চারুলালের আত্মহত্যা
ট্রাম থেকে হিরণ দেখল প্রেসিডেন্সি কলেজের সামনে ফুটপাথ দিয়ে চারুলাল উত্তরমুখো হেঁটে যাচ্ছে। হাতে একরাশ বই, চুল উশকোখুশকো। এতদূর থেকেও বোঝা যায় চারুলালের হ্যান্ডলুমের গেরুয়া পাঞ্জাবি বড় ময়লা হয়ে গেছে। চারুলালের কাছে পাঁচটা টাকা পাওনা ছিল–হঠাৎ মনে পড়ায় হিরণ হাত নেড়ে ‘চারু’ বলে ডাকল। চারুলাল শুনতে পেল না। লক্ষ করে হিরণ তাড়াহুড়ো করে ট্রাম থেকে নেমে পড়ল।
নেমে খেয়াল হল যে, তার ট্রামের টিকিট কাটা হয়ে গিয়েছিল। এসপ্লানেডের টিকিট। এখন যদি চারুলালকে না পাওয়া যায় তবে আর একবার টিকিট কাটতে হতে পারে! কিংবা সে দ্বিতীয়বার যদি টিকিট না কাটে এবং পরবর্তী কোনও ট্রামের কন্ডাক্টর যদি ভদ্র ও অন্যমনস্ক হয়। তবে সে একবার ভাড়া দিয়ে এসপ্লানেড না গিয়ে অন্যবার ভাড়া না দিয়ে এসপ্লানেডে পৌঁছতে পারে। একটু অন্যমনস্ক হিরণ হাত তুলে একটা ধীরগতি ফিয়াট গাড়িকে দাঁড় করিয়ে তার সামনে দিয়েই রাস্তা পার হল এবং যথাসম্ভব দ্রুত গতিতে ভিড় ঠেলে চারুলালের পিছু নেওয়ার চেষ্টা করল। সে হ্যারিসন রোড পার হল এবং কলেজ স্ট্রিট মার্কেটের ডাবপট্টি পর্যন্ত এগিয়ে গেল। হিরণ একটু বেটে, ভিড়ের গড়পড়তা উচ্চতাকে অতিক্রম করে চারুলালের মাথা কিংবা পাঞ্জাবির অংশ কোথাও দেখতে পেল না। তা ছাড়া চারুলাল যে সহজ সোজা পথে যাবে তারও কোনও নিশ্চয়তা ছিল না-কেন না চারুলাল কবি, অন্যমনস্ক, অমিতব্যয়ী ও বিপথগামী।
হতাশ হিরণ একটু দীর্ঘতর শ্বাস ছাড়ল। হাতের টিকিটটার দিকে চেয়ে সে আর একবার অন্যমনস্ক হয়ে গেল। এ কথা ঠিক যে তার চিন্তা ভাবনা সব সময়েই অর্থনীতির ধার ঘেঁষে যায়। এখন তাকে একজন ভদ্র ও অন্যমনস্ক ট্রাম কন্ডাক্টর খুঁজে বের করতে হবে। অথচ ব্যাপারটা ঠিক আইনমাফিক হবে না। হাতের ট্রামের টিকিটটা ক্রমশ তার অর্থনৈতিক চিন্তাকে উজ্জীবিত করে। সে ভেবে দেখছিল এসব ক্ষেত্রে কন্ডাক্টরের কাছে ‘জার্নি ইনকমপ্লিট’ লেখা কোনও স্ট্যাম্প থাকলে সে ভদ্রভাবে এবং আইনমাফিক লক্ষ্যস্থলে পৌঁছোতে পারত।
যে স্টপেজে নেমেছিল আবার সে স্টপেজের দিকেই ফিরে আসছিল হিরণ। পুরানো বইয়ের দোকানের ধার ঘেঁষে, ফড়ে, দোকানি, ছাত্র–ছাত্রীর ভিড়ের ভিতর দিয়ে ইঁদুরের মতো দ্রুত গর্ত খুঁড়ে এগোতে গিয়ে সে লক্ষ করল কলেজ স্ট্রিটে মন্থর একটি ট্রাফিক জ্যাম সৃষ্টি হচ্ছে। ‘ধুত্তোর’ বলে ট্রাম–বাস থেকে নেমে পড়ছে লোক। ‘শালার মিছিল’–হিরণের প্রায় কান ঘেঁষে একজন চলতি মানুষ বলে গেল।
হিরণ মিছিল ভালবাসে না, আবার বাসেও। সে লক্ষ করল উত্তর দিকে কলেজ স্ট্রিট হয়ে মাঝারি এক মিছিল সামনে লাল সালুর ওপর রূপালি লেখা ভাসিয়ে দক্ষিণমুখো আসছে। অতএব কিছুক্ষণের জন্য এসপ্লানেডের ট্রামবাস বন্ধ। মন্দ নয়। হিরণ ভেবে দেখল মিছিলের সঙ্গ ধরলে সে দ্বিতীয় বারের ট্রামভাড়া সঞ্চয় করতে পারে এবং এসপ্লানেড পর্যন্ত এতটা পথ গোলেমালে কাটিয়ে দিতে পারে।
কিন্তু তার আর দরকার হল না। কেননা সে দেখতে পেল চারুল উলটোদিকের ফুটপাথে দাঁড়িয়ে এইমাত্র একটা সিগারেট ধরাল। ‘চারু’ বলে চিৎকার করে হিরণ হাত নাড়ল এবং থেমে থাকা গাড়ি ও ট্রামগুলি অতিক্রম করে দেখল মিছিলটা ধীরগতিতে চারু আর তার মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে। চারু মিছিল দেখছে। ‘চারু’ বলে আবার ডাকল হিরণ, আর সেই মুহূর্তে মিছিলের উন্মত্ত স্লোগান…’চাই’ ধ্বনিতে শেষ হলে হিরণ দেখল ‘চারু’ ও ‘চাই’ দুটি শব্দ মিলে মিশে ‘চাইরু’ গোছের একটা শব্দ ধ্বনিত হল। ‘চাইরু’ শব্দটা বিস্মিত হিরণ আপন মনে উচ্চারণ করল। কিমিদং এর অর্থ কী! ভাবল সে। সে চারুকে আর ডাকল না, মিছিলটাকে চলে যেতে দিল। তার চারুলালকে নিয়ে ভাবনা হচ্ছিল। কেননা চারুলাল ইতিমধ্যে পূর্ব-পশ্চিম বা উত্তর দক্ষিণ যে কোনও দিকে খামোকা রওনা হয়ে পড়তে পারে। কেননা ইতিপূর্বে সে চারুলালকে উত্তর দিকে যেতে দেখেছিল, এবং এখন দেখা যাচ্ছে যে, সে আবার দক্ষিণ দিকে উজিয়ে এসেছে। চারুলালের চলাফেরার মধ্যে কোনও পরিকল্পনা নেই। কোনও লক্ষে পৌঁছোবার একমুখিনতা নেই। এবং আশ্চর্যের বিষয় এই যে, বাস্তবিক মিছিলটা শেষ হওয়ার পর দেখা গেল চারুলাল যথাস্থানে নেই। পুলিশের কালো গাড়িটা কয়েক মুহূর্তের আড়াল তৈরি করেছিল এবং সেটুকু সময়েই অস্থিমনস্ক চারুলাল মত পরিবর্তন করেছে।
রাস্তা পার হয়ে হিরণ হতাশ হল। কেননা হিরণ কয়েক মুহূর্তের চিন্তায় ঠিক করে নিয়েছিল সে চারুলালকে পেলে জিগ্যেস করে বাঙলা অভিধানে ‘চাইরু’ বলে কোনও শব্দ পাওয়া যায় কি না এবং পাওয়া গেলে তার অর্থ কী। কেননা শব্দ সঞ্চয় করা চারুলালের স্বভাব এবং এইসব নিয়ে আলোচনা করাও তার প্রিয়। হিরণ ঠিক করেছিল শব্দ নিয়ে আলোচনা ক্রমশ জমে উঠলে সে একসময়ে আকস্মিকভাবে হঠাৎ মনে পড়ার মতো করে পাওনা টাকাটার কথাও বলে ফেলতে পারবে। কিন্তু আপাতত চারুলালকে একটা সমস্যার মতো মনে হচ্ছে।
হিরণ কফিহাউসের মোড় থেকে কলেজ স্ট্রিটের মোড়ের লাল ডাকবাক্সটা পর্যন্ত এবং লাল ডাকবাক্সটা থেকে কফিহাউসের মোড় পর্যন্ত জঙ্গল ভেদ করে চারুলালকে বারকয়েক খুঁজে দেখল। অবশেষে হতাশ হয়ে আবার ট্রাম স্টপেজে দাঁড়াল হিরণ।
মানুষের চলাফেরার মধ্যে একটা অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য থাকলে হিরণ খুশি হয়। এমন মানুষকে ধরা ছোঁয়া বোঝা সহজ। অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যসম্পন্ন কোনও মানুষের সারাদিনকার চলাফেরার একটা ম্যাপ যদি আঁকা হয় তা হলে দুই রকম মানুষের উদ্দেশ্য ও উদ্দেশ্যহীনতার একটা বাস্তব তফাত পাওয়া যেতে পারে। মনে-মনে চারুলালের সম্ভাব্য গতিবিধির একটা ম্যাপ ছকে ফেলবার চেষ্টা করে দেখল হিরণ। কিন্তু ম্যাপটা ক্রমশ তার মনে নানাবিধ বক্র ও অর্ধবৃত্তাকার রেখায় এমন জটিল অ্যাবস্ট্রাক্ট রূপ ধারণ করল যে, সে ভয় পেয়ে হাল ছেড়ে দিল, সহজ অন্য কিছু ভেবে দেখবার চেষ্টা করতে লাগল। এ কথা ঠিক যে, চারুলাল কিংবা চারুলালের মতো মানুষগুলিকে হিরণ বোঝে না। তবে চারুলাল কিংবা চারুলালের মতো মানুষগুলি কী উদ্দেশ্য নিয়ে জটিল এবং অ্যাবস্ট্রাক্ট বক্ররেখাগুলিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে? এই জটিল এবং অ্যাবস্ট্রাক্ট রেখাগুলিকে হিরণ বোঝে না। হিরণ ভাবতে-ভাবতে হাতে তখনও ধরে থাকা ট্রামের টিকিটটার দিকে তাকাল। সে এসপ্লানেডে যায়নি অথচ তার হাতে এসপ্লানেডের এই টিকিটটা বাতিল হয়ে গেল। এই অব্যবহৃত–উপযোগ সরবরাহে অক্ষম টিকিটটা তার কোন কাজে লাগবে? যদিও ব্যাপারটি দুর্বোধ্য তবু অস্পষ্টভাবে তার মনে পড়ল একদিন কফিহাউসে চারুলাল বাড়তি কাগজ খুঁজে না পেয়ে এমন একটি ব্যবহৃত টিকিটের পিছনে তার কবিতার পয়েন্ট টুকে রাখছিল।
যতদূর মনে পড়ে কবিতাটার নাম চারুলাল দিয়েছিল ‘শিল্পের কারণে আত্মহত্যা।’ বাস্তবিক আলাদা আলাদাভাবে ধরলে হিরণ শিল্প, কারণ ও আত্মহত্যা এই তিনটি শব্দের অর্থ বুঝতে পারে। কিন্তু এই তিনটি শব্দের দ্বারা বাক্য গঠিত হলে সে ‘চাইরু’ শব্দটার যে জটিলতা তেমনি এক জটিলতার সম্মুখীন হয়। হিরণ বুঝে উঠতে পারে না শিল্পের কারণ ও আত্মহত্যার কারণ এক কি না, কিংবা চারুল কি বোঝাতে চেয়েছে যে, শিল্প আত্মহত্যার এবং আত্মহত্যা শিল্পের কারণ স্বরূপ!
চারুলালকে হিরণ বুঝে উঠতে পারে না। চারুল অদ্ভুত। একবার তারা দুজন ‘নাইট শো’ সিনেমা দেখে ফিরছিল। ফুটপাথে এক গাড়ি–বারান্দার তলায় জনা দশবারো লোক টানটান হয়ে ঘুমোচ্ছে দেখে চারুলাল বলল ‘দাঁড়াও।’ হিরণ ফিরে দেখল অত্যন্ত অন্যমনস্ক চারুলাল হিরণের মুখের দিকে তাকিয়ে যেন কোনও পোকামাকড় খুঁজছে এমনি ভঙ্গিতে বলল , ‘তোমার কি মনে হয় না যে এই লোকগুলো এখন প্রত্যেকেই ঘুমের ভিতরে স্বপ্ন দেখছে!’ ‘হতে পারে।’ হিরণ হেসে জবাব দিল, ‘তাতে কি?’ খানিকটা যেন লজ্জা পেয়ে চারুলাল বলল , ‘না, কিছু না। আমার মনে হল প্রতিবার পা ফেলে আমি ভিন্ন ভিন্ন লোকের ভিন্ন ভিন্ন স্বপ্নগুলোকে মাড়িয়ে যাচ্ছি। অদ্ভুত! খানিকক্ষণ নিঃশব্দে হেঁটেছিল তারা। একবার শুধু হিরণের অস্পষ্টভাবে মনে হয়েছিল চারুলাল তাকে পিছন থেকে ‘হিরণ’ বলে ডাকল, পিছু ফিরে হিরণ দেখল চারুল অন্যমনস্কভাবে হাঁটছে, তার দিকে চাইছে না, অস্ফুট স্বরে কিছু বলছিল চারুলাল
‘ব্যাবিলনে…শূন্যোদ্যানে…স্বপ্নে…হিরণ কতবার গিয়েছি যে… স্বপ্নেদ্যানে… শূন্যে… ব্যাবিলনে…!’
হিরণ অন্যমনস্কভাবে এইসব রহস্যের কিনারা করবার চেষ্টা করছিল, এমন সময় একজন লোক ভদ্রভাবে তার সামনে দাঁড়িয়ে গলা চুলকোতে–চুলকোতে জিগ্যেস করল, ‘আজকের খেলার রেজাল্ট কি দাদা?’ মুহূর্তে সংবিৎ ফিরে পেয়ে লোকটার কথার উত্তরে অস্পষ্ট ‘জানি না’ বলেই সে ঘড়ি দেখল ছ’টা বেজে পাঁচ মিনিট। সাধারণত হিরণ উদ্দেশ্যহীনভাবে কোথাও বেরিয়ে পড়ে না, কিন্তু এখন চারুলালের কথা বেশ কিছুক্ষণ ভাববার পর, তাকে এ কথা বেশ কষ্ট করে মনে করতে হল যে, সে কেন এসপ্লানেড যাচ্ছিল। মনে পড়ল গ্লোবের ছবিটা দেখবে বলে সে এসপ্লানেড যাচ্ছিল, হল-এর সামনে অমিয় তার জন্য অপেক্ষা করবে। কিন্তু এখন আর গিয়ে লাভ নেই! খেলার মাঠের ভিড় ট্রাম বাস বোঝাই হয়ে ফিরছে! ইস্টবেঙ্গল এক গোলে জিতেছে–চিৎকার শুনতে পেল হিরণ। ট্রাফিক জ্যাম, মিছিল, খেলার ভিড়–এই সব কিছুর মধ্যে স্বপ্নবিষ্ট চারুলাল কোথায় থাকতে পারে ভেবে না পেয়ে হিরণ ধীরে-ধীরে অনেকদিন পর গোলদিঘির দিকে চলল।
চারুলাল সম্পর্কে কি একটা শেষ কথা জানবার ছিল হিরণের। এখনও জানা হয়নি। কিংবা কে জানে, হয়তো চারুলালকে জানবার ও বুঝবার মতো শক্তি হিরণের কোনওদিন ছিল না। তার আজ হঠাৎ মনে হল অনেকদিন থেকেই সে চারুলালকে একটু অবহেলা করে এসেছে। দুঃখ হচ্ছিল চারুলালের জন্য। সে ট্রাম থেকেও দেখতে পেয়েছিল যে চারুলালের পাঞ্জাবিটা বড় ময়লা হয়ে গেছে; মনে পড়ল, চারুলাল বড় আস্তে-আস্তে হাঁটছিল। এক মুহূর্তের জন্য হিরণ চারুলের প্রতি গোপন ও তীব্র একটা আকর্ষণ বোধ করল। ব্যাবিলনে…শূনে…স্বপ্নেদ্যানে…কোথায় যেন। যেতে চায় চারুলাল, হিরণ জানে না। অমন যাওয়ার ইচ্ছে হিরণের কখনও হয়নি। তাই সে কখনও বুঝতে পারে না চারুলালের কল্পনার মধ্যে কেন একটানা দুশো মাইল উড়ে এসে একটা শকুন হাওড়ার পুলের ওপর বসে, আর অন্যদিকে ইউনিকর্ন লাল ইমলি, লিপটনের নিয়নগুলি দপদপিয়ে ওঠে, মন্থর ট্রাফিক কলকাতায় ক্রমশই কঠিনতর জ্যাম-এর দিকে অগ্রসর হয়, কোনও কিছুতেই তার প্রয়োজন নেই বলে আবার হাওয়ায় ডানা ভাসিয়ে দেয় শকুন গোপনে সে যেন কার প্রাণ হরণ করে নিয়ে যায়। স্বপ্নের শকুন’ নামক এই কবিতা হিরণ শুনেছে। চারুলালকে খানিকটা বিখ্যাত করেছে।
গোলদিঘির ভিড় তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে, হিরণ লক্ষ করল। সে বুঝল ফাঁকা কোনও বেঞ্চ পাওয়া অসম্ভব। সে আস্তে-আস্তে লক্ষ রেখে এগোতে লাগল এবং ভাগ্যক্রমে একটা বেঞ্চে। দুজন বুড়োমানুষ এবং তাঁদের পাশে একটা খালি জায়গা দেখে অবিলম্বে ঝপ করে বসে পড়ল হিরণ। নানা অনভ্যস্ত শিল্পচিন্তায় তার মাথা ঘুরছিল। টের পেল পাশের দুই বুড়োমানুষ তার। বসার ভঙ্গি ও ঘাড় হেলিয়ে দেওয়ার ঢঙ লক্ষ করছে। বুড়োমানুষদের সঙ্গী হিসেবে ভালো লাগে হিরণের। এঁরা অচেনা লোক পাশে এসে বসলে অসন্তুষ্ট হলেও উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন না। অন্য সময় হলে হিরণ এঁদের সঙ্গে আলাপ জমানোর চেষ্টা করত। আজ করল না, কারণ তার মন অস্থির ছিল, ঠান্ডা বাতাস তার চোখে মুখে লাগছিল, ঘুম পাচ্ছিল হিরণের। সে চোখ বুজল। এবং প্রায় সঙ্গে-সঙ্গে সে নানা এলোমেলো স্বপ্ন দেখতে শুরু করল।
আধোঘুমের ভিতর সে শুনতে পেল পাশের বুড়োমানুষ দুজন অবিশ্রাম একঘেয়ে গলায় পূর্ববঙ্গের গল্প করে যাচ্ছে। সেখানে রোদ ছিল আলাদা বর্ষা ও মেঘ ছিল আলাদা, ঋতুগুলি ছিল ভিন্নরকম। তরমুজের খেত ও কাশবনকশাড়ের জঙ্গল, বালুচর ও ব্রতকথার সেই দেশ ছিল। কেমন সেই দেশ–উনিশশো চৌষট্টির সেপ্টেম্বরের কলকাতা থেকে আধোঘুমের ভিতরে সেই দেশকে বিদেশ বলে মনে হয়। খাঁড়ি দিয়ে বিলের জল বর্ষাশেষে নেমে যেতে থাকলে কাকামশাই চাঁদা মাছ ধরতেন, খাঁড়ির জলে ধারালো ইস্পাতের মতো ঝলসে উঠত রূপালি ইলিশ। যেন শরৎকাল ঘন হয়ে এসেছে, পাল খাটানো হয়েছে–দুলে–দুলে নৌকো চলেছে পূর্ববাংলার দিকে, স্মৃতি ও বিস্মৃতিময় দুটি নৌকো পাশাপাশি অনায়াস পাল তুলে উনিশশো চৌষট্টির কলকাতা ছেড়ে গেল। হিরণ রূপকথার মতো সেই গল্প শুনছিল।
তারপর ঘাড় কাত করে হিরণ অনেকক্ষণ আধোঘুমের ভিতরে স্বপ্ন দেখল। মাটির উনুনের আঁচে ইলিশ মাছের ঝোল ফুটছে, রূপশালির ভাত ফুটছে, ফুটফুট। কাঠের উনুনের ধোঁয়ার গন্ধ…আর দেখল উজান বিল, রাজহাঁস, কালকাসুরে ঝোঁপ ও জোনাকি পোকা। দেখল চারুলালের স্বপ্নের শকুন হাওড়ার ব্রিজ ছেড়ে গেল বুড়িগঙ্গা বিশালাক্ষীর ওপর কশাড়বন ও কাশফুলের ওপর তার ছায়া বিস্তার করবে বলে। স্বপ্নের নৌকো ধীরে-ধীরে দুলতে থাকে।…হঠাৎ হিরণ চারুলালকে দেখছিল ইউনিভার্সিটির নতুন অন্ধকার উঁচু বাড়িটার ভিতর ঢুকে যাচ্ছে–তড়িৎগতিতে অন্ধকার লিফট চালু করল চারুলাল–সশব্দ ইলেকট্রিকের তার চারুলালকে টেনে নিতে থাকে, হিরণ প্রাণপণে সিঁড়ি ভাঙতে থাকে, চিৎকার করতে থাকে ‘চারু চারু’ বলে। স্তুপাকৃতি সিমেন্ট, কংক্রিটের থাম ও সিঁড়ি পেরিয়ে এই অকারণ আত্মহত্যাকে নিবারণ করতে চায় সে। কিন্তু দ্রুত ধাবমান ‘এলিভেটর’ চারুলালকে শকুনের মতো ছোঁ মেরে তুলে নিচ্ছে। হিরণ দু-হাত তুলে বলতে থাকে, ‘তোমার উদ্দেশ্য কি চারুলাল? তুমি কত দূর যেতে চাও?’ ধাবমান ‘এলিভেটর’ থেকে চারুলালের দূর গলার ধীর আবৃত্তি কানে আসে, ‘কতবার গিয়েছি যে হিরণ…স্বপ্নে…শূন্যোদ্যানে…ব্যাবিলনে।’ হিরণ অন্ধকারে বিম–কাঠের ঠেকা, কার্নিস, জ্যামিতিক সিঁড়ি ও লিফটের খাঁচার অরণ্যকে লক্ষ করে হাল ছেড়ে দেয় হঠাৎ।
কিমিদং এর অর্থ কী! হিরণ বোকার মতো ফ্যালফ্যাল করে ঘুম ভেঙে চেয়ে দেখল বেঞ্চটা খালি হয়ে গেছে। সন্ধ্যা রাত্রির দিকে গড়িয়ে গেল। গোলদিঘির দক্ষিণ কোণে ভিড় জমেছে খুব। কিছু একটা হয়েছে ওখানে। হিরণ ভালোভাবে জেগে উঠে এইসব স্বপ্ন কিংবা স্বপ্ন ও চিন্তার সংমিশ্রণ পরিষ্কার করে নিতে চেষ্টা করল। কেন না সে তার জীবনে কখনও শিল্পের জন্য আত্মহত্যার কথা ভাবেনি, স্বপ্নের শকুনের কথাও না। উদ্ভটের প্রতি কোনও মোহ ছিল না। হিরণের, তবু কেন উদ্ভটই আজ তাড়া করে ফিরছে! তার ব্যাবিলন ছিল না, মধ্যাহ্নের ভূতের মতো জাগর–স্বপ্ন ছিল না-তবু মনে হচ্ছে আজ চারুলালের ব্যবিলন পিছু নিয়েছে তার। এ কি চারুলালের সম্মোহন প্রভাব সে অনেকক্ষণ চারুলালের কথা ভেবেছে আজ সেই জন্যে?
গোলদীঘির দক্ষিণ কোণে গোলমালটা বেড়ে চলেছে। হিরণ দেখে অনেক লোক ছুটে যাচ্ছে ওদিকে। দারুণ ভিড়। কী হতে পারে! হিরণ ভাবল। পরমুহূর্তেই অকারণে অন্যমনস্ক হয়ে গেল হিরণ। আলস্যের সঙ্গে সে ভেবে দেখল চারুলালের সঙ্গে তার তফাতটা কোথায়। দারুণ অভাব। আছে চারুলালের সংসারে। চাকরিও খোঁজে চারুলাল–কিন্তু তেমন উৎসাহের সঙ্গে নয়। টিউশনি করে সে নিজের খরচ চালায়, গাঁটের ট্রামভাড়া খরচ করে নানা পত্রিকার অফিসে কবিতা ফিরি করে বেড়ায়, সংসারে কিছু দেয় চারুলাল–কিন্তু সে তেমন কিছু না। আর হিরণ বারো বছর বয়সে কলকাতার রাস্তায় একদিন ধূপকাঠি ফিরি করে বেড়াত, ওইভাবে কলকাতা চেনা হয়। প্রথম উনিশশো সাতচল্লিশ থেকে। ক্রমশ চিনতে পেরেছে সে পথঘাট ও চরিত্র। হিরণ এখন সংসার চালায়–সংসারের তরুণ অভিভাবক সে-তাকে আয়কর দিতে হয় এখন, লোককে ধারও দিতে পারে হিরণ। পথঘাট ও চরিত্র হিরণের চেনা হয়ে গেছে। তবে কেন খামোকা চারুলালের ব্যাবিলন তার পিছু নেয়, কেন স্বপ্নের শকুনের কথা ভাবতে গেল হিরণ? ‘দ্যাখো হে। চারুলাল’, হিরণ মনে-মনে বলল , ‘আমাকে আয়কর দিতে হয়। বেশিরভাগ অফিসবাড়ি, কারবারি ও দোকানদারদের আমার জানা হয়ে গেছে। আমি যতদূর বুঝতে পারি বুলডোজারের মুখে তৈরি হচ্ছে পৃথিবী–সাদামাটা আমার চিন্তা। কিন্তু তুমি একি তৈরি করছ চারুলাল–যা আমাকেও তাড়া করে দেখছি!’
বিষণ্ণ হিরণ বসে দেখল গোলদিঘির দক্ষিণ কোণটা লোকে লোকারণ্য হয়ে গেল। কিছু একটা হয়েছে ওখানে। কী হতে পারে! ভিড় দেখলে সাধারণত উৎসাহী হয় হিরণ–ভিড়ের কারণ খুঁজে দেখে। কিন্তু আজ তার উঠতে ইচ্ছে করল না, কাউকে কিছু জিগ্যেস করল না হিরণ। চুপচাপ বসে রইল খানিকক্ষণ। তারপর উঠে পড়ল। ধীরে-ধীরে সে ভিড়ের কাছেই এসে দাঁড়ায়। কথাবার্তা না বলেও সে বুঝতে পারে কে একজন জলে পড়েছে–এখন তাকে তোলা হচ্ছে।
জলের মধ্যে কয়েকজন মানুষকে দেখতে পেল হিরণ, জলের ধারে একজন ‘বিট’-এর পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। ক্রমশ হিরণ দেখল জল থেকে কয়েকটা হাত একটা দেহকে ধরে তুলল। পুলিশটার পায়ের কাছেই শুইয়ে দিল তাকে। ভিড় ক্রমশ বাড়ছে, হিরণের দম নিতে কষ্ট হচ্ছিল। চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়েও আবার ফিরে এল হিরণ। লোকটা চেনাও তো হতে পারে–কত লোককেই তো চেনে হিরণ–এই ভেবে সে ভিড় ঠেলে সামনে এগোতে লাগল। রেলিঙের কাছে সে যখন এসে পৌঁছোল তখন লোকটাকে একটা স্ট্রেচারে শুইয়ে তোলা হচ্ছে। কিন্তু যতদূর মনে। হল লোকটা মারা গেছে কাছাকাছি যারা ছিল তারা হতাশার ভঙ্গিতে মাথা নাড়ছিল।
বাহকেরা হিরণের চোখের তলা দিয়ে স্ট্রেচারটা ধীরে-ধীরে নিয়ে গেলে প্রথমটায় একবার চমকে উঠেই কাঠ হয়ে গেল হিরণ। চারুলালের চোখ খোলা ছিল না, তবু হিরণের মনে হল চারুলাল তাকে সারাক্ষণ দেখতে-দেখতে গেল। এত কাছাকাছি ছিল চারুল! কিন্তু মুহূর্তেই পারিপার্শ্বিক সম্বন্ধে সচেতন হিরণ বুঝতে পারল এখন কোনও শব্দ করলে তার মুশকিল হবে। সে সাক্ষী থাকতে চায় না। নিঃশব্দে ভিড় ঠেলে বেরিয়ে এল হিরণ। পুলিশ চারুলালের পরিচয় ঠিক খুঁজে বের করবে। আপাতত হিরণের দায়িত্ব শেষ হয়ে গেল স্থির নিশ্চিতভাবে সে জেনে গেল যে, চারুলাল আত্মহত্যাই করেছে।
‘কিন্তু এটা কেমন হল!’ ‘এটা কী হল হে চারুলাল’, মনে-মনে বলল হিরণ, ‘এমন তো কথা ছিল না হে!’ হিরণ গম্ভীরভাবে অন্যমনস্ক হয়ে গেল। আজ বিকেলে চারুলালকে দেখবার পর থেকে যেসব অকারণ চিন্তা হিরণকে পেয়ে বসেছিল, এখন হিরণ টের পেল এর কোনও অর্থ আছে। এই আত্মহত্যা নিশ্চিন্ত অকারণ-এর কোনও মানে নেই। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ এতদিনের মধ্যে কোনও দুর্ঘটনায় পড়েনি হিরণ–তার হাত পা অটুট আছে, ইন্দ্রিয়গুলি সতেজ ও কর্মক্ষম আছে। এইজন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। সে শিল্পের কারণ ও আত্মহত্যার প্রয়োজন ও উপযোগ বোঝে না বলে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।
সম্ভবত এতটুকুই আসবার কথা ছিল চারুলালের, এর বেশি নয়। হাত পা ইন্দ্রিয়গুলির মতো মৃত্যুও সহজাত–হিরণের একথা অজানা নয়। বেঁচে থাকলে চারুলেরও মৃত্যু হত। সুতরাং চারুলাল নামক যে ব্যক্তিকে সে চিনত তার জন্য দুঃখ ছিল না হিরণের। তার পরিতাপ ছিল চারুলালের পরিকল্পনাহীনতা ও উদ্দেশ্যহীনতা লক্ষ করে। নিয়তিকে কে ঠেকাতে পারে? কিন্তু চারুলাল’, হিরণের ঠোঁট নড়ছিল, ‘এ উচিত নয়। এ আইন ভঙ্গ করা।’ কিন্তু পরিতাপের বিষয়, এই আইনভঙ্গের কোনও আসামি নেই।
বিষণ্ণ হিরণ পথে–পথে খানিকটা ঘুরল। ট্রামে উঠল, ট্রাম থেকে নেমে পড়ল হঠাৎ, সিগারেট ধরিয়েই ফেলে দিল। তার চোখের ওপর দিয়ে ভেসে গেল নিওনের সাইন–বিনাকার বাচ্চা মেয়েটা হাসছে…লিপটনের কেটলি থেকে পতনশীল আলো…লুফৎহানসার উড়ন্ত অ্যাবস্ট্রাক্ট হাঁসের চিহ্ন…হ্যান্ডলুম ফ্যাব্রিকস…ক্রয় করুন, ক্রয় করুন…সেল সেল। হিরণ ভেবে দেখল…আলো ও অন্ধকারময় এই যা আছে, পাপপূণ্যময়, ধর্মাধর্মময় এই যা আছে, সবকিছুকেই বড় গোপনে ও নিঃশব্দে অবহেলা করে চারুলাল। এইখানেই কি তার জিৎ? না কি এখানেও নয়! আরও দূর বহুদূর কোনও জায়গায় চারুলাল জিৎ রেখে গেছে, যেখানে অন্য কেউ কখনও নাগাল পাবে না! সেইখানে যা যা চেয়েছিল চারুলাল সবকিছু দু হাত ভরে পেয়েছিল। আর প্রয়োজন ছিল না বলেই কি চারুলাল অবশেষে সাঁতার না শেখার প্রয়োজন হিরণকে–একমাত্র হিরণকেই বুঝিয়ে দিয়ে গেল!
আরও খানিকক্ষণ পরিকল্পনাহীন ও উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরল হিরণ। একটু রাত করে বাড়ি ফিরল এবং খুব তাড়াতাড়ি ঢাকা দেওয়া খাবারের সামান্য কিছু খেয়ে নিয়ে বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়ল। তড়িৎগতিতে অন্ধকার তাকে কামড়ে ধরল। বুঝতে পারছিল আজ রাতে তাকে অনিদ্রা রোগ আক্রমণ করবে। মশারির সাদা আবছা চালের দিকে চেয়ে হিরণের হঠাৎ মনে পড়ল অনেকদিন আগে হিরণ একটা লোককে চিনত–তার ছিল যক্ষ্মারোগ। কিন্তু সে কখনও রুগির মতো থাকেনি কয়েকবার বিভিন্ন জায়গায় হাসপাতাল থেকে সে পালিয়ে এসেছিল। রোগগ্রস্ত সেই লোকটাকে হিরণ কখনও সাহায্য করেছে কিন্তু খুশিমনে নয়। হিরণ জানত এই সাহায্য নানা লোকের কাছ থেকে পাওয়া যায় বলেই লোকটা বারবার হাসপাতাল থেকে পালিয়ে আসে-নিরাময়কে বড় ভয় ছিল সেই লোকটার, কেননা, দীর্ঘকাল ধরে রোগে ভুগে–ভুগে সে সেই রোগটাকে ভালোবেসে ফেলেছিল যেমন আমরা আমাদের হাত পা নাক মুখ চোখ বিশ্বাস আত্মপ্রবঞ্চনা ও বৃথাগবগুলিকে, মেধা ও বোধগুলিকে ভালোবাসি। এর থেকে প্রতিসারিত কোনও অস্তিত্বের কথা আমরা কখনও ভেবে দেখিনি। শেষবার হিরণ লোকটাকে দেখেছিল লিন্ডসে স্ট্রিটের মুখে দাঁড়িয়ে একটা চোরাই ঘড়ি সম্ভাব্য খদ্দেরকে গছাবার তালে আছে। বিরক্ত হিরণ তাকে পাকড়াও করে প্রশ্ন করেছিল ‘এ সব কী? আপনি এখানে এভাবে কেন?’ লোকটা অনেকক্ষণ হিরণের দিকে চেয়ে বিড়বিড় করে বলেছিল তার রোগটা জটিল, এমন রোগ সহজে হয় না, সহজে সারেও না, এবং মৃত্যু অনিশ্চিত। হিরণ নিজের ধর্মবোধ ও পরোপকার প্রবৃত্তির দ্বারা চালিত হয়ে লোকটাকে প্রায় কোণঠাসা করে এনেছিল। লোকটা অবশেষে দৃঢ়ভাবে হিরণকে বলে দিল, ‘মশাই, যদি আমার ঘড়িটা কিনতে হয় তো কিনুন, নইলে নিজের পথে যান। আমি আত্মহত্যা করছি না-কেউই কখনও তা করতে পারে না।’
এই জটিল কথাটা এতকাল হিরণ বুঝতে পারেনি। আজ হিরণ সেই লোকটার মুখ মন করতে পারে না। কিন্তু এতদিনে সে যেন সেই রোগটার অর্থ ধরতে পারছে। যদিও জটিল রোগ দুরারোগ্য–কিয়দংশে পরিকল্পিত ক্ষয় ও স্বপ্নের দ্বারা গঠিত, তবু হিরণ এর অর্থ বুঝতে পারে।
এখন মর্গে চারুলালের মৃতদেহের ওপর তার শিল্পচিন্তাগুলি মাছির মতো এসে বসেছে। তার মেদ–মজ্জা শুষে নিচ্ছে। দুরারোগ্য সেই ব্যাধি–বড় সংক্রামক। ভাবতে-ভাবতে হঠাৎ ভয়াবহ চিৎকার করে উঠতে ইচ্ছে করে হিরণের। তার মনে হয় এক অচেনা কিন্তু সুসংবদ্ধ কার্যকারণ সূত্রে চারুলালের আত্মহত্যা সংঘটিত হয়েছে। এ আইনসম্মত এবং এ কারও অনুমতিসাপেক্ষ নয়।
চারুলালের সঙ্গে নিজেকে সম্পূর্ণ যোগাযোগহীন ও সম্পর্কশূন্য অনুভব করে সে একবার ভাবল–এ অন্যায়। পরমুহূর্তেই ভেবে দেখল–কিন্তু হায়, চারুলালের এই মৃত্যু ধর্ম ও অধর্মে গঠিত এক ধাঁধার মতো–যার সমাধান কখনও সম্ভব নয়।
চারুলালের কাছে পাঁচটা টাকা পাওনা ছিল। কিন্তু আজ রাত্রে হিরণ সেই পাঁচটা টাকার যাবতীয় স্বত্ব ও দাবিদাওয়া ছেড়ে দিল।
হিরণ অনুভব করে এবার সে আস্তে-আস্তে কিংবা এক্ষুনি ঘুমিয়ে পড়বে।