দাউ দাউ আগুন
কাঠকয়লার আগুন
1 of 2

দাউদাউ আগুন – ২৮

আঠাশ

আজ সকাল নটায় লঞ্চ ছাড়বে। রামচকে যেতে হবে। ভোর ভোর উঠে পড়লেন বনবিহারী। বাবা মুর্শেদ যাই বলুক, তাঁকে টাকা নিয়ে যেতে হবে হাসপাতালে। না নিয়ে গেলে যদি শোনেন কেউ টাকা জমা দেয়নি তাহলে ভয়ঙ্কর অস্বস্তিতে পড়বেন।

বাড়িতে যখন ফিরে এলেন তখনও রাস্তায় লোকজন বের হয়নি। পুঁটির মা তার ঘরের দরজায় সামনে লেবড়ে বসে আছে। বনবিহারী দাঁড়ালেন একটু তফাতে। পুঁটির মা তাঁকে দেখেও দেখল না। কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করে তিনি সিঁড়িতে পা দিলেন।

ঘরের দরজা বন্ধ। বাইরে থেকে শব্দ করলেন। দ্বিতীয়বারে দরজা খুলল মালতী। তাঁকে দেখে জিভ কেটে ঘোমটা টানল, ‘এহে, এত বেলা হয়ে গেছে টের পাইনি।’

বনবিহারী ঘরে ঢুকে দেখলেন খাটের একপাশে পাশ ফিরে ঘুমাচ্ছে মামণি। হাঁটুর ওপর কাপড় উঠে গেছে। মালতী গিয়ে সেটা নীচে টেনে নামাতে সে চোখ খুলল। সন্তান ঘুমাচ্ছে দেওয়ালের দিকটায়। অর্থাৎ ওদের দুজনের মাঝখানে ঘুমিয়েছে মালতী। তার মানে মামণি ছেলের পাশে ঘুমায়নি।

মালতী চাপা গলায় বলল, ‘ডাক্তারবাবু এয়েছেন। ওঠ, চা কর।’

মামণি বলল, ‘উম।’

‘থাক। ডাকতে হবে না।’ বনবিহারী বাথরুমে ঢুকে গেলেন। ব্রাশ করতে করতে তাঁর মনে হল দাড়িটা কামিয়ে ফেলা উচিত। ক’দিন না কামানোয় সাদা কাঁচাতে মুখ দেখতে কদাকার হয়েছে। মামণির মা এলে তাঁর যা বয়স তার চেয়ে অনেক বেশি মনে করবে। ঝটপট সেসব সেরে একেবারে স্নান করে বেরিয়ে আসতেই মালতী চায়ের কাপ এগিয়ে ধরল। বিরক্ত হলেন বনবিহারী, ‘তুমি অসুস্থ মানুষ। এখনও বেশ কিছুদিন বিশ্রামে থাকা উচিত। তোমাকে চা তৈরি করতে আমি বলেছি?’

‘আমি তো বিশ্রামেই আছি। এতে তো পরিশ্রম হয়নি।’ মালতী নীচু গলায় বলল।

পোশাক বদলে, স্যুটকেসের তালা খুলে পাঁচ হাজার টাকা বের করে এক চুমুকে চা খেয়ে নিয়ে মামণির দিকে তাকালেন বনবিহারী। সে আবার চোখ বন্ধ করেছে। তাকে শুনিয়ে বললেন, ‘রামচকে যাচ্ছি পেশেন্ট দেখতে। তোমার মা যদি আজ আসেন তাহলে তো তাঁকে এই ঘরেই থাকতে হবে। ব্যবস্থা করে রেখো। আর দুশো টাকা রেখে যাচ্ছি একটু ভালো মাছ-টাছ বাজার থেকে নিয়ে এসো।’

মামণি জবাব দিল না। মালতী বলল, ‘আপনি চিন্তা করবেন না। মা আসছে জানার পর মেয়ে খুব খুশি।’

বাইরে বেরিয়ে এলেন বনবিহারী। তাঁর মন খুঁতখুঁত করছিল। কথা বলতে না পারুক ভালো করে তাকাল না পর্যন্ত মেয়েটা। ওর মনে কি মতলব পাক খাচ্ছে তা বুঝতে পারছেন না তিনি। খুঁতখুঁতানিটা সেই কারণেই।

ঘাটে এসে দেখলেন ভটভটি চলাচল শুরু হয়েছে। ওপার থেকে একটা ভটভটি এপারে আসছে। ওটাতেই পাথরপ্রতিমায় যাবেন বলে একটু এগিয়ে গেলেন তিনি। এখনও রোদ ওঠেনি। নদীর ঢেউ ছোবল মারছে। ভটভটি ঘাটে লাগতেই যাত্রীরা নেমে এল। তাদের দুজনের অঙ্গে খাকি পোশাক। তৃতীয়জন মোটাসোটা, সম্ভবত ওদের নেতা কিন্তু অঙ্গে ইউনিফর্ম নেই। তিনি ভটভটির চালককে কিছু বললে সেই লোকটা আঙুল তুলে বনবিহারীকে দেখিয়ে দিল। বনবিহারী বিস্মিত হয়ে দেখলেন ওই তিনটে লোক তাঁর দিকে এগিয়ে আসছে।

মোটাসোটা মানুষটি তাঁর সামনে এসে দাঁড়াল, ‘আপনি ডাক্তার বনবিহারী?’

‘আজ্ঞে হ্যাঁ।’

‘আমি আপনার সঙ্গে কথা বলতে এসেছি। আপনি কি কোথাও যাচ্ছিলেন?’

‘হ্যাঁ, হাসপাতালে।’

‘ও। তাহলে চলুন যেতে যেতে কথা বলি।’

‘কি ব্যাপারে বলুন তো?’

‘আমি সাব ইন্সপেক্টর অফ পুলিশ। চলুন, ভটভটি ছেড়ে দেবে।’

ধক করে উঠল বুকের ভেতরটা। শেষ পর্যন্ত এতদূরে এসেও তাঁকে ধরা পড়তে হল। মামণিকে লুকিয়ে রাখতে আর পারবেন না? এই যে ক’দিন পাথরপ্রতিমায় গিয়েছে, ওই ছোকরার সঙ্গে গল্প করেছে, তাতেই পুলিশের নজর পড়েছে।

বিষণ্ণ মুখে ভটভটিতে বসলেন বনবিহারী। এস. আই. দুতিনবার কথা বলার চেষ্টা করে থেমে গেলেন। ওই বিকট আওয়াজ ছাপিয়ে কথা বলা অসম্ভব।

ওপারে পৌঁছে ভাড়া দিতে চাইলেন বনবিহারী। কিন্তু এস. আই হাত নাড়লেন, ‘দিতে হবে না। ওরা আমাদের কাছ থেকে পয়সা নেয় না।’

পারে পৌঁছে এস. আই. জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনার কাছে বাবা মুর্শেদ কেন এসেছিল? চিকিৎসা করাতে?’

‘বাবা মুর্শেদ?’

‘মিথ্যে কথা বলার চেষ্টা করবেন না। সে তার শাগরেদদের নিয়ে কাল রাত্রে আপনার বাড়িতে গিয়েছিল। খবরটা যখন আমরা পেলাম ততক্ষণে ও পগার পার হয়ে গেছে। খা ঘুঘু, যত খুশি ধান খা, ধরা তোকে পড়তেই হবে। কেন গিয়েছিল সে?’

‘উনি বললেন যেসব পেশেন্ট পয়সার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারে না তাদের যদি আমি হাসপাতালে ভরতি করিয়ে দিই তাহলে চিকিৎসার দায়িত্ব নেবেন।’

‘আপনি কী বললেন?’

‘আমি কিছু বলিনি।’

‘আপনার কী মনে হয়? কেউ এভাবে টাকা ওড়াতে পারে?’

‘আমি জানি না। তবে শুনেছি অনেক মানুষের উপকারে টাকা খরচ করেন।’

‘আপনি আপনার রোজগারের টাকা যত খুশি খরচ করুন, কারও কিছু বলার নেই। কিন্তু খুন ডাকাতি করে সেই টাকায় উপকার করতে চাইলে আইন চুপ করে থাকবে না। প্রশ্ন হল, এই লোকটা আপনার খবর পেল কি করে?’ এস. আই. জানতে চাইলেন।

‘আমি জানি না। সম্ভবত হাসপাতাল থেকে।’

‘শুনুন, ওই বাবা মুর্শেদ যদি আবার আপনার কাছে আসে তাহলে তাকে নানা অছিলায় আটকে রেখে আমাদের খবর দেবেন। আপনাদের ঘাটে যে বঙ্কুর চায়ের দোকান আছে সেখানে জানালেই আমরা খবর পেয়ে যাব। কিন্তু আপনি কি সত্যি কথা বলছেন?’

‘মিথ্যে বলার কোনও কারণ নেই। বাবা মুর্শেদ বলেছেন গতকাল যে মেয়েটিকে আমি গ্রাম থেকে এনে জীবন বাঁচাতে হাসপাতালে ভরতি করিয়েছিলাম তার অপারেশনের খরচ আজ উনি দিয়ে দেবেন।’

‘অ্যাঁ? তাহলে তো ওকে আজ পাথরপ্রতিমায় আসতে হবে।’ এক মুহূর্ত ভেবে নিয়ে এস, আই বললেন, ‘চলুন হাসপাতালে।’

হাসপাতালে গিয়ে প্রচণ্ড হতাশ হলেন ভদ্রলোক। মেয়েটির অ্যাকাউন্টে ইতিমধ্যে পুরো টাকা জমা পড়ে গেছে। সব খরচ মিটিয়ে আগামী পাঁচ দিনের জন্যে আগাম টাকা দিয়ে অনুরোধ করা হয়েছে তাকে ওই সময়ের আগে না ছাড়তে।

আপশোশ প্রচণ্ড হল এস. আই-এর। তারপর তাঁর খেয়াল হল। ‘এখানে আসার আগে আপনি কোথায় ছিলেন?’

‘নর্থবেঙ্গলে।’

‘অ্যাঁ। হঠাৎ নর্থ বেঙ্গল থেকে সুন্দরবনে? কেন?’

‘অনেককাল চিকিৎসা করছি। কিছুদিন থেকেই মনে হচ্ছিল মানুষের সেবা করব। চিকিৎসা করে গরিব মানুষদের কাছ থেকে টাকা নেব না। যেখানে ছিলাম সেখানে তা সম্ভব হত না। যত গরিব হোক লোকে জোর করে যা পারত তাই দিয়ে যেত। শেষে খবরের কাগজে এই এন জি ও-র বিজ্ঞাপন দেখে যোগাযোগ করে চলে এলাম এখানে।’ বনবিহারী বললেন।

‘হুম। পাগল। শুনুন ওইরকম ভয়ংকর ডাকাতদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে আপনাকে জেলে যেতে হবে। তাহলে মানুষের সেবা করা সম্ভব হবে না। আমরা আপনার এন জি ও-র কর্তাদের জানিয়ে দিতে পারি। কিন্তু তা করব না যদি আপনি একটু সহযোগিতা করেন।’

‘কী করতে হবে?’

‘এরপর কোনও গ্রামে গিয়ে সিরিয়াস পেশেন্ট দেখলে যখন হাসপাতালে নিয়ে আসবেন তখনই খবরটা আমাদের পৌঁছে দেবেন। ওই টোপ ওয়াচ করলেই বাঘকে ধরে ফেলতে পারব। আপনার কথা কেউ জানতে পারবে না।’ এস. আই হাসলেন, ‘আপনাকে দেখে ভালো মানুষ বলে মনে হওয়াতে আজ কোনও ঝামেলা করলাম না। চলি।’

হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন বনবিহারী। মামণির ব্যাপারে এখানকার পুলিশ তাঁর কাছে আসেনি। হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে চারদিকে তাকাতেই দেখতে পেলেন মেয়েটার বাবাকে। হাসি মুখে এগিয়ে এসে নমস্কার করল, ‘মেয়ে কথা বলেছে।’

‘বাঃ ভালো।’

‘তেনারা এসে সব টাকা মিটিয়ে দিয়ে গেছেন। আমাকেও একশোটা টাকা দিয়ে বলেছেন পাঁচ দিন চালাতে।’

‘এই তেনাদের তুমি চেনো?’

‘না ডাকতারবাবু।’

‘বাবা মুর্শেদের নাম শুনেছ?’

‘ওরে বাবা। শুনব না! লোকটার চোখ বড় হল।’

‘এই তেনারা হল তার লোকজন।’

লোকটা দুটো হাত মাথায় তুলল, ‘জয় ঠাকুর। আর কোনও চিন্তা নেই। বাবা মুর্শেদ যাকে মারে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। আর যাকে বাঁচায় তার কোনও কষ্ট থাকে না। আপনি নিয়ে এসেছিলেন বলে বাবা মুর্শেদের দয়া হল মেয়েটার ওপর।’

রামচকে যাওয়ার পথে বৃষ্টি নামল। হঠাৎ আকাশ কালো করে মেঘ উড়ে এসে জল ঝরাতে লাগল। রতন লঞ্চটাকে নদীর মাঝখানে নিয়ে গেল। জলের চেহারা এখন ভয়ানক দেখাচ্ছে। শোঁ-শোঁ হাওয়া দিচ্ছে। নীচ থেকে ট্যানজিস্টার কানে চেপে উঠে এসে সোনা চেঁচালো রেডিওতে বলছে সব নৌকো লঞ্চ যেন ঘাটে ফিরে যায়, নদীতে না থাকে। সাগরে নিম্মচাপ হয়েছে।’

‘এই খবরটা আগে বলতে পারেনি।’ রেগে গেল রতন।

‘বলেছিল বোধহয়, রেডিও বন্ধ ছিল তখন।’

‘এখন পেছনে ফেরার উপায় নেই।’ রতন ইঞ্জিন সামলাচ্ছিল।

হঠাৎ গৌরাঙ্গ বলল, ‘ও রতনদা, সাগর যেন টানছে লঞ্চটাকে।’

‘এই। যা হওয়ার তা হবে। ডুবে মরার চেয়ে বাঘের পেটে যাওয়া অনেক ভালো। চল পাড়ে নিয়ে যাই। সবাই সাবধানে।’

নীচের চেয়ারে চুপচাপ বসে প্রকৃতির ভয়ংকর চেহারা দেখছিলেন বনবিহারী। যখন রওনা হয়েছিলেন তখন চারধার কি শান্ত ছিল। শুধু জলের চেহারা দেখে রতন বলেছিল, ‘ঝড় বাদল হবে মনে হচ্ছে।’

‘কি করে বুঝলে?’

‘ওই ঢেউগুলের রং দেখুন না। যেন কালো গোখরো।’

এইরকম ঝড়ে লঞ্চ ডুবে যেতে পারে অসহায়ভাবে। ডুবলে বাঁচার কোনও সম্ভাবনা নেই। ঢেউ লঞ্চটাকে নিয়ে উত্থালপাথাল করছে। তলিয়ে গিয়েও আবার ভেসে উঠছে। জলের ধারাগুলো যেন বর্ষার মতো নেমে আসছিল। বনবিহারী চেয়ার ছেড়ে সিঁড়ির কয়েক ধাপ উঠতেই শিউরে উঠলেন। সামনে কোনও দিগন্ত নেই। শুধু জল জল। আর সেই জল আকাশ ছুঁতে চাইছে। নীচে নেমে এলেন তিনি।

অনেক চেষ্টার পরে পাড়ে লঞ্চ ভেড়াতে পারল রতন। এখানে ঘাট বলে কিছু নেই। জঙ্গলে ঠাসা মাটি। রতন বলল, ‘গৌরাঙ্গ ভালো করে বাঁধ। বৃষ্টি থামা মাত্র বেরিয়ে যেতে হবে। আশা করি দিনের বেলায় মহারাজ দেখা দেবেন না।’

‘কেউ বলতে পারে না রতনদা। সবাইকে ডেকে বলি ইঞ্জিন ঘরে এসে বসতে।’

‘এটুকু জায়গায় সবাই বসতে পারবে?’

‘পারবে। এখানে বাঘ ঢুকবে না।’

‘গৌরাঙ্গর চেঁচামেচিতে সবার সঙ্গে বনবিহারীও ইঞ্জিন ঘরে ঢুকলেন। বৃষ্টি পড়ে চলেছে সমানে। জায়গা নেই বললেই হয় তবু তার মধ্যে ওরা বনবিহারীর জন্যে একটা চেয়ারের ব্যবস্থা করে দিল।

বনবিহারী বললেন, ‘এত দেরি হয়ে যাচ্ছে রামচকে পৌঁছব কখন?’

‘আজ আর হবে না ডাক্তারবাবু। এই ঝড় থামলে সেখানে পৌঁছে ফিরতে পারব না।’

‘যাঃ। মাটি হয়ে গেল দিনটা। জ্বালানিও পুড়ল।’

‘মাঝেমধ্যে এরকমটা হয়। কলকাতা জানে।’

একটু বাদে বৃষ্টি কমল কিন্তু ঝড় চলছে। হঠাৎ সোনা চেঁচিয়ে উঠল, ‘ওই যে, কি বিশাল সাপ।’

সবাই দেখল ওপাশের একটা ডাল থেকে অন্তত দশফুট লম্বা স্বাস্থ্যবান কালো সাপ ইঞ্জিন ঘরের সামনে নেমে পড়ল। মুখ ঘুরিয়ে চারপাশ দেখে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল সেটা। গৌরাঙ্গ বলল, ‘সর্বনাশ। ওটা নীচে গেলে খুঁজে বের করার আগেই একজনকে শেষ করে দেবে।’ সে দরজা খুলে একটা লোহার হাতুড়ি ছুড়ে মারল। হাতুড়ি গিয়ে আঘাত করল সাপটার লেজে। সঙ্গে সঙ্গে সাপটা সিঁড়ির দিক থেকে ঘুরে বিশাল ফণা তুলে দু-দুবার ছোবল মারল হাতুড়িটাকে। তাতে সম্ভবত আহত হয়ে কি করবে বুঝতে পারছিল না আর তখনই গর্জনটা কানে এল। খুব কাছাকাছি বাঘ এসে গেছে। রক্ত হিম হওয়ার জোগাড়। রতন চাপা গলায় বলল, ‘বাধঁন খুলে দে গৌরাঙ্গ, লঞ্চটাকে এখান থেকে সরাই।’

‘কি করে খুলব। সাপটা এখনও ফণা তুলে দাঁড়িয়ে আছে।’

‘তুই যে কেন ওকে মারতে গেলি।’

বনবিহারী বললেন, ‘ইঞ্জিনটা চালু কর, যদি শব্দে ভয় পেয়ে পালায়।’

সঙ্গে সঙ্গে ইঞ্জিন চালু করল রতন। তাতে কাজ হল। সাপটা ফণা নামিয়ে দ্রুত লঞ্চ থেকে মাটিতে নেমে গেল। রতনের মুখে হাসি ফুটল, ‘এত ভয় পেয়েছিলাম যে শব্দটার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম।’ ফিরে আসতে আসতে দুপুর পেরিয়ে গেল ওদের।

পরেশ মণ্ডলকে দুর্যোগের কথা বলে বাড়ির পথ ধরলেন বনবিহারী। পুঁটির মায়ের দরজা খোলা। তাঁকে দেখে মহিলা বললেন, ‘ঘেন্না, ঘেন্নায় মরে যাই।’

‘কী বলছেন আপনি?’

জন্তুজানোয়াররাও তো পেটের বাচ্চা বড় না হওয়া পর্যন্ত আগলে রাখে। আর এই মেয়েছেলে বাচ্চাটাকে অজানা মেয়েমানুষের কাছে ফেলে রেখে চলে গেল। ছ্যা।’

‘কোথায় গিয়েছে মামণি?’

‘যান, ওপরে গিয়ে শুনুন।’

সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠে বনবিহারী দেখলেন দরজা খোলা। বিছানায় সন্তান ঘুমাচ্ছে। তার পাশে গালে হাত দিয়ে বসে আছে মালতী।

তাঁকে দেখে ডুকরে কেঁদে উঠল মালতী, ‘কিছুতেই শুনল না। বললাম আপনি না ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে। কথা কানেই নিল না।’

‘কি হয়েছিল?’

‘চেনা একজন পথ চিনিয়ে এনেছিল ওর মাকে। দেখা হতে মেয়ের কি কান্না। তারপর ছেলেটা তাগাদা দিতে ও কাপড়চোপড় নিয়ে রওনা হয়ে গেল।’ ‘কোথায়?’

‘আজ পাথরপ্রতিমায় হোটেলে থাকবে। কাল চলে যাবে দেশে।’

সন্তানকে দেখালেন বনবিহারী, ‘ওকে নিয়ে গেল না কেন?’

ছেলেটা ওর মাকে বলল, ‘ও নাকি আমার বাচ্চা। ও কোনও আপত্তি করল না। আমি কি করব বোঝার আগেই ওরা চলে গেল।’

দ্রুত বেরিয়ে এলেন বনবিহারী। প্রায় দৌড়ে এসে দাঁড়ালেন ঘাটে। তারপর ভটভটিতে উঠে বসলেন। যে করেই হোক আজ ওদের খুঁজে বের করতে হবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *