ন্যাড়ার বেলতলা
আমি এক ন্যাড়া, একবারই বেলতলায় গিয়েছিলুম। আমি তাও ইচ্ছে করে যাইনি, অন্তত আমার নিজের সেই ধারণা। আমাকে টানতে-টানতে নিয়ে গিয়েছিল। প্রত্যেক ন্যাড়ারই উচিত আর এক ন্যাড়াকে সাবধান করা। উচিত নয়, কর্তব্য। ন্যাড়াদের উদ্দেশে একটি রেকর্ড-সংগীত আছে :
ভ্রমরা আ আ, ফুলের বনে মধু নিতে
অনেক কাঁটার জ্বালা
ও তুই যাসনে সেখানে
ন্যাড়াআ, ন্যাড়ারে কি হবে তোর
বেলতলাতে
যেমন আছিস বেশ তো আছিস একলা
মহাসুখে।
‘শোন বিভূতি, আমাকে দেখে তোর শিক্ষা হওয়া উচিত। পাগলে বিয়ে করে, জন্মায় ছাগল তারপর শেষ অঙ্কের শেষ দৃশ্যে গিরিশচন্দ্রের প্রফুল্ল, ও হো হো আমার সাজানো বাগান শুকিয়ে গেল। বেশ সুখে আছিস সাধ করে কেন ভূতের কিল খেতে যাবার ইচ্ছে।’
বিভূতিকে আমার সেভ করা উচিত। জীবনে অন্তত একটা ভালো কাজ করে যাওয়া উচিত। বিভূতি ব্যাটা একবারও বিয়ে করেনি! তাই ভাবছে বিয়েতে না জানি কত সুখ! ওগো, শুনচো, হ্যাঁগো! একমাস। টর্চের ব্যাটারি দেখেছিস। ক্রমশ জোর আর জেল্লা কমতে কমতে একসময় ফুস। এ ব্যাটারি এমন ব্যাটারি, ফেলতেও পারবি না। ওই ফতুর মালই সাজিয়ে রাখতে হবে। তোর জীবনের টর্চলাইটে ভরে রাখতে হবে।
বিভূতি গুনগুন করে গান গাইছে। হাঁটুর ওপর খবরের কাগজ। সিনেমার পাতাটা খোলা। সবে কায়দা করে চুল কেটেছে। শ্যাম্পু করেছে। এই গানটাই ও আজকাল অনবরত গুনগুন করে : পেয়ারকা বন্ধন, জনমকে বন্ধন, বন্ধু টুটে না আ আ।
‘শোন বিভূতি ওসব বাজে প্রেমমার্কা ফিল্মের গান ছাড়। প্রেম একধরনের নেশা। রাতে আসে, সকালের খোয়াড়ি ভাঙতে জীবন বেরিয়ে যায়। যে জানে সে জানে, ভ্রমরা তুই যাসনে সেখানে।’
‘আজ সিনেমায় যাব। কোনটায় যাই বল তো, দিলকা সংঘর্ষ, তেরা প্রেম মেরা প্রেম, দিলকা চাককু কোনোটারই টিকিট পাব না। ইংরেজি কী হচ্ছে দেখি, লাভ সং, লাভার্স লেন, লাস্ট সামার। ও ওই তো ঘাপটি মেরে বসে আছে এক কোণে রঙ্গিলীরাত প্রফুল্ল, তিনটে ছটা নটা। দিস ইজ মাই ফিল্ম। ছটার শো, নটার কিছু আগেই ভাঙবে। তারপর লাহোরে ঢুকে মুর্গমসল্লম। আহা পেয়ারকা বন্ধন জনমকা বন্ধন। কি তখন থেকে ভ্যাজোর ভ্যাজোর করছিস।’
‘আমাকে দ্যাখ, দেখে শেখ, প্রেম হল ঠুনকো কাচের গেলাস। আজ আছে কাল নেই। কেন সাধ করে মরবি। বেশ আছিস, ব্যাচেলার আছিস, খাচ্ছিস দাচ্ছিস ভুঁড়ি বাগাচ্ছিস। হাজব্যান্ড শব্দটার মধ্যে একটা ব্যান্ড আছে খেয়াল করেছিস। সেই ব্যান্ডটাই কলার ব্যান্ড হয়ে গলায় চেপে বসবে তখন আর খুলতে পারবি না।’
‘তুই তখন থেকে একনাগাড়ে ভাঙচি দিচ্ছিস কেন বল তো। তোর কী স্বার্থ! বেশ করেছি প্রেম করেছি করবই তো!’
‘আরে ছি ছি? এ কী একটা চিন্তাশীল, শিক্ষিত লোকের কথা হল রে! ওটা তো কোন এক গোঁয়ার গোবিন্দ বখাটে মেয়ের গানের কলি। আমার আবার স্বার্থ কী! তোর নিজের স্বার্থেই বলা। আমার বিবাহযোগ্যা মেয়েও নেই যে তোকে জামাই ঠাউরে কথা বলব। আমার কথা হল পাখির মতো বেশ কেমন সহজ স্বাধীন জীবনদাঁড়ে বসে। কেন ইচ্ছে করে পায়ে শিকলি জড়িয়ে মরবি।’
‘বাহু বন্ধন, কাকে বলে জানিস? পেলব দুটি হাত যখন পেছন দিক থেকে এসে গলাটি জড়িয়ে ধরে উ: ফ্যানটাসটিক। দ্যাখ-দ্যাখ শরীরে রোমাঞ্চ হচ্ছে। শুনেছি শ্রীগৌরাঙ্গের হরিনাম করতে-করতে এই রকম রোমাঞ্চ হত। পিঠ স্পর্শ করে আছে একটি উষ্ণ শরীর। ফুলের গন্ধ, নি:শ্বাসে বুকের ওঠাপড়া। কানের পাশে ঠোঁটের সুড়সুড়ি। ও হো হো। হু। গিরিফতারে উলফতে সইয়াদ।’
‘শোন, শোন বিভূতি প্রথম প্রথম পেলব বাহু মনে হবে, পরে ওই বাহুই জামার কলার চেপে ধরবে। বোতাম ছিঁড়ে পড়ে যাবে, পরে আর বসিয়েও দেবে না। ওই উষ্ণ স্পর্শ ক্রমে গরম স্টোভের ছ্যাঁকা হয়ে পিঠ পুড়িয়ে দেবে। ফুলের গন্ধ হবে বোদা চুলের গন্ধ। মেয়েদের সাজগোজ শ্যাম্পু ম্যামপু যা কিছু সব বিয়ের আগে পর্যন্ত। ওসব স্টেজ পেরিয়ে এসেছি বলেই তোকে সাবধান করতে আসা।
‘বস চুপ রহো, হমারেভি মুহমে জবান হ্যায়। তোর সাইকেলটা একবার দিবি, রঙ্গিলী রাতের দুটো টিকিট কিনে আনি। আগে ভাগে না কাটলে কোণের দিকে জোড়া সিট পাব না। ‘পেয়ারের সংখ্যা এত বেড়ে গেছে!’
‘না ভাই আত্মহত্যা করার জন্যে আমি সাইকেল দিতে পারব না। তুই হিন্দু সৎকার সমিতির সাহায্য নে।’
‘ও, তোর জেলাসি হচ্ছে? তা হলে তোকেই আমি কাজের ভারটা দি। তুই দুটো টিকিট কেটে মধুছন্দার হাতে দিয়ে আয়। বলবি, ঠিক ছটায় প্রফুল্লর সামনে।’
‘আমি?’
‘ইয়েস তুমি। মধুছন্দাকে দেখেছ দোস্ত? তাহলে শোন, নেহায়াত পাগয়ানাসহাসাস উমর ভরকি লিয়ে। কী বুঝলে?’
‘নাথিং। ও ভাষা তোমার প্রেমের ভাষা।’
‘আমার প্রেমের বিরুদ্ধবাদী শ্যালকটি, যে ব্যাটা গায়ে পড়ে বাগড়া দিতে আসত তার হাত থেকে সারা জীবনের মতো ছুটি মিলেছে। না, খুন না গাড়ি চাপা নয়। তাহলে? উসিকো ভেজ দিয়া ইয়ারকো খবর কে লিয়ে। সেই ব্যাটাকেই পাঠিয়েছিলুম আমার প্রেমিকার খবর নিতে। সেই যে সে গেছে আর ফেরেনি।’
‘না: ইউ আর এ লস্ট চাইল্ড। ষড়যন্ত্র করে তোর বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। আহা এমন একটা জোয়ান ছেলে মেয়েছেলের খপ্পরে গিয়ে পড়লি? শেম শেম।’
‘শেম শেম কী রে? বল গেম গেম।’
।। ২ ।।
সাধু বললে, ‘কী হল রে, ফেরাতে পারলি!’
‘না রে টোপ গিলে বসে আছে, মধুছন্দার হাতে সুতো। এখন খেলাবে, খেলাতে-খেলাতে খলবলে করে হয় তুলবে না হয় ছেড়ে দেবে।’
‘মধুছন্দার চারে ভিড়েছে! মরেছে! সে তো তিন চার হাত ফেরতা খেলিয়ে মেয়েছেলে। বিভূতির বারোটা বাজিয়ে ছেড়ে দেবে।’
‘ছেড়ে দেয় দেবে। যে দেখে শিখবে না, সে ঠেকে শিখুক।’
‘না না, হাল ছাড়লে চলবে না রে। বিভূতিই আমাদের একমাত্র ভরসা। ওর বাড়িটাই আমাদের ওয়েসিস। আমাদের শেষ মাসের মহাজন। ওখানে মধুছন্দা ঢুকে পড়লে আমাদের কী হাল হবে বুঝতে পারছিস না এখন। বিভূতি গেল প্লাস আমরাও গেলুম।’
‘মহা ফাঁপরে পড়া গেল। মধুছন্দা নিজে না ছেড়ে দিলে ওকে ছাড়ানো শক্ত। কচ্ছপের কামড়, বুঝলি সাধু, কচ্ছপের কামড়!’
‘মধুছন্দা সহজে ছাড়বে না রে। বারবার তিনবার। মধুছন্দার বয়েস হয়েছে, এই তার শেষ শিকার। মাছটাও তো খারাপ নয়।’
‘কাল তাহলে আর একবার চেষ্টা করে দেখব। শেষ চেষ্টা। বাবু আজ সিনেমায় গেলেন। তার মানে প্রেম আরও দু-কদম এগিয়ে গেল। তোর সেই বইটা আমাকে একবার দে তো!’
‘কোন বইটা?’
‘নামটা মনে নেই, তোর বই রাখার জায়গায় চল, দেখলেই চিনতে পারব।’
‘আবার বাড়ি ঢোকাবি? এইমাত্র এক পশলা হয়ে গেল। আকাশ এখন গুম মেরে আছে।’
‘সামান্য একটা মেয়েছেলেকে অত ভয় পাসনি তো। যত ভয় করবি তত পেয়ে বসবে। পুরুষ হ। পৌরুষ দেখা। তোর অমন গোঁফ, এমন চেহারা! মিন-মিন করিস কেন? চল?’
পরের দিন সকালেই বই বগলে বিভূতির বাড়িতে হাজির। মেঝেতে আসন পেতে সামনে ছোট আয়না রেখে ভীষণ মনোযোগ সহকারে দাড়ি কামানো চলছে। আমি ঢুকেই দেখলুম মুখ ওপর দিকে তুলে হাতের তালু উল্টোদিকে ঘষে ঘষে বিভূতি গালের মসৃণতা পরীক্ষা করছে। ঠোঁটের ওপর গতকাল বিকেলেও যে গোঁফটা ছিল সেটা নেই।
‘তোর গোঁফ?’
‘বিসর্জন দিয়ে দিলুম। মধুছন্দা গোঁফ পছন্দ করে না। কাল যেই বললে আমার গুঁফো মুখটা ঠিক বিশ্বকর্মার মতো দেখাচ্ছে, তখনই বুঝলুম প্রশংসা নয়, নিন্দেই করলে। যদি বলত কার্তিক, তাহলে এতদিনের জিনিসটা রেখেই দিতুম। বুঝলি না, বিশ্বকর্মা তেমন ইনটেলেকচ্যুয়াল দেবতা নয়। ইন্দ্রের দেবসভায় তাকে বসতেই দেয় না। উর্বশী, রম্ভা তার সামনে ক্যাবারে নাচে না।’
‘তা বলে তুই মেয়েছেলের কথায় তোর অমন চাষ করা গোঁফটা ফেলে দিলি। এইভাবে তুই প্রেমের কাছে বিকিয়ে গেলি। স্যামসনের কথা মনে আছে তো। মেয়েছেলের কথায় বেচারা চুল ফেলে দিয়ে ভেড়া বনে গেল। এরপর তোকেও তো ন্যাড়া করে ছেড়ে দেবে।’
‘দেয় দেবে, তবু প্রেম যুগে-যুগে। প্রেমেরও সমাধিই তীই রে এ এ, হেহে পরের লাইনটা কী রে! সুরটা মনে আছে বাণী মনে আসছে না। এই সময়ে মেমারিটাও বিট্রে করছে রে। যৌবনের সেই সব গানটান আবার ঝেড়েঝুড়ে বের করতে হবে। প্রেম সেই এলে, রেল কম্পানির গাড়ির মতো কেন এলে লেটে!’
না, একে আর বাড়তে দেওয়া উচিত নয়। ঝট করে বইটা খুলে ফেললুম। মার্কা দিয়েই রেখেছিলুম। বিভূতি আর কিছু বলার আগেই হুড়হুড় করে পড়তে শুরু করলুম যেন দমকল। হোস পাইপ দিয়ে আগুনে জল ঢালছি : শ্রীরাম বলিলেন—শিরা, কঙ্কালগ্রন্থি ও মাংসময় রমণীর প্রত্যঙ্গে যথার্থ শোভার জিনিস কী আছে? হে জীব! রমণীর খঞ্জননিন্দিত লোচন, চর্ম, মাংস, রক্ত এই সব বিশ্লেষণ করিয়া দ্যাখো, যদি ওই সব বস্তু রমণীয় হয় তো উহাতে আসক্ত হও, নতুবা অযথা উহাতে আসক্ত হও কেন। এখানে কেশ, ওখানে নখ, সেখানে রক্ত, এই সবের সমবায়েই তো রমণীর শরীর। সুতরাং বুদ্ধিমান ব্যক্তি এই কদর্য নারীদেহ লইয়া কী করিবে? অহো! রমনীয় যেসব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বস্ত্র ও অনুলেপনাদি দ্বারা ভূষিত হইয়া থাকে, শৃগাল প্রভৃতি মাংসাশী জীব, সেই সকল অবয়ব ভক্ষণ করে। যে স্তনযুগলে মুক্তহারের কমনীয় শোভা নেত্রগোচর হইয়া থাকে রমণীর সেই কমনীয় পয়োধর কালে, শ্মশানের প্রান্তদেশে সারমেয়গণ কর্তৃক মাংসপিণ্ডের ন্যায়….
বিভূতি উঠে পড়ল, ‘তোর পরীক্ষা-টরিক্ষা আছে বুঝি! ডিপার্টমেন্টাল পরীক্ষা!’
‘তার মানে?’
‘না গড় গড় করে কীসব পড়ে যাচ্ছিস, আবোল তাবোল। পরীক্ষা মানেই তো যতসব ঝড়তি-পড়তি মাল পড়া আর সেই সব মাল উগরে দেওয়া।’
‘এসব ঝড়তি পড়তি নয় বৎস, জীবনের আসল জিনিস, উপলব্ধির কথা। শ্রীরামচন্দ্র বশিষ্ঠ মুনির কাছে বলছেন—হোয়াট ইজ এ মেয়েছেলে! মদ্যে ও মদির-নয়না রমণীতে কোনই প্রভেদ দেখা যায় না। কেন না মত্ততা ও মদমত্ততা দ্বারা চিত্তের বিকার উৎপন্ন করা উভয়েরই ধর্ম! মানবরূপী সুষুপ্ত হস্তীগণ রমণীরূপ বন্ধনস্তম্ভে আবদ্ধ থাকিয়া শমরূপ দৃঢ় অঙ্কুশাঘাতেও প্রবুদ্ধ হয় না।’
‘দাঁড়া-দাঁড়া দুটো শব্দের মানে বল, শম মানে কি, প্রবুদ্ধ মানে কি। বড় কঠিন বাংলারে, কোত্থেকে এ মাল আমদানি করলি। এখন বুঝছি সীতার বিবাহিত জীবনের বারোটা কেন বেজেছিল।’
‘শম মানে সংযম, প্রবুদ্ধ মানে জাগা। সংযমের জুতো পেটাতেও মানুষের ঘুম ভাঙে না। শুয়ে-শুয়ে স্বপ্ন দেখে। কজ্জল ও কুন্ডলে শোভিতা, প্রিয়দর্শনা রমণী, দুষ্কৃতিরূপ অগ্নি শিখারূপিনী হইয়া পুরুষকে তৃণের ন্যায় দগ্ধ করিয়া থাকে। মনরূপ প্রমত্ত হস্তী রমণীরূপ বন্ধনস্তম্ভে রতিশৃঙ্খল দ্বারা বন্ধ হইয়া মূকের ন্যায় অবস্থান করে।’
‘রতিশৃঙ্খল মানে কী রে!’
‘ওই আর কী। বলতে লজ্জা করছে, এই আদরটাদর, ইয়ে টিয়ে। রামচন্দ্র কি বলছেন শোন, রমণীর স্তন, চক্ষু, ভ্রূ, নিতম্ব যাহাই দর্শন করি না কেন, মাংসই তো সেই সকলের সার পদার্থ। এইরূপ অপদার্থ বস্তু লইয়া আমি কী করিব?’ ‘বা বা, তাহলে সীতাকে বিয়েই বা করলে কেন? আর লব-কুশকেই বা আনলে কেন? দাঁড়া আমিও একটা বই বার করছি।’
বিভূতি তাক থেকে খুঁজে-খুঁজে একটা বই নিয়ে এল।
‘কী বই রে!’
‘চার্বাক। শোন, এইবার তুই কানখাড়া করে শোন যাবজ্জীবম সুখং জীবেৎ নাস্তি মৃত্যোরগোচর:। মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই যখন সমস্ত কিছুর উচ্ছেদ তখন ইট ড্রিংক অ্যান্ড বি মেরি। সুখই জীবের লক্ষ্য এবং সব সুখের সেরা সুখ অঙ্গনালিঙ্গনাদিজন্যাং সুখম এব পুরষার্থ:। সুন্দরী রমণী দেখলেই জড়িয়ে ধরো। তোর ওই রাবিশ বইটা বগলদাবা করে কেটে পড়। গেট আউট। আমার এখন অনেক কাজ।’
‘তুই তাহলে বিয়ে করবিই।’
‘হ্যাঁ, করব। অবশ্যই করব। প্রেম একদিনই এসেছিল জীবনে, আমার এ দুয়ারপ্রান্তে…’
‘গান রাখ। বিয়ের পরই অ্যান্ডাগ্যান্ডা রবারক্লথ, মুতো কাঁথা চ্যাঁ ভ্যা।—বাড়ির এই পরিবেশ থাকবে?’
‘বুড়ো বয়েসে তুই দেখবি আমাকে?’
‘তোর বউ দেখবে! আজকালকার মেয়েরা সেবা জানে!’
‘জানুক না জানুক সুখম এব পুরুষার্থ। যা ভাগ। তোর সাধুর কাছে যা।’
।। ৩ ।।
আজ বিভূতির বিয়ে।
দূর থেকে দেখছি বিভূতি একটা রিকশা চেপে আসছে। কোলের ওপর একটা টোপর। পায়ের কাছে একটা চটের ব্যাগে হরেক রকম জিনিস। গোটা কতক তীরকাঠি উঁকি মারছে! মুখটা শুকিয়ে গেছে। নিজের টোপর নিজেই কিনেছে, নিজের বিয়ের বাজার নিজেই করেছে। উপায় কি! কেউ তো নেই। পৃথিবীতে বিভূতি একা। কাকার তরফে অনেক ডালপালা, কিন্তু মুখ দেখাদেখি নেই। ছিরি, বরণডালা, জলসওয়া, নান্দীমুখ, গায়ে হলুদ সাত সতেরো ঝামেলা কে সামলাবে!
‘কী রে বিভূতি? দাঁড়া দাঁড়া। কী রে, কেউ এসেছে?’
‘কে আর আসবে? কে আছে আমার?’
‘রেজেস্ট্রি করলেই পারতিস।’
‘না রে! মার খুব ইচ্ছে ছিল বউ দেখে যাবেন। তখন তো উপায় ছিল না। মা বলেছিলেন, আর যাই করিস নিকে করে আনিসনি। মাকে কথা দিয়েছি, রাখতেই হবে, চলি রে।’
‘তুই জানিস তো?’
‘কী?’
‘মধুছন্দার টি বি হয়েছিল, তোর আগে তিনটে ছেলে ধরেছিল।’
‘সব জানি। জানি বলেই তো বিয়ে করেছি। বিধবার ঠোকরানো মেয়েকে আমি না বিয়ে করলে কে করবে। এই চালা চালা।’
আমার সামনে দিয়ে বিভূতি চলে গেল। ন্যাড়া বেলতলায় গেল। তাই কি?