।। তিলক ব্রতস্য মাহাত্ম্য।।
ব্রহ্মেশ কেশবাদীনাং গৌৰ্যাগৰ্ণপতেস্তথা। দুর্গাসূৰ্য্যাগ্নি সোম্যনাং ব্ৰতানি মধুসূদন।।১।। শাস্ত্রান্তরেষু দৃষ্টানি তব বুদ্ধিগতানি চ। তানি সর্বানি মে দেববদ দেবকিনন্দন।। ২।। প্রতিপৎ ক্রমযোগেন বিহিতা যস্য যা তিথিঃ। দেবস্য তস্যাং যৎকার্যং তদশেষেণ কীৰ্তয়।।৩।। বসন্তে কিংশুকাশোকশোভনে প্রতিপত্তিথিঃ। শুক্লা তস্যা প্রকুবীত স্নানং নিয়মতৎপরঃ।।৪।। নারী নরো বা রাজেন্দ্র সংতপ পিতৃদেবতাঃ। নদ্যাস্তীরে তড়াগে বা গৃহে বা নিয়তাত্মবান্।।৫।। পিষ্টাতকেন বিলিখেদ বৎসরং পুরুষাকৃতিম্। ততশ্চন্দনচূর্ণেন পুষ্ঠাধূপাদিনাৰ্চয়েৎ।।৬।।
।। তিলক ব্রত মাহাত্ম্য।।
এই অধ্যায়ে তিলক ব্রত মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে। যুধিষ্ঠির বললেন, হে মধুসূদন, ব্রহ্মা-বিষ্ণু মহেশাদি দেব তথা গৌরী, গণপতি, দুর্গা, সূর্য, অগ্নি ও সোমব্রত বিভিন্ন শাস্ত্রে দেখা যায়। এই সব ব্রত আপনি জানেন। হে দেবকিনন্দন, হে দেব, এই সকল ব্রত কথা কৃপাপূর্বক আমাকে বলুন।।১-২।।
দীপৈশ্চাপি সনৈবেদ্যৈঃ পূজয়েদ্বৎসরং তদা। মাসতুনামভিঃ পশ্চান্নমস্যারাগুয়োজিতৈঃ। পূজয়ে ব্রাহ্মণান্বিদ্বানমস্ত্ৰৈৰ্বেদোদিতৈঃ শুভৈঃ।।৭।। সংবৎসরোহসি পরিবৎসরোসীড়াবৎসরোহ। ভিৎসরোহসি উষসস্তে কল্পন্তাং। অহোরাত্রাস্তে কল্পন্তামধমাসস্তে। কল্পান্তাং মাসাস্তে কল্পান্তামৃতে। বস্তে কল্পন্তাং সংবৎসরস্তে কল্পতাম্।।৮।। এবমভ্যচ্য বাসোভিঃ পশ্চাত্তমভিবেষ্টয়েৎ। কালোদ্ভবৈমূর্ল ফলৈনৈবেদ্যৈমোদবাদিভিঃ।।৯।। ততস্তং প্রার্থয়েৎ পশ্চাৎ পুরঃ স্থিত্বা কৃতাঞ্জলিঃ। ভগবস্ত্বৎ প্রসাদেন বর্ষং শুভদমস্তু মে।।১০।। এবমুক্ত্বা যথাশক্তি দদ্যাদ্বিপ্রায় দক্ষিণাম্। ললাটপট্টে তিলকং কুর্যাচ্চান্দনপং কজম্।।১১।। ততঃ প্রভৃত্যনুদিনং তিলকালং কৃতং মুখম্। ধার্যং সংবৎসরং যাবচ্ছশিনের নভস্তলম্।।১২।। এবং নরো বা নারী বা ব্রতমেতঃ সমাচরেৎ। সদৈব পুরুষ ব্যাঘ্র ভোগান্ ভুবি ভুনক্ত্যসৌ।।১৩।।
প্রতিপদ তিথি ক্রমে বিভিন্ন তিথিতে বিভিন্ন দেবতা পূজন পূর্ণরূপে আমাকে বলুন। শ্রীকৃষ্ণ বললেন, বসন্ত ঋতু কিংশুক ও অশোক বৃক্ষের পরম শোভাশালী ঋতু। শুক্লা প্রতিপদ তিথিতে নিয়ম স্নান করে নর-নারীগণ প্রথমে পিতৃগণকে তর্পণ করবে। নদীতটে, তড়াগ অথবা গৃহে তর্পণ করবে। তৎপরে সুপিষ্টকের দ্বারা বৎসরকে এক পুরুষ আকৃতিতে লিখবে। তাতে চন্দন, পুষ্পাক্ষত গন্ধাদি দ্বারা পূজন করবে ও উপাচার অর্চন করবে। সেই সময় বৎসরকে দীপ ও নৈবেদ্য দ্বারা পূজন করবে। সংকল্প করে পূজন ও প্রণামপূর্বক বিদ্বান ব্রাহ্মণগণের দ্বারা শুভ বৈদিক মন্ত্র দ্বারা পূজা করবে।।৩-৭।।
ভূতাঃ প্ৰেতা পিশাচাশ্চ দুর্বারা বৈরিণো গ্রহাঃ। নিরর্থকা ভবন্ত্যেতে তিলকং বীক্ষ্য তৎক্ষণাৎ।।১৪।। পূর্বমাসীন্ মহীপালো নাম্না শত্ৰুয়ো জয়ী। চিত্রলেখেতি তস্যাভূভার্যা চারিত্রভূষণা।।১৫।। তয়া ব্রতমিদং চৈত্রে গৃহীতং দ্বিজসন্নিধৌ। সংবৎসরং পূজয়িত্বা ধুত্বা হৃদি জনার্দনম্।।১৬।। অসূয়ুঃ ক্ষেপ্তকামো বা সমাগচ্ছতি যঃ পুরঃ। প্রযাতি প্রিয়কৃত্তস্যা দৃষ্ট্বা মুখমধোসুখঃ।।১৭।। সপত্নীদপাপহরা বশীকৃতমহীতলা। ভতুরিষ্টা প্রহৃষ্টা চ সুখমাস্তে নিরাকুলা।।১৮।। তাবৎ করেণাভিভূতো ভর্তা পুত্রঃ সবেদনঃ। শিরোহর্ত্যা নাশং প্রয়াতঃ সুহৃদাং দুঃখদায়কঃ।।১৯।। ধর্মরাজপুরং প্রাপ্তং সর্বভূতাপহারকঃ। তস্মিন্ ক্ষণে মহারাজ ধর্মরাজস্য কিংকরাঃ।।২০।।
আপনি সমবৎসর, পরিবৎসর, ইড়াবৎসর, অভিৎসর–ঊষা-অহোরাত্র- অর্ধমাস কল্পিত। এই প্রকারে তার অর্চনা করে বস্ত্র দ্বারা তাকে অভিবেষ্টিত করবে। সময়োচিত ফুল, ফল, নৈবেদ্য, মূল, মোদক ইত্যাদি অর্পণ করবে। তৎপরে হাত জোড় করে প্রার্থনা করবে। হে ভগবান, আপনার প্রসাদে আমার সমগ্র বৎসর যেন শুভ হয়। এই প্রার্থনা করে ব্রাহ্মণকে যথাশক্তি দক্ষিণা দিতে হয়। ললাটে চন্দন তিলক তথা সারাদিন মুখে তিলক দিয়ে অলংকৃত করতে হয়। এইরূপে আকাশ যেরূপ শশিকে ধারণ করে সেরূপ সমবৎসর তিলক ধারণ করে ব্রত সমাচরণ করবে। হে নরশার্দূল, এইভাবে পৃথিবীতে মানুষ সমস্ত ভোগপ্রাপ্ত হয়। ভূত-প্রেত-পিশাচ তার তিলক দেখে ক্ষণমাত্রেই পলায়ন করে।।৮-১৪।।
পুরাকালে শত্রুজিৎ মহীপাল নামক নৃপতি ছিলেন, তার স্ত্রী চিত্রলেখা তিনি ব্রাহ্মণ সমীপে চৈত্রমাসে এই ব্রত গ্রহণ করেছিলেন এবং একবৎসর পর্যন্ত পূজন করে হৃদয়ে ভগবান্ জনার্দনের চিন্তা করতেন। নিন্দাকারী, ক্ষতিকারী ব্যক্তি তাঁর কাছে এসে মুখদর্শন করে নতমস্তকে, তাঁর প্রিয় হয়ে চলে যেতেন। তাঁর পত্নী চিত্রলেখা সপত্নীগণের দর্পহারী তথা সমস্ত পৃথিবী বশকারিণী ছিলেন। স্বামী প্রিয়পাত্রী হয়ে হৃষ্টচিত্তে বাস করতেন।। ১৫-১৮।।
তস্য দ্বারমনুপ্রাপ্তাঃ প্রবেষ্টুং গৃহমঞ্জসা শত্রুজ্ঞয়ং সমানেতুং কালমৃত্যুপুরঃসরাঃ।।২১।। পার্শ্বস্থিতাং চিত্রলেখাং তিলকালংকৃতান নাম্। দৃষ্টা প্রনষ্টসংকল্পা পরাবৃত্য গতাঃ পুনঃ।।২২।। গতেষু তেষু সঃনৃপঃ পুত্রেণ সহ ভারত। নীরুজো বুভুজে ভোগান্ পূর্বকর্মার্জিতাঙ্কু ভান্।।২৩। এতদ্ ব্ৰতং মহাভাগ কীৰ্তিতং তে মহোদয়ম্। শংকরেণ সমাখ্যাতং মম পূর্বং যুধিষ্ঠির।।২৪।। এতৎ ত্রিলোকতিলকালক ভূষণং তে। খ্যাতং ব্রতং সকলদুঃখহরং পরং চ। ইত্থং সমাচ্চারতি যঃ স সুখং বিহৃত্য। মর্ত্যঃ প্রসাতিঃ পদমাপদি পদ্মযোনেঃ।।২৫।।
সেই সময় তার করাভিভূত হয়ে স্বামী ও শিরঃপীড়ায় পুত্র মারা গেল তাতে করে বন্ধুগণ অত্যন্ত দুঃখিত হলেন। সেই সময় ধর্মরাজের সেবক তাদের দেহ নেওয়ার জন্য সেখানে এসে উপস্থিত হল। তিনি দ্রুত শত্ৰুঞ্জয় রাজার কক্ষে প্রবেশ করার মুহূর্তে চিত্রলেখা সেখানে উপস্থিত হন, তাঁর তিলক দর্শন করে সেই সেবক দ্রুত প্রস্থান করল। রাজাও সপুত্র জীবিত হলেন এবং পূর্বকর্মবলে রাজ্য ভোগ করতে লাগলেন।।১৯-২৩।।
হে মহাভাগ, এই মহাব্রত তোমাকে বললাম। হে যুধিষ্ঠির, আমাকে পূর্বে ভগবান্ শংকর একথা বলেছিলেন। ত্রিলোকের ত্রিলোকালোক ভূষণ বৃত্তান্ত তোমায় বললাম। এটি সমস্ত দুঃখহরণকারী যেকোনো পুরুষ এই ব্রত পালন করলে মৃত্যুর পর ভগবানের পরমপদ প্রাপ্ত হয়।।২৪-২৫।।