ছেচল্লিশ
নর্দার্ন স্টারের রেডিও রুমে, বড়সড় একটা সেটের সামনে বসে আছে লামিয়া। মাথায় হেডসেট, নব ঘুরিয়ে ফ্রিকোয়েন্সি সেট করছে, যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে পাঁচ হাজার মাইল দূরে রাশার রাজধানী মস্কোর সঙ্গে।
ওর ঠিক পেছনেই দাঁড়িয়ে আছে কর্টেজ। বিরক্তি ফুটে উঠেছে তার চেহারায়। ঘড়ির দিকে তাকাল, তারপর বলল, ‘সময় নষ্ট করছ তুমি, মিস লিভানোভা। আধঘণ্টা হয়ে গেল, এখনও কারও সঙ্গে কন্ট্যাক্টই করতে পারলে না।’
ঘাড় ফিরিয়ে তার দিকে তাকাল লামিয়া। বলল, ‘আমি তো আগেই বলেছি, হাই কমাণ্ডের কমাণ্ডের সঙ্গে রেডিও কমিউনিকেশনের কোনও চ্যানেল নেই আমার। যদি টেলিফোন জোগাড় করে দিতে, এত ঝামেলা হতো না।’
‘মাঝসাগরে টেলিফোন পাব কোথায়?’
‘কেন, স্যাটফোন নেই তোমার কাছে?’
ঠোঁটের কোনা বেঁকে গেল কর্টেজের। ‘বুদ্ধিটা ভালই বেছেছ। স্যাটফোনে যোগাযোগ করতে চাইছ, যাতে ওটার সিগনাল ট্র্যাক করে আমাদেরকে খুঁজে বের করে ফেলা যায়, তাই না?’
‘ওসব একদমই ভাবিনি আমি,’ জোর গলায় বলল লামিয়া। ‘অযথা সন্দেহ করছ।’
‘স্পাইদেরকে সন্দেহই করতে হয়। বিশেষ করে মেয়ে স্পাইদেরকে।’
‘আমি যে স্পাই নই, সেটাও তো বলেছি তোমাকে। আমি সাধারণ একজন বিজ্ঞানী… বিশেষ একটা কাজের দায়িত্ব দিয়ে আমাকে পাঠিয়েছে সরকার।’
‘তা-ই? তা হলে কাজ-কারবার স্পাইয়ের মত কেন? পরিষ্কার বুঝতে পারছি, এতক্ষণ অভিনয় করেছ আমার সঙ্গে। কৌশলে জাহাজের অস্ত্রটার ব্যাপারে যা কিছু জানার জেনে নিয়েছ। রাশাকে উপহার দেবার জন্যে নয়, অন্য কোনও মতলবে।’
‘একটু বেশিই ভাবছ, কুচিয়ো। সেজন্যেই মাথায় প্যাঁচ লেগে গেছে।’ উঠে দাঁড়াল লামিয়া। মাথা থেকে খুলে ফেলল হেডসেট। ‘আমাকে বিশ্বাস করছ না তো? ঠিক আছে, তুমিই আমাকে যোগাযোগ করিয়ে দাও হাই কমাণ্ডের সঙ্গে। দেখো, তোমার হয়ে আমি সুপারিশ আর দরদাম করি কি না।’
হাসল কর্টেজ। ‘আমি নিজে যদি যোগাযোগ করতে পারতাম, তা হলে তোমাকে আর দরকার হবে কেন, মিস লিভানোভা? এখনও খানিকটা সময় আছে, জলদি কথা বলো ওদের সঙ্গে। নইলে…’
হুমকিটা শেষ করতে পারল না সে, তারস্বরে বেজে উঠল অ্যালার্ম। কয়েক সেকেণ্ড পর দরজা খুলে হাঁপাতে হাঁপাতে এক নাবিক এসে ঢুকল রেডিও রুমে।
‘হচ্ছেটা কী?’ কড়া গলায় জিজ্ঞেস করল কর্টেজ। ‘অ্যালার্ম কীসের?’
‘রিঅ্যাক্টর কম্পার্টমেন্টে গোলমাল বেধেছে, কুচিয়ো, বলল নাবিক।
‘লিক?’
‘না, লিক-টিক না। অচেনা একটা লোক ঢুকেছে ওখানে।’
‘অচেনা লোক!’ ভুরু কোঁচকাল কর্টেজ। ‘কী বলছ যা-তা! ডাঙা থেকে অন্তত বারোশো মাইল দূরে আছি আমরা। এখানে অচেনা লোক আসে কীভাবে?’
‘তা কী করে বলব?’ বলল নাবিক। ‘আমাদের ধারেকাছে কোনও জাহাজ বা বোট আসেনি। পানির তলা দিয়ে এলেও সোনারে ধরা পড়ত। হয়তো জাহাজ রওনা হবার আগেই চুরি করে উঠেছিল।
‘সেটাও অসম্ভব, গত কিছুদিনে কোনও বন্দরে থামিনি আমরা। নিশ্চয়ই ভুল হচ্ছে কোথাও। নিজেদের কাউকেই অচেনা লোক ভাবছ তোমরা।
‘কোনও ভুল নেই, কর্টেজ,’ দৃঢ় গলায় বলল নাবিক। ‘ক্রুদের প্রত্যেকে জায়গামত আছে। আর লোকটাকে দেখতেও পেয়েছে আমাদের কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ার আর টেকনিশিয়ান। ওদেরকে মারধর করেছে সে, একজনকে গুলি করেছে। কালো চুলঅলা ইণ্ডিয়ান চেহারার এক লোক।’
চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠল লামিয়ার ‘ভারতীয়?’ গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করল কর্টেজ। ‘ছ’ফুটের মত লম্বা?’
মাথা ঝাঁকাল নাবিক।
‘ভারতীয় না, বাঙালি,’ দাঁতে দাঁত পিষে বলল কর্টেজ। ‘মাসুদ রানা!’
লামিয়াও তা-ই ভাবছে। যদিও বুঝতে পারছে না, কী করে তা সম্ভব। ওর ওপর চোখ পড়ল কর্টেজের।
‘বাহ্, এতক্ষণে তোমার আসল চেহারা দেখা গেল,’ বলল সে। ‘রানার নাম শুনে আনন্দে ডগমগ করছ। আবেগ লুকাতে না পারলে স্পাই হিসেবে বিশেষ সুবিধে করতে পারবে না, হে।’
‘আমি স্পাই নই,’ গরম গলায় বলল লামিয়া।
‘তা তো বুঝতেই পারছি,’ চিবিয়ে চিবিয়ে বলল কর্টেজ।
‘লোকটাকে খুঁজছি আমরা,’ জানাল নাবিক। ‘ফালক্রাম বে-র ভেতর দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেছে সে।’
‘সাগরে ভাসতে থাকা একটা জাহাজে আছি আমরা,’ বলল কর্টেজ। ‘যাবে কোথায়? খুঁজতে থাকো। আমি ব্রিজে যাচ্ছি। ফালক্রাম বে আর রিঅ্যাক্টর কম্পার্টমেন্টের সবগুলো অ্যাকসেসে গার্ড বসাও। কেউ ওখানে ঢোকার চেষ্টা করলেই গুলি করবে।’ রিস্টওয়াচ দেখল সে। ‘মাত্র পঁচিশ মিনিট বাকি… এই সময়টুকু ঠেকিয়ে রাখো ওকে। তারপর আমি নিজেই ওকে শিকার করতে আসব।’
মাথা ঝাঁকিয়ে চলে গেল নারিক। এবার লামিয়ার হাত চেপে ধরল কর্টেজ, টানতে টানতে ওকে নিয়ে গেল ওর কেবিনে। আগের মতই চেয়ারে বসিয়ে বেঁধে ফেলল হাত-পা।
‘বেঈমানি করায় একদিক থেকে ভালই হলো,’ বলল সে। ‘তোমাকে নিয়ে ফুর্তি করবার ইচ্ছে ছিল, এবার সেটা পূরণ হবে। এখন অবশ্য সময় নেই, হাতের কাজ সেরে ফিরে আসব। না, না, আর অভিনয় করার প্রয়োজন নেই। তোমার ছলাকলায় আর ভুলছি না আমি।’
কথা শেষ করে বেরিয়ে গেল কর্টেজ।
হতাশা অনুভব করল লামিয়া, একই সঙ্গে অনুভব করল তাড়া। যেভাবেই হোক, পালাতে হবে। প্রয়োজনে ঝাঁপিয়ে পড়বে সাগরে, তাও কুচিয়োর কাছে আত্মসমর্পণ করবে না। মোচড়ামুচড়ি করে বাঁধন ঢিলে করার চেষ্টা চালাল, তবে লাভ হলো না। আরও যেন চেপে বসল দড়ি। কেবিনের ভেতরে চোখ বোলাল। ছুরি-কাঁচি… ধারালো কিচ্ছু নেই। তার মানে এই নয় যে, হাল ছেড়ে দেবে।
পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে চেয়ারটাকে সামনে-পেছনে দোলাতে শুরু করল ও। কয়েক সেকেণ্ড পর চেয়ার-সহ মেঝেতে আছড়ে পড়ল ধড়াম করে। দাঁতে দাঁত চেপে ব্যথাটা সহ্য করল, এরপর মেঝের ওপর দিয়ে শরীর ঘষটে এগোতে শুরু করল। পৌঁছুল একটা ডেস্কের গোড়ায়। ওটার ওপরে রয়েছে দুটো মদের গ্লাস, আর একটা বোতল—ডিনারশেষে এখানে বসেই কর্টেজের সঙ্গে গলা ভিজিয়েছিল।
কাঁধ দিয়ে ডেস্কটায় ধাক্কা দিতে থাকল, লামিয়া ঝাঁকুনিতে একটু পরেই একটা গ্লাস কাত হয়ে পড়ল নিচে, সশব্দে ভেঙে গেল। কেঁচোর মত মেঝের ওপর শরীর ঘষে ঘুরল ও, হাত দিয়ে নাগাল পেতে চাইছে গ্লাসের ভাঙা টুকরোগুলোর। হাতের চামড়ায় ঢুকে গেল ছোট ছোট কাঁচ… কেটে রক্ত ঝরতে শুরু করল, কিন্তু পরোয়া করল না।
হাতড়াতে শুরু করল লামিয়া। একে একে কয়েকটা টুকরো তুলে নিল হাতে। কোনোটাই পছন্দ হলো না। কয়েক মিনিট পর একটা বড় টুকরো পেল। ওটাকে কায়দামত ধরতে গিয়ে কেটে গেল হাতের তালু। তা-ও ছাড়ল না, রক্তাক্ত মুঠোয় ধরে রাখল কাঁচটা, ঘুরিয়ে পৌঁচ দিতে থাকল কবজির বাঁধনে।
কঠিন একটা অবস্থা। কাঁচটা অত্যন্ত ধারালো, কিন্তু দড়ি কদ্দূর কাটছে কে জানে। লামিয়া টের পাচ্ছে, প্রতি পোঁচের সঙ্গে একটু একটু করে ওর হাতের তালু আর আঙুলে ঢুকে যাচ্ছে কাঁচটা। অঝোরে ঝরছে রক্ত। অসহ্য ব্যথা ক্ষতগুলোয়, তাও কাজ চালিয়ে গেল। যেন জেদ করেছে, শরীরের সব রক্ত বেরিয়ে গেলেও থামবে না কিছুতেই।
হঠাৎ ধুপ করে একটা আওয়াজ হলো দরজার পাল্লায়। মনে হলো কেউ বাড়ি খেয়েছে ওটার গায়ে। এক মুহূর্ত পর দরজা খুলে গেল, কে যেন ঢুকল ভেতরে। মেঝের ওপর দিয়ে টেনে ভারী কিছু ঢোকাল ভেতরে। দরজার দিকে পিঠ দিয়ে রেখেছে বলে কিছু দেখতে পাচ্ছে না লামিয়া, কিন্তু আতঙ্কে জমে কাঠ হয়ে গেল। কর্টেজ ফিরে এল?
পায়ের আওয়াজ। কেউ এগিয়ে আসছে ওর দিকে। একটা হাত পড়ল কাঁধে। নিষ্ঠুরতা নয়, স্পর্শটায় মিশে আছে মমতা। ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল ও। দেখতে পেল সাগরের মত গভীর দুটো চোখ, কোমল-কঠোরে মেশা সুদর্শন এক চেহারা।
‘রানা!’ সবিস্ময়ে বলে উঠল লামিয়া।
ঠোঁটের কাছে একটা আঙুল তুলল রানা। ‘শব্দ কোরো না,’ বলল ও। ‘অনেক রক্ত ঝরছে তোমার। দেখি কী করা যায়।’
লামিয়ার বাঁধন খুলে দিল ও। বিছানায় নিয়ে বসাল। চাদর ছিঁড়ে তৈরি করল ব্যাণ্ডেজ, শক্ত করে বেঁধে দিল হাতে। রক্তপাত থামাল। দরজার পাশে ইতিমধ্যে চোখ পড়েছে লামিয়ার। কর্টেজের দলের এক লোক নিস্তেজ পড়ে আছে, বুকে বুলেটের ফুটো। অনুমান করল, একে পাহারায় রেখে গিয়েছিল কর্টেজ।
‘আমি ভেবেছিলাম তুমি মারা গেছ,’ ফিসফিসিয়ে বলল ও।
‘দেখতেই পাচ্ছ, মরিনি,’ বলল রানা। কিন্তু একটা ব্যাপার ঠিক করে বলো তো, কুচিয়োর সঙ্গে কি হাত মিলিয়েছ তুমি? তোমাদেরকে একসঙ্গে ডেকে দাঁড়িয়ে কথা বলতে শুনেছি আমি।’
‘হাত মেলালে এভাবে পড়ে থাকতাম বলে মনে হয়?’ ভুরু কোঁচকাল লামিয়া।
‘তা হয় না, সেজন্যেই তো সাহায্য করতে এলাম। কিন্তু ব্যাপারটা কী? কী চাইছিল কুচিয়ো তোমার কাছে?’
‘একটা জিনিস বিক্রি করতে চাইছে রাশার কাছে। আমাকে দিয়ে মধ্যস্থতা করাতে চাইছিল।
‘কী জিনিস? এই জাহাজটা?’
মাথা ঝাঁকাল লামিয়া। ‘এটা কোনও সাধারণ জাহাজ নয়। পার্টিকেল বিম ফায়ার করতে পারে…’
‘আমি জানি,’ বাধা দিয়ে বলল রানা। ‘তুমি রাজি হওনি? কেন? তোমার দেশ তো এমন একটা অস্ত্র পেলে বর্তে যাবে।’
‘আমি বিজ্ঞানী, রানা। আমার কাজ মানুষের মঙ্গল করা, দুনিয়া ধ্বংস করা নয়। তাই চাই না কারও হাতে এমন অস্ত্র থাকুক… হোক সেটা আমার মাতৃভূমি।’
বিস্ময় নিয়ে লামিয়ার দিকে তাকাল রানা। রাশান একজন এজেন্টের মুখে এমন কথা শুনবে, ভাবতে পারেনি। বলল, ‘তুমি একটা অদ্ভুত মেয়ে!’
‘থাক, ওভাবে না বললেও চলবে। তুমি নিজেও কম অদ্ভুত নও।’ বিব্ৰত দেখাল লামিয়াকে।
প্রসঙ্গ বদলাল রানা। ‘ওরা কী করতে চাইছে, কিছু অনুমান করতে পারো?’
‘অনুমান না, আমি জানি। হামলা করতে চলেছে আমেরিকার ওপর-পার্টিকেল বিম দিয়ে। টার্গেট, ওয়াশিংটন ডিসি।’
‘কীভাবে?’
‘সিয়েরা লিওনের উপকূলে একটা বিশাল পার্টিকেল অ্যাকসেলারেটর বসানো হয়েছে। ওখান থেকে ওয়াশিংটনকে লক্ষ্য করে ছোঁড়া হবে চার্জড় পার্টিকেলের বিম। ঝাড়ুর মত ঝাঁট দেয়া হবে পুরো শহরে। আগুন ধরে যাবে সবখানে, বিস্ফোরণ ঘটবে… সব মিলিয়ে কী পরিমাণ প্রাণহানি হবে, তা কল্পনা করতেও ভয় হচ্ছে আমার।’
‘অস্ত্রটার ক্ষমতার নমুনা আমি দেখেছি,’ বলল রানা। ‘কিন্তু এতদূর থেকে কীভাবে ওয়াশিংটনে হামলা করা সম্ভব? রেঞ্জে হয়তো কাভার করবে, কিন্তু বিম তো আর বাঁক নিতে পারে না, সরলরেখায় চলে। তারমানে ওয়াশিংটনকে লক্ষ্য করে ফায়ার করা হলেও দিগন্ত পেরুবার পর বায়ুমণ্ডল ভেদ করে মহাশূন্যে চলে যাবে।’
‘সেই সমস্যার সমাধান করার জন্যে একটা ডিভাইস আছে এই জাহাজে,’ জানাল লামিয়া। ‘শক্তিশালী একটা ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক অ্যারে।’
‘ফালক্রাম?’ অন্ধকারে তীর ছুঁড়ল রানা।
‘হ্যাঁ। এক ধরনের রিলে ডিভাইস ওটা। বিমটা যখন আমাদের মাথার ওপর দিয়ে মহাশূন্যের দিকে যাবে, তখন ওটাকে টেনে নিচের দিকে নামিয়ে আনবে ওটা… এমনভাবে ধনুকের মত বাঁকিয়ে দেবে, যেন আমেরিকার পূর্ব উপকূলে আঘাত হানতে পারে।’
‘এরা কি পাগল?’ রানার কণ্ঠে অবিশ্বাস। ‘পুরোদস্তুর যুদ্ধ বাধাতে চাইছে!’
‘পাগলামি তো বটেই,’ স্বীকার করল লামিয়া। ‘সমস্যা হলো, যুদ্ধটায় জেতার মত অস্ত্র রয়েছে ওদের হাতে।’
‘কিন্তু এতে কত মানুষ মারা যাবে, তা কি ভাবছে না? সারা দুনিয়ায় কী ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে, সেটাও না?’ উঠে দাঁড়াল রানা। পিস্তলের ম্যাগাজিন বদলাল। ‘ডিভাইসটার কাছে পৌঁছুতে হবে আমাকে।’
‘আমার মনে হয় না সেটা সম্ভব, রানা। বড়জোর পনেরো মিনিট বাকি হামলা শুরু হতে।’ লামিয়াও উঠল। ‘তা ছাড়া ওখানে তোমার জন্যে অপেক্ষা করছে ওরা। জানে, ডিভাইসটা বন্ধ করার চেষ্টা করবে তুমি। রিঅ্যাক্টরের কাছেও পাহারা বসানো হয়েছে।’
‘তাই বলে তো হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা যায় না,’ আপন মনে বলল রানা। ‘তোমার মাথায় কোনও আইডিয়া আছে?’
ঠোঁট কামড়ে ভাবতে শুরু করল লামিয়া। একটু পর উজ্জ্বল হলো চেহারা। ‘কুল্যান্ট,’ বলল ও।
‘খোলাসা করে বলো, আমি তোমার মত বিজ্ঞানী নই।’
‘তরল নাইট্রোজেন ব্যবহার করছে ওরা সুপারকণ্ডাক্টিং এফেক্ট সৃষ্টির জন্যে। আমরা যদি ওই নাইট্রোজেনের প্রবাহ বন্ধ করে দিতে পারি, ম্যাগনেটগুলোর টেম্পারেচার বেড়ে যাবে, সুপারকণ্ডাকশনের ক্ষমতা হারাবে। ডিভাইসটাও ঠিকমত কাজ করবে না তখন।’
‘ব্রাভো,’ প্রশংসা করল রানা।
আর তখুনি ঝট্ করে খুলে গেল দরজা। অস্ত্রধারী এক মার্সেনারিকে দেখা গেল দোরগোড়ায়, পাহারাদারকে বাইরে দেখতে না পেয়ে খোঁজ নিতে এসেছে। ক্ষণিকের জন্যে স্থির হয়ে গেল সে, পালা করে তাকাল মেঝেতে পড়ে থাকা লাশ আর রানার দিকে। তারপরেই হাতের অস্ত্র তুলতে শুরু করল।
নির্দ্বিধায় বেরেটার ট্রিগার চাপল রানা। সাইলেন্সারের কারণে পর পর ভোঁতা দুটো শব্দ শোনা গেল। বুলেটের ধাক্কায় উল্টে পড়ল লোকটা খোলা দরজা দিয়ে বাইরে। সঙ্গে সঙ্গে হৈচৈ ভেসে এল করিডোর থেকে।
ডাইভ দিল রানা, তীরের মত বেরিয়ে এল কেবিন থেকে। পিস্তল তুলে হৈচৈয়ের উৎস লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ল দুটো। কাতরে উঠল কেউ। আবছাভাবে দেখল, করিডোরের প্রান্ত থেকে লাফঝাঁপ দিয়ে সরে যাচ্ছে কয়েকজন লোক।
‘জলদি!’ লামিয়াকে ডাকল রানা।
কেবিন থেকে বেরিয়ে এল মেয়েটা। ওর হাত ধরল রানা।
‘এসো আমার সঙ্গে,’ বলল ও।
হাত ধরাধরি করে ছুটতে শুরু করল দু’জনে।