1 of 2

চোর বনাম ভূত

চোর বনাম ভূত

আগের দিনে চোরেরা ছিল বেজায় ভিতু। যেমন আমাদের গ্রামের পাঁচু-চোর। সে নাকি চুরি করতে গিয়ে নিজের পায়ের শব্দে নিজেই ভয় পেয়ে দিশেহারা হয়ে পালাত। দাদুর কাছে শুনেছি, একবার সে আমাদের বাড়ি চুরি করতে এসেছিল। পাঁচিল ডিঙিয়ে উঠোনে নামবার সময় হঠাৎ তার পা পিছলে যায়। তারপর সে ধপাস করে পড়েছে এবং তাতেই যা একটু শব্দ হয়েছে। সেই শব্দেই দিশেহারা পাঁচু উঠোনের কোণে তালগাছের ডগায় তরতর করে উঠে গেছে।

উঠে তো গেছে। কিন্তু নামতে সাহস পাচ্ছে না। নামতে গিয়ে যদি আবার পা পিছলে পড়ে যায়!

এদিকে রাত পুইয়ে ভোর হতে চলেছে। দিনের আলোয় কেউ-না-কেউ তাকে দেখতে পাবে। তখন তার কী অবস্থা হবে ভেবে পাঁচু-চোর ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করে, কান্না শুনে দাদু টর্চ হাতে বেরিয়ে আসেন। তালগাছের ডগা থেকে কান্না। ভূতপ্রেত নাকি?

তখনকার দিনে পাড়াগাঁয়ের আনাচে-কানাচে ভূতেরাও ছোঁকছোঁক করে ঘুরে বেড়াত। কিন্তু দাদু ছিলেন সাহসী মানুষ। তালগাছের ডগায় টর্চের আলো ফেলে তিনি অবাক হয়ে যান। জিগ্যেস করেন, তুই কে রে?

পাঁচু-চোর করুণ স্বরে বলে, আজ্ঞে আমি পাঁচু।

–তা তুই তালগাছের ডগায় কী চুরি করতে উঠেছিস? এখন তো আর একটা তালও নেই। নেমে আয় হতভাগা!

–আজ্ঞে বড্ড ভয় করছে।

দাদু বলেন,–তোকে মারব না। পুলিশেও ধরিয়ে দেব না। নেমে আয়। তারপর খুলে বল, তালগাছের ডগায় কেন চড়েছিস?

পাঁচু অনেক কষ্টে নেমে আসে এবং সবকথা খুলে বলে। তারপর দাদুর পা ছুঁয়ে বলে,–আর কক্ষনও আপনার বাড়িতে চুরি করতে ঢুকব না।…..

দাদু গল্পটা খুব জমিয়ে বলতেন। শুনে আমরা ছোটরা হেসে অস্থির হতাম। তো সত্যিই আর পাঁচু কখনও আমাদের বাড়িতে চুরি করতে আসেনি। কিন্তু তার কপাল মন্দ। সেবার থানায় এসেছেন এক পুঁদে দারোগা বন্ধুবিহারী ধাড়া। কনস্টেবলরা এতকাল রাতবিরেতে টহল দিতে বেরুত না। চৌকিদার বড়জোর লণ্ঠন আর লাঠি হাতে এক চক্কর ঘুরে ঘরে গিয়ে নাক ডাকাত। বঙ্কুবাবুর তাড়ায় টহলদারি জোরালো হল।

তার ফলে পাঁচুর অবস্থা হল শোচনীয়। দিনদুপুরে তো আর চুরি করা যায় না। তার ওপর রাত্তিরে গিয়ে কনস্টেবলরা, আবার কখনও চৌকিদার হাঁকড়াক করে জেনে নেয় পাঁচু ঘরে আছে কি না। না থাকলেই তার বিপদ। অন্য কেউ কোথাও সে রাতে চুরি করলে দোষটা পড়বে পাচুরই ঘাড়ে। পাঁচু এক দাগি চোর।

এক রাত্তিরে মরিয়া হয়ে পাঁচু বেরুল। যে বাড়িতে সে চুরি করার ফন্দি এঁটেছে, সেই বাড়ির পেছনে ছিল কয়েকটা গাছ। তলায় শুকনো পাতার ছড়াছড়ি। পা ফেলতেই সেইসব শুকনো পাতা মচমচখড়খড় শব্দ করেছে এবং পাঁচুও যথারীতি ভয় পেয়ে দিশেহারা হয়ে দৌড়েছে।

সেদিন বঙ্কুবাবু নিজে টহলদারিতে বেরিয়েছেন। পাঁচু গিয়ে পড়বি তো পড় একেবারে বন্ধুবাবুর বুকে। আচমকা রাতবিরেতে দারোগাবাবুর বুকে কে এসে সেঁটে গেছে, এটা বিরক্তিকর ব্যাপার। অন্য কেউ হলে টাল সামলাতে পারত না। কিন্তু তিনি দশাসই বিশাল এক মানুষ। তবে এভাবে কী একটা জিনিস তার গায়ে সেঁটে যাবে, এটা চূড়ান্ত রকমের বেয়াদপিও বটে। বাঁ-হাতে এক ঝটকায় জিনিসটাকে ছাড়িয়ে টর্চ জ্বেলে দেখেন, এটা একটা মানুষ।

সেই সঙ্গে কনস্টেবলরা চেঁচিয়ে উঠেছে, পাঁচু! পাঁচু!

পাঁচু-চোর ধরা পড়ে গেল। তখনকার দিনে আইনকানুন ছিল কড়া। পাঁচুর নামে অনেকগুলো চুরির নালিশ ছিল পুলিশের খাতায়। আদালতে তার ছমাসের জেল হল।…

এসব গল্প দাদুর মুখেই শোনা। তখন আমি পাঠশালার পরুয়া। পাঁচু-চোরকে দেখতে ইচ্ছে করত খুব। কিন্তু তাকে পাচ্ছিটা কোথায়?

.

পরে আমি যখন ক্লাস সিক্সে পড়ছি, তখন একদিন দৈবাৎ তার সঙ্গে আমার দেখা হয়ে যায়। যদিও সেই দেখা হওয়াটা মোটেও সুখের হয়নি।

পুজোর ছুটিতে স্কুল বন্ধ। প্রতি বছর পুজোর সময় বড়মামা আমাদের বাড়িতে আসতেন। সেদিনই বিকেলে তিনি এসেছেন। বড়মামা ছিলেন ভবঘুরে ধরনের মানুষ। দেশবিদেশে ঘুরে বেড়ানোর বাতিক ছিল তার। পুজোর সময় এসে ভাগনে-ভাগনিদের সেই ভ্রমণ-বৃত্তান্ত শোনাতেন। তা যেমন অদ্ভুত, তেমনই রোমাঞ্চকর। এসেই তিনি ঘোষণা করতেন কোন-কোন দেশে গিয়েছিলেন। তারপর সন্ধেবেলায় তাঁর গল্পের আসর বসত। এবার এসে বড়মামা বলেছিলেন, খুব রহস্যজনক একটা দেশ থেকে তিনি আসছেন। তবে না–আগেভাগে কিছু ফঁস করবেন না। সন্ধেবেলায় সবিস্তারে সেই দেশের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করবেন। তখন যদি কেউ ভয় পেয়ে ভিরমি খায়, তার দোষ নেই কিন্তু।

ছোটরা ভয় পেতে তো ভালোই বাসে। আমরা কখন সূর্য ডুববে, সেই প্রতীক্ষায় চঞ্চল। এমন সময় বড়মামা হঠাৎ আমাকে বললেন,–পুঁটু! তোদের এখানকার ছানাবড়া খুব বিখ্যাত। এই নে টাকা। পাঁচ টাকার ছানাবড়া নিয়ে আয় শিগগির।

মা বললেন,-হারুর দোকানে যা। আজকাল হারুর মতো ছানাবড়া তৈরি করতে কেউ পারে না।

আমাদের গ্রামের শেষে পিচরাস্তার ধারে ছোট একটা বাজার ছিল। পাশে ছিল হাটতলা। সপ্তাহে দুদিন হাট বসত। বিকেলের দিকে ওখানটা বেশ ভিড়ভাট্টা হতো। হারু-ময়রার দোকান ছিল সেই বাজারে।

হারুই বড্ড দেরি করিয়ে দিল। অবশ্য ওর দোষ ছিল না। পুজোর সময় তার দোকানে খদ্দেরের খুব ভিড় হয়। তখনকার দিনে পাঁচ টাকা অনেক টাকা। টাকায় চারটে করে মোটাসোটা ছানাবড়া। মাটির হাঁড়িতে কুড়িটা ছানাবড়া আমার পক্ষে বেশ ভারী। হাঁড়ির মুখে শালপাতা চাপানো এবং মিশি পাটের দড়ি দিয়ে আঁটো করে বাঁধা। দুহাতে দড়ি আঁকড়ে ধরে কুঁজো হয়ে হাঁটলাম। টাল খেয়ে পড়লে হাঁড়ি ফেটে যাবে।

এদিকে আঙুলও যেন কেটে যাচ্ছে মিহি দড়িতে।

অগত্যা শর্টকাট করার জন্য সিঙ্গিমশাইদের আমবাগানে ঢুকলাম। বাগান পেরুলেই ষষ্ঠীতলা। একটা প্রকাণ্ড বটগাছ। তারপর কাঁচারাস্তায় একটুখানি হাঁটলে আমাদের বাড়ি।

ষষ্ঠীতলায় গেছি, হঠাৎ চোখে পড়ল একটা রোগা-ভোগা লোক। বটগাছের একটা ঝুরির পাশে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে ছেঁড়া খাকি হাফ-প্যান্ট, খালি গা, মাথার চুল খুঁটিয়ে ছাঁটা। কেমন জুলজুলে চাউনি লোকটার। মুখে কিন্তু মিষ্টি হাসি। তাকে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলাম। সে কাছে এসে মিষ্টি-মিষ্টি হেসে বলল, ওতে কী আছে খোকাবাবু? রসগোল্লা নাকি?

বললাম, না। ছানাবড়া।

–বাঃ ছানাবড়া রসগোল্লার চেয়ে ভালো। কার দোকান থেকে কিনলে?

–হারু-ময়রার।

–বাড়িতে কেউ এসেছে বুঝি?

–হ্যাঁ। বড়মামা এসেছেন।

–বলো কী! খুব ভালো! তা তুমি যে দেখছি হাঁড়িটা বইতে পারছ না। কষ্ট হচ্ছে। দেখো দিকি। এতটুকু ছেলে। আহা রে!

লোকটার কথাবার্তা ও হাবভাব অমায়িক। শুধু চাউনিটা কেমন যেন—

তো সে আমার হাত থেকে হাঁড়িটা সাবধানে ধরে বলল,–চলো! আমি পৌঁছে দিয়ে আসি। এতটুকু ছেলে এত ভারী জিনিস বইতে পারে?

লোকটাকে বাধা দিতে পারলাম না। কিংবা সে পৌঁছে দিলে কষ্টটা থেকে বেঁচে যাই। যে কারণেই হোক, হাঁড়িটা আমার হাতছাড়া হল এবং সে নিমেষে বটগাছের অন্য পাশে অদৃশ্য হয়ে গেল।

হতভম্ব হয়ে একটুখানি দাঁড়িয়ে থাকার পর ঊ্যা করে কেঁদে বাড়ির দিকে দৌড়লাম।

পরে বাড়ির সবাই আমার মুখে লোকটার চেহারার বর্ণনা শুনে সাব্যস্ত করেছিলেন তাহলে এটা পাঁচুরই কাজ।…

.

বছর দুই পরের কথা। আমি তখন ক্লাস এইটের ছাত্র। বুদ্ধিসুদ্ধি হয়েছে বইকী! তা না হলে কেমন করে বুঝব, আমি কী বোকাই না ছিলাম। অমন নিরিবিলি জায়গায় সন্ধ্যার মুখে অচেনা লোককে ছানাবড়ার হাঁড়ি বইতে দেয় কেউ?

তবে পাঁচু চোর ছিল বটে, কিন্তু নেহাত ছিঁচকে চোর। সে কোনও বাড়িতে সিঁদ কেটে চুরি করেছে বলে শুনিনি। দাদু আরও বুড়ো হয়েছেন তখন। লাঠি হাতে কষ্টেসৃষ্টে হাঁটাচলা করেন। সেই বছর হঠাৎ আমাদের গ্রামে শুধু নয়, এলাকা জুড়ে সিঁদ কেটে চুরি শুরু হল। দাদুর মতে, এ কক্ষনও পাঁচুর কাজ নয়। পাঁচু যা ভিতু সিঁদকাঠি দিয়ে ঘরের দেয়াল ফুটো করতে গেলে যেটুকু শব্দ হবে, তাতেই সে ভয়ে দিশেহারা হয়ে পালিয়ে যাবে। পাঁচু রাতবিরেতে এতটুকু শব্দ হলেই ভয় পায়।

একদিন বাবা বাইরে থেকে এসে বললেন,–সিঁদেল চোরের খোঁজ পাওয়া গেছে। দারোগাবাবুর মুখে শুনে এলাম, লোকটার নাম কি। কঁপুইহাটির দাগি চোর। সদ্য জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরেছে।

দাদু বললেন, ঝাঁপুইহাটির কি?

–চেনেন নাকি তাকে?

চিনি বইকী।দাদু ফোকলা মুখে খুব হাসলেন। একেই বলে চোরে-চোরে মাসতুতো ভাই। আমাদের গ্রামের পাঁচুর মাসির ছেলে হল কিনু। কাজেই পাঁচুর মাসতুতো ভাই। তবে আমার সন্দেহ হচ্ছে, পাঁচুকে কিনু ট্রেনিং দিয়ে তার চেলা করেনি তো?

পরদিন সকালে লালু-গয়লা দুধ দিতে এসে বলল,–গত রাত্তিরে সিঙ্গি মশাইয়ের বাড়িতে সিঁদ কাটছিল কিনু। সিঙ্গিমশাই জেগেই ছিলেন। জানালা দিয়ে টর্চের আলো ফেলে কিনুকে পালাতে দেখেছেন। তবে কিনুর সঙ্গে কে ছিল জানেন? হতচ্ছাড়া পাঁচু।

দাদু বললেন, তাহলে যা বলেছিলাম, মিলে গেল।

লালু বলল, বকুদারোগা থাকলে এক্ষুনি এর বিহিত হতো। শুনেছি উনি মন্তর তন্তর জানতেন। রাতবিরেতে বেরিয়ে মন্তর পড়লেই চোরেরা এসে শেয়ালের মতো ফঁদে পড়ত।

দাদু বললেন, আচ্ছা লালু, তুমি তো ঝিলের ওদিকে গোরু-মোষের পাল চরাতে যাও। পাঁচুর সঙ্গে দেখা হয় না?

–আজ্ঞে, রোজই যাই। কিন্তু পাঁচুকে আর দেখতে পাইনে। আগে কখনও সখনও দেখা হতো। তবে সেটা নেহাত চোখের দেখা। আপনি তো জানেন কর্তাবাবু, পাঁচু যা ভিতু। চোখে চোখ পড়তেই হাওয়া হয়ে যেত।

-পাঁচুর বাড়িটার কী অবস্থা এখন?

লালু হাসল। বাড়ি মানে তো একটা কুঁড়েঘর ছিল। কবে ওটা মুখ থুবড়ে পড়ে গেছে। জঙ্গল গজিয়েছে।

–বলো কী! তাহলে পাঁচু এখন থাকে কোথায়?

লালু গম্ভীর হয়ে চাপাগলায় বলল,–গত রাত্তিরে সিঙ্গিমশাই ওকে কিনুর সঙ্গে দেখেছেন। কাজেই পাঁচু কঁপুইহাটিতে কিনুর বাড়িতে থাকে।

হুঁ। চোরে-চোরে মাসতুতো ভাই।-–বলে দাদু আবার একচোট হাসলেন।

লালু-গয়লা চলে যাওয়ার পর বাবা বললেন, কিনু পাঁচুকে তাহলে সত্যি ট্রেনিং দিয়েছে। তা না হলে সিঙ্গিমশাইয়ের বাড়ির আনাচে কানাচে পা বাড়ানোর সাহস ছিল না পাঁচুর। সিঙ্গিমশাইয়ের বন্দুক আছে না? লালু শুনতে পায়নি। কাল রাত্তিরে আমি কিন্তু বন্দুকের গুলির শব্দ শুনেছিলাম। ট্রেনিং না পেলে পাঁচু গুলির শব্দ শুনে কোথাও ভিরমি খেয়ে পড়ে থাকত।

দাদু সায় দিয়ে বললেন, ঠিক বলেছ। তবে আমাদের চিন্তার কারণ নেই। পাঁচু আমার পা ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিল, আর কক্ষনও আমাদের বাড়িতে চুরি করতে ঢুকবে না। বলেছিলাম না সেই যে তালগাছের ডগায় চড়ার ঘটনাটা! মনে পড়ছে?

বাবা চুপ করে গেলেন। আমরা ছোটরা দাদুকে হইহই করে ঘিরে ধরলাম। বলুন না দাদু আবার সেই গল্পটা!

.

সেবার পুজোর সময় যথারীতি বড়মামা এলেন। এসেই ঘোষণা করলেন, সদ্য এমন একটা দেশ থেকে আসছেন, যেখানে খালি ভূত আর ভূত। রাজা মন্ত্রী সেনাপতি সব্বাই ভূত। সৈন্যেরাও ভূত। প্রজারাও ভূত। পণ্ডিতমশাইরা ভূত। ছাত্ররাও ভূত। দোকানদাররাও ভূত। খদ্দেররাও ভূত। অর্থাৎ ভূতে-ভূতে ছয়লাপ। তবে সেটা যে ভূতের দেশ, তা এমনিতে বোঝা যায় না। কিছুদিন থাকার পর ক্রমে-ক্রমে টের পাওয়া যায়।

সন্ধ্যার পর বারান্দায় বড়মামার গল্পের আসর বসল। মা সকাল-সকাল রান্না সেরে আসরে এলেন। বাবা এ আসরে যোগ দিতেন না। কারণ নবমীর রাত্তিরে ক্লাবের থিয়েটার। তাই রিহার্সালের তাড়া থাকত। আমাদের বাড়ির কাজের লোক হারাধন বড়মামার গল্পের আসর শেষ হলে তবেই লণ্ঠন হাতে বাড়ি ফিরত। এমনকী কাজের মেয়ে সৌদামিনী, যার ডাকনাম ছিল সোদু, সে-ও আসরের একপাশে বসে অবাক চোখে তাকিয়ে গল্প শুনত। আসর ভাঙলে সে হারাধনকে কাকুতি-মিনতি করত তাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে। কারণ বড়মামার সব গল্পই ছিল সাংঘাতিক এবং গা-ছমছম করা।

ওই সময়টা দাদু তার ঘরে বসে লণ্ঠনের আলোয় ধর্মকর্মের বই পড়তেন।

তো বড়মামা সেই আজব দেশে গিয়ে কীভাবে টের পেলেন এটা ভূতেরই দেশ, সেই ঘটনা সবে শুরু করেছেন, এমন সময় দাদু চাপাগলায় ডাক দিলেন, হারাধন! হারু!

হারাধন সাড়া দিল, আজ্ঞে!

দাদু তেমন চাপাগলায় বললেন,–দেখে আয় তো! কোথায় যেন কেমন একটা শব্দ হচ্ছে।

হারাধন বলল,–ও কিছু না। বাতাসের শব্দ কর্তামশাই!

দাদু ধমক দিলেন।–বাড়ির পেছনটা দেখে আয় না একবার।

গল্পে বাধা পড়ায় আমরা বিরক্ত। মা বললেন,-বেড়াল-টেড়াল হবে।

বড়মামা মুচকি হেসে বললেন, আমাকে ফলো করে সেই ভূতরাজ্যের কোনও গুপ্তচর এসেছে হয়তো। ওদের নিন্দে না প্রশংসা করছি, তার খোঁজ নিতে রাজামশাই চর পাঠিয়ে থাকবেন।

কিন্তু দাদুর ধমক খেয়ে অগত্যা হারাধনকে বেরুতেই হল। সে খিড়কির দরজা খুলে বেরিয়েছিল। ওদিকটায় একটা ছোট্ট পুকুর আর তিনপাড়ে ফুলফল সবজির বাগান।

হঠাৎ হারাধনের চিৎকার শোনা গেল,–চোর! চোর! চোর!

তারপরই অদ্ভুত ঝনঝন ঠনঠন সব শব্দ। বড়মামা বেরিয়ে গেলেন। তার হাতে টর্চ ছিল। তাঁরও হেঁড়ে গলায় গর্জন শোনা গেল, ধর! ধর! মার! মার! পালাচ্ছে! পালাচ্ছে।

এক মিনিটেই হুলুস্থুল কাণ্ড। প্রতিবেশীরাও টর্চ হাতে বেরিয়ে পড়ল। সিঙ্গি মশাইয়ের বাড়ির দিক থেকে বন্দুকের গুলির শব্দ হল বার দুয়েক। ওই সময়টাতে সিঁদ কেটে চুরির উপদ্রব চলছিল। তাই এত শোরগোল।

অবশেষে দেখা গেল, পুকুরপাড়ে বাগানের মধ্যে একটা বস্তাভর্তি বাসনকোসন পড়ে আছে। আর আমাদের একটা ঘরের পেছনদিকে দেয়ালে সিঁদ কেটেছে চোর। নোনায় ধরা ইটগুলো নিচে পড়ে আছে।

আমাদের বাড়িটা ছিল একতলা এবং খুবই পুরোনো। পেছনদিকটায় এখানে ওখানে পলেস্তারা খসে ইট বেরিয়ে পড়েছিল। বিশেষ করে তলার দিকটা নোনাধরা। শ্যাওলা জমে সবুজ হয়ে গিয়েছিল। বাবা ছিলেন অলস প্রকৃতির মানুষ। মেরামত করব, করছি এই ধরনের ভাব দেখাতন।

তো সবাই একবাক্যে রায় দিলেন,–পাঁচু কিনু দুই মাসতুতো ভাইয়েরই কীর্তি। বড়মামা বললেন, দুই স্যাঙাত আমার গলা শুনে চুরির জিনিস ফেলে পালিয়েছে। রোসো, দেখাচ্ছি মজা! থানা-পুলিশ করে কাজ হবে না। এর মোক্ষম দাওয়াই শিগগির নিয়ে আসছি।

বড়মামা পরদিন ভোরে কোথায় চলে গেলেন কে জানে! বাবা এতদিনে বাড়ি মেরামতে মন দিলেন। দাদু খুব মনমরা হয়ে গিয়েছিলেন। মাঝে-মাঝে ক্ষুব্ধভাবে বলতেন, পাঁচু হতচ্ছাড়া প্রতিজ্ঞাভঙ্গ করল? ওর কপালে এবার অশেষ দুঃখ আছে। কিনুর পাল্লায় পড়েই ওর বুদ্ধিভ্রংশ হয়েছে।

বড়মামা ফিরলেন পুজো শেষ হওয়ার বেশ কিছুদিন পরে। বরাবর যেমন বিকেলের বাসে আসেন তেমনিই এলেন। মুখে রহস্যময় মিটিমিটি হাসি। বললেন,–আজ সন্ধ্যায় আর গল্পের আসর নয়। কিছু গোপন কাজকর্মে বেরুব। শুধু পুটুকে সঙ্গে নেব। পুঁটু। ভয় পাবিনে তো?

কথাটা শুনেই গা ছমছম করল। বললাম,-কোথায় যাবেন বড়মামা?

–চুপ। জিগ্যেস করবিনে। যাবি কি না, বল!

একটু দোনামনা করার পর বললাম,–যাব।

কোজাগরী পূর্ণিমায় লক্ষ্মীপুজোর পর কৃষ্ণপক্ষ শুরু হয়েছে। চাঁদ উঠতে দেরি আছে। বড়মামা চুপিচুপি আমাকে সঙ্গে নিয়ে বেরুলেন। গা ছমছম করা অন্ধকার। বড়মামার কাছ ঘেঁষে পা ফেলছি। তখন আমার হয়েছে পাঁচু-চোরেরই অবস্থা। একটু শব্দে চমকে উঠছি।

কিছুক্ষণ চলার পর ফিসফিস করে জিগ্যেস করলাম, আমরা কোথায় যাচ্ছি। বড়মামা?

বড়মামা তেমনই ফিসফিস করে বললেন,–চুপ।

তারপর টের পেলাম, আমরা ঝিলের ধারে এসে পড়েছি। ঝিলের জলে আকাশভরা তারার প্রতিবিম্ব ঝিকমিক করছে। কিন্তু এখানেই তো শ্মশান। শ্মশানে বড়মামা কেন এলেন বোঝা যাচ্ছে না।

হঠাৎ বড়মামা বসে পড়লেন। তারপর আমার হাতে তার টর্চ গুঁজে দিয়ে কানে কানে বললেন, তুই এখানে অপেক্ষা কর পুঁটু। আমি আসছি। আমার কাশি শুনতে পেলে টর্চ জ্বেলে আলো দেখাবি। নইলে ভুল করে শেয়াকুল কাটার জঙ্গলে ঢুকে পড়লেই গেছি। রক্তারক্তি হয়ে যাবে।

বড়মামা গুঁড়ি মেরে অন্ধকারে অদৃশ্য হলেন। শ্মশানে এক জায়গায় একা আমি টর্চ হাতে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ একটা পঁাচা ক্রাও-ক্রাও করে চেঁচিয়ে উঠতেই আমার বুক ধড়াস করে উঠল। সেই সঙ্গে কাছাকাছি কোথাও একদল শেয়াল ডাকতে শুরু করল। ভয়ে আমি বড়মামা বলে ডাকবার উপক্রম করেছি, সেইসময় পেছন থেকে কে বলে উঠল,–কে ওখানে?

চমকে উঠে বললাম, আমি পুঁটু।

–তা এখানে কী করা হচ্ছে শুনি?

–বড়মামার জন্য অপেক্ষা করছি।

–তোমার বড়মামা কোথায় গেছেন?

–জানি না। ওই দিকে কোথায় যেন গেলেন।

যে কথা বলছিল, তাকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। কিন্তু আমার কথাটা শুনেই সে বলে উঠল, সর্বনাশ! তারপর মনে হল, অন্ধকারে কে দৌড়ে পালিয়ে গেল।

ব্যাপারটা রহস্যময়। কী করব ভাবছি, সেই সময় বড়মামার কাশির শব্দ কানে এল। অমনি টর্চের আলো জ্বালোম। দেখলাম, বড়মামা হন্তদন্ত হেঁটে আসছেন।

কাছে এসে বললেন, ব্যস! কাজ শেষ। এবার বাড়ি ফেরা যাক।

ফেরার পথে সেই লোকটার কথা বললাম। বড়মামা হাসতে হাসতে বললেন, দুই স্যাঙাতের যে-কোনও একজন হবে। হয় পাঁচু, নয় তো কিনু।

–সর্বনাশ কেন বলল বড়মামা?

–বলবে না? ওদের গোপন ডেরায় একজনকে রেখে এলাম যে!

–কাকে রেখে এলেন?

বড়মামা কানে কানে বললেন,–আড়িপাতা ভূতকে। সেই ভূতের দেশে গিয়ে রাজার কাছে একজন ঝানু আড়িপাতা ভূত চেয়ে এনেছিলাম। বুঝলি? শিশিতে ভরে দিয়েছিলেন রাজামশাই। শিশিটা রেখে দিলাম। পরে দেখাব তোকে। পাঁচু-কিনু জব্দ হলে আড়িপাতা ভূতকে লোভ দেখিয়ে ফের শিশিতে ঢুকিয়ে ছিপি এঁটে ফেরত দিয়ে আসতে হবে।

অবাক হয়ে বললাম, আড়িপাতা ভূত পাঁচু-কিকে কীভাবে জব্দ করবে?

–দেখবিখন। চোরের পেছনে পুলিশ লেলিয়ে দেওয়ার চেয়ে ভূত লেলিয়ে দিলে কী হয়…

শিশিটা পরে দেখিয়েছিলেন বড়মামা। হোমিওপ্যাথিক ওষুধের ছোট্ট শিশির মতো দেখতে। কিন্তু আড়িপাতা ভূতের কাণ্ডকারখানা ক্রমশ বুঝতে পারলাম।

পাঁচু-কিনুর গোপন ডেরার খবর বড়মামা নাকি লালু-গয়লার কাছে পেয়েছিলেন। তবে পাঁচু আর কিন্তু এই দুই চোর তাদের গোপন ডেরা বদলালে কী হবে? যেখানেই চুপিচুপি পরামর্শ করত, আজ রাতে তার বাড়িতে সিঁদ কেটে চুরি করতে যাবে, আড়িপাতা ভূত তা শুনে ফেলত। তারপর ঠিক সময়ে সেই বাড়ির কর্তাকে জানিয়ে দিত। বাড়ির কর্তা আলো জ্বেলে লোকজন নিয়ে তৈরি থাকতেন। দুই চোর সেই বাড়ির ত্রিসীমানায় ঘেঁষতে পারত না।

আড়িপাতা ভূত তার কাজটা কীভাবে করত, তা জানা গিয়েছিল পরে। যেমন, ওরা এক রাত্তিরে মল্লিকবাড়িতে সিঁদ কাটার পরামর্শ করেছে। সেদিন সন্ধ্যায় মল্পিকমশাই ক্লাবে তাস খেলতে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তার কাছ ঘেঁষে যাওয়া এক ছায়ামূর্তি ফিসফিস করে বলে গেল, সাবধান মল্লিকমশাই! আজ রাতে আপনার বাড়িতে সিঁদ কাটতে চোর আসবে।

শোনামাত্র মল্লিকমশাই বাড়ি ফিরে পাড়ার লোকজন ডেকে হ্যাঁজাক জ্বালিয়ে তৈরি হলেন। পাঁচু-কিনু বেজার হয়ে ফিরে গেল।

কেউ-কেউ থানায় খবর দিয়ে পুলিশও মোতায়েন করতেন। কিন্তু পাঁচু-কিনু তা ঠিকই টের পেত। তারপর থেকে আমাদের গ্রামে নয়, সারা এলাকায় দুই চোরের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

ইতিমধ্যে বড়মামা মাসখানেক কোথায় ঘুরতে বেরিয়েছিলেন। ফিরে এসে সব শুনে খুশি হয়ে বললেন, যাক। তাহলে ওরা খুব জব্দ হয়েছে। আর এ তল্লাটে পা বাড়াবে না। এবার আড়িপাতা-ভূতকে শিশিতে ভরে ফেরত দিয়ে আসতে হবে। পুঁটু, সন্ধ্যাবেলা দুজনে বেরুব। তার আগে একটুখানি মধু চাই যে। একফোঁটাই যথেষ্ট।

দাদু রাত্তিরে মধু খেতেন। তাই বাড়িতে মধু রাখতেই হত। শিশিটাতে একফোঁটা মধু ভরে বড়মামা সন্ধ্যার পর আমাকে নিয়ে বেরুলেন।

আগের মতো ঝিলের ধারে শ্মশানের কাছে আমাকে টর্চ হাতে বসিয়ে রেখে বড়মামা অন্ধকারে অদৃশ্য হলেন। তারপর সে-রাতের মতোই ক্রাও করে পেঁচা ডাল। শেয়ালেরা ডাকতে শুরু করল। আমি বসে আছি তো আছিই। বড়মামার পাত্তা নেই। মাঝে-মাঝে পিছু ফিরে দেখছি, সে-রাতের মতো পাঁচু বা কিনু এসে পড়বে নাকি। কিছু বলা তো যায় না।

বড়মামার ফিরতে বড্ড দেরি হচ্ছে। এদিকে এখন বেশ ঠান্ডা পড়েছে। শীত করছে। ঝিলের জল ছুঁয়ে আসা ঠান্ডা বাতাস হাড় কাঁপিয়ে দিচ্ছে।

মরিয়া হয়ে বড়মামাকে ডাকব ভেবেছি, সে সময় সে-রাতের মতো পিছন থেকে কে বলে উঠল,–কে ওখানে?

ভয়ে-ভয়ে বললাম, আমি পুঁটু!

–এখানে কী করা হচ্ছে শুনি?

–বড়মামার জন্য অপেক্ষা করছি।

–কোথায় গেছেন তোমার বড়মামা?

–আড়িপাতা-ভূতটাকে শিশিতে ভরতে গেছেন।

তখনই সে সর্বনাশ বলে পালিয়ে গেল। তবে না–তার পায়ের ধুপধাপ শব্দ শুনতে পেলাম না। একটা অদ্ভুত বাতাসের শব্দের মতো শনশন কিংবা ওইরকম কিছু কানে এল। সেই সঙ্গে কেমন একটা বিদঘুঁটে গন্ধও ভেসে এল।

আর চুপ করে থাকতে পারলাম না। ডাকলাম, বড়মামা! বড়মামা!

দূর থেকে তাঁর কথা শোনা গেল, কী হয়েছে পুঁটু? চ্যাঁচাচ্ছিস কেন?

–শিগগির আসুন। আমার ভয় করছে। বলে টর্চের আলো জ্বালোম। তারপর বড়মামাকে দেখতে পেলাম। রেগে খাপ্পা হয়ে গেছেন। কাছে এসে বললেন, ব্যাটাচ্ছেলেকে শিশিতে যে ভরব তা আর হল না। ডাকাডাকি না হয় করলি, কিন্তু আলো জ্বাললে ভূতেরা কি আর সে তল্লাটে থাকে?

–বড়মামা! সে রাতের মতো কে এসে আমাকে জিগ্যেস করছিল– বড়মামা আমার কথার ওপর বললেন, তুই কী বললি তাকে?

–বললাম বড়মামা আড়িপাতা-ভূতটাকে শিশিতে ভরতে গেছেন। তাই শুনে সে সর্বনাশ বলে পালিয়ে গেল।

বড়মামা হতাশ হয়ে বললেন,–পুঁটু! মনে হচ্ছে, ব্যাটাচ্ছেলে সেই আড়িপাতা ভূতটাই বটে। নাহ। পাঁচু বা কিনু নয়। এতক্ষণ তাদের সঙ্গেই তো কথা হচ্ছিল। আমাকে দেখেই দুজনে এসে কাকুতিমিনতি করতে লাগল। আড়িপাতা ভূতটার জন্য ওরা না খেয়ে মারা পড়তে বসেছে। তো আমার কথা শুনে ওরা আমাকে সাহায্য করবে বলল। আর সেই সময় তুই ডাকাডাকি শুরু করলি?

বললাম,-বড়মামা! পাঁচু-কি ফিরে এসেছে?

–আসবে না? হাজার হলেও নিজের এরিয়া। তাছাড়া বাইরের এরিয়ার চোরেরা এদের বরদাস্ত করবে কেন? চুরির ভাগে কম পড়বে না?

বড়মামা হাঁটতে-হাঁটতে ফের বললেন,–কিন্তু আড়িপাতা ব্যাটাচ্ছেলেকে যে ফেরত দিতেই হবে। ওদের রাজামশাইকে কথা দিয়ে এসেছি। বড় গণ্ডগোলে পড়া গেল দেখছি।

বাড়ি ফিরে ক্লান্ত বড়মামা মাকে চায়ের হুকুম দিলেন। মা বললেন, দাদা জানো কী হয়েছে? একটু আগে সিঙ্গিমশাই এসে বলে গেলেন, গতকাল পাঁচু আর কিনু মেদিগঞ্জে ওঁর জামাইয়ের বাড়িতে সিঁদ কাটতে গিয়েছিল। তাড়া খেয়ে দুজনে বিলের জলে ঝাঁপ দেয়। আর সঙ্গে সঙ্গে হাজার-হাজার জোঁক ওদের গায়ে সেঁটে যায়। রক্ত চুষে জোঁকগুলো বেচারাদের মেরে ফেলে। সিঙ্গিমশাই আজ সকালে ওদের মড়াদুটো দেখে এসেছেন।

বড়মামা হাঁ করে শুনছিলেন। বললেন,–সে কী! আমি তাহলে শ্মশানে কাদের সঙ্গে

বলেই থেমে গেলেন বড়মামা। আমিও হতভম্ব হয়ে ওঁর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।

দাদু তার ঘর থেকে একটু কেশে বললেন,–কিনুটা ফিচেল আর বদমাশ ছিল, ওর জন্য দুঃখ হয় না। তবে হতভাগা পাঁচুটার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে। কিনুর পাল্লায় পড়েই ওর এই সর্বনাশ হল।…

বড়মামা অনেক চেষ্টাও করেও আড়িপাতা-ভূতটাকে ধরতে পারেননি এবং তার ফলটাও শেষপর্যন্ত ভালো হয়নি। আমার সেই ছোটবেলার কথা এখনও স্পষ্ট মনে আছে। আড়িপাতা-ভূতটা ওর কথা তাকে, তার কথা ওকে লাগিয়ে-ভাঙিয়ে গ্রামে বড্ড ঝগড়াঝাটি বাধাত। মামলা-মোকদ্দমাও বেড়ে গিয়েছিল। ওইরকম লাগানি ভাঙানি চলতে থাকলে গ্রামে দলাদলি না হয়ে পারে?

হ্যাঁ–এখনও হতচ্ছাড়া বজ্জাতটা আমাদের গ্রাম ছেড়ে পালায়নি। তাই এখনও সেই দলাদলি-হাঙ্গামা লেগেই আছে। ভয়ে আমি আর গ্রামে যেতে পারিনে। বলা যায় না, আড়িপাতা-ভূত ব্যাটাচ্ছেলে কী শুনতে কী শুনে আমার বিরুদ্ধে কার কান ভারী করবে, আর মাঝখান থেকে আমি পড়ব বিপদে। বড়মামা কাজটা ঠিক করেননি।…

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *