1 of 3

চর্মন্তুদ অথবা জুতো ও পটললাল

চর্মন্তুদ অথবা জুতো ও পটললাল

০১.

গল্পটায় সবে হাত দিয়েছি। মূর্তিমান গঙ্গারাম এসে হাজির। নাম দেখেই সে চটে গেল। আমার উপরে রাগারাগি করতে লাগল, এই জন্য আপনার কিছু হল না। কোনওদিন একটা প্রাইজ পর্যন্ত পেলেন না।

আমি গঙ্গারামকে বোঝাতে গেলাম, প্রাইজ পাইনি সে কথা ঠিক নয়, দু-একটা ছোটখাটো প্রাইজ অবশ্যই পেয়েছি, আর বড় প্রাইজগুলো নোবেল, পুলিতজার, জ্ঞানপীঠ….

আমাকে কথা শেষ করতে দিল না গঙ্গারাম। থামিয়ে দিয়ে বলল, ওসব কথা বাদ দিন, গল্পটার নাম বদলে ফেলুন। জুতো নামে কোনও গল্প কেউ গুরুত্ব দিয়ে পড়বে?

অসহায়ের মতো আমি প্রশ্ন করি, কী নাম দেব?

একটু ভেবে নিয়ে গঙ্গারাম বলল, নাম দিন চর্মন্তুদ।

আমি বিস্মিত, চর্মন্তুদ আবার কী?

গঙ্গারাম আমাকে ব্যাকরণ বোঝাল। মর্ম থেকে যেমন মর্মন্তুদ, চর্ম থেকে তেমনি চর্মন্তুদ।

গঙ্গারামের কথাটা হাস্যকর শোনালেও, সে আমার একমাত্র অনুগত ক্যাডার, বশংবদ এবং হিতাকাঙ্ক্ষী। তার কথা ফেলতেও পারি না। ফলে এই গল্পের নামটা বড় খটমটে হয়ে গেল।

০২.

এবার গল্পটা শুরু করি।

আবার পটললালের গল্প।

.

এককালে ছিল বিয়ে করলে বউয়ের সঙ্গে শ্যালিকা ফ্রি। এক কুড়ি কই মাছ কিনলে সঙ্গে পাঁচ-ছয়টা ফ্রি। গ্রামে-গঞ্জে বলত ফাউ। আজকাল অনেককিছুই ফ্রি। একটা টুথপেস্ট কিনলে একটা। সাবান ফ্রি। দুটো শার্ট কিনলে একটা শার্ট বিনামূল্যে। আর অরেঞ্জ স্কোয়াশ কিনলে গেলাস, কফির কৌটো কিনলে চিনেমাটির রঙিন মগ ফ্রি।

একবার তো এক দোকানে হইহই গোলমাল, এক ভদ্রমহিলা বিজ্ঞাপন দেখে একটা বিশেষ ব্র্যান্ডের রান্নার তেল কিনতে এসেছেন। বিজ্ঞাপনে বলা রয়েছে কোলেস্টেরল ফ্রি-মহিলা বিজ্ঞাপন অনুসারে দাবি করছেন, কোলেস্টেরল দিন, এক বোতল তেলের সঙ্গে কোলেস্টেরল ফ্রি পাওয়া যাবে বিজ্ঞাপনে বলেছে, আপনারা দিচ্ছেন না কেন?

কিন্তু এসব কিছুর মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে উত্তর কলকাতার একটি পাদুকা ভাণ্ডার অর্থাৎ জুতোর দোকান।

এই দোকানের সামনে বিশাল ব্যানারে লেখা আছে:
ফ্রি। ফ্রি। ফ্রি।

ফ্রি-ফ্রি-ফ্রি লেখা আছে টগবগে বিশাল রক্তক্ষরে, তার নীচে খুবই ছোট হরফে হালকা হলুদ রং-এ লেখা:

বাম-ডান
যে কোনও পায়ের
এক পাটি জুতো কিনলে
অন্য পায়ের জুতো
ফ্রি।

বলা বাহুল্য এই শেষ ফ্রি উপরের মতো বিশাল রক্তাক্ষরে লেখা।

.

এই দোকানটির নাম জুতসই।

দোকানের ম্যানেজার পটললাল পাল। আপনাদের মধ্যে যাঁদের পটললালবাবু সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই তাদের জন্য ছোট করে পটললালবাবুর কথা জানাচ্ছি

শ্রীযুক্ত পটললাল পাল একদা যাত্রা-থিয়েটারের লাইনে ছিলেন, সিনেমা পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন। তিনি কোনও অভিনেতা, শিল্পী ইত্যাদি ছিলেন না, ভদ্রভাবে বলা যায় তিনি একজন সহকারী ছিলেন, যাকে টালিগঞ্জের ভাষায় সাধারণত টাউট বলা হয়।

তবে পটলবাবুর একটা প্লাস পয়েন্ট আছে। তিনি বিখ্যাত মঞ্চ অভিনেত্রী নৃত্যপটীয়সী শ্ৰীযুক্তা মিস জুলেখার শেষতম স্বামী। অত্যন্ত স্কুলাকৃতি হয়ে যাওয়ায় মিস জুলেখা অবশ্য আজকাল আর অভিনয় করেন না, নাচতে তো একেবারেই পারেন না। এক পাক ঘুরেই হাঁফিয়ে ওঠেন, ঘামতে থাকেন।

০৩.

অনুপমার দেব-দ্বিজে খুব ভক্তি। একালে এমন দেখা যায় না।

অনুপমা নিজে কায়স্থ কন্যা, বিবাহসূত্রে ব্রাহ্মণী হয়েছে, ব্রাহ্মণ-ঘরণী। ফলে বিবাহোত্তর জীবনে দ্বিজভক্তি সাধারণভাবেই অনেকটা কমে গেছে, তবে এখনও দেবভক্তি প্রচুর।

এই স্বভাবটা অনুপমা পেয়েছে তার ঠাকুমার কাছ থেকে। সম্প্রতি পরলোকগত সেই বৃদ্ধা দিনের মধ্যে অর্ধেক সময় পুজোর ঘরে কাটাতেন। বাড়ি থেকে রাস্তায় বেরোলে দুধারে যত মন্দির-বিগ্রহ আছে, এমনকী আশেপাশের গলির ভিতরে সমস্ত ঠাকুর দেবতাকে হাঁটুমুড়ে প্রণাম করে তবে পথ পেরোতেন। ঠনঠনের বাড়ি থেকে হেদুয়া পর্যন্ত সামান্য পথটুকু পায়ে হেঁটে পেরোতে দেড় ঘণ্টা দু ঘণ্টা লেগে যেত।

অনুপমার পক্ষে অবশ্য অতটা সম্ভব নয়। টালিগঞ্জে তার শ্বশুরবাড়ি, হাতিবাগানে একটা মেয়েদের স্কুলে সে পড়ায়। শ্বশুরবাড়ি, স্বামী, সংসার এসব সামাল দিয়ে, স্কুলে পড়িয়ে তারপরে পুজোর ঘরে বেশি সময় কাটানো সম্ভব হয় না। তবে পথেঘাটে ঠাকুর-দেবতা পড়লে হাঁটুমুড়ে সম্ভব হলেও করজোড়ে সে প্রণাম জানাতে ভোলে না।

সেদিন কী একটা কারণে স্কুল একটু আগে ছুটি হয়ে যাওয়ায় অনুপমা ভাবল ঠনঠনেতে বাপের বাড়ি থেকে একটু ঘুরে যাবে। ঠাকুমা মারা গেছেন বটে, তবে মা বাবা আছে। এক ছোট ভাই আছে, তাকে অবশ্য এ সময়ে পাওয়া যাবে না, তবে মা-বাবাকে পাওয়া যাবে। হঠাৎ হঠাৎ বিনা নোটিশে গেলে মা-বাবা খুবই খুশি হন।

সেদিনও তাই হল। মা-বাবার সঙ্গে চারটে পর্যন্ত গল্পগুজব করে, চা-জলখাবার খেয়ে তারপর ঠাকুমার পুজোর ঘরে একবার প্রণাম করে অনুপমা বাপের বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল। বাবা বাসরাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দিতে আসছিলেন, কিন্তু সে বাধা দিল, আমি ঠনঠনেতে একটা প্রণাম করে, সামনে থেকে একটা ট্রাম ধরে নেব। তোমাকে আসতে হবে না।

ঠনঠনের মন্দির অনুপমার আজন্ম পরিচিত, ঠনঠনের কালীর প্রতি তার অচলা ভক্তি। এখন এই বিকেলের দিকে সন্ধ্যার একটু আগে মন্দিরটা একটু ফাঁকা থাকে।

ঠনঠনের মা কালীর সিঁড়ির সামনে যেখানে হাঁড়িকাঠ রয়েছে তার একপাশে হাঁটুমুড়ে বসে পরম ভক্তিভরে অনুপমা প্রণাম করল।

প্রণাম করার আগে পায়ের চটিজোড়া খুলে অনুপমা নিজের পিছনে রেখে দিল, প্রণাম সেরে উঠে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে তার চটিজোড়া নেই। তবুও অনুপমা এদিক ওদিকে একটু তাকিয়ে দেখল, না, আশপাশে কোথাও নেই।

তার মানে চটিজোড়া গেছে। কেউ নিয়ে গেছে।

জ্ঞান হওয়া অবধি এই মন্দিরে অনুপমা আসছে। অনেকের কাছেই শুনেছে, মন্দিরে জুতো যায়। কিন্তু তার নিজের চটিজোড়াই যে চুরি যাবে এমন সে কখনও ভাবেনি।

কিন্তু এখন কী করবে? অনুপমা নির্বোধ নয়, সে জানে চেঁচামেচি করে লোক জড়ো করে কোনও লাভ হবে না, বরং লোকসানো হবে। জুতোর হদিশ পাওয়া যাবে না।

খালিপায়ে এই উত্তর কলকাতা থেকে টালিগঞ্জ যাওয়া নিরাপদ নয়। ভিড়ের ট্রামে-বাসে লোকেরা পা মাড়িয়ে দেবে।

অবশ্য একটু দূরেই জুতোর বাজার। সেখানে হেঁটে গিয়ে একজোড়া চটি কেনা যায়, কিন্তু খালিপায়ে জুতোর দোকানে যাওয়া কেমন দেখাবে?

অনেক ভেবেচিন্তে অনুপমা আবার বাপের বাড়িতে ফিরে গেল। বাবা-মা অবাক হলেন, সে কী? কী হল?

অনুপমা কালীমন্দিরে জুতোচুরির কথা বলে ভিতরের বারান্দায় জুতোর র‍্যাকে পুরনো চটি খুঁজতে গেল। বিয়ের চার বছর আগেকার একজোড়া পুরনো চটি সে খুঁজে পেল। পুরনো হিল ক্ষয়ে যাওয়া চটি, ধুলো ময়লা জমেছে, এতদিন অব্যবহারে দুমড়ে মুচড়ে গেছে। সেই চটিজোড়াই জুতোর বুরুশ দিয়ে একটু ঝেড়েমুছে অনুপমা পায়ে দিল।

একটু শক্ত শক্ত লাগছে, মা জিজ্ঞাসা করলেন, এটা পায়ে দিয়ে হাঁটতে পারবি তো?

 অনুপমা বলল, সামনের জুতোর দোকানে গিয়ে একজোড়া চটি কিনে নেব।

 বাবা বললেন, তোর কাছে টাকা আছে?

অনুপমা বলল, তা আছে। তোমাকে এত ভাবতে হবে না।

তথাপি দেরাজ খুলে বাবা তিনটে একশো টাকার নোট মেয়ের হাতে দিয়ে বললেন, এ টাকাটা রাখ।

অনুপমা টাকাটা নিয়ে নিল, সে বুঝল নিজের এলাকার মন্দিরের জুতোচুরির খেসারত বুড়ো বাবা দিচ্ছেন। মেয়ের বাবাকে এরকম কত খেসারতই তো দিতে হয়!

০৪.

অনুপমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গলির মোড় পেরিয়ে একটু বাঁদিকে হাঁটলে পরপর অনেকগুলো জুতোর দোকান।

সেই জুতোর দোকানগুলোর প্রথম সারিতে রয়েছে সেই ফ্রি-ফ্রি-ফ্রি দোকান, যে দোকানে একপাটি জুতো কিনলে আরেকপাটি ফ্রি। যে দোকানের ম্যানেজার আমাদের পটললাল।

একপাটি জুতো কিনলে তবে আরেকপাটি ফ্রি। হাসি পেল অনুপমার। সে মোটেই বোকা নয়, সে এসব বিজ্ঞাপনি ফাজলামি ভালই বোঝে।

কিন্তু বিশাল কাপড়ের ব্যানারের নীচে পৌঁছে নিজের অজান্তেই দোকানটায় ঢুকে গেল। হাজার। হোক বিজ্ঞাপনের একটা টান আছে, তা ছাড়া দোকানটিও বেশ চালু।

দোকানের মধ্যে কয়েকজন খদ্দের, চার-পাঁচজন কর্মচারী, বেশ ভিড়ই বলা যায়। জুতোর স্টকও ভালই, ঘরের একপ্রান্তে কাউন্টার, সেখানে ক্যাশিয়ার কাম ম্যানেজার পটললাল বসে রয়েছেন।

পটললাল সাধারণত হাসিখুশিই থাকেন, কিন্তু আজ যেন মুখটা একটু ভার ভার।

অবশ্য এর একটা কারণ আছে। পটললাল একজন নির্যাতিত স্বামী, তার স্ত্রী জুলেখার হাতে তিনি প্রায় নিয়মিতই তুচ্ছাতিতুচ্ছ কারণে নিগৃহীত হন।

জুলেখা দেবী স্থূলাঙ্গিনী হলেও অতি ক্ষিপ্রহস্তা। শুধু হস্তই? তাঁর হাত-পা দুই-ই খুব ভাল চলে। প্রয়োজন হলেই তিনি স্বামী দেবতাকে ধোলাই দেন।

পটললালও অবশ্য খুব সুবিধার লোক নন। তাঁর প্রধান দোষ হাতটান। এই জুতোর দোকানের মালিকের অনুপস্থিতিতে তিনি ক্যাশ থেকে বেশ কিছু টাকা সরিয়েছেন। পটললালের জুয়ো খেলার পুরনো অভ্যাস, সেই জুয়ো খেলেই টাকাগুলো গচ্চা গেছে।

এদিকে দোকানের মালিক দেশে গিয়েছিল, সামনের সপ্তাহে ফিরবে। তার আগেই পটললালকে টাকাটা জোগাড় করতে হবে, মালিক ধরতে পারলে চাকরিটি যাবে, জেল খাটতেও হতে পারে।

ফলে খুবই দুঃসাহসভরে পটললাল জুলেখার একটি সোনার হার চুরি করে দোকানে বন্ধক রেখে টাকাটা সংগ্রহ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু চুরি করার পরেই ধরা পড়ে যান। ফলস্বরূপ কাল রাতে এবং আজ সকালে পটললালকে ক্রমাগত লাথি-ঘুষি, চড়-চাপড় খেতে হয়েছে জুলেখার কাছে।

একদিকে জুলেখার নির্যাতন, অন্যদিকে মালিকের ফিরে আসার আশঙ্কায় পটললাল খুবই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। কোনওরকমে কাউন্টারে বসে দোকানের কাজকর্ম দেখছেন।

এদিকে অনুপমা দোকানে ঢুকে একজোড়া চটি পছন্দ করেছে। এই দোকানের সব পাদুকাই কোনও না কোনও চিত্রতারকার নামে, যেমন জুহি চাওলা চপ্পল, শতাব্দী রায় চটি, প্রসেনজিৎ কাবুলি। যে জোড়া অনুপমা পছন্দ করল তার নাম হেমা মালিনী হাই হিল।

জুতোজোড়া পায়ে দিয়ে দোকানের কার্পেটে একটু পায়চারি করে অনুপমা দেখল যে ভালই হয়েছে, পায়ে ভাল ফিট করেছে। ঠিক করল এটা পায়ে দিয়েই যাবে, পুরনো ঘেঁড়া চটিজোড়া কোথাও ফেলে দেবে।

যে কর্মচারী জুতো দেখাচ্ছিল, তার হাতে জুতোর দাম বাবদ বাবার দেওয়া তিনটে একশো টাকার নোট দিয়ে অনুপমা অপেক্ষা করছিল, কাউন্টার থেকে ক্যাশমেমো করিয়ে খুচরো ষাট টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য। নতুন জোড়ার দাম দুশো চল্লিশ টাকা।

ভদ্রলোকের ফিরতে দেরি হচ্ছিল, কাউন্টারে বেশ ভিড়। ইতিমধ্যে অনুপমা তার পুরনো চটিজোড়া নতুন জুতোর বাক্সে ভরে নতুন চটিজোড়া পায়ে পরে নিয়েছে।

দেরি হচ্ছে দেখে সে কাউন্টারের দিকে এগোল, যাওয়ার সময় কী ভেবে পুরনো চটিজোড়া সমেত জুতোর বাক্সটা যেখানে বসেছিল সেই সিটটার উপরে রেখে দিল। তারপর পটললালের কাউন্টারে গিয়ে খুচরো টাকাটা কর্মচারিটির কাছ থেকে নিয়ে বেরিয়ে গেল।

এদিকে কর্মচারি ভদ্রলোক তার নিজের জায়গায় ফিরে দেখেন সিটের উপর জুতোর বাক্সটা পড়ে আছে। বাক্সটা তুলে ঝাঁকি দিতেই দেখলেন ভারি আছে, জুতো ভেতরে রয়েছে।

ভদ্রলোক বাক্সটা হাতে করে তাড়াতাড়ি ছুটে দোকানের বাইরে গেলেন, কিন্তু ততক্ষণে অনুপমা একটা ট্রামে উঠে গেছে।

একটু খোঁজাখুঁজি করে তারপর ভদ্রলোক দোকানে ফিরে এসে কাউন্টারে গিয়ে পটললালকে বললেন, ম্যানেজারবাবু, এক ভদ্রমহিলা এই জুতোজোড়া ফেলে চলে গেছেন।

ক্যাশমেমো লিখতে লিখতে পটললাল বললেন, উনি নিশ্চয় ফিরে আসবেন। বাক্সটা এখানে রেখে যান।

বাক্সটায় চোখ বুলিয়ে পটললাল দেখলেন, হেমামালিনী হাই হিল। একটু উঁচু হিলের লেডিস পাম্পসু। নতুন স্টাইলের জুতো। পটললাল ভাবতে লাগলেন, একজোড়া জুতো জুলেখার খুব পছন্দ হবে।

০৫.

পটললাল যা আশা করেছিলেন তাই হল। দোকান বন্ধ হওয়া পর্যন্ত জুতোজোড়া নিতে কেউই এল না। কেই বা আসবে।

আটটার সময় সব কর্মচারী বেরিয়ে গেলে দোকান বন্ধ করে পটললাল বেরোলেন, তার বগলে অনুপমার পরিত্যক্ত জুতোর বাক্স। আজ এটা উপহার দিয়েই জুলেখার সঙ্গে সন্ধির চেষ্টা করতে হবে।

বাড়ি ফিরে জুলেখার শ্রীচরণে জুতোর বাক্সটি রেখে প্রণিপাত হলেন পটললাল। অত্যন্ত অবহেলা সহকারে জুতোর বাক্সটা খুললেন জুলেখা দেবী। ভিতর থেকে বেরোল সেই ছেঁড়া। পুরোনো চটিজোড়া।

 এর পরের কাহিনি আর কহতব্য নয়, শুধু এটুকু বলি, অনুপমা পুরোনো চটি জোড়া ফেলে না দিলেও পারত। একটু পুরনো হলেও খুব শক্ত, মজবুত চটিজোড়া।

পটললালকে জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন, তিনি হলফ করে বলবেন, এমন মজবুত চটি সচরাচর দেখা যায় না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *