প্রথম খণ্ড (শ্রদ্ধেয় ফণিভূষণ আচার্যকে)
1 of 2

নিজের বিদ্যুৎ নিজে উৎপাদন করো

নিজের বিদ্যুৎ নিজে উৎপাদন করো

হাটাও। সব হাটাও। দুটো মুটে এনে ওই ফাইলপত্তর সব স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ঘরে দিয়ে এসো। আমার দ্বারা আর সম্ভব হল না। তোমার হাতে ওটা আবার কী!

এটা সেই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ফাইলটা স্যার। পুলিশ আউটপোস্টে একটা চায়ের দোকান করার প্রস্তাব এসেছে। আপনি প্রাোপোজালটা আজ একবার দেখবেন বলেছিলেন, বলেছিলেন চা আগে, না পুলিশ আগে, আমাদের ভাবতে হবে। এক কাপ চা পেটে পড়লে কাজ বেশি হয়, না পেটে পুলিশের রুলের গুঁতো পড়লে কাজ বেশি হয়, না ধান্যেশ্বরী পড়লে হয়, একসপার্ট ওপিনিয়ান নিয়ে দেখবেন।

হ্যাঁ হ্যাঁ বলেছিলুম। ওটাও স্বাস্থ্যদপ্তরে দিয়ে এসো। ওসব সাইকোলজিক্যাল ব্যাপার আমার জ্ঞানগম্মির বাইরে। আমি ডাক্তার নই, ইঞ্জিনিয়ারও নই, ওসবের আমি বুঝি কি! এই ক’মাস ইয়ারকি করতে গিয়ে অবস্থাটা কি দাঁড়িয়েছে বলো তো? অ্যাঁ, কী সাংঘাতিক অবস্থা? এই আছে এই নেই। আমার নিজেরই কীরকম আতঙ্ক ধরে গেছে! ফাইলপত্তর দেখব কী? কেবলই মনে হচ্ছে এই গেল, এই গেল। আর যাওয়াটা কীরকম? একেবারে ফচাত করে ঘুড়ি উপড়ে যাওয়ার মতো। ছেলেবেলায় ঘুড়ি উড়িয়েছ!

ঘুড়ির কথায় একটা আইডিয়া আমার মাথায় এল স্যার। বলব?

বলে ফ্যালো, বলে ফ্যালো, নিমজ্জমান ব্যক্তি একটি তৃণখণ্ড দেখলেও আঁকড়ে ধরতে যায়। বলো, বলো।

ব্যাপারটা হল, ঘুড়ি দিয়েই তো প্রথম বিদ্যুৎ ধরা হয়েছিল। মনে পড়ছে আপনার ঘটনাটা! সেই কে এক সায়েব মেঘলা দিনে তারের সুতো দিয়ে ঢাউস একটা ঘুড়ি উড়িয়েছিল!

ঠিক ঠিক, মনে পড়েছে, দি আইডিয়া! তুমি এখনি স্পেশ্যাল ক্যাবিনেট মিটিং কল করো তিনতলায়। বলো, পনেরো মিনিটের মধ্যে, মুখ্যমন্ত্রী সো ডিজায়ার্স। কোনও ধানাইপানাই না, কোনও পার্টিগত কোন্দল নয়। বলো ‘সেভ ওয়েস্ট বেঙ্গল’ পর্যায়ে এস ও এস মিটিং। তোমাদের ওই সার্কুলারে বানানটা ঠিক করে দিয়েছ প্রতুল?

কোনটা স্যার?

বড্ড ভুলে যাও তুমি। সেভ বানানটা। বানানটা এস এ ভি ই। কোত্থেকে একটা এইচ আমদানী করে…। ছি, ছি, এস এইচ এ ভি ই, শেভ মানে তো কামান, ওয়েস্ট বেঙ্গলকে কামিয়ে ছেড়ে দাও। আমি কি বলেছিলুম— পশ্চিমবঙ্গকে বাঁচাও না কামাও! আমি এনকোয়ারি কমিশন বসাব। দেখি, ধরো তো লাইনটা, জাস্টিস দ্বারকানাথ…

তিনি তো বহুকাল মারা গেছেন স্যার?

তিনি মারা গেলেও তাঁর নামে একটা রাস্তা আছে স্যার, সেই রাস্তায় আমার এক বন্ধু রিটায়ার্ড জজ সায়েব আছেন। পুরোটা না শুনেই তোমরা হইহই করো। চোখকান খোলা রেখেই ওয়েস্ট বেঙ্গলকে বাঁচাতে গিয়ে কামিয়ে ছেড়ে দাও। দেখি ডিরেক্ট লাইনে ধরি।

হ্যালো? হ্যালো? কে সোনালি? ডার্লিং, বাপি কোথায়? বারান্দায় বসে হাতপাখার হাওয়া খেতে-খেতে আমাকে গালাগাল দিচ্ছেন? যাক পরমায়ু বাড়ছে আমার। শোনো, লাইনটা একবার দাও না লক্ষ্মীটি।

হ্যালো জজ সাহেব? হ্যাঁ খুব গরম। গরম গরম থাকাই তো ভালো। শরীরের রক্ত চলাচল বাড়বে। মোটাদের আবার গরম একটু বেশি। মোটা হওয়ার আগে পাওয়ার পজিশানের কথা ভাবা উচিত ছিল। না না লোডশেডিং চলছে চলবে। চলছে চলবেটাই আমাদের ইটার্নাল শ্লোগান গান। শুনুন, শুনুন, নো রাগারাগি—আমি কিছু রোজগারের ব্যবস্থা করে ফেলেছি। ইয়েস, অ্যানাদার এনকোয়ারী কমিশন। না না জেনারেটর ভাঙাভাঙি নয়। এবার অন্যধরনের, এস এ ভি ই-সেভকে কারা স্যাবোতাজ করে এস এইচ এ ভি ই-শেভ করেছে, তদন্ত করতে হবে। হ্যাঁ হ্যাঁ, বাঁচানটা কামান হয়ে গেছে। আরে ভেতরে বিভীষণ, বাইরে ভীষণ, আমাদের ভাবমূর্তি পাংচার করে দিলে। কখন আসবে? কী কখন আসবে? পাওয়ার। ও:, কলা দাও মুলো দাও ভবী ভোলার নয়। জানি না, পাওয়ারের ব্যাপার আমি জানি না। আমি ও মাল হেলথ ডিপার্টমেন্টের হাতে তুলে দিচ্ছি। ও আপনি বুঝবেন না। স্বাস্থ্য দপ্তরই এখন থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা নেবে। সন্তান উৎপাদন আর বিদ্যুৎ উৎপাদন—ইয়েস ইয়েস, সেম কপুলেশান থিউরি—হ্যাঁ, হ্যাঁ, নেগেটিভ পজেটিভের খেলা।

যা: লাইনটা কেটে গেল রে শালা! পার্টিবাজি করে করে দেশটার বারোটা বাজিয়ে দিলে মাইরি! চল প্রতুল ক্যাবিনেটটা সেরে আসি। মন্ত্রিরা সব আছেন? —আছেন স্যার। —বলো কী? —এখন তো থাকবেনই স্যার, মক্কেলদের তো চেনেন। এই একমাত্র জায়গা যেখানে লোডিশেডিং হয় না। পাখার লোভে সব চেম্বারে চেম্বারে ঘাপটি মেরে হাওয়ার লোভে বসে আছেন। একজন তো স্যার হোল ফ্যামিলিটাকে ঘরে এনে পুরেছেন।

—সে কী?

হ্যাঁ স্যার। ওনার ফ্যামিলি গরম সহ্য করতে পারে না। পতির পুণ্যে সতীর পুণ্য হচ্ছে। তোলা উনুন এসেছে। দেখে এলুম বেগুনপোড়া হচ্ছে।

—সে কি হে, সেক্রেটারিয়েটে বেগুনপোড়া!

—আজ্ঞে হ্যাঁ, মন্ত্রিদের সাতখুন মাফ।

।। দৃশ্যান্তর ।।

বন্ধুগণ, এই জরুরি অধিবেশন ডাকার কারণটা আপনাদের বলি, কাল রাত্তিরবেলা আমার গৃহিণী আমাকে বাড়ি থেকে অপদার্থ বলে দূর করে দিয়েছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান আমার দ্বারা হল না। আমি দেশবাসীকে বলেছি—এটা আমার একার পিতার শ্রাদ্ধ হতে পারে না। পায়ের ওপর পা তুলে বসে থাকবেন আর আমার এমন পোড়া কপাল সকলের মাথার ওপর পাখা ঘোরাব, নাকের ডগায় আলো ঝোলাব। মন্ত্রী বলে কী আমি মানুষ নই! আমি সাফ বলে দিয়েছি—নিজের বিদ্যুৎ নিজে উৎপাদন করো। মামার বাড়ি নাকি! ওয়ার্ক এডুকেশান চালু হয়ে গেছে, নিজেদের বুদ্ধিতে না কুলোলে নিজের ছেলেকে জিগ্যেস করো। স্কুলের দিদিমণিদের কাছে শিখে নাও। কিছু বলার আছে? শিল্পমন্ত্রী একটু উসখুস করছেন মনে হয়!

হ্যাঁ খুসখুস করছি। দু-লক্ষ বত্রিশ হাজার তিনশো বারো জন শ্রমিক বেকার হয়ে বসে আছে।

কোথায় বসে আছে?

রকে, গাছতলায়, নদীর ধারে, রাস্তার পাশে, পাড়ার চায়ের দোকানে।

তাদের সাকার করে দিন। শিল্প তো আপনার হাতে!

মালেক, পাওয়ারটা যে আপনার হাতে। বিদ্যুতের অভাবে শিল্পে যে লালবাতি জ্বলছে। উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, দেশ হড়কে যাচ্ছে, ইয়ে হচ্ছে!

তাই নাকি মশাই! অত সব কাণ্ড হচ্ছে। আমি ভেবেছিলুম, মানুষ শুধু ঘেমে যাচ্ছে। গর্তে পড়ে যাচ্ছে। আপনি কি এতদিন নাকে সরষের তেল দিয়ে নিদ্রা যাচ্ছিলেন!

আজ্ঞে না। সে গুড়ে বালি। রেশানে যে ক-সপ্তাহ রেপসিড দেওয়া হয়েছিল সেই সময় দু-এক দিন নাকে, নাইকুণ্ডুলে, ব্রহ্মতালুতে, বুড়ো আঙুলের মাথায় দিয়েছিলুম। বাজারের সরষের তেলে আমার ফেথ নেই। সব ভেজাল। আমাদের ব্যাবসাদারদের আমি বিশ্বাস করি না। সব চুর, স্যুর, স্যুর!

ও এখন সব স্যুর হয়ে গেল! ইলেকসানের সময় মনে ছিল না, যা দিচ্ছে সব পরে উশুল করে নেবে!

মুখ সামলে!

মুখ থাকলে তো সামলাব! আমার মুখের কিছু রেখেছেন আপনারা!

এই রে কেন্দ্রের হাওয়া লেগেছে রে!

কে বললেন, এই অশ্লীল কথাটা?

আমি বলেছি।

কেন, বলেছি তো কী হয়েছে?

বলবেন না।

বেশ করব বলব।

আমি জানি যেখানে মেয়েছেলে সেখানেই অশান্তি। বউ ঢুকলেই যৌথ পরিবার ভাঙবে।

তুমি কী স্বপ্ন দেখছ? এখানে আবার নারী পেলে কোথায়? আমরা সব ক’টাই তো পুরুষ।

আছে ভাই, আছে। তিনি নেপথ্যে বসে কলকাঠি নাড়ছেন।

বাস বাস নো মোর সাইড টকস। কাজের কথা হোক। কোন্দল বড় ছোঁয়াচে জিনিস রে ভাই।

আপনার ওই দু-লক্ষ বেকারকে আমি এখনি সাকার করে দিচ্ছি। শিল্পমন্ত্রী বসে-বসে নিজের ক্ষতস্থান না চেটে কাজে নেমে পড়ুন। বন্ধুগণ, আমি সরকার পরিচালিত একটি বোমা লাটাই প্রতিষ্ঠান চালু করার প্রস্তাব রাখছি। উত্তেজিত হবেন না। এটা আমার পি-এর মস্কিষ্ক ঢেউ। প্রতুল পরিষ্কার করো।

মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী, সমবেত মন্ত্রীমণ্ডলী এবং অদৃশ্য দেশবাসীগণ, আমাদের সামনে আজ সুপরিকল্পিত অন্ধকার। যতবার আলো জ্বালাতে চাই নিবে যায় বারে বারে। রাজনীতির ফুসকারে ঘোর অন্ধকার। সেই অন্ধকারে আমাদের স্বায়ত্তশাসনমন্ত্রীর আরও ঘনঘোর ষড়যন্ত্র চলছে। তাঁর খন্দকার বাহিনী সারা শহর আর শহরতলীতে বড় বড় পিল, গাববু বানিয়ে চলেছে মনের আনন্দে। তিনি কাল্পনিক কোনও যুদ্ধের কথা ভেবেই হয়তো এই পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন করেছেন।

কী বললে ছোকরা! পেপারওয়েট ছুঁড়ে মাথা ভেঙে দেব। কেউ আটকাতে পারবে না। কোনও পার্টির সাধ্য হবে না তোমায় বাঁচায়। আমার কাজ আমি করছি। আমি যদি না খুঁড়ি, কে খুঁড়বে! আমার মেসোমশাই! জানো না শাস্ত্রে কী বলেছে— যতই খুঁড়িবে ভাই তত পাবে ধন। আমি খুঁড়তে বলি তাই কন্ট্র্যাকটাররা পয়সা পায়, সেই পয়সা লেবারের পকেটে যায়, তারপর কিঞ্চিৎ এদিক সেদিক হয়। খননেই লক্ষ্মীলাভ। অত হিংসে কেন হে তোমার। আমি যতই খুঁড়ব আমার স্বায়ত্তশাসনের শিকড় ততই নামবে। তোমার অত চোখ টাটাচ্ছে কেন হে!

না, চোখ টাটাবে কেন? তবে লোকে বড় বিরক্ত হচ্ছে। একটু বৃষ্টি হলেই ডুব জল, তার ওপর অন্ধকার।

লোক না পোক। যাও শালা লোক না পোক। ছ’লাখ মরলেও অনেক ভোটার থাকবে! লোকের আর কি? তারা আমার পহা দেবে! যে আমায় পহা দেবে তাকেই আমি খুঁড়তে দেব। যাও, আমার সাফ কথা।

কী রকম অ্যাডাম্যান্ট অ্যাটিচ্যুড দেখেছেন স্যার। এভাবে মিনস্ট্রি চলে।

তুমি তোমার পরিকল্পনা বলে যাও। ক’দিন আর খুঁড়বে। সেদিনের আর বেশি দেরি নেই রে বাপু, ভড়ভড় করে সব গর্তে ঢুকে যাবে। ভরাডুবি আমাদের ললাটলিপি।

তা আজ সকালে ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে এক সায়েবকে ঘুড়ি ওড়াতে দেখলুম। তামার সরু তারে ঢাউস ঘুড়ি। সেই ঘুড়ি দিয়ে সিরসির করে বিদ্যুৎ নেমে এল।

প্রতুল, প্রতুল এবার আমাকে বলতে দাও! বন্ধুগণ, স্টেট বোমালাটাই অ্যান্ড ঘুড়ি করপোরেশান স্মল স্কেল সেকটারে থাকবে। এককোটি টাকা ইনিসিয়াল ইনভেস্টমেন্ট। আমরা লক্ষ-লক্ষ বোমালাটাই আর ঘুড়ি তৈরি করে দেশবাসীকে দুগ্ধ বিপণন কেন্দ্র মারফত বিতরণ করব। সমস্ত ঘুড়ির গায়ে আমাদের পার্টির সিম্বল থাকবে। প্রত্যেককে ঘুড়ি ওড়াতে হবে, ছেলে বুড়ো জোয়ান মদ্দ। সারা আকাশ ছেয়ে যাবে ঘুড়িতে। কেবল মনে রাখতে হবে—প্যাঁচ খেলা চলবে না। নো প্যাঁচ। নো ভোমমারা বলে চিৎকার।

অবজেকসান।

কী হল আবার?

ঘুড়িতে শুধু আপনার পার্টির সিম্বল থাকবে কেন? মামার বাড়ি নাকি? সব পার্টির সিম্বল থাকবে। নির্বাচনে যে পার্সেন্টেজে সিট ভাগ হয়েছিল, সেই ভাগে সিম্বলওয়ালা ঘুড়ি তৈরি হবে।

না, তা কেন! ইন দি মিনটাইম আমাদের পার্টির স্ট্রেংথ অনেক বেড়ে গেছে। সেদিনের র‌্যালিই তার প্রমাণ। ফর্টি পার্সেন্ট ঘুড়িতে আমাদের পার্টির সিম্বল বসাতে হবে।

আস্তে-আস্তে। গাছে কাঁঠাল, গোঁফে তেল। মুখ্যমন্ত্রী তো ঘুড়ি ওড়াবেন, ষষ্ঠ শ্রেণির জ্ঞান নিয়ে বিদ্যুৎ আসবে কীভাবে একটু ব্যাখ্যা করবেন কি!

প্রতুল, ব্যাখ্যা বানাও।

স্যার, ফঁসি গেলা। আই মিন ফেঁসে গেছি। ঘুড়িটা বিদ্যুতের প্রমাণ মাত্র। শুধু তাই নয়, ঘুড়ি দিয়ে বিদ্যুৎ ধরার জন্যে ঝড়বৃষ্টি চাই, বজ্রপাত চাই। ঘুড়ি পরিকল্পনা বাতিল স্যার।

বাতিল কেন? অত সহজে হেরে যাবে কেন? রোজই ঝড়বৃষ্টি আর বজ্রপাতের রেকর্ড তো খারাপ নয়, ভেরি ফেভারেবল! এই তো সেদিন গোটাকতক কুপোকাত হয়ে গেল। প্রয়োজন হলে আমরা আর একটা লেজুড় পরিকল্পনা নিতে পারি। ভুলে যেও না এটা বিজ্ঞানের যুগ। আমরা যদি বঙ্গোপসাগরে অনবরতই একটা নিম্নচাপ তৈরি করে রাখতে পারি তাহলেই তো মার দিয়া কেললা।

তা হলেও স্যার ওই ঝটিতি বিদ্যুৎ কীভাবে কাজে লাগাবেন। বই লিখছে, সাহেব শক খেয়ে মাটিতে ফ্ল্যাট হয়ে পড়ে গেলেন। তারপর উঠেই ধেইধেই করে নৃত্য করতে লাগলেন।

তা হলে আমার আর একটা পরিকল্পনা আছে। সেটা করতে পারলে—ভারত আবার জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে। বন্ধুগণ, আপনারা জোনাকি দেখেছেন?

আপনি কি জোনাকির চাষ করতে বলছেন, তাহলে গোবরের প্রাোডাকসান কিন্তু বাড়াতে হবে!

পুরোটা শুনুন তারপর ফ্যাচর ফ্যাচর করবেন। যত থার্ড ক্লাস এম এ আর এম এল এ-তে দেশটার বারোটা বাজিয়ে দিলে।

অবজেকসান।

নো অবজেকসান। আমার মুখ খুলে গেলে কারুর তোয়াক্কা করি না। হ্যাঁ জোনাকি, সে জোনাকি! আমার বেসিক প্রশ্ন হল, জোনাকি যা পারে মানুষ চেষ্টা করলে তা পারবে না কেন?

মানে পেছনে আলো, মানে পেছন দিয়ে আলো বের করা!

এগজ্যাকটলি সো। জোনাকিকে ভালো করে অবজার্ভ করতে হবে। দেখতে হবে তার ফুড হ্যাবিট। বন্ধুগণ, প্রয়োজন হলে আমরা সমস্ত লোককে ধরে ধরে ফসফরাস খাইয়ে দেব। খুব সোজা কাজ। দেশলাইকাঠিতে ফসফরাস আছে। রোজ লোকে ভিটামিন ক্যাপসুল খেতে পারে, নিজেদের স্বার্থে এক বাকস দেশলাই খেতে পারবে না! খুব পারবে। এটাই হল আমার নিজের বিদ্যুৎ নিজেই উৎপাদন করার পরিকল্পনা। হেলথ, আপনারা চ্যারিটেবল হাসপাতালে এটা পরীক্ষা করে দেখুন তো।

কিন্তু স্যার পেছনে আলো বের করে লাভ কি। মানুষ তো মটরগাড়ি নয় যে ন্যাজে পিকপিক করে লাল আলো জ্বললে সুবিধে হবে! ওই আলোটাকে কোনও ক্রমে সামনে আনা যায় না!

খামোশ! আপনার পেছনটা যদি আমার সামনে থাকে তা হলেই তো আমরা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের টেবল ল্যাম্প! নয় কি! হ্যা হ্যা বাবা, দিস ইজ কমানসেন্স!

আমার কাছে আর একটা পরিকল্পনা আছে স্যার!

বলে ফেলুন।

আমরা কিছু ড্রাগন ইমপোর্ট করি। একটাকে চৌরঙ্গির মোড়ে চিৎ করে ফেলি। মুখটা আকাশের দিকে। লোহার স্ট্র্যাপ আর বল্টু দিয়ে রাস্তায় ফিট করে দি। ন্যাজটা জেব্রা লাইনের মতো পেতে রাখা হোক। ন্যাজে একটা ট্রাফিক পুলিশের ডিউটি ফেলে দিন। অনবরত ন্যাজে পাম্প, মুখ দিয়ে ভলকে-ভলকে আগুন। উ: আলোয় আলো।

আর একটাকে ফেলি শ্যামবাজারের মোড়ে। ইমপর্টান্ট মোড়ে-মোড়ে একটা করে ড্রাগন।

হবে না, হবে না। ড্রাগন যে দেশের জন্তু সে দেশের সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক মতাদর্শের মিল নেই। ড্রাগন আমরা আনতে পারব না। বাতিল, বাতিল।

কেন বাতিল! আমরা কি কেবল একটা দেশের কাছেই মাথা বিকিয়ে থাকব। নো নেভার। সব সব দেশই আমাদের কামিয়ে যাক।

আই সি। ইউ আর দ্যা কালপ্রিট। আপনিই সেই বিভীষণ, যে এস এ ভি ই-কে এস এইচ এ ভি ই করে দিয়েছেন। এর নাম কৃতজ্ঞতা! তাই না।

একী, একী? কার কুকুর! কুকুরই তো। ক্যাবিনেট মিটিঙে কুকুর? স্ট্রেঞ্জ।

আমার কুকুর! আয় আয় লুসি, লুসি। কেন কী হয়েছে! যুধিষ্ঠির কুকুর নিয়ে স্বর্গে যেতে পারে আর আমি আমার লুসিকে নিয়ে দপ্তরে আসতে পারি না! কী বলে রে লুসি। আমার এই কুকুর গরম একদম সহ্য করতে পারে না। সাইবেরিয়ার মেয়ে। তাই তো আমার কুলার লাগানো ঘরে থাকে। মাই ফেথফুল ডগ। কুকুরের ভোটাধিকার থাকলে আমাদের গনতন্ত্রের চেহারাটাই পালটে যেত। প্রতি ইলেকসানের সময় আমাদের মাথায় হাত দিয়ে বসতে হত না। লুসি, লুউসি।

শেষ প্রস্তাব। মুখ্যমন্ত্রী! আমি হুগলীর লোক। আমার জেলাতেই মহাপীঠ তারকেশ্বর। শ্রাবণ চলে গেল, তা হলেও চলুন আমরা সকলে বাঁক ঘাড়ে করে কলকাতা থেকে হাঁটাপথে ব্যোম, ব্যোম করতে-করতে বাবার কাছে একবার যাই। গিয়ে ধড়াস করে বডি ফেলে দি। কত লোকের গোদ সারল, কার্বাঙ্কল চুপসে গেল, বন্ধ্যা, মৃতবৎসার সন্তান লাভ হল, আমরা কি এমন পাপ করেছি যে বাবা আমাদের উদ্ধার করবেন না! কিছুই তো তেমন চাইছি না, চাইছি কয়েক শো মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। বাবার শক্তিই বাবার কাছে ধার চাইছি। বাওয়া সব থেকেও আমাদের কেন এই কাঙালের অবস্থা। ভাই সব একবার হেঁকে বলুন—ভোলাবাবা পার করেগা, ভোলে বোম, তারক বোম, বোম, বোম তারক বোম। কী হল! সব চুপ!

মোস্ট থার্ড ক্লাস সাজেসান! এরপর বলবে তন্ত্রসাধনা করো ভৈরবী নিয়ে। মিটিং শেষ। আমাদের ওই এক শ্লোগান গানই চলুক নিজের বিদ্যুৎ নিজে উৎপাদন করো।

সম্প্রতি এই রকম একটি ক্যাবিনেট মিটিং হয়েছিল কী?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *