দ্বীপান্তর
সুন্দরী বউ থাকার কি জ্বালা আমি এখন হাড়ে-হাড়ে বুঝেছি। আমার বউ প্রথমে এত সুন্দরী ছিল না। বিয়ের জল পড়ার সঙ্গে-সঙ্গে কি যে তার হল শরীরের চামড়া একেবারে টান টান। দমফুলো বেলুনের মতো। গাল দুটো যেন লাল টোমাটো। নাকটা যেন মার্বেল পাথর। চোখ দুটো ঝিনুক চেরা। মনি দুটো মরকত উজ্জ্বল। দাঁত যেন মালায় গাঁথা হাতির দাঁতের মানানসই টুকরো। আমার বউ আমারই চোখের সামনে দিনকে দিন কালিদাসের নায়িকা হয়ে উঠল। প্রথমটায় আমার গর্বে বুক দশহাত হয়ে উঠল। এত গর্ব যে লোকজন, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করত না। বিয়ের আগে আমার যত হাঁকডাক ছিল সব চলে গেল। বউয়ের পায়ে-পায়ে ন্যাওটা হুলোর মতো ঘুরি। তার হাত দেখি, পা দেখি, ঘাড় দেখি, শরীরের খোলা অংশ দেখি। দেখে-দেখে, দেখে-দেখে আমার সাধ মেটে না। কানে আসতে লাগল নানা উড়ো ঝাপটা মন্তব্য—’ব্যাটা বউয়ের ভেড়া হয়ে গেছে।’ পরে বুঝবে ঠেলা। অনেক রকম নেশার মধ্যে বউও তো একরকমের নেশা। লোকে যেমন তেমন বউয়ের জন্যেই উন্মাদ হয়ে যায়। বাপ মাকে বিসর্জন দিয়ে বউ বগলে আলাদা বাড়িতে গিয়ে বাসা বাঁধে। শৈশবে বই বগলে পাঠশালে, যৌবনে বউ বগলে মধু চন্দ্রিমায়। এই তো নিয়ম বাবা। শত সমালোচনাতেও এই ধারা কি পালটেছে, না পালটাবে! যারা বলছেন তাঁরাও তো বয়েসকালে এই একই চককরে ফেঁসেছেন। আমি বাবা যুক্তবাদী মানুষ। পৃথিবীতে একমাত্র সত্য ভালোবাসা। মেয়েদের ভালোবাসা। শাস্ত্র আরও বলেছে, পরস্ত্রীকে ভালোবেসো না। ওটা পাপ। বিয়ে কর, করে ভালোবাসো। উলটে-পালটে ভালোবাসো। সমস্যা হল, বউ জিনিসটাই এমন, যার বউ সে ছাড়া আর কেউ ভালোবাসে না। ছেলের মা-তো ছেলের বউকে দেখে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে। ছেলের বাপের তো চুলচেরা হিসেব—কত গেল, কত এল। সদাই প্রশ্ন, ছেলের বিয়ে দিয়ে ঠকে মরলুম না তো। আর একটু নিঙড়োলে, বেয়াই মশাই নামক আখটি আরও একটু রস ছাড়তেন। এই দুশ্চিন্তায় তাঁর রাতের ঘুম চলে যায়। মেজাজ চড়ে যায় সপ্তমে। চড়া মেজাজে পরের মেয়েকে কি কাছে টানা যায়। তাছাড়া অন্যের উসকানিত আছেই। থাক, ওসব ঘৃণার কথা থাক। প্রেমের জগতে পুরো ব্যাপারটাই হল নরম সরম। রস সিক্ত। প্রেমে অহঙ্কার একটা মস্ত বাধা। প্রেম চায় সমর্পন। সে প্রেম ঈশ্বরেই হোক আর নারীতেই হোক। আমি আমার মতো ঠিকই রইলাম। কারোর কথায় কান দিলুম না। নিজেকে সংশোধন করারও চেষ্টা করলুম না। আমি আধুনিক। আমার স্ত্রী আধুনিকা। যুগ আধুনিক। আমি একটা লাল টুকটুকে মোটর বাইক কিনে ফেললুম। মাকে নার্সিং হোমে নিয়ে গিয়ে গল ব্লাডার অপারেশন করার কথা ছিল। সেটা আপাতত বন্ধই রইল। আমি বাবা যুক্তিবাদী মানুষ। মায়ের বয়স সত্তর ধরি ধরি করছে। এই বয়সে কাঁচি ছুরি, আর কেন। এই পৃথিবীতে বেশি দিন বাঁচা মানে বেশি দু:খ পাওয়া। সন্তানের কর্তব্য মায়ের দু:খ বাড়ান নয়, কমান। অকারণে ডাক্তারদের বড়লোক না করে নিজে বড়লোক হওয়ার দিকে মন দিলুম। সুন্দরী বউ হলেই তো হবে না, তাকে তোয়াজে রাখতে হলে, সেইরকম ব্যবস্থা চাই। কেউ গোয়াল ঘরে জামদানি শাড়ি পরে বসে থাকতে পারে না। তার জন্যে উপযুক্ত ড্রইং রুম চাই। ভালো খানাপিনা চাই। দাসদাসী চাই সেবার জন্যে। ওই চাঁপার কলির মতো আঙুলে বাসন মাজলে, কাপড় কাচলে, ঘর মুছলে, আঙুলের কিছু থাকবে। এ তো আর আটপৌরে বউ নয়, তোলা বউ। চেহারার চটক কি। সুইমিং কস্ট্যুম পরিয়ে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় নামিয়ে দিলেই বিশ্বসুন্দরীর মুকুট পরে বেরিয়ে আসবে। তবে আমি তা হতে দেব না। আমার বউ, আমারই সম্পত্তি। রাখব, ঢাকব, সাজাব, দেখব, ইচ্ছেমত। আর আমার নতুন স্কুটারের পেছনে চাপিয়ে সারা শহরে চককর মেরে আসব। যারা দেখবে তাদের বুকে একেবারে জ্বালা ধরে যাবে। বুকে-বুকে গজাল পুঁতে যাবে। দামী রেঁস্তোরায় ঢুকব। আমার বউ লাল ঠোঁটে আইসক্রীম চুষবে। আর কোনের টেবিলের ভদ্রলোকের ঠোঁট থেকে কাটলেটের টুকরো খুলে পড়ে যাবে। কি আনন্দে ভরপুর। মেয়েটা সুন্দরী হলেও ভীতু। স্কুটারের পেছনে তুলতে বেশ বেগ পেতে হল। ভয়ে সিঁটকে মিটকে হনুমানের মতো আমার নেয়াপাতি ভুঁড়ি জাপটে ধরে রইল। ভোরের ময়দানে বিশবার চককর মারার পর একটু ধাতস্থ হল। এক গেলাস কফি মেরে দিল তিন চুমুকে ”তুমি শাড়ি না পরে জিনস আর কামিজ পর না। ব্যাপারটা তাহলে পুরোপুরি জমে যাবে।” খুব সুরেলা গলায় বললে, ‘ধ্যাত! শাড়ির মতো সাজ হয়। শাড়িতেই বাঙালি মেয়ের রূপ খোলে।” আমি বললুম, ”তাহলে এক আধটা সিগারেট খাওয়া অভ্যাস করো।” চোখের অপূর্ব একটা ভঙ্গী করে বউ বললে, ”অসভ্য”। কি ভালো যে লাগল। মনে হল হার্টফেল করব। ভোরের ময়দান। ঠ্যাং তুলে ট্রাম দৌড়চ্ছে আলিপুরের দিকে। হোঁদল কুতকুতের মতো মোটাসোটা লোক মেদ কমাবার জন্যে ছুটছে। ছুটছে মানে আপ্রাণ চেষ্টা করছে ছোটার। বুক আর পেটের চর্বি ধেই ধেই নাচছে। বউয়ের অমন কথা বলার ভঙ্গী দেখে ভেতরে এমন প্রেম এল, ভিক্টোরিয়াটাকে মনে হল তাজমহল। আমি এমন এক সাজাহান যার কোনও ঔরঙ্গজীব নেই। আমার মমতাজের গর্ভে অমন একটি হিরো এলেই হয়েছে আর কি। পিতার নাম ভুলিয়ে দেবে। থাকি ভাড়া বাড়িতে। তাজমহল তৈরি করতে না পারি বেশ সাজানো গোছানো ফ্ল্যাট আমি একটা করবই। আমার মমতাজ সেখানে পিয়ানো বাজাবে। আমি কিমোনো পরে পাইপ খাব। বসে-বসে দেখব বউয়ের হাতকাটা ব্লাউজ থেকে প্রকাশিত হাত, গলা, চিবুক, কানের ইয়ারিং, চুলের ঢল।
আমার এই তোয়াজে, আমার এই রূপমুগ্ধতায় আমার বউয়ের অহংকার বেশ বেড়ে গেল। খই ফোটার মতো কথা ফুটল। আমাকে বেশ হুকুম-টুকুম করতে লাগল। মাঝে-মাঝে দূরে সরিয়েও দিতে লাগল, ” ডোন্ট ডিস্টার্ব মি” বলে। একদিন আমার হাতের পাশে তার হাতটা ফেলে বলে কি? ”আমার হাতটা কি সুন্দর। তোমার হাতটা যেন বনমানুষের মতো।” আমার খুব খরাাপ লাগল। আমার হাতে পায়ে একটু লোম বেশি। সেত পুরুষের লক্ষ্ণণ। একদিন ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল বাঁধছে, আমি সোহাগ করে পেছনে এসে কাঁধে দুহাত রেখে ঘাড়ের পাশ থেকে মুখ বের কোরে উম উম শব্দ করছিলুম। সব স্বামীই এইরকম করে থাকে। আমার বউ আয়নায় চোখ রেখে বললে, ”তোমার মুখটা আমার মুখের পাশে বড় বেমানান।” আমি ছিটকে সরে এলুম। আমার নাকটা থ্যাবড়া। চোখদুটো বেলের মতো, গোল গোল আর ঢোকা ঢোকা। কিন্তু আমার স্বাস্থ্য। একেবারে ষণ্ডামার্কা। বুকের ছাতি? তেমনভাবে চেপে ধরলে সুন্দরীর খাঁচা খুলে যাবে। মনে-মনে আমার প্রেম যত বাড়ছে, ওর ঘৃণাও যেন ততই বাড়ছে। সেদিন একটা সিনেমা দেখতে-দেখতে আপন মনে বলে উঠল, ”উ: ফ্যান্টা।” দেখি পর্দায় কমল হাসান আর একটা মেয়ে। আমি জিগ্যেস করলুম, ” কে ফ্যান্টা?” বললে, ”কমল হাসান। মেরা দিলকা পেয়ারে।” দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরার ভঙ্গী করলে। আমার বিশ্রী লাগল। এই কথাটাও আমি প্রথম শুনলুম। নিজেকে খুব ছোট মনে হল। বউ সুন্দরী। আমি তার প্রেমের গামলায় কমলাভোগের মতো হাবুডুবু অথচ তার মনে বাসা বেঁধে আছে চিত্র তারকা। রাতে তাকে স্বপ্নেও দেখে নিশ্চয়। প্রেমের কুচকাওয়াজে আমি ক্রমশই পেছোতে লাগলাম। সেদিন আমার স্কুটারের পেছনে যেতে-যেতে বেশ কবি-কবি চেহারার এক যুবকের সঙ্গে ইশারায় কথা হল। নির্জন একটা জায়গায় স্কুটার দাঁড় করিয়ে জিগ্যেস করলুম, ”মালটা কে?” স্কুল মিস্ট্রেসের মতো এক ধমক মেরে বললে, ”ভদ্রভাবে কথা বলতে শেখো। মাল আবার কি? মাল? বিষ্ণুদাকে তুমি মাল বলছ? কত বড় নাট্যপরিচালক জানো। একাডেমিতে প্রতি বৃহস্পতিবার ওঁর নাটক হয়। লেখক, পরিচালক, অভিনেতা, সঙ্গীত পরিচালক। একটা জিনিয়াস। বুঝলে, একটা জিনিয়াস। চেহারাটা দেখেছ। ভীষণ রোমান্টিক।
”আলাপ হল কি করে?”
”হয়ে গেল। স্টেশনারী দোকানে জিনিস কিনতে গিয়ে আমাকে সরাসরি বললেন, ”আপনার অমন নায়িকার মতো চেহারা, অভিনয় করুন না। অমন সুন্দর গলা।”
‘তা, তুমি কি বললে?’
‘আমি বললুম, সুযোগ দিন না। এর পরের নাটকে আমি হিরোইন হব। নাটক থেকে ফিল্ম। উ:, টেরিফিক। আমাদের পাশ দিয়ে একটা মারুতি যেতে-যেতে হঠাৎ থেমে পড়ল। জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে জিগ্যেস করল, ‘জগাদা এনি ট্রাবল।’ ছেলেটা আমার খুব চেনা। বহুবার দেখা হয়েছে, কিন্তু আগে কখনও কথা বলেনি। ব্যবসাদার। ডাঁটেই মরত। আজ কি হল কে জানে? গাড়িটা বাঁদিকে রেখে নেমে এল। সামনে এসে আমার বউয়ের দিকে তাকিয়ে ন্যাকা-ন্যাকা গলায় বললে, ‘কেমন আছেন বউদি? চললেন কোথায়?’
আমার বউ অমনি গলে গিয়ে বললে, ‘নিউমার্কেট। আপনার নামই তো রতনদা? দীঘায় একটা বিশাল হোটেল করছেন।’
‘একবার পায়ের ধুলো দিন না।’
আমি সঙ্গে-সঙ্গে স্কুটারে স্টার্ট দিলুম। আমার রক্ত ফুটছে। ছোকরা আমাকে টপকে আমার বউয়ের সঙ্গে ভাব জমাচ্ছে। শয়তান। আমাকে কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না। আবার ডাকার ছিরি দেখ। জগাদা। স্কুটার নিয়ে বেরিয়ে যেতে-যেতে শুনলুম রতন বলছে, ‘এমন বউদির জন্যে একটা গাড়ি কিনুন জগাদা।’ আমার বউ আবার ঘাড় ঘুরিয়ে বললে—’বাই! বাই!’
ছেলেটা এত বড় শয়তান। পেছন দিক থেকে ওভারটেক করে যেতে-যেতে বলে গেল, ‘স্কুটার খুব রিস্কি বউদি।’ আমি একটু স্পিড বাড়াতেই আমার বউ বললে, ‘কেন রিস্ক নিচ্ছ? মারুতির পিক আপ ভীষণ ভালো। লাল আলোতে মারুতি আটকে গেছে। আমার স্কুটার পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই ছোকরা বললেন, ‘বউদি! আপনার ভয় করছে, আমার গাড়িতে চলে আসুন। আমিও নিউমার্কেটে যাব।’
আমার বউ আমাকে জিগ্যেস করলে, ‘হ্যাঁ গো যাব?’
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে কটমট করে তাকালুম তার দিকে। একটুও ভয় না পেয়ে আমার বউ বললে, ‘তোমার মনটা ভীষণ নীচ। ঠিক আমার ফুলদার মতো। সন্দেহ বাতিক। বউদিকে তালাচাবি দিয়ে রাখত। গত বছরে ডিভোর্স হয়ে গেছে। আমি গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে সোজা বাড়ি এলুম। আমার বউ সাজগোজ না ছেড়েই সোজা বিছানায়। চাদর মুড়ি। পাদুটো বেরিয়েছিল। সুন্দরীর সুন্দর পা। কতক্ষণ নিজেকে ঠিক রাখা যায়। ধীরে-ধীরে আমি গলতে শুরু করলুম। শেষে চরম পরাজয়।
এরপরই শুরু হল নানা অছিলায় আমার বাড়িতে লোকজন, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের আনাগোনা। যারা জীবনে আমার খোঁজ রাখত না, তারাও আমার খবরাখবর নেওয়ার জন্যে ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ‘কি খবর?’ বলেই তারা চলে যেত আমার বউয়ের কাছে। ওদিকে হাসির ফোয়ারা, এদিকে আমি হয়তো গালে ভোঁতা ব্লেড ঘষছি। ওদিকে চা চলছে, চানাচুর চলছে। এদিকে আমি শুকনো খবরের কাগজে মুখ থুবড়ে বসে আছি। একেই বলে অন্যের জন্যে চিঁড়ে ভেজানো, আমার বউ আড্ডা মারে আর আমি হুকুম তামিল করি। মিষ্টি আনি, চায়ের জল চাপাই। নিমন্ত্রণের সংখ্যাও সাংঘাতিক বেড়ে গেল। যে যেখানে আছে, সবাই সব ব্যাপারে চিঠি পাঠায়। বিয়ে, ভাত, এমন কি শ্রাদ্ধও। ন্যাড়া মাথা। সবে পিতৃবিয়োগ হয়েছে। ভক্তদাস বাবাজী কীর্তন গাইছেন। সেই অবস্থায় সব ছেড়ে আমার বউকে ধরেছে। কি ভালো যে লাগছে বউদি। আপনি এসেছেন। শোকার্ত মানুষকে কিছু বলাও যায় না। শোকের আধিক্যে বউদিকে মাঝে-মাঝে জড়িয়েও ধরে। পরিবেশনকারী সামনে দাঁড়িয়ে, একটা রাধাবল্লভী দোলাচ্ছে আর বলছে ‘আর একটা বউদি, প্লিজ আর একটা।’ দিলেই মিটে যায়, অন্যরাও পায়। দেবেও না, সরবেও না। আমি বোকার মতো বসে-বসে ভাবি, এ কার বউ।
একদিন শরীর গোলমাল করায় অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে এলুম। আমার বউ বললে, ‘অসময়ে হঠাৎ বুঝি দেখতে এলে আমি কি করি?’ শুনে বড় ব্যথা পেলুম মনে। কে এক ফুলদা। আমি তার মতো হতে যাব কেন? আমার একটাই দু:খ, আমার একটা মাত্র বউ তা হাতছাড়া হয়ে যায় বুঝি। হঠাৎ একটা সুযোগ এসে গেল। আমার অফিস থেকে একজনকে আন্দামান পাঠাতে চাইছে। কেউই যেতে রাজী নয়। কে যাবে দীপান্তরে। আমি এগিয়ে গেলুম। ‘আমাকে পাঠান স্যার।’ আমার অবাঙালি বড়কর্তা মহাখুশি। তিনি গোটা অফিসকে শুনিয়ে বললেন, ‘কে বলে বাঙালি ঘরকুনো। এখনও এমন বাঙালি আছে যে স্বেচ্ছায় দ্বীপান্তরে যেতে চায়।’ প্রথমে ভেবেছিলাম আমার বউ হয়তো বিদ্রোহ করবে। না, সে-ও খুব খুশি। শুনেই লাফিয়ে উঠল, ‘আন্দামান, পোর্টব্লেয়ার। আজই, আজই চলো। ওখানে আমার নীলু আছে।’
‘নীলুটা আবার কে?’
‘আমাকে গান শেখাত, নীলুদা আমার।’
‘অবিকল কমল হাসানের মতো। গলায় আছে মহম্মদ রফি।’
যা:, আর তো কোনও উপায় নেই। একেই বলে, তপ্ত কটাহ থেকে আগুনে।