2 of 2

জার্মানি যাচ্ছি না – সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়

জার্মানি যাচ্ছি না – সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়

বলুন তো এটা কোন যুদ্ধের ছবি?

মেঘা একটা বিদেশি পত্রিকার পাতা জোড়া যুদ্ধের ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল। সাদা-কালো ছবি, দেখে মনে হচ্ছে ওখানে সম্ভবত কিছুক্ষণ আগে ছোটখাট একটা বিস্ফোরণ হয়ে গেছে। আশেপাশে টাটকা মৃতদেহ পড়ে আছে। এবং যথারীতি একটা শিশু পিচরাস্তায় বসে বেভুল কেঁদে যাচ্ছে। একটা স্তব্ধ ট্যাঙ্ক দাঁড়িয়ে আছে, তার সামনে দিয়ে এক সৈনিক হেঁটে যাচ্ছে, তার কাঁধে আর এক আহত সৈনিক।

বললাম—সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ার।

মেঘা উৎফুল্ল হয়ে পরনের খাটো গেঞ্জিটা অযথাই টেনেটুনে নিয়ে বলল,—রাইট। স্যার আপনি না অলওয়েজ রাইট আনসার দেন, আপনি কি ক্লাসে ফার্স্ট হতেন?

—না।

—আচ্ছা স্যার থার্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ার কি আর কোনওদিন হবে না? আমার না যুদ্ধের ছবি দেখলে ভীষণ থ্রিলিং লাগে। আমি ঠিক করেছি বড় হয়ে ফটোগ্রাফার হব। থার্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ারের ছবি তুলব। কত রিস্ক নিয়ে ফটোগ্রাফাররা যুদ্ধের ছবি তোলে বলুন! একদম স্পটে চলে যায়। কী থ্রীলিং লাইফ!

—আচ্ছা সে হবেখন, এখন বলো তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কোন কোন দেশের মধ্যে শুরু হয়?

—সে বলছি, আগে বলুন থার্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ার কবে শুরু হবে? নাকি হবেই না। আমি পাপাকে এবারের বার্থডেতে ফরেন ক্যামেরা প্রেজেন্ট করতে বলেছি। এখন থেকেই প্র্যাকটিস শুরু করব।

ওইসব তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের অপেক্ষারত ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে আমার দিন শুরু হয়। মাথা গরম হয়ে যায়। কালীপুজোর দিন এরা পাটকাঠি বেঁধে কালীপটকা ফাটায়। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ…হুঁ! মাথা গরম করলে চলবে না, দিনের প্রথম টিউশনি, যথেষ্ট মাল্লুদার টিউশনি। অতএব নিজেকে সংযত করে গলা নামিয়ে বললাম,—যুদ্ধ কি ভাল মেঘা? দেশের কত ক্ষতি হয়, মানুষের কত ক্ষতি হয়। কত প্রিয়জন মরে যায়।

—তবু স্যার এই লাইফটাও ভীষণ বোরিং। পড়াশুনো করো, কেরিয়ার করো, চাকরি করো নয়ত বিয়ে করো আর বিয়ের পর…

বাকিটা বলল না মেঘা। ক্লাস সিক্সে পড়ে, এত কিছু বুঝে গেছে! নাকি কেউ পাখি পড়া পড়িয়েছে? বুঝতে পারছি মেঘার মধ্যে একটা যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। এমন সময় কলিংবেল, যেন সাতটা পাখি ডেকে উঠল একসঙ্গে। মেঘা উঠে গেল দরজা খুলতে। ঘড়ি দেখলাম, আটটা, তার মানে আরও আধ ঘন্টা। পরের টিউশনি সরকারপাড়ায় নটায়। মেঘা ফিরে এল,—স্যার বাইরে আপনাকে একজন ডাকছেন।

—আমাকে? অবাক হলাম। কে এল? নিশ্চয়ই জরুরি কোনও দরকার, নইলে টিউশনি বাড়িতে কেউ আসে। তাৎক্ষণিক দুশ্চিন্তা হল, বাইরে আমার জন্যে অপেক্ষায় থাকা খারাপ খবরটি কি মেঘা জেনে এসেছে! মেঘার দিকে তাকালাম, ও একপ্রকার চটুল হাসছে। অবশ্য এ হাসির কোনও অর্থ নেই। ক্লাস সিক্সে ওঠার পর থেকেই বেলা-অবেলায় ও হেসেই যাচ্ছে। বাইরের দরজার ভারী পর্দা সরিয়ে দেখি, আটটার রোদে গেটের বাইরে পর্ণা দাঁড়িয়ে আছে। মুখে উৎকণ্ঠা আর গালে রোদের চোটে লালচে আভা। কাছে গেলাম।

—কী ব্যাপার?

—এখনই একবার বেরোতে পারবে? জানতে চাইল পর্ণা।

—কেন? কী হল হঠাৎ?

—পরে বলছি।

আমি ঘুরে মেঘাকে চলে যাচ্ছি বলতে গিয়ে দেখি, ও দরজার কাছে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ আমাকেই লক্ষ করছিল, মুখে সেই হাসি। আমি কিছু বলার আগেই ও ঘাড় নেড়ে দিল। অর্থাৎ সম্মতি। আড়াইশো টাকার টিউশনি, অসময়ে যেতে গেলে ছাত্রীদেরও খানিক পারমিশন নিতে হয়।

মফস্সলের গলিতে, রাস্তায় এখন প্রচুর ব্যস্ততা। এখনই যথেষ্ট রোদ। সাইকেল, রিকশা, অফিসযাত্রী, কোচিং ফেরত ছাত্রছাত্রী, আর আমাদের মতো গৃহশিক্ষক, শিক্ষয়িত্রী। এ বাড়ি পড়ানো শেষ করে ও বাড়ি পড়াতে ছোটা। কেউ সাইকেলে, কেউ হেঁটে। এই অসময়ে আমি পর্ণা প্রেমের মুডে যাচ্ছি দেখে, মিউনিসিপ্যালিটির কলে স্নানরত আমার বন্ধু অনির্বাণ বলল,—কী গুরু আজ কি বাই উঠে গেল নাকি? বাসনমাজা ছেড়ে এ তোমরা কোথায় চললে? অনির্বাণ সদ্য চাকরি পেয়েছে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে। বললাম—হিংসে হচ্ছে, নাকি করুণা হচ্ছে?

অনির্বাণ বলল,—বোধহয় হিংসেই হচ্ছে।

পর্ণা বলল,—তাড়াতাড়ি যান, আফটার শেভ মেখে বেরিয়ে পড়ুন। আপনার জন্যে কলকাতা অপেক্ষা করছে।

অনির্বাণ লজ্জায় হেসে ফেলে মিউনিসিপ্যালিটির কলের অপর্যাপ্ত জলে মুখে লুকোল। ‘বাসনমাজা’, আমরা বন্ধুরা টিউশানিগুলোকে বাসনমাজা বলি। রোজ সকালে আমাদের তৎপরতার সঙ্গে ঠিক ঝি-র তৎপরতা ভীষণ মেলে। আমি আর পর্ণা এখন বেশ দরকারি অপারেশনে বেরিয়েছি৷ যাচ্ছি ডাঃ ব্যানার্জির কাছে। পর্ণা খবর নিয়েছে, ‘অবকাশ’ সংস্থা নাকি ওদের বার্ষিক অনুষ্ঠানে সুমনের গানের পর হুইল চেয়ার দেবে। যথাযথ দরকার এমন প্রতিবন্ধী বাচ্চা সেই চেয়ার পাবে। ডাঃ ব্যানার্জির ওপর সেই যথাযথ প্রতিবন্ধী বাছার দায়িত্ব পড়েছে। পর্ণার ভাই মল্লার প্রতিবন্ধী। হুইল চেয়ার আমাদের চাই। পাড়ার ছেলে বলে এলাকার ডাক্তাররা আমাদের দেখে ধস খায়। পর্ণা জানে, তাই আমায় সঙ্গে নিয়েছে। মল্লার যথাযথ প্রতিবন্ধী। হুইল চেয়ার পাওয়ার মতো সমস্ত কোয়ালিফিকেশানই ওর আছে। বয়স আট। হাঁটতে পারে না। পর্ণার মা রোগা, বাবা খিটখিটে। পর্ণা বলতে নেই কামদেবের সুদৃষ্টিতে…অতএব পর্ণাই বিকেলবেলা ওর ভাইয়ের ল্যাতপ্যাতে শরীরটা কাঁধে ফেলে পার্কের দিকে যায়। আমি তখন ভুলেও পর্ণার পাশে থাকি না। একদিন হয়েছিল কী, পর্ণা মল্লারকে নিয়ে পার্কে যাচ্ছে, আমি পাশাপাশি যাচ্ছি। প্রচুর আটভাট বকছি, আর লক্ষ করছি পথচারীরা আমার দিকে কীরকম হাফ ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই খেয়াল হল, আরে তাই তো! প্রেমিকা যাচ্ছে ভারী জিনিস বয়ে আর আমি পাশে প্রজাপতির মতো উড়ে উড়ে চলেছি।—দাও পর্ণা, মল্লারকে আমায় দাও।

—না, তুমি পারবে না। তোমার অভ্যেস নেই।

—পারব, পারব। তুমি পারছ আমি পারব না।

পর্ণাও দেবে না। আমিও নেব। আমার শিভালরি তখন জেগে উঠেছে। ছিনিয়ে নিলাম মল্লারকে। কাঁধে ফেলে বীরবিক্রমে কিছুটা চলার পরেই বুঝলাম, আমার হয়ে এসেছে। অসম্ভব ভারী মল্লারের শরীর। আমার হাঁফ ধরে যাচ্ছিল, ঘাম দিচ্ছিল। কী করে পারে পর্ণা! পর্ণা হাসছিল, হেসে কুটোপুটি। বলছে,—কী গো হাঁপিয়ে গেলে? বিয়ের পর কিন্তু ভাই আমার সঙ্গেই থাকবে। মল্লারও হাসছিল, মল্লার সামান্য জড়বুদ্ধিসম্পন্ন তবুও টের পেয়েছে মজাটা।—দাও দাও, বললাম না তুমি পারবে না। আমার কাঁধ থেকে ফেরত নিল পর্ণা মল্লারকে। ততক্ষণে পার্ক এসে গেছে।

পার্ক জুড়ে প্রচুর হইচই। চারপাশে কমপ্লানের বাড়ন্ত বাচ্চারা খেলছে। কৃষ্ণচূড়া গাছও তাদের সঙ্গে খেলতে খেলতে প্রচুর ফুল ঝরিয়ে ফেলেছে মাটিতে। আমরা সাবধানে মল্লারকে মাটিতে নামালাম। বেশ অপমানিত লাগছিল নিজেকে, যেহেতু মল্লারকে বইতে পারিনি তাই পর্ণাকে বলেছিলাম,—আচ্ছা, আমি যদি তোমার ভাইয়ের জন্যে প্রতি মাসে একটা করে কমপ্লান কিনে দি, তোমার বাবা-মা কি রাগ করবেন? পর্ণা বলেছিল,—ও তো কমপ্লান খায়। তাই দেখছ না কীরকম বাড় হয়েছে, ভারী হয়েছে।

আমরা ডাঃ ব্যানার্জির চেম্বারে পৌঁছে গেছি। ঘর জুড়ে পেশেন্ট। নাম ডাকছে মালতীদি, চোখাচোখি হতে বলল,—নাম লেখা আছে? বললাম,—না। অন্য ব্যাপারে এসেছি। মালতীদির মুখটা তেতো খাওয়ার মতো হয়ে গেল। বুঝল, নয় চাঁদা না হয় কোনও চ্যারিটির ধান্দা নিয়ে এসেছি। পাড়ার ছেলে, আমাকে না ঢুকতে দিয়েও কোনও উপায় নেই। তাই মিষ্টি করে বলল,—একটু বসতে হবে ভাই, পরে ডেকে নিচ্ছি। পেশেন্টদের নির্দিষ্ট বেঞ্চিতে বসতে গিয়ে দেখি, সদয়দা বসে আছে—কী ব্যাপার সদয়দা তুমি!—তোর যে ধান্দায় আসা আমারও তাই।—মানে? চমকে উঠলাম। সদয়দা ধান্দার শিরোমণি। ও-ও কি এসেছে কারুর জন্যে তদ্বির করতে? এখনও অবধি বিষয়টায় এন্ট্রিই নিলাম না, কম্পিটিশন শুরু হয়ে গেল। পর্ণা সব বুঝে বেঞ্চিতে ধপাস করে বসে পড়ল। আমি তাড়াতাড়ি সদয়দাকে বললাম একটু বাইরে এসো, কথা আছে। সদয়দা উঠল। পর্ণার দিকে তাকিয়ে একবার চোখের ইশারায় অভয় দেব ভাবলাম, কিন্তু ও দেখি শূন্যের দিকে চেয়ে রয়েছে।

—মামা, তুমি কার জন্যে এসেছ? তোমার তো দুটো ছেলেই সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে সিনেমা হলে টিকিট ব্ল্যাক করে।

—তুই তো জানিস সাগর আমি ধান্দা ছাড়া একটা নিঃশ্বাসও ফালতু ছাড়ি না। শ্রীকৃষ্ণ হলের গায়ে আইসক্রিম বেচে বিশু, ওর ব্যাটার জন্যে এসেছি। বিশুটা তো একটু ম্যাদামারা, তাই ওর বউ আঁচলের খুট থেকে একশো টাকা বার করে আমাকে দিয়ে বলল, দাদা, আপনি চালাক চতুর লোক, আপনি একটু চেষ্টা করে দেখুন না, যদি হুইল চেয়ারটা পাওয়া যায়। বোনের জন্যে এটুকু আপনাকে করতেই হবে। এমনভাবে বলল, কথাটা ফেলতে পারলাম না।

—কিন্তু সদয়দা আমারও তো চেয়ারটা চাই। বুঝতেই পারছ, ম্যাটার অব প্রেস্টিজ। আর তাছাড়া ওর ভাইয়ের সত্যিই খুব দরকার। বড় হয়ে যাচ্ছে, কাঁহাতক কোলে নিয়ে ঘোরা যায়।

—সবই তো বুঝলাম, কিন্তু টাকাটা তো গিলে নিয়েছি। একবার টাকা নিয়ে, টাকা ফেরত দেবার মতো বাজার এখনও আমার আসেনি। চল না দুজনেই চেষ্টা করি, দেখা যাক কে জেতে, কম্পিটিশন না থাকলে কারবারে মজাই আসে না।

—মামা, তোমার সঙ্গে কম্পিটিশন। তোমাকে এখানে দেখেই আমি হেরে বসে আছি। ভগবান তোমায় এরকম একটা বিষখোপরার মতো মুখ দিয়েছে…এই মুখ দেখলে যে কেউ ধস খাবে। ডাঃ ব্যানার্জি তো কোন ছাড়। তার ওপর আছে বাতেলা, সেখানেও আমি শিশু। তোমার বিশ তিরিশ বছরের অভিজ্ঞতা।

—পাম্প দিচ্ছিস, দে। তবে আমি সরে দাঁড়াচ্ছি না। বাংলা কথা শোন, ওরা একশো দিয়েছে, তুই যদি দেড়শো দিস আমি ময়দান ছেড়ে চলে যাব। আর যদি দুশো দিস, তোকে কিছু করতে হবে না, বাকি ব্যবস্থা আমি করে দেব। হুইল চেয়ারটা তোর লাভারের বাড়ি ডেলিভারি দিয়ে আসব।

সদয়দার কাছ থেকে এরকম আশা করা যায় না। চুপ করে গেছি। ভাবার ভান করছি। যদিও ভাবার কিছু নেই। মাসের আজ চব্বিশ তারিখ, টিউশনিগুলোর টাকা পেতে ঢের দেরি। তাছাড়া রোজগার পাঁচশ, বাড়িতে তিনশো দিতে হয়। বাকি দুশোয় বিড়ি সিগারেট, পর্ণার সঙ্গে সিনেমা কুলোয় না।

—সদয় ঘোষ আপনি এবার ভেতরে যান। মালতীদি দরজার বাইরে এসে ডাক দিল। সদয়দা ভেতরে যাবার উদ্যোগ নিতে গেলে, আমি আর একবার ভিজে গলায় বললাম, সদয়দা…

—দ্যাখ, এটা সমাজ সেবার কাজ, নইলে এ রেটে কেউ কাজ করে!

সদয়দা ভেতরে চলে গেল। আমি গুটি গুটি পায়ে ডিসপেনসারি ঘরে এসে পর্ণার পাশে বসলাম। পর্ণা জিজ্ঞেস করল,—ম্যানেজ করতে পারলে? বললাম,—মোটামুটি। ডিসপেনসারি ঘরটা জুড়ে ওষুধ ওষুধ গন্ধ। একটা বাবা ঢাউস ফ্যান চলছে একঘেয়ে। এত রোজগার করে ডাক্তার তবু ফ্যানটা পাল্টাবে না। বাইরে সকাল নটাতেই ঠা ঠা করছে রোদ। ঘরে মুমুর্ষ মানুষজন। সবাই তো রোগী নয়, কেউ কেউ রোগীর বাড়ির লোক। অথচ সবাই রোগীর মতো বসে আছে। কেউ কারুর সঙ্গে একটা কথা বলছে না। দেওয়ালের ক্যালেন্ডারটা ফ্যানের হাওয়ায় ডানা তুলে আগামী মাসগুলো পেশেন্ট পার্টিদের দেখাচ্ছে, হাতছানি দিচ্ছে বাঁচার, তবু কেউ দেখছে না। যেন সামনের এই বন্ধ দরজার ওপারে যে বিধাতা বসে আছে সে পারমিশন না দিলে কেউ আগামী মাসগুলো কাটাতে পারবে না। এসব ভাবতে ভাবতেই সামনের দরজাটা খুলে গেল। সদয়দা বেরিয়ে আসছে, আমার দিকে তাকাল। মুখে হাসি নেই, রাগ নেই, ব্যর্থতা নেই। মুখটা পড়তেই পারলাম না।

একেই বলে প্রফেশনাল ধান্দাবাজ। বুঝতেই দিল না কাজ কতটা মেরে রেখেছে। ইতিমধ্যে মালতীদি আমাকে বলল,—যাও তোমার ব্যাপারটা সেরে এসো। আমি উঠলাম। আমার সঙ্গে পর্ণাও উঠে পড়েছে। বললাম, তুমি বোসো, আমি একা যাচ্ছি।

ঘরে ঢুকে দরজাটা ভেজিয়ে দিতে গিয়ে দেখি, দরজাটা আপনিই বন্ধ হয়ে গেল। এই স্পিংটা নতুন লাগিয়েছে হয়তো ডাক্তারবাবু।

—বলো ইয়ং জেনারেশন, তোমার কী বক্তব্য? একমুখ হাসি নিয়ে জলদগম্ভীর গলায় জানতে চাইল ডাক্তারবাবু।

—আমি কিন্তু কোনও রোগের ব্যাপারে আসিনি।

—সে তোমার ঘরে ঢোকা দেখেই বুঝেছি। এটুকু অভিজ্ঞতা না থাকলে কি পাড়ায় বসে প্র্যাকটিস জমানো যায়।

—আপনি তো ‘অবকাশ’ সংস্থার সঙ্গে যুক্ত, হুইলচেয়ার কে পাবে সে তো আপনিই ঠিক করবেন শুনলাম।।

—হ্যাঁ। কেন, তোমার কোনও ক্যান্ডিডেট আছে নাকি?

—হ্যাঁ স্যার। (স্যার বলে ফেলেই মনে হল, বাড়াবাড়ি হয়ে গেল। স্লিপ অফ আবেগ)। খুব নিডি ফ্যামিলি, আপনি চেনেন, দু-একবার চিকিৎসাও করেছেন ছেলেটাকে, ওই যে শিবমন্দির ক্লাবের পাশে প্রতিমা প্রেস, তার মালিকের ছেলে। প্রেসটা তো উঠে যাওয়ার মুখে, ওদের বাড়ির অবস্থা খুবই খারাপ। তার ওপর গোদের ওপর বিষফোঁড়া প্রতিবন্ধী ছেলে।

—হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে। ছেলেটার স্প্যাসটিসিটি আছে। মেন্টালিও একটু ডিসএবল্। লস্ট কেস। আর ইমপ্রুভ করবে বলে মনে হয় না।

—ঠিক ধরেছেন ডাক্তারবাবু। কাইন্ডলি যদি একটু ওর নামেই রেফার করে দেন চেয়ারটা…

—ওর একটা দিদি আছে না? তোমার সঙ্গে পড়ে বোধহয়।

—আমার সঙ্গে পড়ে না। ওই একটু…

—প্রেম? আরে ইয়ংম্যান এতে এত লজ্জা পাওয়ার কী আছে। ঠিক আছে আমি দেখছি যাতে তোমার হবু শালা চেয়ারটা পায়।

ডাক্তারবাবু নিজের রসিকতায় নিজেই হাসছেন, আমিও হাসছি। তার মানে মেরে এনেছি, চেয়ারটা হয়েই গেল। টেবিলের ওপর ধবধবে প্যাডের পাতা, যেন হাসছে, সোনালি ডটপেন হাসছে। দরজায় লাগানো বেবি ফুডের পোস্টারে একটা নাদুসনুদুস বাচ্চা হাসছে। বাইরে দশটার রোদ হাসছে। অতএব সদয়দা আউট। ওদের জমানা শেষ। আমরাই হলাম গিয়ে প্রতিশ্রুতিমান ধান্দাবাজ। হাসি থামিয়ে ডাক্তারবাবু বললেন,—আমার ব্যাপারটাও একটু সামলিয়ো। একবারেই বুঝতে পারলাম উনি কোন ব্যাপারটা বলছেন, ওঁনার একটা বউদিকেস মার্কেটে খুব ফেটে আছে। তবু ন্যাকার মতো জিজ্ঞেস করলাম,—কোন ব্যাপারটা?

—ওই যে আমার নামে যে স্ক্যান্ডেলটা ক্রিয়েট করা হয়েছে না।

—ওঃ, ওই ব্যাপারটা। আরে ওসব নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। ও আমরা সব ইরেজ করে দেব। আমাদের ক্লাব ঘরে গিয়ে আপনি মাসখানেক বিনা পয়সায় রোগী দেখুন না, আপনিই সব সাইজ হয়ে যাবে।

—মন্দ বলোনি। ঠিক আছে তুমি সব ব্যবস্থা করো, আমি রাজি।

—তাহলে আসি। চেয়ারটা তাহলে পাচ্ছিই।

—আই’ল ট্রাই মাই বেস্ট। এর মধ্যে যদি পার্টিফাটি ঢুকে যায় তাহলে অন্য কথা। তবে আমি স্প্যাস্টিক সোসাইটির সঙ্গে যোগাযোগ করে তোমার ক্যান্ডিডেটের জন্যে একটা হুইল চেয়ার বন্দোবস্ত করে দেবই। তুমি কি জানো তোমার জন্যে কেন এত সব করব বলছি? …জানো না। তোমার বড়দা আর আমি ক্লাসমেট ছিলাম। একই রাজনীতিতে বিশ্বাস করতাম। সেই পরিচয় সূত্রেই তুমি এত প্রেফারেন্স পেলে।

—ওঃ, তাই নাকি! অবাক হওয়ার অ্যাকটিং করে, একটা দেঁতো হাসি হেসে বেরিয়ে এলাম চেম্বার থেকে। ডাক্তার পুরো সাইজ হয়ে গেছে। বউদি কেসটাতে ভালই ফেঁসেছে বোধহয়। বউদির ছেলে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে পড়ে, ক’দিন আগে ছুটিতে এসে নিজের কানে মায়ের স্ক্যান্ডেল শুনতে পায়। তারপর পাড়ার ছোট ব্যাচেদের মালখাল খাইয়ে বউদির ছেলে দল বেঁধে ডাক্তারকে চমকে দিয়ে আসে। সেই ঘটনাতেই ডাক্তারের বেলুন কিছুটা চুপসে গেছে। সে যাই হোক না কেন, আমার চেয়ারটা চাই। পাড়ার ছোটদের কদিন একটু চুপচাপ থাকতে বলব। চেয়ারটা পেয়ে গেলেই, আমিও একদিন ছোটদের সঙ্গে এসে ডাক্তারবাবুকে চমকে যাব। শালা বলে কিনা, দাদার বন্ধু ছিল। ইদানীং অনেকেই বলে কথাটা, এখন আর আশ্চর্য হই না। অথচ বড় হয়ে শুনেছি দাদা যখন স্ট্যাবড হয় তখন এক মাইলের মধ্যে আততায়ীরা ছাড়া আর কেউ ছিল না। গত কবছর ধরে ফোর্থ অগাস্ট দাদার শহিদ বেদিতে মালা দিয়ে শহিদ দিবস পালন করা হয়। সেদিনটা বেশ লাগে, নিজেকে কিরকম বিপ্লবীর ভাই, বিপ্লবীর ভাই মনে হয়।

ডাক্তারখানা থেকে বেরিয়ে এখন আমরা রাস্তায়। পর্ণা টেনশানলেস। বেশ খুশি খুশি। আমরা নিজেদের অজান্তেই দাদার শহিদ বেদির রাস্তা ধরেছি। আজ সেকেন্ড বাসনমাজাটা হল না। পর্ণারও বোধহয় একটা বাসনমাজা ড্রপ গেল। এবার আমি ক্লাব ঘরে যাব। পর্ণা কি বাড়ি ফিরে যাবে, নাকি অন্য কোনও টিউশনিতে যাবে? পর্ণা কটা টিউশনি করে জানতে চাইতে আমার কীরকম একটা অস্বস্তি হয়। তবে সন্ধে সাতটা থেকে আটটা ও আর টিউশনি করে না। আমিও করি না। ওই সময় আমরা সাধুর ঘাটে বসি, প্রেম করি। আমাদের প্রেমের বাক্যালাপ ঘাটের সিঁড়িদেরও মুখস্থ হয়ে গেছে। আজ আমাদের দুজনেরই মন ভাল, পর্ণাকে আর ভাইয়ের ভারী শরীরটা বয়ে বেড়াতে হবে না। আজ সাধুর ঘাটে আমাদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত চুম্বন দৃশ্য ঘটতেই পারে। তবে সে চুম্বন আমরা পরস্পর বিনিময় না করে উড়িয়ে দেব সেইসব প্রতিবন্ধী শিশু কিশোরদের উদ্দেশে যারা এখনও কোনও হুইলচেয়ার পায়নি।

ওই যে দেখা যাচ্ছে দাদার শহিদ বেদিটা। পেছনেই নর্দমা, নর্দমার গা বেয়ে উঠেছে হাইরাইজ ফ্ল্যাটবাড়ি। আশঙ্কা হয় ওই হাইরাইজ থেকে এটা ওটা আবর্জনা ভুল করে যেন দাদার বেদিতে না ফেলে। দাদার বেদির ওপর একটা ছাউনি দিতে হবে। ছাউনি দিতে কত খরচা? ক্লাবকে দিয়ে একটা জীবনমুখী ফাংশন করালে মনে হয় পয়সাটা উঠে আসবে। বেদির পাশ দিয়ে যাবার সময় আমি কিন্তু দাদাকে কোনও ধন্যবাদ দিলাম না। কেননা আমি তখনও স্পষ্ট বুঝতে পারছি না হুইল চেয়ারটা দাদার রেফারেন্সে হল নাকি ডাক্তারবাবুর সেই মহিলা কেসটার জন্যে হল।

করতালির মধ্যে জীবনমুখী গানের অনুষ্ঠানের শেষ দুঃখের গানটা লুকিয়ে গেল। এরপর হুইল চেয়ার, সেলাই মেশিন দেওয়ার পালা। মেঘাও অনুষ্ঠানে এসেছে। হাতে দামি ক্যামেরা, ফটাফট ছবি তুলছে অনুষ্ঠানের। কী অনায়াসে অপারেটিং করছে ওইটুকু বাচ্চা মেয়ে। আমাদের ঘরের মেয়েদের ওই ক্যামেরা দিলে ভেবে ভেবেই বিয়ের বয়স পার করে দেবে। অনুষ্ঠানের শুরুতে আমি পর্ণা একবার মেঘার মুখোমুখি হয়ে পড়েছিলাম। ও আমাদের দিকে ক্যামেরা তাক করেছিল। তখন পর্ণার কাঁধে মল্লার। এ ছবি আমি তুলতে দিইনি। বলেছি, পরে হবেখন। মেঘা বলেছে, আমার কিন্তু আপনাদের পেয়ার ছবিই চাই। জার্মানিতে গিয়ে নিজের কাছে রাখব। মেঘারা জার্মানিতে চলে যাচ্ছে। মেঘার বাবার আরও উন্নতি হয়েছে। ওর বাবা জার্মানির একটা কোম্পানিতে জয়েন করছে। আমার একমাত্র দামি টিউশনিটাও বিদেশে চলে যাচ্ছে। তা যাক, ওখানে গেলে মেঘা সম্ভবত একটু তাড়াতাড়িই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ দেখতে পাবে। যুদ্ধটুদ্ধ প্রথমে ধনী দেশগুলোই শুরু করে। মাইক ডাকছে মল্লারকে। পর্ণা মল্লারকে কাঁধে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে স্টেজের দিকে। আমিও উঠে পড়েছিলাম, যাওয়া ঠিক নয় ভেবে বসে রইলাম। পর্ণা স্টেজে পৌঁছে গেছে। উদ্যোক্তারা আত্মতুষ্টির হাসি হাসছে। ডাঃ ব্যানার্জিও আছেন স্টেজে, ভাল করে মাপছেন পর্ণাকে। পর্ণা একহাতে মল্লারকে আঁকড়ে না রেখে শুধুমাত্র কাঁধে ফেলে রেখে, অনায়াস দক্ষতায় দু হাত জড়ো করে দর্শকদের উদ্দেশে, কর্মকর্তাদের উদ্দেশে নমস্কার জানাচ্ছে। মল্লারও পর্ণার গলা জড়িয়ে পড়ে আছে। যেন অজগর সাপ। পর্ণাকে মনে হচ্ছে কোনও সার্কাসে খেলা দেখাচ্ছে। হাততালি। এই কি সেই পর্ণা। আমার প্রেমিকা। টাইপিং স্পিড আশি, শর্ট হ্যান্ড একশ কুড়ি। বি-এ পাস। ভীষণ জুঁই ফুলের সেন্ট ভালবাসে। ওরা মল্লারকে চেয়ারে বসিয়েছে। মল্লাবের মুখ থেকে কুণ্ঠার গ্রহণ সরে যাচ্ছে। মল্লারকে আর জড়বুদ্ধিসম্পন্ন মনে হচ্ছে না। দিদির দিকে তাকিয়ে হাসছে, দিদির সিঁথির দিকে তাকিয়ে হাসছে। এবার দিদির সিঁথি রাঙা হতেই পারে। কিন্তু গাড়ি এগোচ্ছে না। পর্ণা ঠেলছে চেয়ারটাকে, এগোচ্ছে না। উদ্যোক্তারা সাহায্য করছে, সামান্য এগিয়ে থেমে যাচ্ছে। চাকা ফ্রি নয়। আমি স্টেজের দিকে দৌড়লাম, উঠে পড়লাম স্টেজে।—সরো, আমি দেখছি। আমি ঠেলেঠুলে কোনওক্রমে স্টেজ থেকে বার করলাম চেয়ারটাকে। হাততালি। স্টেজের বাইরে এসে পর্ণাকে বললাম,—তুমি মল্লারকে ততক্ষণ কোলে নাও, আমি চেয়ারটা চালিয়ে রাস্তায় নিয়ে যাই।

আমরা এখন রাস্তায়। রাস্তাতে চেয়ারটা আর চলতে চাইছে না। সামনের ছোট চাকাদুটো একদম ফ্রি নয়। পুরনো মাল রং করে চালিয়ে দিল নাকি! আমি পর্ণা দুজনেই ঠেলছি চেয়ারটাকে। চেয়ারে বসে মল্লারও চোখ মুখ কুঁচকে চেয়ারের হাতল ধরে খানিক এগনোর চেষ্টা করছে। ও তো জানে না ও শূন্য থেকে বাতাস ধরার চেষ্টা করছে। একটু এগোয় তা ফের দাঁড়িয়ে যায়। শো ভেঙেছে। আশপাশ দিয়ে জনগণ আমাদের দেখতে দেখতে এগিয়ে যাচ্ছে। এই অনুষ্ঠানটা অনুষ্ঠানসূচিতে ছিল না। আমরা জি টি রোডে এসে পড়েছি। গায়ের ওপর দিয়ে তীব্র হর্ন বাজিয়ে ট্যাক্সি, বাস, ম্যাটাডর সব বেরিয়ে যাচ্ছে। আমি পর্ণা পরস্পর কোনও কথা বলছি না। যেন মেলা থেকে ঠকে কেনা কোনও দম্পতি কিছুক্ষণ আগে আমাদের হাসি মেলার ঘূর্ণিতে লটকে গেছে। সামনে একটা বিরাট গচ্চা, সাইড হয়ে বেরিয়ে যেতে গিয়ে দেখি পেছন থেকে একটা অ্যাম্বুলেন্স সজোরে আসছে, সামলাতে না পেরে সবশুদ্ধ পড়লাম গচ্চায়। চেয়ার থেকে ছিটকে গেল মল্লার। পর্ণা আর্তস্বরে চিৎকার করে উঠল। আমি দৌড়ে গিয়ে মল্লারকে তুলতে গিয়ে দেখি উল্টো দিক থেকে একটা প্রাইভেট আমার দিকে ধেয়ে আসছে। আমি ঝট করে সরে গেলাম। পর্ণা রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে। মল্লার ফিট পাঁচেক দূরে পড়ে আছে। আমি পর্ণা কেউই মল্লারের কাছে পৌঁছতে পারছি না। পরের পর গাড়ি, ধোঁয়াধুলো আমাদের পাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। একসময় পথচারীর চিৎকার, চেঁচামেচিতে সমস্ত গাড়ি থেমে গেল। মল্লারও হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে। কনুই দিয়ে রক্ত ঝরছে, কপালের একপাশ ছেঁচড়ে গেছে রাস্তায় খোয়ায়। মল্লারের চোখে আহত সৈনিকের চাউনি। আমি এক ছুটে গিয়ে কাঁধে তুলে নিলাম মল্লারকে। কিছুক্ষণ ওকে নিয়ে হাঁটার পর মনে হল, মল্লারকে তেমন ভারী মনে হচ্ছে না তো! পাশে এসে পর্ণা হাঁটছে। পিছন থেকে কারা যেন বলছে, দাদা চেয়ারটা পড়ে রইল। ও দাদা…

—বলুন তো, এটা কোন যুদ্ধের ছবি? মেঘা আমার সামনে একটা এনলার্জড কালার ফটো ধরেছে। আমি দেখে অবাক, ছবিতে আমি কাঁধে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছি মল্লারকে, পাশে পর্ণা। আশেপাশে শাঁ শাঁ করে গাড়ি চলে যাচ্ছে, ধুলো ধোঁয়া। ওই তো, দূরে দেখা যাচ্ছে গচ্চায় মুখ থুবড়ে পড়ে হুইল চেয়ার। কখন তুলল ছবিটা।

বলতে পারলে না তো। আমি বলছি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

আমি বলে উঠলাম,—তুমি কী করে জানলে মেঘা?

—জানি। জানেন স্যার, আমি না জার্মানিতে যাচ্ছি না।

—কেন?

—আমার না এখান ছেড়ে কিছুতেই যেতে ইচ্ছে করছে না।

আমি মনে মনে বলি, হ্যাঁ, মেঘা, তুমি এ মাটি ছেড়ে যেও না। এখানে তুমি অনেক তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ পাবে। ছোট ছোট অনেক যুদ্ধ চলছে। আমি তোমাকে সমস্ত যুদ্ধের কাছে নিয়ে যাব। যত খুশি ছবি তুলো…ফিল্‌ম কিনে তুমি নিঃস্ব হয়ে যাবে, তবু যুদ্ধ শেষ হবে না।

৪ মে ১৯৯৭

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *