নাইট ক্লাব

নাইট ক্লাব

বিশ্বাস না-করিতে হয় না করুন, কিন্তু সত্য কথা বলিতে আমি বাধ্য। এই কলিকাতা শহরেই দু’চারটি নাইট ক্লাব জন্মগ্রহণ করিয়াছে। গোপনে গোপনে তাহাদের নৈশ অধিবেশন বসিয়া থাকে; অত্যাধুনিক কয়েকটি রস-পিপাসু, নরনারী ভিন্ন ইহাদের সন্ধান কেহ জানে না। পাশ্চাত্য মতে পরকীয়া প্রীতির পুনঃ প্রবর্তন করাই এই নব-রসিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্য। সকলেই জানেন, পাশ্চাত্য সভ্যতার অগ্রদূত হুইস্কি এবং ভগ্নদূত নাইট ক্লাব। ইহার পর আর কিছু নাই; তস্মাৎ পরতরং নহি।

যুবতীটির নাম মীনাক্ষী। সংক্ষেপে মীনা। বাপ বড়মানুষ এবং ভালমানুষ; তদুপরি কলিকাতার দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দা। সুতরাং কুমারী মীনার মনে সহজেই নারীজাতির দুঃসহ পরাধীনতার ব্যথা পীড়া দিতে আরম্ভ করিয়াছিল। নারীর যে স্বতন্ত্র সত্তা আছে, তাহার অবাধ প্রগতির জলতরঙ্গ শীঘ্রই বাঁধ ভাঙ্গিয়া সর্বত্র ব্যাপ্ত হইয়া পড়িবে তাহাতে তাহার সংশয় ছিল না। পিতা অর্থব্যয় করিয়া তরুণী কন্যাকে পালন করিতে বাধ্য; স্বামী যদি খোরপোষ দিতে অস্বীকৃত হয়—আদালত আছে! কিন্তু তাই বলিয়া ইহারা নারীর যথেচ্ছ প্রগতিতে বাধা দিতে চায় কোন্‌ অধিকারে?

মীনার মনোভাব তপ্ত দুগ্ধের মতো পারিবারিক কটাহ ছাপাইয়া ছাপার অক্ষরে উথলিয়া পড়িয়াছিল। এই ফেনোচ্ছলতা যে আধারে সঞ্চিত হইয়াছিল তাহার নাম—‘পেয়ালা’। ‘পেয়ালা’ সাপ্তাহিক পত্রিকা, নবতন্ত্রের নবীন তান্ত্রিক শ্রীমান ফাল্গুনী ইহার স্বত্বাধিকারী এবং সম্পাদক।

শ্রীমান ফাল্গুনী তাঁহার সম্পাদকীয় স্তম্ভে লিখিতেছেন—‘বাঙালী, ছিঁড়ে ফেল এই পুস্পরচিত নিগড়ের বন্ধন! নরনারীর যৌন সম্পর্ক নির্বিঘ্ন করো; বিবাহের অন্ধকূপে আবদ্ধ হয়ে তোমার পৌরুষ নির্বীর্য হয়ে পড়েছে—তাকে মুক্তি দাও। দোহাই তোমার, বিয়ে করো না।

‘নিতান্তই যদি বিয়ে করতে চাও—সখ্য-বিবাহ করো। যাচাই-বিবাহ করো। আর তা যদি না করো, রসাতলে যাও।’

যাচাই-বিবাহ! কথাটা খড়ের আগুনের মতো তরুণদের হৃদয়ে জ্বলিতে থাকিত। আহা, কবে সেদিন আসিবে যখন যাচাই করিতে করিতেই জীবন কাটিয়া যাইবে; বিবাহ করিয়া ভারগ্রস্ত হইবার প্রয়োজন হইবে না।

শুধু তরুণ নয়, তরুণীরাও চঞ্চল হইয়া উঠিয়াছিল। মীনা ফাল্গুনীকে চিঠি লিখিল,—

‘ধন্য আপনার নাম ফাল্গুনী! আপনার ‘পেয়ালা’ দিন দিন ফাল্গুনের ‘উচ্চহাস্য অগ্নিরসে’ ভরে উঠুক। সংযমের ভীরুতা অপনীত হোক্‌।

‘কিন্তু নারী? যোগ্য সহচর যাচাই করে নেবার অধিকার তারও চাই। নারী আর গুটিপোকা নয়, সে এখন প্রজাপতি : ফুলে ফুলে মধু পান করে বেড়াবার অধিকার তারও আছে। একথা ভুলে যাবেন না।’

উত্তরে ফাল্গুনীর সম্পাদকীয় স্তম্ভ উত্তেজিত হইয়া উঠিল:

‘ভুলি নাই, ভুলি নাই, ভুলি নাই প্রিয়া! আপনাকে প্রিয়া বললাম বলে কিছু মনে করবেন না। সমস্ত নারীজাতি সমস্ত পুরুষজাতির প্রিয়া—private property আমরা মানি না। আমাদের কাপালিক হতে হবে; হতে হবে নির্ভীক, হতে হবে নির্ঘৃণ, হতে হবে নির্লজ্জ। নিষ্কোষিত করতে হবে আমাদের মনকে—অসির মতো এবং সেই অসি দিয়ে কেটে ফেল্‌তে হবে গাঁটছড়ার গ্রন্থিকে। যৌন জীবনে আমরা গাঁট রাখব না, এই আমাদের শপথ।

অতঃপর সম্পাদক ও লেখিকার মধ্যে পত্রাঘাতজনিত ঘনিষ্ঠতা জমিয়া উঠিতে বিলম্ব হইল না। চাক্ষুষ দেখাশুনা না হইলেও মনের মিল যেখানে এত গভীর সেখানে দূর হইতেই মিলনোৎকণ্ঠা জন্মিতে পারে। ইন্দুর্বিলক্ষং কুমুদস্য বন্ধু—!

এইবার নাইট ক্লাবের আবির্ভাব। ‘পেয়ালা’ সম্পাদকের মানসিক অবস্থা অত্যাধুনিক হইলেও হাতে-কলমে বাস্তব অভিজ্ঞতা একটু কাঁচা ছিল। তাই একদিন এক নবলব্ধ গ্র্যাজুয়েট বন্ধুর নিকট ক্লাবের সন্ধান পাইয়া তাঁহার অন্তরাত্মা পুলকিত হইয়া উঠিল। আদর্শকে বাস্তবে পরিণত করিবার এই প্রথম সুযোগ। তিনি মীনাকে লিখিলেন:

‘তোমাকে এখনও চোখে দেখিনি, তবু তোমার অন্তঃসত্তা আমার অন্তঃসত্তাকে চুম্বকের মতো টানছে। কিন্তু আমাদের মিলন সাধারণ নরনারীর মতো হলে চলবে না। মুক্তির মানসতীর্থে আমাদের মৌন মিলনের মঙ্গলশঙ্খ বাজবে। সে তীর্থ—নাইট ক্লাব।

‘সেই তীর্থে আমরা যাব। ঠিকানা দিচ্ছি। নিশীথ নগরীর নিদ্রিত বুকের ধুকধুকুনি আমরা শুনতে পাব। চক্ষের প্রদীপ জ্বেলে আমরা পরস্পরকে খুঁজে বেড়াব। বহু তীর্থযাত্রীর মধ্যেও পরস্পর চিনে নিতে পারব না কি?’

প্রত্যুত্তরে মীনা লিখিল, ‘তোমার বাঁশি শুনেছি। যাব আমি অভিসারে; সহস্র লোক যদি সেখানে থাকে তবু তোমাকে চিনে নেব।’

‘আমার ভয় করছে না, বুক ঢিবঢিব করছে না। আমি যাবই। নিশ্চিন্ত থাকো।’

রাত্রি বারোটা বাজিয়া গিয়াছে। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন প্রকাণ্ড ঘর; অনেকগুলি নরনারী এখানে সেখানে বসিয়া নিম্নস্বরে ঠাট্টা-তামাশা ও পানভোজন করিতেছে; সকলেরই চোখে মুখে একটা অস্বাভাবিক উত্তেজনার দীপ্তি। একটি বারো-আনা-উলঙ্গ যুবতী মাঝে মাঝে আসিয়া ছোট ছোট টেবিলগুলি ঘিরিয়া নাচিয়া যাইতেছে। ঐকতান বাদ্যযন্ত্রের চাপা আওয়াজ সকলের কানে কানে একটা অকথ্য ইঙ্গিত করিতেছে।

নাইট ক্লাব। মুক্তির তীর্থ। রাত্রি যত গভীর হইতেছে, বন্ধন ততই শিথিল হইয়া আসিতেছে। তুরীয়ানন্দে উপনীত হইতে আর অধিক বিলম্ব নাই।

ঘরের এক কোণে নিজেকে যথাসাধ্য প্রচ্ছন্ন করিয়া মীনা একটি ক্ষুদ্র সোফায় বসিয়া ছিল। সম্মুখে একটি টবের পাম গাছ পাতার ঝালর দিয়া তাহাকে কতকটা আড়াল করিয়া রাখিয়াছিল।

কিন্তু সুন্দরী যুবতীকে পাতা ঢাকা দিয়া আড়াল করা যায় না। অনেকগুলি শ্যেন-চক্ষু এই ক্ষুদ্র পাখিটির প্রতি নজর রাখিতেছিল। পরিপাটি বেশধারী একটি কদাকার যুবক অদূরে অন্য একটি টেবিলে বসিয়া নিবিষ্ট মনে সবুজ রঙের এক প্রকার পানীয় চুমুকে চুমুকে আস্বাদন করিতেছিল এবং ঘাড় ফিরাইয়া মীনাকে দেখিতেছিল। সেও একাকী, সঙ্গিনী নাই।

মীনার বুক ঢিবঢিব করিতেছে, গলা শুকাইয়া কাঠ হইয়া গিয়াছে। প্রায় আধ ঘণ্টা সে এখানে বসিয়া আছে, কিন্তু কই ফাল্গুনী তো চিনিতে পারিল না? মনে মনে সে ফাল্গুনীর যে চেহারা কল্পনা করিয়া রাখিয়াছিল সেরূপ চেহারার লোক তো একটিও এখানে নেই! সে কল্পনা করিয়াছিল, উজ্জ্বল গৌরবর্ণ ছিপছিপে একটি যুবক; চোখে ঈষৎ ধোঁয়াটে কাচের চশমা, ঠোঁটের কোণে উচ্চ অঙ্গের একটি হাসি। সে আসিয়া মীনার সম্মুখে দাঁড়াইবে, গভীর দৃষ্টিতে ক্ষণকাল চাহিয়া থাকিয়া মৃদু গম্ভীর স্বরে বলিবে, ‘মীনা, চিনেছি তোমাকে। এসো আমার সঙ্গে।’ মীনা অমনি উদ্বেলিত হৃদয়ে উঠিয়া হাত বাড়াইয়া দিবে; বলিবে—

‘পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি

আমরা দুজনে চলতি হাওয়ার পন্থী।’

কিন্তু কই? কোথায় তাহার মানস-ফাল্গুনী? ব্যাকুল দৃষ্টিতে মীনা আর একবার চারিদিকে চাহিল। বারো-আনা-উলঙ্গ মেয়েটা নির্লজ্জ ভঙ্গিতে নাচিতেছে। সকলেরই মুখে চোখে এমন একটা ভাব যাহা দেখিতে সংকোচ হয়। অদূরে বসিয়া কদাকার যুবকটা তাহার দিকে তাকাইয়া একটা বিশ্রী হাসি হাসিতে আরম্ভ করিয়াছে। তাহার নাক মুখ হইতে সিগারেটের ধোঁয়া ধীরে ধীরে নিঃসৃত হইতেছে, যেন তাহার অন্তরের কলুষিত বাষ্প বিবর হইতে বাহির হইয়া আসিতেছে।

চোখ বুজিয়া মীনা শক্ত হইয়া বসিয়া রহিল। কি করিবে? যদি ফাল্গুনী না আসে? এখান হইতে বাহির হইবে কি করিয়া? ইহারা যদি বাহির হইতে না দেয়?

ঘাড়ের কাছে একটা তপ্ত নিশ্বাস অনুভব করিয়া সে চমকিয়া উঠিল। কদাকার যুবক তাহার পিছনে আসিয়া ঝুঁকিয়া দাঁড়াইয়াছে।

‘আমিও একাকী, তুমিও একাকী—হে-হে-হে। আসুন না, পরস্পর সান্ত্বনা দেওয়া যাক।’

‘না।’ কুঁকড়াইয়া মীনা একপাশে সরিয়া গেল। তাহার বুক ভীষণ ধড়াস ধড়াস করিতে লাগিল।

কদাকার যুবক পাশে বসিয়া পড়িয়া বলিল, ‘নবাগতা দেখছি—প্রথমটা একটু বাধো বাধো ঠেকে। একপাত্র শ্যাম্পেন আনাব? খেলেই সংকোচ কেটে যাবে। হেঃ-হেঃ-হেঃ!’

মূক হইয়া বসিয়া মীনা কাঁপিতে লাগিল। এ কি জঘন্য স্থানে সে একাকিনী আসিয়াছে! হঠাৎ তার মস্তিষ্ক-রন্ধ্রে ক্রোধের শিখা জ্বলিয়া উঠিল। ঐ ফাল্গুনীটা—একটা—একটা—শয়তান! তাহার অন্তঃসারশূন্য লেখায় ভুলিয়া মীনা আজ নিজের একি সর্বনাশ করিতে বসিয়াছে! না না, এ স্বাধীনতা সে চায় না। এই নির্লজ্জ পাশবিকতার চেয়ে বোরখা মুড়ি দিয়া ঘরের কোণে বসিয়া থাকাও ভাল। সে প্রজাপতি হইতে চাহিয়াছিল, ভগবান তাহাকে গুবরে পোকাদের মধ্যে আনিয়া ছাড়িয়া দিলেন কেন?

ঘরের আলো যে অলক্ষিতে কমিয়া আসিতেছে তা মীনা বুঝিতে পারে নাই। একটা একটা করিয়া বাল্‌ব নিবিয়া যাইতেছে। ঘরটা যখন ছায়াময় হইয়া আসিয়াছে তখন মীনা হঠাৎ লক্ষ্য করিয়া আতঙ্কে আসন ছাড়িয়া উঠিয়া দাঁড়াইল। চারিদিকের অস্পষ্টতার ভিতর দিয়া যে কলকুজন আসিতেছে তাহা লোকের বন্দনা নয়, তমসার প্রশস্তি।

কদাকার যুবক মীনার আঁচল টানিয়া বলিল, ‘বসুন না, এই কি যাবার সময়?’

আঁচল ছাড়াইয়া মীনা পলাইবার চেষ্টা করিল, কদাকার যুবক তাহার হাত চাপিয়া ধরিল।

‘এখনি তো অন্ধকার হয়ে সবাই সাড়ে বত্রিশ ভাজার মতো মিশে যাবে। এ সময় হাত ছাড়তে নেই। হেঃ-হেঃ-হেঃ—’

মীনা একটা অস্ফুট চিৎকার করিয়া উঠিল। এই সময়ে কোথা হইতে আর একটি হাত আসিয়া কদাকার যুবকের কবল হইতে মীনার হাত ছিনাইয়া লইল। ত্রাস-ব্যাকুল চক্ষে মীনা একবার এই নবাগতের পানে চাহিল, তারপর ঘর অন্ধকার হইয়া গেল।

নূতন স্বর মীনার কানে কানে বলিল, ‘আসুন, আপনাকে ঘরের বাইরে নিয়ে যাচ্ছি।’

নূতন কণ্ঠস্বর শুনিয়া মীনা আশ্বাস পাইল। চকিতের জন্য যে মুখখানা সে দেখিতে পাইয়াছিল তাহাও ভদ্রলোকের মুখ—লালসার পাঁক-মাখানো নয়। মীনা সজোরে তাহার হাত চাপিয়া ধরিয়া বলিল, ‘শিগ্‌গির চলুন, আমি নিশ্বাস ফেলতে পারছি না।’

অবরুদ্ধ উত্তপ্ত অন্ধকারে কিছুক্ষণ সাবধানে চলিবার পর একটা দরজা, আরো খানিকটা দূর যাইবার পর আর একটা দরজা। তারপর—

আঃ—! খোলা আকাশের মুক্ত বাতাস। মধ্যরাত্রির নির্জন পথে জনমানব নাই। শুধু তাহারা দু’জন। ল্যাম্প-পোস্টের নীচে দাঁড়াইয়া দীর্ঘ কম্পিত নিশ্বাস টানিয়া মীনা বলিল, ‘একটা ট্যাক্সি। আপনি আমাকে দয়া করে বাড়ি পৌঁছে দিন, আমি একা যেতে পারব না।’

ট্যাক্সিতে চলিতে চলিতে মীনা অস্ফুট ব্যাকুলতায় বারবার বলিতে লাগিল, ‘আর কক্ষনো যাব না—কক্ষনো না—উঃ! কদাকার যুবকের হাতের স্পর্শ তাহার হাতে যেন এখনও পচা অশুচিতার মতো লাগিয়া আছে।

চোখের জলের ভিতর দিয়া সে পাশের যুবকটিকে দেখিল। সুশ্রী নয়—উজ্জ্বল গৌরবর্ণ ছিপছিপে গঠন নয়, চোখে ধোঁয়াটে কাচের চশমাও নাই। যা দু-একটি কথা সে বলিয়াছে তাহাও নিতান্তই মামুলী। অথচ—

মীনা কহিল, ‘ফাল্গুনীটা একটা কেঁচো!’

যুবক সহানুভূতিপূর্ণ ঘাড় নাড়িল : ফাল্গুনী কে তাহা জানিবার ঔৎসুক্য পর্যন্ত দেখাইল না।

মীনা বলিল, ‘এই প্রথম—এর আগে আমি আর কখনো ওরকম জায়গায় যাইনি।’

যুবক গলার মধ্যে সমবেদনাসূচক শব্দ করিল।

‘আপনি ভাগ্যিস গিয়ে পড়েছিলেন, নইলে—’

যুবক একটু কাশিয়া বলিল, ‘আমারও এই প্রথম।’

মীনা হঠাৎ উদ্দীপ্ত কণ্ঠে বলিল, ‘ফাল্গুনী কে জানেন? একটা নোংরা দুর্গন্ধ সাপ্তাহিকের সম্পাদক। তার মুখ দেখলে পাপ হয়, তার লেখা পড়লে গঙ্গাস্নান করতে হয়। আর যদি কখনো আমি—!’

ট্যাক্সি বাড়ি আসিয়া পৌঁছিল।

মীনা অপ্রগল্‌ভ সহজতায় যুবকের হাত ধরিয়া বলিল, ‘ধন্যবাদ। আমাকে খুব খারাপ মেয়ে মনে করবেন না।—ফাল্গুনীটা নিশ্চয় মদ খায়। —মুক্তি কাকে বলে আমি আজ টের পেয়েছি। বাবার সঙ্গে আপনার আলাপ করিয়ে দেব। কাল আসবেন কি?’

নীরবে একবার মাথা ঝুঁকাইয়া যুবক প্রস্থান করিল।

পরদিনটা মীনার প্রতীক্ষায় কাটিয়া গেল; কিন্তু যুবক আসিল না, সন্ধ্যাবেলা আসিল ফাল্গুনীর চিঠি। রাগে মীনার ইচ্ছা হইল চিঠি না পড়িয়াই ছিঁড়িয়া ফেলে। কিন্তু নাইট ক্লাবে নিজে না যাওয়ার কি কৈফিয়ত দিয়াছে তাহা জানিবার জন্য চিঠি পড়িতে হইল—

‘মীনা, তুমি আমায় বিয়ে করবে?’

‘কাল বলতে পারলুম না। তুমি ট্যাক্সিতে আমাকে যা বলেছিলে সব সত্যি! শুধু—আমি মদ খাই না, সত্যি বলছি। একবার খাবার চেষ্টা করেছিলুম, কিন্তু যথাসর্বস্ব বমি হয়ে গেল। সে যাক্। কাল তোমাকে দেখে আমার সব নেশা ছুটে গেছে। ‘পেয়ালা’ ভেঙে ফেলেছি; আসছে হপ্তা থেকে আর ‘পেয়ালা’ বেরুবে না।

‘মীনা, তোমার চোখের জল এত সুন্দর কেন? তোমার রাগ এত মিষ্টি কেন? তোমার ভয় এত মধুর কেন?

‘আমাকে বিয়ে করবে?’

‘কুৎসিত জিনিস না দেখলে সুন্দরকে চেনা যায় না। নাইট ক্লাব কাল আমাকে নারীর সবচেয়ে সুন্দর মূর্তিটি চিনিয়ে দিয়েছে।

‘কাল তুমি আমার হাতে হাত রেখেছিলে। মনে হচ্ছে, সারা জীবন ধরে ঐ স্পর্শটি আমার চাই, না হলে চলবে না।

‘তুমি আমাকে বিয়ে করবে?’

২১ চৈত্র, ১৩৪৫

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *