কৃষ্ণপক্ষে আধখানা চাঁদ উঠল অনেক রাতে , খানিক কালো খানিক আলো পড়ল আঙিনাতে । ওরে আমার নয়ন , আমার নয়ন নিদ্রাহারা , আকাশ - পানে চেয়ে চেয়ে কত গুনবি তারা । সাড়া কারো নাই রে , সবাই ঘুমায় অকাতরে । প্রদীপগুলি নিবে গেল দুয়ার - দেওয়া ঘরে । তুই কেন আজ বেড়াস ফিরি আলোয় অন্ধকারে । তুই কেন আজ দেখিস চেয়ে বনপথের পারে । শব্দ কোথাও শুনতে কি পাস মাঠে তেপান্তরে । মাটি কোথাও উঠছে কেঁপে ঘোড়ার পদভরে ? কোথাও ধুলো উড়ছে কি রে কোনো আকাশ - কোণে । আগুনশিখা যায় কি দেখা দূরের আম্রবনে । সন্ধ্যাবেলা তুই কি কারো লিখন পেয়েছিলি । বুকের কাছে লুকিয়ে রেখে শান্তি হারাইলি ? নাচে রে তাই রক্ত নাচে সকল দেহ - মাঝে , বাজে রে তাই কী কথা তোর পাঁজর জুড়ে বাজে । আজিকে এই খণ্ড চাঁদের ক্ষীণ আলোকের'পরে ব্যাকুল হয়ে অশান্ত প্রাণ আঘাত করে মরে । কী লুকিয়ে আছে ওরে , কী রেখেছে ঢেকে— কিসের কাঁপন কিসের আভাস পাই যে থেকে থেকে । ওরে , কোথাও নাই রে হাওয়া , স্তব্ধ বাঁশের শাখা— বালুতটের পাশে নদী কালির বর্ণে আঁকা । বনের'পরে চেপে আছে কাহার অভিশাপ— ধরণীতল মূর্ছা গেছে লয়ে আপন তাপ । ওরে , হেথায় আনন্দ নেই— পুরানো তোর বাড়ি , ভাঙা দুয়ার বাদুড়কে ওই দিয়েছে পথ ছাড়ি । সন্ধ্যা হতে ঘুমিয়ে পড়ে যে যেথা পায় স্থান— জাগে না কেউ বীণা হাতে , গাহে না কেউ গান । হেথা কি তোর দুয়ারে কেউ পৌঁছোবে আজ রাতে— এক হাতে তার ধ্বজা তুলে , আলো আর - এক হাতে ? হঠাৎ কিসের চঞ্চলতা ছুটে আসবে বেগে , গ্রামের পথে পাখিরা সব গেয়ে উঠবে জেগে । উঠবে মৃদঙ বেজে বেজে গর্জি গুরুগুরু , অঙ্গে হঠাৎ দেবে কাঁটা , বক্ষ দুরুদুরু । ওরে নিদ্রাবিহীন আঁখি , ওরে শান্তিহারা , আঁধার পথে চেয়ে চেয়ে কার পেয়েছিস সাড়া ।