জ্যোৎস্নায় মৃত্যুর ঘ্রাণ
কেকরাডিহাকে নেচারস ডেন বলা চলে।–ভদ্রলোক মিটিমিটি হেসে বললেন।
অপূর্ব মনোরম জায়গা কিন্তু…উনি হঠাৎ থেমে গেলে বললুম, কিন্তু কী? নামটা বড় বিচ্ছিরি। তাছাড়া…।
ওঁর কথার ঢংটিও বিচ্ছিরি। একটি বাক্য বলেই যেন সাসপেন্সের আলপিন দিয়ে একটু খোঁচা। বিরক্তি চেপে বললুম,–তাছাড়া কী?
একটু চুপ করে থাকার পর ফিক করে হাসলেননামেই মালুম। শেক্সপিয়ার যদিও বলেছেন নামে কী আসে-যায়! যায়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে যায়। ট্রেন তখন একটা পাহাড়ের সুড়ঙ্গে সবে ঢুকেছে। গতিও মন্থর। কামরা গাঢ় অন্ধকারে ডুবে গেল।
অন্ধকারে ওঁর কথা অবশ্য থামল না,–এই যে দেখুন, আমি যাচ্ছি চরডিহায়। ঘন জঙ্গল এলাকা। সেখানে বসতি একেবারে কম। মানুষজনও কম। একটা কাঠগোলা। কিছু গোপ, মানে যাদের গরু-মোষ-ছাগল আছে আর কী! চাষবাস কদাচিৎ। খুব সজ্জন মানুস সব। তাহলে চোর শব্দটা কেন? হুঁ, মাঝে-মাঝে বাঘের উৎপাত হয়। এখন বাঘটাকে যদি গরুচোর বলা যায়, তাহলে আর কথা নেই। চোরডিহা নামটা মানিয়ে যায়। বলে উনি সেই ঘন জমাট অন্ধকারে হা-হা অট্টহাসি হেসে উঠলেন। এমন বিকট হাসি অন্ধকারে বড় অস্বস্তিকর। গা ছমছম করে।
বললুম, আলো জ্বালার ব্যবস্থা নেই ট্রেনে?
–মাত্র কয়েক মিনিট। এ সুড়ঙ্গটা তত কিছু লম্বা নয়। কেন? আপনার ভয় করছে নাকি?
–না। তবে অন্ধকারটর বিরক্তিকর। ট্রেনে কি ইলেকট্রিসিটি নেই?
–তাহলে কেকরাডিহায় যে বাড়িটাতে উঠবেন, সেটাও বিরক্তিকর মনে হবে।
–কেন বলুন তো?
মুনভিলায় আমিও একবার ছিলুম। ওখানে ইলেকট্রিসিটি নেই। তাছাড়া বাড়িটা-বলে ফের উনি চুপ।
সাসপেন্সের খোঁচা মারা এঁর দেখছি বড্ড বদভ্যাস। বিরক্তিতে আর কিছু জানতে চাইলুম না। কিন্তু একটু অবাক হলুম। অরীন্দ্র বিদ্যুৎ না থাকার কথাটা বলেনি। হয়তো বলতে ভুলে গেছে। অরীন্দ্র আমার বন্ধু। রীতিমতো রাজা-মহারাজা লোকের বংশধর। বিশুদ্ধ প্রকৃতিকে এনজয় করতে হলে নাকি কেকরাডিহার মতো জায়গা নেই। ওদের মুনভিলা নামে বাড়িটা একটা টিলার গায়ে এবং চারদিকে প্রকৃতি! অরীন্দ্র বলেছিল এসব কথা।
ট্রেন সুড়ঙ্গ পেরুলে দিনের আলো এসে ঢুকল আবার। ভদ্রলোক তার লাগেজ গোছাতে ব্যস্ত হলেন। আসানসোলে এই ট্রেনে ওঠার পর ওঁর সঙ্গে আলাপ হয়েছে। উনি শিকারি। নাম প্রশান্ত সিংহ। খুব আমুদে স্বভাবের মানুষ। বলেছিলেন, স্বয়ং সিংহ হয়েও সিংহ-টিংহ মারার সুযোগ পাইনি মশাই! গুজরাতের গির জঙ্গলে একদঙ্গল সিংহ আছে। কিন্তু একে হাঁদা-ভোঁদা, তায় গভমেন্টের পোষ্য। তবে বাঘ মেরেছি। ত্রিপুরার জঙ্গলে একটা গুন্ডা হাতি মেরেছিলুম। কাজেই নিজেকে সিংহ ভেবে গর্বিত হই।
চোরডিহার জঙ্গলে বাঘ আছে। সম্প্রতি একটা বাঘ খুব উৎপাত করছে। তাকে মারতেই উনি যাচ্ছেন। একটা শটগান আর একটা রাইফেল দুই কাঁধে আটকে প্রকান্ড ব্যাগ হাতে উনি দরজার দিকে এগোলেন। ট্রেন চোরডিহা স্টেশনের ডাউন সিগন্যাল পেরুচ্ছিল। ঘুরে মুচকি হেসে বিদায়সম্ভাষণ জানিয়ে বললেন,–কেকরাডিহায় দেখা হতেও পারে। অবশ্য যদি বাঘটাকে মারতে পারি, তবেই। যাই হোক, একটু সাবধানে থাকবেন।
কথাটা শুনে চমকে উঠলুম। এবার সাসপেন্স নয়, শাসানি। কিন্তু প্রশ্ন করার সুযোগ পেলুম না। শিকারি ভদ্রলোক ট্রেন থামার সঙ্গেসঙ্গেই নেমে প্ল্যাটফর্মে হস্তদন্ত হয়ে হাঁটতে থাকলেন। ওঁর শেষ বাক্যটি অস্বস্তিকর। তাছাড়া নামেই মালুম বলতে কী বোঝায়? মন থেকে অস্বস্তিটা ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করছিলুম–তাছাড়া বাড়িটা… মানে কী? ভূতটুত আছে বুঝি! ধুস? মনে-মনে হেসে ফেললুম। এই মহাকাশযুগে ভূত!
ট্রেনের গন্তব্য গয়া। ফার্স্ট ক্লাসে আরও দুজন যাত্রী। চেহারা হাব-ভাব দেখে ব্যবসায়ী মনে হয়েছিল। হোঁতকা গোলা মানুষ। দুজনেই ঢুলছিলেন। আর একটা সুড়ঙ্গ এল। আবার সেই দম আটকানো অন্ধকার এবং গা ছমছম। কিন্তু এ সুড়ঙ্গটা শেষ হচ্ছে না। বারবার ট্রেনের তীক্ষ্ণ হুইল্প চাপা গুমগুম শব্দ, একটানা গাঢ় অন্ধকার, এসব সুড়ঙ্গে তো আলো থাকার কথা। ভাবলুম, চোরডিহার চোরেরা এসেই বাবগুলি খুলে নিয়ে গেছে, তা শিকারি ভদ্রলোক যাই বলুন। অথবা এলাকা এখনও বিদ্যুৎ পায়নি।
পাওয়ার কথাও না। পাহাড় আর জঙ্গল, জঙ্গল আর পাহাড় দুধারে। কাছাকাছি বসতিও চোখে পড়েনি। যদি বা পড়েছে, সেও নেহাত দেহাতি গ্রাম। আদিম ধরনের ঘরবাড়ি। মানুষজনও গরিব।
কতক্ষণ পরে সুড়ঙ্গ শেষ হল। আবার একটা স্টেশন এল। নিছক হল্ট। জনমানুষহীন নিচু প্ল্যাটফর্ম। কিন্তু আমাকে অবাক করে পাখির মতো আলতো পায়ে এক যুবতী উঠে এল কামরায়। ছিমছাম স্মার্ট, ফর্সা, এবং এমন ফর্সা, যার সঙ্গে পাতাচাপা ঘাসই তুলনীয়, তাই পাণ্ডুর বলা চলে। জন্ডিসের রুগি নাকি? কক্ষনও না। ছটফটে, চঞ্চল, সতেজ। কালিদাস বর্ণিত সেই চকিতহরিণীপ্রেক্ষণা নিম্ননাভি পীনোন্নতপয়োধরা ইত্যাদি মনে পড়ে যায়। পরনে ফিকে নীল শিফন জর্জেট শাড়ি ম্যাচিং চাইনিজ ছাঁট ব্লাউজ।
কামরা সৌন্দর্যময় সুগন্ধে ভরে গেল।
ব্যবসায়ীদ্বয়ের অবচেতনায় তার তীক্ষ্ণ বিচ্ছুরণ ঘটে থাকবে। কারণ দুজনেই চোখ খুলছেন এবং সোজা হয়ে বসলেন। জানলার দিকে ঘুরে আবার প্রকৃতি দর্শনে মন দিলুম।
–এক্সকিউজ মি! দ্রুত ঘুরে দেখি আমি তার লক্ষ্য। ভ্যাবার মতো হেসে বললুম,–বলুন!
–আপনি কি গয়া যাবেন?
–না। কেকরাডিহা।
–বাঃ! তাহলে একজন সঙ্গী পাওয়া গেল।
–আপনি কেকরাডিহা যাচ্ছেন? যুবতী ঠোঁটের কোণে হেসে মাথাটি একটু নাড়ল।
ব্যবসায়ীদ্বয়ের একজন বলে উঠলেন,–তো আপ হঁহা জংলি হল্টমে কাঁহা গেয়িথি ম্যাডাম?
জেরা সা ঘুমনে।–যুবতী আমার দিকে ঘুরল।–কেকারাডিহি কেন যাচ্ছেন?
প্রশ্নটা সোজা চার্জ। যেন মহিলা দাবোগা। তবু সৌন্দর্য এবং যৌবনের মর্যাদা রক্ষায় আস্তে-আস্তে বললুম,–জাস্ট সাইট-সিইং।
নেচার-লাভার! যুবতী উজ্জ্বল হাসল। বলতে পারেন, আমিও তা-ই।
–ও!
–ও কী? আমি প্রকৃতির সঙ্গে নিজেকে মিশিয়ে দিই মাঝে-মাঝে। কখনও বেরিয়ে আসি। ভয় পাই। দেয়ার ইজ সামথিং ভেরি ক্রুড ইন দা নেচার। দ্যাটস ডেঞ্জারাস। স্ট্রেঞ্জ! আপনাকে বোঝাতে পারব না।
এই দার্শনিক তত্ত্বটত্ত শুনে একটু সম্ভ্রম জাগল। শুধু বললুম,–তাই বুঝি?
একটু হেসে বললুম, আপনি স্কুলটিচার, নাকি অধ্যাপিকা?
–কেন এ কথা বলছেন?
এবার কণ্ঠস্বরে ঈষৎ নম্র ব্যাকুলতা ছিল। যেন সেন্টিমেন্টে আঘাত দিয়ে ফেলেছি। বললুম,–আপনার চিন্তাভাবনার ডেপথ দেখেই।
যুবতী হাসল, ও নো নো! জাস্ট আ সিম্পল আইডিয়া। অ্যাসোসিয়েশন অব দা নেচার। আপনি একজন নিরক্ষর জংলি মানুষকে জিগ্যেস করুন। সেও বলবে, দা নেচার স্পিকস টু ম্যান। প্রকৃতি কথা বলে। যে কাছে থাকে, সে বোঝে।
–আপনার নামটা জানতে পারি কি?
–শিওর। পর্ণা চোধুরী।
একটু ইতস্তত করে বললুম, কেকরাডিহার মুনভিলার চৌধুরীদের সঙ্গে আপনার কোনও সম্পর্ক নেই তো?
–আছে।
–অরীন্দ্র চৌধুরীকে তাহলে চেনেন?
–খু-উ-ব। আমার মাততুতো দাদা।
নড়ে উঠলুম, মাই গুডনেস! অরীন্দ্র আমার বন্ধু। আমি মুনভিলাতেই যাচ্ছি।
পর্ণা হঠাৎ ঠোঁট কামড়ে ধরল। আমার দিকে কেমন চোখে তাকিয়ে রইল। কিছুক্ষণ পরে চাপা শ্বাস ফেলে বলল,–বাড়িটায় কেউ থাকে না আর। একজন আদিবাসী খ্রিস্টান কেয়ারটেকার রেখেছে। সে মাইনে নেয়! কিছু দেখাশোনা করে না। দূরে বসতি এরিয়ায় থাকে। আপনার অসুবিধে হবে।
–আপনাদের ফ্যামিলি…..
কথা কেড়ে পর্ণা বলল, একটা কথা, প্লিজ! কেয়ারটেকার ম্যাথু কিংবা অরুদাকে আমার কথা বলবেন না। প্লিজ, কথা দিন!
একটু অবাক হয়ে বললুম, ঠিক আছে। কিন্তু…
–কোনও কিন্তু নয়। কথা দিন।
–দিলুম।
ব্যবসায়ীদ্বয় ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে কথা শুনছিলেন আর পরস্পর চোখে চোখে কথা বলছিলেন। বাঁকা ঠোঁট। ভাবখানা এরকম, যেন ওঁদের প্রাপ্য নাফা আমি হাতিয়ে নিয়েছি। কেকরাডিহা প্ল্যাটফর্মে ঢুকছিল। পর্ণা উঠে দরজার কাছে গেল এবং ট্রেন থামার আগেই পাখির মতো নেমে গেল। লাগেজ গুছিয়ে প্ল্যাটফর্মে নেমে তাকে খুঁজলুম। দেখতে পেলুম না। ছোট্ট স্টেশন। মানুষজন কম। এদিকে-ওদিকে পাহাড় আর জঙ্গল। স্টেশনের বাইরের চত্বরে কয়েকটা এক্কা আর সাইকেল রিকশা। ছোট্ট একটা বাজার।
কেয়ারটেকার ম্যাথু জেভিয়ারের থাকার কথা স্টেশনে। অরীন্দ্র চেহারার একটা বর্ণনা দিয়েছিল। রোগা, কালো, মাথায় ভীষণ সাদা চুল এবং মধ্যিখানে টাক। কিন্তু আশ্চর্য ঘটনা, দাড়িটি নাকি কুচকুচে কালো। অরীন্দ্র বলেছিল,–ওকে মিঃ জেভিয়ার বলবি যেন। খুব কেতাদুরস্ত দিশি সাহেব, প্রাক্তন রেলকর্মী। সব সুব্যবস্থা করে দেবে খাতির দেখালে।
কিন্তু অরীন্দ্র তার মাসতুতো বোন পর্ণার কথা যেন বলল না? এতক্ষণে মনে হল, পর্ণা শিক্ষিত মেয়ে, কিন্তু একটু ছিটগ্রস্তা নির্ঘাত! হয়তো মানসিক রুগিই বা! তাই একা-একা যেখানে-সেখানে চলে যায়। জঙ্গলে ঘোরে। কিন্তু এ তো তার পক্ষে বড় বিপজ্জনক।
ফ্যামিলিতে কি ওকে শাসন করার কেউ নেই। নিশ্চয় নেই। কিংবা আছে। পর্ণা তাদের চোখের আড়ালে এভাবে ঘুরে বেড়ায়। তাই আমাকে নিষেধ করছিল।
একটা সিগারেটের দোকানের সামনে যেতেই বাঁকের মুখে সাইকেলে একজনকে দ্রুত আসতে দেখলুম। কাছাকাছি আসতেই মনে হল, ম্যাথু জেভিয়ার না হয়ে যান না। ডাকলুম,–মিঃ জেভিয়ার!
হ্যাঁ, তিনিই। রীতিমতো ভদ্রলোক এবং দিশি সায়েব। স্যুট পুরোনো হলেও স্যুট। টাইটা অবশ্য নতুন। টুপিট জীর্ণ, সাইকেল থেকে নেমে জোরালো হ্যান্ডশেক করে বললেন,–ভেরি সরি স্যার! আপনার রুম গোছাতে একটু দেরি হয়ে গেল। রান্নার জন্য লোক খুঁজে সারা। তেমন কাউকে পেলুম না। ও নো, নো। ডোন্ট ওরি, স্যার! আমি আছি। আমি আপনার সেবা করতে পারলে ধন্য হব। তবে ভেরি লোনলি প্লেস! লোনলিনেস যাঁদের পছন্দ, তাঁরা মুনভিলাকে ভালো না বেসে পারবেন না। জাস্ট সাইলেন্স ইজ গোল্ডেন!
জেভিয়ার একটু বেশি কথা বলেন, সেটা ঠিক। তবে মানুষটিকে ভালো লাগল।…
সাইলেন্স ইজ গোল্ডেন! জেভিয়ারের মুখ থেকে উচ্চারিত পুরোনো এই বিলিতি প্রবচনটি মাথার ভেতরে ধ্বনিত হয়েছিল বাড়িটাকে দেখার সঙ্গে-সঙ্গেই। সত্যিই কি মুনভিলা প্রতীক সাইলেন্স, সুবর্ণ মৌন। জীর্ণ স্থাপত্যটি সারা ধূসর শরীরে শব্দময়। যে ভাষা আমি বুঝি না, তেমনি এক আদিম কোনও ভাষায় যেন কথা বলছে। শুনছি, বুঝতে পারছি না।
আর পর্ণা বলেছিল–পা তুললেই ঘাস গজায়। প্রকৃতি সর্বগ্রাসী।
বাড়িটার সামনের দিকটায় কবেকার মেরামতের কিছু ছাপ। পেছনদিকটা প্রকৃতি গিলে খাচ্ছে। কার্নিশে গাছ। দেয়ালে হিংস্র শেকড়-বাকড়। তারপর জঙ্গল হয়ে ওঠা লনের দিকে তাকাতেই অস্বস্তি জাগল। প্রতিটি গাছ যেন ভীষণ জৈব। ক্রুর চোখে আমাকে তাকিয়ে দেখছে।
অক্টোবরের শ্যামলা চারদিকে। সেই শ্যামলতাকে কেন যেন নির্দয় দেখাচ্ছে। প্রতি মুহূর্তে মনে হচ্ছে পেছনে কোনও আততায়ীর পায়ের শব্দ এবং মুখ ঘোরাতেই সে অশরীরী!
–স্যার!
জেভিয়ার এসে ডাকলেন।
হঠাৎ ডাকে চমকে উঠেছিলাম। জেভিয়ার বললেন, লাঞ্চ রেডি।
তারপর একটু হাসলেন, এনিথিং রং স্যার?
–না তো।
–আপনাকে তখন বলেছিলুম, লোনসিনেস কখনও অসহ্য হয়ে ওঠে। টেক ইট ইজি, স্যার।
–আচ্ছা মিঃ জেভিয়ার, এ বাড়িটার নাম মুনভিলা কেন?
জেভিয়ার আঙুল তুলে নিচের দিকটা দেখালেন, জাস্ট লুক অ্যান্ড ইউ উইল আন্ডারস্ট্যান্ড! ওই ছোট্ট নদীটা, স্যার! কী দেখছেন, বলুন!
–চন্দ্রকলার মতো। দা ক্রিসেন্ট মুন!
ঠিক তা-ই। জেভিয়ার বিনীতভাবে বললেন, যদি দয়া করে লাঞ্চ খেয়ে নেন, ভালো হয়। আমাকে একবার বেরুতে হবে কিছুক্ষণের জন্য।…
রান্নাটা বিলিতি ধাঁচের হলেও মন্দ নয়। খিদেও পেয়েছিল। জেভিয়ার চলে গেলে সেকেলে উঁচু খাটের ওপর শুয়ে পড়লুম। ট্রেনজার্নিতে যথেষ্ট ক্লান্ত। তারপর কখন ঘুমিয়ে পড়েছি। দরজা ভেজানো ছিল। সেটা কাঁচ শব্দে খুলে যাওয়ার জন্যই হয়তো ঘুমটা ছিঁড়ে গিয়েছিল। তাকিয়ে রইলুম। বাইরে নরম বিকেল।
বাতাসের চাপেই কি দরজা খুলে গেছে? হুহু করে বাতাস ঢুকছে ঘরে।
তারপরই তীব্র সেন্টের আভাস পেলুম। ট্রেনে দেখা পর্ণার সেই সৌরভ! ঝটপট উঠে বসে বললুম,–পর্ণা নাকি?
বললুম নয়, মুখ দিয়ে কথাটা বেরিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কেউ সাড়া দিল না। অথচ একই সুগন্ধ। ঝাঝালো, তীক্ষ্ণ। চটিতে পা গলিয়ে এবার নিজের ইচ্ছায় ডাকলুম, পর্ণা! পর্ণা! কারণ সে নিশ্চয় কাছাকাছি কোথাও এসে গেছে। খেয়ালি বা ছিটগ্রস্থ মেয়ে, তাই আমার সঙ্গে লুকোচুরি খেলছে।
একধারে বাথরুম, অন্য দুদিকে দরজাবন্ধ আরও ঘর। পর্ণা কি বাথরুমে এসে ঢুকেছে? বাথরুমের দরজা ভেজানো। একটু ইতস্তত করে দরজায় চাপ দিলুম। খুলে গেল। কিন্তু কেউ নেই।
অথচ ঘরভরা দুর্দান্ত সৌরভ। আর ক্রমশ, এতক্ষণে সেই সৌরভ মেয়েদের চুলের ঘ্রাণের মতো আকর্ষণ করছে। চাপা আর আকুল কণ্ঠস্বরে আবার ডাকলুম, –পর্ণা! পর্ণা! সহসা সুগন্ধটা মিলিয়ে গেল। লজ্জিত বোধ করলুম। ছি-ছি! এ কী রূপান্তর আমার মধ্যে! সমস্ত ভব্যতাকে এই জীর্ণ পুরোনো বাড়িটাই কি ঘষে তুলে ফেলতে চাইছে আমার চেতনা থেকে? প্রকৃতি কি মানুষকে নিছক জৈব করে ফেলে?
বেরিয়ে গেলুম। হাল্কা গোলাপি রোদ্দুরের গায়ে নীলাভ ধূসরতার মতো কী এক রং। হয়তো এখনই কুয়াশা ঘনিয়ে আসছে। ঢেকে দিতে চাইছে ক্রুর ও ভয়াল বৃক্ষলতাকে।
তাদের জৈবতাকে বিষাদের আড়ালে সরিয়ে ফেলতে চাইছে। বিষাদ কথাটাই মনে এল। কারণ ততক্ষণে টের পেয়েছি, বাড়িটার জীবনে অনেক স্মৃতি আছে। তাই নস্টালজিয়ার বিষাদ আছে। গেটের দিকে এগিয়ে এলুম। ঢালু ঘাসে ঢাকা জমি নিচের নদীটিতে গিয়ে মিশেছে। তীব্র স্রোতের চাপা বিষণ্ণ শব্দ কানে এল। তারপর বাঁ-দিকে কিছুটা দূরে একটা গাছের তলায় আবিষ্কার করলুম পর্ণাকে! সে জলের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চেঁচিয়ে ডাকলুম,–পর্ণা।
পর্ণা মুখ তুলে তাকাল। কোমল রোদ্দুরে তার সুন্দর দাঁতগুলি ঝিকমিক করে উঠল। গেট খুলে ঢালু সংকীর্ণ রাস্তায় পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গে, আশ্চর্য, পর্ণা হঠাৎ গাছপালার আড়ালে উধাও হয়ে গেল! থমকে দাঁড়িয়ে গেলুম। তাহলে মেয়েটি সত্যি সাইকিক রুগি।
নিচে রাস্তার বাঁকে জেভিয়ারের টুপি দেখা গেল। সাইকেল ঠেলতে ঠেলতে চড়াই ভাঙছেন। কাছাকাছি এসে বললেন,–গুড ইভনিং স্যার! এবং পুনশ্চ আগের মতো, এনিথিং রং?
আস্তে বললুম,-না।
চলুন। লনে চেয়ার পেতে দিচ্ছি, বসবেন বরং। সরি স্যার! ভালো চায়ের খোঁজে বেরিয়েছিলুম। হোপলেস! কেকরাডি ইজ গোয়িং টু ডাই ডে বাই ডে। নাথিং গুড এনিহোয়্যার। অল ফুল অফ দা এভিল! জেভিয়ার সকৌতুকে হাসছিলেন। তারপর আমি নিচে নদীর ধারে সেই গাছটার দিকে বারবার ঘুরে তাকাচ্ছি লক্ষ করে বললেন,–ওখানে শ্মশান। আর ওই যে ছোট্ট টিলাটা দেখতে পাচ্ছেন, ওটা খ্রিস্টিয়ান সিমেট্রি। আশা করি, আমাদের চার্চের ঐশও দেখতে পাচ্ছেন। ওই যে গাছপালার ফাঁকে।
পর্ণার কথা জিগ্যেস করতে গিয়ে পারলুম না। পর্ণা নিষেধ করেছিল বলেও না। গেটে ঢোকার মুখে আবার পিছু ফিরতেই নিচের দিকে ঝোঁপের আড়ালে পর্ণাকে দেখলুম। ঠোঠে আঙুল। ইশারায় জেভিয়ারকে দেখিয়ে হাত নেড়েছিল। তারপর আবার উধাও …
কিছুক্ষণ পরে লনে বসে চা খাচ্ছি। জেভিয়ার এসে কুণ্ঠিত মুখে বললেন, আমি দুঃখিত স্যার! আপনার ডিনার রেডি, রেখে যাচ্ছি। আপনাকে রাত্রে সঙ্গ দিতে পারছি না। আপনাকে একা থাকতে হবে। ও নো-নো! ডোন্ট ওরি, স্যার। আসলে আমার স্ত্রী অনেকদিন থেকে অসুস্থ। তাকে দেখাশুনোর লোক নেই।
–না না। আমি একা থাকতে পারব! আপনি ভাববেন না।
জেভিয়ার একটু হাসলেন,-খুব পুরোনো বাড়ি। পুরোটা মেরামত হয়নি। প্লাস্টার খসে পড়ার শব্দ শুনলে ভয় পাবেন না। পেছনকার ঘরগুলিকে ছুঁচো চামচিকেরা দখল করে ফেলেছে। রাত্রে ওরা উৎপাত করতে পারে। আর একটা কথা, কেউ ডাকলে যেন দরজা খুলবেন না।
–চোর-ডাকাত আছে নাকি?
–সে আর কোথায় নেই? তবে…এনিওয়ে, বাইরে যা কিছু ঘটুক, যেন দরজা খুলে বেরুবেন না।
–আচ্ছা মিঃ জেভিয়ার, জংলি জানোয়ার আছে নাকি ওইসব জঙ্গলে?
শেয়াল আছে। জেভিয়ার শিশুর মতো হাসলেন, অবশ্য ওই যে নদীর ওপারে টিলা, ওখানে নাকি একটা শম্বর আছে। রাত্রে ডাক শোনা যায়। আমি কিন্তু শুনিনি স্যার!
জেভিয়ার চলে গেলেন কিচেনের দিকে। দিনশেষের ধূসরতা ঘনিয়েছে। লনের ডানদিকে বিধ্বস্ত ফোয়ারা ঘিরে প্রকাণ্ড গুল্মলতা। আবছা একটা মূর্তি ভেসে উঠল সেখানে। পর্ণা! সঙ্গে সঙ্গে চাপাস্বরে ডাকলুম,–পর্ণা! পর্ণা! জেভিয়ার বুড়োর যেন জন্তুর কান। কিচেন থেকে সাড়া দিলেন, জাস্ট আ মিনিট স্যার। পর্ণা মুছে গেল অমনি।…
জেভিয়ার সাইকেলে চেপে চলে যাওয়ার পর পর্ণার প্রতীক্ষায় ছটফট করছিলুম। বারান্দায় বসে বারবার টর্চের আলো ফেলছিলুম। ভাবছিলুম, এবার ওকে দেখে প্রকৃতিকন্যা বলে সম্ভাষণ করব। তারপর মনে হল, সন্ধ্যার পর আর কি ওকে বাড়ি থেকে বুেরতে দেবে, অথবা বসতি থেকে দূরে এই মুনভিলায় রাতের দিকে কেনই বা সে আসবে? আমি তার প্রেমে পড়তেই পারি, সে কেন পড়তে যাবে?
নদীর ওধারে টিলার মাথায় কতক্ষণ পরে চাঁদ উঠল। কুয়াশা তার জ্যোৎস্নাকে নিষ্প্রভ করে দিল। নিচের দিকে একদল শেয়াল ডাকাডাকি করে সহসা থেমে গেল। একটা পেঁচা কাওকাঁও শব্দ করতে করতে মুনভিলার ওপর দিয়ে চলে গেল। ক্রমে টের পেলুম জীবজগতে সাড়া পড়ে গেছে। পোকামাকড় ডাকছে। কখনও মাথার ভেতর, কখনও পারিপার্শ্বিকে আশ্চর্য প্রাকৃতিক সিম্ফনি অর্কেস্ট্রা। আর কোনও মৌন নেই, শুধু শব্দ। ধ্বনিময়তা। বৃক্ষলতা থেকে শিশির পড়ার শব্দগুলিও স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু নির্জনতা বড় অসহ্য। পর্ণা যদি আসত।
আটটা বাজলে কিচেনে হ্যারিকেনের আলোয় ডিনার খেয়ে নিলুম। খাদ্যের ব্যাপারেও জেভিয়ার ব্রিটিশ ঐতিহ্যের পক্ষপাতী। তবে আমি একেবারে ভে্তো বাঙালি। কাল বরং ওঁকে বলব, ডাল-ভাত আর একটুকরো মাছই আমার জন্য যথেষ্ট।
কিচেন বন্ধ করে তালা এঁটে হ্যারিকেন হাতে আমার ঘরে ফিরলুম। সিগারেট টানতে-টানতে আবার পর্ণার প্রতীক্ষা! কোথাও রাতপাখি ডাকতে থাকল। দরজা বন্ধ করে হ্যারিকেনের দম কমিয়ে খাটের তলায় রেখে শুয়ে পড়লুম। জানালাগুলি খোলা রইল। বন্ধ করলে স্বস্তি পাওয়া যেত। কিন্তু বদ্ধ ঘরে শুতে পারি না। একটা পোডো বাড়িতে একা রাত কাটানো এই প্রথম। খালি গা ছমছম আর অস্বস্তি। অথচ পর্ণার কথা ভাবতেই কেন যেন মনে হচ্ছে, আমি একা নই।
মশার উপদ্রব। তাই মশারি আছে। চিত হয়ে শুয়ে যতবার অন্য কিছু ভাবতে যাচ্ছি, পর্ণা মনে এসে দাঁড়াচ্ছে। প্রকৃতিকন্যার লাবণ্য, আর সেই ঝাঝালো সৌরভ স্মৃতি যা সমস্ত জীবনকে তছনছ করে দিচ্ছে।
কতক্ষণ পরে কোথাও কোনও ঘরের ভেতর চাপা শব্দে চমকে উঠলুম। শব্দটা ধস্তাধস্তি কিম্বা শ্বাসপ্রশ্বাসের। জেভিয়ার বলেছিলেন, যেন না বেরোই। কিন্তু শব্দটা বাড়ছে। টেবিলচেয়ার পড়ে যাওয়া, কাঁচ ভাঙা, শ্বাসপ্রশ্বাসটার বাম্প্রয় হয়ে ওঠে। তারপর গোঙানি, ঘড়ঘড়। কী ঘটছে? হুড়মুড় করে উঠে বসলুম। ঘড়ঘড় শব্দটা মৃদু হয়ে আসছে।
আর চুপ করে থাকা অসম্ভব। চরম ধরনের আতঙ্ক মরিয়া করে তোলে খুব ভিতু মানুষকেও। তাছাড়া হঠাৎ মনে হল পর্ণা এসেছিল এবং তাকে অনুসরণ করে কোনও দুবৃর্ত ওর ওপর ঝাঁপ দিয়েছে। হিংস্র গর্জনের ভঙ্গিতে চেঁচিয়ে উঠলুম, কে? কে?
তারপর টর্চ হাতে মশারি ঠেলে বেরিয়ে পড়লুম। ঘরের কোণায় একটা মরচে ধরা বল্লম দেখেছিলুম। বল্লমটা হাতে নিয়ে সেই শব্দটা কোন ঘরে থেকে আসছে জানতে কান পাতলুম। পেছনদিকের ঘর থেকে শব্দটা আসছে মনে হল। প্রচণ্ড জোরে লাথি মারলুম দরজায়। কপাটে মচমচ করে উঠল। দমাদ্দম লাথির পর একটা কপাট মড়মড় করে একপাশে ঝুলে গেল। ফাঁক দিয়ে টর্চের আলো ফেলেই আমার মাথা ঘুরে গেল। রক্ত হিম হয়ে পড়ল। দম আটকে গেল।
পর্ণাই! পুরোনো আসবাবপত্রের স্তূপে হেলান দেওয়ার ভঙ্গিতে দুপাশে হাত ছড়িয়ে আছে। শ্বাসনালি ফাঁক। চাপচাপ রক্ত।
চিৎকার করতে গিয়ে দেখি, গলা থেকে স্বর বেরুচ্ছে না। তারপর সেই ঘরে সৌরভ সহসা ঝাঁপিয়ে এলে ধাতস্থ হলুম। হন্তদন্ত হয়ে আমার ঘরের দরজা খুলে বাইরের বারান্দায় গেলুম। এখনই জেভিয়ারের কাছে যাওয়া দরকার।
কিন্তু তার বাড়ি তো চিনি না।
বস্তি এলাকায় বাজারে এখনও লোক থাকা সম্ভব। বারান্দা থেকে নামছি, তখনও শরীর পাষাণভার। পা টলছে। গলা শুকনো। এখন চারদিকের কুয়াশা ঝলমলে জ্যোৎস্নায় ফাই। কালোকালো বৃক্ষলতা আবার ভয়াল জৈব হয়ে উঠেছে। নিচের নদীর জলে জ্যোৎস্না, নদীটাও হিংস্র নিষ্ঠুর হাসছে। গেটের কাছে সহসা আবছা এক মূর্তি। পর্ণার আততায়ীই বা! মরিয়া হয়ে বম তুলে এগিয়ে গেলুম। পারিপার্শ্বিক নিষ্ঠুর হিস্রেতা মুহূর্তে আমাকে ভর করেছিল।
কিন্তু তার ওপর টর্চের আলো পড়তেই থমকে দাঁড়ালুম। ভুল দেখছি না তো? পর্ণা! এ তো পর্ণাই।
সে হাত তুলে চোখ আড়াল করে চাপাস্বরে বলে উঠল, আঃ আলো নেভান।
তাহলে শ্বাসনালি কাটা রক্তাক্ত কার শরীর দেখে এলুম? নিশ্চয় অন্য কাউকে দেখেছি। পর্ণা এগিয়ে এসে তেমনি শ্বাস-প্রশ্বাসময় কণ্ঠস্বরে আবার বলল,–এমন করে কোথায় যাচ্ছেন?
–পর্ণা! তুমি পর্ণা তাহলে…
–তাহলে? তাহলে কী? হঠাৎ থেমে গেলেন যে?
–ওই ঘরে একটা ডেডবডি। জাস্ট নাও মার্ডার্ড! অবিকল তোমার মতো একটা মেয়ে।
অবিকল আমার মতো! –পর্ণার কণ্ঠস্বরে চিড় খেল। সে তো আমিই।
–পর্ণা! আমি কিছু বুঝতে পারছি না। এ হেঁয়ালির অর্থ কী?
পর্ণা আরও এগিয়ে এল। সেই তীব্র সৌরভ আবার। কিন্তু এই জ্যোৎস্নায় সৌরভের সঙ্গে আরও কী মিশে আছে। সুঘ্রাণটা দ্রুত বদলে যাচ্ছে। হিংস্রতর হচ্ছে। সে শ্বাসপ্রশ্বাসময় কণ্ঠস্বরে বলল, আপনা মাসে হরিণা বৈরী। তুমি চর্যাপদ পড়োনি?
-–পর্ণা! দোহাই তোমার, বুঝিয়ে দাও এর অর্থ কী?
–আমাকে কেউ ভালোবাসেনি। সবাই ভালবাসত আমার এই শরীরটাকে। তাই এখন এই শরীরটাই সাজিয়েগুছিয়ে সেন্ট মেখে ঘুরে বেড়াই। অথচ আমি চেয়েছিলুম, আমার আত্মাকে কেউ ভালোবাসুক।
–পর্ণা! পর্ণা তুমি…
চুপ! এখন আমি তোমার কাছে একটু ভালোবাসা চাইতে এসেছি। দেবে তুমি? –বলে সে আরও কাছে এগিয়ে এল। তারপর আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। দুহাতে জড়িয়ে ধরল আমাকে। কিন্তু কী অসহ্য হিম তার শরীর! নিষ্ঠুর হিম আর কামনায় হিংস্র শরীরের চাপে আমার দম আটকে গেল। প্রচণ্ড আতঙ্কে মাথা ঘুরে উঠল। মনে হল, অতল শূন্যে তলিয়ে যাচ্ছি।…..
স্যার-স্যার!–শুনে চোখ খুলে দেখি, জেভিয়ার আমার পায়ের দিকে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর হাতে একটুকরো গরম পশমি কাপড়। আমার পায়ের তলায় সেঁক দিতে দিতে বললেন,-মর্নিংয়ে এসে দেখি আপনি লনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন। হোয়াট হ্যাপেন্ড?
মিঃ জেভিয়ার! অতিকষ্টে বললুম, পর্ণা কে?
জেভিয়ার চমকে উঠে বললেন,–ও মাই গড। তারপর দ্রুত বুকে ক্রুশ আঁকলেন। একটু পরে আস্তে বললেন, শি ওয়াজ আ স্কুল টিচার। এই ফ্যামিলিরই মেয়ে। মুনভিলায় মায়ের সঙ্গে থাকত। হঠাৎ একরাত্রে খুন হয়ে যায়। সরি স্যার, শি ওয়াজ জাস্ট আ নটি লাভগার্ল! ওকে! ডোন্ট ওরি! আর আপনাকে এখানে থাকতে হবে না। আমি বরং অন্য কোথাও থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।…