পাঁচ-পাঁচ

পাঁচ-পাঁচ

এবছর বর্ষার শেষে একদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠতে গিয়ে দেখি ডান হাতের কবজিটা কেমন ঝিনঝিন করছে। হাত ওঠাতে, নাড়াচাড়ায় বেশ কষ্ট হচ্ছে।

বেলা বাড়তে চলাফেরা করার সঙ্গে সঙ্গে বেদনাটা কমে মিলিয়ে গেল, বিকেলের দিকে খেয়ালই থাকল না যে সকালের দিকে ওই রকম কষ্ট হয়েছিল।

কিন্তু পরের দিন সকালে আবার সেই কষ্ট, এদিন আরও বেশি। যন্ত্রণাটা এদিন বিকেলের দিকেও কমল না। সেই সঙ্গে কবজি ছাড়িয়ে পুরো ডান হাতটায় ব্যথা ছড়িয়ে গেছে। ৪৬৬

দু-একদিনের মধ্যে ব্যথাটা ছড়িয়ে পড়ল ডান কাঁধে। তারপর বাঁ কাঁধে এল, অবশেষে তীব্রতর হয়ে ছড়িয়ে পড়ল বাঁ হাতে।

অসহ্য যন্ত্রণা। দু হাতের একটা হাতও ভাল করে তুলতে পারি না। ডান হাত, বাঁ হাত দু হাতই যন্ত্রণায় ছিঁড়ে যাচ্ছে। কখনও মনে হচ্ছে ডান হাতেই বেশি কষ্ট হচ্ছে, কখনও মনে হচ্ছে বাঁ হাতটা কেটে ফেললে আরাম হবে।

সকালবেলা ঘুম ভাঙার পর বিছানা থেকে আর উঠতে পারি না। এবার পিঠের শিরদাঁড়া বেয়ে ব্যথাটা গলিত ধাতুর মতো জ্বালাতে জ্বালাতে পোড়াতে পোড়াতে নেমে আসছে।

ভাগ্যিস বহুকাল আগে একটা ভাল দেখে বিয়ে করেছিলাম, সতী-সাধ্বী সহধর্মিণী এসে কোমর জড়িয়ে ধরে (যেভাবে বলনাচের সময়ে মেম ললনারা তাদের নৃত্য সঙ্গীদের আকর্ষণ করে থাকেন) আমাকে বিছানা থেকে টেনে তুললেন। কিন্তু তাতে তো সমস্যার সমাধান হল না, বরং সমস্যা শুরু হল।

বাথরুমে গিয়ে টুথপেস্ট হাতে তুলতে গিয়ে মনে হল গন্ধমাদন পর্বত তুলছি। বাথরুমের দরজা বন্ধ করতে পারলাম না। ছিটকিনি পর্যন্ত হাত তুলতে গিয়ে অধপথে যন্ত্রণায় প্রায় অজ্ঞান হতে যাচ্ছিলাম।

ঘোরতর বিপদ হল। প্রাতঃকৃত্য সমূহ দুই হাতের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু হাত যদি অপারগ হয়? এরকম ভয়াবহ সমস্যার সম্মুখীন অতি বড় শত্রুকেও যেন না হতে হয়। এমনকী বাড়িওলা, ওপরওলা, পাহারাওলা–কেউ যেন এমন কষ্টে না পড়েন।

.

এই পর্যন্ত পাঠ করে কোনও পাঠক যদি তার স্ত্রী আমার প্রাণপ্রিয়া পাঠিকা ঠাকুরানিকে বলেন, তোমার ওই তারাপদবাবু ডাক্তার দেখান না কেন? এত আদিখ্যেতার কী আছে?

ডিয়ার মি. জিলাস (Dear Mr. Jealous), প্রিয় ঈর্ষাবাবু, আমি জানি, আপনারা ভাবছেন, তারাপদর হাত দুটো নুলো হয়ে যাক তা হলে তারাপদ আর লিখতে পারবে না, আমার বউ আর ওই বোকাসোকা, মোটাসোটা তারাপদ রায়ের লেখা পড়ে বিহ্বল হওয়ার সুযোগ পাবে না। ওই ডাক্তার না দেখানোর প্রশ্ন নিয়ে একজন পাঠিকা একদিন ঠিকানা খুঁজে খুঁজে আমার আবাসে এসে পৌঁছলেন। তিনি আমার নট-নড়নচড়ন-নট-ফট ঋজু মেরুদণ্ড এবং প্রসারিত বাহুদ্বয় দেখে কেমন বিহ্বল হয়ে গেলেন, আমার স্ত্রীর কাছে জানতে চাইলেন, সর্বনাশ! কোনও ডাক্তার দেখাননি?

ডাক্তার দেখাইনি?

ডাক্তার না দেখিয়ে ভবসিন্ধু অতিক্রম করা যায়? কেউ পার হয়েছে?

এসব ক্ষেত্রে যেমন হয়, প্রথমে পরোক্ষভাবে চিকিৎসকের সাহায্য গ্রহণ করি। পরোক্ষ চিকিৎসার ব্যাপারটা সবাই জানেন, যেকোনও অসুখের গোড়ার দিকে আমরা সবাই এটা করি। কায়দাটা সোজা। কোনও অসুখ হলেই সেটা প্রতিবেশী আত্মীয় বা বন্ধুদের জানালে একটা না একটা প্রেসক্রিপশন পাওয়া যাবেই। ইতিপূর্বে যাঁরা এইরকম বা অনুরূপ ব্যাধিতে ভুগেছেন তাদের ডাক্তারবাবু যা যা ওষুধ ও পথ্য দিয়েছিলেন তাই দিয়েই চিকিৎসা শুরু করা যায়।

আমার এক সহকর্মীর শ্যালিকা গত বছর সারা শীতকাল নাকি এই রকম ব্যথাবেদনায় শয্যাশায়ী ছিলেন। তাঁর কাছ থেকে বেদনাহর ট্যাবলেটের নাম জানা গেল, তবে তাঁর মোটেই মনে নেই ওষুধের মাত্রা কী রকম ছিল, দৈনিক কয়টা ট্যাবলেট খেতে হবে এবং কখন, খাওয়ার আগে না খাওয়ার পরে, খালি পেটে না রাতে শোওয়ার সময়।

একটা চালাকি করলাম। একজন বড় ডাক্তারকে টেলিফোন করে বললাম, ডাক্তারবাবু, আপনি আমাকে হাতপিঠ ব্যথার জন্যে সকালবেলা পেইনফিনিশ বলে যে ট্যাবলেটটা দিয়েছিলেন, সেটার প্রেসক্রিপশনটা হারিয়ে ফেলেছি। ডোজটা যদি একটু বলেন।

ডাক্তারবাবু বললেন, কোথাও আপনার একটু কিছু ভুল হয়েছে। আমি পেইনফিনিশ রোগীদের দিই না, ওটা সাংঘাতিক ওষুধ এক ডোজেই যেমন তেমন রোগী ফিনিশ হয়ে যায়।

আমি আর কথা না বাড়িয়ে সঙ্গে সঙ্গে টেলিফোনটা নামিয়ে রেখে দিলাম।

তবে সহকর্মীর শ্যালিকার কাছে অল্প কিছুটা ব্যবহৃত ব্যথা উপশমের অর্ধ টিউব মলম পাওয়া গিয়েছিল। টিউবের গায়ে ময়লা জমে ডেট অফ এক্সপায়ারিটা অর্থাৎ কার্যকারিতার সময়সীমা পড়া যাচ্ছিল না, সে যা তোক বিনি পয়সার মলমটা দুদিন ব্যবহার করলাম।

এরপর একটা নতুন উপসর্গ যোগ দিল। এত দিন স্নায়ু, মজ্জা, পেশিতে যন্ত্রণা হচ্ছিল এবার সেই সঙ্গে চামড়ার ওপরে জ্বালা শুরু হল।

শরীরের জ্বালা যন্ত্রণায় এবং মনের দুঃখে মলমের টিউবটা জানলা দিয়ে উঠোনে ফেলে দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে একটা কাক এসে সেটাকে মুখে তুলে নিয়ে বোধহয় বাসা বানাতে চলে গেল।

যথারীতি এরপরে এক হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের শরণাপন্ন হই। ডাক্তার ভদ্রলোককে দেখে বেশ শ্রদ্ধা হয়েছিল, তাকে বেশ দায়িত্বশীল মনে হয়েছিল। তিনি এক পুরিয়া ওষুধ দিয়ে পরের দিন ভোরবেলায় খালি পেটে খেয়ে নিতে বললেন।

ভদ্রলোকের বিরাট প্র্যাকটিস, গভীর রাতেও তার চেম্বার গমগম করছে রোগী ও রোগীর আত্মীয়স্বজনে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট হয়েছিল, তার দেখা মিলল রাত পৌনে বারোটায়।

ডাক্তারবাবুর শুধু কান দেখে চিকিৎসা। তিনি আমাকে চেয়ারে বসিয়ে নিজে উঠে দাঁড়িয়ে আমার চার পাশে ঘোরাফেরা করে দুটো কান পর্যায়ক্রমে হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করিয়ে আমার রোগ নির্ণয় করতে লাগলেন।

এর আগে বুঝিনি তিনি কানে হাত দিতেই বুঝতে পারলাম পেশি যন্ত্রণা কানেও সঞ্চারিত হয়েছে, নিরুপায় হয়ে উঃ আঃ করে যেতে লাগলাম।

এরপর ডাক্তারবাবু এক পুরিয়া ওষুধ দিয়ে বললেন, এই ওষুধটা অল্প জল দিয়ে কাল খুব সকালে খালি পেটে খেয়ে নেবেন। আর এরমধ্যে পান-দোক্তা, বিড়ি-সিগারেট, গাঁজা, ভাং, মদ, পেঁয়াজ, রসুন, বোয়াল মাছ, চিংড়ি মাছ–এসব খাবেন না।

আমি ডাক্তারবাবুর নির্দেশ শুনে বললাম, ডাক্তারবাবু এখন রাত প্রায় বারোটা বাজে। বাড়ি যেতে যেতে সাড়ে বারোটা-একটা হয়ে যাবে। আর আপনার ওষুধটা খেতে হবে কাল সকাল সাড়ে পাঁচটা-ছয়টার মধ্যে। আপনি নিষেধ না করলেও এই অল্প সময়ের মধ্যে, এই গভীর রাতে আপনার ওইসব নিষিদ্ধ ও মহার্ঘ জিনিস আমার পক্ষে সংগ্রহ করা মোটেও সম্ভব হত না।

ভিজিট ও ওষুধের দাম মিটিয়ে বেরিয়ে আসার মুখে ডাক্তারবাবুকে বললাম, ডাক্তারবাবু, যন্ত্রণায় বড় কষ্ট পাচ্ছি, অসহ্য হয়ে উঠেছে। আপনার ওষুধে ব্যথা উপশম হবে তো?

 ডাক্তারবাবু বললেন, বেশ চিন্তা করেই বললেন, যদি ব্যথা না কমে, চৌদ্দ দিন দেখবেন। তারপর আরেকবার আসবেন।

চেম্বারের সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে অনুভব করলাম যন্ত্রণাটা উত্তরোত্তর বাড়ছে। এখন শুধু হাত, ঘাড়, পিঠ নয়, কান দুটোও ভয়াবহ টনটন করছে।

এই যন্ত্রণা নিয়ে আরও চৌদ্দ দিন অপেক্ষা করা আমার পক্ষে অসম্ভব।

এই গভীর রাতেও ডাক্তারবাবুর চেম্বারের সামনে ফুটপাতে একটা ভিখারি হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়েছিল। সেই লোকটার হাত দুটো কোনও অলৌকিক যন্ত্রণায় থরথর করে কাপছিল। তার হাতে পুরিয়াটা গুঁজে দিয়ে বললাম, এই ওষুধটা কাল সকালে খালি পেটে খেয়ে নিয়ো। আর দেখো, আজ রাতে মদ খেয়ো না, চিংড়ি মাছ খেয়ো না।

পুরিয়াটা হাতে নিয়ে কৃতজ্ঞ ভিখারিটি আমার পিছনে পিছনে কিছু দূর এল। তারপর বলল, স্যার, আমি আজ সারাদিনই না খেয়ে আছি, সেই সকাল থেকে খালি পেটে রয়েছি, ওষুধ এখনই। খেয়ে নিই। এই বলে সামনের একটা টিউবওয়েলের দিকে এগিয়ে গেল।

এরপরে আর বিশদ বর্ণনায় যাচ্ছি না। বাংলা ভাষায় পরশুরামের পর আর নতুন করে চিকিৎসা সংকট লেখার মানে হয় না। তবে জানিয়ে রাখা ভাল যে সেই গল্পের নায়কের মতো ভুলক্রমে কোনও লেডি ডাক্তারের কাছে আমি যাইনি।

এখন আমি এই কাহিনির শেষ পর্যায়ে আসছি। নানা ঘাটের জল খেয়ে, নানা রকম টোটকা, মুষ্টিযোগ, চাল পড়া ইত্যাদি করার পর আমার অবস্থার একটুও উন্নতি হয়নি। তবে ব্যথা-বেদনা সহ্য করার একটা অভ্যাস জন্মে গেছে, সেই যে একটা প্রাচীন কথা আছে না শরীরের নাম মহাশয়, যা সহাবে তাই সয়, কথাটা খুবই সত্যি।

এখন ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে সিঁড়ি দিয়ে নামি, পা ঘষটে ঘষটে হাঁটি, খুব প্রয়োজন না পড়লে হাত বা শরীর নাড়াচাড়া করি না। তবে ছোটবেলায় আমাদের বাড়ির এক মহুরিবাবুর কাছে কান নাচানো শিখিয়েছিলাম, ইচ্ছে করলেই ফটাফট কান নাড়াতে পারতাম, হাতি যেমন কান নাড়ায় সেই রকম আর কী। তা মাঝে মধ্যে কান নাড়িয়ে পরীক্ষা করে দেখি কানে ব্যথা আছে নাকি, সঙ্গে সঙ্গে টের পাই আছে। সাংঘাতিকভাবে আছে।

সব ওষুধ, চিকিৎসা বাদ দিয়ে এখন আমি ব্যায়ামে এসে পৌঁছেছি। গাত্র ব্যথা কমানোর একমাত্র উপায় উপযুক্ত ব্যায়াম। অবশেষে সেটাই জেনেছি।

খোঁজ নিয়ে আরও জেনেছি যে এই কলকাতা শহরে অন্তত শখানেক বিশ্বশ্রী, যোগসম্রাট, আয়রন ম্যান ইত্যাদি আছেন। তাদেরই একজনের হাতে আমি নিজেকে সমর্পণ করেছি।

তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী বাসায় সকাল-বিকেল দুবেলা শারীরিক যন্ত্রণা যথাসাধ্য উপেক্ষা করে উঠ বোস করি, ঘুরপাক খাওয়ার চেষ্টা করি।

আমাদের অনেক দিনের পুরনো কাজের মেয়ে বাসনা সদা-সর্বদাই আমাদের নানাবিধ অযাচিত উপদেশ দিয়ে থাকে।

এই রকম প্রবল দেহকষ্টের মধ্যে আমার ব্যায়াম করা দেখে দ্বিতীয় দিনের মাথায় বাসনা বলল, তুমি যতই এক্সসাইজ করো তুমি আর লম্বা হবে না।

বাসনার এক্সসাইজ মানে এক্সসারইজ অর্থাৎ ব্যায়াম। তার বক্তব্য হল, আমি যতই ব্যায়াম করি না কেন আমার আর লম্বা হওয়া হবে না।

হায় কপাল!

আমার বয়েস তিনকাল পেরিয়ে এককালে পৌঁছতে চলেছে, এই বয়েসে আমি লম্বা হতে চেষ্টা করব কেন?

কিন্তু বাসনাকে এসব কথা বুঝিয়ে লাভ নেই। সে আমাকে মহাদেবপুরে কম্বল বাবার কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। যিনি এক ফুয়ে আমার এই ব্যথা উড়িয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু তা আমি যাইনি। সেই থেকে তার ধারণা হয়েছে আমার ব্যথাটা তেমন গুরুতর নয়।

সে যা হোক বাসনার কথায় কিন্তু আমার মনে একটু খটকা লাগল, একটু অন্যরকম খটকা।

গত চল্লিশ বছর আমি আমার উচ্চতা মাপিনি। কোনও সুস্থ মস্তিষ্কপ্রাপ্ত বয়স্ক লোকই নিজের উচ্চতা মাপতে যায় না। মাপার দরকার পড়ে না। একটা বয়েসের পরে মানুষ আর লম্বা হয় না, বরং বেশি বয়সে উচ্চতা একটু কমেই যায় বলে শুনেছি।

অফিসের সার্ভিস বুকে, পাসপোর্টে আমার উচ্চতা লেখা আছে পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি। এতকাল ধরে সেটাই চলে আসছে। এ নিয়ে আর কে মাথা ঘামায়?

বাসনার কথার পর একটা স্কেলকাঠি নিয়ে বাড়ির দরজায় দাগ একে মেপে দেখলাম আমার উচ্চতা এখন আর মোটেই পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি নয়, বরং দেখা যাচ্ছে তার থেকে একটু বেশি, পাঁচ সাড়ে চার।

এ ঘটনা বেশ কয়েকদিন আগের। এখনও নিয়মিত উঠ-বোস ইত্যাদি ব্যায়াম করে যাচ্ছি। আজ সকালে নিজেকে আবার মাপলাম, আজ দেখলাম পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি ছাড়িয়ে গেছি।

জানি না আরও লম্বা হওয়া কপালে আছে কি না। এরকম বিস্ময়কর ঘটনা আমার জীবনে ঘটবে এ কথা কখনও ভাবিনি। ভাবা যায় না।

আমার এই উন্নতির কথা আমার স্ত্রীকে, আমার ভাইকে বললাম। তারা বিশ্বাস করল না। বলল, চোখে দেখে আমরা কোনও তারতম্য বুঝছি না। আমি বললাম, স্কেলকাঠি দিয়ে মাপো। তারা রাজি হল না, অবিশ্বাসের হাসি হাসল।

অবশেষে বাসনাকে ধরলাম, তুমি না বলেছিলে, আমি আর লম্বা হব না। এদিকে দ্যাখো আমি এক ইঞ্চি বেড়ে গেছি।

এর উত্তরে বাসনা যা বলল, তা অতি চমৎকার। সে বলল, আমি জানতাম।

আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম, মানে? তুমি না বলেছিলে আমি আর লম্বা হব না।

 বাসনা বলল, তারপরে যে কম্বলবাবার কাছে গিয়েছিলাম।

আমি সাগ্রহে জিজ্ঞাসা করলাম, কম্বলবাবার কাছে কেন? আমি না তোমাকে যেতে মানা করেছিলাম।

বাসনা বলল, আমি গিয়েছিলাম আমার ছেলের জন্যে। ছেলেটা মাথায় বাড়ছে না। গত বছর কম্বলবাবা একটা ফুঁ দিয়ে দিয়েছিলেন, এক ধাক্কায় আড়াই ইঞ্চি বেড়েছে এক বছরে।

সে তো কম্বলবাবার ফুয়ে তোমার ছেলে বেড়েছে, আমি লম্বা হলাম কী করে? আমার জিজ্ঞাসার উত্তরে বাসনা বলল, কম্বলবাবাকে তোমার ব্যথার কথা বলাতে কম্বলবাবা মন্ত্র পড়ে তোমাকেও এক ইঞ্চি লম্বা করে দিল।

আমি অবাক হয়ে বললাম, কম্বলবাবা আমাকে লম্বা করতে গেল কেন?

লম্বা হলে তোমার হাড়ের জট খুলে যাবে, ব্যথা দূর হয়ে যাবে। একটু থেমে বাসনা বলল, লম্বা হয়ে গেছ, এবার ব্যথাও চলে যাবে। ব্যথা চলে গেলে একটা কম্বল কিনে দিয়ে কম্বলবাবাকে দিয়ে আসব।

সত্যি কথা স্বীকার করছি আমার ব্যথা কয়েকদিনের মধ্যেই দূর হয়েছে। এখন ভালই নড়া-চলা করতে পারি। কাল একটা কম্বল কিনব, বাসনার সঙ্গে গিয়ে কম্বলবাবাকে দিয়ে প্রণাম করে আসব।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *