চিকিৎসা
একটা দশহাজারি বড় গল্পের বায়না পেয়েছিলাম। চমৎকার প্লট ফেঁদে বসেছিলাম, একাধিক চনমনে রমণী, উপযুক্ত লম্পট নায়ক, হাতুড়ে ডাক্তার-কাম-গোয়েন্দা, এমনকী একজন বিনোদন দালাল সমেত বিদেশি কুকুর রীতিমতো জমজমাট কাহিনি।
কিন্তু, সত্যি বলছি, একদিন রাত বারোটায় তিন হাজার শব্দের মাথায় ফ্যাসাদে পড়ে গেলাম। ডান হাতের বুড়ো আঙুলটা কেমন বেঁকে গেল, তর্জনী চিনচিন করতে লাগল। শুধু তাই নয়, হাতের তালু কনকন করতে লাগল, কবজি টনটন করতে লাগল। অবশ্য ভুল হতে পারে, কাকে কী বলে জানি না, কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই, এমনও হতে পারে হাতের তালু চিনচিন করছিল, কবজি কনকন করছিল, তর্জনী টনটন করছিল।
তখন কিন্তু ফ্লো এসে গিয়েছিল, কিন্তু নিতান্ত অপারগ হয়ে আলো নিভিয়ে, খাতা বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম।
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আঙুল ফুলে কলাগাছ; হাত ফুলে ঢোল। এবং অসহ্য ব্যথা। দরজার ছিটকিনি খুলতে পারছি না। কনুই-কবজি ঘুরিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে পারছি না। মাথার ওপরে হাত তুলে গেঞ্জি খুলতে গিয়ে চোখে জল আসছে। যদি হঠাৎ কোনও কারণে পুলিশ, গোয়েন্দা কিংবা দুষ্কৃতী আমাকে পিস্তল দেখিয়ে হ্যান্ডস আপ করতে বলে গুলি খেয়ে প্রাণ। গেলেও হাত মাথার ওপরে তুলতে পারব না।
বাড়িতে, পাড়ায়, অফিসে সবাই খুব সহানুভূতিপ্রবণ এবং উপদেশপরায়ণ হয়ে উঠলেন। আমাদের কাজের মেয়ে বাসনা বলল, একটা ঠিকমতো সূচ নিলেই সেরে যাবে। সূচ মানে ইঞ্জেকশন, তবে ঠিকমতো ইঞ্জেকশনটা যে কী সেটা সে জানে না। আমার স্ত্রী মিনতি দেবী বললেন, মোটা কমাতে হবে। ফ্যাট বেড়ে গিয়ে এরকম হয়েছে। আমার জন্যে এই একটি সর্বরোগহর দাওয়াই তাঁর আছে। কিন্তু রাতারাতি রোগা হব কী ভাবে? তত দিন এই যন্ত্রণা সহ্য করা অসম্ভব।
আমার ছোটভাই বিজন একটু মমতাপ্রবণ। সে আমার দুর্দশা দেখে বলল, রসুন, কালোজিরে দিয়ে সরষের তেল গরম করে একটু মালিশ করে দিলে আরাম হবে। স্বভাবত অলস বিজন সেদিন সকালে অফিস যাওয়ার আগে চেতলায় গিয়ে কাঠের ঘানির সরষের খাঁটি তেল কিনে আনল। তারপর সেটা রসুন আর কালোজিরে দিয়ে গরম করে আমার হাত মালিশ করতে এল।
ভ্রাতৃযুদ্ধের অসামান্য বর্ণনা রামায়ণ-মহাভারতে আছে। সুন্দ-উপসুন্দ, বালি-সুগ্রীব, পাণ্ডব-কৌরবের কাহিনী সর্বজনবিদিত। সুতরাং নির্ভয়ে বলতে পারি, সেদিন বিজন তেল মালিশ শুরু করার স্পিলট সেকেন্ড অর্থাৎ ভগ্নাতিভগ্ন অনুপলের মধ্যে, গরম তেল, হাতের মালিশ ইত্যাদির আধিভৌতিক স্পর্শে আমার সংবেদনশীল দেহ, এক্ষেত্রে ডান হাত, পাগল হয়ে গেল।
আমি এক ঝাপটা দিয়ে গরম তেলের বাটি ফেলে দিতে চেষ্টা করলাম। তার পর বিজনকে বাঁ হাতে একটা চড় মারলাম। ছোটভাইকে চড় মারায় কোনও দোষ নেই। কিন্তু এক্ষেত্রে একটু দেরি হয়ে গেল। বিজনকে শেষবার চড় মেরেছিলাম উনিশশো পঞ্চাশ সালে। অঙ্ক আর ইংরেজিতে ফেল করেছিল বলে।
বিজনও সঙ্গে সঙ্গে চুয়াল্লিশ বছর আগের অত্যাচারের শোধ নিয়েছিল, ভাল ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়ের মতো সেই ঝাপটায় পড়ে যাওয়া গরম তেলের বাটি শূন্য থেকে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছিল।
পায়ের পাতা থেকে মাথার ব্রহ্মতালু পর্যন্ত শরীরের যে সমস্ত আটকা জায়গা সেখানে বৃষ্টি বিন্দুর মতো ছিটোতে ছিটোতে জ্বালাতে জ্বালাতে সেই গরম তেলের বাটি এসে পড়ল আমার খাটের পিছনে। আমার যন্ত্রণার সঙ্গে জ্বালা যুক্ত হল।
ভালমানুষ বিজন একটু পরে আত্মস্থ হয়ে আমার সেই উষ্ণ তৈল চর্চিত মুখাবয়বে শ্বেতচন্দন ঘষে এনে প্রলেপ লাগিয়ে অফিস গেল।
এই শত্ৰুপুরী বসবাসের অযোগ্য এই বিবেচনায় আমিও অফিসে গেলাম গেঞ্জিহীন হাফহাতা বুকখোলা জামা পরে ফুল্লহস্ত এবং চন্দনচর্চিত বদন নিয়ে।
একই সঙ্গে মুখ পোড়া এবং হাত ফোলা লোক কদাচিৎ দেখা যায়। সুতরাং আমার কাজের জায়গার লোকেরা আমাকে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল, অনেকেই অবশ্য নিরাপদ দূরত্ব থেকে। বোধহয় তাদের কারও কারও ধারণা হয়েছিল, আমি কামড়ে টামড়ে দিতে পারি।
দুঃখের বিষয় আমার এখনকার অফিসের লোকেরা আমার সম্পর্কে সম্যক জানেন না। এখানে আমি মাত্র কয়েকদিন আগে এসেছি এবং সেই জন্যেই এই রকম দৈহিক অবস্থাতেও, নিতান্ত নতুন কাজ বলে অফিসে এসেছি।
আমার পাশের ঘরেই বসেন রসরাজবাবু। মাত্র এই কয়েকদিনে ভদ্রলোককে বুঝে উঠতে পারিনি। তিনি আমার অবস্থা দেখে এবং সব শুনে পরামর্শ দিলেন আদা-চা খেতে।
এই জায়গায় আমি এসেছি মাত্র দিন দশেক আগে। মনে পড়ল গত দশদিনে একদিন আমার পেটের গোলমাল, আরেকদিন সর্দিজ্বরের মতো হয়েছিল। আসলে শরীরটা কিছুকাল জুতসই যাচ্ছে না। সে যা হোক, পেট ব্যথায় এবং জ্বরে, আগের দুবারই তিনি আদা-চা খেতে বলেছিলেন।
একটু পরেই এলেন আমাদের অফিসের কেয়ারটেকার। যৌবনে তিনি মল্লবীর ছিলেন। তাঁদের বীরের বংশ। অবিভক্ত বাংলায় তার জ্যাঠা নোয়াখালিশী হয়েছিলেন; তার মাসতুতো বোন বেদান গার্লস স্কুলের বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় পরপর তিন বছর কলসমাথায় দৌড়ে প্রথম হয়েছে। তিনি নিজে সকালবেলায় এখনও খালি পেটে ছয় গেলাস জল খেতে পারেন।
এই রকম শক্তিমান লোকের নাম কোনও এক অজ্ঞাত কারণে নুলোবাবু। নুলোবাবু আমার ঘরে ঢুকে অল্প কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলার পর হঠাৎ ডান-বা দুই হাত ফুল স্পিড পাখার মতো ঘোরাতে লাগলেন। তার যে হাত ফোলা-ফাপা নয় বোধ হয় সেটাই প্রমাণ করতে চাইলেন। একটু পরে হস্তঘূর্ণন থেকে বিরত হয়ে তিনি জানালেন যে, তিনি ইচ্ছে করলে এরকম ঘন্টার পর ঘণ্টা করে যেতে পারেন।
শুনে চমৎকৃত হলাম এবং এবার তিনি বললেন, আপনি যদি আপনার দুটো হাত এভাবে ঘোরান, অন্তত কয়েক মিনিট তা হলে ফোলা ব্যথা কিছুই থাকবে না।
আমি বললাম, কিন্তু আমি তো যন্ত্রণায় হাত তুলতেই পারছি না। ঘোরাব কী করে? তিনি বললেন, ডান হাতে যখন যন্ত্রণা ওই হাতটা আপাতত বাদ থাক। বাঁ হাত ঘোরালেও কাজ হবে। বাঁ হাতের টানে ডান হাতের ব্যথা-ফোলা উপশম হবে।
অনুরোধে লোকে চেঁকি গেলে, আমি বাঁ হাত ঘোরালাম। প্রথমবার পাক দিয়ে হাতটা যেই মাথার ওপরে শূন্যে তুলেছি নামানোর মুখে হঠাৎ বাঁ কাঁধে একটা খট করে শব্দ হল। বাঁ কাধ থেকে একটা তুমুল যন্ত্রণা ঘাড় বেয়ে ব্রহ্মতালুর দিকে উঠতে গিয়ে আমার নিরেট ঘিলুতে বাধা পেয়ে বিপুল বেগে আমার শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে এল। মাথা ঝিমঝিম করে অজ্ঞান হয়ে গেলাম।
দণ্ডায়মান হয়ে হস্তঘূর্ণন ক্রিয়ায় রত হয়েছিলুম। ভাগ্য ভাল নুলোবাবু খুব কাছেই সামনাসামনি দাঁড়িয়েছিলেন, চোখে অন্ধকার দেখে যখন শিকড়বিচ্ছিন্ন কলাগাছের মতো পতনোন্মুখ হয়েছিলাম তিনিই তাঁর বলিষ্ঠ বাহুর আকর্ষণে আমাকে রক্ষা করলেন।
কিন্তু শেষ রক্ষা হল না।
সেই যে রহস্যময় খট শব্দ হয়েছিল আমার বাঁ কাঁধে। তার পরবর্তী ব্যথা-যন্ত্রণা পূর্ণতা পেলে কিছুক্ষণের মধ্যে। ডান হাতের মতোই বাঁ হাত ফুলে উঠল এবং সমপরিমাণ যন্ত্রণা হতে লাগল।
অফিসে আর বসে থাকা সম্ভব হল না। কোনও রকমে বেরিয়ে পড়লাম।
খবরের কাগজে এক বেদনাহর চিকিৎসা ব্যবস্থার সচিত্র বিজ্ঞাপন পড়েছিলাম। জায়গাটা কাছেই, কোনও চেষ্টা না করেই খুঁজে পেলাম।
পাশের একটা গলির মধ্যে খঞ্জ ও পঙ্গু ব্যক্তিদের যাতায়াত আগে লক্ষ করেছি। আজ অনুমানে সেই গলির মধ্যে ঢুকে দেখলাম, ঠিকই এসেছি।
চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রবেশ করে, আশি টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ঘণ্টা দেড়েক আমারই মতো অষ্টাবক্র যন্ত্রণাকাতর কয়েকজন রোগী-রোগিনীর সঙ্গে ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করার পর অবশেষে আমার ডাক পড়ল, আমার পালা এল।
চেম্বারের মধ্যে ফিকে নীল আলো জ্বলছে। একটা ঘোরানো চেয়ারে সাদা অ্যাপ্রন পড়া মধ্যবয়সি, স্থূলোদর চিকিৎসক মহোদয় বসে রয়েছেন। তাঁর সামনে একটি সোফা, যাকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে কোচ বা কৌচ। ডাক্তারবাবু অঙ্গুলি নির্দেশ করে আমাকে ওই সোফায় শায়িত হতে বললেন। জুতো, কোট, টাই খুলে আমি শুয়ে পড়লাম।
এবার ডাক্তারবাবু একটা ঘণ্টা বাজালেন। অন্তরাল থেকে নার্সের পোশাক পরা এক শক্তসমর্থ মহিলা একটা রবারের হাতুড়ি হাতে বেরিয়ে এলেন এবং তারপর পায়ের গোড়ালি থেকে ঘাড় পর্যন্ত নির্মমভাবে সেই মহিলা আমাকে সেই রবারের হাতুড়ি দিয়ে পেটাতে লাগলেন। অবশেষে একটি মোক্ষম আঘাত মাথার চাঁদিতে করলেন। আমার মাথাটা একটু ফাঁকা, ঢিলে তবলার মতো একটা প্রায় অব্যক্ত চাপা কান্নার মতো শব্দ বেরল, আমি আবার সংজ্ঞাহীন হলাম।
শারীরিক যন্ত্রণায় অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আমার আগে ছিল না।
কিন্তু সত্যিই আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। সেই বেদনাদায়ক কাহিনি এই হালকা হাসির রচনায় টেনে আনা অনুচিত হবে। সরাসরি পরবর্তী অভিজ্ঞতার কথা বলি।
অফিস যাওয়া স্থগিত রইল। বাসায় বসে পরিচিত যন্ত্রণাহর মলম লাগাতে লাগালাম দূরদর্শনের বিজ্ঞাপন দেখে। কয়েকদিন ছয় ঘণ্টা অন্তর দুটো করে দারুণ ট্যাবলেট খেতে লাগলাম। এ ওষুধগুলো আসলে খাঁটি বিষ। চোখ লাল, কান ভোঁ-ভোঁ, মাথা ঝিমঝিম ইত্যাদি নতুন উপসর্গ দেখা দিল।
অতঃপর গরম জলে স্নান, হটওয়াটার ব্যাগ এই সবের আশ্রয় নিলাম। কিন্তু কোনও সুরাহা হল। ব্যথা-যন্ত্রণা প্রায় একই রকম রয়ে গেল। তবে কোথাও বাঁধা-ধরা ব্যথা নয়। কখনও ডান হাতে তীব্র ব্যথা, কখনও বা বাঁ হাতে, কখনও কাঁধে, কখনও কনুইতে বা বাহুতে, সতত সঞ্চরমাণ, ভ্রাম্যমাণ ব্যথা। যথেষ্ট কষ্ট পেতে লাগলাম।
দরজার ছিটকিনি খুলতে পারি না। গেঞ্জি গায়ে দিতে পারি না। মাথা আঁচড়াতে গেলে কঁধ থেকে কবজি পর্যন্ত চিনচিন করে ওঠে। বিছানায় পাশ ফিরতে পারি না।
প্রতিবেশী পরামর্শ দিলেন, খাট ত্যাগ করে, বালিশ-তোষক ছেড়ে শতরঞ্চি পেতে তক্তাপোশের ওপরে শোবেন। তা-ই করলাম।
বহুদর্শী রমেশ মামা আমার ছোট ভাইয়ের মুখে আমার অবস্থার কথা জেনে আমাকে পোস্টকার্ডে জানালেন, টক খাইবে না, জাপান খাইবে না, ঠান্ডা জল খাইবে না, কোনও রকম নেশাই চলিবে না, ঠান্ডা জলে স্নান চলিবে না, যথাসাধ্য সম্ভব গায়ে রৌদ্র লাগাইবে।
ভাদ্র মাসের তালপাকা রোদে কতক্ষণই বসে বা দাঁড়িয়ে থাকা যায়। ব্যথা উপশম হওয়ার কোনও লক্ষণ নেই, মধ্যে থেকে আমার মুখটা রোদে পুড়ে হনুমানের মতো কালো হয়ে গেল। চেহারার মধ্যে একটু হনুমানত্ব আমার চিরকালই ছিল, এবার হনুমান হতে বাকি রইল শুধু একটি ছোট লেজ। মনে মনে ধরে নিলাম, এতই যখন হল, সেও হয়তো একদিন প্রস্ফুটিত হবে। কিন্তু, তবুও যদি মহাবীর হনুমানের মতো সাবলীল লম্ফঝম্প করতে পারতাম, তা হলে এ নিয়ে আমার মনে খুব একটা দুঃখ থাকত না। সংক্ষেপে বলি, ব্যথা-যন্ত্রণা মোটেই কমল না। যখন সব আশা ছেড়ে দিয়েছি, ধরে নিয়েছি যে আগামী জীবন আমাকে এই অসহনীয় ভাবেই কাটাতে হবে, তখন আশার আলো দেখতে পেলাম।
আশার আলো মানে সত্যি আলো। প্রায় টেবিল ল্যাম্পের মতোই দেখতে। সুইচ জ্বাললে লাল কাঁচের ভিতর দিয়ে উত্তপ্ত আলোর বিচ্ছুরণ হয়, ফোলা জায়গায় ওই আলো ফেললে বেশ আরাম হয়।
কিন্তু তখন আমার ঊর্ধ্বাঙ্গে দুই হাতের বিস্তৃত এলাকাসহ কঁধ ডিঙিয়ে নীচে শিরদাঁড়া বেয়ে এবং ওপরে ঘাড় বেয়ে ফোলা ও বেদনা প্রসারিত হয়েছে। তদুপরি আমার এই বিপুল দেহ। এ রকম একটা-দুটো আলোয় আমার কিছু হওয়ার নয়, যদি এই আলো-চিকিৎসায় উদ্ধার পেতেই হয়, তা হলে অন্তত পনেরো-বিশটা এ জাতীয় ল্যাম্প একসঙ্গে ব্যবহার করতে হবে।
ইতিমধ্যে অন্য একটা ব্যাপার হয়েছে। সেটা উল্লেখ করা প্রয়োজন।
আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী ভাদ্র মাস শেষ হতেই বাড়ি বদলালেন, কাছাকাছি কোথাও গেলেন। তার একটি মাথামোটা, গোদা পা হুলোবেড়াল ছিল। যাওয়ার দিন দেখলাম, তিনি বেড়ালটাকে ফেলে গেলেন না, গাড়িতে করে নিয়ে গেলেন।
কিন্তু বেড়ালের যা স্বভাব। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সে ফাঁকা বাড়িতে ফিরে এল। তারপর চেষ্টা করল আমাদের ফ্ল্যাটে ঢুকতে। এমনিতে বেড়াল এলেই আমরা দ্যাখ-মার করি, কিন্তু প্লেগের বাজারে বেড়ালটাকে আমরা দুধ-মাছ দিয়ে বরণ করে নিলাম।
কয়েক দিনের মধ্যে প্লেগের আতঙ্ক দূর হল। কিন্তু বেড়ালটা বড় বাড়াবাড়ি শুরু করে দিল। চুরি করা শুরু করল, ডাকাতিও আরম্ভ করল। আমাদের খাওয়ার সময়ে টেবিলের নীচে এসে রাহাজানি করতে লাগল। আমাদের খাবারের থালা থেকে মাছের টুকরো না দিলে বা দিতে একটু দেরি হয়ে গেলে সে তার শক্ত-সমর্থ গোদা পায়ে আমাদের লাথি মারতে লাগল। রীতিমতো অলরাউন্ডার–বা পা, ডান পা সমানে চলে। দুবার মেরে তাড়ালাম, একবার বস্তায় করে ফেলে এলাম। কিন্তু সে ঠিক ফিরে এল। একদিন টেবিলে বসে ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে পিঠে লাল আলো দিচ্ছি, বেড়ালটা বোধহয় ভেবেছে কিছু খাচ্ছি। পায়ের গোড়ালির গিটে পর পর দুবার সজোরে লাথি মারল। আমার কেমন মাথা গরম হয়ে গেল। আমি ল্যাম্পের মুখটা ঘুরিয়ে বেড়ালের মুখে তীব্র লাল আলো ফেললাম।
বেড়ালটা হকচকিয়ে গেল। তারপর ল্যাজ তুলে এক লাফে জানলার ওপরে উঠে, জানলা দিয়ে বাইরে লাফিয়ে পড়ল। অবশেষে চোঁচা দৌড়।
বেড়ালটা আর ফেরেনি। আমার ব্যথা-ফোলাও সম্পূর্ণ দূর হয়েছে, বোধহয় গোড়ালির গিটে বেড়ালের লাথি খেয়ে।