চাষির মুখে হাসি
সুবেশ চৌধুরী সাধারণ লেখক নন। তিনি একজন বুদ্ধিজীবী লেখক। সমাজের প্রতি তিনি দায়বদ্ধ, তার দায়িত্ববোধ আছে। তার প্রতিটি লেখাই আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে। হাসি মশকরার লেখা লিখে তিনি হাস্যাস্পদ হতে চান না।
সুবেশবাবুর প্রতিটি রচনাই গুরুগম্ভীর। জীবনের সমস্ত তিক্ততা তাঁর রচনার পাতায় ফুটে ওঠে। দুষ্ট লোকেরা বলে সুক্তো বা তেতো রাঁধতে গেলে মহার্ঘ সজনে ডাঁটা, উচ্ছে করলা এসব না কিনে সুবেশবাবুর বইয়ের একটি পৃষ্ঠা ছিঁড়ে রান্না করলেই চমৎকার তেতো হয়ে যাবে।
কিন্তু সুবেশবাবু নানা রকম পুরস্কার প্রাপ্ত, গণ্যমান্য লেখক। সাধারণ পাঠক তার লেখা পড়ুক না পড়ুক সাহিত্যের বড়কর্তারা তাকে খাতির করেন।
তা করুক। এরকম খাতির তো কত লোকই পায়। কিন্তু সম্প্রতি সুবেশ চৌধুরী একটি সাহিত্যিক কাজের বরাত পেয়েছেন। সরকার থেকে তার কাছে অনুরোধ এসেছে বই লেখার জন্য।
বইটির উদ্দেশ্য অতি মহৎ। গ্রামের গরিব মানুষেরা নানা রকম দুঃখ কষ্টে দিন কাটান। আজকাল এঁদের মধ্যে অনেকে নৈশ বিদ্যালয়ে কিংবা বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্রে লেখাপড়া শিখেছেন। এই সব সদ্য শিক্ষিত মানুষের মুখে হাসি ফোঁটাতে হবে। তাদের জন্য সরস এবং প্রাঞ্জল ভাষায় হালকা চালে মজার বই লিখতে হবে।
অনেক টাকার কাজ। তার ওপরে সরকারি ব্যাপার। প্রায় কিছুই না ভেবে-চিন্তে এক কথায় এই প্রস্তাবে সুবেশবাবু রাজি হয়ে গেছেন। সতীদাহ থেকে আদিবাসী সমস্যা, বেকার জীবন থেকে শ্রমিক ধর্মঘট কত কিছুর ওপরে সারা জীবন ধরে ভারী ভারী, মর্মান্তিক উপন্যাস লিখেছেন সুবেশ চৌধুরী।
তাঁর রচিত ভাইয়ের রক্ত, গির্জায় আগুন, সাকার-নিরাকার বেকার ইত্যাদি বইতে তিনি তার মুনশিয়ানার স্বাক্ষর রেখেছেন। প্রগতিশীলতার চূড়ান্ত দেখিয়ে ছেড়েছেন। তবে গ্রাম বা গ্রামের লোকদের নিয়ে কখনও কিছু লেখেননি।
সুবেশবাবুর সমস্যাটা বেশ কঠিন। তিনি জন্মেছেন কলকাতার কালীঘাটে। সেখানেই বড় হয়েছেন। অল্প কিছুদিন হল একটা ফ্ল্যাট কিনে হাজরা রোডে চলে এসেছেন।
সুবেশবাবু কলকাতার বাইরের প্রায় কিছুই জানেন না। ওই রেলগাড়িতে চড়ে যেতে যেতে জানলা দিয়ে দেখা ধানখেত, জলাজমি, তাল খেজুরের গাছ, মানুষজন, পাড়াগেঁয়ে বাড়িঘর এই সব। একবার বারাসতের কাছে একটা গ্রামে পিকনিকে গিয়ে খেতের আলপথ দিয়ে হাঁটতে গিয়ে শামুকে পা কেটে রক্তারক্তি হয়ে যায়। এর চেয়েও মারাত্মক হয়েছিল পরে একবার।
সে বছর যে মাঠে পিকনিক হচ্ছিল তারই পাশে কড়াইশুটির খেত। মটরগাছের নধর, নরম লতায় তখন কড়াইশুটি সবে দানা বাঁধছে। আনমনে গোটাদুয়েক কড়াইশুটি ছিঁড়ে মুখে ফেলেছিলেন। কোথাও কিছু নেই হঠাৎ কোথা থেকে হা-রে-রে করে একটা মোটা বাঁশের লাঠি হাতে ষণ্ডা মতন একটা লোক তাড়া করে এল।
তারপর এই মারে কি সেই মারে। সেই দুর্দান্ত লোকটি যিনি নাকি ওই খেতের বর্গাদার, সুবেশবাবুর কলার চেপে ধরে বললেন, পুরো মাঠের মটরের দাম না দিলে তোমাকে এই খেতের মধ্যে পুঁতে রাখব।
পিকনিকের লোকেরা ছুটে এসে সুবেশকে উদ্ধারের চেষ্টা করে। তারা বলে, ইনি মাত্র দুটো কি তিনটে শুঁটি খেয়েছেন, তার জন্য পুরো মাঠের ফসলের দাম দিতে হবে?
ততক্ষণে ভিড় জমে গেছে। সবাই বর্গাদারের বন্ধু। তারা বলল, এ হল সর্বমঙ্গলা ঠাকুরানির দেবোত্তরের মাঠ। পুরো মাঠের ফসল এই ভদ্রলোক এঁটো করে দিয়েছেন। পুরো মাঠের ফসলের দামই দিতে হবে। না হলে ছাড়া হবে না।
সেদিনের বিড়ম্বনার কথা ভাবলে আজও সুবেশ চৌধুরী ঘেমে ওঠেন।
অথচ ভাগ্যের এমন পরিহাস যে এখন সেই গ্রামের বিষয়েই সুবেশবাবুকে লিখতে হচ্ছে।
তদুপরি সরস করে লিখতে হচ্ছে।
হাসি-ঠাট্টা, হাস্য-কৌতুক সুবেশবাবুর মোটেই পছন্দ নয়। তিনি যে খুব বেরসিক তা নন কিন্তু আজকের লেখার বাজারে মজা করে লিখলে কোনও সুবিধে হয় না।
আর তা ছাড়া সত্যিকথা হল এই যে মজার কথা লিখতে গেলে মনে, মাথায় ও কলমে যেরকম ঢেউ ওঠে সে ঢেউ সুবেশবাবু আয়ত্তে আনতে পারেন না।
কিন্তু একে সরকারি কাজ, অনেক টাকা। তার ওপরে এক বাক্যে রাজি হয়ে গেছেন। এখন আর পিছিয়ে যাওয়ার উপায় নেই।
তবে একটা জিনিস সিদ্ধান্ত নিলেন সুবেশবাবু। গ্রাম সম্বন্ধে নতুন করে কিছু জানার চেষ্টা করবেন না। ওপরে ওপরে যেটুকু জানেন তাই দিয়ে আলগোছে কাজ সারবেন।– এই তো তার সেই পুরস্কার বিজয়ী উপন্যাস বাঁশি কবে বাজবে সামনে রয়েছে, এখানে বাঁশি মানে কারখানার বাঁশি। শ্রমিক আন্দোলনের পটভূমিকায় লেখা, যে বিষয়ে তার জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা দুইয়েরই অভাব।
সুবেশবাবু ঠিক করলেন গ্রামের ব্যাপারটিও সেইরকম আলগা আলগা ভাবে ঘেঁবেন। আর ফঁকফোকর রেখে লিখতে গেলে কবিতা করে লেখাই ভাল।
তবে সবটা পদ্যে লেখা পোষাবে না সুবেশবাবুর পদ্য বিশেষ আসেও না গদ্য-পদ্য মিলিয়ে মিশিয়ে লিখে ফেলবেন। বাঁচোয়া এই যে সদ্য শিক্ষিতদের জন্য বইটি মাত্র চৌষট্টি পাতার, তার আবার অর্ধেক পৃষ্ঠা ছবি।
০২. কবিতায় গ্রাম
ওই দেখো আখ গাছ, গাছে গাছে রস
প্রতিটি গাছেতে তাই ঝুলিছে কলস
কলসকলস রস খাবেনা একাকী,
গুড় বানাবার জন্যে কিছু থাক বাকি।
সুবেশ চৌধুরী একবার শীতের সন্ধ্যায় গাড়ি করে ডায়মন্ডহারবার থেকে কলকাতায় ফিরবার পথে দেখেছিলেন গেছুরেরা খেজুর গাছ বেয়ে উঠছে। এই ভর সন্ধেবেলা এই লোকগুলো গাছে উঠছে কেন? এই প্রশ্ন করে ড্রাইভারের কাছ থেকে তিনি জবাব পেয়েছিলেন, ওরা খেজুরের রসের হাঁড়ি নামানোর জন্য গাছে উঠছে। রস খাবে, জ্বাল দিয়ে গুড় করবে।
খেজুরের রস? সুবেশের কিঞ্চিত বিস্ময়োচিত জিজ্ঞাসায় ড্রাইভার বলেছিল, ওই রস জ্বাল দিয়েই তো খেজুরের গুড় হয়।
একটু চিন্তা করে সুবেশবাবু আবার জানতে চান, তা হলে আখের গুড়?
ড্রাইভার বলেছিল, আখের গুড় হয় আখের রস দিয়ে, এ তো সোজা কথা। যেমন তাল গুড় হয় তালের রস দিয়ে।
অনেকদিন আগের এই ঘটনাটা মনের মধ্যে গেঁথে ছিল সুবেশবাবুর। এবার গ্রামীণ মানুষদের জন্য সরস সাহিত্য রচনা করতে গিয়ে এই রসের ব্যাপারটাই তার প্রথম মাথায় এল।
এবং সঙ্গে সঙ্গে ওপরের চারলাইন পদ্য লিখে ফেললেন। প্রথমে ওই দেখো আখ গাছ, না লিখে, যা দেখেছিলেন সেই অনুযায়ী ওই দেখো খেজুর গাছ লিখেছিলেন কিন্তু খেজুর গাছ লিখলে ছন্দ ঠিক থাকে না, কানে লাগে তাই খেজুর কেটে আখ করে দিয়েছেন। এদিকে তাঁর স্পষ্ট কোনও ধারণাই নেই যে আখ গাছে চড়া যায় না। কলকাতার রাস্তাতেই যে ঘণ্টা বাজিয়ে আখ। পেষাই কল দিয়ে টুকরো টুকরো আখ ঘেঁচে আখের রস গেলাসে করে বিক্রি হয় সে বিষয়ে তিনি মোটেই ওয়াকিবহাল নন।
তা, সুবেশ চৌধুরী এই কবিতাটিই আলোচ্য বইয়ের জন্য প্রথমে রচনা করেন। যদিও এ কবিতা দিয়ে অবশ্যই বই শুরু হবে না।
কবিতাটি লিখে অত্যন্ত উৎফুল্ল হয়ে সরকারি অনুদান অধিকর্তা ড. ব্রহ্মলাল ব্রহ্মচারীকে সুবেশ। চৌধুরী ফোনযোগে কবিতাটি শোনান। ড. ব্রহ্মচারী পাড়াগ্রামে বড় হয়েছেন। তিনি আখগাছে রসের। কলস শুনে হকচকিয়ে গেলেন।
সুবেশবাবুকে সংশোধন করতে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ তার খেয়াল হল, বইটা তো হাসির বই, গ্রামের লোকেরা এসব পড়লে যথেষ্টই হাসবে।
সুতরাং ব্রহ্মচারীসাহেব সুবেশবাবুকে বাহবা দিয়ে বললেন, চমৎকার হয়েছে। লিখে যান। বইটির একটা চটকদার নাম দিন।
খুবই উৎসাহিত হয়ে সুবেশ চৌধুরী বললেন, নাম ঠিক করেই রেখেছি, চাষির মুখে হাসি, কেমন নাম হয়েছে, বলুন তো?
প্রস্তাবিত বইয়ের নাম শুনে চমৎকৃত হয়ে গেলেন ড. ব্রহ্মচারী, তিনি কবুল করলেন, অসামান্য। আপনি চালিয়ে যান সুবেশবাবু। তবে মনে রাখবেন শুধু রস আর গুড় নয়, গ্রামের লোকজন। কামার কুমোর, ধোপানাপিত, চাষি-ভাগচাষি সকলের কথাই বলতে হবে। বলতে হবে। গোরু বাছুর, হাঁস-মুরগির কথাও। খরা বন্যার কথাও বলবেন।
সুবেশবাবু বললেন, আপনি বলছেন কী? একটা ছোটো বইতে এত বিষয়?
সব অল্প অল্প করে ছুঁয়ে যান। বলে ব্রহ্মচারী সাহেব ফোন নামিয়ে রাখলেন।
গ্রাম্যজীবন সম্পর্কে সম্যক অভিজ্ঞতা না থাকলেও ড. ব্রহ্মচারীর উৎসাহে প্রচণ্ড মনোবল পেলেন সুবেশবাবু।
কবিতা খুব ভাল আসে না সুবেশ চৌধুরীর। প্রথম যৌবনে বন্ধুবান্ধবের পাল্লায় পড়ে কিছু কিছু প্রেম-ভালবাসা, বিরহ-মিলনের কাব্য রচনা করেছিলেন।
আমার এ কুল, ও কুল দুকুল
গেছে।
এখন বুকলতলায় বসে আছি।
অথবা,
সখী আমার, সখী সোনা
তোমায় আমি ভুলব না
এই জাতীয় সব এলেবেলে নাকি সুরের, এলোমেলো ছন্দের কবিতা কিছু লিখেছিলেন। কিন্তু চাষির মুখে হাসি বইতে তো এসব ন্যাকামি ভরা ছিচকাঁদুনে পদ্য দিলে চলবে না, এ বইয়ের পদ্যে যেন গ্রামজীবনের চিত্রটি সরস হয়ে ফুটে ওঠে।
সুবেশবাবু প্রাণ-মন দিয়ে সেই চেষ্টাই করতে লাগলেন।
০৩. চেষ্টার ফসল
নানা রকম বিষয়ে নানা ভাবে চেষ্টা করতে করতে হঠাৎ সুবেশবাবুর শিবরাম চক্রবর্তীর কথা মনে পড়ল।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়েরও প্রকৃতি প্রেম ছিল বহু খ্যাত। বিভূতিভূষণের প্রকৃতি প্রেম নিয়ে শিবরাম লিখেছিলেন, প্রকৃতি রসিকের রসিক প্রকৃতি। সেই গল্পে শিবরামের কায়দায় রবীন্দ্রনাথের গানকে অল্প মোচড় দিয়ে একেবারে অন্য চেহারা দেওয়া হয়েছিল, এখনও একটু মনে আছে সুবেশ চৌধুরীর,
সীমের মাঝে অসীম তুমি
বাজাও আপন সুর..
সত্যি সামান্য তরকারির সীম রবীন্দ্রনাথের গান আর শিবরামের কারসাজিতে নতুন মহিমা পেয়েছিল।
সুবেশ চৌধুরী জানেন এত ক্ষমতা তার নেই। তিনি রবীন্দ্র পরবর্তী কবিদের ধরতে গেলেন, প্রথমেই জীবনানন্দ দাশ, বনলতা সেন আর রূপসী বাংলা মিলিয়ে তিনি লিখলেন,
…হাজার বছর ধরে আমি মাছ
ধরিতেছি বাংলার জলে
বারাসত পার হয়ে বসিরহাটের
পথে বনগাঁর বিলে
মাছ ধরে, মাছ খেয়ে চলে যায়
কাক আর চিলে
আমিও তাদের সাথে মাছ ধরি…
কিন্তু কিছুটা লেখার আরও বারকয়েক চেষ্টা করার পর স্থিতধী সুবেশ চৌধুরী বুঝতে পারলেন, ব্যাপারটা মোটেই জুতসই হচ্ছে না। এসব ইয়ার্কি হয়তো পাঠক খাবে না। বাধ্য হয়ে এবার তিনি নিজের লাইনে এগোতে লাগলেন।
ব্রহ্মচারী সাহেব পরামর্শ দিয়েছিলেন, গ্রামের লোকজন যথা ধোপা-নাপিত এই সব নিয়ে লিখতে। সুবেশবাবু বুদ্ধি করে ধোপা না লিখে রজক লিখলেন, নাপিত না লিখে প্রামাণিক লিখলেন।
কুমোর এবং কামারকে নিয়েও লিখলেন,
(ক) তুমি ভাই কুমোর,
তোমার নাই গুমোর।
(খ) ছুরি বানায়, কঁচি বানায়,
কামার মশাই হাঁপর চালায়।
কবে যেন কোথায় শুনেছিলেন সুবেশবাবু, বোধহয় বাজার করতে গিয়ে, তরকারির দোকানে অকালের সজনে কিনতে গিয়ে যে, এগুলো সজনে নয় নজনে।
নজনে, নজনে আবার কী? অবাক হয়ে জানতে চেয়েছিলেন সুবেশবাবু।
তখন দোকানদার তাকে বুঝিয়ে বলেছিল, সজনে আর নজনে প্রায় একই। তবে সজনে শুধু শীতের শেষে বসন্তকালে হয়, আর নজনে সারা বছর ধরে ফলে।
এ সম্পর্কেও পদ্য লিখে ফেললেন, সুবেশবাবু,
সজনে নাকি নজনে?
ওরে তোরা খোঁজ নে।
এসব যাই হোক, কয়েকটি অমোঘ পদ্য রচনা করেছিলেন সুবেশ চৌধুরী চাষির মুখে হাসি বইটির জন্য।
সবগুলোর কথা বলার জায়গা নেই। আগে রজক এবং প্রামাণিক মহাশয়দের নিয়ে লেখা ছড়া দুটির কথা সেরে নিই।
যোগীন সরকারের হাসিখুশির স্টাইলে রজক মশাইকে সুবেশবাবু বললেন,
রজক মশাই, রজক মশাই
কাপড় যদি চাও
ফরসা করে কাঁচতে হবে।
কুঁড়েমি ভুলে যাও।
আর প্রামাণিক নিয়ে সুবেশ চৌধুরী লিখলেন
তুই আমার বাজার ছেঁচা
সাত রাজার এক মানিক,
তুই আমার লক্ষ্মীপ্যাঁচা,
তুই আমার পরামানিক।
এখানেই শেষ নয় সুবেশ চৌধুরীর বইয়ে আরও অনেক অমূল্য পদ্য রয়েছে, যেমন,
ধান গাছে ধান হয়, পান গাছে পান
বর্ষায় জল হয় খালে আসে বান,
শীতকালে লোজন বেয়াই-বেয়ান।
০৪. উপসংহার
এই গল্পের শেষে শুধু দুটি ঘটনা বলা প্রয়োজন।
প্রথম ঘটনা হল, সরকার সুবেশ চৌধুরীর বইটি অনুমোদন করেননি। কবিতায় লেখা সরকারের পছন্দ নয়, তা ছাড়া সরস করতে গিয়ে সুবেশবাবু চাষির মুখে হাসি বইটি খুব হালকা করে ফেলেছেন।
দ্বিতীয় ঘটনা খুবই বিস্ময়কর। সরকারের কাছ থেকে পাণ্ডুলিপি ফেরত নিয়ে সুবেশবাবু বইটি তার পুরনো প্রকাশককে ছাপতে দিয়েছিলেন। বই ছেপে প্রকাশক তো বটেই সুরেশবাবুও অবাক। বইটি রাতারাতি বেস্ট সেলার হয়ে গেছে। আগে তার কোনও বই সব সুদ্ধ চারশো-পাঁচশো বিক্রি হত, এখন সপ্তাহে পাঁচশো বিক্রি হচ্ছে।
লোকের হাতে হাতে চাষির মুখে হাসি বইটি ঘুরছে, তাদের মুখে ঘুরছে ছড়া,
ওই দেখো আখ গাছ, গাছে গাছে রস
প্রতিটি গাছেতে তাই ঝুলিছে কলস।