দ্বিতীয় খন্ড
উত্তরপর্ব
2 of 3

চন্দ্র ভট্টের ভাষা গ্ৰন্থ

।। চন্দ্ৰ ভট্টকা ভাষা গ্ৰন্থ।।

কৃষ্ণাংশে চ গৃহং প্রাপ্তে চেন্দুলে চ বিবাহিতে। মহীপতি সদা দুঃখী দেহলীং প্রতি চাগমৎ।। ১।। বৃত্তান্তং চ নৃপস্যাগ্রে কথয়িত্বা স তারকঃ। পরং বিস্ময়মাপন্নঃ কৃষ্ণাংশচরিতং প্রতি।।২।। এতস্মিন্নন্তরে মন্ত্রী চন্দ্রভট্ট উদারধী। ভূমিরাজং বচঃ প্রাহ শৃণু পার্থিবহসত্তম।।৩।। ময়া চারাধিতা দেবী বৈষ্ণবী বিশ্বকারিণীঃ। ত্রিবর্ষান্তে চ তুষ্টাভূদ্বরদা ভয়হারিণী।।৪।। তয়া দত্তং শুভং জ্ঞানং কুমতিধ্বংসকারকম্। ততোহহং জ্ঞানবাদ্ভূত্বা কৃষ্ণাংশং প্রতি ভূপতে। চরিত্রং বর্ণয়ামাস তস্য কল্মষনাশনম্।।৫।।

।। চন্দ্র ভট্টের ভাষা গ্ৰন্থ।।

এই অধ্যায়ে রাজা পৃথ্বীরাজের সমক্ষে চন্দ্রভট্টের ভাষা গ্রন্থের বর্ণনর করা হয়েছে। শ্রী সূতজী বললেন–কৃষ্ণাংশ প্রভৃতি ইন্দুলের বিবাহের পর গৃহে ফিরে এলে মহীপতি সদাদুঃখী হয়ে দেহলী নগরীতে এলেন। সেই তারক সকল বৃত্তান্ত নৃপতিকে বলে কৃষ্ণাংশ চরিত্র সম্পর্কে পরম বিস্ময় প্রাপ্ত হলেন।। ১-২।। দেবীভক্ত মাহাত্ম্য শুনিয়েছিলেন।। ৩-৬।।

ইতিমধ্যে উদারবুদ্ধি মন্ত্রী চন্দ্রভট্ট ভূমিরাজকে বলেছিলেন–হে পার্থিব সত্তম শ্রবণ করুন–আমি এই বিশ্বরচনা কারি বৈষ্ণবী দেবীর আরাধনা করেছি। তিন বর্ষের আরাধনার শেষে বরদাত্রী এবং ভয়হরণকারী সেই দেবী প্রসন্ন হন। তিনি আমাকে কুমতি ধ্বংস কারী শুভজ্ঞান প্রদান করেন। হে ভূপতি, তখন থেকে সেই কৃষ্ণাংশের বিষয়ে আমি জ্ঞান লাভ করি। এই কথা বলে পরম শুদ্ধ আত্মা চন্দ্র ভট্ট একটি ভাষাময় শুভ্রগ্রন্থ সভামধ্যে দেবীভক্ত মাহাত্ম্য শুনিয়েছিলেন।। ৩-৬।।

ইত্যুক্ত্বা স চ শুদ্ধাত্মা গ্রন্থং ভাষাময়ং শুভম্। মাহাত্ম্যং দেবিভক্তানাং শ্রাবয়ামাস বৈ সভাম্।।৬।। তচ্ছ্বত্বা ভূমিরাজস্ব বিস্মিতশ্চাভবতক্ষণাৎ। মহীপতিস্তদা প্রাহ দিব্যাশ্চবলদর্পিতঃ। উদয়ো নাম বলবান্যস্যৈবং বর্ণিতা কথা।।৭।। চত্বারো বাজিনো দিব্যা জলস্থলখগাশ্চ তে। শীঘ্রং তাংশ্চ সমাহৃত্য স্বয়ং ভূপ বলী ভব।।৮।। ইতি শ্রুত্বা স নৃপতিঃ শ্রুতবাক্যবিশারদম্। আহ্বয় কুন্দনমলং প্রেষয়ামাস সত্বরম্।।৯।। মহাবতীং সমাগত্য স দূতো ভূপতিং প্রতি। উবাচ বচনং প্রেন্মা মহীরাজস্য ভূপতেঃ।।১০।। বাজিনস্তে হি চত্বারো দিব্যরূপাঃ শুভপ্রভাঃ। দর্শনার্থে তব বধূবেলা নাম মমাত্মজা।।১১।।

সেই বৃত্তান্ত শ্রবণ করে ভূমিরাজ কিছুক্ষণের জন্য বিস্মৃত হয়েগেলেন। সেই সময় মহীপতি বললেন–উদয় নামক অত্যন্ত গর্বিত দিব্যঅশ্ব অত্যন্ত বলবান ছিল, যাদের কথা এখানে বর্ণিত হয়েছে। চার প্রকার দিব্য অশ্ব জল-স্থল এবং আকাশে গমন করার শক্তি রাখে। হে ভূপ, আপনি শীঘ্র তাদের গ্রহণ করে স্বয়ং বলবান্ হয়ে যান। একথা শ্রবণ করে সেই রাজা শ্রুত বাক্যে পরম প্রবীণ পন্ডিত কুন্দন মলকে ডেকে শীঘ্র পাঠিয়ে দিলেন।। ৭-৯।।

মহাবতীতে পৌছে দূত ভূপতিকে মহারাজ ভূপতির কথা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে বরলেন। তিনি বললেন, আমার কন্যা আপনার বধূ বেলা চার দিব্য অশ্ব দর্শনের জন্য আমাকে আহ্বান করেছে। সুতরাং হে ভূপ, আপনি বিস্মৃত না হয়ে সেই চার দিব্য অশ্ব আমাকে প্রদান করুন। যদি আপনি তা না করেন তাহলে বেলার অগ্নিতে সমস্ত সেনাপতি ক্ষয় প্রাপ্ত হবে।। ১০-১২।।

তয়াহূতান্থয়াস্তূপ দেহি মে বিস্ময়ং ত্যজ। নো তেদ্বেলাগ্নিনা সর্বে ক্ষয়ং যাস্যন্তি সৈন্যপাঃ।।১২। ইতি শ্রুত্বা বচো ঘোরং স ভূপো ভয়কাতরঃ। আহ্লাদাদীন্সমায় বচনং প্ৰাহ নম্ৰধীঃ। হয়ান্সান্মুদা দেহি মদীয়ং বচনং করু।।১৩।। ইতি শ্রুত্বা স আহ্লাদোধ্যাত্বা সর্বময়ীং শিবাম্। উবাচ মধুরং বাক্যং শৃণু ভূপ শিবপ্ৰিয়।।১৪।। যত্র নঃ সংস্থিতাঃ প্রাণাস্তত্র তে বাজিনঃ স্থিতাঃ। ন দাস্যামো বয়ং রাজন্সসত্যং ন চান্যথা।।১৫।। ইতি শ্রুত্বা বচস্তস্য রাজা পরিমলো বলী।।১৬।। শপথং কৃতবাঘোরং শৃণ্বতাং বলশালিনাম্। ভোজনং ব্রহ্মমাংসস্য পানীয়ং গোহসৃজোপমম্।।১৭।

সেই দূতের এই প্রকার ঘোর বচন শ্রবণ করে রাজা ভয়কাতর হয়ে আহ্লাদাদি সকলকে ডাকলেন। নম্রবুদ্ধি হয়ে তিনি তাদের বললেন, তোমার আমার কথা মেনে নিয়ে নিজ নিজ অশ্ব এই সময় আনন্দের সঙ্গে দিয়ে দাও। রাজার এই আজ্ঞা শ্রবণ করে আহ্লাদ সর্বময়ী শিবার ধ্যান করছিলেন এবং বললেন, হে শিবপ্রিয় রাজন, এই কথা শ্রবণ করুন, যেখানে আমার প্রাণ আছে, সেখানেই এই অশ্ব আছে। আমরা সেগুলি দেবোনা।। ১৩-১৫।।

আহ্লাদের এইরূপ উত্তর শ্রবণ করে রাজা সমস্ত বলশালিদের উদ্দেশ্যে শপথ গ্রহণ করে বললেন যে, তোমরা আমার রাজ্যে যে ভোজন করবে তা ব্রাহ্মণের মাংসতুল্য হবে, যে জল পান করবে তা গোরক্ত তুল্য হবে, যে শয্যায় শয়ন করবে তা মাতার শয্যার ন্যায় হবে এবং তোমাদের সভা ব্রহ্মহত্যা সদৃশ হবে। এই ভাবে তোমরা মহাপাপে পরিপূর্ণ হয়ে বাস করবে।। ১৬ -১৮।।

শয্যা স্বমাতৃমদৃশী ব্রহ্মহত্যোপমা সভা। মম রাষ্ট্রে চ যুষ্মাভির্বাসঃ পাপময়ো মহান্।।১৮।। ইতি শ্রুত্বা তু শপথং দেবকী শোকতৎপরা। চকার রোদনং গাঢ়ং সগেহজনবিগ্ৰহা।।১৯।। পঞ্চবিংশাব্দকে প্রাপ্তে কৃষ্ণাংশে যোগতৎপরে। ভাদ্রশুক্লচতুর্দশ্যাং তদগেহাদ্ধর্মতৎপরাঃ।।২০। নিযযুঃ কান্যকুব্জংতে জয়চন্দ্রেণ পালিতম্। স্বর্ণবত্যা পুষ্পবত্যা সহিতাশ্চিত্ররেখয়া।।২১।। ইন্দুলঃ প্রপযৌ শীঘ্রমযুতাশ্ববলৈঃ সহ। করালং হয়মারুহ্য পঞ্চশব্দং চ তৎ পিতা।। কৃষ্ণাংশো বিন্দুলারুঢ়ো দেবকীমনুসং যযৌ।।২২।। ত্যক্ত্বা তে ভূপতে গ্রামং সর্বসংপৎ সমন্বিতম। পথি এ্যহমুষিত্বা তে জয়চন্দ্ৰমুপাযঃ।।২৩।।

রাজা পরিমলের এই রূপ ঘোর শপথ শ্রবণ করে দেবকী শোকাতুর হয়ে গৃহজন বিগ্রহে প্রভূত রোদন করতে লাগলেন।। ১৯।। যোগতৎপর কৃষ্ণাংশ পঁচিশবর্ষ বয়ঃ প্রাপ্ত হলে ভাদ্রপদ মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে ধর্মপরায়ণ সকলে তার গৃহথেকে চলে গেলেন এবং তারা সকলে জয়চন্দ্রের আশ্রয় লাভ করলেন। স্বর্ণবর্তী, পুষ্পবর্তী এবং চিত্ররেখার সঙ্গে সকলে ছিলেন।। ২০- ২১।।

ইন্দুল দশ সহস্ৰ অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে শীঘ্র করাল নামক অশ্বে আরোহণ করে এবং তার পিতা পঞ্চশব্দ নামক অশ্বে আরোহণ করে চলে গেলেন। কৃষ্ণাংশ নিজ বিন্দুল নামক অশ্বে সমারোহণ করে দেবকীকে অনুসরণ করলেন। তাঁরা সকলে রাজা পরিমলের গ্রাম, সমস্ত প্রকার সম্পত্তি ত্যাগ করে পথে তিনদিন অতিবাহিত করে রাজা জয়চন্দ্রের সমীপে চলে গেলেন।। ২২ -২৩।।

নত্বা তং ভূপতিং প্রেন্না গদিত্বা সর্বকারণম্। উষিত্বা শীতলাস্থানে পূজয়ামাসুরম্বিকাম্।।২৪।। জয়াচন্দ্ৰস্তু ভূপালো দেবসিংহেন বর্ণিতঃ। তেভ্যশ্চ ন দদৌ বৃত্তিং ভূমা পরিমলাজ্ঞয়া।।২৫।। কুণ্ঠিতো দেবসিংহস্ত গত্বা কৃষ্ণাংশমুত্তমম্। উদিত্বা কারণং সর্বং স শ্রুত্বা রোষমাদধৌ।।২৬।। ত্বরিত্বং বিন্দুলারুঢ়ো হয় পঞ্চশতাবৃতঃ। লুণ্ঠয়ামাস নগরং পালিতং লক্ষণেন তৎ।।২৭।। দষ্টা তং লক্ষণো বীরো হস্তিনঃ পৃষ্ঠমাস্থিতঃ। শরেণ তাড়য়ামাসকৃষ্ণাংশ হৃদয়ং দৃঢ়ম্।।২৮।। নিষ্ফলত্বং গতো বাণো বিষ্ণুমন্ত্রেণ প্রেরিতঃ। বিস্মিতঃ সত্ ভূপালো বাহনাদ ভূমিমাগতঃ।।২৯।।

তাঁরা সকলে প্রেমভরে রাজা জয়চন্দ্রকে প্রণাম করে রাজ্য ত্যাগের সকল কারণ জানালেন। সেখানে শীতলা দেবীর স্থানে নিবাস করে তাঁরা অম্বিকা দেবীর পূজন করেছিলেন। দেবসিংহ রাজা জয়চন্দ্রের স্তব করেছিলেন। রাজা পরিমলের আদেশে তাঁরা কোনো কর্মলাভ করলেন না। এতে দেবসিংহ কুণ্ঠিত হয়ে কৃষ্ণাংশের সমীপে গেলেন। তিনি সব কারণ বললে কৃষ্ণাংশের প্রভূত ক্রোধ উৎপন্ন হয়েছিল। তিনি শীঘ্র বিন্দুলে আরোহণ করে পাঁচশত অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে লক্ষণের দ্বারা পালিত নগর লুণ্ঠন করলেন। বীর লক্ষণ সেখানে কৃষ্ণাংশকে দেখে গজরূঢ় হয়ে এসে তিনি শরের দ্বারা কৃষ্ণাংশের হৃদয়ে অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে আঘাত করলেন।। ২৪ -২৮।।

কৃষ্ণাংশ বিষ্ণু মন্ত্রের দ্বারা লক্ষণের প্রেরিত বাণ নিষ্ফল করলেন। তখন সেই ভূপাল অত্যন্ত বিস্মিত হয়ে ভূমিতে নেমে এলেন। এরপর কুলিশাদি দিব্য লক্ষণ সমন্বিত তার চরণে প্রণাম করলেন এবং ভূমিতে দন্ডবহ গদগদ কন্ঠে তাঁর স্তুতি করেছিলেন।। ২৯-৩০।।

নত্বা তচ্চরণৌ দিব্যৌ কুলিশাদিভিরন্বিতৌ। তুষ্টাব দন্ডবভূত্বা লক্ষণৌ গদগদং গিরা।।৩০।। বৈষ্ণবং বিদ্ধি মাং স্বামিন্ বিষ্ণুপূজনতৎপরম্। জানেহহং ত্বাং মহাবাহো কৃষ্ণশক্ত্যবতারকম্।।৩১।। ত্বদৃতে কো হি মে বাণ নিষফলং কুরুতে ভূবি। ক্ষমস্ব মম দৌরাত্ম্যং নাথ তে মায়য়া কৃতম্।।৩২।। ইত্যুক্ত্বা তেন সহিতো জয়চন্দ্ৰং মহীপতিম্। গত্বা তং কথয়ামাস যথাপ্রাপ্তঃ পরাজয়ম্।।৩৩।। নৃপস্তয়োঃ পরীক্ষার্থং যো তু ছায়াবিমোহিতৌ। গজৌ কুবলয়াপীড়ৌ ত্যক্তবাঞ্ছীতলাস্থলে।।৩৪।। তদাহ্লাদোদয়ৌ বীরো গৃহীত্বা তৌ স্বলীলয়া। চকৃষতুবলাৎপুচ্ছে ক্রোশমাত্রং পুনঃ পুনঃ।।৩৫।।

লক্ষণ বলেছিলেন–হে স্বামিন্, আপনি আমাকে সর্বদা বিষ্ণু পূজা তৎপর বৈষ্ণব বলে জানবেন। হে মহাবাহো, আপনি আপনাকে চিনতে পেরেছি যে আপনি কৃষ্ণশক্তি অবতার।। আপনি ব্যতীত এই ভূমন্ডলে অন্য কেউ এই বাণ নিষ্ফল করতে পারতোনা। হে নাথ, আমার এই দুরাত্মতা আপনি ক্ষমা করে দেবেন। কারণ আপনি আপনার মায়াতে মোহিত হয়ে আপনার সঙ্গে এইরূপ ব্যবহার করেছি।। ৩১ -৩২।।

এই কথা বলে লক্ষণ কৃষ্ণাংশের সাথে রাজা জয়চন্দ্রের কাছে গেলেন এবং তাঁকে সমস্ত বৃত্তান্ত বললেন যে কি প্রকারে যুদ্ধে তার পরাজয় হয়েছিল। রাজা তাদের দুইজনকে পরীক্ষা করতে সেই শীতলাস্থলে দুটি কুবলয়াপীঢ় ছায়াবিমোহিত হাতী ছেড়ে দিলেন। সেই সময় আহ্লাদ এবং উদয়াদিবীর সেই দুই হাতীকে নিজ লীলার দ্বারা গ্রহণ করলেন এবং বলপূর্বক লেজ ধরে একক্রোশ পর্যন্ত দূর থেকে টেনে এনেছিলেন।। ৩৩ -৩৫।।

মৃতৌ কুবলাপীড়ৌ দৃষ্ট্বা রাজা ভয়াতুরঃ। দদৌ রাজ গৃহং গ্রামং তয়োরর্থে প্রসন্নধীঃ।।৩৬।। ইষশুক্লে তু সংপ্রাপ্তে লক্ষণো নাম বৈ বলী। নৃপাজ্ঞয়া যযৌ শীঘ্ৰং তৈশ্চ দিগ্বিজয়ং প্রতি।।৩৭।। সপ্তলক্ষবলৈঃ সার্দ্ধং তলনাদ্যৈশ্চ সংযুতঃ। বারাণসী পুরীং প্রাপ্য রুরোধ নগরীং তদা।।৩৮।। রুদ্রবর্মা চ ভূপালো গৌড়বংশয়শস্করঃ। পঞ্চাযুতৈঃ স্বসৈন্যৈশ্চ সার্দ্ধং যুদ্ধার্থমাপ্তবান্।।৩৯।। যামমাত্রেন তং জিত্বা ষোড়শাব্দস্য বৈ করম্। কোটিমুদ্রাময়ং প্রাপ্য জয়চন্দ্ৰায় চাপয়ৎ।।৪০ । মাগধেশং পুনর্জিত্বা নান্না বিজয়কারিণম্। বিংশত্যব্দকরং প্রাপ্য স্বভূপায় সমৰ্পয়ৎ।।৪১।। পঞ্চকোটিশ্চ বৈ মুদ্রা রাজতস্য পুনযযৌ। অংগ দেশপতিং ভূপং মায়াবমাৰ্ণমুত্তমম।।৪২।।

সেই দুই কুবলয়াপীড় হস্তী মারা গেলে রাজা অত্যন্ত ভয়াতুর হয়েছিলেন। তখন রাজা পরম প্রসন্ন হয়ে তাদের জন্য রাজ গৃহ নামক গ্রাম দিয়েছিল।। ৩৬।। আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে বলবান লক্ষণ রাজা দেশে দিগ্বিজয়ের জন্য প্রস্থান করল।। ৩৭।। সাতলক্ষ সেনা এবং তালনদিকে সঙ্গে নিয়ে বারাণসী পুরীতে পৌঁছালেন এবং সেখানে গিয়ে সমস্ত পুরী অবরুদ্ধ করলেন। সেখানে গৌড়বংশের রাজা রুদ্র বর্মা রাজত্ব করতেন। তিনি নিজের পঞ্চাশ হাজার সেনা নিয়ে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হলেন। তাকে এক প্রহরেই জয় করে ষোড়শবর্ষের কর স্বরূপ কোটি মুদ্রা গ্রহণ করে রাজা জয়চন্দ্রকে অর্পণ করলেন। অতরপ অঙ্গদেশপতি পরম শ্রেষ্ঠ মায়বর্মার দশসহস্র সেনা জয়করে বিংশ বৎসরের কর হিসাবে এককোটি মুদ্রা প্রাপ্ত হলেন এবং সেই সব রাজাকে সমৰ্পিত করলেন।। ৩৮- ৪২।।

সৈন্যাযুতযুতং জিত্বা বিংশত্যব্দস্য বৈ করম্। কোটিমুদ্রাশ্চ সংপ্রাপ্য স্বভূপায় সমার্পয়ৎ।।৪৩।। বংগদেশপতিং বীরো লক্ষণো বৈ যুতশ্চ তৈঃ। লক্ষসৈন্যযুতং ভূপং কালীবৰ্মাণমুত্তমম্। অহোরাত্রেণ তং জিত্বা মহাযুদ্ধেন লক্ষণঃ।।৪৪।। বিংশত্যব্দকরং প্রাপ্য কোটিং স্বর্ণময়ং তদা। প্রেষয়ামাস ভূপায় জয়চন্দ্ৰায় বৈ মুদা।।৪৫।। উষ্টদেশং যযৌ বীরঃ পালিতং তৈমহঃবলৈঃ। ধোয়ীক বিস্তত্রনৃপো লক্ষসৈন্য সমন্বিতঃ।।৪৬।। জগন্নাথাজ্ঞয়া প্রাপ্তস্তৈশ্চ সার্দ্ধং রণোন্মুখে। তয়োশ্চাসীন্ মহদ্ যুদ্ধং তুমুলং রোমহর্ষণম্। অহোরাত্রপ্রমাণেন কৃষ্ণাংশেন জিতো নৃপঃ।।৪৭।। বিংশত্যব্দকরং সর্বং কোটিস্বর্ণসমন্বিতম্। সংপ্রাপ্য প্রেষয়ামাস কান্যকুব্জাধিপায় বৈ।।৪৮।। পুণ্ড্রদেশং যযৌ বীরো লক্ষণো বলবত্তরঃ। নৃপং নাগপতিং নাম পঞ্চাযুতবলৈযুতম্। দিনমাত্রেণ তং জিত্বা কোটি মুদ্রা গৃহীতবান্।।৪৯।।

পুনরায় লক্ষণ তাদের সকলেন সঙ্গে বঙ্গদেশের রাজা কালী বর্মার কাছে গেলেন। তিনি অতিউত্তম নৃপতি ছিলেন এবং একলক্ষ নৌ সমন্বিত ছিলেন। লক্ষণ তার সঙ্গে মহাযুদ্ধে এক অহোরাত্রে তাকে জয় করলেন। সেই সময় সেখানে কুড়ি বৎসরের কর স্বরূপ এককোটি স্বর্ণ মুদ্রা গ্রহণ করে প্রসন্নতার সঙ্গে সেই সকল রাজা জয়জচন্দ্রের কাছে পাঠিয়ে দিলেন।। ৪৩-৪৫।।

সেই বীরগণ পুনরায় উৎকল দেশে গিয়েছিলেন, সেই দেশ ছিল মহাবলবানের দ্বারা সুরক্ষিত। সেখানে ধোয়ী কবি নামধারী নৃপতি ও তার একলক্ষ সেনা ছিল। তিনি জগন্নাথ স্বামীর আদেশে তাদের সকলের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে প্রবৃত্ত হলেন। দুই পক্ষের ভয়ানক রোমাঞ্চকর যুদ্ধ হয়েছিল। সেই নৃপতিকে কৃষ্ণাংশ মাত্র এক অহোরাত্রে জয় করে নিয়েছিলেন।। তিনিও কুড়ি বৎসরের কর হিসাবে এককোটি স্বর্ণ মুদ্রা প্রদান করেছিলেন। পঞ্চাশ হাজার সৈনিক নিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন। তাকে একদিনেই পরাজিত করে এককোটি স্বর্ণমুদ্রা বীরগণ প্রাপ্ত হয়েছিলেন।। ৪৬-৪৯।।

মহেন্দ্রগিরিমাগত্য নত্বা তং ভাগবং মুনিম্। নতো নিবৃত্য তে সর্বে নেত্রপালপুরং যযুঃ।।৫০।। যোগসিংহস্তদাগত্য কৃষ্ণাংশ‍ প্রতি ভার্গব। কোটিমুদ্রা দদৌ তস্মৈ সপ্তরাত্রমবাসয়ৎ।।৫১।। বীরসিংহপুরং জগমুস্তে বীরা মদত্তরাঃ। রুরুধুনগরীং সর্বা হিমতুঙ্গোঁপরি স্থিতাম্।। পালিতাং গোরখাখ্যেন যোগিনা ভক্তকারণাৎ।।৫২।। ভূপানুজঃ প্রবীরশ্চ সৈন্যাযুতসমন্বিতঃ। কৃতবান্দারুণং যুদ্ধং লক্ষণস্যৈব সেনয়া।।৫৩।।

সেই স্বর্ণমুদ্রা রাজা জয়চন্দ্রকে কৃষ্ণাংশ প্রেরণ করলেন। পুনরায় বলবান্ লক্ষণ পুন্ড্র দেশে পৌছালেন। সেখানে নাগপতি নামক রাজা রাজত্ব করতেন। তিনি এর পর সকলে মহেন্দ্র গিরিতে এসে উপস্থিত হন। সেখানে তারা অর্গব মুণিকে প্রণাম করে সকলে নেত্রপাল পুরে চলে গেলেন।। ৫০।।

হে ভার্গব, সেই সময় যোগসিংহ এসে কৃষ্ণাংশকে এককোটি স্বর্ণমুদ্রা দিয়েছিলেন এবং সাতরাত্রি সেখানে বসবাস করতে দিয়েছিলেন।। ৫১।।

অনন্তর মদমত্ত তারা সকল বীর বীরসিংহ পুরে চলে গেলেন। সেখানে হিমতুঙ্গে স্থিত সমস্ত নগরীকে তারা ঘিরে ফেলেছিলেন। তারা লক্ষণের সেনাদের সঙ্গে শূরদের হনন করতেন। তারা সায়ৎকালে গৃহে এসে সেই যোগীর পূজন করতেন। সেই পূজনের দ্বারা পরম প্রসন্ন হয়ে রাজার মৃত সেনাদের পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন এবং তাদের এক গতীর বল প্রদান করতেন। এই রূপে তিনি পুনর্যোগ করতেন। এই ভাবে সেখানে বলশালিগণ দেড়মাস ধরে যুদ্ধ করেছিলেন। তখন নিরুৎসাহ হয়ে দেবসিংহকে বললেন–হে ভূপ, আপনিই বলুন এবং তত্ত্বের দ্বারা বোঝান যে এই যুদ্ধে আমাদের বিজয় কিভাবে সম্ভব। একথা শুনে তিনি বললেন–হে কৃষ্ণাংশ, আমার কথা শোনো, তুমি নিজের নৃত্যকলা দ্বারা যোগী গৌরখে পরাজিত করো এবং পুনরায় যুদ্ধ করো, তাহলে তুমি জয় প্রাপ্ত হবে।। ৫২- ৫৮।।

প্রত্যহং বলাবাঞ্ছরো হত্বা শূরসহস্রকম্। সায়ংকালে গৃহং প্রাপ্য যোগিনং তমপূজয়ৎ।।৫৪।। পূজনাৎ স প্রসন্নাত্মা সৈন্যমুজ্জীব্য ভূপতেঃ। দত্ত্বা গজবলং তেভ্যঃ পুনর্যোগং করোতি বৈ।।৫৫।। সার্দ্ধমাসো গতস্ত্বত্র যুদ্ধয়তাং বলশালিনাম্। তদা তে তু নিরুৎসাহা দেবসিংহ তমব্রুবন্।।৫৬।। বিজয়ো নঃ কথং ভূপ রুহি নস্তত্ত্বমগ্রতঃ। ইতি শ্রুত্বা স হোবাচ শৃণু কৃষ্ণাংশমে বচঃ।।৫৭।। যোগিনং গোরখং নাম পরাজিত্য স্বনৃত্যতঃ। পুনযুদ্ধং কুরুত্বং বৈ ততো জয় মাবপস্যসি।।৫৮।। ইত্যুক্তাস্তে হি কৃষ্ণাদ্যাঃ কৃত্বা যোগময়ং বপুঃ স্থাপয়িত্বা রণে সেনাং পালিতাং লক্ষণেন বৈ।।৫৯।। প্ৰাতঃ কালে যযুস্তে বৈ মন্দিরং তস্য যোগিনঃ। কৃষ্ণাংশো নর্তকশ্চাসীদ্বেনুবাদ্যবিশারদঃ।।৬০

এই প্রকারে তারা সকলে কৃষ্ণাংশাদিকে জয় প্রাপ্তির কথা বললে তারা সকলে যোগময় বপু ধারণ করে লক্ষণের দ্বারা রক্ষিত সেনাদের যুদ্ধ স্তলে স্থাপন করলেন। প্রাতঃ কালে সকলে সেই যোগীর মন্দিরে গিয়েছিলেন।। কৃষ্ণাংশ নৃত্য করেছিলেন এবং তিনি বংশী বিশারদও ছিলেন।। সেদসিংহ মৃদঙ্গ এবং তালন বীণা ধারণ করেছিলেন। আহ্লাদ কাংস্য বাদ্য বাজিয়েছিলেন এবং সনাতনী গীতা গানও করেছিলেন।। ৫৯-৬১।।

দেবসিংহো মৃদংগাঢ্যো বীণাধারী চ তালনঃ। কাংসধারো তদাহ্লাদো জনৌ গীতাং সনাতনীম্।।৬১।। তদর্থং হৃদয়ে কৃত্বা গোরখঃ সর্বযোগবান্। বরং বৃনুত তানাহ তে তজ্জু ত্বাহধ্রুবন্বচঃ।।৬২।। নমস্যামো বয়ং তুভ্যং যদি দেয়ো বরত্ত্বয়া। দেহি সঞ্জীবিনীং বিদ্যামাহ্রাদায় মহাত্মনে।।৬৩।। ইতি শ্রুত্বা হৃদি ধ্যাত্বা তানুবাচ প্রসন্নধীঃ। বিদ্যা সংঞ্জীবিনী তুভ্যং বর্ষমাত্রং ভবিষ্যতি। তৎপশ্চান্নিযফলীভূয়াগমিষ্যতি মদন্তিকম্।।৬৪।। অদ্যপ্রভৃতি ভো বীর ময়া ত্যক্তমিদং জগৎ। যত্র ভতৃহরিঃ শিষ্যস্তত্র গত্বা শয়ে হ্যহম্।।৬৫।। ইত্যুক্ত্বান্তর্হিতো যোগী জন্মুস্তে রণমূর্দ্ধনি। জিত্বা প্রবীরসিংহ চ বীরসিংহং তথৈব চ।।৬৬।।

সর্বপ্রকার যোগ জ্ঞাতা গৌরখ যোগী সনাতনী গীতার অর্থ নিজ হৃদয়ে গ্রহণ করলেন। তিনি পরম প্রসন্ন হয়ে কৃষ্ণাংশে বললেন–বরদান প্রার্থনা কর। তাঁর বচন শ্রবণ করে কৃষ্ণাংশ তাঁকে বললেন–আপনাকে আমাদের সকলের প্রনাম। যদি আপনি প্রসন্ন হয়ে আমাদের বরদান করেন তাহলে এই মহাত্মা আহ্লাদের জন্য সজ্ঞীবনী বিদ্যা প্রদান করুন।। ৬২-৬৩।।

একথা শ্রবণ করে এবং হৃদয়ে ধ্যান করে পাসন্ন বুদ্ধি গৌরখ তাঁকে বললেন, সঞ্জীবনী বিদ্যা কেবলমাত্র একবৎসরের জন্য তোমার কাছে থাকবে, তারপর সেটি নিয়ল হয়ে গিয়ে আমার কাছে ফিরে আসবে।। ৬৪।।

হে বীর, আজ থেকে আমি এই জগৎ ত্যাগ করলাম। এখন যেখানে আমার শিষ্য ভর্তৃহরি আছে সেখানে গিয়ে আমি শয়ন করব। একথা তাদের সকলকে বলে সেই যোগী অন্তর্ধান করলেন এবং তারা সকলে রণস্থলে পৌঁছলেন। এরপর তারা প্রবীরসিংহ এবং বীরসিংহকে জয় করে তাদের দশহাজার সেনা বধ করে তাদের সম্পূর্ণ ঘর লুন্ঠন করলেন। সেই দশহাজার সেনাদের পূর্ণদাস রূপে লক্ষণ প্রসন্নতার সঙ্গে নিয়ে গেলেন।। ৬৫-৬৭।।

হত্বা তস্যাযুতং সৈন্যং লুণ্ঠয়িত্বা চ তদগৃহম্। কৃত্বা দাসময়ং ভূপং লক্ষণঃ প্রযযৌ মুদা।।৬৭।। কোশলং দেশমাগত্য জিত্বা তস্য মহীপতিম্। সৈন্যায়ুতং সূর্যধরং করযোগ্যমচীকরৎ।।৬৮।। ষোড়শাব্দকরং প্রাপ্য মুদ্রাকোট্যযুতং মুদ্রা। নৈমিষারন্যমাগত্য তত্রোযুঃ স্নানতৎ পরাঃ।।৬৯।। হোলিকায়া দিনে রম্যে লক্ষনো বলবত্তরঃ। দত্তা দানানি বিপ্রেভ্যো মহোৎসবমকারয়ৎ।।৭০।। তদা বয়ং চ মুনয়ঃ সমাধিস্তাশ্চ ভূপতিঃ। যদা স লক্ষণঃ প্রাপ্তো নৈমিষারণ্য মুত্তমম্।।৭১।। স্নাত্মা সর্বাণি তীর্থানি সন্তপ্য দ্বিজদেবতাঃ। কান্যকুব্জপুরং জঙ্গুশ্চৈত্রকৃষ্ণাষ্টমী দিনে।।৭২।।

পুনরায় কৌশল দেশে এসে সেখান কার মহীপতিকে জয় করে অযুত সেনা সূর্যধরের নিকট কর গ্রহণ করলেন।। তাঁর থেকে ষোড়শবর্ষের কর একসাথে দশসহস্র মুদ্রা প্রসন্নতার সঙ্গে গ্রহণ করেছিলেন।। ৬৫–৬৮।।

সেই সময় লক্ষণ উত্তম নৈমিষারন্য প্রাপ্ত হলে আমরা সকল মুনিগণ সমাধিস্থিত হয়েগিয়েছিলাম। সেখানকার সমস্ত তীর্থে স্নান করে দ্বিজ এবং দেবগণকে সম্যকরূপে তৃপ্ত করে চৈত্র মাসের অষ্টমী তিথিতে পুনরায় কান্যকুব্জে ফিরে এলেন।। ৭১-৭২।।

ইতি তে কথিতং বিপ্র যথা দিগ্বিজয়োভবৎ। শৃণু বিপ্র কথাং রম্যাং বলখানিযথা মৃতঃ।।৭৩।। মার্গশীর্ষস্য সপ্তম্যাং ভূমিরাজো মহাবলঃ। মহীপতেশ্চ বাক্যেন সামন্তং প্রাহ নিৰ্ভয়ঃ।।৭৪।। ময়াশ্রুতস্তে তনয়ঃ শারদাবরদপিতঃ। রক্তবীজত্বমাপন্নস্তং মে দেহি কৃপাং কুরু।।৭৫।। ইত্যুক্তঃ স তু সামন্তস্তেন রাজ্ঞেব সকৃতঃ। চামুন্ডং নাম তনয়ং সমায়াব্রীবদিদম্।।৭৬।। পুত্রস্তং নৃপতেঃ কার্যং সদা কুরু রণপ্রিয়। ইতি শ্রুত্বা পিতুবাক্যং স বৈ রাজানমব্রবীৎ।।११।। দেহ্যাজ্ঞাং ভূপতে মহ্যং শীঘ্রং জয়মাবাপ্প্যসি। ইতি শ্রুত্বা স হোবাচ বলখানিমহাবলঃ।।৭৮।। মচ্ছরীষবনং ছিত্বা গৃহীত্বা রাষ্ট্রমুত্তমম্। সুস্থিতো নিৰ্ভয়ো গেহে বহুশালী যতেন্দ্ৰিয়ঃ।।৭৯।।

হে বিপ্র, যে প্রকারে দিগ্বিজয় হয়েছিল, সেই সমস্ত বৃত্তান্ত তোমাকে বললাম। হে বিপ্র, এবার তুমি এক পরম সুন্দর কথা শ্রবণ কর, বলখানির মৃত্যু কিপ্রকারে হয়েছিল তার বর্ণনা করা হয়েছে।। ৭৩।।

মার্গশীর্ষ মাসের কৃষ্ণপক্ষের সপ্তমী তিথিতে মহান্ বলবান্ ভূমিরাজ মহীপতির রাজ্যে নির্ভয়ে সামন্ত বললেন, আমি শুনেছি যে, আপনার পুত্র দেবী শারদার বরদানে মহাহংকারী এবং রক্তবীজত্ব প্রাপ্ত হয়েছে। আপনি পুত্রকে আমার হাতে কৃপাপূর্বক সমর্পন করুন।। ৭৪-৭৫।।

সামন্ত রাজা এই ভাবে বলে রাজার ভ্রান্তি সৎকার করেছিলেন। রাজা তাঁর চামুন্ডা নামক পুত্রকে ডেকে বললেন, হে পুত্র, তুমি নৃপতিকার্যে সর্বদা নিরত থাকবে। কারণ তুমি তো প্রচুর রণপ্রিয়। এইরূপ পিতৃবাক্য শ্রবণ করে তিনি রাজাকে বললেন, হে ভূপতি, আপনি আমাকে আজ্ঞা প্রদান করুন, যাতে করে আমি শীঘ্র জয়লাভ করতে পারি। সেকথা শ্রবণ করে তিনি বললেন, বলবান বলখানি মহাবলবান্। তিনি আমার শিরীষ বন কেটে উত্তম রাষ্ট্র তৈরী করে প্রভূত বলশালী এবং যতেন্দ্রিয় হয়ে নির্ভয়ে গৃহে বাস করছে।। যদি তুমি সেই বলবান্ বলখানিকে জয় করে আমাকে সমর্পণ কর তাহলে সেই রাষ্ট্র তোমার হয়ে যাবে। সেও সৈন্য বাহিনী গ্রহণ করে প্রসন্নতার সঙ্গে চলে গেল।। ৭৬ -৮১।।

যদি ত্বং বলখানিং চ জিত্বা মে হ্যপয়িষ্যসি। হত্বা বা তস্য সকলং রাষ্ট্রং ত্বয়ি ভবিষ্যসি।।৮০।। ইত্যুক্ত্বা রক্তবীজং তং সমাহুয় স্বকং বলম্। সপ্তলক্ষং দদৌ তস্মৈ স তৎপ্রাপ্য মুদা যযৌ।।৮১।। উষিত্বা ত্রিদিনং মার্গে শিরীষাখ্যমুপাগতঃ। রুরোধ নগরীং সর্বাং বলখানেমহাত্মনঃ। চামুন্ডাগমনং শ্রুত্বা বলখানিমহাবলঃ। পূজয়িত্বা মহামায়াং দত্ত্বা দানান্যনেকশঃ। লক্ষসৈন্যেন সহিতঃ প্রযযৌ নগরাদ্বহিঃ।।৮৩। তস্যানুজো মহাবীরঃ সুখখানিবলৈঃ সহ। হরিণীং তাং সমারুহ্য শত্রুসৈন্যমচিক্ষপৎ।।৮৪।।

তিনি দিন ধরে তিনি পথে দিন যাপন করে শিরীষাখ্য পুরে চলে গেলেন। তিনি তারপর মহাত্মা বলখানির পুরী ফিরে গেলেন। চামুন্ডার আগমন বার্তা শ্রবণ করে বলখানি মহামায়া দেবীর পূজন করে বিপ্রগণকে অনেক প্রকার দান করলেন। তারপর এক লক্ষ সেনা নিয়ে তিনি নগরের বাইরে চলে এলেন।। ৮২ -৮৩।।

বলখানির কনিষ্ঠ ভ্রাতা সুখখানি মহাবীর ছিলেন। তিনি সেনাদের সাথে তরিনী নামক অশ্বে আরোহণ পূর্বক সেখানে পৌঁছালেন এবং শত্রু সেনাদের ছত্রভঙ্গ করলেন।। ৮৪।।

বলখানি কপোতস্থো নাশয়িত্বা রিপোবলম্। লক্ষসৈন্যং মুদা যুক্তশ্চামুন্ডং প্রতি চাগমৎ।।৮৫।। তয়োশ্চাসীন্ মহদ্যুদ্ধং স্বস্বসৈন্যক্ষেয়ংকরম্। অহোরাত্রপ্রমাণেন নিহতাঃ ক্ষত্রিয়া রণে।।৮৬।। প্রাতঃকালে তু সমপ্রাপ্তে কৃত্বা স্নানাদিকাঃ ক্রিয়া। জন্মতুস্তৌ রণে বীরো ধনুর্বানবিশারদৌ।।৮৭।। রথস্থো বলখানিশ্চ চামুন্ডো গজপৃষ্ঠগঃ। চক্রতুস্তমুলং ঘোরং নরবিস্ময়কারকম্।।৮৮।। বাণৈবাণাংশ্চ সংছিদ্য দেবীভক্তৌ চ তৌ মুদা। অন্যোন্যং বাহনে হত্বা ভূতলত্বমুপাগতৌ। খংগচর্মধরৌ বীরো যুযুধাতে পরস্পরম্।।৮৯।

কপোত নামক অশ্বে আরোহনকারী বলখানি শত্রু পক্ষের একলক্ষ সেনা নাশ করেছিলেন। পুনরায় প্রসন্নতার সঙ্গে চামুন্ডার কাছে এলেন। দুইপক্ষের সেনার মহাযুদ্ধ হয়েছিল, যার ফলে তাদের নিজ নিজ পক্ষের সেনা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছিল। সেই যুদ্ধ একঅহোরাত্র পর্যন্ত হয়েছিল এবং সেই যুদ্ধে প্রভূত ক্ষত্রিয় সেনা মারা গিয়েছিল। প্রাতঃকালে স্নানাদি ক্রিয়া সমাপ্ত করে ধনুর্বিদ্যায় পন্ডিত দুইবীর যুদ্ধ স্থলে গিয়েছিল।। ৮৫-৮৭।।

বলখানি নিজের একটি রথে সমারূঢ় ছিলেন এবং চামুন্ডা হাতীর পৃষ্ঠে আরোহণ করেছিলেন। সেই দুইবীর পুনরায় ঘোর তুমুল যুদ্ধ করেছিলেন যা ছিল মনুষ্যাদির পরম বিস্ময়।। ৮৮।।

তাঁরা দুজনেই দেবীর পরম ভক্ত ছিলেন। তারা পরস্পর বাণের দ্বারা বাণ সংছেদন করে প্রভূত আনন্দে নিজ নিজ বাহন বধ করল। পুনরায় তারা ভূমিতে নেমে এসে খড়্গা এবং চর্মধারণ করে পরস্পর যুদ্ধ করতে লাগলেন।। ৮৯।।

যাবন্তো রক্তবীজাংগাৎ সজ্ঞাতা রক্তবিন্দবঃ। তাবন্তঃ পুরুষা জাতা রক্তবীজপরাক্রমাঃ।।৯০।। তৈশ্চ বীরৈমদোন্মত্তৈবলখানি সমস্ততঃ। সংরুদ্ধোহ ভূভৃগুশ্রেষ্ঠ শারদাং শরণং যযৌ।।৯১।। এত স্মিঅন্তরে ধারঃ সুখখানি স্ততোহনুজঃ। আগ্নেয়ং শরমাদায় রক্তবীজানদাহয়ৎ।।৯২।। পুরা তু সুখকানিশ্চ হব্যৈদেবং চ পাবকম্। পঞ্চাব্দান্ পূজয়ামাস তদা তুষ্টস্বয়ং প্রভুঃ।।৯৩।। পাবকীয়ং শরং রম্যং শত্রুসংহারকারকম্। দদৌ তস্মৈ প্রসন্নাত্মা তেনাসাবভবজ্জয়ী।।৯৪।। বলখানিস্তু বলবানদৃষ্ট্বা শত্রুবিনাশনম্। পরাজিতং চ চামুন্ডং বদধ্বা গেহমুপাগতম্।।৯৫।। কৃত্বা নারীময়ং বেষং স ভীতো ব্ৰহ্মহত্যয়া। দোলামারোপ্য বলবান্ প্রেষয়ামাস শত্ৰবে।।৯৬।।

রক্তবীজের অঙ্গ থেকে যতবিন্দু রক্ত নির্গত হল ততগুলি পুরুষ উৎপন্ন হল, তারা রক্তবীজতুল্য পরাক্রমশালী। সেই মদমত্ত বীরগণ বলখানিকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলল। হে ভৃগু শ্ৰেষ্ঠ, তখন বলখানি শারদাদেবীর শরণে গেলেন।। ৯০–৯১।।

ইতিমধ্যে বীর সুখখানি আগ্নেয় অস্ত্র গ্রহণ করে সকল রক্ত বীজকে জ্বালিয়ে দিল। সুখখানি পূর্বে নানা দ্রব্য দ্বারা পাঁচবর্ষ পর্যন্ত পাবকদেবের অত্যন্ত সুন্দর একটি পাবকীয় শর প্রদান করেছিণে, যেটি শত্রুগণকে সংহার করবে। সেই অস্ত্রের দ্বারা সুখখানি বিজয়লাভ করেছিল।। ৯২-৯৪।।

বলবান্ বলখানি শত্রুকে বিনষ্ট হতে দেখে পরাজিত চামুন্ডাকে তার গৃহ থেকে গ্রহণ করে তাকে বন্ধন করে তাকে নারীময় বেশ ধারণ করিয়ে ব্রহ্ম হত্যার ভয়ে ভীত হয়ে একটি দোলাতে বসিয়ে শত্রুর কাছে পাঠিয়ে দিলেন।। ৯৫ -৯৬।।

হতশেষং পঞ্চলক্ষং সৈন্যং গত্বা চ দেহলীম্। বৃত্তান্তং কথয়ামাস যথা জাতো মহারণঃ।।৯৭।। নারীবেষং চ চামুন্ডংম স দৃষ্ট্বাপৃথিবীপতিঃ। ক্রোধাবিষ্টশ্চ বলবান্ মহীপতিমুবাচ হ।।৯৮।। কথং জয়ো মে ভবিতা সুখখানৌ চ জীবিতে। শ্রুত্বা মহীপতিঃ প্রাহচ্ছমনা কার্যমাকুরু।।৯৯।। ব্রাহ্মীমাতা তয়োয়া শুদ্ধা সৈব পতিব্রতা। দূতীভিঃ কারণং জ্ঞাত্বা পুর্নযুদ্ধং কুরুস্বভোঃ।।১০০।। ইতি শ্রুত্বা মহীরাজো দূতীস্তাশ্ছলকোবিদাঃ। আয় প্রেষয়ামাস বলখানিগৃহং প্ৰতি।।১০১।। ব্রাহ্মন্যস্তাস্তদা ভূত্বা বলখানি গৃহং যযুঃ। সসুতাং তাং ব্রশস্যাণ্ড পপ্ৰচ্ছুবিনয়ান্বিতাঃ।।১০২।। তব পুত্রৌ মহাবীরো দিষ্টয়া শ ক্ষয়ংকরৌ। তয়োমৃত্যুঃ কথং ভূয়াজীবতাং শরদাং শতম্।।১০৩।।

হতশেষ পঞ্চলক্ষ সেনা দেহলী নগরীতে গিয়ে মহারণের সকল বৃত্তান্ত বর্ণনা করল। চামুন্ডাকে নারীবেশে দেখে পৃথ্বীপতি ক্রোধাবিষ্ঠ হয়ে বলবান্ মহীপতিকে বললেন, সুখখানি জীবিত থাকলে আমাদের জয় কিভাবে সম্ভব। মহীপতি সেকথা শ্রবণ করে বললেন–ছলের দ্বারা কার্য সম্পন্ন করতে হবে। সেই দুইজনের মাতা ব্রাক্ষ্মী পরম শুদ্ধ পতিব্রতা। দূতীদের দ্বারা তাঁর কাছ থেকে পুত্রদের হত্যার কারণ জেনে পুনরায় যুদ্ধ করুন।। ৯৭-১০০।।

একথা শ্রবণ করে মহীরাজ সেই দূতীদের দ্বারা যারা ছলকার্যে মহাপ্রবীন ছিলেন তাঁদের ডেকে বলখানির গৃহে প্রেরণ করলেন তারা সেই সময় ব্রাক্ষ্মনীর রূপ ধারণ পূর্বক বলখানির ঘরে গেলেন। তারা সসুতা বলখানির মাতার প্রশংসা করে বিনয়ী হয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। আপনার দুই পুত্র মহাবীর এবং শত্রু ক্ষয়কারী। এতো খুব প্রসন্নতার কথা। একশত বৎসর জীবিত থাকার পর তাদের মৃত্যু কিভাবে হবে? ১০০ -১০৩।।

তদা ব্রাহ্মী বচঃ প্রাহ পাবকীয়ঃ শরং শুভঃ। সুখখানেজীবকরো বলখানেঃ পদাকঃ।।১০৪।। ইতি জ্ঞাত্বা তু তা দূত্যঃ প্রযযুদেহলীং প্রতি। কথয়িত্বা নৃপস্যাগ্রে ধনং প্রাপ্যং গৃহং যঃ।। ১০৫।। মহীরাজস্তু তচ্ছ্বত্বা মহাদেবমুপাসিতম্। পার্থিবেঃ পূজনং চক্রে সহস্রদিবসান্ মুদা।।।১০৬।।

সেকথা শ্রবণ করে সেই ব্রাহ্মী বললেন, পাবকীয়শর অত্যন্ত শুভ, সেই শর সুখখানির জীবন রক্ষাকারী এবং বলখানি পদাকশর।। ১০৪।।

এই প্রকারে তার সমস্ত বৃত্তান্ত জেনে সেই দূতীগণ দেহলীতে ফিরে এলেন। তাঁরা নৃপতির সমক্ষে সবকিছু বললেন, এবং প্রভূত ধন লাভ করে গৃহে ফিরে গেলেন।।১০৫।।

মহীরাজ একথা শ্রবণ করে উমাপতি মহাদেবের একসহস্র দিন পার্থিব পূজন করেছিলেন।। ১০৬।।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *