দাঁত থেকে সাবধান – শ্রীধর সেনাপতি
সবিতা চৌধুরী টেলিফোন করেছিলেন, স্যার।
একমনে একটা বিদেশি মেডিক্যাল জার্নাল পড়ছিলেন ডাঃ পরিমল সেন। জার্নালের পাতা থেকে তিনি চোখ তুললেন।
রিনি আবার বলল, সবিতা দেবীর ইনসিসরের রেডিয়োগ্রাফ করার কথা ছিল?
নার্সের মুখের দিকে কিছুকাল অন্যমনস্কভাবে তাকিয়ে থেকে তারপর ডাঃ সেন বললেন, হ্যাঁ। মিসেস চৌধুরীর ওপর পাটির সামনের দাঁতটার গোড়ায় ঘা অনেকটা ভেতরে ছড়িয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তা মিসেস চৌধুরী টেলিফোনে কী বললেন?
রিনি বলল, আজ হবে না। কাল আপনার চিঠি নিয়ে তিনি রেডিয়োলজিস্টের কাছে যাবেন।
আচ্ছা, কাল রাতে আমি চেম্বার থেকে চলে যাওয়ার পরে আবার কি সেই লোকটি ফোন করেছিল?
কার কথা বলছেন, স্যার? সেই নিশিকান্ত বাগচী?
হ্যাঁ, হ্যাঁ—।
রিনি চোখে-মুখে বিরক্তি ফুটিয়ে বলল, হ্যাঁ, স্যার, ভীষণ জ্বালিয়েছে। আমি বলেছি, আজ আর নতুন কোনও রুগি আপনি অ্যাটেন্ড করবেন না। কিন্তু নিশিকান্তবাবুর সেই এক রিকোয়েস্ট : তাঁর একটা ব্যবস্থা আজ করে দিতেই হবে।
সাধারণত আগে থেকে যোগাযোগ করা না থাকলে ডাঃ সেন তেমন রুগি দেখেন না। তিনি অভিজ্ঞ ডেনটিস্ট। কয়েকটি হাসপাতালের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন। কাজেই সময় তাঁর বাঁধাধরা।
চেম্বারের কাজ শেষ করতে প্রায় একটা বেজে গেল। ক্লান্তি বোধ করা স্বাভাবিক। রিনিকে চেম্বারের দরজা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে একটা ইজিচেয়ারে শুয়ে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিতে চাইলেন তিনি।
রিনি ফিরে এল।
স্যার!
কী হল?
সেই ভদ্রলোক—নিশিকান্ত বাগচী এসেছেন।
ডাঃ সেনের পক্ষে চেয়ারে শুয়ে থাকা আর সম্ভব হল না। বিরক্তিতে মনটা ভরে উঠলেও তা প্রকাশ করার সুযোগ পেলেন না তিনি।
রিনি নামটা উচ্চারণ করার সঙ্গে-সঙ্গে রিনিকে পাশ কাটিয়ে ডাঃ সেনের সামনে এসে নিশিকান্ত হাসিমুখে নমস্কার জানাল। চেহারা খর্বাকৃতি, পেশিবহুল। ধুতি-পাঞ্জাবি পরা। ডাঃ সেনের প্রথম যেদিকে চোখ পড়ল সেটা হল নিশিকান্তের নোংরা দাঁতের পাটির দিকে।
ইঙ্গিতে ডেন্টাল চেয়ার দেখিয়ে ডাঃ সেন বললেন, বসুন।
তাড়াতাড়ি বিদায় করে দিতে পারলেই তিনি যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন।
রিনি ওয়েটিংরুমে চলে গেল।
আরাম করে বসুন। বলুন, কী কষ্ট?—পাশে দাঁড়িয়ে জিগ্যেস করেন ডাঃ সেন।
নিশিকান্ত বলে, সারা মুখ জুড়ে একটা যন্ত্রণা, ডাক্তারবাবু। ওপর-নীচ দুটো মাড়িই যেন পাকা ফোড়া।
বলে চোখ বুজে হাঁ করে নিশিকান্ত।
ডাঃ সেনের দৃষ্টি কষের দাঁতের দিকে ছুটে যায়। দ্বিতীয় মোলারে একটা গর্ত। এদিকে-ওদিকে আরও কয়েকটা গোলমাল চোখে পড়ল।
কী দেখলেন, ডক্টর সেন?—নিশিকান্ত শুধোয়।
কয়েকটি দাঁতে ক্যাভিটি হয়েছে। সেকেন্ড মোলারের ক্যাভিটিই বেশি কষ্ট দিচ্ছে আপনাকে।
দাঁতটা তুলে দেবেন, না ড্রিল করবেন?
ডাঃ সেন বললেন, নড়ছে না তো! ড্রিল করে দেব। তাতে কষ্ট হবে না।
না। দাঁতে একে গর্ত হয়েছে, তাতে আবার আপনি ড্রিল করে গর্তটা বাড়িয়ে দেবেন? আমি রাজি নই।
তবে আমার কাছে এসেছেন কেন?—রেগে ওঠেন ডাঃ সেন : আমার ফিজ দিয়ে আপনি এখন চলে যেতে পারেন।
ফিজ আপনার নিশ্চয়ই দেব।—নিশিকান্তর মুখটা হাসিতে ভরে ওঠে এবার : আসলে আমি আপনার রুগি নই, ডক্টর সেন। রুগি সাজার ফলে আপনার কাছে আসা আমার পক্ষে একটু সহজ হয়েছে।
ডাঃ সেন চমকে উঠে লক্ষ করলেন, নিশিকান্তর দুটো চোখে ফুটে উঠেছে ধূর্ততার ছায়া।
পরমুহূর্তেই ভয়ে কেঁপে ওঠে তাঁর গলার স্বর, আপনি কী চান, মিস্টার বাগচী?
ঘরের একপাশে রয়েছে ফাইল ক্যাবিনেটে। সেইদিকে লোলুপ দৃষ্টি ফেলে নিশিকান্ত বলে, আমার এক বন্ধু নতুন ডেন্টাল সার্জন হয়েছে। অভিজ্ঞতা নেই, বুঝতেই পারছেন। আপনার ওই ফাইলগুলো আমি কিনে নিতে চাই।
ডাঃ সেন ঢোক গেলেন।
কিন্তু ওগুলো আমার রুগিদের রেকর্ড। বিক্রি করার জন্যে সাজিয়ে রাখা হয়নি!
তা আমি জানি।—নোংরা দাঁতের পাটি বের করে হেসে নিশিকান্ত বলে, ওদের কাজ তো হয়ে গেছে। আমি হাজারখানেক টাকা দিচ্ছি, পুরোনো রেকর্ডগুলো আমাকে দিয়ে দিন।
ডাঃ সেন এবার নিজেকে কিছুটা সামলে নেন : ফাইলগুলো নিয়ে আপনার বন্ধু ডেনটিস্টের কোনও উপকারই হবে না, মিস্টার বাগচী। আমার এখনকার এবং পুরোনো সমস্ত রুগির দাঁতের অবস্থা, ট্রিটমেন্টের কথা, সবকিছু ফাইলগুলোতে লেখা রয়েছে। সেসব খবর নিশ্চয়ই বিক্রির জন্যে নয়!
নিশিকান্ত বলে, দর কষাকষি আর করতে চাই না, স্যার। দু-হাজার টাকাই রাখুন। দিয়ে দিন।
ডাঃ সেন আর পারেন না। চিৎকার করে ডাকেন, রিনি!
ডেন্টাল চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায় নিশিকান্ত।
ঠিক আছে। আমি এখন চলে যাচ্ছি। আপনি আরও একটু ভেবে দেখুন। কাল আবার আসব। কিন্তু বন্ধুকে আমি কথা দিয়ে এসেছি, ডক্টর সেন। সে আমার ওপরে…।
রিনি ব্যস্তভাবে ঘরে ঢোকে : স্যার!
আচ্ছা, ডাক্তার সেন, আপনার ফিজ এই ষোলো টাকা টেবিলে রেখে গেলাম। পরে যেদিন আসব, দাঁতটার ব্যবস্থা করে দেবেন। নমস্কার।
চেম্বার থেকে বেরিয়ে গেল নিশিকান্ত।
ডাঃ সেন একটা চাপা উত্তেজনায় কাঁপছিলেন। রিনিকে বললেন, এ-বেলার মতো চেম্বার বন্ধ করে দাও।
পরদিন সকাল দশটায় রিনি ডাঃ সেনকে বলল, আমি ভদ্রলোককে বলেছি, এখন আপনি ব্যস্ত আছেন—।
কাকে?
নিশিকান্ত বাগচীকে। তিনি টেলিফোনে আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান।
টেলিফোন থাকে ওয়েটিংরুমে। ডাঃ সেন গিয়ে টেলিফোন ধরলেন।
টেলিফোনের ওপার থেকে নিশিকান্ত বলল, আমার প্রস্তাবটা সম্বন্ধে কী ঠিক করলেন, ডক্টর সেন?
শেষ কথা তো বলে দিয়েছি আপনাকে! ফাইলগুলো বিক্রির জন্যে নয়।
না, ডক্টর সেন, আমার প্রতি এতটা অকরুণ হবেন না। প্লিজ! বেশ, তিন হাজারই দেব!
ন-না!—রাগে যেন ফেটে পড়তে চাইলেন ডাঃ সেন : আপনার দাঁতের সম্বন্ধে যদি কিছু বলার থাকে, বলুন। তা না হলে আমার আর সময় নষ্ট করবেন না। আমি টেলিফোন ছেড়ে দিচ্ছি।
নিশিকান্ত ব্যস্ত হয়ে পড়ে ওদিকে : আহা-হা! ছাড়বেন না। আমার দাঁতের অবস্থার কথাই বলছি। দাঁতের গর্তটা ভরাট করেই দেবেন। আজ সাড়ে পাঁচটায় আমি যাচ্ছি। টাকাকড়ি সঙ্গে নিয়েই যাব, ডক্টর সেন।
বিষয়টা নিয়ে ডাঃ সেন সারাদিনই ভেবেছেন। একের পর এক রুগি এসেছে। কাজ করেছেন। কারও দাঁত তুলে দিয়েছেন। ক’টি পোকায় খাওয়া দাঁত মার্কারিতে ভরাট করেছেন। দেখেছেন দুটি জিনজিভাইটিস রুগি। তবু নিশিকান্ত বাগচীর চিন্তা মন থেকে তাড়াতে পারেননি তিনি। ভেবেছেন, আর অবাক হয়েছেন।
রিনি কোনও ব্যক্তিগত কারণে বিকেলটা ছুটি নিয়েছে।
ঠিক সাড়ে পাঁচটায় নিশিকান্ত এসে হাজির। এসেই শুয়ে পড়েছে ডেন্টাল চেয়ারে।
ভেবে দেখেছেন, ডক্টর সেন?
হ্যাঁ, ভেবেছি। খুব বেশি সময় লাগবে না। আপনার ওই দাঁতটায় সামান্য একটু ড্রিলিং করে গর্তটাকে ভরাট করে দেব। টেম্পোরারি ফিলিং। দু-দিন পরে আবার আসবেন। তখন ফিনিশ করব।
নিশিকান্ত বলল, আপনি ডাক্তার। যা ভালো বোঝেন করুন।
কাজে মন দিলেন ডাঃ সেন। নিশিকান্তকে নিয়ে তিনি এখন আর উদ্বেগ বোধ করছেন না। সব রুগিই তাঁর কাছে সমান। তারা সবাই হাঁ করে তাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরে ডাঃ সেনের চোখের সামনে। নিপুণ অভ্যস্ত হাতে নিশিকান্ত বাগচীর দাঁতের গর্তে ড্রিল চালান ডাঃ সেন। সাময়িকভাবে গর্তটিকে ভরাট করে রাখার জন্য যেমনটি প্রয়োজন তার বেশি আর-কিছু করেন না।
ব্যথা লাগল?—কাজ শেষ করে ডাঃ সেন জিগ্যেস করেন।
না, ডক্টর সেন।—চোয়ালে হাত বুলোতে-বুলোতে নিশিকান্ত উত্তর দেয়। তারপর পকেট থেকে একটা খাম বের করে সে। ডাঃ সেনের হাতে সেটা দিয়ে বলে, তিন হাজারই আছে।
না।—দৃঢ় প্রতিবাদের ভঙ্গিতে মাথা নাড়েন ডাঃ সেন আমি দুঃখিত। আপনি আমাকে ভুল বুঝেছেন, মিস্টার বাগচী। টাকার কোনও প্রশ্ন এখানে নেই।
একটা হাসিখুশি ভাব ফুটে উঠেছিল নিশিকান্তর মুখে। দপ করে সেটা যেন নিভে গেল। খামটা ফিরিয়ে নিল সে।
আপনি যে এ-কথা বলবেন, এটা আমার বরাবরই ভয় ছিল। তবু আশা করেছিলাম, আপনি শেষপর্যন্ত রাজি হয়তো হতে পারেনও!
নিশিকান্ত জামার পকেটে হাত ভরল। টেনে বের করে আনল একটা পিস্তল।
ফাইলগুলো আমার হাতে তুলে দিন এবার, ডক্টর সেন!
এ-কাজ আপনি করতে পারেন না।—পিস্তলের নলের ওপরে নজর রেখে বললেন ডাঃ সেন : এ তো রীতিমতো ডাকাতি!
হ্যাঁ, হ্যাঁ, তাই। ডাকাতিই মনে করুন। আর সময় নষ্ট করতে চাই না। A থেকে Z পর্যন্ত—সব ফাইল আমি নিয়ে যাচ্ছি।
ডাঃ সেনের বুক ঢিপঢিপ করছে। ড্রয়ার খুলে তিনি সমস্ত রুগির রেকর্ড তুলে দিলেন নিশিকান্তর হাতে।
দুই বগলে ফাইলগুলো চেপে ধরে উধাও হয়ে গেল নিশিকান্ত বাগচী।
কয়েক মিনিট শূন্য দৃষ্টিতে শূন্যগর্ভ ফাইল-ক্যাবিনেটের দিকে তাকিয়ে থাকেন ডাঃ সেন। তারপর টেলিফোনের কাছে দৌড়ে গেলেন।
হ্যালো…মুচিপাড়া থানা? আমি ডক্টর পরিমল সেন কথা বলছি। দয়া করে গোয়েন্দা দপ্তরের কোনও অফিসারের সঙ্গে আমার যোগাযোগ করে দেবেন একটু?
ক্লিক করে একটা শব্দ উঠল। তারপরেই ডাঃ সেন শুনতে পেলেন : হ্যালো…বলুন, ডক্টর সেন, কী বলতে চান? আমি ইন্সপেক্টর শিশির সিংহ।
ডাঃ সেন বললেন, শুনুন ইন্সপেক্টর, আমি একজন ডেন্টিস্ট। লোয়ার সার্কুলার রোডে আমার চেম্বার। এইমাত্র একজন অ্যান্টিসোশাল পিস্তল দেখিয়ে আমার সমস্ত রুগির রেকর্ড নিয়ে পালিয়েছে। হালে কোথাও কোনও খুন-টুন হয়নি তো? এমন কোনও কি আপনারা বডি পেয়েছেন, যাকে শনাক্ত করা যায়নি?
আপনার প্রশ্নগুলোর মানে বুঝতে পারছি না, ডক্টর সেন।
বুঝতে পারছেন না! এই লোকটা প্রথমে রেকর্ডগুলো আমার কাছ থেকে কিনে নিতে চায়। আমি বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় পিস্তল উঁচিয়ে জোর করে সেগুলো নিয়ে গেল। যদি হালে আপনারা কোনও ডেডবডি পেয়ে থাকেন, তাহলে হয়তো এই লোকটা চেষ্টা করছে যাতে সেই বডিটা শনাক্ত করা না যায়…।
আপনি আপনার চেম্বারের অ্যাড্রেসটা বলুন, ডক্টর সেন। আমরা এখুনি ওখানে যাচ্ছি।
ডক্টর সেন ঠিকানা জানালেন।
অল্পক্ষণের মধ্যেই চেম্বারে এসে হাজির হলেন ইন্সপেক্টর শিশির সিংহ। শুধোলেন, একটা খুন সম্বন্ধে আপনি কী করে এতটা শিয়োর হলেন, ডক্টর সেন?
ডক্টর সেন ব্যাখ্যা করে বলেন, এরকম ঘটনা তো হামেশাই ঘটতে দেখা যায়, ইন্সপেক্টর। খুন করার পর খুনি ডেডবডিটা এমনভাবে বিকৃত করে রেখে যাওয়ার চেষ্টা করে, যাতে সেটা শনাক্ত করা না যায়। আগুনে কিছুটা পুড়িয়েও রেখে যায় কখনও-কখনও। তখন মৃতদেহের মুখ দেখে চেনা শক্ত হয়ে পড়ে। তবে তার দাঁত দেখে অনেক সময়ে পরিচয় পাওয়া যেতে পারে। সাধারণত প্রত্যেক ডেনটিস্ট রুগির একটা করে রেকর্ড রাখেন। আঙুলের ছাপের চেয়ে সেটা কিছু কম নয়!
শিশির সিংহ বললেন, কিন্তু আপনার রেকর্ড যে-লোকটি চুরি করে নিয়ে গেছে…।
ডক্টর সেন বললেন, প্রথমে চুরি করতে চায়নি। বিনিময়ে আমাকে তিন হাজার টাকা দিতে চেয়েছিল। আমি রাজি না হওয়ায় সে ওই পথ বেছে নিয়েছে। কেন, আন্দাজ করতে পারেন? আমার কোনও একটি পেশেণ্ট হয়তো ওর ভিকটিম হয়েছে। হয়তো আমার একটি কার্ড তার পকেটে পেয়েছে ওই লোকটি। কিংবা যদি মৃতদেহ শনাক্ত করা না গিয়ে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতেও যাতে তা করতে না পারা যায়, খুনি এখন সেই চেষ্টাই হয়তো করছে। বুঝতে পারছেন, ইন্সপেক্টর? আপনাদের ইনভেস্টিগেশানে খুনি বাধা সৃষ্টি করতে চাইছে। রিসেন্টলি এমন কোনও ডেডবডি আপনারা পেয়েছেন নাকি?
হ্যাঁ।—গম্ভীর গলায় বললেন শিশির সিংহ, তিনদিন আগে পাওয়া গেছে। রাস্তার ধারে ইট-পাথর ঝোপঝাড়ে ভরা পরিত্যক্ত একটা মাঠের ভেতরে। বডিটা কেউ পেটল দিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে ফেলতে চেয়েছিল।
নিজের বিশ্বাসে অটল থেকে ডাঃ সেন বললেন, নিশ্চয়ই সে আমার কোনও পেশেন্ট। আপনাদের এখন যা করা উচিত, শুনুন। আমি যেসব পেশেন্ট দেখেছি তাদের প্রত্যেকের খবর নিন আপনারা। দেখুন, হুইচ ওয়ান ইজ মিসিং। তারপর নিশিকান্ত বাগচীর খোঁজ করুন।
ওই লোকটা?
হ্যাঁ। নিশিকান্ত বাগচী। ও-ই খুনি!
শিশির সিংহ মাথা নেড়ে সন্দেহ প্রকাশ করলেন : এখন নিশিকান্তকে খুঁজে বের করা কি সহজ হবে? সে আপনার সমস্ত রুগির রেকর্ড নিয়ে কোথায় কী করবে, কে বলতে পারে! ক্যান ইউ ডেসক্রাইব দিস নিশিকান্ত বাগচী?
নিশ্চয়ই। তবে তার চেহারার বর্ণনা শুনে আপনারা হয়তো বেশিদূর এগোতে পারবেন না, ইন্সপেক্টর। যাতে সোজাসুজি সে আপনাদের হাতে ধরা দেয়, তার উপায় আমি বলে দিচ্ছি।
হাঁ করে কষের একটা দাঁত দেখিয়ে ডাঃ সেন আরও বললেন, এই দাঁতটি সেকেন্ড মোলার। নিশিকান্ত যখনই আমার মনে সন্দেহ জাগিয়েছিল, তখনই তার সম্পর্কে আমি সজাগ ছিলাম। তার ওই দাঁতটিকে ড্রিল করে এমন একটা গর্ত করে দিয়েছি, যা গভীর হয়ে সেই দাঁতের গোড়ার নার্ভকে প্রায় টাচ করেছে। তারপর ওষুধ দিয়ে সেই গর্তটাকে টেম্পোরারিলি ভরাট করে দিয়েছি। দশ-পনেরো মিনিট, বা বড়জোর আধঘণ্টা, নিশিকান্ত কিছু টের পাবে না। তারপর তার ওই দাঁতে শুরু হবে অসহ্য যন্ত্রণা। তখন সে কোনও ডেনটিস্টের কাছে না গিয়ে পারবে না, ইন্সপেক্টর। আপনারা এই এরিয়ার সমস্ত ডেনটিস্টকে গোপনে খবর দিয়ে সজাগ করে রাখুন। নিশিকান্তকে আপনারা পেয়ে যাবেন। মানে, নিশিকান্তর ওই সেকেন্ড মোলারে এমন পেইন শুরু হবে যে, এমন যন্ত্রণা সে কখনও কল্পনা করেনি। আর দশ-পনেরো মিনিটের মধ্যেই…মনে হয় এতক্ষণে শুরু হয়ে গেছে। অতএব বেশিদূর সে যেতেই পারবে না।
শিশির সিংহ বিদায় নেওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালেন। নমস্কার করে বললেন, ধন্যবাদ, ডক্টর সেন। আবার পরে দেখা হবে।
তাতে অবাক হব না।—উত্তরে বললেন ডক্টর সেন।
মাসিক রোমাঞ্চ
জানুয়ারি, ১৯৬৮