ধর্মীয় সন্ত্রাস
১. দুনিয়া এখন ডিজিটাল। ডিজিটাল দুনিয়ায় তুমি দ্রুত অনেক কিছু শিখে ফেলতে পারো। রান্না শিখতে চাও, ইউটিউবে পেয়ে যাবে, জল কী করে ফুটোতে হয়, সেটিও ইউটিউবে এভেইলেবল। আমার এক বন্ধু তো কোনও কিছু কিনতেই আর দোকানে যায় না, ফ্লিপকার্টই কিনে বাড়ির দরজায় পৌঁছে দিয়ে যায়। যে পর্ন দেখতে লোকে একসময় গভীর রাতে পা টিপে টিপে অন্ধকার গলির ভেতর স্যাঁতস্যাঁতে বাড়ির চিলেকোঠায় উঠতো, সেই পর্ন এখন প্রত্যেকের আঙুলের ডগায়। বলা যায়, জাস্ট এক ক্লিক দূরত্বে। ডিজিটাল দুনিয়ায় ভালো জিনিস যেমন শিখতে পারো, খারাপ জিনিসও পারো। প্রেসারকুকার-বোমা কী করে বানাতে হয়, সে শিক্ষাটা জারনায়েভ ছেলেদুটো ইন্টারনেট থেকেই পেয়েছে। ইসলামী মৌলবাদী, সন্ত্রাসী, খুনী সকলে ব্যবহার করছে হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইভার, ট্যাঙ্গো, গুগল, টুইটার, ফেসবুক,স্কাইপ, ইমো। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে বিজ্ঞানবিরোধী ধর্মান্ধরা। অল্প বয়সী তরুণ তরুণীর মগজধোলাই করার জন্য এখন ইন্টারনেট জিহাদই সবচেয়ে বেশ সফল। গরিব দেশগুলোতেও ইন্টারনেট জিহাদের পাশাপাশি প্রচুর মসজিদ মাদ্রাসা, ওয়াজ মাহফিল ইত্যাদি জিহাদিদের আঁতুড়ঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
২. ইজরাইল আর আমেরিকা আইসিসকে গড়েছে? ইজরাইল আর আমেরিকাকে তাদের অন্যায় আর নির্বুদ্ধিতার জন্য যত খুশি গালাগালি দাও। কিন্তু আইসিসের প্রতি সহানুভূতি দেখিও না। আইসিস নিরীহ মানুষদের খুন করছে। এই খুন ওরা নিজেদের বুদ্ধিতেই করছে। ইজরাইল আর আমেরিকা নয়, ওদের খুন করার প্রেরণা দিচ্ছে ওদের ধর্ম। আমেরিকা যদি আইসিসকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য নাও করতো, খুন করার ট্রেনিং যদি নাও দিতো, আইসিসরা খুন করতো। বাংলাদেশের ইসলামী-খুনীদের ইজরাইল আর আমেরিকা খুন করতে শেখাচ্ছে না। চাপাতির সাপ্লাই ইজরাইল বা আমেরিকা থেকে আসছে না। ইসলামী-খুনীরা পাথর ছুঁড়ে মেয়েদের হত্যা করে, ওই পাথর ইজরাইল বা আমেরিকা থেকে আসে না। সুইসাইড ভেস্টগুলোও নিশ্চয়ই আসে না।
আচ্ছা এত প্ল্যান করে ওরা নিরীহ মানুষ হত্যা করে কেন? প্ল্যান করে যে দেশের সরকারের ওপর রাগ, সে দেশের সরকারকে মারার চেষ্টা করলেই তো পারে।
৩. সিরিয়ার লক্ষ লক্ষ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে ইউরোপের কিছু দেশ। মানুষ বড় মমতায় তাদের বরণ করেছে। সমুদ্র সৈকতে মরে পড়ে থাকা একটি শিশুর জন্য কেঁদেছে সারা বিশ্ব। কেউ তখনও কল্পনা করতে পারেনি এই শরণার্থীর স্রোতের মধ্যে লুকিয়ে আছে আইসিস সন্ত্রাসী। প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার প্রথম আত্মঘাতী বোমা ছিলো এক সিরিয়ার লোক, যে লোক শরণার্থী হিসেবে অন্য শরণার্থীর সঙ্গে ইউরোপে ঢুকেছে। সিরিয়ার শরণার্থীর সঙ্গে মোট কজন সন্ত্রাসী বা আতঙ্কবাদি লুকিয়ে আছে। তার খবর কে নেবে! তাহলে কি ধরে নিতে হবে ইউরোপে এই সবে শুরু হলো ইসলামী সন্ত্রাস!
ফ্রান্সে এই ইসলামী হামলার পর আমি অবাক হবো না যদি দেখি ইউরোপে মুসলিম বিরোধী, ইমিগ্রেন্ট বিরোধী, রেসিস্ট, কট্টর ডানপন্থী রাজনীতি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সচেতন বিবেকবান মানুষ কতটা অসহায় হলে কট্টর ডানপন্থী রাজনীতিকে মেনে নিতে বাধ্য হয়।
৪. পোপ বলছেন প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরু। কেউ কেউ বলছেন, প্যারিসে এই হামলা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম। হিটলারের পর আইসিস। আমার মনে হয় এসব সবই অতিকথন। তবে সন্ত্রাসের উৎস যদি নির্মূল না হয়, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে। তবে এই যুদ্ধে সন্ত্রাসীদের জিতে যাওয়ার কোনও কারণ নেই, কারণ সন্ত্রাসীদের হাতে যা মারণাস্ত্র আছে, তার চেয়ে লক্ষ গুণ বেশি আছে পশ্চিমা বিশ্বের হাতে। সন্ত্রাসীরা হয়তো মরবে, কিন্তু সন্ত্রাস কী করে মরবে? বর্বরতা আর নৃশংসতার আইডিওলজি কী করে দূর হবে?
৫. আমেরিকা আর ইউরোপ মিলে ইসলামী সন্ত্রাসী দলগুলোকে ধ্বংস করতে পারতো কিন্তু করেনি। যতদিন সন্ত্রাসী দল আর সন্ত্রাসের সূতিকাগারগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস না হচ্ছে, ততদিন সন্ত্রাস চলবেই। ততদিন আমরা মরবো, পৃথিবীর সর্বত্র। কোনও দেশ আর নিরাপদ নয়। সপ্তম শতাব্দীর ইসলাম এই একবিংশ শতাব্দীতে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। হাতে তাদের একবিংশ শতাব্দীর অস্ত্র, মস্তিষ্কে সপ্তম শতাব্দীর অজ্ঞানতা।
বামপন্থীরা সব দোষ সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোকে দেবে, বলবে ওদের কারণেই সন্ত্রাসী জন্ম নিয়েছে, বলবে অশিক্ষা দারিদ্র ইত্যাদিই সন্ত্রাসী জন্মের মুল কারণ। সন্ত্রাসীদের জন্য তাদের সহানুভূতি উথলে উঠবে। আর কতকাল এসব হিপোক্রেসি দেখবো!
মসজিদ মাদ্রাসা বন্ধ করার সময় এসেছে। ওয়াজ খুৎবা বন্ধ করার সময় এসেছে। শিশু কিশোরদের মগজধোলাই বন্ধ করার সময় এসেছে। ইন্টারনেটের সন্ত্রাসী সাইটগুলো বন্ধ করার সময় এসেছে। ইসলাম শান্তির ধর্ম –এই মিথ্যে প্রচারটা বন্ধ করার সময় এসেছে।