পছন্দ করতেন না। এটা প্রকাশ পায় ১৮৪০ খ্রীষ্টাব্দের দশ নম্বরী আইন চালু হওয়া থেকে। ওই আইনে বলা হয় যে অতঃপর ইংরেজরা এদেশীয় লোকদের বাড়িতে কোন পূজাপার্বণে উপস্থিত হতে পারবে না। সেই থেকেই পূজাবাড়িতে সাহেবদের আসা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু পূজার হুল্লোড় বন্ধ হল না। পূজা উপলক্ষে যাত্রা, নাচ, তামাসা, কবির গান প্রভৃতি চলতেই লাগল। তবে সাহেবরা না আসায় পূজার আগেকার জলুস আর রইল না। শোভাবাজারের রাজবাড়ির দুই বাড়িতেই পূজায় আমোদ-প্রমোদ হত। তবে ১৮৬৩ খ্রীষ্টাব্দের ‘সংবাদ প্রভাকর’-এ লেখা হয়েছিল যে ‘শ্রীযুক্ত রাজা রাধাকান্ত বাহাদুর এ বৎসর পীড়িত থাকায় তাঁহার ভবনে নৃত্য গীতাদির আমোদ-প্রমোদ হয় নাই, কিন্তু মহামায়ার মহাপূজার ব্যাপার সর্বাঙ্গসুন্দররূপে সুনির্বাহ হয়েছে।”
একালের ‘সার্বজনীন’ পূজার পূর্বগামী সেকালের বারোয়ারী পূজা সম্বন্ধে দু-এক কথা বলে এ প্রবন্ধ শেষ করব। বারোয়ারী পূজার উৎপত্তি হয় গুপ্তিপাড়ায় জগদ্ধাত্রী পূজা উপলক্ষ্যে। তারপর বারোয়ারী পূজা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। সেকালের কলকাতার অনেক পাড়াতেই বারোয়ারী পূজা হত। যারা চাঁদা দিত না, তাদের জব্দ করবার জন্য বারোয়ারী পূজার উদ্যোক্তারা তাদের বাড়ী প্রতিমা ফেলে দিত। তা ছাড়া, উদ্যোক্তারা মেয়েদের ওপর অত্যাচার করত। ১৮৪০ খ্রীষ্টাব্দের ‘সংবাদ ভাস্কর’এ আমরা পড়ি ‘স্ত্রীলোকের ভুলি পালকী দৃষ্টি মাত্রই বারোয়ারি দল একত্রিত হইয়া তৎক্ষণাৎ আটক করিতেন এবং তাহাদের ইচ্ছামত প্রণামী না পাইলে কদাপি ছাড়িয়া দিতেন না। স্ত্রীলোকের সাক্ষাতে অকথা উচ্চবাচ্য যাহা মুখে আসিত তাহাই কহিতেন। তাহাতে লজ্জাশীলা কুলবালা সকল পয়সা টাকা সঙ্গে না থাকিলে বস্ত্রালঙ্কারাদি পর্যন্ত প্রদান করিয়া মুক্ত হইতেন।’ এই অত্যাচার বন্ধ হয়ে যায় ২৪ পরগণার জেলা শাসক পেটন সাহেবের চেষ্টায়। তিনি স্ত্রীবেশ ধারণ করে ডুলিতে চেপে পথে বেরিয়ে এই সকল উপদ্রবকারীদের গ্রেপ্তার করেন ও দীর্ঘমেয়াদী কারাদণ্ড দেন।
পরবর্তীকালে বারোয়ারীর অধ্যক্ষরা কৌশল অবলম্বন করে চাঁদা তুলতেন। ‘হুতোম’ এক দৃষ্টান্ত দিয়েছে। একবার তারা শহরের সিংগিবাবুদের বাড়িতে গিয়ে হাজির। সিংগিবাবু তখন আফিস বেরুচ্ছেন। বারোয়ারীর লোকেরা তাঁকে ঘিরে ফেলে চেঁচাতে লাগল—‘ধরেছি’, ‘ধরেছি’। রাস্তায় লোক জমে গেল। সিংগিবাবু তো অবাক। তখন বারোয়ারীর অধ্যক্ষরা বলল—মশায় আমাদের বারোয়ারীতে মা ভগবতী সিংগিতে চেপে কৈলাস থেকে আসছিলেন। পথে সিংগির পা ভেঙে গেছে। আমরা একমাস যাবৎ অপর সিংগির চেষ্টা করছি, পাচ্ছি না। আজ আপনাকে পেয়েছি, কোনমতে ছেড়ে দিব না। সিংগি মশায় সন্তুষ্ট হয়ে দশ টাকা চাঁদা দিলেন।
দুর্গাপূজা প্রধানত বাঙালির উৎসব। পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী সত্যযুগে সুরথ রাজাই প্রথম দুর্গাপূজা করেছিলেন। সুরথ রাজার রাজধানী ছিল বর্তমান বোলপুরে। সুতরাং পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী বাঙলাদেশেই দুর্গাপূজার সূচনা হয়েছিল।
কালান্তরের দুর্গাপূজার সঙ্গে আজকের দুর্গাপূজার অনেক ফারাক ঘটে গিয়েছে। দুর্গা প্রথমে ছিলেন দ্বিভুজা ও দণ্ডায়মান অবস্থায় শূল দ্বারা এক মহিষকে বধ করতে রতা। আলাহাবাদের কাছে ভিটায় প্রাপ্ত মূর্তিতে আমরা তাই দেখি। পরে দেবী চতুর্ভূজা, অষ্টভূজা ও দশভূজায় পরিণত হন। সঙ্গে সঙ্গে আসে তাঁর বাহন সিংহ ও মহিষের পরিবর্তে মহিষাসুর। আরও পরে আসে লক্ষী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, নবপত্রিকা। এছাড়া আমাদের ছেলেবেলায় আনন্দময়ীর আগমনবার্তা প্রতি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিত ভিখারী গায়ক ‘আগমনী’ গীত গেয়ে। আজ পূজার বার্তা পৌঁছে দেয় সার্বজনীন পূজার চাঁদা আদায়কারী পাণ্ডারা সদর দরজার কড়া নেড়ে।
বলা হয় বাঙলাদেশে দুর্গাপূজার বর্তমান ধারার প্রবর্তন করেছিলেন তাহেরপুরের বারেন্দ্র ব্রাহ্মণবংশীয় রাজা কংসনারায়ণ। তিনি সুলতান হুসেন শাহের (১৪৯৩ – ১৫১৯) সমসাময়িক লোক ছিলেন। কংসনারায়ণের পিতার নাম হরনারায়ণ, পিতামহের নাম উদয়নারায়ণ। উদয়নারায়ণ হতেই বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ সমাজে নিবারিল’ পটীর সৃষ্টি হয় কংসনারায়ণকে বারেন্দ্র কুলগ্রন্থে ‘দ্বিতীয় বল্লালসেন’ বলা হয়েছে। কংসনারায়ণের প্রপিতামহ বিজয় লস্করকে দিল্লিশ্বর বাইশখানা গ্রাম ও সিংহ উপাধি দিয়েছিলেন। তিনি তাঁকে বাঙলাদেশের পশ্চিম ‘দ্বাররক্ষক’ হিসাবে নিযুক্ত করেছিলেন।
কংসনারায়ণ একজন সমৃদ্ধিশালী রাজা ছিলেন। তিনি দুর্গাপূজায় আট লক্ষ টাকা ব্যয় করেছিলেন। সে যুগে আট লক্ষ টাকার পূজার যে কি রকম ঘটা হয়েছিল, তা সহজেই অনুমেয়। কংসনারায়ণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভাদুরিয়ার রাজা জগৎত্নারায়ণ নয় লক্ষ টাকা ব্যয় করে বাসন্তী পূজা করেছিলেন। তখন থেকেই গ্রামের জমিদার বাড়িতে দুর্গাপূজার ধুম লেগে যায়। পাঁচশ ভরি সোনা দিয়ে দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করে পূজা করতেন হুগলি জেলার বৈঁচি গ্রামের জমিদার গঙ্গাধর কুমার
আমরা শারদীয় পূজাকে ‘অকালবোধন’ বলি তার কারণ এ সময়টা হচ্ছে সূর্যের দক্ষিণায়ন। দক্ষিণায়ন কাল হচ্ছে দেবতাদের রাত্রি। দেবতারা তখন নিদ্রামগ্ন থাকেন। উত্তরায়ণ কাল হচ্ছে দেবতাদের দিন। তখনই তাঁরা জেগে থাকেন। দেবতাদের আরাধনার সেটাই হচ্ছে প্রশস্ত সময়। সেজন্য রাবণ মায়ের পূজা করেছিলেন বসন্তকালে। আর রাবণ বধের জন্য শক্তিলাভের উদ্দেশ্যে রামচন্দ্র পূজার জন্য মাকে জাগিয়ে তুলেছিলেন শরৎকালে। অকালে বা দেবতাদের রাত্রিকালে রামচন্দ্র মাকে জাগিয়েছিলেন বলে একে অকালবোধন বলা হয়। তবে বাল্মিকী রামায়ণে এ কাহিনীটা নেই।
কংসনারায়ণের আগে থেকেই যে বাঙলাদেশে দুর্গাপূজা হয়ে আসছে, তার প্রমাণ আমরা পাই দ্বাদশ শতাব্দীতে রচিত জীমূতবাহনের ‘কালবিবেক’ গ্রন্থে। ওই গ্রন্থে প্রচুর উৎসবের সঙ্গে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবার কথা উল্লিখিত হয়েছে। শ্রীনাথ আচার্য চূড়ামণি, বাচস্পতি মিশ্র, শূলপাণি, রঘুনন্দন প্রমুখেরাও নানা উৎসবের সঙ্গে দুর্গাপূজা অবশ্য কর্তব্য পর্ব হিসাবে নির্দেশ দিয়ে গেছেন।
এইসব উৎসবের মধ্যে একটা প্রধান উৎসব ছিল বিজয়া দশমীর দিন পালিত শবরোৎসব। জীমূতবাহনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী শবর জাতির ন্যায় লতা-পাতা দ্বারা দেহ আবৃত করে ও সর্বাঙ্গে কাদা মেখে নৃত্যগীত করাই ‘শবরোৎসব’। শবরোৎসবে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, অশ্লীল গীত ও গ্রাম্যভাষায় পরস্পরকে গালিগালাজ করা বিহিতকর্ম বলে উল্লিখিত হয়েছে। বলা হয়েছে, এরূপ না করলে দেবী অসন্তুষ্ট হন। যোগেশচন্দ্র রায় মশায় বলেছেন যে, তাঁর বাল্যকালেও শবরোৎসব হ’ত। এখন এটা আর পালিত হয় না।
বাঙলাদেশের দুর্গাপূজা সম্বন্ধে সাধারণ লোক বলে যে, শরৎকালে মা নিজের ছেলেপুলেকে সঙ্গে নিয়ে বাপের বাড়ি আসেন। সেজন্য প্রতিমাও ঠিক সেইভাবে গড়া হয়। মায়ের ডাইনে-বাঁয়ে থাকে মায়ের দুই পুত্র গণেশ ও কার্তিক এবং দুই কন্যা লক্ষ্মী ও সরস্বতী। কিন্তু যে ধ্যানমন্ত্র অনুযায়ী মায়ের পূজা করা হয়, তাতে কার্তিক-গণেশ ও লক্ষ্মী-সরস্বতীর উল্লেখ নেই। অষ্টাদশ শতাব্দীর গোড়ায় রচিত ‘রামেশ্বরের শিবায়ণ গ্রন্থে মায়ের গৃহস্থালীর যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তাতে কার্তিক-গণেশের উল্লেখ আছে, কিন্তু লক্ষ্মী-সরস্বতীর কোন উল্লেখ নেই। প্রাচীন ভারতীয় ভাস্কর্যেও মহিষমর্দিনীর একক মূর্তিই গঠিত হ’ত। তাঁর ছেলে-মেয়েদের, কোন স্থান ছিল না। ঠিক কবে থেকে মায়ের প্রতিমায় কার্তিক-গণেশ ও লক্ষ্মী-সরস্বতীর সমাবেশ ঘটেছে, তা আমাদের জানা নেই। আর এক কথা। প্রাচীন ভারতীয় ভাস্কর্যে মহিষমর্দিনীর যে সবচেয়ে পুরানো নিদর্শন আমরা আলাহাবাদের নিকট ভিটা গ্রাম থেকে পেয়েছি, তাতে মা দ্বিভুজা। পরবর্তী নিদর্শনসমূহে মা ক্রমশ বহুভুজা হয়েছেন। প্রাচীন ভাস্কর্যে নবপত্রিকারও কোন স্থান ছিল না।
এখন মায়ের প্রতিমার পাশে নবপত্রিকা এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে, কেননা নবপত্রিকাকে স্নান করিয়ে না আনলে, মায়ের সপ্তমী পূজাই আরম্ভ হয় না। নবপত্রিকাকে অবগুণ্ঠনবতী নববধূর বেশে সজ্জিত শ্বেত অপরাজিতার লতা ও হলুদ রঙের সুতা দিয়ে বাঁধা শক্তির বিভিন্নরূপের অধিষ্ঠান, কলা প্রভৃতি নয়টি বিভিন্ন গাছের চারা দিয়ে তৈরি করা হয়। এই নয়টি গাছের মধ্যে কলার অধিষ্ঠাত্রী দেবী হচ্ছেন ব্রাহ্মণী, কচুর কালী, হরিদ্রার দুর্গা, জয়ন্তীর কার্তিকী, বেলের শিবা, ডালিমের রক্তদন্তিকা, অশোকের শোকরহিতা, মানকচুর চামুণ্ডা ও ধানের লক্ষী। গণেশের মূর্তির পাশে নবপত্রিকা স্থাপিত হয় বলে সাধারণের ধারণা নবপত্রিকা গণেশের স্ত্রী।
বাঙালি আজ যে দেশেই গিয়েছে, সঙ্গে করে সেখানে নিয়ে গিয়েছে তার দুর্গাপূজার উৎসবকে। ঠিক অনুরূপভাবে বাঙালি যখন প্রথম কলকাতায় এসে বসবাস শুরু করেছিল, সে সঙ্গে করে এনেছিল তার দুর্গাপূজা উৎসবকে। এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে জোব চার্নকের কলকাতা শহর প্রতিষ্ঠিত হবার আগে থেকেই এখানে দুর্গোৎসব ঘটার সঙ্গে অনুষ্ঠিত হ’ত।