নিতাই ও মহাপুরুষ
কোনও এক জ্ঞানী ব্যক্তি বলে গেছেন যে মানুষের মধ্যে বেশিরভাগই মাঝারি দলে পড়ে। কথাটা হয়তো সত্যি, কিন্তু নিতাইকে মাঝারিও বলা চলে না। অনেক ব্যাপারেই সে অত্যন্ত খাটো। দেহের দিক দিয়ে যেমন, মনের দিক দিয়েও ছেলেবেলা থেকে সে খাটোই রয়ে গেছে। তার বয়স সবে আটত্রিশ পেরোল। সে ব্যাঙ্কে যে কেরানির চাকরিটা করে সেটাও অবশ্যই খাটো। মাসে যা আয় হয় তাতে বউ আর একটি তেরো বছরের ছেলে নিয়ে কোনওমতে টেনেটুনে সংসার চলে। তাও ভাগ্যি যে মেয়ে নেই; থাকলে তার বিয়ে দিতে নিতাই ফতুর হয়ে যেত। বউ-এর গঞ্জনা তাকে সইতে হয় সর্বক্ষণই সেটা বলাই বাহুল্য, কারণ সৌদামিনী বেশ দজ্জাল মহিলা। তাই বাড়িতে যেমন নিতাই সদা তটস্থ, আপিসেও বড়বাবু, মেজোবাবু সেজোবাবু সকলের চোখরাঙানি তাকে সহ্য করতে হয়। জীবনে এমন কোনও কাজ যদি সে করত যাতে তার গর্ব হয়, যাতে পাঁচজনে তার সুখ্যাতি করে, তা হলে কী ভালই না হত! কিন্তু তেমন কপাল করে নিতাই আসেনি। তার ধারণা, সে ঈশ্বরের দায়সারা সৃষ্টির মধ্যে একজন! তাকে গড়ার সময় বিধাতা ছিলেন অন্যমনস্ক, তাই সে জীবনে কিছু করতে পারল না।
যাদের উপর ঈশ্বরের সুনজর পড়ে তারা কেমন মানুষ হয়? তার একটা উদারণ নিতাই দিতে পারে এখনই! দুদিন হল কলকাতায় একটি সাধুবাবা এসেছেন–জীবানন্দ মহারাজ–যাঁর শিষ্য-শিষ্যার নাকি ইয়ত্তা নেই, যিনি বাগ্মী, যিনি সুকণ্ঠ, যাঁর গীতার ব্যাখ্যা শুনে লোকে মোহিত হয়ে যায়, যাঁর চরণস্পর্শ করতে পারলে লোকে কৃতার্থ বোধ করে। ঈশ্বরের এক ধাপ নীচেই তাঁর স্থান। জীবানন্দ মহারাজ। হ্যারিংটন স্ট্রিটের এক ভক্তের বাড়িতে এসে উঠেছেন কেষ্টনগর থেকে, শহরে তাঁকে নিয়ে হইচই পড়ে গেছে, কাগজের প্রথম পাতায় তাঁর ছবি, এমন জাঁদরেল মহাপুরুষ নাকি বহুঁকাল দেখা যায়নি।
নিতাই আর তার স্ত্রী দুজনেরই ইচ্ছা এঁর দর্শন পেতে, কিন্তু যা শোনা যাচ্ছে, ভিড়ের চোটে সাধারণ লোকের পক্ষে এঁর নাগাল পাওয়া দুষ্কর ব্যাপার। যে বাড়িতে এসে তিনি উঠেছেন, সে বাড়ির মাঠে শামিয়া খাটানো হয়েছে। বাবাজি সকাল-সন্ধ্যা গিয়ে বেদিতে বসেন, ভক্তসমাগম হয়, বাবাজি নানারকম আধ্যাত্মিক বিষয় নিয়ে জ্ঞানী জ্ঞানী কথা বলেন। ভক্তদের মধ্যে যাঁরা খুব ভাগ্যবান তাঁরা সামনের দিকে বসেন, বাবার মর্জি হলে তাঁদের আলাদা করে ডেকে এনে কথা বলেন, তাতে ভক্তদের ভক্তি বেড়ে যায় দ্বিগুণ।
নিতাই যে কোনওদিন এ আসরে প্রবেশ করতে পারবে, আর প্রথম সারিতে বসবার সুযোগ পাবে, সেটা সে স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত সে সুযোগ এসে গেল রসিলালের কল্যাণে। রসিকলাল বোস নিতাইয়ের ভায়রা ভাই। সে বড় কোম্পানিতে বড় চাকরি করে, তবে তার জন্য তার কোনও দম্ভ নেই। সে নিতাইয়ের বাড়িতে মাসে অন্তত তিনবার করে আসে, এবং ভোলা মনে নানারকম গালগল্প করে। সাধু সন্ন্যাসী সম্পর্কে তার একটা আগ্রহ আগে থেকেই ছিল, এবং সে প্রথম সুযোগেই জীবানন্দ বাবাজির শিষ্যত্ব গ্রহণ করে তাঁর প্রথম শ্রেণীর চেলাদের মধ্যে একজন হয়ে গেছে। রসিকলালই এক শনিবার নিতাইয়ের বাড়িতে এসে বলল, একজন খাঁটি মহাপুরুষ দেখতে চাও তো চলে এসো আমার সঙ্গে।
কার কথা বলছ? নিতাই প্রশ্ন করল।
কার কথা আবার?–একজনই তো আছেন। হ্যারিংটন স্ট্রিটে ডেরা বেঁধেছেন। চোখের জ্যোতি দেখে বোঝা যায় পৌরাণিক যুগে সাধু সন্ন্যাসীরা কেমন ছিলেন। তাঁর দর্শন না পাওয়াটা জীবনে একটা খুব বড় লস্।
কিন্তু তাঁর একশো হাতের মধ্যে তো যাওয়াই যায় না বলে শুনেছি।
সবাই পারে না যেতে, কিন্তু আমি কী কপাল করে এসেছি জানি না–আমার স্থান একেবারে প্রথম সারিতে। আমার উপর বাবার একটা টান পড়ে গেছে। কথা যখন বলেন তখন বেশিরভাগটাই আমার দিকে চেয়ে বলেন। শুনে গায়ে কাঁটা দেয় বারবার। যাবে তো বলো।
সে আর বলতে! এমন সুযোগ আসবে সে তো ভাবতেই পারিনি।
হিমালয়ে পঁচিশ বছর তপস্যা করেছেন গঙ্গোত্রীর ধারে। দেখলে আর বলে দিতে হয় না যে ইনি একজন খাঁটি সিদ্ধপুরুষ।
দিন ঠিক হয়ে গেল। আগামী মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ছটায় রসিকলাল আসবে নিতাই আর তার স্ত্রীকে নিয়ে যেতে।
সামনে বসতে পারব তো?
রসিকলালের কথায় যেন পুরোপুরি ভরসা হচ্ছিল না নিতাইয়ের।
না পারলে আমার নাম নেই, জোরের সঙ্গে বলল রসিকলাল। ভাল কথা, একটু আতর মেখে যেও! বাবাজি আতরের খুব ভক্ত।
আশ্বিন মাস, তাই ছটা থেকেই অন্ধকার হয়ে গেছে। হ্যারিংটন স্ট্রিটে ব্যারিস্টার যতীশ সেনগুপ্তের বাড়ির মাঠে শামিয়ানার নীচে ফুয়োরেসেন্ট লাইটের ব্যবস্থা, তাই বাবাকে দেখতে কারুর অসুবিধা হয় না। সুবেশী নারীপুরুষের ভিড় দেখে প্রথমে নিতাই হকচকিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু রসিকলাল তাদের সটান নিয়ে গেল একেবারে সামনের সারিতে। রসিকলাল পৌঁছিয়েই প্রথমে সাড়ম্বরে বাবাজির পদধুলি নিল, আর তার দেখাদেখি নিতাই আর তার স্ত্রীকেও নিতে হল। তারপর মাটিতে বসে নিতাই প্রথম বাবাজির দিকে ভাল করে চাইল।
সৌম্য চেহারা তাতে সন্দেহ নেই। আবক্ষ দাড়ি, মাথায় কাঁচা-পাকা মেশানো ঢেউ খেলানো চুল কাঁধ অবধি নেমে এসেছে, পরনে গেরুয়া সিল্কের আলখাল্লা, গলায় তিনটে বড় বড় রুদ্রাক্ষের মালা। বাবার দুপাশে বেলফুলের মালা তৃপ করে রাখা রয়েছে, বোঝাই যায় সুগন্ধের জন্য ভক্তরা সেগুলো বাবাকে দিয়েছেন। নিতাই নিজে কোনও গন্ধদ্রব্য ব্যবহার করেনি, কারণ ও জিনিসটা তার বাড়িতেই নেই। কিন্তু আতর ও অন্যান্য সেন্টের গন্ধ সে চারদিক থেকেই পাচ্ছে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে ধূপের গন্ধ। সব মিলিয়ে বেশ একটা নেশাধরানো ভাব।
বাবা এতক্ষণ চুপ করে ছিলেন, এবার মুখ খুলে গীতার একটি শ্লোক আউড়িয়ে তার ব্যাখ্যা শুরু করলেন।
নিতাইয়ের দৃষ্টি সম্পূর্ণ বাবার উপরে নিবদ্ধ। তার একটা কারণ আছে। একটা নয়, দুটো। এক হল বাবার চোখ। তিনি হলেন যাকে বলে লক্ষ্মীট্যারা। আর দুই হল বাবার বাঁ গালে চোখের নীচে একটা বেশ বড় আঁচিল।
এই দুইয়ে মিলে নিতাইকে হঠাৎ যেন কেমন অন্যমনস্ক করে দিল। ওই আঁচিল আর ওই লক্ষ্মীট্যারা চোখ।
এবারে আরও ভাল করে খুঁটিয়ে বাবার মুখের দিকে চেয়ে দেখল নিতাই, আর একাগ্রভাবে শুনতে। লাগল বাবার কথা। দিব্যি গড়গড় করে ব্যাখ্যা করে চলেছেন। সুললিত কণ্ঠস্বর, মনে হয় ইনি গানও ভাল করবেন। তার সাক্ষ্য দিচ্ছে বাবারই একপাশে রাখা হারমোনিয়াম আর খোল।
হঠাৎ একটা কথায় বাবা যেন একটু তোলে গেলেন। একবার মাত্র একটা সামান্য হোঁচট, কিন্তু তাতেই নিতাইয়ের মাথার মধ্যে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল। আর সেই সঙ্গে তার মুখ দিয়ে বেশ জোরের সঙ্গে উচ্চারিত হল একটা নাম–
ছেনো!
নামটা বাবার গলার চেয়ে এক ধাপ উপরে হওয়াতে সভার মধ্যে দিয়ে একটা বিস্ময় আর বিরক্তি মেশানো চমকের স্রোত বয়ে গেল। এই বেয়াদব বেআক্কেল বেল্লিকটি কে, যে বাবার ব্যাখ্যার সময় এভাবে চেঁচিয়ে ওঠে?
রসিকলালও অবিশ্যি আর সকলের মতোই হতভম্ব। ভায়রা ভাইয়ের মাথাখারাপ হয়ে গেল নাকি? ছেনো? ছেনো আবার কী?
কথাটা বলেই অবিশ্যি নিতাই একদম চুপ মেরে গেছে। আর সেইসঙ্গে মুহূর্তের জন্য বাবাজির মুখ বন্ধ হয়ে তাঁর দৃষ্টি চলে গেছে এই অর্বাচীন অপরাধীটির দিকে।
এর পরে যে ঘটনাটা ঘটল তার জন্য নিতাই প্রস্তৃত ছিল না, যদিও থাকা উচিত ছিল। বাবাজির দুই পাশে বসা তার দুই প্রধান চেলা উঠে এসে নিতাইকে বললেন, আপনাকে বাইরে যেতে হবে। বাবাজির হুকুম। উনি ব্যাঘাত বরদাস্ত করেন না।
নিতাই সস্ত্রীক উঠে পড়ল, আর সেইসঙ্গে রসিলালকেও উঠতে হল।
গেটের বাইরে এসে রসিকলাল নিতাইকে বলল, কী ব্যাপার বলো তো? তোমার কি ভীমরতি ধরল নাকি? এত সুযোগ দিলাম, তারপর এইরকম একটা কেলেঙ্কারি করে বসলে?
নিতাই বলল, কিন্তু ও যে সত্যি ছেনো! ওর ভাল নাম শ্রীনাথ। ও কাটোয়াতে আমাদের ইস্কুলে আমার সঙ্গে এক ক্লাসে পড়ত।
সব কথা রাস্তায় দাঁড়িয়ে বলা গেল না। রসিকলাল নিতাইয়ের সঙ্গে নীলমণি আচার্য লেনে তাদের বাড়িতে আবার ফিরে এল। সেখানে তক্তপোশে বসে নিতাই পুরো ঘটনাটা বলল।
ওই শ্রীনাথ ওরফে ছেনো ইস্কুলের নামকরা শয়তান ছেলে। তিনবার পর পর প্রোমোশন না পেয়ে অবশেষে নিতাইয়ের সহপাঠী হয়। সে-ও লক্ষ্মীট্যারা, তারও ছিল বাঁ চোখের নীচে আঁচিল, সে-ও কথা বলার সময় হঠাৎ হঠাৎ তোলে যেত। তবে তার চেহারাটা ছিল ভাল, ভাল গান গাইত আর ভাল অ্যাকটিং করতে পারত। এই শেষের দুই গুণের জন্য সে ইস্কুলে টিকে ছিল, নইলে তাকে অনেকদিন আগেই রাস্টিকেট করা হত।
সেই ছেনোই আজ হয়ে গেছে জীবানন্দ বাবাজি, যাঁর শিষ্য সংখ্যাতীত, যাঁর তত্ত্বকথা শোনার জন্য লোকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকে, যাঁর দর্শন পেলে লোকের জন্ম সার্থক হয়ে যায়।
রসিকলাল সব শুনে বলল, তোমার ছেনো ইস্কুলে যাই করে থাকুক না কেন, সব মানুষের জীবনেই পরিবর্তন আসতে পারে। আজ যে সে সিদ্ধপুরুষ তাতে কোনও ডাউট নেই। কাজেই তুমি তোমার ছেলেবেলার কথা ভুলে যাও। কালই চলো বাবার কাছে ক্ষমা চাইবে। বাবার দয়া অশেষ; তিনি তোমাকে নিশ্চয়ই ক্ষমা করবেন।
নিতাইয়ের মন কিন্তু অন্য কথা বলছে। আজ এতদিন পরে তার মনে পড়ে গেছে ইস্কুলের কথা। ছেনো তাকে ভালমানুষ পেয়ে নানারকম ভাবে অপদস্থ করত। কতরকম ভাবে যে সে নাজেহাল হয়েছে ওই ছেনোর হাতে, সেটা কি সে ভুলতে পারে? ইস্কুলে কোনওদিন তার সঙ্গে পেরে ওঠেনি নিতাই, কারণ ছেনো ছিল অত্যন্ত ধূর্ত। আর সেই ছেনো আজ…
নিতাই আর ভাবতে পারল না। আজকে আসরে ছেনো বলে চেঁচিয়ে ওঠাটা অন্যায় হয়েছে ঠিকই, কিন্তু নিতাইয়ের পক্ষে নিজেকে সামলানো সম্ভব ছিল না। সব অবস্থায় সামলে চলা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। আজকের অবস্থাটা ছিল সেইরকম একটা অবস্থা।
ছেনোর কাছে নিতাই ক্ষমা চাইবে কী করে? সেটা সম্ভব নয়।
.
পরদিন ছিল বুধবার। নিতাইয়ের আপিস দশটায়; সে বাড়ি থেকে বেরোয় সাড়ে নটায়। সকাল সাতটায় চা খেয়ে সবে সে কাগজটা খুলেছে এমন সময় দরজায় টোকা পড়ল। রাস্তার উপরেই ঘর, দরজা খুলে নিতাই দেখল একটি চশমা পরা ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছে। বেশ স্মার্ট চেহারা, বয়স বেশি নয়।
আপনি–? প্রশ্ন করল নিতাই।
আমি দৈনিক বার্তা কাগজ থেকে আসছি, বললেন ভদ্রলোক। আমার নাম দেবাশিস সান্যাল। আমি একজন সাংবাদিক। গতকাল সন্ধ্যায় জীবানন্দ বাবার আসরে আমি উপস্থিত ছিলাম। কালকের পুরো ঘটনাটা আমি দেখি। তারপর আপনাদের ধাওয়া করে এসে আমি আপনাদের বাড়িটা দেখে যাই।
কিন্তু আজ আসার কারণটা–?
আমি জানতে চাই আপনি ওভাবে চেঁচিয়ে উঠলেন কেন, এবং তার ফলে আপনাকে ওখান থেকে সরানো হল কেন? আপনি যা বলবেন সেটা আমি রেকর্ড করে নেব। আমাদের ইচ্ছা, এই নিয়ে একটা খবর বার করা।
নিতাই অনুভব করল যে, সে হঠাৎ সাংঘাতিক ক্ষমতার অধিকারী হয়ে পড়েছে। তার মতো নগণ্য ব্যক্তির পক্ষে এটা একটা আশ্চর্য ঘটনা। সে এই সাংবাদিককে আসল ঘটনা সব খুলে বলে দিয়ে জীবানন্দ বাবাজির মুখোশ খুলে দিতে পারে। সেইসঙ্গে তাঁর ভক্তদের মধ্যে তুমুল আলোড়নের সৃষ্টি করতে পারে।
এটাই কি তার কর্তব্য? এই ভণ্ড সাধুর মুখোশ খুলে দেওয়া, সেই ইস্কুলের ছেলের বাঁদরামির কথা প্রকাশ করে?
কিন্তু পরক্ষণেই নিতাই বুঝতে পারল যে, যে করেই হোক, ছেনো আজ জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে বলে তাকে হিংসে করেই নিতাই সব ব্যাপারটা ফাঁস করে দিতে চাইছে। শুধু তাই না; ছেনোর হাতে যে নিতাই বারবার নাজেহাল হয়েছিল সেটা নিতাই আজ অবধি ভুলতে পারেনি। তাই এখানে একটা প্রতিহিংসার প্রশ্নও আসছে।
নিতাই বুঝল যে, এ কাজটার মধ্যে খুব একটা বাহাদুরির ব্যাপার নেই। নিজে আধ-পেটা খাচ্ছে বলে পরের ভাত মারার ব্যাপারটা কীরকম প্রবৃত্তি? সে নিজে সৎ থেকেছে ঠিকই, কিন্তু বয়সের সঙ্গে যে
ছেনোর মধ্যে একটা আমূল পরিবর্তন আসেনি সেটা জোর দিয়ে কে বলবে? মানুষের মন কখন।
কোনদিকে কীভাবে চলে সেটা বোঝা বড় শক্ত। ছেনোর যদি সত্যিই সংস্কার হয়ে থাকে?
সাংবাদিক উদগ্রীব হয়ে চেয়ে আছেন নিতাইয়ের দিকে।
নিতাই বলল, কালকের ঘটনাটি সম্পর্কে আমি কিছু বলতে চাই না। এটা কাগজে ছাপানোর উপযুক্ত খবর নয়।
আপনি কিছুই বলবেন না? হতাশার সুরে প্রশ্ন করলেন সাংবাদিক।
আজ্ঞে না, কিছুই না।
.
বলাই বাহুল্য, পরের দিন দৈনিক বার্তা কাগজে এ বিষয়ে কিছুই বেরোলো না। কিন্তু একটা আশ্চর্য ব্যাপার এই যে, জীবানন্দ বাবাজি কলকাতায় এসেছিলেন পনেরো দিনের জন্য, তিনি হঠাৎ এই ঘটনার পরদিনই–অর্থাৎ সাতদিনের মাথায়–তাঁর ভক্তদের কাছে ঘোষণা করলেন যে, একটা জরুরি টেলিগ্রাম পেয়ে তাঁকে পাটনা চলে যেতে হচ্ছে।
এই ঘটনার পর দুবছর কেটে গেছে। বাবাজি কিন্তু আর কলকাতামুখো হননি।
সন্দেশ, আষাঢ় ১৩৯৩