তখন আকাশতলে ঢেউ তুলেছে পাখিরা গান গেয়ে । তখন পথের দুটি ধারে ফুল ফুটেছে ভারে ভারে , মেঘের কোণে রঙ ধরেছে দেখি নি কেউ চেয়ে । মোরা আপন মনে ব্যস্ত হয়ে চলেছিলেম ধেয়ে । মোরা সুখের বশে গাই নি তো গান , করি নি কেউ খেলা । চাই নি ভুলে ডাহিন - বাঁয়ে , হাটের লাগি যাই নি গাঁয়ে , হাসি নি কেউ , কই নি কথা , করি নি কেউ হেলা । মোরা ততই বেগে চলেছিলেম যতই বাড়ে বেলা । শেষে সূর্য যখন মাঝ - আকাশে , কপোত ডাকে বনে— তপ্ত হাওয়ায় ঘুরে ঘুরে শুকনো পাতা বেড়ায় উড়ে , বটের তলে রাখালশিশু ঘুমায় অচেতনে , আমি জলের ধারে শুলেম এসে শ্যামল তৃণাসনে । আমার দলের সবাই আমার পানে চেয়ে গেল হেসে । চলে গেল উচ্চশিরে , চাইল না কেউ পিছু ফিরে , মিলিয়ে গেল সুদূর ছায়ায় পথতরুর শেষে । তারা পেরিয়ে গেল কত যে মাঠ , কত দূরের দেশে ! ওগো ধন্য তোমরা দুখের যাত্রী , ধন্য তোমরা সবে । লাজের ঘায়ে উঠিতে চাই , মনের মাঝে সাড়া না পাই , মগ্ন হলেম আনন্দময় অগাধ অগৌরবে— পাখির গানে , বাঁশির তানে , কম্পিত পল্লবে । আমি মুগ্ধতনু দিলেম মেলে বসুন্ধরার কোলে । বাঁশের ছায়া কী কৌতুকে নাচে আমার চক্ষে মুখে , আমের মুকুল গন্ধে আমায় বিধুর ক'রে তোলে— নয়ন মুদে আসে মৌমাছিদের গুঞ্জনকল্লোলে । সেই রৌদ্রে - ঘেরা সবুজ আরাম মিলিয়ে এল প্রাণে । ভুলে গেলেম কিসের তরে বাহির হলেম পথের'পরে , ঢেলে দিলেম চেতনা মোর ছায়ায় গন্ধে গানে— ধীরে ঘুমিয়ে পঞ্চলেম অবশ দেহে কখন কে তা জানে । শেষে গভীর ঘুমের মধ্য হতে ফুটল যখন আঁখি , চেয়ে দেখি , কখন এসে দাঁড়িয়ে আছ শিয়রদেশে তোমার হাসি দিয়ে আমার অচৈতন্য ঢাকি— ওগো , ভেবেছিলেম আছে আমার কত - না পথ বাকি । মোরা ভেবেছিলেম পরানপণে সজাগ রব সবে— সন্ধ্যা হবার আগে যদি পার হতে না পারি নদী , ভেবেছিলেম তাহা হলেই সকল ব্যর্থ হবে । যখন আমি থেমে গেলেম , তুমি আপনি এলে কবে ।