।। জয়ন্তাবতারবৃত্তান্ত বৰ্ণন।।
চতুৰ্দশাব্দে কৃষ্ণাংশে যথা জাতং শৃণু। জয়ন্তঃ শত্রুপুত্রশ্চ জানকীশাপমোহিতঃ। কলৌ জন্মত্বমাপন্নঃ স্বর্ণবত্যুরেহবসৎ।। ১। চৈত্রশুক্ল নবম্যাং চ মধ্যাহ্নে গুরুবাসরে। স জাতশ্চন্দ্রবদনো রাজলক্ষণলক্ষিতঃ।।২। জাতে তস্মিন্ সুতশ্রেষ্ঠ দেবাঃ সর্ষিগণাস্তদা। ইন্দুলোয়ং মহীং জাতো জয়ন্তো বাসবাত্বজঃ। ইত্যুচুবচনং তস্মাদিন্দুলো নাম চা ভবৎ।।৩।। আহ্লাদো জাতকমাদীন কারয়িত্বা শিশোমুদ্রা।। ব্রাহ্মণেভ্যো দদৌ স্বর্ণধেনুবৃন্দং হয়ান্ গজান্।।৪।।
।। জয়ন্তাবতারবৃত্তান্ত বৰ্ণন।।
এই অধ্যায়ে জয়ন্ত অবতার বৃত্তান্ত বর্ণন এবং তার ইন্দুল নামে খ্যাতি এবং ইন্দুল চরণ বর্ণনা করা হয়েছে।
সূতজী বললেন, কৃষ্ণাংশের বয়স চতুর্দশ অব্দ গত হলে সেই সময় কিরূপ অবস্থা হয়েছিল তা শ্রবণ কর। জয়ন্ত ছিলেন ইন্দ্রের পুত্র এবং তিনি জানকীদেবীর শাপে মোহিত হয়ে গিয়েছিলেন। এইজন্য তিনি কলিযুগে জন্মগ্রহণ করেন এবং তিনি স্বর্ণবতীর গর্ভে জন্মলাভ করেন।।১।।
চৈত্রমাসের শুক্লপক্ষের নবমী তিথি এবং গুরুবারে মধ্যাহ্নে চন্দ্রমাতুল্য মুখমন্ডল সদৃশ, রাজলক্ষণে লক্ষিত জয়ন্ত জন্মগ্রহণ করেন।।২।
সেই শ্রেষ্ঠ সূত জন্মানোর পর সেই সময় ঋষিগণের সঙ্গে দেবগণ বলেছিলেন, ইনি ইন্দ্রপুত্র জয়ন্ত ‘ইন্দুল’ নামে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেছেন। সেই থেকে তিনি ‘ইন্দুল’ নামে পরিচিত হলেন।।৩।
আহ্লাদ প্রসন্নচিত্তে তার জাত কর্মাদি সংস্কার করে ব্রাহ্মণগণকে স্বর্ণধেনু, অশ্ব এবং হাতি দান করেছিলেন।।৪।।
ইন্দুলে তনয়ে জাতে দ্বিমাসান্তে মহীবলে। যোগসিংহস্তদাগত্য স্বর্ণবত্যে দদৌ ধনম্।।৫।। নেত্ৰসিংহ সুতং দৃষ্ট্বা মলনা সেতহ সংযুতা। পপ্ৰচ্ছ কুশলপ্রশ্নং ভোজয়িত্বা বিধানতঃ।।৬।। শতবৃন্দাশ্চ নর্তক্যো নানারোগেন সংযুতাঃ। তত্ৰাগত্যৈব নন্তুর্যত্র ভূপসুতঃ স্থিতঃ।।৭।। সপ্তরাত্রমুষিত্বা স যোগসিংহো যযৌ গৃহম্। যন্মাসে চ সুতে জাতে দেবেন্দ্রঃ স্নেহকাতরঃ।।৮।। পুত্রস্নেহেন তং পুত্রংস জহার স্বমায়য়া। সংহৃত্য বালকং শ্রেষ্ঠ ফিদ্ৰান্যে চু সমপয়ৎ।।৯।। স্নেহাপ্লুতা শচী দেবী স্বস্তনৌ তমপায়য়ৎ। দেব্যা দুগ্ধং স বৈ পীত্বা ষোড়শাব্দাসমোভবৎ।।১০।। ইন্দুং পীযূষভবনং গৃহাতি পুষা স্বয়ম্। অতঃ স ইন্দুলো নাম জয়ন্তশ্চ প্রকীর্তিতঃ।। স বালঃ স্বপিতুর্বিদ্যাং পঠিত্বা শ্রেষ্ঠতামগাৎ।। ১১।।
পুত্র জন্মের দুইমাস পরে যোগসিংহ এসে স্বর্ণবতীকে ধনদান করেছিলেন।।৫।।
নেত্রসিংহের পুত্রকে দেখে স্নেহার্দ্র চিত্তে আহ্লাদ তার কুশল পৃচ্ছা করেছিলেন এবং যথাবিধানে তাকে ভোজন করিয়েছিলেন। একশত নর্তকী নানা প্রকার রাগযুক্ত হয়ে রাজপুত্রের নিকট নৃত্যকলা প্রদর্শন করেছিলেন।।৬-৭।।
সপ্তরাত্রি সেখানে অতিবাহিত করে যোগসিংহ নিজগৃহে ফিরে যান। ইন্দুলের বয়স ছয়মাস হলে দেবেন্দ্র পুত্র স্নেহে কাতর হয়ে মায়া করে পুত্রকে হরণ করলেন এবং সেই শ্রেষ্ঠ বালককে ইন্দ্রাণীর কাছে সমর্পণ করলেন।।৮-৯।।
স্নেহপ্লুতা হয়ে শচী তাকে স্তনদান করলেন। সেই বালক স্তনদুগ্ধপান করে ষোড়শবয়ের বালকের ন্যায় পরিপুষ্ট হয়ে গেল এবং সে নিজ দেহে পীযূষ ভবনস্থিত ইন্দুকে গ্রহণ করেছিলেন–এই কারণে তিনি ‘ইন্দুল’ নামে খ্যাত হন। সেই বালক পিতার নিকট বিদ্যাগ্রহণ করে শ্রেষ্ঠতা প্রাপ্ত হন।।১১।।
বিনষ্টে বালকে তস্মিন্ দেবী স্বর্ণবতী তদা। রুরোদোচ্চৈস্তেদা দীনা হা পুত্র ক্ব গতোহসি ভোঃ।।১২ জ্ঞাত্বাহ্লাদং কোলাহলো জাতো রুদ্রতাং চ নূনাং মুনে।।১৩।। আহ্লাদঃ স্বকুলৈঃ সার্দ্ধং নিরাহারো যতেন্দ্রিয়ঃ। শারদাং শরণং প্রাপ্তস্ত্রিরাত্রং তত্র চাবসৎ।।১৪।। তদা তুষ্টা স্বয়ং দেবী বাগুবাচাশরীরিনী। হে পত্ৰ স্বকুলৈ সার্দ্ধং মা শুচস্তং সুতং প্রতি।।১৫।। ইন্দ্ৰ পুত্রো জয়ন্তশ্চ স্বর্গলোকমুপাগতঃ। দিব্যবিদ্যাং পঠিত্বা স ত্রিবর্ষান্তে গমিষ্যতি।।১৬।। মাবত্ত্বং ভূতলেহবাসীস্তাবৎস ভূতলে বসেৎ। তৎপশ্চাৎস্বর্গতি প্রাপ্য জয়ন্তো হি ভবিষ্যতি।।১৭।। ইত্যুক্তে বচনে দেব্যা নিশেশাকাস্তে তদাভবন্। দশগ্রামপুরং প্রাপ্য সমূর্ষজ্ঞান তৎপরাঃ।।১৮।।
দেবী স্বর্ণবর্তী পুত্রের শোকে অত্যন্ত দীনচিত্তে উচ্চৈস্বরে “হা পুত্র, তুমি কোথায় চলে গেলে” এরূপ বলে রোদন করতে লাগলেন।।১২।।
হে মুনি, দশগ্রামের সমস্ত মানুষ তথা আহ্লাদও পুত্রশোকে রোদন করতে লাগলেন। এই ভাবে সেখানে মানুষের অত্যন্ত রৌদ্ররূপ উৎপন্ন হল, আহ্লাদ নিজকুলের লোকজনের সাথে নিরাহার ও যতেন্দ্রিয় হয়ে শারদা দেবীর শরণে চলে গেলেন এবং তথায় তিনরাত্রি নিবাস করতে লাগলেন।।১৩-১৪।।
দেবী শারদা প্রসন্নচিত্তে অশরীরীবাণীতে বললেন–হে পুত্ৰ, তুমি নিজ কুলের লোকের সঙ্গে পুত্রের জন্য শোক কোরোনা। তোমার পুত্র হল ইন্দ্ৰপুত্র জয়ন্ত, সে এই সময় স্বর্গলোকে রয়েছে। সেখানে দিব্য বিদ্যা পাঠ করে তিন বৎসরের মধ্যে এখানে ফিরে আসবে। এরপর থেকে তুমি ভূতলে থাকবে ততদিন তোমার পুত্রত থাকবে। অনন্তর সে স্বর্গলোক প্রাপ্ত হয়ে পুনরায় ইন্দ্রপুত্র জয়ন্তরূপে বাস করবে।। ১৫-১৭।।
শারদাদেবীর এইরূপ বচনে সকলে শোকরহিত হয়ে দশগ্রামপুরে ফিরে এসে জ্ঞান তৎপর হয়ে বাস করতে লাগলেন।।১৮।।