ওরা চলেছে দিঘির ধারে । ওই শোনা যায় বেণুবনছায় কঙ্কণঝংকারে । আমার চুকেছে দিবসের কাজ , শেষ হয়ে গেছে জল ভরা আজ , দাঁড়ায়ে রয়েছি দ্বারে । ওরা চলেছে দিঘির ধারে । আমি কোন্ ছলে যাব ঘাটে— শাখা - থরথর পাতা - মরমর ছায়া সুশীতল বাটে ? বেলা বেশি নাই , দিন হল শোধ— ছায়া বেড়ে যায় , পড়ে আসে রোদ— এ বেলা কেমনে কাটে । আমি কোন্ ছলে যাব ঘাটে । ওগো , কী আমি কহিব আর । ভাবিস নে কেহ ভয় করি আমি ভরা - কলসের ভার । যা হোক তা হোক এই ভালোবাসি— বহে নিয়ে যাই , ভরে নিয়ে আসি , কতদিন কতবার । ওগো , আমি কী কহিব আর । এ কি শুধু জল নিয়ে আসা । এই আনাগোনা কিসের লাগি যে কী কব , কী আছে ভাষা ! কত - না দিনের আঁধারে আলোতে বহিয়া এনেছি এই বাঁকা পথে কত কাঁদা কত হাসা । এ কি শুধু জল নিয়ে আসা । আমি ডরি নাই ঝড়জল , উড়েছে আকাশে উতলা বাতাসে উদ্দাম অঞ্চল । বেণুশাখা'পরে বারি ঝরঝরে , এ কূলে ও কূলে কালো ছায়া পড়ে , পথঘাট পিচ্ছল । আমি ডরি নাই ঝড়জল । আমি গিয়েছি আঁধার সাঁজে । শিহরি শিহরি উঠে পল্লব নির্জন বনমাঝে । বাতাস থমকে , জোনাকি চমকে ঝিল্লির সাথে ঝমকে ঝমকে চরণে ভূষণ বাজে । আমি গিয়েছি আঁধার সাঁজে । যবে বুকে ভরি উঠে ব্যথা , ঘরের ভিতরে না দেয় থাকিতে অকারণ আকুলতা । আপনার মনে একা পথে চলি , কাঁখের কলসী বলে ছলছলি জলভরা কলকথা— যবে বুকে ভরি উঠে ব্যথা । ওগো দিনে কতবার করে ঘর - বাহিরের মাঝখানে রহি ওই পথ ডাকে মোরে । কুসুমের বাস ধেয়ে ধেয়ে আসে , কপোতকূজন - করুণ আকাশে উদাসীন মেঘ ঘোরে— ওগো , দিনে কতবার করে । আমি বাহির হইব বলে যেন সারাদিন কে বসিয়া থাকে নীল আকাশের কোলে ! তাই কানাকানি পাতায় পাতায় , কালো লহরীর মাথায় মাথায় চঞ্চল আলো দোলে— আমি বাহির হইব বলে । আজ ভরা হয়ে গেছে বারি । আঙিনার দ্বারে চাহি পথপানে ঘর ছেড়ে যেতে নারি । দিনের আলোক ম্লান হয়ে আসে , বধূগণ ঘাটে যায় কলহাসে কক্ষে লইয়া ঝারি— মোর ভরা হয়ে গেছে বারি ।