নীড়ে বসে গেয়েছিলেম আলোছায়ার বিচিত্র গান । সেই গানেতে মিশেছিল বনভূমির চঞ্চল প্রাণ । দুপুরবেলার গভীর ক্লান্তি , রাত্রিবেলার নিবিড় শান্তি , প্রভাত - কালের বিজয় - যাত্রা , মলিন মৌন সন্ধ্যাবেলার , পাতার কাঁপা , ফুলের ফোটা , শ্রাবণ - রাতে জলের ফোঁটা , উসুখুসু শব্দটুকুন কোটর - মাঝে কীটের খেলার , কত আভাস আসা - যাওয়ার , ঝর্ঝরানি হঠাৎ - হাওয়ার , বেণুবনের ব্যাকুল বার্তা নিশ্বসিত জ্যোৎস্নারাতে , ঘাসের পাতার মাটির গন্ধ , কত ঋতুর কত ছন্দ— সুরে সুরে জড়িয়ে ছিল নীড়ে - গাওয়া গানের সাথে । আজ কি আমায় গাইতে হবে নীল আকাশের নির্জন গান ? নীড়ের বাঁধন ভুলে গিয়ে ছড়িয়ে দেব মুক্ত পরান ? গন্ধবিহীন বায়ুস্তরে শব্দবিহীন শূন্য ' পরে ছায়াবিহীন জ্যোতির মাঝে সঙ্গীবিহীন নির্মমতায় মিশে যাব অবাধ সুখে , উড়ে যাব ঊর্ধ্বমুখে , গেয়ে যাব পূর্ণসুরে অর্থবিহীন কলকথায় ? আপন মনের পাই নে দিশা , ভুলি শঙ্কা , হারাই তৃষা , যখন করি বাঁধন - হারা এই আনন্দ - অমৃত পান । তবু নীড়েই ফিরে আসি , এমনি কাঁদি এমনি হাসি , তবুও এই ভালোবাসি আলোছায়ার বিচিত্র গান ।