ছায়ামানবী – তারাপ্রণব ব্রহ্মচারী
প্রত্যেকের মুখ থমথমে। চোখে ত্রাস, কথায় সংশয়। আমি এক অদ্ভুত পরিবেশে উপস্থিত হয়েছি। কাঙড়া আসার আগে ঘুরেছি অনেক জায়গায়, এমন আবহাওয়ার মধ্যে পড়িনি।
চতুর্দিকে সুন্দরের আগমন, সবুজে-সবুজে ছেয়ে গেছে। ফলে-ফুলে কী শোভা! বিধাতা রঙে-রূপে কী বাহারে ছবি এঁকেছেন না দেখলে চক্ষু সার্থক হয় না। কিন্তু কী দেখতে এসে কী শুনছি! এ যেন ‘শীতল বলিয়া ও-চঁ সেবিনু/ভানুর কিরণ দেখি…।’
কিছুক্ষণ আগে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। আকাশের কালো মেঘ কেটেছে, মানুষের মনের মেঘ তো কাটল না। ছেলে-বুড়ো—সবারই মনের। বাতাসে ঠান্ডা আমেজ, মানুষের নিশ্বাসে মধ্যাহ্ন সাহারার শুষ্ক উত্তাপ।
একটা মহাভয় পিছু-পিছু ঘুরছে সকলের। একজনের সন্দেহ অন্যজনের ওপর। বোধহয়, ওই-ই খুনের সাক্ষী, নয়তো ও নিজেই খুনি। বরুণা সত্যি-সত্যিই খুন হয়েছে, না আত্মঘাতী হয়েছে—এ নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট কারণ আছে। তবু সকলেরই ওই মনোভাব।
বরুণার মৃত্যুর ধরনটা কেমন-কেমন। শিব মন্দিরের পিছন দিকে ঢালু জায়গায়—খটখটে শুকনো কুণ্ডের ধারে ওর মৃতদেহটা পড়ে ছিল। দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন ছিল না। শরীরটা নীল হয়ে গেছে স্রেফ। পাশে ক’টা লাড্ডু পাওয়া গেছে। খানিকটা ঘুগনি—ব্রজেশ্বরীর প্রসাদ হলেও হতে পারে।
একটা অসম্ভব অবিশ্বাস্য ব্যাপার ঘটেছে। প্রসাদের ঘুগনিতে বিষ! ঘুগনির কাছে মুখ থুবড়ে মরে পড়ে আছে দুটো পাখি। একটা কুকুরকে নিয়ে আসা হল পরীক্ষা করে দেখার জন্য। কুকুরটা ঘুগনির মধ্যে যে মৃত্যু লুকিয়ে আছে, নিশ্বাস টেনে বুঝতে পেরে, মুখ ঠেকানো দূরের কথা—বিশ হাত পিছিয়ে গিয়ে আকাশের দিকে মুখে তুলে ভেউ-ভেউ করে মরণ-কান্না জুড়ে দিল।
ঘুগনিতে মরণ-বিষ কি বরুণা নিজে হাতে মিশিয়ে খেয়েছে, না কেউ মিশিয়ে খাইয়েছে? কত তল্লাশি চলেছে, হদিশ মিলছে না। দিন-সাতেক কেটে গেছে, তবুও না।
কেউ আর প্রাণভয়ে দেবীর প্রসাদ মুখে পুরছে না। মাথায় ঠেকিয়ে কপালে ঠেকিয়ে জল-ভরা কুণ্ডে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে।
আমার মনে হচ্ছে, দেবীর প্রসাদের বদনাম-ভীতি দেবী দূর করছেন না কেন নিজে! তিনি কি কেবল ছ-সাততলা পাথুরে মন্দিরের গর্ভে একটি শিলা-ই! শ্বেতচন্দনে চোখ-কান আঁকা বলে কি দেখতে-শুনতে পান না?
মুঘল আমলে মন্দির ধ্বংস হয়েছে কতবার। আবার গড়ে তোলা হয়েছে। শেষ ধ্বংসের প্রায় শ’চারেক বছর পর রাজা সংসারচাঁদ মহারাজা রণজিৎ সিংহের সাহায্যে গড়ে তুলেছিলেন আবার নতুন মন্দির। চোখ জুড়োনো মন্দির। মন্দিরের পেছনে ছোট্ট মন্দিরে শ্বেত পাথরের অষ্টভুজার মূর্তিটিও নয়ন-ভোলানো শিল্প। এসব পবিত্র পরিবেশের বাতাসেও খুনের বিভীষিকা, খুনের ত্রাস ভেসে বেড়াচ্ছে। পুজোর সময়—আরতির প্রদীপশিখায় ভক্তদের মন বসে না কারও। আকাশভাঙা দুশ্চিন্তা দাপাদাপি করে মাথায়। প্রাণ বাঁচাতে প্রাণ নিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরবে কখন!
পাণ্ডাদের মুখে শুনেছি, একান্নপীঠের মধ্যে পড়ে না এ-জায়গাটা। না পড়লেও এটা নাকি গুপ্তপীঠ। সে যাই হোক, বরুণার মৃত্যু নিয়ে যে একটা গোপন রহস্য এই সবুজ-পাহাড়ের মাটিতে কোথায় কোন মানুষের মধ্যে লুকোচুরি খেলে চলেছে—কেউ জানতে না পারলেও, মোটামুটি আঁচ করে নিচ্ছে এক-একটা দল। তাদের সন্দেহ এক-একজনের ওপর।
খুনির ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার কাজ চলছে তলায়-তলায়! যে-যার ধারণা অনুযায়ী লোককে খুনি ভেবে নিয়ে রাতের গভীরে দল বেঁধে চলেছে। মশালের আগুনে পুড়িয়ে মারবে। ধড় থেকে নামিয়ে দেবে মাথাটা তরোয়ালের ঘায়ে, বর্শায় হৃৎপিণ্ড এফোঁড়-ওফোঁড় করে ফেলবে নির্দয়ভাবে।
দেশের প্রায় প্রত্যেকেই বরুণাকে ভালোবেসেছে প্রাণ দিয়ে। বরুণা সব ঘরেরই মেয়ে যেন। ব্যথা বুকে চেপে হাসতে জানে। নিজের জমা দুঃখ উজাড় করে দিয়ে কারও মনের কোণে দুঃখ দিতে চায়নি কখনও।
স্বামী মারা যেতে জলভরা চোখে হেসে বলল, যাঁর জিনিস তিনি নিয়েছেন, উনি আমার নন, তাই রইলেন না। পুণ্যাত্মা মানুষ অভাগীর সংস্পর্শে থাকবেন কেন, বলো তোমরা?
একবছরের ছেলেটা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হাসছে। বরুণা ছেলের গাল টিপে দিয়ে জাতবেরাদারদের দিকে তাকিয়ে বলল, এর জন্যে থাকতে হবে আমায়। চোখ দুটো ঠিক ওনার। একে বড্ড ভালোবাসতেন উনি।
মাস-ছয়েক যেতে-না-যেতে ছেলেটাও চলে গেল। বরুণার দু-চোখে জলের ধারা নামছে হু-হু করে। ঠোঁটে কিন্তু জ্বলজ্বলে হাসির রেখা। বলল তাদের, যারা সান্ত্বনা দিতে এসেছিল—শুনেছি, দেবীর অতি প্রিয় যারা, পৃথিবীর কোনও পাপ স্পর্শ করার আগেই দেবী তাদের কোলে তুলে নেন। ও-ছেলে তো আমার নয়—দেবীর। যাঁর ছেলে, তাঁর কাছে গেছে। আমার কীসের দুঃখ, কীসের শোক?—জোরে কেঁদে উঠেছে বরুণা।
শাশুড়ি ভেবেছে, পর-পর দুটো শোক পেয়ে বউটা পাগল হয়ে গেছে নিশ্চয়। শোক কি তারও হয়নি? বরুণার মতন শাশুড়ি নিঃসঙ্গ নয়। আরও দুটো ছেলে আছে—তাদের দুজনের দুই বউ, আর আছে বড়জনের দুটি ছেলে, ছোটজনের একটি মেয়ে। বরুণা পোড়াকপালী কী নিয়ে বেঁচে থাকবে? আত্মহত্যা না করে বসে।
শাশুড়ি নিজের শোকতাপ বুকে চেপে বউকে রেখেছে চোখে-চোখে।
কেন শাশুড়ির এত নজর তার ওপর—বরুণা যে বোঝেনি, তা নয়। বুঝেছে ভালোরকম। একগাল হেসে বলেছে, মা, আপনি পুজোপাঠও ছাড়ছেন দেখছি আমার জন্যে। আমি জানি, আত্মহত্যা মহাপাপ। ওদিকে আমার মন কখনও আসবে না। আপনার পা ছুঁয়ে দিব্যি করে বলছি।
এই প্রকৃতির মেয়ে বরুণা আত্মঘাতী হতেই পারে না। বলল বরুণার ভায়েরা। অবস্থার চাপে গরিব বনলেও, এখন আমিরি না থাকলেও, এককালের ক্ষত্রিয় রাজারাজড়াদের রক্তের ধারাটা তো দেহের শিরায়-শিরায় বয়ে যাচ্ছে। বোনের মৃত্যুতে ভায়েদের মাথায় আগুন জ্বলে উঠল। তারা হিংস্র বাঘের মতন খুন করার উদ্দেশ্যে দিনে-রাতে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
বরুণা সবার উপকার বই তো অপকার করেনি কারও! কার রান্না চড়েনি বাড়িতে গিন্নির অসুখের জন্যে, নিজে উপযাচক হয়ে রান্না করে দিয়ে এসেছে। কারও অসুখ, দেখার কেউ নেই—সে নারীই হোক বা পুরুষই হোক—মনে কোনও কুণ্ঠা-সংকোচ না রেখে সেবা-শুশ্রূষায় মগ্ন হয়ে গেছে নিজে থেকে। এমন মেয়েকে—মানুষ নয়—কোনও পিশাচ না হলে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয় কেউ বিষ খাইয়ে!
ভায়েরা সন্দেহ করেছে ত্রিপুরকে। যদিও জানে ত্রিপুরের মতন অত সৎ ছেলে এ-তল্লাটে দ্বিতীয় কেউ নেই আর। যার যায় তার অত বুদ্ধি-বিচার আসে না। বিনা কারণেই দোষী সাব্যস্ত করে বসে যাকে-তাকে।
এ-ক্ষেত্রেও ঘটল তাই।
সকলে জানে, পিতৃমাতৃহারা ত্রিপুর ত্রিপুরামালিনীর, অর্থাৎ ব্রজেশ্বরীদেবীর, দোরধরা। ব্রজেশ্বরীর কাছে মানত করেই মা-বাবা পেয়েছেন ওকে। এমন সৌম্যদর্শন—যেন দেবদূত—দেবীর মানসপুত্র বলে বুঝে উঠতে ভুল হয় না কোনও।
কতবার একা ঘরে ব্যামোয় ছটফট করছে ত্রিপুর, গেছে বরুণা। সেবা করে সারিয়েও তুলেছে। কে জানে মানুষের মতিভ্রম হতে কতক্ষণ। কথায় বলে, মুনিনাঞ্চ মতিভ্রমঃ। বিশ্বামিত্র ঋষি যদি মেনকাকে দেখে বিবেক-বুদ্ধি, নিজের সাধনা ভুলে যেতে পারেন, তাহলে বরুণাকে দিনের পর দিন কাছে পেয়ে ত্রিপুরের পক্ষে আকৃষ্ট হয়ে পড়া কিছু অসম্ভব ব্যাপার নয়। ওর কোনও অসৎ প্রস্তাবে বরুণার মতন মেয়ের রাজি হওয়া অসম্ভব। প্রত্যাখ্যানের জ্বালায় ক্রোধে অন্ধ ত্রিপুর পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছে তাই বরুণাকে।
রাতের অন্ধকারে বরুণার ভায়েদের দলবল ত্রিপুরের বাড়ি ঘিরে ফেলেছে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে। ত্রিপুরকে নৃশংসভাবে হত্যা করার জন্য যতবার ত্রিপুরের ঘরে প্রবেশ করতে গেছে ওরা, ততবার একটা ধাক্কা পেয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়তে বাধ্য হয়েছে সবাই।
একটা ঠান্ডা স্রোত ওদের সবার ওপর আছড়ে পড়ে সকলের শক্তি অসাড় করে দিয়েছে নিমেষে। বিস্ময়ে দেখেছে ওরা, চৌকাঠের ওপারে দরজা আগলে দাঁড়িয়ে বরুণা। রক্ত-মাংসের শরীর বলে ভ্রম হয়।
বরুণা যখন আগলাচ্ছে ত্রিপুরকে, তখন ত্রিপুর নির্দোষ। নিজেদের ডেরায় ফিরে গেছে ওরা এক-এক করে।
মাথা থেকে তবু খুনির চিন্তাধারা গেল না কারও। নজর পড়ল আর-একজনের ওপর। সুরথ।
সুরথের মা থেকেও নেই। পঙ্গু, বারোমাস শয্যাগত। বউ দজ্জাল। স্বামীর ঘরে আসবে না, স্বামীকে তার ঘরে যেতে হবে। স্বামীর অসুখ-বিসুখে খবর গেলে, বলে পাঠায় বউ, তাকে কে দেখে তার ঠিক নেই, সে আবার পরের সেবা করতে যাবে! বরের স্পর্ধা তো কম নয়! বলিহারি আক্কেল! বউকে দাসী-বাঁদী ভাবে, এ কেমনতরো পুরুষ! অমন হীন মনের পুরুষের মুখ দেখতে চায় না সে।
সুরথ ডাকেনি বরুণাকে। না ডাকলেও অসুখ শুনে চুপ করে বসে থাকতে পারেনি বরুণা। ছুটে গেছে। সব থেকেও সব নেই যার, তার কাছে সব হয়ে উঠেছে সেবা-শুশ্রূষায়।
হতে পারে বরুণাকে একেবারে নিজের করে রাখতে চেয়েছে সুরথ। চিরদিনের জন্য ত্যাগ করতে বলেছে ত্রিপুরকে। ত্রিপুরের ত্রিসীমানা মাড়াতে নিষেধ করেছে। বরুণা শোনবার মেয়ে নয়। কোনও কথা গ্রাহ্য করেনি। হয়তো বা বলেছে, তোমার ছোট মনের জন্যে বরং তোমায় আমি ত্যাগ করব, ত্রিপুরকে নয়।
সুরথের খুনিরক্ত নির্ঘাত দু-চোখের কোনায় জমাট হয়েছে। সে যখন পেল না বরুণাকে, তখন ত্রিপুরের হতেও দেবে না কোনওমতেই। জানে, বরুণা দেবীভক্ত। ওকে সরিয়ে দিতে মস্ত সুবিধে। দেবীর প্রসাদে বিষ মিশিয়ে ওকে দেওয়া। নির্দ্বিধায় খেয়ে ফেলবে ও। তারপর বাঞ্ছিত ফল পেয়ে যাবে সঙ্গে-সঙ্গে সুরথ। এ গোপন ব্যাপার জানতে পারবে না কেউ কখনও। একটা কানামাছিও না।
যেই মতলব মাথায় আসা, অমনই তড়িঘড়ি কাজ সেরে ফেলা। সুরথকে না শেষ করে নিশ্চিন্ত হতে পারবে না বরুণার ভায়েরা।
ত্রিপুরের মতন ওরা আক্রমণ করল সুরথেরও বাড়ি। একই দৃশ্যের, একই ঘটনার, পুনরাবৃত্তি ঘটল ওখানেও।
ঠান্ডা স্রোতে ডুবে গিয়ে সকলের শক্তি অসাড়। আর সুরথের ঘরের দরজা আগলে দাঁড়িয়ে বরুণা।
সুরথও তাহলে নির্দোষ! তবে প্রকৃত দোষী কে? বরুণাই ধরিয়ে দিক না। ভায়েরা প্রতিরাতে একজোট হয়ে বসেছে। বরুণার চিন্তা করেছে একমনে। মনে-মনে অনুরোধ করেছে বরুণাকে সবাই, আমাদের মুখ চেয়ে প্রকৃত লোকটাকে তুমি ধরিয়ে দাও!
বাঁকমন বরুণা মারা যাওয়ার পর থেকে কেঁদেকেটে সারা। এমন পরোপকারী মানুষকেও মেরে ফ্যালে কেউ! এ-কাজ যে করেছে, তার নরকেও স্থান হবে না। ব্রজেশ্বরীর কাছে রোজ এসে প্রার্থনা করে, মানত করে : ধরিয়ে দাও তুমি। বুক চিরে রক্ত দেব তোমায়।
বরুণার ভায়েদের সঙ্গে আসামী খুঁজে-খুঁজে বেড়ায়। ওদের দলের সঙ্গে গেছে ত্রিপুরের প্রাণ ছিনিয়ে নিতে। গেছে সুরথের বুকের রক্তে স্নান করতে।
সকলের খুব সহানুভূতি ওর ওপরে। এ-মানুষটা না পাগল হয়ে যায়!
প্রতিরাতে আসে বাঁকমন ওই জায়গায়—যেখানে বরুণা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে।
দুটো হাঁটুর মধ্যিখানে মাথা গুঁজে হাউহাউ করে কাঁদে। মাঝে-মাঝে বিড়বিড় করে কীসব বলে। কিচ্ছু বুঝতে পারা যায় না।
আশ্চর্য! আজ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। আজ দ্বিতীয় সপ্তাহ শুরু হল। বরুণার মৃত্যুর পর কেটেছে সাতদিন। আজ আবার এসেছে মৃত্যুর সেই দিন।
ওখানে আজ লোকে লোকারণ্য। জোরে-জোরে চিৎকার করে কীসব বলছে বাঁকমন। কৌতূহলী মন নিয়ে গেলুম আমি।
আমি এখানে নবাগত।
দেখিনি বরুণাকে। দেখলুম, বাঁকমনের পেছনে একজন স্ত্রীলোক দাঁড়িয়ে। পাশের লোকটি কানে-কানে ফিসফিস করে বলল, বরুণা।
আমি নিস্পৃহের মতন দেখছি, আর শুনে যাচ্ছি বাঁকমনের অদ্ভুত কথা। বাঁকমন যেন ভর-হওয়া মানুষ। ওর নিজস্ব সত্তা পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছে। কে যেন ওকে দিয়ে জোর করে স্বীকারোক্তি করাচ্ছে।
ও বলছে, আমি প্রসাদে বিষ মিশিয়ে হাতে দিয়েছি বরুণার। ওকে আমিই মেরে ফেলেছি, যখন বুঝেছি, ও কখনওই আমার ঘরণী হবে না। আমি চাইনি ও ত্রিপুরের হোক, কি সুরথের হোক…।
শুয়ে পড়ল ঘাসের ওপর বাঁকমন। ভীষণ ছটফট করছে। বেহুঁশ হয়ে পড়ল। অদৃশ্য হয়ে গেল পেছনের নারীমূর্তি। বরুণা।
জ্ঞান ফেরাতে অনেক চেষ্টা করেও সফল হল না কেউ। বাঁকমনের দেহ ঠান্ডা হয়ে উঠেছে, কঠিন হয়ে উঠেছে।
মাসিক ক্রিমিনাল,
পুজো সংখ্যা, ১৯৭৯