জোড়াসাঁকোর দেওয়ান শান্তিরাম সিংহীর পরিবারবর্গ
মিঃ মিডলটন ও স্যার টমাস র্যামবোল্ডের অধীনে প্রথমে পাটনা ও পরে মুর্শিদাবাদ জেলায় দেওয়ানী করেন শান্তিরাম সিংহী। শান্তিরামই পরিবারটিকে সমৃদ্ধ করে তোলেন।
শান্তিরাম জাতিতে ছিলেন কায়স্থ; ধর্মপরায়ণ শান্তিরামের অধিকাংশ সময় ধর্মকর্মেই ব্যয়িত হত। বারাণসীতে বড় একটি মন্দির তিনি শিবের নামে উৎসর্গ করেন। তিনি দুই পুত্র প্রাণকৃষ্ণ ও জয়কৃষ্ণকে রেখে মারা যান।
প্রাণকৃষ্ণ ছিলেন জেনারেল ট্রেজারির দেওয়ান; তাঁর তিন পুত্র : রাজকৃষ্ণ, নবকৃষ্ণ ও শ্রীকৃষ্ণ। জয়কৃষ্ণের একমাত্র পুত্রের নাম নন্দলাল!
প্রাণকৃষ্ণের জ্যেষ্ঠ পুত্র রাজকৃষ্ণের পুত্রের নাম মহেশচন্দ্র; মহেশচন্দ্র মারা যান তাঁর একমাত্র পুত্র হরিশচন্দ্রকে রেখে। এবং হরিশচন্দ্রের একমাত্র পুত্রের নাম বলাইচাঁদ সিংহী। এই বলাইচাঁদই বর্তমানে বিরাট ও সম্ভ্রান্ত এই পরিবারের কর্তা।
প্রাণকৃষ্ণের মেজ ছেলে নবকৃষ্ণ ছিলেন নিঃসন্তান। প্রাণকৃষ্ণের কনিষ্ঠ পুত্র শ্রীকৃষ্ণের পুত্রের নাম যাদবকৃষ্ণ। যাদবকৃষ্ণ মারা যান একটি মাত্র কন্যা রেখে– এই কন্যা এখন দেওয়ান শান্তিরাম সিংহীর বিপুল বিষয়সম্পত্তির এক অংশের মালিক।
জয়কৃষ্ণের পুত্র নন্দলাল মারা যান তাঁর পুত্র প্রখ্যাত কালীপ্রসন্ন সিংহীকে রেখে। কালীপ্রসন্ন সংস্কৃত, বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। এদেশীয় সাহিত্যের প্রতিও তাঁর অশেষ প্রীতি ছিল। সর্বোত্তম বাংলা উপন্যাস (?) ‘হুতোম প্যাঁচা’ (র-নক্সা) তাঁরই লেখা। তাঁর রচিত (অনূদিত) ‘মহাভারত’ একখানা অমূল্য গ্রন্থ। শেষোক্ত গ্রন্থখানা প্রকাশের ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে তিনি ঋণজালে জড়িয়ে পড়েন; ফলে, উড়িষ্যার জমিদারী, কলকাতার অনেক ভূ-সম্পত্তি ও বেঙ্গল ক্লাব বাড়িটি বিক্রি করে দিতে তিনি বাধ্য হন।
অনেকে অবশ্য বলেন যে তাঁর এই বিপুল ঋণের অন্যতম কারণ ছিল তাঁর উচ্ছৃঙ্খল ও অনিয়মিত জীবনযাপন; কিন্তু সে যাই হোক, বহু প্রথিতযশা মানুষ ও তাঁর অন্তরঙ্গদের মতে, তিনি বহু দুর্লভ গুণের অধিকারী ছিলেন।