জুড়ালো রে দিনের দাহ , ফুরালো সব কাজ , কাটল সারা দিন । সামনে আসে বাক্যহারা স্বপ্নভরা রাত সকল - কর্ম - হীন । তারি মাঝে দিঘির জলে যাবার বেলাটুকু একটুকু সময় সেই গোধূলি এল এখন , সূর্য ডুবু - ডুবু— ঘরে কি মন রয় । কূলে কূলে পূর্ণ নিটোল গভীর ঘন কালো শীতল জলরাশি , নিবিড় হয়ে নেমেছে তায় তীরের তরু হতে সকল ছায়া আসি । দিনের শেষে শেষ আলোটি পড়েছে ওই পারে জলের কিনারায় , পথে চলতে বধূ যেমন নয়ন রাঙা ক'রে বাপের ঘরে চায় । শেওলা - পিছল পৈঁঠা বেয়ে নামি জলের তলে একটি একটি করে , ডুবে যাবার সুখে আমার ঘটের মতো যেন অঙ্গ উঠে ভরে । ভেসে গেলেম আপন - মনে , ভেসে গেলেম পারে , ফিরে এলেম ভেসে— সাঁতার দিয়ে চলে গেলেম , চলে এলেম যেন সকল - হারা দেশে । ওগো বোবা , ওগো কালো , স্তব্ধ সুগম্ভীর গভীর ভয়ংকর , তুমি নিবিড় নিশীথ - রাত্রি বন্দী হয়ে আছ— মাটির পিঞ্জর । পাশে তোমার ধুলার ধরা কাজের রঙ্গভূমি , প্রাণের নিকেতন , হঠাৎ থেমে তোমার'পরে নত হয়ে পড়ে দেখিছে দর্পণ । তীরের কর্ম সেরে আমি গায়ের ধুলো নিয়ে নামি তোমার মাঝে— এ কোন্ অশ্রুভরা গীতি ছল্ছলিয়ে উঠে কানের কাছে বাজে । ছায়া - নিচোল দিয়ে ঢাকা মরণ - ভরা তব বুকের আলিঙ্গন আমায় নিল কেড়ে নিল সকল বাঁধা হতে , কাড়িল মোর মন । শিউলি - শাখে কোকিল ডাকে করুণ কাকলিতে ক্লান্ত আশার ডাক । ম্লান ধূসর আকাশ দিয়ে দূরে কোথায় নীড়ে উড়ে গেল কাক । মর্মরিয়া মর্মরিয়া বাতাস গেল মরে বেণুবনের তলে , আকাশ যেন ঘনিয়ে এল ঘুমঘোরের মতো দিঘির কালো জলে । সন্ধ্যাবেলার প্রথম তারা উঠল গাছের আড়ে , বাজল দূরে শাঁখ । রন্ধ্রবিহীন অন্ধকারে পাখার শব্দ মেলে গেল বকের ঝাঁক । পথে কেবল জোনাক জ্বলে , নাইকো কোনো আলো এলেম যবে ফিরে— দিন ফুরালো , রাত্রি এল , কাটল মাঝের বেলা দিঘির কালো নীরে ।