1 of 2

নববর্ষের শপথ

পৃথিবীর আহ্নিক গতির জন্যে দিন রাত হয়, বার্ষিক গতির জন্য ঋতু পরিবর্তন হয় সেই হিসেবে ইংরেজী নববর্ষের দিনটি অন্য যে কোনো একটা দিনের মত, তার আলাদা কোনো বৈশিষ্ট্যই নেই।

তারপরও শুধুমাত্র নববর্ষের দিন বলে এই দিনটিকে আমরা আলাদাভাবে দেখতে পছন্দ করি। রাত বারোটা বাজার সাথে সাথে আমরা বিকট চেচামেচি করি, পরিচিতি অপরিচিত সবাইকে “হ্যাপি নিউ ইয়ার” বলে ব্যতিব্যস্ত করে তুলি।

ঘড়ির কাঁটা পেছানোর জন্য ঠিক রাত বারোটা বেছে নেওয়ার কারণে এইবার আমাদের এক ঘণ্টার মাঝে দুই দুইবার নববর্ষ পালনের সুযোগ এসেছিল।

কিন্তু বেরসিক সাংবাদিকদের কারণে সরকার সতর্ক হয়ে ঘড়ির কাঁটা পেছানোর জন্য রাত বারোটা বেছে না নিয়ে এগারোটা উনপঞ্চাশ বেছে নিয়েছে।

যার অর্থ আমরা নববর্ষের এক মিনিটের ভেতর চলে এসে আবার এক লাফে এক ঘন্টা পিছিয়ে যাবো! দুই দুই বার নববর্ষ পালন করার ঐতিহাসিক সুযোগটা আর পাব না।

একবারই হোক আর দু’বারই হোক নববর্ষ দিনটাকে আলাদা ভাবে দেখার জন্য আমরা সব সময়েই নতুন বছরে নতুন কিছু করার পরিকল্পনা করি।

ছাত্রছাত্রীরা সময়মত হোমওয়ার্ক করার পরিকল্পনা করে, গৃহিনীরা হিন্দী সিরিয়াল না দেখার প্রতিজ্ঞা করে, বয়স্ক মানুষেরা সিগারেট ছেড়ে দেবার যোগাড়যন্ত্র করে। প্রথম সপ্তাহ দু’য়েক সবাই তাদের প্রতিজ্ঞায় অটল থাকে, তারপর কীভাবে কীভাবে জানি ঠিক আগের অবস্থায় চলে আসে।

তবে আমাদের জন্য এই নববর্ষটা একটা চমৎকার সুযোগ নিয়ে এসেছে। হোমওয়ার্ক, হিন্দী সিরিয়াল কিংবা সিগারেট সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত থেকেও ভালো সিদ্ধান্ত আমরা নিতে পারি – সেটা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি করা।

এই সরকার যুদ্ধাপরাধীর বিচারের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে, জাতীয় সংসদে সেই সংক্রান্ত একটা সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। খবরের কাগজে দেখেছি বিচারের জন্য ভবন নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি, মার্চে ট্রাইবুনাল গঠন হবে, তদন্ত করার জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ হবে।

বিষয়টি যত দ্রুত হওয়ার কথা ছিল, তত দ্রুত হচ্ছে না সেটা সত্যি কথা। ভেতরে অন্য কিছু হচ্ছে কি না আমরা সেটাও জানি না। একাত্তরে যে দেশগুলো এই দেশের যুদ্ধাপরাধীদের সাথে সাথে ছিল তাদের অনেক এখনো তাদের সাথে আছে।

যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করার জন্য তারা নতুন কোনো পায়তারা শুরু করলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু সকল বাধা আর প্রতিবন্ধকতা দূর করার একটা মাত্র উপায় হচ্ছে দেশের সকল মানুষ একতাবদ্ধ হয়ে এই বিচারের দাবিটি জোরালো বা স্পষ্ট উচ্চারণ করা।

আর এই দাবি উচ্চারণ করার জন্য নববর্ষের মুহূর্তটি থেকে চমৎকার সময় আর কী হতে পারে?

3 Comments
Collapse Comments

লেখক এক নাম্বার নিয়মটা না জারি করলেও পারতেন । শুধু শুধু কচিকাঁচা হিমু প্রেমিদের কষ্ট দেওয়ার কি প্রয়োজন ছিল ?

এই লাইব্রেরিকে ধন্যবাদ । হিমু রিমান্ডে আর তিতাস একটি নদীর নাম পুরো বইটি দেওয়া যাবে ?

ফারিহা, দুঃখ করো না । আমরা নিশ্চয়ই একদিন হিমু হবই ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *