1 of 2

চাওয়া পাওয়া – নরেন্দ্রনাথ মিত্র

চাওয়া পাওয়া – নরেন্দ্রনাথ মিত্র

তেত্রিশ নম্বর বাসটায় রীতা সেন পারতপক্ষে উঠতে চায় না। এ-বাসে সকাল-সন্ধ্যা নেই, সবসময়ে ভিড় লেগেই থাকে। কিন্তু এন্টালি থেকে শ্যামবাজার যেতে হলে, আর বারবার ওঠা-নামার হাত এড়াতে হলে এই তেত্রিশ নম্বরেই উঠতে হয়। অফিস থেকে বেরিয়ে বেলা এগারোটার সময় ‘অঞ্জলি’ পত্রিকার সম্পাদিকা রীতা সেনও তাই মৌলালির মোড় থেকে তেত্রিশ নম্বর বাসই ধরল। যা ভেবেছে তাই। বাসটায় ঠাসা গিজগিজ করছে লোক। বসবার-দাঁড়াবার কোথাও জায়গা নেই। রীতাকে দেখে অবশ্য দুজন ভদ্রলোক আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। মেয়েদের জন্যে সংরক্ষিত দুজনের সিট দখল করে বসল রীতা। জানালার ধারে সরেই বসল।

যাতায়াতে এক ঘণ্টার বেশি লাগবে। তা লাগুক। অঞ্জলির ‘শারদীয়া’ সংখ্যার জন্য মণিমোহন রায়ের কাছ থেকে আজ গল্প আদায় করে ছাড়বে রীতা। এর আগে লোক পাঠিয়েছে, ফোন করেছে—গল্প আদায় হয়নি। অথচ বিজ্ঞাপনে নাম দেওয়া হয়েছে। সে-নাম যদি সূচিপত্রে না দেখা যায় তাতে সম্পাদিকার কৃতিত্ব কমে। সেই জন্যেই। না হলে মণিমোহনের গল্প না হলেও চলত। আজকাল মণিমোহনও যা লেখেন, ফণিমোহনও তাই লেখেন, বিশেষ করে পূজাসংখ্যায়। এই অসংখ্য গল্পের কটির মধ্যেই বা গল্পত্ব থাকে, ক’জনেই বা পড়ে! তবু লেখা হয়, ছাপা হয়, এই আজকাল রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

‘হ্যাঁচ্চো।’

একটি হাঁচির শব্দে রীতা চোখ ফিরিয়ে তাকাল। শুধু রীতা নয়, বাসের সব যাত্রীই তার দিকে ভ্র-কুঁচকে তাকিয়েছে। বছর পঞ্চাশেক বয়স হবে লোকটির। গায়ের রঙিন পাঞ্জাবিটার আসল রং বুঝবার জো নেই। যেমন ময়লা, তেমনই জীর্ণ। মাথায় কাঁচাপাকা চুল। মুখে দু-দিনের দাড়ি জমেছে। লোকটি নোংরা। নইলে বাসের মধ্যে এমন করে হাঁচে!

সকলের অপ্রসন্ন দৃষ্টির উত্তরে লোকটি তার কালো ময়লা দাঁতগুলি বের করে হাসল। তারপর কৈফিয়তের সুরে বলল, ‘কদিন যাবৎ এত সর্দি করেছে। রোদে ঘুরে-ঘুরে গরম লেগেই হয়েছে সর্দিটা। ঠান্ডার সর্দির চেয়ে গরমের সর্দি আরও খারাপ।’

কেউ কিছু বলল না দেখে লোকটি চুপ করে গেল।

কাণ্ড দ্যাখো! আর কোথাও জায়গা না পেয়ে লোকটি একেবারে রীতার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। বেঁটেখাট মানুষ। হাত বাড়িয়ে মাথার ওপর রডটি ধরতে বেশ অসুবিধায় পড়তে হয়েছে লোকটিকে। মাঝে-মাঝে ড্রাইভারের আচমকা ব্রেক কষায় প্রায় পড়ি-পড়ি করছে মানুষটি। শেষ পর্যন্ত গায়ের ওপর এসে হুমড়ি খেয়ে না পড়ে, তাহলেই হয়েছে!

ওদিককার বড় লম্বা লেডিজ সিটটিতে জনচারেক ভদ্রলোক বসে রয়েছেন। আরও একজনের জায়গা হয় সেখানে। এক ভদ্রলোক রীতার সামনের লোকটিকে ডেকে বললেন, ‘আপনি এখানে এসে বসুন না। ওখানে দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে ঝুলছেন কেন?’ লোকটি জবাব দিল, ‘ওখানে বসে লাভ নেই, মশাই। ওরা কেউ এসে পড়লে ঝাঁকসুদ্ধ উঠতে হবে। তখন দাঁড়াবারও জায়গা মিলবে না। আমি বাসের ভিতরে ঝুলি, বাসের বাইরেও ঝুলতে-ঝুলতে যাই। তবু লেডিজ সিটে কখনও বসিনে।’

কেউ-কেউ হেসে উঠল তার কথায়।

রীতা একটু ভ্র-কুঁচকে জানলার বাইরে তাকিয়ে রইল।

মাণিকতলার মোড় ছাড়িয়ে এল বাস।

রীতা অনুভব করল লোকটি রড ধরে তার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। আশ্চর্য, এতক্ষণেও কি বসবার কোথাও জায়গা পায়নি লোকটি, নিশ্চয়ই পেয়েছিল। কতগুলি স্টপেজ ছাড়িয়ে এল বাস। এর মধ্যে কত লোক উঠল, কত লোক নামল। কিন্তু লোকটির কোথাও গিয়ে বসবার ইচ্ছা নেই। খেয়ালই নেই যেন কিছুতে। যেন ভারি অন্যমনস্ক, ভারি চিন্তিত। আসলে উদ্দেশ্যটা কী তা রীতা টের পেয়েছে। বাসে-টামে অনেকের এমন অভব্য উপদ্রব সহ্য করতে হয়। অথচ লোকটির বয়স নেহাত কম নয়। পঁয়ত্রিশ-ছত্রিশ তো হবেই। বেশিও হতে পারে। মেয়েদের দিকে আড়চোখে তাকাবার ওর বয়স গেছে। কিন্তু বয়স গেলেই কি বয়সের দোষ যায়!

রীতার বয়স এখনও পঁচিশ পূর্ণ হয়নি। নামের আগের শ্রীমতীটুকু ত্যাগ করলে কী হবে, তার চেহারায় একটা স্থায়ী শ্রী আছে তা সে জানে।

স্বামী নিরুপম মাঝে-মাঝে ঠাট্টা করে বলে, ‘তোমাকে এক-একা বাসে-ট্রামে ছেড়ে দিতে আমার ভারী চিন্তা হয়।’

রীতা জবাব দেয়, ‘কেন, চিন্তা কীসের? আমাকে বিশ্বাস হয় না?’

নিরুপম হেসে বলে, ‘সে জন্যে নয়। তোমাকে অবিশ্বাস করে যাব কোথায়? কষ্ট হয় তোমার সহযাত্রীদের জন্যে। তুমি যতক্ষণ বাসে থাকবে, ততক্ষণ তাদের নিষ্পলক হয়ে থাকতে হবে যে!’

রীতা বলে, ‘আহা।’

স্বামীর মুখ থেকে, কী তার বন্ধুদের মুখ থেকে এমন স্তবস্তুতি মন্দ লাগে না। কিন্তু বাসে-ট্রামের যে-কোনও বয়সের যে-কোনও যাত্রী যদি এক বিশেষ ভঙ্গিতে তাকায়, তা কি সহ্য করা যায়?

রীতা শ্যামবাজারের মোড়ে নেমে পড়ল। আশ্চর্য, লোকটিও সঙ্গে-সঙ্গে নামছে, রীতা হাঁটতে শুরু করল। লোকটিও আসছে পিছনে-পিছনে। বেশি বাড়াবাড়ি করলে, রীতা আর সহ্য করবে না। রাস্তার লোক কি পুলিশ ডাকার দরকার হবে না, নিজের সম্মান রীতা নিজেই রাখতে জানে।

খানিকটা এগোলেই মণিমোহন রায়ের একতলা নতুন বাড়ি। আগে আর-একবার এসে এ-বাড়ি চিনে গেছে রীতা। কড়া নাড়তে গিয়ে দ্যাখে লোকাটি দাঁড়িয়ে আছে। আশ্চর্য সাহস!

এবার আর কথা না বলে পারল না রীতা। ভ্র-কুঁচকে চাপা কিন্তু রুক্ষ স্বরে জিজ্ঞাসা করল, ‘কী চান আপনি?’

লোকটি একটু হাসল, ‘আমিও মণিমোহনবাবুর কাছে এসেছি গল্প নিতে। আপনি তো ”অঞ্জলি” পত্রিকার। নিউ বেঙ্গলে সেদিন বিজ্ঞাপন নিতে গিয়েছিলেন, সেখানে দেখেছি আপনাকে।’

রীতা এবার কৌতূহলী হয়ে বলল, ‘ও। আপনি কোন পত্রিকা থেকে এসেছেন?’

লোকটি বলল, ‘যুব ভারত।’

এইবার রীতা একটু অসহায় বোধ করল। যুব ভারত ধনীর কাগজ। অনেক টাকা দিয়ে লেখা নেয় ওরা। আর রীতাদের ‘অঞ্জলি’ আধা-শখের। কয়েকজন বান্ধবী মিলে বের করেছে। দক্ষিণা হয়তো দিতে পারবে না, কি সামান্যই দেবে। লেখকদের দাক্ষিণ্যের ওপর ভরসা। এই বিষম প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে কি এঁটে উঠতে পারবে রীতা? শোনা যায় মণিমোহন এবার দুটি-একটির বেশি লিখছেন না। যদি একটিমাত্রই লিখে থাকেন তাহলে কি ‘যুব ভারত’-এর মুঠি থেকে তা ছিনিয়ে নিতে পারবে! লোকটির এই দীন বেশ আসলে ছদ্মবেশ, ওর পিছনে আছে ওর মনিবের টাকার পেটি। আর টাকায় কী না মেলে! টাকা দিলে বাঘের দুধ পাওয়া যায়, অনিচ্ছুক লেখকের হাত থেকে সাহিত্যের রস চুঁইয়ে-চুঁইয়ে পড়ে।

কড়া নাড়ার শব্দটা আপনাথেকেই যেন বড় মৃদু হয়ে এল রীতার হাতে।

লোকটি এবার এগিয়ে এসে বলল, ‘সরুন, আমি কড়া নাড়ছি। অল্প নাড়ায় ওঁরা আবার শুনতে পান না।’

শোনবার মতো করে কড়া নাড়াবার শক্তি আছে বইকি ‘যুব ভারত’-এর। তবু রীতা অত সহজে নিজের জায়গা ছাড়ল না। বলল ‘আপনি দাঁড়ান, আমিই ডাকছি।’

এবার সশব্দে কড়া নাড়ল রীতা। হাতের কাঁকনও বাজল সেইসঙ্গে।

প্রৌঢ় লেখক মণিমোহন রায় নিজেই এসে দোর খুলে দিলেন। সাধারণ গোবেচারা গোছের চেহারা। লেখক না হয়ে অন্য কোনও পেশা ধরলেও মানাত।

মণিমোহন দুজনকেই একসঙ্গে অভ্যর্থনা করলেন। ‘আসুন, আসুন। আসুন শ্রীবিলাসবাবু, আসুন রীতা দেবী।’

রীতা একটু হাসল, ‘যুব ভারত’-এর নাম তাহলে শ্রীবিলাস! তা হতে পারে, শ্রী তো আর সবসময় মানুষের চেহারাতেই থাকে না। মনিবের অর্থ-সামর্থ্যেও থাকে।

দুজনকেই বাইরের ঘরে অভ্যর্থনা করে বসালেন মণিমোহন। রীতা ভাবল, বোধহয় দুটি গল্পই তৈরি হয়েছে।

চাকরকে ডেকে মণিমোহন বললেন, ‘ওরে দু-কাপ চা নিয়ে আয়।’

শ্রীবিলাস বলল, ‘এত বেলায় চায়ের কী দরকার।’ কিন্তু লোকটির মুখের ভাব দেখে মনে হল চায়ের দরকার আছে। রীতাও আপত্তি জানাল, ‘না-না, চা থাক।’

কিন্তু মণিমোহন শুনলেন না। দুজনের সামনে একই ধরনের দুটি সাদা সুদৃশ্য চায়ের কাপ এগিয়ে ধরলেন।

রীতা বলল, ‘তাতো হল। আমার গল্প কই?’

মৃদু হাসল রীতা।

মণিমোহন মাথা নাড়লেন, ‘গল্প হয়নি, গল্প এবার আর লিখতে পারলাম না।

শ্রীবিলাস বলল, ‘সে কী। আমাদের ”যুব ভারত”-এর গল্পটিও লেখা হয়নি?’

মণিমোহন বললেন, ‘না।’

শ্রীবিলাস বলল, ‘কিন্তু আর যে সময় নেই! আমাদের আজই ছাপা শেষ করতে হবে।’

রীতা বলল, ‘আমরাও আর দেরি করতে পারিনে। মহালয়ার আগেই কাগজ বার করতে হবে…আপনি কিন্তু কথা দিয়েছেন।’

মণিমোহন বললেন, ‘তখন বুঝতে পারিনি এবার আর কিছুতেই কথা রাখতে পারব না। বুঝতে পারিনি আমার সব কথা এমন করে ফুরিয়ে গেছে।’

করুণ নৈরাশ্যের সুর ফুটে উঠল মণিমোহনের গলায়।

রীতা বিস্মিত হয়ে তাঁর দিকে তাকাল। এ তো দাম্ভিক অর্থলোভী লেখকের কথা নয়।

শ্রীবিলাস বলল, ‘তাহলে ”যুব ভারত”-এর লেখাটিও দিতে পারবেন না?’

মণিমোহন বললেন, ‘না।’

শ্রীবিলাস বলল, ‘বড় মুশকিলে ফেললেন কিন্তু, মণিমোহনবাবু। যাই কর্তাকে বলি গিয়ে, জায়গা খালি পড়ে রয়েছে, তা-তো ভরতি করা চাই!’

চায়ের কাপ শেষ করে শ্রীবিলাস উঠে পড়ল।

আরও দু-এক মিনিট বসে রইল রীতা। ভেবেছিল আজ গল্প না পেলে খুব কড়া কথা শুনিয়ে দেবে মণিমোহনবাবুকে। বলবে, আপনারা কথাশিল্পীরাই কথার খেলাপ করেন সবচেয়ে বেশি। রীতা আর-একবার জিজ্ঞাসা করল, ‘সত্যিই পারলেন না লিখতে?’

মণিমোহন বললেন, ‘না। চেষ্টা করে দেখলাম, হল না।’

রীতা বলল, ‘ভাববেন না, এবার হল না, সামনের বছর হবে। আমরা আবার আসব।’

নমস্কার বিনিময়ের পর বিদায় নিল রীতা।

শ্রীবিলাস যায়নি। মোড়ে দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে বিড়ি টানছে। বোঝা গেল রীতার জন্যই অপেক্ষা করছে সে। রীতাকে দেখে জিজ্ঞাসা করল ‘কী, পেলেন গল্প?’

রীতা বলল, ‘না। শুনলেন তো উনি এবার লিখতে পারছেন না।’

শ্রীবিলাস বলল, ‘সত্যি পাননি?’

রীতা মাথা নেড়ে বলল, ‘না। আপনার কাছে মিথ্যে বলে আমার কী লাভ।’

শ্রীবিলাস বলল, ‘তা ঠিক। আমি-আপনি কাগজের লোকেরা লেখকদের মতো অত মিথ্যে কথা বলিনে।’

রীতা এবার সকৌতুকে জিগ্যেস করল, ‘ওঁরা মিথ্যে কথা বলেন বুঝি?’

শ্রীবিলাস বলল, ‘খুব, খুব। যেমন মিথ্যে কথা বানিয়ে-বানিয়ে লেখেন, তেমনি বানিয়ে-বানিয়ে বলেন। শুধ অসুবিধে এই, সেই বানানো কথাগুলি ধরে নিয়ে প্রেসে দেওয়া যায় না। তাহলে আপনার ”অঞ্জলি” আর আমার ”যুব ভারত”-এর অমন পঞ্চাশটা পুজোসংখ্যা ভরে যেত।’

বাস এসে স্টপেজে দাঁড়াতে দুজন একসঙ্গেই উঠল। ছোট লেডিজ সিটটায় বসে রীতা এবার ডাকল শ্রীবিলাসকে, বলল, ‘বসুন এখানে।’

শ্রীবিলাস ইতস্তত করল। এতখানি দাক্ষিণ্য বোধহয় আশা করেনি। রীতা দ্বিতীয়বার অনুরোধ করতে সে এবার পাশে এসে যথাসাধ্য ব্যবধান রেখে বসল।

শ্রীবিলাস বলল, ‘আপনার নিজের কাগজ, কারও কাছে জবাবদিহি করতে হবে না। আপনি সুখে আছেন। কিন্তু আমার দুর্ভোগটা একবার ভেবে দেখুন দেখি। কর্তাবাবু, সম্পাদকমশাই, কেউ কি বিশ্বাস করতে চাইবেন যে, উনি লিখতে পারলেন না? কতরকমে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে জিজ্ঞাসা করবেন। আবার হয়তো রাতদুপুরে দৌড়ে আসতে হবে এই মণিমোহনবাবুর কাছেই। এদিকে বাড়িতে পরিবারের অসুখ। ছেলেমেয়েগুলো টো-টো করে বেড়াচ্ছে। একেবারে কোলেরটা ট্যাঁ-ট্যাঁ করছে। আর আমি শহর ভরে লেখকদের দোরে-দোরে ধন্না দিয়ে বেড়াচ্ছি গল্প কই, গল্প কই।’

রীতা সহানুভূতি জানিয়ে বলল, ‘সত্যি, আপনার তো ভারী অসুবিধে তাহলে। আচ্ছা, যেসব গল্প ছাপা হয় আপনি কি পড়ে দেখেন? ধরুন এই মণিমোহনবাবুর লেখা—।’

শ্রীবিলাস বলল, ‘আপনিও যেমন, সময় কই যে পড়ব! খেটেখুটে রাত বারোটার সময় কি আর মানুষের পড়বার শখ থাকে? তা ছাড়া বাড়িতে নিজের গল্প নিয়েই অস্থির, আর তো পরের গল্প!’

রীতা মুখে কিছু বলল না, শুধু চোখের দৃষ্টিতে সহানুভূতি জানাল।

তেত্রিশ নম্বর বাস মির্জাপুর ছাড়িয়ে মৌলালির দিকে এগিয়ে চলল। এই গল্পসন্ধানী কাগজের অফিসের দরিদ্র কর্মচারীর পাশে বসে থাকতে-থাকতে সালঙ্কারা সুসজ্জিতা রীতার ভারি অদ্ভুত লাগতে লাগল। মণিমোহনবাবুর কাছ থেকে সে-ও আজ প্রত্যাশিত গল্পটি পেল না। এই শেষ মুহূর্তে কাগজ কী দিয়ে ভরবে সে উদ্বেগ তারও কম নয়। তবু সমস্ত চিন্তা-ভাবনা ছাপিয়ে আজ এই মানুষটির কথাই তার বারবার মনে হচ্ছে। তার দুর্ভোগ, তার দুর্ভাবনা, তার দুঃস্থ পরিবারের কথা, একটি অতি পুরোনো গল্প। আর একটি অতি পরিচিত স্পর্শ—একজন সাধারণ প্রতিবেশী মানুষের।

মাসিক রহস্য পত্রিকা

পুজো সংখ্যা, ১৯৫৯

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *