ছেলেটা কাঁদছে

ছেলেটা কাঁদছে

গজপতি হাট বসিয়েছে তেজোময়ীর জমিতে। গেল হপ্তায় দু-দিনই খুব জমেছিল। ভোরবেলা থেকে গরুর গাড়ি, রিক্সা, সাইকেল ভ্যানে চারদিক ছয়লাপ। জিনিস পড়তে পায়নি। সন্ধের আগেই হাট সাফ। তাও ছাউনিগুলো এখনও সব তৈরি হয়নি, জমি উঁচু করতে যে কাদা মাটি ফেলা হয়েছিল তা এখনও ভসভসে। তাতে হাজার পায়ের ছাপ রোদে শুকিয়ে ঢেউ–ঢেউ হয়ে আছে। দুপুরবেলা জনমনিষ্যি নেই। এক হাতে মাথায় ছাতা, অন্য হাতে হ্যান্ডেল ধরে সাইকেল চালিয়ে নাড়াল থেকে ফেরার পথে গজপতি ফাঁকা হাটটার সামনে এসে নেমে পড়ল। তার মনটা ভালো নেই। লম্বা ছাউনি মোট চোদ্দোখানা, ছোট গোটা দশেক। খড়, বাঁশ আর কাঠের খুঁটির এইসব চালা পয়লা ঝড়েই উড়ে যাবে। গজপতির খুব ইচ্ছে, চালার মেঝেগুলোইট দিয়ে বাঁধিয়ে দেয়। খরচের ভয় তেমন নেই। প্রথম ছ’মাসটা খাজনা না নিলেও তারপর থেকে হাটের আয় ভালোই হবে। পুষিয়ে যাবে। কিন্তু মুশকিল হল, জমিটার একজন চার আনির হিস্যাদার আছে। সে যে কবে এসে উদয় হয়।

ঠেকা দেওয়ার কাঠিতে সাইকেলটা দাঁড় করিয়ে এই রোদে গজপতি জমিতে নেমে পড়ল। দুটো চালা এর মধ্যেই একটু হেলে পড়েছে। কয়েকটার চালের খড় টেনে নিয়ে গেছে কেউ। এসব অবশ্য হবেই। গজপতি ঘুরে-ঘুরে পায়ের ছাপই দেখে। স্বৰ্গত তেজোময়ীর এই হাটে মানুষ আসছে। মানুষ যেখানে আসে সেটাই তো তীর্থ।

রাজবাড়ির পিলখানায় বহুকাল আগে একসঙ্গে চোদ্দোটা হাতি দেখেছিল গজপতি। শুড় দোলাচ্ছে, শরীর দোলাচ্ছে। একসঙ্গে চোদ্দো হাতি। কী যে সুন্দর, কী যে অবাক–করা দৃশ্য। ইচ্ছে ছিল নিজে একটা পিলখানা বানাবে, ঠিক ওই রকম চোদ্দোটা হাতি থাকবে তাতে। সারাদিন দুলবে আর দুলবে। ছেলেবেলায় মনের জমিতে কত আগাছা জন্মায়। বড় হয়ে আগাছা নিড়িয়ে বিষয় বুদ্ধির বীজ বুনে দিতে হয়। এই হাট বসানোর মধ্যে গজপতির বিষয়বুদ্ধিটাই সবাই দেখবে। তা দেখুক। রাজবাড়ির পিলখানা খালি করে সেই স্বপ্নের হাতিরা চলে গেছে। তবু এখনও চোখ বুঝলেই সেই চোদ্দো হাতির ধীর লয়ে নাচের দোল যেমন দেখতে পায় গজপতি, তেমনি এই হাটটাকেও সে দেখতে পেত। তার জমি–জিরেত নেই, পয়সাকড়ি নেই। বলতে কি একটা বয়েস পর্যন্ত সে তেজোময়ীর পোষা কুকুরটার মতোই ছিল। জামবনিতে নিজের পৈতৃক বাড়ির রাবণের সংসারে একটা রোগা বউ আর একটা বোকাসোকা ছেলে কষ্টে–সৃষ্টে বেঁচেছিল মাত্র। বিয়ের বছর দুইয়ের মধ্যেই তেজোময়ী বেঁচে থাকতে বউ ছেলের কাছে ফিরে যায়নি। বউ আসতে চায় না। বোকা ছেলেটাকে গাঁসুষ্টু ছেলেপুলেরা খ্যাপায়। নষ্ট মেয়েমানুষ বলে তেজোময়ীর নিজেরও দুঃখ ছিল। অনুতাপ ছিল। সেই জ্বালা–পোড়ায় বুড়ো হওয়ার আগেই মরে গেল। মরার সময়েও ভারী সুন্দর দেখতে ছিল তেজোময়ী। আর তেজও কিছু কম ছিল না। সকলের নাকের ডগাতেই বিধবা হয়ে গজপতির সঙ্গে বাস করত। কেউ কিছু বলতে সাহস পায়নি। এমনকী ইস্কুলের হেডমিসট্রেস পদ থেকে তাকে সরানোর কথাও ওঠেনি কখনও।

তেজোময়ীর স্বপ্ন ছিল ওই ইস্কুলটা। দিন রাত তার ওই ছিল ধ্যান–জ্ঞান। গজপতি তেজোময়ীর কাজে লাগত বটে, কিন্তু তার জীবনের কোনও অংশে সে ছিল না। গজপতি ভাবে, সে না হয়ে অন্য কেউ হলেও বোধহয় তেজোময়ীর চলে যেত। শুধু জ্যোৎস্না ফুটলে তেজোময়ী। বারান্দার ইজিচেয়ারে বসত, সিঁড়িতে বসে বাঁশি বাজাত গজপতি। মাঝে-মাঝে তখন সে তেজোময়ীর চোখে জল চিকচিক করতে দেখেছে। এ ছাড়া আর কোনও দুর্বলতা ছিল না। নামের সঙ্গে স্বভাবের এমন ছিল মিল। আর গজপতির উলটো। সেই চোদ্দটা হাতি গজপতির সাত জন্মেও হওয়ার নয়, তবু ভারী নামটা বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। তবে হাতি না হোক একটা হাট বসানোর স্বপ্ন বহুদিন হল দেখছে গজপতি। মেলা লোক জড়ো হয়, বিকিকিনি করে, মেলামেশা হয়, হাটের এই চরিত্রটা বড় ভালো লাগে তার। হাটবাজারের মতো জিনিস নেই। কিন্তু এখন এই খাঁখাঁ দুপুরে হাটের চালার নীচে বসে হাট বসানোর অর্থহীনতাই টের পায় গজপতি। মানুষ চলে যায়। তার পায়ের ছাপও চিরকাল থাকে না। তবে থাকে কী? দু-বিঘে জমি, কিছু নগদ টাকা গজপতি পেল তেজোময়ী মরার পর, তাই দিয়ে এই হাট। কিন্তু চার আনার হিস্যাদারটা যে কে তা বুঝে উঠতে পারছে না। দু-খানা চিঠি দিয়েও জবাব মেলেনি। বেঁচে থাকতে তেজোময়ীর মুখ থেকেও নামটা কখনও ফসকায়নি। তাহলে লোকটা কে? এই চিন্তায় গজপতির চুল পাকতে লেগেছে, রাতে দুঃস্বপ্ন দেখছে, ভালো হজম হচ্ছে না।

হাট বসানো বড় সহজ কথা নয়। জমির দখল পেতে বিস্তর ঝামেলা যাচ্ছে। এখনও সত্যিকারের দখল পায়নি। হাট বসানোর অনুমতি আদায় করা, ঢোল শহরত করে লোককে জানান দেওয়া, ব্যাপারীদের ঠেলেঠুলে নিয়ে আসা, এই করতে গিয়ে গজপতির কণ্ঠমণি বেরিয়ে পড়েছে। তবু একটু খুঁত থেকে গেল। সে ওই যোগেন ঘোষ, চার আনার হিস্যাদার। মনে-মনে। তাকে ছকে ফেলেছে গজপতি, দৈত্যের মতো বিকট চেহারা। রোমশ। রেগে গেলে বিপুল দুই হাতে বুক চাপড়ায়। চোখের দৃষ্টি খুনির মতো। হয়তো সত্যিকারের খুনিই। গজপতি কাল রাতেও স্বপ্ন দেখেছে, যোগেন ঘোষ এসে তার গলা ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বলছে, চার আনা মানে? পুরো ষোলো আনাই আমার। তুই তো তেজোময়ীর কেপ্ট ছিলি, তোর আবার হিস্যা কীসের? ভয়ের কথা হল, তেজোময়ীর পদবিও ছিল ঘোষ। যোগেনের সঙ্গে তার রক্তের সম্পর্ক থেকে থাকলে কোর্ট–কাছারিতে অনেক দূর গড়াবে। অন্যদিকেও খবর সুখের নয়। নাড়াল থেকে জামবনি কাছে হয়। সরাসরি জামবনিতে গিয়ে ডাকাবুকো ভাইপোদের পাল্লায় পড়তে সাহস হয়নি বলে নাড়ালে ঘাপটি মেরে বসে কাল থেকে বউ ছেলের খোঁজ করছিল গজপতি। নাড়ালের হাবু নস্কর বন্ধু লোক। মুরুব্বিও বটে। তাকে ধরে খোঁজ নিয়ে জেনেছে, ভাইপোরা খুব সেয়ানা হয়েছে। কাকার খবরও তারা রাখে। তবে ফাঁকা গাঁয়ে ঢুকলেই ঠ্যাং ভেঙে দেবে। বউকেও খবর পাঠিয়েছিল গজপতি। কিন্তু বউ হারুকে বলেছে, সেই মানুষটার সঙ্গে এতকাল যখন ঘর করিনি তখন আর শেষ বয়সে করতে যাব কেন? এ বাড়িতে ঝিয়ের মতো খাটছি, তাই খাটব। গজপতির বোকা ছেলেটা সে বাড়িতে গরু–টরু রাখে। সে নাকি ভারী বিয়েপাগলা। গাঁয়ের লোকেরা তার পিছুতে লাগে অহরহ। ভাবলে কষ্ট হয়। বোকা ছেলেটার পিছুতে লাগে কেন সবাই? ছাতাটা মুড়ে একটা চালার নীচে বসে আছে গজপতি। বৈশাখের রোদে আদিগন্ত জ্বলছে। বড্ড খরা। তেজোময়ীর কোনও ছেলেপুলে ছিল না। কথাটা ভাবতে-ভাবতে সে একটা ময়লা ন্যাতার মতো রুমাল বের করে মুখের ঘাম আর ধুলো মুছল। গলাটা শুকিয়ে আছে তেষ্টায়। হাটে জলের বন্দোবস্ত নেই . করতে হবে। নইলে এই মাঠের হাট অকালে পাততাড়ি গোটাবে। গেল হপ্তায় দু দিনই হাটের লোক আশেপাশের পুকুর বা টিউবয়েলে জল খেতে গিয়ে পড়শিদের ঢিল আর গালমন্দ খেয়েছে।

হবে, সবই হবে। মস্ত ইঁদারা বা পুকুর, টিপকল। মাঠটা ছেয়ে যাবে দোচালায়। এত বড় হাট কেউ দেখেনি। পূর্বধারে একটা গোহাটা করারও ইচ্ছে আছে গজপতির। শিবরাত্রিতে মেলা বসাবে! কে জানে, তেজোময়ী খুব শিবরাত্রি করত। নীচু চালা থেকে একটা গরু খড় টেনে খাচ্ছিল। সেটাকে তাড়িয়ে গজপতি ফের ছাতা মাথায় সাইকেলে চাপল।

বাড়িটাও তেজোময়ীর। উইল অনুসারে এখন গজপতির। তবে সর্বত্রই ওই এক অদেখা চার আনার হিস্যাদার। বাড়িতে দুটো মাত্র ঘর। একটু বারান্দা। ভিতরে একটু উঠোন। উঠোনে পাতকুয়ো। এর চার আনা ভাগাভাগি কী করে যে হবে তা মাথায় আসে না গজপতির। আর ভাগাভাগিই যে হবে তার কোনও ঠিক নেই। দৈত্য যোগেন ঘোষ এসে যদি তাকে ঘাড় ধরে। ভিটে–ছাড়া করে তাহলেও তো কেউ গজপতির পক্ষ নেবে না। তেজোময়ীর জারকে এই অঞ্চলের লোক ভালো চোখে দেখে না। তারা ঠিক যোগেনের পক্ষ নেবে। গজপতি পাতকোর ঠান্ডা জলে স্নান করে ভাত বেঁধে খেল। একটু গড়িয়ে নিল। সন্ধেবেলা মস্ত চাঁদ উঠলে পর সিঁড়িতে বসে বাঁশি ধরল গজপতি। বারান্দার ইজিচেয়ারে তেজোময়ীও এসে বসল। চোখ বুজে বাঁশির মধ্যে বুকের সবটুকু বাতাস উজাড় করে দিতে-দিতে স্পষ্টই টের পায় সে তেজোময়ীকে। এত লোক থাকতে ওই সুন্দর মেয়েটা যে কেন গজপতিকেই তুলে এনেছিল তা কখনও জেনে নেওয়া হয়নি। সত্যি বটে, বয়সকালে গজপতির চেহারাটা ছিল কেষ্টঠাকুরের মতো। মাজা রং। ঢুলুঢুলু চোখ। টলটলে মুখ। আর ছিল বাঁশি। কিন্তু শুধু এইটুকুতেই ভুলবার মানুষ তো তেজোময়ী ছিল না। তবে? জ্যোৎস্নাটা বড় ধাঁধাঁ করছে। গুলিয়ে যাচ্ছে সবকিছু। একটা বয়সের পর জ্যোৎস্নাটাও ভালো লাগে না বোধহয়। কিছুই তো আর থেমে নেই। সব পালটে যাচ্ছে। গজপতির কেষ্টঠাকুরের মতো চেহারাটা এখন শুকিয়ে হকি। বাঁশির দমেও আজকাল টানাটানি। তেজোময়ী নেই, খামোকা চাঁদটা জ্যোৎস্নার কেরানি দেখাচ্ছে। ভারী ছটফট করছে। মনটা। তার বোকা ছেলেটাকে কারা ঢিল মারে?

একটা রিক্সা এসে থেমে আছে সড়কে। এতক্ষণ লক্ষ করেনি গজপতি। একটা মোটা মতো লোক নেমে পয়সা দিচ্ছে এতক্ষণে। গজপতি চেয়ে রইল। লোকটা একটা বাক্স হাতে সোজা সামনে এসে বলল , বেশ বাজান তো মশাই। শুনতে ইচ্ছে করে।

গজপতি জ্যোৎস্নায় লোকটাকে ঠাহর করতে একদৃষ্টে চেয়েছিল।

লোকটা বলল , চিনবেন না। রাণীগঞ্জ থেকে আসছি চিঠি পেয়ে। আমার নামই যোগেন।

যেমন চমকাবার কথা তেমন চলকাল না গজপতি। বোধহয় যোগেন যে একদিন আসবেই তা বুঝতে পেরে মনটা ভিতরে-ভিতরে তৈরি ছিল। গজপতি ঠক করে উঠে পড়ে বলল , রাতে এখানেই খাবেন তো। ভাত চাপাই গে।

যোগেন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল , আর খাওয়া। তা চাপাবেন’খন। এই বুঝি বাড়ি? গজপতি বেশি কথায় গেল না। সত্যি বটে, যোগেনের চেহারাটা দত্যির মতো না হলেও দশাসই। তবে টপ করে গলা টিপে ধরার লোকও নয়। বয়স গজপতির কাছাকাছি, দু-চার বছর কম। লণ্ঠন নিয়ে ঘুরে-ঘুরে বাড়িটা দেখায় গজপতি।

ক’কাঠা জমি?

মোট তিন।

বেচলে কত পাওয়া যাবে?

হাজার দশ-পনেরো।

ধুস। তার সিকিভাগ আর কত হবে?

রাত্রে আলুর দম রাঁধল গজপতি। বেশ হল সেটা খেতে। যোগেন প্রথম দফা ভাত শেষ করে আরও দু-হাতা নিয়ে বলল , উনি ছিলেন আমার মা।

তেজোময়ী? গজপতি হাঁ।

সৎ মা। বাবার দ্বিতীয় পক্ষ।

তবে যে শুনি, তেজোময়ীর স্বামী অল্প বয়সে মারা যায়।

পঁয়ষটি আর বয়স কী? মরার বয়েস তো নয়।

তাহলে তেজোময়ীর সঙ্গে আপনার আত্মীয়তা তো বেশ ঘনিষ্ঠই বলতে হবে।

ঘনিষ্ঠ নয়? মা বলে কথা। বাপের বউ। এক মাস অশৌচ পা লোম কি এমনি–এমনি? না পেলে উপায় কী, বেঁচে থাকতে সম্পর্ক ছিল না মায়ের চরিত্রদোষের জন্য। তা বলে তো আর সমাজ ছাড়বে না। আপনারও শুনেছি বউ–বাচ্চা আছে।

গজপতি চুপ করে থাকে। যোগেন আর একবার আলুর দম চেয়ে নেয়। বলে, আমি অবশ্য মায়ের দোষ দেখি না। কাঁচা বয়সের বিধবা। অমন হতেই পারে। আপনি বাঁশিটাও বেশ ভালোই বাজান। গজপতি লজ্জা পায়। ভাত নাড়াচাড়া করে।

পরদিন সকালে যোগেনকে রডে বসিয়ে সাইকেল মেরে হাটে নিয়ে এল গজপতি।

এই সেই হাট, যার কথা বলছিলাম।

যোগেন খুব আলগোছে দেখছে। তেমন আগ্রহ প্রকাশ করছে না। শুধু বলল , নতুন। বসিয়েছেন বুঝি? চলছে কেমন?

খুব চলবে।

ভালো। চললেই হল।

এর নাম দিয়েছি তেজোময়ীর হাট, নামটা ভালো না?

মায়ের নামে হাট তার আর ভালোমন্দ কী।

হঠাৎ গজপতি যোগেনের হাতটা চেপে ধরে বলে, হাটটা যখন হয়েছে তখন থাক। তুলে দেবেন না। যোগেন তার ঘন জ তুলল, আমি কে? মোটে তো চার আনার হিস্যা।

রাণীগঞ্জে আপনি কী করেন?

অনেক কারবার ছিল মশাই। সব তুলে দিয়েছি। এখন একটু কয়লার বিজনেস টিমটিম করে চলেছে। লাখোপতি সব ঠিকাদার চারদিকে হাজার–হাজার টাকা ঘুস ফেলছে। আমি কুড়িয়ে বাড়িয়ে যা পাই।

তাহলে এসে এখানেই বরং জেঁকে বসুন।

আর আপনি?

আমার একটা কাজ আছে।

কী কাজ?

একটা ন্যালাখ্যাপা ছেলে আছে আমার। কাল খবর পেয়েছি ছেলেটার পেছনে নাকি গাঁয়ের ছেলেরা খুব লাগে। ঢিল–টিল মারে। সেই থেকে মনটা খুব বিগড়ে আছে। ন্যালাখ্যাপা ছেলেটাকে সবাই ঢিল মারবে কেন বলুন।

ঠিক কথাই তো।

তাই ভাবছি। গিয়ে ছেলেগুলোকে খুব কড়কে দেব।

তাই তো উচিত।

আর নিজের ছেলেটাকেও শেখাব, অন্যে ঢিল মারলে কি করে উলটে ঢিল মারতে হয়।

যোগেন সরল হাসি হেসে বলে, সেও তো উচিত কথাই।

গজপতি বলে, আর এইসব করতে করতেই বাকি জীবনটা চলে যাবে। কী বলেন?

খুব যাবে, খুব যাবে।

যাই তাহলে? পিলখানার সেই চোদ্দোটা হাতি স্বপ্নে মিলিয়ে গেছে কবে। তেজোময়ী নেই, যোগেন ঘোষও এসে গেল। বাঁশির দম ফুরিয়েছে। তবে আর কী? গজপতি সাইকেলে উঠে পড়ে। জামবনি অনেক দূর। সাইকেলের চাকায় তেমন হাওয়া নেই। মোড়ের দোকানে হাওয়া ভরে নেবে। ন্যালাখ্যাপা ছেলেটাকে বড় ঢিল মারছে ছেলেরা। গাছতলায় দাঁড়িয়ে ছেলেটা হয়তো “বাবা বাবা” বলে কাঁদছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *