।। জয়চন্দ্র তথা পৃথ্বীরাজ কী উৎপত্তি।।
ইন্দ্ৰ প্রস্থেহনং গোপালোনপত্যশ্চ মহীপতি। পুত্রার্থং কারয়ামাস শৈবং যজ্ঞং বিধানতঃ।।১।। কন্যকে চতদা জাতে শিবভাগ প্রসাদতঃ। চন্দ্ৰ কান্তিশ্চ জ্যেষ্ঠা বৈ দ্বিতীয়া কীর্তিমালিনী।। ২।। কান্যক জ্বাধিপায়ৈব চন্দ্রকান্তি পিতাদদৎ। দেবপালায় শুদ্ধায় রাষ্ট্রপালান্বয়ায় চ।।৩।। সোমেশ্বরায় ভূপায় তপহানিকুলায় তু। অজমেরাধিপায়ৈব তয়া বৈ কীর্তিমালিনীম্।।৪।। জয়শর্মা দ্বিজঃ কশ্চিৎসমাধিস্তো হিমালয়ে। দৃষ্ট্বা ভূপোৎস্বং রম্যং রাজ্যার্থং স্বমেনোহ দধৎ।।৫।। ত্যক্ত্বা দেহং স শুদ্ধাত্মা চন্দ্ৰকান্ত্যাঃ সুতোভবৎ। জয়চন্দ্ৰ ইতি খ্যাত বাহুশালী জিতেন্দ্রিয়ঃ। রত্নভানুশ্চ সংজজ্ঞে শূরস্তস্যানুজো বলী।।৬।। স জিত্বা গৌড়বংগাদীন্ মরুদেশান্ মদোকটান্। দন্ড্যান্ কৃত্বা গৃহং প্রাপ্য ভ্রাত্রাজ্ঞাতৎপরোহ ভবৎ।।৭। গংগাসিংহস্য ভগিনী নাম্না বীরবর্তী শুভা। রত্নভানোশ্চ মহিষী বভূব বরবর্ণিনী।।৮।। নকুলাংশস্তদা ভূমৌ তস্যাং জাতঃ শিবাজ্ঞয়া। লক্ষণো নাম বলবান্ খংগযুদ্ধ বিশারদঃ। স সপ্তাব্দান্তরে প্রাপ্তে পিতুগুল্যো বভূব হ।।৯।। ত্রয়শ্চ কীর্তিমালিন্যাং পুত্রা জাতা মদোৎকচাঃ। ধুন্ধকারশ্চ প্রথমস্তত কৃষ্ণ কুমারকঃ। পৃথিবীরাজ এবাসৌ ততোনুজ ইতি স্মৃতঃ।।১০।।
।। জয়চন্দ্র তথা পৃথ্বিরাজের উৎপত্তি।।
এই অধ্যায়ে জয়চন্দ্র তথা পৃথ্বিরাজের উৎপত্তির কথা তথা আর্যদেশ সম দুইভাগে বিভক্তির কথা বর্ণিত হয়েছে।
সূতজী বললেন — ইন্দ্রপ্রস্থে অনঙ্গ পাল রাজা সন্তানহীন ছিলেন। তিনি পুত্র প্রাপ্তির জন্য শৈবযজ্ঞ করেন। শিবপ্রসাদে তাঁর দুই কন্যা সন্তান উৎপন্ন হয়। তাদের মধ্যে জ্যেষ্ঠা চন্দ্রকান্তি ও কনিষ্ঠা কীর্তিমালিনী। পিতা চন্ডকান্তিকে কান্যকুব্জ রাজ্য প্রদান করেন। কীর্তিমালিনীকে রাষ্ট্রপাল বংশের অজমেঢাধীপ সোমেশ্বর রাজাকে দান করলেন। সেই সময় জয়শর্মা নামক এক ব্রাহ্মণ হিমালয়ে সমাধিস্থিত ছিলেন। তিনি পরম রম্য এই ভূপকে দেখে রাজ্যপ্রাপ্তি কামনা করেন। তিনি নিজদেহত্যাগ করে শুদ্ধাত্থা চন্দ্রকান্তির পুত্ররূপে জাত হন। তিনি জয়চন্দ্র নামে খ্যাত হন। তার অনুজ রত্নভানু নামে পরিচিত। তিনি গৌড়বঙ্গাদি মদোৎকট মরুদেশ জয় করে তাদের দন্ডিত করে গৃহে এসে ভ্রাতার আদেশ পালনে তৎপর ছিলেন।। ১-৭।।
গঙ্গাসিংহ ভগিনী বীরবতীকে রত্নভানু বিবাহ করেন। তিনি ৭বছর পর পিতৃতুল্য হন। কীর্তিমালিনী তিনপুত্র যথা ধুন্ধুকার, কৃষ্ণকুমার ও পৃথ্বীরাজের জন্ম দেন। দ্বাদশবর্ষে পদার্পণ করলে তিনি সিংহের সঙেগে খেলা করতেন।
অনঙ্গপাল তাকে রাজ্য প্রদান করেন ও হিমালয়ে গিয়ে ধ্যানপরায়ণ হন। মথুরাপুরে ধুন্ধুকার ও অজমেঢ়ে তার ভাই রাজা হন। তিনি নীতিবিদ্ ছিলেন। তাঁরা পিতৃ আজ্ঞা পালনে তৎপর ছিলেন। প্রদ্যোত ও বিদ্যোত চন্দ্রবংশে দ্বাদশাব্দবয়ঃ প্রাপ্ত সিংহলেঘস্ততোহ ভবৎ। শ্ৰুত্বাচানং গপালশ্চ তস্থৈ রাজ্যং স্বয়ং দদৌ।। ১১।। মথুরায়াং ধুন্ধকায়োহজমেরে ততোনুজঃ। রাজাবভূবনীতিজ্ঞস্তৌ সুতৌ পিতুরাজ্ঞয়া।।১২।। প্রদ্যোতশ্চৈব বিদ্যোতঃ ক্ষত্রিয়ৌ চন্দ্ৰবংশজৌ। মন্ত্রিণোতস্য ভূপস্য বলবন্তৌ মদোৎ কচৌ।।১৩।। প্রদ্যোততনয়ো জাতো নাম্না পরিমলো বলী। লক্ষসেনাধিপঃ সো হি তেন রাজ্ঞৈব সংস্কৃতঃ।।১৪। বিদ্যোতাম্ভীষ্মসিংহশ্চ গজসেনাধিপোহ ভবৎ। স্বৰ্গতেহ নংপালে তু ভূমিরাজো মহীপতিঃ।।১৫।। দৃষ্ট্বা তান্বিপ্রিয়ান্ সর্বানিজ রাজ্যান্নিরাকরোৎ। প্রদ্যোতাদ্যাশ্চ চত্বারঃ স্বশুরেদ্বিশর্তে যুত্তাঃ।।১৬।। কান্যকুব্জ পুরং প্রাপ্য জয়চন্দ্রমবর্ণনম্। জয়চন্দ্র মহীপাল ত্বন্মাতৃস্ব সৃজো নৃপঃ।।১৭।। মাতামহস্যতে রাজ্যং প্রাপ্তবান্নিভয়ো বলী। ন্যায়েন কথিতোহ স্থাভিরর্দ্ধরাজ্যং হিতে স্মৃতম্।।১৮। স্বরাজ্যং কথং ভুংক্ষে শ্রুত্বা হি তেন নিরাকৃতাঃ। ভবন্তং শরণং প্রাপ্ত যথাযোগ্যং তথা কুরু।।১৯।। ইতি শ্রুত্বা মহীপালোজয়চন্দ্রং উবাচ তান্। অশ্বসেন্যে মদীয়ে চাধিকা তে সুতো ভবেৎ।। ২০।। নাম্না পরিমলঃ শূরত্বং মন্থন্ত্রী ভবাধুনা। বিদ্যোতশ তথা মনত্রী গজ সৈন্যে হি ভীস্মকঃ।।২১।। বৃত্ত্যর্থে চ ময়া বো বৈ পুরী দত্তা মহাবতী। মহীপতেশ্চ ভূপস্য নগরী সা প্রিয়ং করী।।২২।। ইতি শ্রুত্বা তুতে সর্বে তথা মত্বা মুমো দিরে। মহীপতিস্তু বলবাদুখাৎ সন্ত্যজ্য তাং পুরীম্।।২৩।। কৃত্বৌধীযাং পুরীমন্যাং তত্র বাসমকারয়ৎ। অগমা মলনা চৈব ভগিন্যৌ তস্য চোত্তমে।।২৪।। অগমা ভূমিরাজায় চান্যা পরিমলায়সা। দত্তা ভ্রাতা বিদানেন পরমানন্দ মাপতুঃ।।২৫।। বিবাহান্তে চ ভূরাজা দুর্গমন্যকারয়ৎ। কৃত্বা চ নগরীং রম্যাং চতুৰ্বননিবাসিনীম্।।২৬।। দেবলী সুমূহূর্তেন দুর্গদ্বারে সুরোপিতা। গতা সা যোজনাস্তে বৈ বৃদ্ধিরূপা সুকলিতঃ।।২৭।।
জাত ও ধুন্ধুকারদের মন্ত্রী হন। প্রদ্যোতের পুত্র পরিমল একলক্ষ সেনার অধিপতি ছিলেন। বিদ্যেত ভীষ্ম সিংহ নামক পুত্রের জনক হন। তিনি গজপতি ছিলেন। রাজা অনঙ্গপালের মৃত্যুর পর ভূমি নামক রাজা সিংহাসনে বসেন। তিনি নিজের অপ্রিয় লোকেদের সিংহাসন চ্যুত করেন। প্রদ্যোতাদি চারজন দুইশত নৃপতিকে নিয়ে রাজা জয়চন্দ্রকে বললেন — তোমার মাতৃস্বসা পুত্ৰ পৃথ্বিরাজ তোমার মাতামহের রাজ্যপ্রাপ্ত করেছে। এর অর্ধভাগ তোমার। আমরা তোমাকে এই ন্যায় কথা বললাম। একথা শ্রবণ করে জয়চন্দ্র বললেন- আমার অশ্বারোহী সেনার তাধিপতি হবে তোমার পুত্র। বীর পরিমল আমার মন্ত্রী হোক। আর বিদ্যোত পুত্র মন্ত্রী হলে ভীষ্মক গজসেনার অধিপতি তিনি হন। আপনাদের আমি মহাবর্তী পুরী প্রদান করলাম। তারা একথা শ্রবণ করে প্রসন্ন হল। মহাপতির বলবান ছিলেন কিন্তু তিনি অবীর্য হয়ে দুঃখের সঙ্গে সেই পুরী ত্যাগ করলেন। তাঁর অগমা ও মলিনা নামক দুই ভগিনী ছিল। তিনি অগমাকে ভূমিরাজ ও মলিনাকে পরিমল রাজার জন্য দান করলেন। বিবাহান্তে ভূরাজা অন্য দুর্গ নির্মাণ করলেন। সেখানে চারবর্ণের মনুষ্য বাস করতে লাগল। শুভ মুহূর্তে দুর্গদারে দেহলী নগরীর প্রতিষ্ঠা হল। তা পরবর্তী সময়ে যোজনান্ত বিস্মৃত হল।।৮-২৭।।
বিস্থিতঃ স নৃপো ভূত্বা দেহলীনাম চাকরোৎ। দেহলী গ্রাম ইতি চ প্রসিদ্ধোহ ভূন্ নৃপাজ্ঞয়া।।২৮।। ত্রিবর্যান্তে চ ভো বিপ্রা জয়চন্দ্রো মহীপতিঃ। লক্ষযোড়শ সৈন্যাচ্যস্তত্র প্রত্ৰমচোদয়ৎ।।২৯।। কিমর্থং পৃথিবী রাজ মদ্দায়ং মেন দত্তবান্। মাতামহস্য বৈ দায়ং চা দ্ধে মে চ সমৰ্পয়।।৩০।। নো চেচ্ছস্ত্ৰকবি নৈঃ ক্ষয়ং মাস্যন্তি সৈনিকাঃ ইতি জ্ঞাত্বা মহীরাজো বিংশল্লক্ষাধিপো বলী।।৩১।। দূতং বৈ প্রেযয়ামাস রাজ রাজো মদোৎকটঃ। জয় চন্দ্ৰ মহীপাল সাধানাং শৃণুম্ব তৎ।।৩২। যদা নিরাং কৃতা ধূর্তা ময়ী তে চন্দ্ৰবংশিনঃ। ততঃ প্রভৃতি সেনাগে বিশল্লক্ষং সমাহৃতম্।।৩৩।। ত্বয়া ষোড়শলক্ষং চ যুদ্ধসৈন্যং সমাহৃতম্। সর্ব বৈ ভারতে ভূপা দন্ডযোগ্যাসচ মে সদা।।৩৪।। ভবান্ন দন্ড্যো বলাবান্ করং মে দাতুমর্হন্তি। নৌ চেন্মৎ কঠিনৈ বানৈঃ ক্ষয়ং সৈনিকাঃ।।৩৫।। ইতি জ্ঞাত্বা তয়ো ধৌরং বৈরং চা সীন মহীতলে। ভূমিরাজশ্চ বলবাঞ্জয় চন্দ্ৰভয়াদিতঃ।।৩৬।। জয়চন্দ্রশ্চ বলবান্ পৃথিবীর রাজ ভীরুকঃ। জয়চন্দ্রশ্চার্যদেশমদ্ধ রাষ্ট্র মকলায়ৎ।।৩৭।। পৃথিবীরাজ এবাসৌ তদার্দ্ধং রাষ্ট্রমানয়ৎ। এবং জাত্তং তয়োর্বৈর মগ্নি বংশ প্রণাশনম্।।৩৮।।
রাজা বিস্মিত হয়ে তার নাম দেহলী রাখলেন। তিনবর্ষ পরে ১৬লক্ষ সেনা যুক্ত জয়চন্দ্র পৃথ্বীরাজকে পত্র প্রেরণ করলেন। তিনি বললেন–আমার মাতামহের অর্ধভাগ রাজ্য আমার, যেটি তুমি অধিকার করে আছ। সেই ভাগ আমাকে প্রদান কর। যদি তুমি না দাও তাহলে কঠিন দ্বারা তোমার সৈনিকদের হত্যা করব। রাজা পৃথ্বীরাজ উত্তরে বললেন–হে মহীপাল জয়চন্দ্ৰ, তুমি সাবধান থাকো। কারণ আমি ২০লক্ষ সেনার অধিপতি যা তোমার ১৬লক্ষ সেনার সঙ্গে যুদ্ধ করতে সক্ষম। ভারতের সমস্ত নৃপতি আমার দন্ডযোগ্য কিন্তু আমি কদাপি তোমাকে দন্ড দিতে চাইনি। আপনি বলবান্ হলেও আমাকে করদানের যোগ্য। যদি তা না হয় তাহলে আমার সৈন্য তোমার বলক্ষয় করবে। এইভাবে তাদের মধ্যে শখ্যতা তৈরী হল, আর জয়চন্দ্র সদা ভীত থাকত। পৃথ্বীরাজ জয়চন্দ্রের সৃষ্ট অর্ধভাগ রাজ্য গ্রহণ করলে তাদের মধ্যে বৈরীতা তৈরী হয় তা অগ্নিবংশকে বিনাশ করে।।২৮-৩৮।।