জীবনমরণের সীমানা ছাড়ায়ে
“ঈশ্বরকে কি আপনি দেখেছেন?”
“হ্যাঁ, দেখেছি, ঠিক তোমাকে যেমন দেখছি।”
দৃঢ় প্রত্যয়যুক্ত ঠাকুরের উত্তর—”ঠিক যেমনটি তোমাকে দেখছি, ঈশ্বরকে আমি সেইভাবেই দেখেছি।”
“আমাকে দেখাতে পারেন?”
“অবশ্যই পারি।”
তবে তোমার ঐ চোখে হবে না। প্রেমের চোখ চাই। প্রেমিক হতে হবে। ভিতরে একটা ভয়ঙ্কর রকমের আঁকুপাঁকু ভাব আনতে হবে, মানুষকে জলে চুবিয়ে ধরলে যেমনটি হয়। সবাই বলে বটে, দর্শন চাই, কিন্তু হায়! সেই ব্যাকুলতা কোথায়!
এই ব্যস্তসমস্ত, জগঝম্প বিজ্ঞানের যুগে, বিজ্ঞ মানুষের ঈশ্বরে কিবা প্রয়োজন! জীবিকা, অর্থ, সংসার, ভোগ, রোগ-আরোগ্য, প্রমোদভ্রমণ, বিত্ত, প্রতিপত্তি, খ্যাতি—স্তরে স্তরে এই প্রাপ্তি, এর বাইরে কি আছে, কে আছে— মাথা ঘামিয়ে লাভ কি! একালের একটি সুন্দর শব্দ ‘সব ফালতু’। আলু, পটল, মাছ, মাংস ইত্যাদির অভাব বড় অভাব। ঈশ্বরের অভাবে জীবন অচল হবে না। যাঁকে না হলে জীবন চলে যায় তাঁর জন্য ব্যাকুল হবে কোন্ মূর্খ
প্রতাপশালী অপরিচিতের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার তাগিদ আছে। একটা ফ্ল্যাট চাই, কি ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করাতে চাই, কি হাসপাতালের বেড। নাম জানি, ধামও জানি। সাতসকালেই ধরনা। দুরারোগ্য ব্যাধির জন্য দূর গ্রামে সিদ্ধাইজানা মানুষের আস্তানায় গিয়ে কৃপাকবচের প্রত্যাশায় ফাঁকা মাঠে সারা রাত উবু হয়ে বসে থাকতেও রাজি। ঈশ্বরের জন্য সারা রাত মেঝেতে ‘কোথা তুমি, কোথা তুমি’ বলে গড়াগড়ি দিতে প্রস্তুত নই। কারণ, কোন ধারণাই নেই তাঁকে পেলে কি হয়; সেই সুখ, সেই আনন্দ কেমন। দুধ কেমন, না ধোবো ধোবো। অর্থাৎ সাদা, তরল একটি পদার্থ। সেইটাই সব নয়। যিনি দুগ্ধপান করেছেন তিনি বলবেন, ভাই আরো আছে। দুধ শুধু সাদা নয়—স্নিগ্ধ, সুস্বাদু, স্নেহমিশ্ৰিত অপূর্ব এক বস্তু। গরু দেখলে দুধের জ্ঞান হবে না, দুধ দেখলে আংশিক জ্ঞান হবে, আর পান করলে হবে পূর্ণ জ্ঞান। সেই জ্ঞানের ফল সুস্বাস্থ্য।
ঈশ্বরের হরেক কথা গ্রন্থে আছে। পণ্ডিতের যুক্তি, তর্ক। সাকার, নিরাকার ভক্তের প্রেম, উচ্ছ্বাস, অশ্রুজল, বিরহ, অভিমান। আছে ভক্তের জীবনী, অবতারের লীলাকাহিনী। পাঠ্যের অভাব নেই। সাধও জাগতে পারে, কিন্তু সাধ্যি নেই। সদ্যবিবাহিতা তরুণী তার অবিবাহিতা সখীদের স্বামীর কথা বলতে পারে, কিন্তু স্বামিসঙ্গ কেমন জানতে হলে স্বামিসঙ্গ করতে হবে। অপ্রত্যক্ষ জ্ঞান আর প্রত্যক্ষ জ্ঞানে বিস্তর ফারাক।
ঠাকুরের জীবনী জানি। তাঁর সমাধি হতো তাও জানি। আলোকচিত্রে ধরাও আছে সেই অবস্থার ভঙ্গি। শ্রীম তাঁর ‘কথামৃত’-এ ঠাকুরকে চিরজীবন্ত করে রেখেছেন। ততঃ কিম্। তাতে আমার কি হলো? সঙ্কীর্ণতা গেছে? লোভ, লালসা ঘুচেছে? সংশয়মুক্ত হতে পেরেছি? বেঁচে থাকার ভয় গেছে? আনন্দে সদ্যোজাত বাছুরের মতো লাফাতে পারি? ভিতরের অঙ্কট-বঙ্কট গেছে কি? বিষ্ঠার গন্ধ?
যখন ছাত্র ছিলাম তখন ওস্তাদ বন্ধুরা শিখিয়েছিল অঙ্কের ব্যাক ক্যালকুলেশন’। উত্তরটা জেনে নিয়ে তলার দিক থেকে কষে আসা। ধর্মেরও ‘ব্যাক ক্যালকুলেশন’ আছে। সিদ্ধ পুরুষের লক্ষণ জেনে অনুরূপ অভিনয় করা। চোখ উলটে ফেললাম, বিষয়ীর বিষয় মাখানো মুখে প্রেমিকের হাসি খেলালাম, জ্ঞানমুদ্রা করে ধ্যানের ভঙ্গিতে বসলাম, কেউ প্রণাম করলে আশীর্বাদের ভঙ্গিতে ভরতনাট্যমের কায়দায় হাত তুললাম যেন গৌতম বুদ্ধের ‘আপ-টু-ডেট এডিশন’! সব কথাতেই একই প্রত্যয়—’সবই তাঁর ইচ্ছা’। ভোগজীর্ণ ফুসফুসে বাতাস ভরে নাভি থেকে প্রণবমন্ত্র উদ্গীরণের চেষ্টা—”হরি ওঁ”। ‘ওম্’ আধমাত্রা উঠেই অষ্টখণ্ড হয়ে গোবৎসের ডাকের মতো শোনাল। তা হোক, গরুও তো গোমাতা। যা-তা নয়। শরীরে চন্দন তেল রগড়েছি। কাছে এলেই গন্ধ। কেউ প্রশ্ন করলে বলি, সাধন-ভজন করলে অমন হয় ভাই। দিব্যগন্ধ! মহাপ্রভুর পর এই আমার হলো। চেহারায় দিব্য চেকনাই আনার জন্য সপ্তাহে একটা করে স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন। মাথার পিছনে জ্যোতি ছেটকাবার বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাও হতে পারে। ঘাড়ে টুনি, কোমরে ব্যাটারি।
ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণের লীলা-সংবরণের পর কলকাতার এক ভদ্রলোক ঢোল-শোহরত করে ঘোষণা করলেন, তাঁরও সমাধি’ হচ্ছে। তিনি দ্বিতীয় রামকৃষ্ণ। সব চলে এস আমার কাছে। আত্মজ্ঞান, ব্রহ্মজ্ঞান সব পেয়ে যাবে আমার কাছে। দুর্ভাগ্য, অভিনয় তেমন জমল না।
সমস্যা এই—জড়বিজ্ঞানের বলে বলীয়ান হয়ে যেসব বিজ্ঞানী এতকাল ঈশ্বরের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন তাঁরাও থমকে গেছেন। কারণ, “Physics has at last invaded the territory of theology.” বললেন ফ্র্যাঙ্ক জে. টিপলার (Frank J. Tipler)। কে এই টিপলার! একালের এক শ্রেষ্ঠ পদার্থবিজ্ঞানী। তিনি একটি আলোড়ন-সৃষ্টিকারী বই লিখেছেন। ভারতে বইটির সামান্য কয়েক কপি এসেছে। নাম—”দ্য ফিজিক্স অফ ইমমর্টালিটি’। ১৯৬০ থেকে ১৯৭০-এর প্রথম ভাগ পর্যন্ত পদার্থবিজ্ঞানের মহাবিপ্লবের কাল। দুজন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী রজার পেনরোজ আর স্টিফেন হকিং এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছেন। বিশ্ব অর্থাৎ মহাবিশ্বকে বিজ্ঞানীরা এতকাল ঠাকুরের উপমায় ‘অন্ধের হস্তিদর্শন’-এর কায়দায় দেখেছেন। স্থান আর কালের সীমাবদ্ধতায় বসে যে-বিচার ও সত্য উদ্ঘাটন করে মনে করেছেন—’এই হলো শেষকথা’, সে-কথা ঠাকুরের ভাষায়, ‘মতুয়ার বুদ্ধি’। শেষ তো নয়ই, শুরুর কথা কিনা তাই বা কে বলবে! “শেষ নাহি যার শেষ কথা কে বলবে!”
ঋষি আর কবির পক্ষেই বলা সম্ভব, পরীক্ষা অথবা গণিতের মাধ্যমে নয়, মননের সাহায্যে-
“শেষ নাহি যে শেষ কথা কে বলবে।
আঘাত হয়ে দেখা দিল, আগুন হয়ে জ্বলবে।
সাঙ্গ হলে মেঘের পালা শুরু হবে বৃষ্টি ঢালা,
বরফ জমা সারা হলে নদী হয়ে গলবে।
ফুরায় যা, তা ফুরায় শুধু চোখে—
অন্ধকারের পেরিয়ে দুয়ার যায় চলে আলোকে।
পুরাতনের হৃদয় টুটে আপনি নূতন উঠবে ফুটে,
জীবনে ফুল ফোটা হলে মরণে ফল ফলবে।” (গীতালি—রবীন্দ্রনাথ)
ঠাকুর অনন্ত, বিশ্বচৈতন্যের কথা বলতেন। মাঝে মাঝে ধমকে উঠতেন : “তুমি বোঝাবার কে? তিনি না বোঝালে!” সসীম হয়ে অসীমকে ধরতে চাও মূর্খ! “নুনের পুতুল মাপতে চলেছ সাগর!” টিপলার একটি সুন্দর কথা বলছেন। বলছেন, এই মহাবিশ্বের বয়স হলো মাত্র ২০ বিলিয়ন বছর! আনুমানিক আরো ১০০ বিলিয়ন বছর পড়ে আছে ভবিষ্যতের গর্ভে। অতএব বিজ্ঞানী! তুমি কোন্ সত্যের শেষ কথা বলতে চাইছ? “Almost all of space and time lies in the future.” বলেই বলছেন : “I shall show exactly why this power to resurrect which modern Physics allows will actually exist in the far future, and why it will infact be used.” বলছেন : “ Physics will permit the resurrection to eternal life of everyone who has lived, is living and will live.” শোনাচ্ছেন বড় আশার কথা : “If any reader has lost a loved one, or is afraid of death, modern Physics says-Be comforted, you and they shall live again.’
আমার ঠাকুরকে দেখতে পাব। গীতা সত্য, বাইবেল সত্য।
জীবনের শেষ কোথায়? মরণও কি সত্য?
মৃত্যুর পরে মানুষ আবার জীবন পাবে অনন্তের কোলে। ইংরেজীতে যাকে বলা হয় ‘রেসারেকশন’। ফ্র্যাঙ্ক জে. টিপলার তাঁর গ্রন্থ ‘দ্য ফিজিক্স অফ ইমমর্টালিটি’তে বলছেন : “I shall show exactly how physics will permit the resurrection to eternal life of everyone who has lived, is living and will live. I shall show exactly why this power to resurrect which modern physics allows will actually exist in the far future, and why it will in fact be used. If any reader has lost a loved one, or is afraid of death, modern physics says — Be comforted, you and they shall live again.’”
হিন্দুদর্শনে জন্মও নেই, মৃত্যুও নেই। গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন :
“ন জায়তে ম্রিয়তে বা কদাচিৎ,
নায়ং ভূত্বাভবিতা বা ন ভূয়ঃ।
অজো নিত্যঃ শাশ্বতোহয়ং পুরাণো,
ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে।।” (গীতা, ২।২০)
দেহখাঁচায় একটা ভ্রম আটকে গেছে। আমি আমার, তুমি তোমার। এই ভ্রম কার নেই? যোগীর।
“যা নিশা সর্বভূতানাং তস্যাং জাগর্তি সংযমী।
যস্যাং জাগ্রতি ভূতানি সা নিশা পশ্যতো মুনোঃ।।” (গীতা, ২।৬৯)
সাধনা হলো অনুভূতির স্তর বেয়ে সত্যে উপনীত হওয়া। ‘রিয়ালিটি’ বস্তুটা কি? হিন্দুদর্শন বলবেন ‘ভ্রম’। এই ভ্রমকেই যন্ত্রবিজ্ঞান বলবে ‘রিয়ালিটি’। উলটোটাই হলো ভ্রম। ঈশ্বর অনুভূতিতে। বাস্তবে অপ্রমাণিত। অনুভূতি ব্যক্তিকেন্দ্রিক। সাধকের সাধনার ধন। ঠাকুর বলছেন, মাইরি বলছি তাঁকে দেখা যায়, তবে তোমার ঐ নয়নে নয়। ওটা তো ক্যামেরা। প্রেমের নয়ন চাই। প্রেমের শরীরে রমণও সম্ভব। অর্থাৎ ইউফরিয়া (euphoria) a feeling of elation। এক চমকে কুণ্ডলিনীর জাগরণ। সমস্ত নার্ভাস সিস্টেমটা অন্যরকম হয়ে যাওয়া। ক্ষুদ্র ‘আমি’তে বিশাল ‘আমি’র ঢুকে পড়া। আকাশ হয়ে যাওয়া, খ হয়ে যাওয়া।
কার্ল ইয়ুঙ্গ বলছেন, এইটাই প্রকৃত ‘সিক্রেট’, প্রকৃতই গোপনীয়। আমরা যখন কিছু গোপনীয় রাখতে চাই, অর্থাৎ আমি জানি কিন্তু অপরকে জানাব না, যেমন গুপ্তধন, কি গোপন কথা, তখন সেটা আর ‘সিক্রেট’ থাকে না, সেটা হয়ে যায় ‘ওপন সিক্রেট’। ইয়ুঙ্গ বলছেন : “For as soon as you keep a secret it is already an open secret: you know about it and other people know about it, and then it is no longer a secret. The real secrets are secrets because no one understands them. One cannot even talk about them, and of such a kind are the experiences of kundalini yoga.”
একেবারে ঠাকুরের কথা। বিদ্যাসাগরমশাইকে বললেন, সবকিছুই উচ্ছিষ্ট হয় একমাত্র ব্রহ্ম ছাড়া। ব্রহ্ম কখনো উচ্ছিষ্ট হয় না। আবার বলছেন, নুনের পুতুল সাগর মাপতে গিয়েছিল। সে আর ফিরে এল না। একাকার হয়ে গেল। সমাধি থেকে একমাত্র অবতাররাই নেমে আসতে পারেন। নেমে এসে তিনি কি বলেন, ব্রহ্মের কথা বলতে পারেন কি? না, তিনি আনন্দে বালকবৎ হয়ে যান অথবা জড়বৎ কিংবা পিশাচবৎ। বাক্য তাঁকে প্রকাশ করতে অক্ষম। ভগবান বলছেন :
“আশ্চর্যবৎ পশ্যতি কশ্চিদনম্,
আশ্চর্যবদ্ বদতি তথৈব চান্যঃ।
আশ্চর্যবচ্চৈনমন্যঃ শৃণোতি,
শ্রুত্বাপ্যেনং বেদ নচৈব কশ্চিৎ।।” (গীতা, ২।২৯)
আত্মা, সে এক আশ্চর্য অনুভূতি। একথা শুনেছি, কিন্তু সেই আশ্চর্য আত্মস্বরূপকে জানতে পারিনি। কেন পারিনি! কারণ ব্রহ্মে ‘ডুয়ালিটি’ নেই। তুমি আমি, আমার তোমার নেই। অহং বললে সোহহং থাকে না। ঠাকুর বললেন : “হাম্বা হাম্বা!” বলদের বরাত। জোয়াল পরাচ্ছে, লাঙল চাপাচ্ছে, রোদে জমি চষাচ্ছে, বেধড়ক পেটাচ্ছে, হাম্বার ইতর পরিণতি। অবশেষে কসাইখানায়। কাটা হলো। চামড়া গেল জুতো হতে। হাড় গেল সার হতে। নাড়ি-ভুঁড়ি শুকিয়ে চড়ল গিয়ে একতারাতে। তখন ‘তুঁহু’ বোল। ‘হাম্বা’র অবসান।
এক এবং অদ্বৈত। দুই এবং দ্বৈত হয় কি করে! ওটা মধ্যপন্থা-আস্বাদনের পথ। ভক্তির পথ। লীলার পথ। বোঝার সুবিধে। এক লাফে ছাদে হনুমানের দ্বারা ওঠা সম্ভব হলেও মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। ধাপে ধাপে উঠতে উঠতে একসময় একি একি বলে অহং-এর পাঁচিলের ওপারে ঝাঁপ!
যতক্ষণ পর্যন্ত ‘আমি’ আছে ততক্ষণ এই দেহ, এই জগৎ, এই দুঃখ-সুখ সব সত্য বলেই ধরতে হয়। ইয়ুঙ্গ বলছেন : “The instinct of individuation is found everywhere in life, for there is no life on earth that is not individual. Individuation takes place only when you are conscious of it, but individuality is always there from the beginning of your existence.” আত্মজ্ঞান ও চেতনা, দুটি দুধারা। মানুষ জন্মের পর কয়েক মাস অজ্ঞান অবস্থায় থাকে। এইটাই আমাদের ধারণা। প্রি- কনসাসনেস, অথবা কসমিক কনসাসনেস সে ভিন্নতর গবেষণা। অতঃপর তার জ্ঞান হয়। এই জ্ঞান কিন্তু আত্মস্বরূপে জাগ্রত হয় না। জাগ্রত হয় দেহস্বরূপে। আমি, আমার নাম, ঠিকানা, বংশ, বড়লোক, মধ্যবিত্ত, গরিব, বুদ্ধিজীবী, শ্রমিক ইত্যাদি বোধে জাগ্রত হওয়া। আমি। অসংখ্য আমি সারা বিশ্বময়। এইবার সারকথা বলছেন তন্ত্র : “Ahamkar makes you who you are now, Kundalini makes you into what you will become.”
কথাটা এই, যা ঠাকুর বলছেন এইভাবে—মনুষ্যজীবনের উদ্দেশ্যই হলো ঈশ্বরকে জানা। ভগবান আছেন, এই বোধই হলো জ্ঞান। আর বলছেন, মূলাধার জাগ্রত না হলে অনুভূতি হয় না। তারপরেই বলছেন, কে চায় তাঁকে জানতে!
টিপলার মানুষের মানবত্ব ও যাবতীয় অহং-এর খেলাকে মেনে নিলেন। বিজ্ঞান মনুষ্য নামক জীবটি সম্পর্কে যা বলছে তা নস্যাৎ করার প্রয়োজনীয়তা তিনি অনুভব করলেন না, বরং বললেন : “The resurrection theory requires us to accept that a human being is a purely physical object.” আত্মার পুনরুত্থান তত্ত্বের জন্য মানুষকে পুরোপুরি একটি ভৌত প্রাণী বলে মেনে নেওয়ার প্রয়োজন আছে। প্রাণীটি কেমন – “a biochemical machine completely and exhaustively described by the known laws of physics,” অর্থাৎ একটি জৈব-রাসায়নিক যন্ত্র, পদার্থবিদ্যার যাবতীয় তত্ত্বসহায়ে যার বর্ণনা সম্ভব। “There are no mysterious vital’ forces.” অলৌকিক কোন প্রাণশক্তির অস্তিত্ব সেখানে নেই। “More generally, it requires us to regard a ‘person’ as a particular (very complicated) type of computer program, the human ‘soul’ is nothing but a specific program being run on a computing machine called the brain.”
টিপলার বলছেন, এইটাই আমি চাই। এর ওপর দাঁড়িয়ে আমি প্রমাণ করব—”I shall show that accepting this allows us to show not only that we shall be resurrected to eternal life, but also that we have free will.
বলেই বলছেন ঠাকুরের সেই কথা, স্বামীজীর সেই কথা, আমাদের চৈতন্যময় সত্তার কথা—”We are indeed machines, but we in contrast to the machines we ourselves have built, possess true free will.” ঠাকুরের শেষ বিদায়বাণী—”তোমাদের চৈতন্য হোক!” অর্থাৎ চৈতন্যে তোমাদের পুনর্জন্ম হোক