1 of 2

পাঁচপল্লীর পাঁচালী

পাঁচপল্লীর পাঁচালী 

পাঁচপল্লী বলতে আমি উত্তর কলকাতার বাগবাজারের পাঁচ পল্লীর কথা বলছি। এ পাঁচপল্লী হচ্ছে—কুমারটুলি রাজবল্লভপাড়া, বোসপাড়া, মুখুজ্যেপাড়া, কাঁটাপুকুর ও নেবুবাগান। এর মধ্যে ঐতিহাসিক ঐতিহ্যমণ্ডিত হচ্ছে কুমারটুলি অঞ্চল। ওখানকার লোকদের কথাই আমরা ইতিহাসে পড়ি। ওখানেই ছিল ইংরেজ ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির ডেপুটি ট্রেডার বনমালী সরকারের বাড়ি, যে বাড়িখানা সেকালের কলকাতার এক দর্শনীয় বস্তু ছিল। ওই বাড়ির সামনে দিয়েই প্রতিদিন সকালে পদব্রজে যেতেন মহারাজা নবকৃষ্ণ দেব বাগবাজারের ঘাটে গঙ্গাস্নান করতে এবং স্নান সেরে ফেরবার পথে ওই বাড়িতে একবার ঢুঁ মারতেন। বনমালী সরকারের বাড়ির কাছে ওই কুমারটুলি পল্লীতেই ছিল কলকাতার সহকারী কালেক্টর গোবিন্দরাম মিত্রের বাড়ি, যাঁর নির্মিত নবরত্ন মন্দিরটা সেকালের নাবিকদের কাছে এক দিক্‌চিহ্ন ছিল। মন্দিরটা এখনকার শহিদ মিনারের চেয়েও উঁচু ছিল। ১৭৩৭ সালের ঝড়ে মন্দিরটা ধ্বসে পড়ে। 

কাছেই ছিল গোকুল মিত্তিরের বাড়ি। ইংরেজদের রসদ সরবরাহ করে তিনি বহু পয়সা উপার্জন করেছিলেন। এত পয়সা যে বিষ্ণুপুরের রাজারা যখন অর্থ সঙ্কটের মধ্যে পড়েছিলেন তখন তাঁরা ওই গোকুল মিত্তিরের কাছে এসেই তাঁদের কুলদেবতা মদনমোহনের বিগ্রহ বন্দক রেখে টাকা ধার করেছিলেন। ওই বিগ্রহ জাগ্ৰত জানতে পেরে মিত্তিরমশাই ওর অনুরূপ এক মূর্তি নির্মাণ করিয়ে সেটাই ফেরত দেন বিষ্ণুপুরের রাজাদের যখন তাঁরা ঋণ পরিশোধ করতে আসেন। আসল বিগ্রহটা বাগবাজারে গোকুল মিত্তিরের বাড়িতেই থেকে যায়। সেজন্যই জায়গাটার নাম হয় মদনমোহনতলা। গোকুল মিত্তির খুব ঘটা করে রাসযাত্রা উৎসব করতেন। ওঁর বাড়ির সংলগ্ন ছিল এক বিরাট দীঘি। রাসের সময় ওই দীঘিতে চারখানা নৌকা ভাসিয়ে মেয়েদের কবির গান হত। তাছাড়া, গোকুল মিত্তিরের বাড়ির প্রাঙ্গণে রাসের মেলা বসত ও অনেক রকম সঙ বসানো হত। 

কাছাকাছিই ছিল কালীশঙ্কর ঘোষের বাড়ি। কালীশঙ্কর ঘোষের বাড়ির কালীপূজা ছিল একভয়ঙ্কর ব্যাপার। বাড়ির কর্তা গিন্নী, বৌ-ঝি, ছেলে-পিলে, এমন কি ঝি-চাকর পর্যন্ত সে’দিন মেদ খেয়ে চুর হয়ে থাকত। বহু ছাগ, মহিষ বলি হত। একবার মদের ঝোঁকে কালীশঙ্কর নিজের গুরুদেবকে পর্যন্ত বলি দিতে উদ্যত হয়েছিলেন। 

গোকুল মিত্তিরের বাড়ির বিপরীত দিকে ছিল এক জোড়-বাংলা মন্দির। ওই মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী দেবীর কাছে ডাকতরা নরবলি দিত। ১৮৬৪ সালের ঝড়ে ওই মন্দিরটা পড়ে যায়। 

বাগবাজারের যে ঘাটে মহারাজা নবকৃষ্ণ দেব প্রত্যহ গঙ্গাস্নান করতে আসতেন, তারই সামনে ছিল ইংরেজদের বারুদ খানা। ওখানেই ইংরেজরা স্থাপন করেছিলেন এক তোপমঞ্চ, সিরাজ যখন ১৭৫৬ খ্রীষ্টাব্দে প্রথম কলকাতায় আক্রমণ করেন তখন তাকে প্রতিহত করবার জন্য। আবার ওই বারুদখানার সামনের রাস্তা চিৎপুরের পথ দিয়েই আসত কালীঘাট দর্শনে পুণ্যার্থী যাত্রীর দল। 

ওই বারুদখানার দক্ষিণেই ছিল পেরিন সাহেবের বাগান-বাড়ি, যেখানে হামেশাই আসতেন ভারতের প্রথম বড়লাট ওয়ারেন হেষ্টিংস ও শহরের সাহেব-মেমেরা সান্ধ্যভ্ৰমণ করতে। সেই বাগানটার জমিতেই এখন কলকাতা করপোরেশনের মেটাল ইয়ার্ড, যেখানে বাগবাজার সার্বজনীন দুর্গাপূজা হয়। পেরিন সাহেবের বাগানের ‘বাগ’ শব্দ থেকেই বাগবাজার নামের উদ্ভব। ওর সামনেই বাগবাজারের বাজার। আগে বাজারটা কাঞ্চনপুরের জমিদারদের ছিল, এখন অবাঙালী মোদীদের হাতে। ওই বাজারের পেছনেই ছিল রসিক নেওগীর বাড়ি, যিনি ওঁর বাড়ির সামনে গঙ্গার ধারে তৈরি করে দিয়েছিলেন কলকাতার একমাত্র চাঁদোয়া বিশিষ্ট ঘাট, নাম ‘রসিক নিয়োগীর ঘাট’, লোকমুখে যা অন্নপূর্ণার ঘাট নামে প্রসিদ্ধ, কেননা এর সামনেই ছিল অন্নপূর্ণা দেবীর মন্দির। ওই ঘাটের ওপরেই ছিল নিয়োগীদের বৈঠকখানা, যেখানে গিরিশ, ধর্মদাস, অর্ধেন্দু প্রমুখেরা রিহারসেল দিত যখন তারা গড়ে তুলেছিল এক নাট্যদল। আর ওই নিয়োগী বংশেরই ভুবনমোহন নিয়োগী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কলকাতার প্রথম সাধারণ রঙ্গালয়। আবার ওই নিয়োগী বংশেরই অপর এক বংশাবতংস কৃষ্ণকিশোর নিয়োগীর ছিল এক বিরাট গ্রন্থাগার, যা রাজা রাধাকান্ত দেবের গ্রন্থাগারের চেয়েও ছিল বড় এবং যা নিয়োগী মশাই দান করে দিয়েছিলেন ‘ক্যালকাটা পাবলিক লাইব্রেরী’কে (জাতীয় গ্রন্থাগারের পূর্বজ) ওই গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার সময়। তাঁরই ছেলে হচ্ছেন কবি হরিশচন্দ্র নিয়োগী (যাঁর নামে উল্টাডিঙ্গিতে একটা রাস্তা আছে), ও যাঁর ছেলে এর্টনী সুশীল নিয়োগী তাঁর স্ত্রী প্রমদাসুন্দরীর (নাড়াজোলের রাজকন্যা) নামে আর একটা ঘাট তৈরি করে দিয়েছেন গঙ্গ ার ধারে, রসিক নিয়োগীর ঘাটের পাশে। 

কুমারটুলির কথায় আবার ফিরে আসছি। কুমারটুলিতে এখন কুমোররা বাস করে।। কিন্তু কুমোররা যে এক জাতশিল্পী সে বোধ আমাদের ছিল না। সেটা প্রথম উপলব্ধি করেছিলাম যখন একজন কুমোর রাজ-সমাদর পেয়েছিলেন। কুমোর-পাড়ার তখন সবচেয়ে বড় কারিগর, ছিল গোপেশ্বর পাল। তার হাত ও মনের মধ্যে ছিল ভগবানের অসীম করুণা। দু-চার মিনিটের মধ্যে যে কোনো লোকের আবক্ষমূর্তি তিনি তৈরি করেদিতে পারতেন। তাঁর শিল্প শক্তির পরিচয় দেবার জন্য তিনি বিশের দশকের গোড়ায় আহুত হয়েছিলেন লণ্ডনের ব্রিটিশ এম্পায়ার একজিবিশনে। ডেক প্যাসেঞ্জার হয়ে যাচ্ছিলেন বিলাতে। একদিন হঠাৎ জাহাজের ক্যাপটেনের নজরে পড়ল, লোকটা সারাদিন ধরে মাটি নিয়ে কি গড়ে, আর ভাঙে। মুহূর্তের মধ্যে গোপেশ্বর তৈরি করে দিল ক্যাপটেনের মূর্তি। ক্যাপটেন বুঝলেন লোকটা মস্ত বড় শিল্পী। নিজের দায়িত্বে শিল্পীকে নিয়ে গিয়ে স্থান দিলেন সেকেণ্ড ক্লাস কেবিনে। এসব রূপকথার মত শোনায়, কিন্তু সবই সত্য। একজিবিশনে এসেছেন ডিউক অভ কনট। কিন্তু পাঁচ মিনিটের মধ্যেই গোপেশ্বর তৈরি করে দিল ডিউক অভ কনটের মূর্তি। অবাক হয়ে গেল দর্শকরা। গোপেশ্বর পালের সমকক্ষ না হোক, এ রকম শিল্পী কুমোরটুলিতে বহুকাল ধরেই অবহেলিত। 

এ সব কীর্তিমান লোকের কথা মনে পড়িয়ে দেয় ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম ভারতীয় সম্পাদক প্রফুল্ল মুখুজ্যের কথা। বাগবাজারেই তাঁর বাস, আমাদের প্রতিবেশী। প্রায়ই তিনি আমাকে বলতেন, ‘জানো অতুল, বাগবাজারের গণ্ডমূর্খ, আর নদের (নবদ্বীপের)পণ্ডিত, এ দুই-ই সমান।’ ইতিহাস তার সাক্ষ্য। অনেক উদ্ভট জিনিসও এখানে ঘটেছে। মুখুজ্যেপাড়ার দুর্গাচরণ মুখুজ্যের বাড়িতে ছিল ‘পরের আড্ডা’। উদ্ভদ শখ ওঁদের। অভিজাত পরিবারের ছেলেরা এক একটা পাখীর বেশ ধারণ করে ওখানে এক একখানা ইটের ওপর বসে গাঁজা খেত। বাগবাজার স্ট্রীট দিয়ে মুখুজ্যে পাড়ায় ঢুকবার মুখেই ছিল জগবন্ধু দত্তের বাড়ি। প্রথম মহাযুদ্ধের সময় কালির ব্যবসা করে বহু পয়সা উপার্জন করেছিলেন। তাঁরই অর্থানুকূল্যে তৈরি হয়েছিল বাগবাজারের বিখ্যাত গৌড়ীয় মঠ। আবার এই বাগবাজার থেকেই উদ্ভুত হয়েছিল নাট্যাভিনয়, প্রথম রঙ্গালয়, প্রতিষ্ঠা ও থিয়েটার কালচার। এই বাগবাজারেই দোকানদারী করতেন ভোলা ময়রা, যিনি কবির গানে পরাহত করতেন সেকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিয়াল এন্টনী ফিরিঙ্গীকে। আবার ভোলা ময়রারই নাতজামাই ছিলেন নবীন চন্দ্র দাস, যিনি স্বনামখ্যাত হয়েছেন রসগোল্লা উদ্ভাবন করে। ওই বাগবাজারেই বাস করতেন বিখ্যাত নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষ, ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ, যোগেশ চন্দ্র চৌধুরী, ও বিধায়ক ভট্টাচার্য। এই বাগবাজারের অধিবাসী নগেন্দ্রনাথ বসু সংকলন ও সম্পাদন করেছিলেন বাংলা ও হিন্দীতে বিখ্যাত ‘বিশ্বকোষ’, যার অসাধারণ গুরুত্বে মুগ্ধ হয়ে স্বয়ং মহাত্মা গান্ধী, নগেন্দ্রনাথের বাড়ি এসেছিলেন তাঁকে অভিনন্দন জানাবার জন্য। ওই নগেন্দ্রনাথেরই পাশের বাড়িতে থাকতেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস প্রণেতা দীনেশচন্দ্র সেন, যাঁর বাড়িতে দু-তিনবার এসেছেন রবীন্দ্রনাথ ও হামেশা আসতেন নজরুল ইসলাম। আবার একখানা বাড়ি পরেই থাকতেন সেকালের একজন বিখ্যাত নৈষায়িক দক্ষিণারঞ্জন ন্যায়রত্ন। এই বাগবাজারেরই অধিবাসী ছিলেন পাথুরিয়াঘাটা রাজবাটির সভাকবি মহামহোপাধ্যায় পার্বতীচরণ ভট্টাচার্য। এখানেই বাস করতেন বিখ্যাত পণ্ডিত বংশ— ডক্টর পশুপতিনাথ শাস্ত্রী, অশোক শাস্ত্রী ও গৌরীনাথ শাস্ত্রী। এখানেই বাস করতেন বৈষ্ণব কুল চূড়ামণি রসিক মোহন বিদ্যাভূষণ। আবার এখানেই বাস করতেন বিখ্যাত সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ও শৈলজারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, প্রখ্যাত শিল্পী যামিনী রায় ও কালজয়ী স্বাধীনতা সংগ্রামীরা যথা বঙ্কিম মুখোপাধ্যায়, কানাইলাল দত্ত, কিশোরীমোহন ঘোষ, বারীণ ঘোষ, হেমন্তকুমার বসু, নির্মলকুমার বসু ও শচীন মিত্র।

শহরের ভেতর এই বাগবাজার পল্লীর বুকের ওপর দিয়েই যেত রেলগাড়ি, যে রেল- লাইনের সংযোগ ছিল সারা ভারতের রেলপথের সঙ্গে। 

কিন্তু বাগবাজারের সবচেয়ে বড় গৌরব যে, এখান থেকেই বেরিয়েছিল প্রথম জাতীয় পত্রিকা—‘অমৃতবাজার পত্রিকা’, তার দুই কর্ণধার শিশির কুমার ঘোষ ও মতিলাল ঘোষ ভ্রাতৃদ্বয়ের সঙ্গে দেখা করতে আসতেন সারা ভারতের জাতীয় নেতারা মায় বাল গঙ্গাধর তিলক, অ্যানি বেসান্ত ও অন্যান্য অনেকে। 

বাগবাজারের পাঁচপল্লীর পাঁচালীর শেষ নেই। কেননা, এই বাগবাজারেই স্থাপিত হয়েছিল ভারতের প্রথম পলিটেকনিক ইনষ্টিট্যুট। একদিন এক পাগল সাহেব শহরে এসে হাজির। পাগলামি ছাড়া লোক প্রতিভাবান হয় না। সাহেব বিলাতের রয়েল ইঞ্জিনীয়ার। সাহেবের নাম ক্যাপটেন গেটাভেল। সাহেব বলল, আমি বিলাতের ঢঙে এখানে প্ৰবৰ্তন করব। পলিটেকনিক স্কুল, যেখানে ছেলেদের পুঁথি পড়ানোর সঙ্গে শিক্ষা দেওয়া হবে হাতের কাজ—যেমন লেদের কাজ, ইলেকট্রিকের কাজ, কারপেন্ট্রির কাজ, বেতের কাজ, বই বাঁধাইয়ের কাজ, দর্জির কাজ ইত্যাদি, সবই বাধ্যতামূলক ভাবে। সাহেবের পরিকল্পনার কথা শুনে মুগ্ধ হলেন কাশিমবাজারের মহারাজা মণীন্দ্র চন্দ্র নন্দী। দিলেন চার লক্ষ টাকা। সেই টাকায় স্থাপিত হল কাশিমবাজার পলিটেকনিক স্কুল। প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম হল ওই স্কুলেরই ছেলে যতীন্দ্রনাথ রুদ্র। ওই স্কুলেরই কাজকর্ম দেখে নেতাজী সুভাষচন্দ্র তাঁর ‘তরুণের স্বপ্ন’ বইয়ে লিখলেন—‘কুটির শিল্প যদি চালাইতে যান, তবে একটা কাজ করা দরকার। একটি উপযুক্ত যুবককে কাশিমবাজার পলিটেকনিক অথবা ওই জাতীয় কোন প্রতিষ্ঠানে কিছু কাজ শিখাইয়া লইতে হবে।’ স্কুলটা এক সময় বাগবাজারের গৌরব ছিল। আমি এক সময় ওই স্কুলের সেক্রেটারী ছিলাম। কিন্তু আমি চলে আসবার পর স্কুলের নূতন কর্তৃপক্ষ স্কুলের টেকনিকাল বিভাগটাকে বেচে দিল! 

‘সমবায় ম্যানসন’ তৈরি হবার আগে কলকাতার বৃহত্তম বাড়ি ছিল এই বাগবাজারে নন্দলাল বসু ও পশুপতিনাথ বসুর বাড়ি। বাইশ বিঘা জমির ওপর বাড়ি। উত্তরাধিকার সূত্রে মামা প্রাণকৃষ্ণ মিত্রের কাছ থেকে ওঁরা গয়ার জমিদারী পান। বার্ষিক আয় আট লক্ষ টাকা। ৬৫ নং বাগবাজার ষ্ট্রীটে একটা খোলা মাঠ ছিল। ওই মাঠেই এক সময় কলকাতার বিখ্যাত গাজন উৎসব, রামধন ঘোষের চড়ক হত। নন্দলাল বসু ও পশুপতিনাথ বসু ওই জমিতেই তাঁদের প্রাসাদোপম বাড়ি করেন। গৃহ প্রবেশ হয় ১৮৭৬ খ্রীষ্টাব্দে। বাড়িটার বৈশিষ্ট্য দোতলায় এক বিরাট হলঘর। সদ্য আমেরিকা প্রত্যাগত স্বামী বিবেকানন্দকে প্রথম সংবর্ধনা দেওয়া হয় ওই হলঘরে। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় প্রথম স্বদেশী মিটিং হয় ওই হলঘরে। আবার পরবর্তীকালে সরোজিনী নাইডু প্রমুখরা ওখানেই বক্তৃতা করেন। ওই বাড়ির পশুপতি বসুর অংশটা ১৯৫৮ খ্রীষ্টাব্দে অধিগ্রহণ করেন ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায় ওখানে ডে-স্টুডেন্টস্ হোম স্থাপনের জন্য। পরে ওখানেই স্থাপিত হয় বাগবাজার মালটিপারপাস স্কুল। 

শেষ করবার আগে বাগবাজারের আরও কয়েকটা প্রতিষ্ঠানের কথা বলব। বাগবাজারই ছিল স্বামী বিবেকানন্দ ও ভগিনী নিবেদিতার কর্মস্থল। মুখুজ্যে পাড়ায় স্বামীজী স্থাপন করেছিলেন ‘উদ্বোধন’ সংস্থা। সারদা মা কলকাতায় এলে ওখানেই থাকতেন। রামকৃষ্ণ মিশনের সাধুরা এখন ওখানে থাকেন। আর বোসপাড়া ছিল ভগিনী নিবেদিতার কর্মকাণ্ডের লীলাক্ষেত্র। পল্লীর মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার প্রসারের জন্য তিনি যে বিদ্যায়তনটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেটাই আজও গৌরবে বিরাজ করছে ‘নিবেদিতা স্কুল’ নামে। সবশেষে বলি, বাগবাজার আজ অনন্যা তার গিরিশ মঞ্চের’ জন্য। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *