খবরের কাগজ

খবরের কাগজ

বলা হয় ট্রেন দুর্ঘটনার তদন্ত হবে। হয়। বলা হয়, বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত হবে। হয়। হয়েও শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাতে লাভ হয় না। শুধু জানা যায়, হয় যান্ত্রিক গোলযোগে নয়তো কারো অসাবধানতায় দুর্ঘটনা হয়েছিল। তাতে একটা মরা মানুষও বাঁচে না, একটা কাটা ঠ্যাংও জোড়া লাগে না। তবে মৃতের আত্মীয়-স্বজনরা কেউ কেউ হয়তো ফাঁকতালে ক্ষতিপূরণবাবদ কিছু টাকা পেয়ে যায়।

যেমন পেয়েছিল গৌরী।

বন্যা কেন হল? ঝড় কেন এল? ক্যানসারের ওষুধ কবে বেরোবে? মহামারি কেন? আগুন কি করে লাগল? ছাদ কেন ধসে পড়ল? ভূমিকম্প কেন ঘটছে? খুন হল কেন? এই সব ভাবতে ভাবতে প্রত্যেকদিন শ্যামাচরণ একটু একটু বুড়ো হয়ে যাচ্ছে। সকাল থেকে খবরের কাগজ তার বগলে। যখনই ফঁক পায় তখনই খুলে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে।

নদীর ধারে বটতলায় সুশীতল গন্ধবণিক দোকান দিয়েছে। সেখানে গিয়ে বসলে নতুন ছাঁচবেড়ার গন্ধ নাকে আসে। মিষ্টি গন্ধটি। নদীর পাড়ে গায়ে গায়ে বাঁশ পুঁতে মাটি ফেলে কাঁচা বাঁধ দেওয়া হয়েছে। কাঠের পাটাতনের ঘাটে নৌকো এসে লাগে। বড় নৌকো, ছোটো নৌকো। মাল্লারা নৌকো ঘাটে বেঁধে উঠে আসে। মানুষজন মাল খালাস করে। আবার বোঝাইও হয়। ছোটো নৌকোয় দূর গ্রামগঞ্জের যাত্রীরা গিয়ে ওঠে। কারো মাথায় খোলা ছাতা। নদীর জলের আঁশটে গন্ধ আসে। হু-হু বাতাসও।

সুশীতলের দোকানে বসে খবরের কাগজটা ভাল করে পড়া যায় না। বাতাসের চোটে বড় বড় পাতা ওলটপালট খায়। তা ছাড়া আছে কিছু বেহায়া লোক, খবরের কাগজ দেখলেই যারা হাত বাড়িয়ে বলে কাগজটা একটু দেবেন, দেখব?

খবরের কাগজে শ্যামাচরণ যে কী খোঁজে তা সে নিজেও ভাল করে জানে না। কিন্তু প্রতিদিন আগাপস্তলা কাগজটা সে যখন খুঁটিয়ে পড়ে তখন তার মনটা যেন কিছু একটা খোঁজে।

.

গন্ধবণিকের দোকানে সাত গাঁয়ের লোক আসে। তাদের কেউ বা শ্যামাচরণের চেনা, কেউ আধচেনা, কেউ একেবারেই অচেনা। গঞ্জের বাজারে সকলের ট্যাকের টিকি বাঁধা। আলু সুপুরি ধান পাট যার যা আছে সব নৌকো বোঝাই করে নিয়ে আসে। ঘাটে খুব জটলা হয়। তারপর মানুষজন একটু দম নিতে ঘাটের দোকানে দোকানে গিয়ে বসে, চা খায়, গল্পসল্প করে, কাজকারবারের খবর আদান-প্রদান হয়।

ঘাটের ধারে বসে থাকতে শ্যামাচরণের বেশ লাগে। এই বসে থাকতে থাকতেই কত লোকের সঙ্গে চেনা-জানা হয়ে যায়, কত নতুন নতুন খবর শোনে, অচেনা জায়গার বিবরণ পেয়ে যায়, নতুন সব চরিত্রকে জানা হয়। গন্ধবণিকের পো খাতিরও করে খুব। শ্যামাচরণ যে একসময়ে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ছিল তা বেশ মনে রেখেছে সুশীতল।

তবে সে-সব কথা শ্যামাচরণ নিজেই ভুলে যায়। তার জীবনটা হল বসতি উঠে যাওয়া গায়ের মতো। সেখানে এককালে অনেক লোক গমগম করে বাস করত, এখন সব বাস-বসত তুলে নিয়ে গেছে। ফঁকা।

গৌরী হল শ্যামাচরণের বড় মেয়ে। প্রথম পক্ষের। আরো দুটো ছেলেমেয়ে আছে তার। তারা দ্বিতীয় পক্ষের। রেবন্ত হল তার সস্থান ও একমাত্র ছেলে, ফরাসডাঙ্গা কলেজের লেকচারার। ছেলে সেখানে বৌ নিয়ে থাকে, কালেভদ্রে আসে, মাসান্তে পঁচাত্তরটা টাকা পাঠিয়ে খালাস। ছোটো মেয়ে পার্বতী তার স্বামীর সঙ্গে নবাবগঞ্জে থাকে। চিঠিটাও লেখে না।

বড় মেয়ে গৌরীরই যা একটু টান ছিল বাপের ওপর বরাবর। সে শ্বশুরবাড়ি থেকে যখন তখন চলে আসত বাপকে দেখতে। বরকে লুকিয়ে টাকা পাঠাত বাবাকে। তিন সন্তানের মধ্যে গৌরীর ওপরে শ্যামাচরণের টান ছিল সবচেয়ে বেশি।

গৌরীর বর সোমনাথ ছিল পুলিশের এ. এস. আই.। ছেলে হিসেবে ভালই। অতি সুপুরুষ, সাহসী, সৎ। প্রাণে দয়ামায়া ছিল, ভক্তি ছিল। খড়গপুর লাইনের এক রাত্রে গাড়ি লাইন ছেড়ে মাঠে নেমে গেল। ছখানা বগি উল্টে বিশজন মানুষ দলা পাকিয়ে একশা। সেই দলা পাকানো মানুষের মধ্যে একজন ছিল সোমনাথ।

কিন্তু সোমনাথই কি? শ্যামাচরণের এই সন্দেহটা আজও যায়নি। সে ট্রেনে সোমনাথ ছিল সন্দেহ নেই। কিন্তু তার লাশ শেষপর্যন্ত কেউ শনাক্ত করতে পারেনি। একটা ভাঙাচোরা থ্যাঁতলানো লাশ তাদের হাতে সকারের জন্য তুলে দেওয়া হয়েছিল বটে কিন্তু সেই লাশটার নাকের বাঁ পাশে কোনো আঁচিল ছিল না। অথচ সোমনাথ হলে আঁচিলটা থাকার কথা।

গৌরীকে কথাটা ভেঙে কোনোদিনই বলেনি শ্যামাচরণ। বলে দিলে গৌরী হয়তো খুব আশায় আবার বুক বাঁধবে। আসলে সে লাশটা না হোক, সেই দুর্ঘটনায় দলা পাকানো অন্য লাশগুলোর মধ্যে একটা

একটা সোমনাথের হবেই। কারণ, বেঁচে থাকলে সে নিশ্চয়ই ফিরে আসত এতদিনে। মরেই গেছে, তাই আর আঁচিলটার কথা শ্যামাচরণ তোলেনি।

গৌরী কিছু টাকা পেয়ে গেল। থোক কয়েক হাজার টাকা। সেই টাকা পেয়ে সোজা বাপের বাড়িতে উঠল এসে। সেই বছরই শ্যামাচরণের চাকরির এক্সটেনশন শেষ হয়ে গেল। নদীর ধারে এই বড় গঞ্জে চাকরির শেষ পাঁচ-ছ বছর কেটেছে। তাই এখানেই ছোটো মতো একটা বাড়ি সস্তায় পেয়ে কিনে ফেলেছিল সে। শেষ জীবনটা নিঝঞ্ঝাটে কাটাবে ইচ্ছে ছিল। কিন্তু ঠিক শ্যামাচরণের অবসরের জীবন শুরুর মুখে পাহাড় প্রমাণ ঝাট বুকে করে গৌরী এল।

শ্যামাচরণের স্ত্রী গৌরীকে খুব ভাল চোখে দেখে না। দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে গৌরী বাপের ঘাড়ে ভর করেছে দেখে শ্যামাচরণের স্ত্রী ক্ষমা বড় মনমরা হয়ে গেল। সেই থেকে সংসারে শান্তি নেই। সজ্ঞাকে ভয় খাওয়ার মেয়ে তো আর গৌরী নয়। সে পাঁচ কথা শোনাতে জানে। ক্ষমারও গলায় তেজ আছে।

তাই শ্যামাচরণ শোক ভুলে এখন বাড়ির বাইরেই থাকে বেশি। বাড়িতে যেটুকু সময় থাকে নাতি-নাতনি নিয়ে কেটে যায়। আর জীবনের বড় সময়টা কাটে কী যেন একটা খুঁজে।

আজকাল অশান্তির ভরা তার পরিপূর্ণ হয়েছে। গৌরীর বয়স বেশি নয়। পঁয়ত্রিশ-ছত্রিশ বড় জোর। চেহারাটা এখনো ঢলঢলে। এক নজরে তেইশ-চব্বিশের বেশি মনে হয় না। একে বয়সটা খুব নিরাপদ নয়, তার ওপরে সম্মায়ের সঙ্গে ঝগড়া। দুইয়ে মিলিয়ে মেয়েটার মধ্যে একটা খারাপ রোগ চেপেছে। রাজ্যের ছেলে-ছোকরাকে টলায়। তাদের মধ্যে একজন আছে কাদাপাড়ার ভূষির পাইকার বিনয় হালদারের মেজ ছেলে। ডান হাতে ঘড়ি বেঁধে মোটরবাইক হাঁকিয়ে যখন তখন আসে, গৌরীর সঙ্গে হি হি হো হো আড্ডা মারে, ক্যারিয়ারে চাপিয়ে নিয়ে যায় এধার ওধার। গঞ্জে ঢিঢ়ি।

শ্যামাচরণ আজকাল নিজের সঙ্গেই কথা বলে বেশি, যখন কথা বলার আর লোক পায় না। বুড়ো মানুষের কথা শোনবার জন্য কে-ই বা কাজ কারবার ফেলে বসে থাকবে?

গঞ্জের ঘাটটা সেদিক দিয়ে বড় ভাল। নদীতে স্রোত আছে, জীবনটাও এখানে বেশ বয়ে যায়। কিছু গড়ায় না, থেমে থাকে।

গোবিন্দনগর থেকে বেগুনের চাষী মফিজুল মাল গস্ত করতে এসেছে। চা খেতে খেতে বলল–এবার একদম জল হল না। পোকায় পোকায় সাড়ে সর্বনাশ।

সাড়ে সর্বনাশ কথাটা মফিজুলের নিজের। সর্বনাশের ওপর আরো কিছু বোঝায়।

সে জলের জন্য নয়। তুমিও যেমন, বাসন্তীর মাস্টারমশাই হরিপদ বলে–এ হল কেমিক্যাল সারের গুণ। যত সার তত পোকার উৎপাত। আবার পোকা মারতে ওষুধ কেনো। এসব হচ্ছে বড় ব্যবসাদারদের কৌশল বুঝলে! সার দিয়ে পোকা জন্মাচ্ছে, আর সেই পোকা মারতে বিষও কেনা করাচ্ছে। দুমুখো লাভ।

মফিজুল শ্যামাচরণের দিকে চেয়ে বলে-হাকিম সাহেব, কি বলেন?

শ্যামাচরণ কী আর বলবে? জগৎ-সংসারের খবর এখন আর সে তেমন রাখে না। যে যা বলে তাই হক কথা বলে মনে হয়। এমন কি আজকাল ভূতের গল্প শুনে ‘হু’ দেয়, মনটা ওই একরকম ধারা হয়ে গেছে। সেই লাশটার মুখে আঁচিল ছিল না–এ কথাটা আজকাল বড় মনে পড়ে।

শ্যামাচরণ বসে চাষী সঙ্গীদের কথা শোনে, দু’চারটে কথা নিজেও বলে। বাদবাকি সময় খবরের কাগজ দেখে। তার বড় মনে হয়, কগজে কী একটা খবর যেন বেরোবার কথা। মনে মনে সে কতকাল ধরে সে খবরটার জন্য অপেক্ষা করছে। খবরটা বেরোচ্ছে না।

গন্ধবণিকের দোকান থেকে ভরদুপুরে ফিরছিল শ্যামাচরণ। চৌপথীতে কদমতলায় একপাল কেষ্ট দাঁড়িয়ে ফষ্টিনষ্টি করছে। তারা শ্যামাচরণকে দেখে গলাখাকারি দেয়। একটা বদমাশ ছেলে আওয়াজ দিল–গঙ্গারামকে পাত্র পেলে?

বিনয় হালদারের ছেলের নাম গঙ্গাপ্রসাদ। শ্যামাচরণ মাথাটা নামিয়ে জায়গাটা পার হয়ে যায়।

বাজারের মুখে বুড়ো নীলমণি দাসের সঙ্গে দেখা। নীলমণি লোকটা খুব আদর্শবাদী, স্বদেশী করত, একবার এম.এল.এ.-ও হয়েছিল, শ্যামাচরণ হাকিম থাকবার সময় থেকে ভাব।

নীলমণি দাঁড়িয়ে পড়ে বলল-শ্যামা যে! কোন দিকে?

–বাড়িই যাই।

–সে যাবে। বাড়ি পালাবে না, কথা আছে।

শ্যামাচরণ কথা শুনতে উৎসাহ পায় না আজকাল। ভাল কথা তো কেউ বলে না। তাই নিরাসক্ত গলায় বলে–কিসের কথা?

নীলমণি গলা নামিয়ে বলে–আজও ওদের দেখলাম। ভটভটিয়ায় জোড়া বেঁধে কুঠিঘাটের দিকে যাচ্ছে। এই একটু আগে। ওদের যে কারো পরোয়া নেই দেখায়।

ওরা বলতে কারা তা শ্যামাচরণ জানে। তাই উদাসভাবে নীল আকাশের দিকে চেয়ে বলে–তা তো দেখছই। আমার আর কী করার আছে বলো? চাও তো বলো, গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়ি একদিন।

–আরে রাম রাম! তুমি ঝুলবে কেন? কিন্তু বিহিতের কথা ভেবেছো কিছু?

–আমার মাথায় আজকাল কিছু আসে না।

–আমি বিয়ের কথাও ভেবে দেখেছি বুঝলে? কিন্তু তোমার মেয়ে তো বয়সেও ছোঁড়াটার চেয়ে বড়। তাছাড়া হালদারমশাই তো ক্ষেপে আগুন হয়ে আছেই।

শ্যামাচরণ শ্বাস ফেলে বলে–সবই অদৃষ্ট। অকালে জামাইটা যে কেন–

বলেই শ্যামাচরণ ফের চমকে ওঠে। মনে পড়ে, লাশের মুখে সেই আঁচিলটা ছিল না। কথাটা আজও বলা হয়নি গৌরীকে। না বলাটা ঠিক হচ্ছে না।

কবে মরেটরে যাবে শ্যামাচরণ, একটা সত্য কথা তার সঙ্গেই হাপিস হয়ে যাবে তাহলে।

নীলমণি কথা বলতে বলতে খানিক এগিয়ে দিল। সাবধানে রেল লাইন পার হয়ে শ্যামাচরণ বাড়িমুখো হাঁটতে থাকে। বগলে ভাজকরা খবরের কাগজটা, বেশ কী একটা বলি বলি করে। কিন্তু কোনোদিনই বলে না, দুপুরে খাওয়ার পর আজ আবার খবরের কাগজটা তন্ন তন্ন করে খুঁজবে শ্যামাচরণ। খবরটা থাকার কথা।

বাড়ি ফিরে স্নান খাওয়া সারতে বেলা চলে গেল। মেয়েটা এখন বাড়ি ফেরেনি। নাতি-নাতনি দুটো স্কুল থেকে আসবে এখন। বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করে শ্যামাচরণ। বৌ ক্ষমা এঁটোকাটা সেরে এসে বিছানার একপাশে বসে বলে–আর তো মুখ দেখানো যাচ্ছে না।

ক্ষমার বয়স হয়েছে, সাধ-আহ্লাদ বড় একটা করেনি জীবনে। সংসারে জান বেটে দিচ্ছে বিয়ের পর থেকে। আজকাল শ্যামাচরণের বড় মায়া হয়।

ঘড়ি দেখে শ্যামাচরণ উঠে বসে বলে–হরিদ্বার যাবে?

–যাহোক কোথাও চলে যাই। তোমার আদরের মেয়ে সুখে থাক।

–কে দেখবে ওকে?

–আহা! দেখার ভাবনা! কাড়ি কাড়ি টাকা আছে ওর। জামাই মরে গিয়েও তো টাকা হাতে এসেছে।

–তা বটে। বলেই ফের সেই লাশের ভাঙাচোরা বিকৃত মুখ মনে পড়ে। আঁচিলটা ছিল না সেই মুখে। তবে কি?

অনেক রাতে গৌরী পাশ ফিরতে গিয়ে জেগে ওঠে। কে যেন চাপাস্বরে ডাকল।

–কে?

শ্যামাচরণ জানলার বাইরে জ্যোৎস্নায় দাঁড়িয়ে। চাপা গলায় বলল আমি তোর বাবা। শোন।

–বাবা! অবাক হয়ে বিছানা ছেড়ে গৌরী উঠে আসে, ওমা, তুমি বাইরে কেন? কী হয়েছে?

শ্যামাচরণের মুখচোখ জ্যোৎস্নায় অন্যরকম দেখায়। চোখের বসা কোল বাটির মতো, তাতে টুপটুপে ভরা অন্ধকার। চোখের তারা থেকে জ্যোৎস্নার প্রতিবিম্ব ঝিকমিক করে।

শ্যামাচরণ বলে–তার মুখে সেই আঁচিলটা ছিল না।

–কে? কার কথা বলছো?

শ্যামাচরণ বলে, বহুকাল ধরে চেপে রাখা গোপন কথাটা বুক থেকে বেরিয়ে যায়।

গৌরী জানলার শিকটা চেপে ধরে। তারপর আস্তে আস্তে পাথর হয়ে যায়।

পরদিন শ্যামাচরণ আবার গন্ধবণিকের দোকানে গিয়ে বসে। বিশাল নদীর ওপর ফুরফুর করে নীল আকাশ। নৌকা আসে, নৌকা যায়। ব্যাপারীদের হট্টরোল ওঠে চারধারে।

শ্যামাচরণ খবরের কাগজ খুলে তন্ন তন্ন করে খবরটা খোজো পায় না। ব্যাপারীরা এসে গল্প রাঙিয়ে তোলে। হাওয়া দেয়। চায়ের গন্ধের সঙ্গে নদীর আঁশটে গন্ধ গুলিয়ে ওঠে।

আজ সারাদিন গৌরী বেরোয়নি। কারো সঙ্গে দেখা করে নি। কথা বলেনি। সারাদিন শুধু ঘরে বসে কেঁদেছে।

দুপুরে বাড়ি ফিরে শ্যামাচরণ একই খবর পেল। গৌরী নিজের ঘরে শুয়ে কাঁদছে।

শ্যামাচরণ কাউকে কিছু বলল না। ক্ষমা প্রশ্ন করে বসে হাঁপিয়ে যায়।

খেয়ে উঠে শ্যামাচরণ খবরের কাগজটা গৌরীর ঘরের জানালা গলিয়ে ভিতরে ফেলে দিয়ে চাপা গলায় বলে–সব খবর তো কাগজেই থাকে। রোজ দেখিস তো।

গৌরী প্রথমে কথা বলে না। কিন্তু অনেকক্ষণ বাদে উঠে চোখ মুছে খবরের কাগজটা পড়তে থাকে। কেন পড়ে তা বুঝতে পারে না। জগৎটা সম্পর্কে আবার তার ভীষণ আগ্রহ জেগেছে।

শ্যামাচরণ বিকেলে ঘুম থেকে উঠে ক্ষমাকে বলে-কাল থেকে একটা ইংরিজি খবরের কাগজও দিতে বোলো তো কাগজের ছেলেটাকে। কত খবর থাকে। একটা কাগজে সব পাওয়া যায় না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *