গুরু-চৈতন্য বিজ্ঞান-বিচারী
তাঁর শেষ কথা : “তোমাদের চৈতন্য হোক।”
অন্য কথা নয় কেন? ধর্মে মতি, দ্বিজে ভক্তি? তোমরা জ্ঞানী হও, পণ্ডিত হও, পরোপকারী হও, সমাজসেবী হও—এইসব নয় কেন? শুধু ‘চৈতন্য হোক’! তাহলেই হবে? গুরুপদে ভক্তির কথা নেই কেন? কারণ, তোমার চৈতন্যই তোমার গুরু। বারুদ ভিজে থাকলে আগুন তো ধরবে না।
“জঁহা রাম তহাঁ কাম নহী,
জঁহা কাম তহাঁ নহী রাম
ছুঁহু মিলত নহী
রব রজনী নহী মিলত একঠাম।।
মানুষের দুটোই ধর্ম, ভোগ আর ত্যাগ। কাম আর রাম। বিপরীত, কিন্তু ধৰ্ম। রাত আর দিন—পৃথিবীরই দুটি অবস্থা। যাবে কোন্ দিকে! এই যাওয়াটা নির্ভর করছে চৈতন্যের ওপর। চৈতন্য হলো গুরু। বিচার হলো বিজ্ঞানী।
চৈতন্য বিজ্ঞানীকে জাগাবেন। বিজ্ঞানী জীবন দর্শন করে সিদ্ধান্তে আসবেন। ফিলজফি, পুঁথি-পাটা বা কিতাব-পড়া জ্ঞান নয়। আগুনে হাত ঠেকাব, পুড়ে যাবে। সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত হবে, আগুন পোড়ায়। ভোগে ছিলেন ‘ক’ বাবু, রোগে ধরল। অক্কা পেলেন। বাড়ি, গাড়ি, খাট, পালঙ্ক—সব পড়ে রইল, পড়ে রইল ব্যাঙ্কে গচ্ছিত যত টাকা। শেষ অবস্থায় আধ চোখে, ম্লান চেতনায় দেখছেন, লোভী উত্তরাধিকারীরা শকুনের মতো অপেক্ষা করে আছে। মরামাত্রই বিষয়ের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে খেয়োখেয়ি শুরু করবে। এই সত্যদর্শনটা আগে হলে জীবনটা অন্যরকম হতো। যার হলো না, তার হলো না; তবে এই উদাহরণে আমার তো চৈতন্য হতে পারে!
উপলব্ধিটা তাহলে কি হলো? সঙ্গে যাবে না কিছুই। মহাপুরুষের গল্প এইরকম—একজন মানুষ সারাজীবন ধরে একটু একটু করে অনেক টাকা সঞ্চয় করল। হঠাৎ তার মনে হলো, টাকার পিছনে অনেক দৌড়েছি এইবার আমি জীবনটা ভোগ করব। যেই না ভাবা সঙ্গে সঙ্গে যমদূত এসে হাজির! চল বাবা, তোমার সময় হয়ে গেছে। ‘টাইম ইজ আপ।’ লোকটি বললে, সে কি, আমার এত টাকা, এই সবে গুছিয়ে বসছি, আর আমাকে নিয়ে যাবে! যমদূত বললে, কথা বাড়িও না, চলে এস। লোকটি বললে, আচ্ছা! তোমাকে আমি এক লাখ টাকা দিচ্ছি, আমাকে তিনটে দিন সময় দাও।
যমদূত বললে, ওসব বাহানা করো না, চলে এস।
লোকটি বললে, টাকাটা মনে হয় কম হয়ে গেল, আচ্ছা তিন লাখ দিচ্ছি একদিন সময় দাও।
যমদূত বললে, ওসব আমাদের কাছে চলে না। চল চল।
লোকটি তখন আরো লোভ দেখালে, আচ্ছা বেশ, তোমাকে আমি এক কোটি দিচ্ছি আমাকে তিন মিনিট সময় দাও।
যমদূত এইবার লোকটিকে ক্যাঁক করে ধরে টানতে টানতে নিয়ে চলল। লোকটি যেতে যেতে বলছে, বুঝলাম, এক কোটি টাকায় পৃথিবীর তিন মিনিট সময়ও কেনা যায় না।
ঠাকুর বলছেন : “মৃত্যুকে সর্বদা মনে রাখা উচিত। মরবার পর কিছুই থাকবে না। এখানে কতকগুলি কর্ম করতে আসা। যেমন, পাড়াগাঁয়ে বাড়ি— কলকাতায় কর্ম করতে আসা। বড় মানুষের বাগানের সরকার বাগান যদি কেউ দেখতে আসে, তা বলে, ‘এ-বাগানটি আমাদের’, ‘এ-পুকুর আমাদের পুকুর। কিন্তু কোন দোষ দেখে বাবু যদি ছাড়িয়ে দেয়, তার আমের সিন্দুকটা লয়ে যাবার যোগ্যতা থাকে না; দরোয়ানকে দিয়ে সিন্দুকটা পাঠিয়ে দেয়।”
সব মহামানবের একই উক্তি; মৃত্যু-স্মরণ কর। রোজ সকালে ঘুম ভাঙার পরই যদি ভাবা যায়, আজই আমার জীবনের শেষদিন। যদি সত্যই ভাবা যায় তাহলে কেমন হয়! তাহলে প্রতিটি দিনই আসক্তিশূন্য হয়ে কাটানো—এসব আমার নয়, তোমার! “না ঘর মেরা, না ঘর তেরা, দুনিয়া সবসে বসেরা।” তখন আর দুই ভাই দড়ি ফেলে জায়গা ভাগ করব না, ‘এদিকটা আমার, ওদিকটা তোমার।’ জ্ঞান আর অজ্ঞানকে পৃথক করতে শিখব। গোলেমালে যে মাল আছে, সেই মাল বেরিয়ে আসবে। ‘আমি’ ও ‘আমার’–এই দুটি অজ্ঞান ‘আমার বাড়ি’, ‘আমার টাকা’, ‘আমার বিদ্যা’, ‘আমার এইসব ঐশ্বর্য’–এই যে ভাব এটি অজ্ঞান থেকে হয়। ‘হে ঈশ্বর তুমি কর্তা আর এসব তোমার জিনিস- বাড়ি, পরিবার, ছেলেপুলে, লোকজন, বন্ধুবান্ধব—এসব তোমার জিনিস।’ এ- ভাব জ্ঞান থেকে হয়। সেই জ্ঞান আসবে মৃত্যু-চিন্তা থেকে। চল্লিশ, পঞ্চাশ, ষাট, আচ্ছা নাহয় একশই হলো, তারপর! অন্য কোথা, অন্য কোনখানে, অন্য কোন নামে।
“ভবে আসা খেলতে পাশা, বড় আশা করেছিলাম।
আশার আশা ভাঙ্গা দশা, প্রথমে পড়ি পেলাম
প-বারো আঠার ষোল, যুগে যুগে এলাম ভাল,
(শেষে) কচে বারো পেয়ে মাগো, পঞ্জা ছক্কায় বদ্ধ হলাম!
ছ-দুই আট, ছ-চার দশ, কেউ নয় মা আমার বশ;
খেলাতে না পেলাম যশ, এবার বাজী ভোর হইল।”
“কুব্জা তোমায় কু বোঝায়। রাইপক্ষে বোঝায় এমন কেউ নাই।” সবাই বিষয়ের মাঞ্জা মারবে। কর্কশা দড়ি।
তাহলে উপায়? এই প্রশ্ন হলো মুমুক্ষুর। আর এই প্রশ্নের প্রশ্নকারী হলো চৈতন্য।
ঠাকুরের সঙ্গে বঙ্কিমচন্দ্রের আলাপ হচ্ছে। ঠাকুর প্রশ্ন করলেন :
“আচ্ছা, আপনি তো খুব পণ্ডিত, আর কত বই লিখেছ; আপনি কি বল, মানুষের কর্তব্য কি? কি সঙ্গে যাবে? পরকাল তো আছে?”
বঙ্কিম বললেন : “পরকাল! সে আবার কি?”
তখন ঠাকুর বলছেন : “হ্যাঁ, জ্ঞানের পর আর অন্যলোকে যেতে হয় না, পুনর্জন্ম হয় না। কিন্তু যতক্ষণ না জ্ঞান হয়, ঈশ্বরলাভ হয়, ততক্ষণ সংসারে ফিরে ফিরে আসতে হয়, কোনমতে নিস্তার নেই। ততক্ষণ পরকালও আছে। জ্ঞানলাভ হলে, ঈশ্বরদর্শন হলে মুক্তি হয়ে যায়—আর আসতে হয় না। সিধোনো-ধান পুঁতলে আর গাছ হয় না—জ্ঞানাগ্নিতে সিদ্ধ যদি কেহ হয় তাকে নিয়ে আর সৃষ্টির খেলা হয় না। সে সংসার করতে পারে না, তার তো কামিনী- কাঞ্চনে আসক্তি নেই।”
উপায়ের কথা ঠাকুর বললেন, প্রথম হলো জ্ঞানাগ্নিতে সিদ্ধ হতে হবে। দ্বিতীয়—যদি ওদিক থেকে এদিকে আসা যায় যথা, জ্ঞান না হলে আসক্তি যাবে না। প্রবল আসক্তি কি-সে? কাম-কাঞ্চনে। আচ্ছা, যদি কাম-কাঞ্চন ত্যাগ করা যায়, তাহলে তো আসক্তি ঘুচে যেতে পারে!
জ্ঞান বললেই তো জ্ঞান ছুটে আসবে না। ঠাকুর যে-জ্ঞানের কথা বলছেন, তা কেতাবে নেই। তর্কে নেই, বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। তাহলে উপায়? ঠাকুর তো সাঙ্ঘাতিক কথা বলে গেছেন, বঙ্কিমচন্দ্রকেই বলছেন, বেশ তিরস্কারের ভাষায় : “শুধু পাণ্ডিত্য হলে কি হবে, যদি ঈশ্বরচিন্তা না থাকে? যদি বিবেক- বৈরাগ্য না থাকে? পাণ্ডিত্য কি হবে? যদি কামিনী-কাঞ্চনে মন থাকে?
“চিল-শকুনি খুব উঁচুতে উড়ে, কিন্তু ভাগাড়ের দিকে নজর থাকে! পণ্ডিত অনেক বই-শাস্ত্র পড়েছে, শোলোক ঝাড়তে পারে, কি বই লিখেছে—কিন্তু মেয়েমানুষে আসক্ত, টাকা মান সারবস্তু মনে করেছে; সে আবার পণ্ডিত কি? ঈশ্বরে মন না থাকলে পণ্ডিত কি?”
“পাষাণঃ পরিসিঞ্চিতোঽমৃতরসৈর্নৈবাঙ্কুরঃ সম্ভবেৎ
লাঙ্গুলং সরমাপতের্বিবৃণতঃ স্যাদস্য নৈবার্জ্জবম্।
হস্তান্নয়তা বুধাঃ কথমহো ধাৰ্য্যং বিধোর্মণ্ডলং
সর্বসাধনমস্তু গৌরকরুণাভাবেন ভাবোৎসবঃ।।” (শ্রীচৈতন্যচন্দ্ৰামৃত)
–হে পণ্ডিতগণ! প্রস্তরখণ্ডের কথা ভাবুন। অমৃতরসে চুবিয়ে রাখলেও অঙ্কুরোদ্গমের সম্ভাবনা নেই। কুকুরের লেজ যতক্ষণ সোজা করে টেনে রাখা যায় ততক্ষণই সোজা, ছেড়ে দিলেই বেঁকে যাবে। হাত আকাশের দিকে তুললেই চন্দ্রমণ্ডল স্পর্শ করা যায় না। সেইরকম সর্বসাধনসম্পন্ন হলেও শ্রীগৌরাঙ্গের কৃপা ছাড়া প্রেম-সুখাদি সম্যক অনুভব করা যায় না।
কৃপা চাই। শ্রীরামকৃষ্ণের কৃপা চাই। তারপরেই নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের ‘চেন রি-অ্যাকশন’। কৃপা থেকে ভক্তি, ভক্তি থেকে বিশ্বাস, বিশ্বাস থেকে প্রেম, প্রেম থেকে জ্ঞান। দেউড়ির পর দেউড়ি, অবশেষে দর্শন।
কৃপা কেন করবেন? কে কৃপার যোগ্য? না, কৃপা যে চাইবে। যে বা যারা ভাবে—”আমরা কেমন স্যায়না কেমন সুখভোগ করছি; টাকা, মান ইন্দ্রিয়সুখ।” তাদের কেন কৃপা করবেন! ঠাকুর একেবারে চাঁচাছোলা ভাষায় বলছেন : “কাকও মনে করে, আমি বড় স্যায়না, কিন্তু সকালবেলা উঠেই পরের গু খেয়ে মরে!”
ঠাকুর বলছেন, কৃপা সেই পায় যে প্রার্থনা করে। “যারা কিন্তু ঈশ্বরচিন্তা করে, বিষয়ে আসক্তি কামিনী-কাঞ্চনে ভালবাসা চলে যাবার জন্য রাতদিন প্রার্থনা করে,
যাদের বিষয়রস তেঁতো লাগে, হরিপাদপদ্মের সুধা বৈ আর কিছু ভাল লাগে না, তাদের স্বভাব যেমন হাঁসের স্বভাব।” আবার বলছেন : “পশুভাব না গেলে ঈশ্বরের আনন্দ আস্বাদন করতে পারে না। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে হয় যাতে পশুভাব যায়। ব্যাকুল হয়ে প্রার্থনা। তিনি অন্তর্যামী, শুনবেনই শুনবেন। যদি আন্তরিক হয়।”
যীশু বলছেন : “Blessed are the pure in spirit, for they shall see God.” পবিত্রাত্মারাই ধন্য, কারণ তারা ঈশ্বরের দর্শন পাবে। তাঁর কাছে রাতদিন ভক্তি প্রার্থনা কর। সে যে বড় দুর্লভ বস্তু। একটি গান গেয়ে ঠাকুর এই দুর্লভ ভক্তির কথা বোঝাতেন :
“আমি মুক্তি দিতে কাতর নই।
শুদ্ধাভক্তি দিতে কাতর হই।
আমার ভক্তি যেবা পায়, তারে কেবা পায়,
সে যে সেবা পায়, হয়ে ত্রিলোকজয়ী।।
শুন চন্দ্রাবলী ভক্তির কথা কই,
মুক্তি মিলে কভু ভক্তি মিলে কই।
ভক্তির কারণে পাতাল ভবনে,
বলির দ্বারে আমি দ্বারী হয়ে রই।।
শুদ্ধাভক্তি এক আছে বৃন্দাবনে,
গোপ-গোপী বিনে অন্যে নাহি জানে।
ভক্তির কারণে নন্দের ভবনে,
পিতাজ্ঞানে নন্দের বাধা মাথায় বই।।”
শর্ত খুব সহজ—কী সন্ন্যাসীর, কী গৃহীর। চৈতন্যকে ভক্তি! কারণ, জীবের গুরু চৈতন্য। চৈতন্য-গুরু কী বলছেন :
“এমনি মহামায়ার মায়া রেখেছে কি কুহক করে।
ব্ৰহ্মা বিষ্ণু অচৈতন্য জীবে কি জানিতে পারে।।
বিল করে ঘুনি পাতে মীন প্রবেশ করে তাতে।
গতায়াতের পথ আছে তবু মীন পালাতে নারে।।
গুটিপোকায় গুটি করে পালালেও পালাতে পারে।
মহামায়ার বদ্ধ গুটি, আপনার নালে আপনি মরে।।”
মহামায়ার খেলা, জীবকে কাছে আসতে দেবেন না। ব্যবধান অতি সামান্য। পাশেই আছেন। যেন পাতলা একটা ‘পার্চমেন্ট’–’এ থিন পার্চমেন্ট’, এপাশে আমি ওপাশে তিনি। চৈতন্যের সামান্য অঙ্গুলিস্পর্শে মোহাবরণ ছিঁড়ে যেতে পারে। যায় না কেন? চাই না বলে। কামনা-বাসনার নালে হড়হড়ে। মজাটা কেমন?
“Satan is like an urchin who teases his friends by asking them to guess what is in his closed hand. Each person guesses that the hand conceals whatever is particularly desirable to himself. But when the hand is opened, it is found to contain nothing.”
-বল তো, মুঠোয় কি আছে, হীরে! আমার মনের বাসনাই বস্তু রূপে হাতের মুঠোয় অনুমান। এই দেখ! খালি। কিচ্ছু নেই। বদমাইস ছেলে ধোঁকা দিচ্ছে। লোভীকে নিয়ে মজা করছে। উপায়! দেহধারী জীব মায়ার জগৎ ছেড়ে যাবে কী করে! চিৎকার, চেঁচামেচি, লম্ফঝম্ফ। হবে না। যতই লাফাবে, সেই বাঘের অবস্থা, ততই আঠা-মাখানো পাতা জড়িয়ে যাবে সর্বাঙ্গে। ঠাকুর! উপায় বল না! মায়ার সহায়েই মায়ামুক্তি। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা। মস্ত বড় একটা লোভ দিয়ে ছোট লোভকে জয় করা। বিশাল সাম্রাজ্য যদি পাওয়া যায়, ছোট্ট একখণ্ড জায়গিরে কিবা প্রয়োজন! সাধু বলেছিলেন, এগিয়ে যাও। “মায়া দুই প্রকার—বিদ্যা এবং অবিদ্যা। তার মধ্যে বিদ্যা মায়া দুই প্রকার—বিবেক এবং বৈরাগ্য। এই বিদ্যা মায়া আশ্রয় করে জীব ভগবানের শরণাপন্ন হয়। আর অবিদ্যা মায়া ছয় প্রকার—কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ এবং মাৎসর্য। অবিদ্যা মায়া ‘আমি’ ও ‘আমার’-জ্ঞানে মনুষ্যদিগকে বদ্ধ করে রাখে। কিন্তু বিদ্যা মায়ার প্রকাশে জীবের অবিদ্যা একেবারে নাশ হয়ে যায়।”
এই ‘আমি’টিকে ছাড়া কিছুই হবে না। কোন্ ‘আমি’? ‘পাকা আমি’। ‘আমি’ পাকবে কিসে! জ্ঞানাগ্নিতে। জ্ঞান কি? ঈশ্বরকে জানার নাম জ্ঞান, ঈশ্বরকে না জানার নামই অজ্ঞান। “অহঙ্কারবিমূঢ়াত্মা কর্তাহমিতি মন্যতে।” “আমি মলে ঘুচিবে জঞ্জাল।” কথা আছে, এটা কলি, অন্নগত প্ৰাণ। আমি দেহ নই, মন নই, চতুর্বিংশতি তত্ত্ব নই সুখ-দুঃখের অতীত, আমার আবার রোগ, শোক, জরা, মৃত্যু কই—এইসব কপচালে কিছুই হবে না। এ হলো বুকনি। দেহবুদ্ধি সহজে যাওয়ার নয়। গলা টিপে ধরলেই আঁক করে উঠবে।
তাহলে! তোমার চৈতন্য হোক; কিন্তু কেমন করে হবে ঠাকুর!
“যদি সদগুরু হয়, জীবের অহঙ্কার তিন ডাকে ঘুচে।”
“যদি গুরুর কৃপায় একবার অহংবুদ্ধি যায়, তাহলে ঈশ্বরদর্শন হয়।”
“সংসারদুঃখজলধৌ পতিতস্য
কামক্রোধাদি-নক্রমকরৈঃ কবলীকৃতস্য
দুর্বাসনা-নিগড়িতস্য নিরাশ্রয়স্য
শ্রীরামকৃষ্ণ মম দেহি পদাবলম্বম্।।”