7 of 8

জীবজন্তু

জীবজন্তু

এই ধারাবাহিক রচনার নাম ‘শেষমেশ’। এটা তৃতীয় পর্ব। কাউকে মুখে বলেছি কেউ চোখে দেখেছেন, মোটমাট অনেকেই জেনে গেছেন যে শেষমেশ আমি ‘শেষমেশ’ নামে একটি ধারাবাহিক রম্য নিবন্ধমালা রচনার চেষ্টায় নিজেকে নিযুক্ত করেছি।

আমার অন্য সব কাজের মতোই এই নামকরণের কাজটা আমি যে খুব ভেবে-চিন্তে করেছি তা নয়।

আর তা ছাড়া এই নামটার মধ্যে এত যে প্যাঁচ আছে তাই জানতাম না।

সেদিন এক বন্ধু এসে বললেন, ‘তাহলে এটাই তোমার শেষ পাঁঠা?’ রীতিমতো জিজ্ঞাসা। মেষ শব্দটির অর্থ যে ভেড়া বা পাঁঠা সেটাই বন্ধুর বিদ্রূপের বিষয়। বলা বাহুল্য, ইনি আমার সেই রকমের বন্ধু যে রকম সম্পর্কে রসিককুলতিলক গৌরকিশোর ঘোষ বলেছিলেন, ‘এ রকম এক-আধটি বন্ধু থাকলে জীবনে শত্রুর দরকার পড়ে না।’

এমতাবস্থায় আমাকে অবশ্যই ভেড়া কিংবা পাঁঠা নিয়ে কিছু লিখতে হয়।

তার আগে আমি অবশ্য বন্ধুবরকে প্রচলিত রীতিতে রহস্য করে বলতে পারতাম, ‘যদি পাঁঠাই হয় বা ভেড়াই হয় তাতে তোমার কী? আমার পাঁঠা, আমার ভেড়া আমি লেজের দিক থেকেই হোক আর ঘাড়ের দিক থেকেই হোক, যে দিক দিয়ে ইচ্ছে কাটব, তাতে তোমার কী?’

তা বলিনি। বরং আপাতত ভেড়া সমেত কয়েকটা জীবজন্তুর কথা বলি।

এই জীবজন্তুর গল্পগুলো মোটেই বানানো নয়। বরং যথেষ্ট সাম্প্রতিক। এর প্রথমাট ‘আজকাল’ পত্রিকার পৃষ্ঠাতে কিছুদিন আগে বেরিয়েছে।

বোমাতঙ্কগ্রস্ত কলকাতার পুলিশ এখন চারদিকে শিক্ষিত কুকুর খুঁজে বেড়াচ্ছে। শিক্ষিত মানে সুশিক্ষিত। বিশেষরূপে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সারমেয়, যারা গন্ধ শুঁকে বোমা খুঁজে বার করতে পারে। এতকাল ভেস্পা নামে একটি কুকুরে কাজ চলে যাচ্ছিল। কিন্তু এখন আর তা হচ্ছে না। এত বোমা বিস্ফোরণের সত্যি ঘটনায় ও গুজবে চারদিক শুঁকে শুঁকে সে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।

ভেস্পাকে সাহায্য করতে অন্যান্য কুকুরের খোঁজ করা হচ্ছে। সংবাদ সূত্রে জানা গেছে যে ভেস্পা গোয়ালিয়রের ন্যাশনাল ট্রেনিং কলেজ ফর ডগসের অনার্স গ্র্যাজুয়েট।

ভেস্পা বোমা বিশেষজ্ঞ। এ ছাড়াও আছে মাদক বিশেষজ্ঞ কুকুর। তবে এই মুহূর্তে কলকাতায় বিশেষ প্রয়োজন বোমা বিশেষজ্ঞ কুকুরের। তারই খোঁজ চলছে। শুধু গোয়ালিয়র কলেজে নয়, দিল্লির ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড দপ্তরেও অনার্স গ্র্যাজুয়েট বোমা বিশেষজ্ঞ কুকুর রয়েছে, এখন তাদেরই খোঁজ চলছে।

অন্যদিকে ওই একই দিনে খাস বিলেত লন্ডন থেকে একটা মোরগের খবর এসেছে।

মোরগটির নাম ‘করকি’। করকির গলার স্বর খুবই কর্কশ এবং উচ্চগ্রামের। অন্যান্য মোরগের মতোই সে শেষরাত থেকে চেঁচানো শুরু করে।

করকির মালিকের নাম মি. ফিলিপ জনস। জনস সাহেবের প্রতিবেশী তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে আদালতে আবেদন জানিয়েছেন যাতে করকি সকাল সাতটার আগে না ডাকে এবং তাঁর প্রভাতনিদ্রায় ব্যাঘাত না ঘটায়।

এই আবেদন অনুসারে মহামান্য আদালত আদেশ জারি করেছেন যে, করকি সকাল সাতটার আগে ডাকতে পারবে না। কিন্তু, বলা বাহুল্য, করকি সে আদেশ মান্য করেনি।

এরপরে মামলা বহুদূর গড়িয়েছে। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা ব্যয় করেও জনস সাহেব আদালতের নির্দেশ তাঁর পক্ষে আনতে পারেননি। এখন তিনি দূর গ্রামের এক খামারে, যেখানে শেষরাতে করকির চিৎকারে কেউ আপত্তি তুলবে না, সেখানে করকিকে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।

গল্পটি ভাল, কিন্তু জনস সাহেব করকিকে কেন কেটে খেলেন না। আড়াই লাখ টাকাও বাঁচত, সুখাদ্যও পেতেন, সেটা কিন্তু সংবাদে কোথাও নেই।

কুকুর বা মোরগ আপাতত আর নয়, একটা ভেড়ার গল্পে যাই। গল্পটা অবশ্য গাধার নামেও চলে, আমিও একদা সেভাবেই লিখেছিলাম।

বাবা ছেলেকে নিয়ে বেড়াতে বেরিয়েছেন। মাঠে একটা ভেড়া চরছে।

ছেলে বাবাকে জিজ্ঞাসা করল,

‘বাবা, এটা কী?’

বাবা বললেন, ‘এটা হল ভেড়া।’

ছেলে একটু পরে আরেকটা ভেড়া দেখিয়ে বলল, ‘বাবা, ওটা কী?’

বাবা বললেন, “ওটাও ভেড়া।’

ছেলে বলল, ‘বাবা দুটোই ভেড়া?’

বাবা এবার একটু কায়দা করে বললেন, ‘একটা হল ভেড়া আর অন্যটা ভেড়ার বৌ।

ছেলে বলল, ‘বাবা, ভেড়ারা বিয়ে করে?’

বাবা বললেন, ‘হ্যাঁ করে। ভেড়ারাই শুধু বিয়ে করে।’

সে যা হোক, এই ভেড়ার ব্যাপারটার একটা ভদ্রসম্মত কাব্যিক ফয়সালা করি।

সেদিন নবীন ছড়াকার দীপ মুখোপাধ্যায় এলেন আমাদের বাড়িতে।

তিনি এসেই আমাদের বাইরের ঘরে বসে ক্রমাগত ‘ব্যা-ব্যা, ব্যা-ব্যা’ করতে লাগলেন। ভেড়ায় কামড়ালে নাকি সেই বিষের প্রকোপে অনেকে এ রকম করে, কিন্তু সমস্ত সংশয় ছিন্ন করে সে পরিচ্ছন্ন কণ্ঠে চোখ বুজে বলতে লাগল,

‘ব্যা-ব্যা, ব্যা-ব্যা,
ব্যা-ব্যা, ব্যা-ব্যা, ব্যা-ব্যা
খাচ্ছিলো ঘাস মনের সুখে
করছিলো যে কানদোলন
দশটা ভেড়া গড়ের মাঠে
হঠাৎ করে আন্দোলন’…

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *