দ্বিতীয় খন্ড
উত্তরপর্ব
2 of 3

চৈতন্য বর্ণনে জগন্নাথ মাহাত্ম্য

।। চৈতন্য বর্ণন মে জগন্নাথ মাহাত্ম্য।।

ভট্টোজিস চ শুদ্ধাত্মা শিবভক্তিপরায়ণঃ। কৃষ্ণচৈতন্য মাগম্য নমস্কৃত্য বচোহ ব্রবীৎ।। ১।। মহাদেবো গুরু স বৈ শিব আত্মা শরীরিরিনাম্। বিষ্ণুব্ৰহ্মা চ তদাযো তৰ্হি তৎপূজনেন কিম্।।২।। ইতি শ্রুত্বা স যজ্ঞাংশো বিংশদব্দবয়োবৃতঃ। বিহস্যাহ স ভট্টোজিং নায়ং শম্ভুমহেশ্বরঃ।।৩।। সমর্থো ভগবাঞ্ছস্তুঃ কর্তা কিন্ন শরীরিনাম্। ন ভর্তা চ বিনা বিষ্ণুং সংহতায়ং সদাশিবঃ।।৪।।

।। চৈতন্য বর্ণনে জগন্নাথ মাহাত্ম্য।।

এই অধ্যায়ে কৃষ্ণ চৈতন্য চরিত্র বর্ণন প্রসঙ্গে জগন্নাথ মাহাত্ম্য বর্ণন করা হয়েছে।

সূতজী বললেন–সেই ভট্টোজী শুদ্ধাত্মা এবং শিব ভক্তি পরায়ণ ছিলেন। সেই কৃষ্ণ চৈতন্য মহাপ্রভুর কাছে গিয়ে তাঁকে নমস্কার করে এই কথা বলেছিলেন- মহাদেব গুরু এবং শরীর ধারীগণের শিবাত্মা। বিষ্ণু এবং ব্রহ্মা তাঁর দুই দাস। তাদের পূজন করে কি লাভ।। ১-২।।

একথা শ্রবণ করে ২০ বৎসর অবস্থা প্রাপ্ত যজ্ঞাংশ সহাস্যে ভট্টোজীকে বললেন -মহেশ্বর শম্ভু নন। সমর্থ ভগবান্ শম্ভু শরীরধারীগণের কি করবেন? বিষ্ণু ব্যতীত ভরণকারী কেউ নেই। শিব তো সদা সংহারকারী। ব্রহ্মা- বিষ্ণু-মহেশ্বরের তিনজনের একই মূর্তি শম্ভূ শৈব পদ্ধতিতে শরীর ধারীগণকে মোক্ষ প্রদান করেন। বিষ্ণু বৈষ্ণব মার্গে শরীর ধারীগণকে মোক্ষ দান করেন।। ৩-৬।।

একমূর্তিংস্ত্রিধা জাতা ব্রহ্মা বিষ্ণুমহেশ্বরঃ। শাক্তমার্গেণ ভগবান্ব্রহ্মা মোক্ষদায়কঃ।।৫।। বিষ্ণুবৈষ্ণবমার্গেন জীবাণাং মোক্ষদায়কঃ। শম্ভু বৈ শৈবমার্গেণ মোক্ষদাতা শরীরিণাম্।।৬।। শাক্ত সদাশ্রমো গেহী যজ্ঞমুক্তিপতৃদেবগঃ।। বানপ্রস্থাশ্রমী যো বৈ বৈষ্ণবঃ কন্দমূলভুক্।।৭।। যত্যাশ্রমঃ সদা রৌদ্রো নির্গুণঃ শুদ্ধবিগ্রহঃ। ব্রহ্মচর্যাশ্রমস্তেষামনুগামী মহাশ্রমঃ।।৮।। ইতি শ্রুত্বা গুরোর্বাক্যং শিষ্যো ভূত্বা স বৈ দ্বিজঃ। তৃতীয়াঙ্গ চ বেদানাং ব্যাচখ্যৌ পাণিনি কৃতম্।।৯।। তদাজ্ঞয়া চ সিদ্ধান্তকৌমুদ্যাসচকার হ। তত্ৰোষ্য দীক্ষিতো ধীমানকৃষ্ণচৈতন্যসেবকঃ।।১০।।

শাক্ত সদাশ্রম গেহী এবং যজ্ঞ ভোক্তা পিতৃদেবগণের অনুগমনকারী। যিনি বানপ্রস্থ আশ্রমে স্থিত তিনি বৈষ্ণব এবং তিনি কন্দমূল উপভোগ করেন।। ৭।।

যত্যাশ্রম সদা রৌদ্র, যা নির্গুণ এবং যুদ্ধ বিগ্রহময়। তাঁদের অনুগামী মহাশ্ম হল ব্রহ্মচর্যাশ্রম।। ৮।।

গুরুর, এই বচন শ্রবণ করে সেই দ্বিজ শিষ্য হলেন এবং তিনি তৃতীয় বেদাংশ ব্যাকরণ ব্যবস্থা মধ্যে ছিলেন।। ৯।।

তাঁর আজ্ঞাতে সেই ভট্টেজী দীক্ষিত সিদ্ধান্ত কৌমুদী রচনা করেন। পরম ধীমান্ কৃষ্ণ চৈতন্যের শিষ্য দীক্ষিত সেখানে থেকে তা রচনা করেছিলেন।। ১০।।

বরাহমিহিরো ধীমান্‌স চ সূর্যপরায়ণঃ। দ্বাবিংশাব্দে চ যজ্ঞাংশে তমাগত্য বচোবকবীৎ।।১১।। সূর্যোহয়ং ভগবাস্নাক্ষাত্ৰয়ো দেবা যতোহ ভবন প্রাতব্ৰহ্মা চ মধ্যাহ্নে বিষ্ণুঃ সায়ং সদাশিবঃ।।১২।। অতো রবেঃ শুভা পূজা ত্রিদেবযজনেন কিম্। ইতি শ্রুত্বা স যজ্ঞাংশে বিহস্যাহ শুভং বচঃ।।১৩।। দ্বিধা বভূব প্রকৃতিরপরা চ পরা তথা। নামমাত্র তথা পুষ্পমাত্রা তন্মাত্রিকা তথা।।১৪।। শব্দমাত্রা স্পর্শমাত্রা রূপমাত্রা রসা তথা। গন্ধমাত্রা তথা জ্ঞেয়া পরা প্রকৃতিরষ্টধা।।১৫।। অপরায়াং জীবভূতা নিত্যশুদ্ধা জগন্ময়ী। ভূমিরাপোহনলো বায়ুঃ খ মনোবুদ্ধিরেব চ। অহঙ্কার ইতি জ্ঞেয়া প্রকৃতি শ্চাপরাষ্টধা।।১৬।।

সূতজী বললেন -ধীমান্ বরাহ মিহির সূর্যদেবের উপাসনা পরায়ণ ছিলেন। যখন যজ্ঞাংশ ২২বর্ষের হন তখন তার কাছে এসে বলেছিলেন- তিনি ভগবান সূর্য। তিনবড় দেবতা তাঁর থেকেই উৎপন্ন। প্রাতঃকালে ব্রহ্মা -মধ্যাহ্নে বিষ্ণু এবং সায়ংকালে সদাশিব সমুৎপন্ন হন।। ১১-১২।।

এই কারণে সূর্যদেব পূজাভিন্ন ব্রহ্মা বিষ্ণু-মহেশ্বরের পূজাতে কি লাভ। যজ্ঞাংশ সেকথা শ্রবণ করে সহাস্যে বললেন–প্রকৃতি পরা এবং অপরা দুই প্রকারের। নামমাত্রা তথা পুষ্পমাত্রা তথা গন্ধ মাত্রা এই প্রকার পরাপ্রকৃতি ৮ প্রকার।। ১৩-১৪।।

অপরা প্রকৃতিতে জীবক্তৃতা নিত্য শুদ্ধাজগন্ময়ী ভূমি-জল-তেজ-বায়ু- আকাশ-মন-বুদ্ধি এবং অহংকার এই সকল ৮প্রকার অপরা প্রকৃতি।। ১৫-১৬।।

বিষ্ণুব্রহ্মা মহাদেবো গণেশো যমরাভ্ গুহঃ। কুবেরো বিশ্বকর্মা চ পরা প্রকৃতিদেবতা।।১৭।। সুমেরুবরুণো বহ্নিবায়ুশ্চৈব ধ্রুবস্তথা।।

সোমো রবিস্তথা শেষোহপরা প্রকৃতিদেবতা।।১৮।। অতঃ সোমবতী রুদ্রো রবিঃ স্বামী বিধিঃস্বয়ম্। শেষস্বামী হরিঃ সাক্ষান্নমস্তেভ্যো নমোনমঃ।।১৯।। ইতি শ্রুত্বা তদা বিপ্রঃ শিষ্যো ভূত্বা চ তদ্‌গুরোঃ। তদাজ্ঞয়া চতুর্থাঙ্গং জ্যোতিঃ শাস্ত্রং চকার হ।।২০।। বরাহসংহিতা নাম বৃহজ্জাতকমেব হি। ক্ষুদ্ৰস্তত্রাংস্তথান্যন্ধৈ কৃত্বা তত্র স চাবসৎ।।২১।। বাণীভূষণ এবাপি শিবভক্তি পরায়ণঃ। কৃষ্ণচৈতন্য মাগম্য বচঃ প্ৰাহ বিনম্ৰধীঃ।।২২। বিষ্ণুমায়া জগদ্ধাত্রী সৈকা প্রকৃকিরুৎ কৃতা। তয়া জাতমিদং বিশ্বং বিশ্বদ্দেবসমুদ্ভবঃ।।২৩।।

বিষ্ণু-ব্রহ্মা-মহাদেব-গনেশ-যাং-গৃহ কুবের এবং বিশ্বকর্মা এই সকল পরা প্রকৃতি দেবতা। সুমেরু -বরুণ-বহ্নি-বায়ু-ধ্রুব-সোম-রবি তথা শেষ এই সকল অপরা প্রকৃতি দেবতা। এই কারণে সোম স্বামী রুদ্র এবং রবি স্বামী স্বয়ং ব্রহ্মা, শেষস্বামী হরি- তাঁদের বারংবার নমস্কার।। ১৭-১৯।।

এই সকল শ্রবণ করে সেই বিপ্রবরাহ মিহির শৈব্য হয়ে গুরুআজ্ঞা প্রাপ্ত হয়ে চতুর্থ বেদাংগ জ্যোতিষ শাস্ত্র রচনা করেন।। ২০।।

বরাহ সংহিতা নামক এবং বৃহজ্জাতক নামক অদ্যতন্ত্রের ক্ষুদ্র গ্রন্থ রচনা করে সেখানে স্থিত হলেন।। ২১।।

বিশ্বেদেবস পুরুষশশক্তিজো বহুধা ভবৎ। ব্রহ্মা বিষ্ণুহরশ্চৈব দেবাঃ প্রকৃতি সম্ভবাঃ। অতো ভগবতী পূজ্যা তর্হি তৎপূজনেন কিম্।।২৪।। ইতি শ্রুত্বা স যজ্ঞাংশো বিহস্যাহ দ্বিজোত্তমম্। ন বৈ ভগবতী শ্রেষ্ঠা জড়রূপা গুণাত্মিকা।।২৫।। একা সা প্রকৃতিমায়া রচিতুজগতাং ক্ষমো। পুরুষস্য সহায়েন যোষিতের নরস্য চ।।২৬।। দেবীভাগবতে শাস্ত্রে প্রসিদ্ধেয়ং কথা দ্বিজ। কদাচিৎ প্রকৃতিদেবী স্বেচ্ছয়েদং জগৎখলু।।২৭।। নির্মিতং জড়ভূতং তদ্বলুধা বোধিতং তয়া। ন চৈতন্যমভূদ্বিপ্রা বিস্মিতা প্রকৃতিস্তদা।।২৮।।

সূতজী বললেন বানীভূষণ শিব ভক্তিতে পরম পরায়ণ ছিলেন। তিনিও কৃষ্ণ চৈতন্য মহাপ্রভুর কাছে গিয়ে বিনম্র ভাবে বললেন–বিষ্ণু মায়া জগৎধাত্রী। তা এক প্রকৃতি উদ্বৃত্ত। তার থেকে জগৎ উৎপন্ন হয়েছে এবং বিশ্বদেব থেকে এই বিশ্বউদ্ভূত। বিশ্বের বহুধা শক্তি থেকে উৎপন্ন হয়েছে। ব্রহ্মা-বিষ্ণু-এবং হর এই সব দেবপ্রকৃতি থেকেই সম্ভূত। এই কারণে ভগবতীরই যজন করা উচিৎ এই সত্বের পূজন করে কি লাভ?।। ২২-২৪।।

সেই ব্রাহ্মণের এই কথা শ্রবণ করে সেই যজ্ঞাংশ সহাস্যে দ্বিজোত্তমকে বললেন ভগবতী শ্রেষ্ঠ নন। তিনি তো জড় রূপী এবং গুণাত্মিকা অর্থাৎ সত্ত্বাদি তিন গুনের স্বরূপময়ী। তিনি এক প্রকৃতি মায়া জগতের রচনা করতে ক্ষমপুরুষের সহায়তা করতে উৎপন্ন হন।। যেমন কোনো স্ত্রী পুরুষের সহায়তায় জগৎ সৃষ্টি হয়। হে দ্বিজ, এই কথা দেবী ভাগবত শাস্ত্রে প্রসিদ্ধ। কদাচিৎ প্রকৃতি দেবী নিজ ইচ্ছাতে এই জগৎ নির্মাণ করেছিলেন, যখন তিনি জড়ভূত ছিলেন। হে বিপ্ৰ তখন সেই প্রকৃতি প্রভূত বিস্মিত হলেন।। ২৫-২৮।।

শূন্যভূতং চ পুরুষং চৈতন্যং সমতোষয়ৎ। প্রবিষ্টো ভগবান্দেবীমায়াজনিতগোলকে।।২৯।। স্বপ্নবদ্বা স্বয়ং জাতশ্চৈতন্যমভবজ্জগৎ। অতঃ শ্রেষ্ঠঃ স ভগবাম্পুরুষো নির্গুণঃ পরঃ।।৩০ ।। প্রকৃত্যাং স্বেচ্ছয়া জাতো লিঙ্গরূপস্তদাহ ভবৎ।। পুংল্লিঙ্গ প্রকৃতৌ জাতঃ পুংল্লিঙ্গহয়ং সনাতনঃ।।৩১।। স্ত্রীলিঙ্গ প্রকৃতৌ জাতঃ স্ত্রীলিঙ্গোহয়ং সনাতনঃ। নপুংস্ক প্রকৃতৌ জাতঃ ক্লীবরূপঃ স বৈ প্রভুঃ।।৩২।। অব্যয়প্রকৃতৌ জাতো নিৰ্গুণোহয় মধোক্ষজঃ। নমস্তস্মৈ ভগবতে শূন্যরূপায় সাক্ষিণে।।৩৩।। ইতি শ্রুত্বা তু তদ্বাক্যং শিষ্যো ভূত্বা স বৈ দ্বিজঃ। ত্রিবিংশাব্দে চ যজ্ঞাংশে তত্র বাসমকারয়ৎ।।৩৪।।

তখন শূন্যভূত চৈতন্য পুরুষকে সম্যরূপে তিনি সন্তুষ্ট করলেন। তখন ভগবান্ সেই দেবীমায়া দ্বারা জনিত গোলকে প্রবেশ করলেন। তখন স্বপ্ন হল এবং সমস্ত জগৎ চৈতন্য হয়ে গেল। অতএব সেই ভগবান্ পুরুষই শ্রেষ্ঠ, যিনি নির্গুণ এবং পর।। ২৯-৩০।।

প্রকৃতিতে যখন স্বয়ং উৎপন্ন হলেন সেই সময় তিনি লিংগরূপ হয়ে গেলেন। পুংলিঙ্গ প্রকৃতিতে উৎপন্ন তিনি সনাতন পুংলিঙ্গ। যখন স্ত্রীলিংগ প্রকৃতিতে তিনি জাত হলেন, তখন তিনি সনাতন স্ত্রীলিংগ হলেন। নপুংসক প্রকৃতিতে যখন তিনি জাত হলেন তখন সেই প্রভু ক্লীব রূপী হলেন।। ৩১-৩২।।

অব্যয় প্রকৃতিতে জাত হরে তিনি নির্গুণ অধোযাত হলেন। সেই শূন্যরূপী সাক্ষীস্বরূপ বোধস্থিত ভগবানকে নমস্কার।। ৩৩।।

ছন্দোগ্রন্থং তু বেদাঙ্গং স্বনান্না তেন নির্মিতম্। রাধাকৃষ্ণপরং নাম জপ্তা হৰ্ষমবাপ্তবান্।।৩৫।। ধন্বন্তরিদ্বিজো নাম ব্রহ্মভক্তিপরায়ণঃ। কৃষ্ণচৈতন্য মাগম্য নত্বা বচনমব্রবীৎ।।৩৬।। ভবাংস্ত পুরুষঃ শ্রেষ্ঠো নিত্যশুদ্ধ সনাতনঃ। জড়ভূতা চ তন্মায়া সমর্থো ভগবাস্নবয়ম্।।৩৭।। নিত্যোহব্যক্তঃ পরঃ সূক্ষ্মস্তস্মাৎ প্রকৃতিরুদ্ভবঃ। অতঃ পূজ্যস ভগবাম্প্ৰকৃত্যাঃ পূজনেন কিম্।।৩৮।। ইতি শ্রুত্বা বহিস্যাহ যজ্ঞাংশসসর্বশাস্ত্রগঃ। নায়ং শ্রেষ্ঠস্স পুরুষো ন ক্ষেমঃ প্রকৃতিং বিনা।।৩৯।। পুরাণে চৈব বারাহে প্রসিদ্ধেয়ং কথা শুভা। কদাচিৎপুরুষো নিত্যো নামমাত্রঃ স্বকেচ্ছয়াঃ। বভূব বহুধা তত্র যথা প্রেতস্তথা স্বয়ম্।।৪০।।

যজ্ঞাংশের এই কথা শ্রবণ করে সেই দ্বিজ ও তাঁর শিষ্য হয়ে গেলেন এবং যজ্ঞাংশত ২৩ বৎসর বয় প্রাপ্ত হলে সেখানে তিনি নিজ নিবাস করলেন।। তিনি বেদাঙ্গ স্বরূপ চন্দ্রগ্রন্থ রচনা করলেন এবং শ্রীরাধা কৃষ্ণের নাম জপ করে পরমহর্ষ প্রাপ্ত হলেন।। ৩৪-৩৫।।

সূতজী বললেন–ধন্বন্তরি নামধারী এক ব্রাহ্মণ ছিলেন তিনি ব্রহ্মা ভক্তি পরায়ণ ছিলেন। তিনি মহাপ্রভু কৃষ্ণচৈত্যর কাছে গিয়ে বললেন–আপনি তো শ্রেষ্ঠ পুরুষ, নিত্য শুদ্ধ এবং সনাতন। তার যে মায়া তা তো জড়ভূত। ভগবান্ স্বয়ং সর্বপ্রকারে সমর্থ।। নিত্য -অব্যক্ত-পর-সূক্ষ্ম। তাঁর থেকে প্রকৃতি উদ্ভূত। এই কারণে সেই ভগবান্ পূজ্য। এই প্রকৃতির যজন কি লাভ?।। ৩৬-৩৮।।

অসমর্থো বিরচিতুং জগন্তি পুরুষঃ পরঃ। তুষ্টাব প্রকৃতি দেবীং চিরকালং সনাতনীম্।।৪১।। তদা দেবী চ তং প্রাপ্য মহত্তত্বং চকার হ। সোহ হংকারশ্চ মহতো জাতস্তন্মাত্রিকাস্ততঃ।।৪২।। মহাভূতান্যতোহ প্যাসংস্তৈঃ সজ্ঞাতমিদং জগৎ।।৪৩। অতসনা তনৌ চোভৌ পুরুষাৎ প্রকৃতিঃ পরা প্রকৃতেঃ পুরুষশ্চৈব তস্মাত্তাভ্যাং নমোনমঃ।।৪৪।। ইতি ধন্বন্তরিঃ শ্রুত্বা শিষ্যো ভূত্বা চ তদ্ গুরোঃ। তত্ৰোষ্যচৈব বেদাঙ্গং কল্পবেদং চকার হ। সুশ্রতাদপরে চাপি শিষ্যা দন্বন্তরেঃ স্মৃতাঃ।।৪৫।। জয়দেবস্য বৈ বিপ্রো বৌদ্ধমার্গপরায়ণঃ। কৃষ্ণচৈতন্যমাগম্য পঞ্চবিংশবয়োবৃতম্। নত্বোবাচ বচো রম্যং স চ শ্রেষ্ঠ উষাপতিঃ।।৪৬।

সেই ধন্বন্তরির বচন শ্রবণ করে সমস্ত শাস্ত্রে পারঙ্গম যজ্ঞাংশ সহাস্যে বললেন–সেই পুরুষ শ্রেষ্ঠ নন। তিনি প্রকৃতি বিনা কিছু করতে সমর্থ নন। বরাহ পুরাণে এই শুভ কথা অত্যন্ত সুপ্রসিদ্ধ। কোনো সময়ে নিত্য নামমাত্র পুরুষ স্বেচ্ছায় স্বয়ং প্রস্থ প্রকার হয়ে ছিলেন, যেমন কোনো প্ৰেত হয়। সেখানে পুরুস জগৎ রচনা কার্যে অসমর্থ ছিলেন। তখন তিনি প্রকৃতি দেবীর চিরকাল পর্যন্ত স্তুতি করলেন। সেই সময় দেবী তাকে প্রাপ্ত করে মহত্তত্ত্ব রচনা করলেন। তিনি অহংকার মহৎ থেকে উৎপন্ন হলেন এবং সেই অহংকার পাঁচ তন্মাত্রিকা থেকে উৎপন্ন।। ৩৯-৪২।।

পুনরায় সেই পঞ্চতন্মাত্রিকা থেকে পঞ্চমহাভূত উৎপন্ন হল। সেই মহাভূতের দ্বারা এই সমস্ত জগৎ উৎপন্ন হল। এই কারণে তাঁরা দুজনেই সনাতন। পুরুষ থেকে প্রকৃতি পর এবং প্রকৃতি থেকে পুরুষ পর। এই কারণে সেই দুইজন পুরুষ প্রকৃতিকে বার বার প্রণাম।। ৪৩-৪৪।।

ধন্বন্তরি যজ্ঞাংশের বচন শ্রবণ করে সেই গুরুর শিষ্য হয়ে গেলেন এবং সেখানেই নিবাস করতে করতে বেদাংগ স্বরূপ কল্প বেদ রচনা করলেন।। সুশ্রুত ধন্বন্তরির অপর শিষ্য ছিলেন।। ৪৫।।

চৈতন্য বর্ণনে মে জগন্নাথ মাহাত্ম্য যস্য নাভেরভূৎপদ্মং ব্রহ্মণা সহ নির্গতম্। অতস্য ব্রহ্মসূনাম সামবেদেষু গীয়তে।।৪৭।। বিশ্বো নারায়ণসাক্ষোদ্যস্য কেতৌ সমাস্থিতঃ। বিশ্বকেতুরতো নাম ন নিরুদ্ধোহনিরুদ্ধকঃ।।৪৮।। ব্রহ্মবেলা চ তৎপত্নী নিত্যা চোষা মহোত্তমা। স বৈ লোকহিতার্থায় স্বয়মচাবতারকঃ।।৪৯।। ইতি শ্রুত্বা বিবস্যাহ যজ্ঞাংশস্তং দ্বিজোত্তমম্। বেদোনারায়ণঃ সাক্ষাৎপূজনীয়ো নরৈঃ সদা।।৫০।। ততঃ কালস্ততঃ কর্ম ততো ধর্মঃ প্রবর্ততে। ধমাত্বামঃ সমুদ্ভুত কামপত্নী রতি স্বয়ম্।।৫১।। রত্যাং কামাৎসমুদ্ভুতোহনিরুদ্ধো নাম দেবতা। উষা সা তস্য ভগিনী তেন সার্দ্ধং সমুদ্ভবা।।৫২।।

সূতজী বললেন -একজয়দেব নামক ব্রাহ্মণ ছিলেন, যিনি বৌদ্ধধর্ম মার্গ পরায়ণ ছিলেন। যখন মহাপ্রভু কৃষ্ণ চৈতন্য ২৫ বৎসর বয়ঃপ্রাপ্ত হলেন তখন তাঁর কাছে জয়দেব এসেছিলেন। তিনি যজ্ঞাংশকে নমস্কার করে সেই ঊষাপতি শ্রেষ্ঠ দ্বিজ পরমসুন্দর বচনে বললেন- যাঁর নাভি থেকে পদ্মাসন ব্রহ্মা নির্গত হয়েছিলেন, এই কারণে তিনি ব্রহ্মসূনামে সামবেদে গীত হতেন। বিশ্বসাক্ষাৎ পরায়ণ যার কেতুতে সমাস্থিত, এই কারণে বিশ্বকেতু এই নামে তিনি পরিচিত, তার নাম নিরুদ্ধ বা অনিরুদ্ধ নয়।। ৪৮।।

ব্রহ্মবেলা তাঁর পত্নী যিনি নিত্যা এবং মহোত্তমা যা এবং তিনি লোকহিত করতে স্বয়ং অর্চাবতাক।। ৪৯।।

জয়দেবের এই কথা শ্রবণ করে যজ্ঞাংশ সহাস্যে বললেন- বেদ সাক্ষাত্নারায়ণ, অতএব নরের দ্বারা তিনি সদা পূজ্য। অনন্তর তাকে কাল- কর্ম এবং ধর্মক্রমে প্রবৃত করেন। ধর্ম থেকে কাম সমুদ্ভূত এবং কাম পত্নী স্বয়ং রতি। রতিতে কামের দ্বারা অনিরুদ্ধ দেবতা জন্মধারণ করেন। ঊষাদেবী তার ভগিনী, তাঁর সার্থেই তিনি উদ্ভূত হন।। ৫০-৫২।।

কালো নাম স বৈ কৃষ্ণো রাধা তস্য সহোদরা। কর্মরূপঃ স বৈ ব্রহ্মা নিয়তিস্তৎসহোদরা।।৫৩।। ধর্মরূপো মহাদেবঃ শ্রদ্ধা তস্য সহোদরা। অনিরুদ্ধঃ কথং চেশো ভবতোক্তঃ সনাতনঃ।।৫৪।। ত্রিধা সৃষ্টিশ্চ ব্রহ্মান্তে স্থুলা সূক্ষ্মা চ কারণা। স্থুলসৃষ্টয়ে সমুদ্ভূতো দেবো নারায়ণঃ স্বয়ম্।।৫৫।। নারায়ণী চ তচ্ছক্তিস্তয়োর্জলসমুদ্ভবঃ। জলাজ্জাতস বৈ শেষস্তস্যোপরি সমাস্থিতৌ।।৫৬।। সুপ্তে নারায়ণে দেবে নাভেঃ পঙ্কজমুত্তমম্। অনন্তয়োজনায়ামমুদভূচ্চ ততো বিধিঃ।।৫৭।। বিধেঃ স্থলময়ী সৃষ্টি দেবতিয্যঙনরাদিকা। সূক্ষ্মসৃষ্টয়ৈ সমদ্ভুতঃ সেহনিরুদ্ধ ঊষাপতিঃ।।৫৮।। ততো বীর্যময়ং তোয়ং জাতং ব্রহ্মান্তমস্তকে

৬৯৭

কালধামধারী তিনিই কৃষ্ণ এবং রাধা তাঁর সহোদরা। কর্মরূপী তিনি ব্রহ্মা, তাঁর সহোদরা নিয়তি। ধর্মরূপী মহাদেব, তাঁর সহোদরা শ্রদ্ধা। এই ব্রহ্মান্ডে তিন প্রকার সৃষ্টি আছে–এক স্থূলা, দুই সূক্ষ্মা এবং তিন কারণা। স্থূল সৃষ্টির জন্য বেদনারায়ণ স্বয়ং সমুদ্ভূত হয়েছেন, এবং তাঁর শক্তি নারায়ণী। সেই দুই জনের থেকে জলের জন্ম হয়েছে। জল থেকে শেষ সমুৎপন্ন। তার উপর তারা সমাস্থিতা। নারায়ণ দেব সুপ্ত হলে তাঁর নাভি থেকে উত্তম পংকজ উৎপন্ন হয়েছিল যার আয়াম অনন্ত যোজন বিস্তৃত, তার থেকে ব্রহ্মা উৎপন্ন হন। ৫৩-৫৭।।

বীর্যাজ্জাতস্য বৈ শেষস্তস্যোপরি স চাস্থিতঃ।।৫৯।। তস্য নাভেসমুদ্ভুতো ব্রহ্মা লোকপিতামহঃ। সূক্ষ্মসৃষ্টিস্ততো জাতা যথা স্বপ্নেপি দৃশ্যতে।।৬০।। হেতু সৃষ্ট্যৈ সমুদ্ভুতো বেদো নারায়ণঃ স্বয়ম্। বেদাৎকালস্ততঃ কর্ম ততো ধর্মাদয়ঃ স্মৃতাঃ।।৬১।। ত্বদ্‌গুরুশ্চ জগন্নাথ উঙদেশনিবাসকঃ। ময়া তত্রৈব গন্তব্যং সশিশেষ্যনাদ্য ভো দ্বিজাঃ।।৬২।। ইতি শ্রুত্বা তু বচনং কৃষ্ণচৈতন্যকিঙ্করাঃ। স্বাস্নাঞ্জিষ্যাস্নমায় তৎপশ্চাৎ প্ৰযযুশ্চ তে।।৬৩।। শাংকরা দ্বাদশগণা রামানুজমুপাযযুঃ। নামদেবাদয়স্তত্র গণাসপ্ত সমাগতাঃ।।৬৪।। রামানন্দং নমস্কৃত্য সংস্থিতাস্তস্য সেবকাঃ। রোপনশ্চ তদাগত্য স্বশিষ্যৈবহুভিবৃতঃ।।৬৫।।

সেই ব্রহ্মা থেকে দেব তির্যক এবং নর প্রভৃতি স্থূলময়ী সৃষ্টি হয়েছিল। সূক্ষ্ম সৃষ্টির জন্য ঊষাপতি অনিরুদ্ধ উৎপন্ন হন। তার থেকে ব্রক্ষান্ডের মস্ত কে বীর্যময় তোর উৎপন্ন হয়েছিল। সেই বীর্য থেকে শেষ উৎপন্ন হয তার উপর তিনি স্থিত তাঁর নাভি থেকে লোক পিতামহ উৎপন্ন হন। সেই ব্ৰহ্মা থেকে সূক্ষ্ম সৃষ্টি উৎপন্ন হয়েছিল। হেতু সৃষ্টির জন্য বেদ স্বয়ং নারায়ণ উৎপন্ন হয়েছিল। বেদ থেকে কাল –কাল থেকে কর্য এবং কর্ম থেকে ধর্ম প্রভৃতি উদ্ভব।। ৫৮-৬১।।

আপনার শুরু জগন্নাথ ঔড্রদেশ নিবাসী ছিলেন, হে দ্বিজগণ, আমাকে শিষ্যগণের সঙ্গে সেখানেই জানুন। এই প্রকার বচন মহাপ্রভু কৃষ্ণ চৈতন্যের কিংকরগণ শ্রবণ করলেন এবং সকলে নিজ নিজ শিষ্যদের ডেকে তার পশ্চাতে চলতে লাগলেন।। ৬২-৬৩।।

ভগবান শংকরাচার্যের বারগণ রামানুজের সমীপে এলেন। সেখানে নামদেবদি সাতগণ এসেছিলেন।। তাদের সেবক স্বামী রামানন্দকে নমস্কার করে সেখানে স্থিত হলেন এবং রোষণ সেই সেখানে শিষ্যগণের সাথে সেখানে এলেন।। ৬৪-৬৫।।

কৃষ্ণচৈতন্যমাগম্য নমস্কৃত্য স্থিতঃ স্বয়ম্। জগন্নাথপুরীং তে বৈ প্রযযুভক্তি তৎপরাঃ।।৬৬।। নিধয়ঃ সিদ্ধয়স্তত্র তেষাং সেবার্থমাগতাঃ। সর্বে চ দশসাহস্রা বৈষ্ণবাঃ শৈবশাক্তকৈঃ।।৬৭।। যজ্ঞাংশং চ পুরস্কৃত্য জগন্নাথপুরীং যযুঃ। অর্চাব তারো ভগবাননিরুদ্ধ ঊষাপতিঃ।।৬৮।। তদাগমনমালোক্য দ্বিজরূপধরো মুনিঃ। জগন্নাথঃ স্বয়ং প্রাপ্তো যত্র যজ্ঞাং শাকাদয়ঃ।।৬৯।। যজ্ঞাংশস্তং সমালোক্য নত্বা বচনমব্রবীৎ। কিং মতং ভবতা জাতং কলৌ প্রাপ্তে ভয়ানকে।।৭০।। তৎসর্বং কৃপায় হি শ্রোতুমিচ্ছামি তত্ত্বতঃ। ইতি শ্রুত্বা তু বচনং জগন্নাথো হরিঃ স্বয়ম্। উবাচ বচনং রম্যং লোকমঙ্গলহে তবে।।৭১।। মিশ্রদেশোদ্ভবা ম্লেচ্ছাঃ কাশ্যপেনৈব শাসিতাঃ। সংস্কৃতাঃ শূদ্রবর্ণেন ব্রহ্মবর্ণমুপাগতাঃ।।৭২।

তিনি মহাপ্রভু কৃষ্ণ চৈতন্যকে নমস্কার করে স্বয়ং সেখানে স্থিত হলেন। তার সকলে ভক্তিভাবে তৎপর হয়ে উৎপন্নাথ পুরীতে চলে গেলেন। সমস্ত নিধিগণ এবং সমগ্র দিদ্ধিগণ সেখানে তার সেবা করতে উপস্থিত হন। তার সকলে বৈষ্ণব, শৈব এবং শাক্তগণের সঙ্গে সংখ্যায় দশসহস্র ছিলেন। তার সকলে যজ্ঞাংশকে অগ্রভাগে স্থাপন করে জগন্নাথ পুরীতে আগত হলেন। অর্চাবতার ভগবান্ ঊষাপতি অনিরুদ্ধ সকলকে আগত দেখে দ্বিজ রূপ ধারণ করে মুনি জগন্নাথ স্বয়ং সেখানে প্রাপ্ত হলেন।। ৬৭-৬৯।।

যজ্ঞাংশ তাদের দেখে তাঁকে প্রণাম করলেন এবং বললেন–এই ভয়ানক কলিযুগে আপনারা কোন্ মত জ্ঞাত আছেন? কৃপাপূর্বক তা বলুন। আমি তত্ত্বরূপে তা শ্রবণ করতে ইচ্ছা করি। একথা শ্রবণ করে জগন্নাথ হরি স্বয়ং পরম রম্য বচন লোক মংগলের জন্য বললেন।। ৭০-৭১।।

শিখাসূত্রং সমাধায় পঠিত্বা বেদমুত্তমম্। যজ্ঞৈশ্চ পূজয়ামাসুদেবদেবং শচীপতিম্।।৭৩।। দুঃখিতো ভগবানিদ্ৰঃ শ্বেতদ্বীপমুপাগতঃ। স্তত্যা মাং বোধয়ামাস দেবমঙ্গলহে তবে।।৭৪।। প্রবদ্ধং মাং বচঃ প্রাহ শৃণু দেব দয়ানিধে। শূদ্রসংস্কৃতমন্নং চ খাদিতুং ন দ্বিজোহ ইতি।।৭৫।। তথা চ শূদ্ৰজনিতৈৰ্যজ্ঞৈস্তৃপ্তিং ন চাপুয়াম্। কাশ্যপে স্বৰ্গতে প্রাপ্তে মাগধে রাজ্ঞি শাসতি।।৭৬।। মম শত্রুবলিদৈত্যঃ কলিপক্ষমুপাগতঃ। নিস্তেজাশ্চ যথাহংস্যাং তথা বৈকতুমুদ্যতঃ।।৭৭।। মিশ্রদেশোদভবে ম্লেচ্ছে সাংস্কৃতী তেন সংস্কৃতা। ভষা দেববিনাশায় দৈত্যানাং বৰ্দ্ধনায় চ।।৭৮।।

উত্তমবেদ পাঠ করতে এবং যজ্ঞের দ্বারা শচীপতি মহেন্দ্রকে পূজন করতে লাগলেন।। ৭২-৭৩।।

দুঃখিত ভগবান্ ইন্দ্ৰ শ্বেত দ্বীপে এলেন এবং স্তুতি দ্বারা দেবগণের মঙ্গলের জন্য আমাকে বোধিত করলেন। যখন আমি প্রবুদ্ধ হলাম তখন আমাকে এই কথা বলেছিলাম- হে দেব, হে দয়ানিধি, শ্রবণ করুন, শূদ্র দ্বারা সাধিত অন্ন দ্বিজের খাওয়ার যোগ্য নয়। এবং শূদ্রের দ্বারা কৃত যজ্ঞতে আমি তৃপ্ত হই না। কশ্যপ স্বর্গগত হলে মাগধ রাজাকে শাসন করতে আমার শত্রু দৈত্যরাজ বলি কলিযুগপক্ষে আগত হলেন। তিনি এমন কার্য করতে উদ্যত যার ফলে আমি তেজ হীন হয়ে যাব।। ৭৪-৭৭।।

মিশ্র দেশে জাত ম্লেচ্ছগণের মধ্যে যাঁরা সাংস্কৃতী ছিলেন তারা তাঁকে সংস্কৃত করলেন। সেই ভাষা দেবগণকে বিনাশ করার জন্য এবং চৈত্যগণকে বর্ধন করতে তিনি করলেন।। ৭৮।।

আৰ্য্যেষু প্রাকৃতী ভাষা দূষিতা তেন বৈ কৃতা। অতো মাং রক্ষ ভগবম্ভবন্তং শরণাগতম্।।৭৯।। ইতি শ্রুত্বা তদাহং বৈ দেবরাজমুবাচ হ। ভবন্তো দ্বাদশাদিত্যা গন্তুমমতি ভূতলে।।৮০।। অহং লোকহিতার্থায় জনিষ্যামি কলৌ যুগে। প্রবীণো নিপুণোহভিজ্ঞঃ কুশলশ্চ কৃতী সুখী।।৮১।। নিষ্ণাতঃ শিক্ষিতশ্চৈব সর্বজ্ঞ সুগতস্তথা। প্রবুদ্ধশ্চ তথা বুদ্ধ আদিত্যাঃ ক্ৰমতো ভবাঃ।।৮২।। ধাতা মিত্রোহমা শক্রোমেঘঃ প্রাংশুভর্গস্তথা। বিবস্বাংশ্চ তথা পূষা সবিতা ত্বাষ্ট্রবিষুকৌ। কীকটে দেশ আগত্য তে সুরা জজ্ঞিরে ক্রমাৎ।।৮৩।। বেদনিন্দাং পুরস্কৃত্য বৌদ্ধশাস্ত্রমচীকরণ। তেভ্যো বেদাসমাদায় মুনিভ্যঃ প্রদদুসুরাঃ।।৮৪।। বেদনিন্দা প্রভাবেণ তে সুরাঃ কুষ্ঠিনোহ ভবন্ বিষুদেবমুপাগম্য তুষ্টুবুবৌদ্ধরূপিণম্।।৮৫।।

আর্যদের প্রাকৃত ভাষা তাঁরা দূষিত করলেন। এই কারণে হে ভগবান্ আপনি আমাকে রক্ষা করুন। আমি আপনার শরণে রয়েছি একথা শ্রবণ করে সেই আমি দেবরাজকে বলেছিলাম–আপনি দ্বাদশ আদিত্য সহ ভূতলে যান এবং আমি লোকহিতের জন্য কলিযুগে জন্ম গ্রহণ করব। প্রবীণ -নিপুণ-অভিজ্ঞ-কুশল-কৃতী-সুখী-নিষ্ণাত-শিক্ষিত-সর্বজ্ঞ এবং সুতহ- প্রবদ্ধ এবং বুদ্ধ এই সকল আদিত্য ক্রমান্বয়ে ছিলেন। ধাতা-মিত্র-অর্যমা- শত্রু-মেঘ-প্রাংশু গর্ভ -বিবস্বান্-পূষা-সবিতা-ত্বাষ্ট্র-বিষ্ণুক এই সুরগণ কীকট দেশে এসে ক্রমান্বয়ে উৎপন্ন হন। তাঁরা সকলে প্রথমে বেদ নিন্দা করে পুনরায় বৌদ্ধ শাস্ত্র রচনা করেছিলেন। সুরগণ সেই সকল বেদগ্রহণ করে মুণিগণকে দিয়েছিলেন।। ৭৯-৮৪।।

হরির্যোগবলেনৈব তেষাং কুষ্ঠমনাশয়ৎ। তদ্দোষান্নগ্নভূতশ্চ বৌদ্ধস তেজসা ভবৎ।।৮৬।। পূর্বাদ্ধাগ্নেমিনাথশ্চ পরাদ্ধাদ্বৌদ্ধ এব চ। বৌদ্ধরজ্যবিনাশায় দারুপাষাণ রূপবান্।।৮৭।। অহং সিন্ধুতটে জাতো লোকমঙ্গলহে তবে। ইন্দ্রদ্যুম্নশ্চ নৃপতিঃ স্বর্গলোকাদুপাগতঃ। মন্দিরং রচিতং তেন তত্রাহং সমুপাগতঃ।।৮৮।। অদ্র স্থিতশ্চ যজ্ঞাংশপ্রসাদমহিমা মহান্। সর্ববাঞ্ছিতদং লোকে স্থাপয়ামাস মোক্ষদম্।।৮৯।। বর্ণধর্মশ্চ নৈবাত্র বেদধর্মস্তথা ন হি। ব্ৰতং চাত্র ন যজ্ঞাংশমন্ডলে যোজনান্তরে।।৯০।। যেনোক্তা যাবনী ভাষা যেন বৌদ্ধো বিলোকিতঃ। তস্য প্রাপ্তং মহৎপাপং স্থিতোহ হং তদঘাপহঃ। মাং বিলোক্য নরঃ শুদ্ধঃ কলিকালে ভবিষ্যতি।।৯১।।

বেদ নিন্দার প্রভাবে তারা সকলে দেব কুষ্ঠী হয়ে গেলেন। তারা বিষ্ণুর কাছে এসে তাঁর স্তুতি করেছিলেন। হরি যোগবলে তাঁদের কুষ্ঠ নাশ করলেন। তাদের দোষ থেকে নগ্নভূত তেজ তেথে বৌদ্ধ হয়ে পূর্বাদ্ধে তারা নেমিনাথ হয়েছিলেন এবং পরার্দ্ধে তারা বৌদ্ধ হয়ে গেলেন। বৌদ্ধ রাজ্য বিনাশ করতে দারু পাষাণ রূপী হলেন।। ৮৭।।

আমি সিন্ধুতটে লোকমঙ্গলের জন্য জাত হলাম। রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন স্বর্গ লোক থেকে উপাগত হলেন। তিনি মন্দির রচনা করেন। সেখানে আমি আগত হলাম।। ৮৮।।

সেখানে স্থিত যজ্ঞাংশের প্রসাদের মহান্ মহিমা লোকের সমস্ত বাঞ্ছা প্রদানকারী তথা মোক্ষ প্রদানকারী। সেখানে যেকোনো বিশেষ বর্ণধর্ম ছিল না এবং কোনো বেদধর্মও ছিল না। এই যোজনান্তরে যজ্ঞাংশ মন্ডলে কোনো ব্রত নেই। যিনি যাবনী ভাষা বলেন, যিনি বৌদ্ধকে দেখেছেন, তিনি মহাপাপ প্রাপ্ত হয়েছেন, তাদের পাপ অপহরণকারী সেখানে স্থিত আছেন। এই কলিতে আমাকে দর্শন করলে নর শুদ্ধ হন।। ৯০-৯১।।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *