দর্শন
১
স্বচ্ছসলিলা ভাগীরথীর তীরবর্তী একটি মন্দির। বহিড়াম্বর তাহার নাই। অষ্টোত্তর শতসংখ্যক মৃৎপ্রদীপ জ্বলিতেছে মন্দিরের দালানে। রাজবাটী হইতে কিয়ৎ দূরত্বে অবস্থিত হওয়ায়, পথচারী তথা সাধারণ মনুষ্যের সমাগম নাই। মৃদু বাতাস বেণুবনের মাথা আন্দোলিত করিতেছে। যেন উহারা চন্দ্রদেবের চামর।
উত্তর-পূর্বে কোলদ্বীপ। তাহার পশ্চিম প্রান্ত স্পর্শ করিয়া জাহ্নবী ছুটিয়া গিয়াছে দক্ষিণে। সমৃদ্ধ জনপদের গৃহে গৃহে একটি একটি করিয়া জ্বলিয়া উঠিতেছে আলোকবর্তিকা। দিগ্বলয়ে চাহিলে তাহাদের খদ্যোত বলিয়া ভ্রম হয়।
দীপালোকে সম্মুখ পথ আলোকিত হইয়াছে। উজ্জ্বলচক্ষু বনচারী শ্বাপদকুল নিঃশব্দে ইতস্তত ভ্রমণ করিতেছে।
একটি কৃষ্ণসর্প কুণ্ডলী পাকাইয়া পথিমধ্যে শুইয়া ছিল। শুক্লা দ্বাদশীর জ্যোৎস্না তাহার নিটোল অঙ্গে পতিত হইয়া স্যমন্তক মণির ন্যায় জ্বলজ্বল করিতেছে।
সহসা নিকটেই হ্রেষারব শোনা গেল। দশজন অশ্বারোহী রাজপুরুষ মন্দিরপ্রাঙ্গণে উপস্থিত হইলেন। অশ্বচালনার কম্পন অনুভব করিয়া বিষধর সর্প চকিতে ফণা তুলিল।
তৎক্ষণাৎ জনৈক সৈনিক সূচ্যগ্র ভল্ল উদ্যত করিল।
বজ্রপাতের মতো কঠোর কণ্ঠে আদেশ শোনা গেল,
– দাঁড়াও!
সৈন্যটি অস্ত্র সংবরণ করিয়া কহিল,
– মহারাজ, এ সাপ বিষাক্ত..
.
– তাতে কী হয়েছে? ও কি তোমাকে কামড়াতে এসেছে? পাশ কাটিয়ে চলো।
.
মন্দিরের অভ্যন্তরের লক্ষ্মী-নারায়ণের যুগল মূর্তি। মন্দিরকে বেষ্টন করিয়া একটি বোধিবৃক্ষের স্তম্ভমূল অনন্তনাগের ন্যায় অবস্থান করিতেছে। শ্বেতবর্ণ একটি পেচক সহসাই যেন লজ্জিত হইয়া উড়িয়া গেল নিকটবর্তী বেতসকুঞ্জ অভিমুখে।
পাদুকাদ্বয় পরিত্যাগ করিয়া দীর্ঘদেহী পুরুষ মন্দিরে প্রবেশ করিলেন। অপক্ক তৃণের ন্যায় শ্যামল অঙ্গের লাবণি সুদৃঢ় পেশিসমূহ অলংকরণে আরও নয়নমনোহর হইয়াছে।
বিগ্রহের সম্মুখে স্বর্ণপ্রদীপ হস্তে বিপ্র সন্ধ্যারতি করিতেছিলেন। মহারাজকে দেখিয়া ইঙ্গিতে উপবিষ্ট হইতে নির্দেশ দিলেন। রাজা নতজানু হইয়া বসিলেন।
শুক্লাম্বর্ধরং বিষ্ণুং শশীবর্ণং চতুর্ভুজম্।
কায়েন বাচা মনসেন্দ্রিয়ৈর্বা।।
শান্তাকারং ভূজগশয়নম্ পদ্মনাভং সুরেশং।
সা শঙ্খচক্রম্ সা কিরীটাকুণ্ডলং।।
বিষ্ণুবন্দনা শুনিতে শুনিতে রাজার দুই গণ্ড বাহিয়া আনন্দাশ্রু বহিতে লাগিল। হর্ষোৎফুল্ল চিত্তে “জয় বিষ্ণু” বলিয়া ধ্বনি দিয়া উঠিলেন। পূজা সমাপন হইলে।
বিপ্র শ্রীধর প্রসাদী ফুল ফল রাজার প্রসারিত হস্তে প্রদান করিলেন। কপালে স্পর্শ করাইয়া প্রসাদ গ্রহণ করিলেন রাজা। বিপ্রের মুখপানে চাহিয়া লক্ষ করিলেন, তাঁহার চক্ষুদ্বয়ে উদ্বেগের চিহ্ন। পূজন-পরবর্তী প্রশান্তি সে স্থানে অনুপস্থিত।
আশ্চর্যান্বিত রাজা প্রশ্ন করিলেন,
– বিপ্র, চিন্তিত মনে হয়।
শ্রীধর রাজার বাল্যবন্ধু। সমবয়স্ক। নৈবেদ্যের থালি বিগ্রহের পদমূলে রাখিয়া তিনি কহিলেন,
– রাজা, বিপদ আসছে।
– কী বিপদ! বলো আমাকে।
ভয়ার্ত কণ্ঠে ব্রাহ্মণ কহিলেন,
– বিরাট শক্তিশালী এক রাজা তোমার রাজ্যে সৈন্যসমাবেশ ঘটাতে চলেছে। বশ্যতা স্বীকার না করলে ধ্বংস অনিবার্য।
কিছুক্ষণ স্তম্ভিত রহিয়া, রাজা অট্টহাস্যে ফাটিয়া পড়িলেন,
– বন্ধু, তুমি পারোও বটে! এ বিপদ বুঝি?
শ্রীধর আশ্চর্যান্বিত হইয়া কহিলেন,
– যুদ্ধ বিপদ নয়?
– আরে, কী যে বলো? ক্ষত্রিয়ের আবার যুদ্ধে কীসের বিপদ? এ যদি গোলোকপতি সস্ত্রীক আমার রাজ্য ছেড়ে যেতেন, বা পারুলবনিতে ধানের ফলন কম হত, জহ্নুদ্বীপের সব আখ মরে যেত, তখন হত বিপদ। যুদ্ধ আবার বিপদ কী?
তীব্র দৃষ্টিতে রাজার মুখের পানে চাহিয়া শ্রীধর কহিলেন, রাজা, যুদ্ধ হলে এই বিপদগুলি ঘটবে না?
রাজা কিয়ৎক্ষণ নিরুত্তর রহিয়া কহিলেন, তুমি এ যুদ্ধের খবর পেলে কোথায় শ্রীধর? আমার গুপ্তচর তো এমন কোনও খবর দেয়নি।
– সরাসরি যুদ্ধের কোনও খবর নয় রাজা। ইন্দ্রপ্রস্থে রাজা যুধিষ্ঠির রাজসূয় যজ্ঞের আয়োজন করেছেন। জম্বুদ্বীপের চারদিকে চারটি ঘোড়া ছেড়ে দেওয়া হবে। আর তাদের পিছনে বিরাট সৈন্যদল নিয়ে যাবেন ভীম, নকুল, অর্জুন আর সহদেব। পূর্বদিকের দায়িত্ব নিয়েছেন মহাবল ভীমসেন। আর তুমি যে তাঁর বশ্যতা স্বীকার করবে না, তা স্বয়ং পালনহারও জানেন। তাই ধ্বংস অনিবার্য।
রাজার দুই চক্ষু বিস্ফারিত। প্রশ্বাসের আধিক্যে বিরাট বক্ষপঞ্জর স্ফীত হইয়া উঠিয়াছে। রুদ্ধ কণ্ঠে তিনি প্রশ্ন করিলেন,
– সত্যি? তুমি সত্যি বলছ শ্রীধর বন্ধু?
– হ্যাঁ, ধাঁইগ্রামের যে সহপাঠীটি হস্তিনাপুরের প্রাসাদ নির্মাণের কারিগর হয়ে গিয়েছিল, সে পায়রার মাধ্যমে খবর পাঠিয়েছে। ভীমসেন ইতোমধ্যে রওনাও হয়ে গিয়েছেন হয়তো।
নিস্তব্ধ প্রান্তর হইতে একঝলক মন্দ বাতাস বহিয়া আসিল। মৃদু ঝিল্লিরবের মূর্ছনা ভেদ করিয়া কাহার গৃহের মাঙ্গলিক শঙ্খরব যেন ভাসিয়া আসিল।
অকস্মাৎ রাজা বিরাট লম্ফ প্রদান করিয়া মন্দিরের প্রাঙ্গণে পড়িলেন। দুই হস্ত উত্তোলন করিয়া নৃত্য করিতে লাগিলেন। তাঁহার কণ্ঠে শোনা গেল এক আনন্দঘন গীত।
ও সে কুলের আলো, উজল কালো
গোকুলনন্দন,
গৃহী তুমি শতব্যঞ্জন করো গো রন্ধন।
কোলদ্বীপের হাজার রতন মলিন হবে কাল,
হৃদয়মাঝে নতুনরূপে আসেন রাখালরাজ।
অশ্বারোহীগণ উচ্ছ্বসিত রাজার সহিত স্থানত্যাগ করিলে বিপ্র শ্রীধরও ধীরে ধীরে গৃহাভিমুখী চলিলেন। গৃহে পঁহুছিয়া দেখিলেন ব্রাহ্মণী উদ্বিগ্ন মুখে দ্বারে দণ্ডায়মান। শ্রীধরের চিন্তাসংকুল অবস্থা লক্ষ করিয়া তিনি কহিলেন,
– হ্যাঁ গা, কী হয়েছে? মুখ শুকনো কেন?
মস্তক আন্দোলিত করিয়া শ্রীধর কহিলেন,
– সমুদ্রসেনের মাথাটাই গেছে…!
২
বিশালদেহী রজতকান্তি ভীমসেন তাঁহার মহতী সেনানী লইয়া কোলদ্বীপের উপকণ্ঠে উপনীত হইলেন। পথে মগধ, চেদী, মৎস, মল্ল, দশার্ণ তাঁহার পদানত হইয়াছে। ভাগীরথীর পূর্ব-পশ্চিম উভয় তীরে বারমাত্রেকের নিমিত্তও তাঁহার অশ্ব তথা বিজয়রথ প্রতিহত হয় নাই। বিজয়শঙ্খ পৌণ্ড্র ভয়াবহ নিনাদে চতুর্দিক আন্দোলিত করিয়া অগ্রসর হইতেছে।
ঋক্ষবর্ণ বলশালী অশ্ব তাঁহার রথ আকর্ষণ করিতেছে।
রক্তবর্ণ শিবিরে ভীমসেন অবস্থান করিতেছেন। কৃষ্ণা চতুর্থীর তমসাচ্ছন্ন রাত্রি। চতুর্দিকে ঘোরতর শিবারব। পেচক, সুদর্শন ইত্যাদি নিশাচর খেচরাদি বৃক্ষের উচ্চ শাখায় সন্ধান করিয়া ফিরিতেছে উড্ডীয়ান কিরাত রূপে।
সাত্যকি উপবিষ্ট ভীমসেনের সম্মুখে। তিনি শ্রেষ্ঠ অধিরথ এবং স্বয়ং সব্যসাচী তাঁর অস্ত্রগুরু। যুদ্ধবিদ্যায় সম্যক পারঙ্গম।
ভীমসেন প্রশ্ন করিলেন,
– চিন্তিত কেন যুযুধান?
সাত্যকি ম্লান হাসলেন,
– জন্মদত্ত নাম ধরে ডাকলেন বৃকোদর? ডাকুন। কিন্তু এ ডাকেও আমার সাহস ফেরাতে পারছে কই?
– পাণ্ডবসেনার সুরক্ষায় থেকেও তোমার ভয় যুযুধান? এ তো আশ্চর্য!
– না বৃকোদর। এ অঞ্চল বড়ো সহজ নয়। এখানকার মানুষ খালি হাতে বা শুধুমাত্র বংশদণ্ড নিয়ে অদ্ভুত লড়াই করতে পারে। হাতির পিঠে চড়ে জীবন্ত বিদ্যুতের মতো আছড়ে পড়ে শত্রুর ওপর। আর মহাবল, লক্ষ করেছেন কি, এত শত্রু আক্রমণ, অত্যাচার, ধ্বংসসাধনের পরেও এর শ্যামলিমা নষ্ট হয়নি? ফসল ফলা বন্ধ হয়নি। নষ্ট হয়নি মাটির উর্বরতা।
– তা কী করে সম্ভব বলে তোমার মনে হয়?
– আমি শুনেছি, মহাজ্ঞানী তান্ত্রিক, সাধকের লীলাভূমি এ স্থান। স্বয়ং ভূতনাথ কিরাতের বেশে রক্ষা করেন এ জাতিকে। দশমহাবিদ্যার লীলাভূমি জাহ্নবীতীরবর্তী শ্মশান।
ভীমসেনের ভাবান্তর দেখা দিল। শত্রুপক্ষের প্রতি তাঁর সর্বদা সম্ভ্রম ছিল। গুরুর শিক্ষা। শত্রুর আসন শিরোপরি।
.
সহসা নিকটে মত্ত হস্তীর বৃংহণ শুনা যাইতে লাগিল। আর বৃক্ষশাখা ভঙ্গ হইবার ঘোরতর নাদ।
বিশাল গদা হস্তে লইয়া ভীমসেন বাহিরে আসিলেন। পশ্চাতে সাত্যকি।
দিগন্তের তরুশাখারাজি অন্ধকার শৈলমালার ন্যায় দণ্ডায়মান। তাহার মধ্যে কয়েকটি তমসাচ্ছন্ন অবয়ব দিগন্ত ভেদ করিয়া ধীরে ধীরে অগ্রসর হইতেছে। সেনাশিবিরগুলির সম্মুখে অসিহস্ত কৃষ্ণাম্বর আবৃত কতিপয় ব্যক্তি পদচারণা করিতেছে। পাণ্ডব সেনানীর মধ্যে কোনও আন্দোলন নাই।
ইহার অর্থ, তাহারা বন্দি অথবা অস্ত্রহীন।
হস্তীযূথের মধ্যে বিশালতম হস্তীর পৃষ্ঠ হইতে অবতরণ করিলেন রাজা সমুদ্রসেন। এক হস্তে উন্মুক্ত অসি, অপর হস্তে তৈলসিক্ত বংশদণ্ড।
মৃদু হাসিয়া তিনি বলিলেন, বৃকোদর, বন্দি আপনি। ডাকুন আপনার চিরকালের রক্ষাকর্তাকে।
৩
শুভ্রদেহী বলাহক, জীমূতকান্তি মেঘপুষ্পা, হরিদ্রকাঞ্চনবর্ণা সুগ্রীবা আর শুকপক্ষসন্নিভ শৈব্যা অশ্বচতুঃষ্টয় কৃষ্ণসারথি দারুক আস্তাবলজাত করেছেন।
কৃষ্ণের প্রিয় রথ দারুগ হস্তিনাপুর প্রাসাদের পাশে পান্নাসবুজ ঘাসে কৃত্রিম ঝরনার পাশে স্থির।
তক্রনির্মিত সুশীতল পানীয়ের পাত্র সদ্য গ্রহণ করিয়াছেন নয়নমনোহর।
অকস্মাৎ শুনিতে পাইলেন ভীমসেনের কাতর স্বর— “হে মধুসূদন, রক্ষা করো..”
ভীমসেন পূর্বদেশে গিয়াছেন রাজসূয় অশ্বের পশ্চাতে। জাহ্নবীতীরবর্তী সে দেশ বড়ো মনোহর। তথাপি সে দেশের মনুষ্য যুদ্ধপরান্মুখ নহে। দেশরক্ষার্থে উহারা যেমন প্রাণদান করিতে পারে, তেমন ছলে বলে কৌশলে বা শত্রুর রসদ হরণ করিয়া অতি শক্তিশালী শত্রুকেও করিতে পারে পরাহত।
চক্ষু দুটি বন্ধ করলেন শ্রীকৃষ্ণ। মানসচক্ষে দেখিতে পাইলেন তালীবনশ্যাম এক নদীতীর। নতমস্তক ভীমসেন। সম্মুখে কতিপয় যোদ্ধা। তন্মধ্যে এক ব্যক্তির কপালে রাজচক্রচিহ্ন। হস্তে শস্ত্রাদি।
মুহূর্তে বায়ুবেগে অকুস্থলে এক ক্ষত্রিয় নৃপতির বেশে উপস্থিত হইলেন শ্রীকৃষ্ণ। তাঁহার দেহ হইতে নির্গত নারায়ণী সৈন্য আক্রমণ করিল সমুদ্রসেন ও তাঁহার সৈন্যবর্গকে। ভীমসেন হৃষ্টচিত্তে রণহুংকার পরিত্যাগ করিয়া উঠিয়া দাঁড়াইলেন।
কোথায় নবাগত ক্ষত্রিয় নৃপতি? তৎপরিবর্তে সমুদ্রসেন দেখিলেন এক নবজলধরশ্যাম শিশু খেলা করিতেছে গাভীকুলের মধ্যে। ঘনকৃষ্ণ কেশের মাঝে ময়ূরপেখম। গলার বৈজয়ন্তীমালিকায় আলোকময় পঞ্চপুষ্প।
মৃদু হাসিয়া তাঁহার উদ্দেশে প্রণাম জানাইলেন কোলদ্বীপ নৃপতি। তারপর অস্ত্র পরিত্যাগ করিলেন। ভীমসেনের উদ্দেশে বলিলেন,
– পবনপুত্র, আমি এই অস্ত্র ফেলে দিলাম। আমার পরাজয় স্বীকার করুন।
শত্রুকে মুষ্টির মধ্যে লাভ করিয়া পরম ক্রোধে ভীমসেন মহাগদা উত্তোলন করিলেন হত্যার নিমিত্ত। সমুদ্রসেন সহাস্যবদনে বক্ষ প্রসারিত করিলেন সে মহাপ্রহার গ্রহণ করিবার নিমিত্ত।
সহসা নবাগত ক্ষত্রিয় ভীমসেনকে নিবারণ করিলেন,
– ছিঃ, কুন্তীপুত্রেরা নিরস্ত্র শত্রুকে হত্যা করেন না। আর আপনার উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়েছে। বৃথা রক্তপাত প্রকৃত ক্ষত্রিয়ের পক্ষে বৈধ নয়।
.
সমুদ্রসেন পুনরায় আভূমি নত হইয়া প্রণাম করিলেন।
ভীমসেন ভাবিলেন সমুদ্রসেন তাঁহাকে প্রণাম করিলেন। সাত্যকি ভাবিলেন তাঁহাকে। ভীমসেনের কেতনস্থিত সিংহ হৃষ্ট হইয়া গর্জন করিল।
নবাগত ক্ষত্রিয় নৃপতি আবার নয়নমনোহর হাস্যে নন্দিত করিলেন ভক্তকে।
শতসহস্র স্বর্ণমুদ্রা, হীরক, চন্দনকাষ্ঠ, আরও নানাবিধ উপঢৌকন লইয়া বিজয়ী ভীমসেন প্রত্যাবর্তন করিয়াছেন।
একাকী মন্দিরের শীর্ষে শ্বেতপেচকটি পুনরায় আসিয়া বসিয়াছে।
সমুদ্রসেন আসিয়া দেবতার সম্মুখে দাঁড়াইলেন। করজোড়ে নতজানু হইয়া বসিলেন। ঠোঁট দুটি মৃদু নড়িয়া উঠিল, ঠাকুর…
.
মৃৎপ্রদীপের আলোকে নারায়ণের হাস্যোজ্জ্বল চক্ষু দুটি অকারণে হঠাৎ উজ্জ্বল হইয়া উঠিল।