।। কৃষ্ণাংশ কে পাস রাজাত্তং কা আগমন।।
দ্বাদশাব্দে হি কৃষ্ণাংশে যথাজাতং তথা শৃণু। ইষশুলক্লদশম্যাং চ রাজাং জাতঃ সমাগমঃ।।১।। কান্যকুব্জে মহারাম্যে নানাভূপাঃ সমাযযুঃ। শ্রুত্বা পরাজয়ং রাজ্ঞো মহীরাজস্য লক্ষণঃ।।২।। কৃষ্ণাংশদর্শনে বাঞ্ছা তস্য চাসীত্তদা মুনে। পিতৃব্যং ভূপতিং প্রাহ দ্রষ্টুং যাস্যামি তংশুভম্।।৩।। জিতো যেন মহীরাজঃ সর্বলোকপ্রপূজিতঃ। ইতি শ্রুত্বা বচস্তস্য জয়চন্দ্রো মহীপতিঃ। ভ্রাতৃজং প্রণতং প্রাহ শৃণু শুক্লযশস্কর।।৪।। রাজরাজপদং তে হি কথং সংহতুমিচ্ছসি। ইত্যুক্ত্বা জয়চন্দ্ৰস্তু তদাজ্ঞাং নৈব দত্তবান্।।৫।। রাজানস্তে চ সহিতাঃ স্বসৈন্যৈঃ পরিবারিতাঃ। কৃষ্ণাংশং দ্রষ্টুমিচ্ছত্তঃ সংযযুশ্চ মহীপতিম্।।৬।। শিরীষাখ্যপুরস্থং চ জ্ঞাত্বা কৃষ্ণাংশমুত্তমম্। মহীপতিং পুরস্কৃত্য সমাজনৃপাস্তদা।।৭।। দদৃশুস্তং মহাত্মানং পুন্ডরীবনিভাননম্। প্রসন্নবদনাঃ সর্বে প্রশশংসুঃ সমন্ততঃ।।৮।।
।। কৃষ্ণাংশের কাছে রাজগণের আগমন।।
এই অধ্যায়ে কৃষ্ণাংশের সমীপে রাজমণ্ডলের আগমন বৃত্তান্ত বর্ণিত হয়েছে।
শ্রীসূতজী বললেন, দ্বাদশ বৎসর আয়ুষ্কালের পর কৃষ্ণাংশের কি হয়েছিল তা শ্রবণ করো। আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের দশমী তিথি রাজগণের সমাগম হয়েছিল।।১।।
মহান রমণীয় কান্যকুব্জ দেশে অনেক রাজা এসেছিল। লক্ষ্মণ মহারাজ রাজার পরাজয় শুনেছিলেন এবং তারপর থেকে তার কৃষ্ণাংশ দর্শন করার ইচ্ছা হয়েছিল। হে মুনে, তিনি নিজ পিতৃব্য ভূপতিকে বললেন, আমি সেই শুভ দর্শন করতে যাব।।২-৩।।
সমস্ত লোকের দ্বারা প্রপূজিত মহীরাজকে যিনি জয় করলেন তাকে অবশ্যই দেখতে যাব। একথা শ্রবণ করে মহীপতি জয়দ্রথ সেই ভ্রাতুষ্পুত্রকে বললেন–হে শুক্ল যশস্কর, শোনো তুমি নিজের রাজরাজ্যপদকে কিভাবে সংহত রাখবে। একথা বলে জয়চন্দ্র তাকে যাবার আদেশ দিলেন। সেই রাজগণ নিজ নিজ সেনাগণের সঙ্গে পরিবারিত হয়ে কৃষ্ণাংশকে দর্শন করবার ইচ্ছায় মহীপতির নিকটে গিয়েছিলেন।।৪-৬।।
শিরীষ নামধারী পুরে স্থিত উত্তম কৃষ্ণাংশকে জ্ঞাত হয়ে সেই মহীপতির সম্মুখে এলেন।।৭।।
সেখানে পুণ্ডরীকের সমান মুখমণ্ডল বিশিষ্ট সেই মহাত্মাকে দেখে সকলে প্রসন্ন হলেন এবং তাঁর প্রশংসা করতে লাগলেন।।৮।।
তদা মহীপতি ক্রুদ্ধো বচনং প্ৰাহ ভূপতীন্ যস্যেয়ং চ কৃতা শ্লাঘা যুষ্মাভিদূরবাসিভিঃ। পিতরৌ তস্য বলিনৌ মাহিষ্মত্যাং মৃতিং গতৌ।।৯।। জম্বুকো নাম ভূপালো নামদীয়ৈঃ সমন্বিতঃ। বদ্বা তৌ প্ৰযযৌ গেহং লুন্ঠয়িত্বা ধনং বহু। শিলাপত্রে সমারোপ্য তয়োগাত্রমচূর্ণয়ৎ। শিরসী চ তয়োশ্ছিত্ত্বা বটবৃক্ষে সমারুহৎ।।১০।। অদ্যাপি তৌ স্থিতৌ বীরৌ হা পুত্রেতি প্রভাষিণৌ। প্রেতেেদহে চ পিতরৌ যস্য প্রাপ্তৌ মহাবলৌ। তস্যোদয়ো বৃথা জ্ঞেয়ো বৃথাকীর্তিঃ প্রিয়ঙ্করী।।১১।। ইতি শ্রুত্বা স কৃষ্ণাংশো ভূপতীনপ্রাহ নম্রধীঃ। গতৌ মপিতরৌ সার্দ্ধং গুর্জরে যত্র বৈরণঃ।।১২।। ম্লেচ্ছৈর্ণরাশনৈঃ সার্দ্ধং তপেণ রণোহ ভবৎ। দেশরাজো বৎসরাজো যুদ্ধং কৃত্বা ভয়ঙ্করম্। ম্লেচ্ছৈস্তৈশ্চ হতৌ তত্র শ্রুতেয়ং বিশ্রুতা কথা।।১৩।।
তখন মহীপতি অত্যন্ত ক্রদ্ধ হয়ে রাজগণকে বললেন, তোমরা যার প্রশংসা করছো, তার দ্বারা পিতা মাতা মাহীষ্মতীতে মারা গেছেন।।৯।।
জম্বুক নামধারী রাজা নামদীপের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেই দুজনকে বেঁধে এবং প্রভূত ধন সম্পদ লুঠ করে নিজ ঘরে চলে এলেন। শিলাপত্রে সমারোপিত করে সেই দুইজনের শরীর চূর্ণ করে দিয়েছিলেন। তাদের মস্তক ছেদন করে বটবৃক্ষে ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন।।১০।।
আজও দুই বীর সেখানে ‘হাপুত্র’ একথা বলে ক্রন্দন করে। যার পিতা মাতা মহাবলী হয়েও প্রেত দেহ প্রাপ্ত হন, তাঁর সবকিছুই বৃথা।।১১।।
এই কথা শ্রবণ করে কৃষাংশ ভূপতিগণকে নম্রধী হয়ে বললেন — আমি পিতার সাথে গুর্জর দেশের রণে গিয়েছিলাম। মনুষ্যভক্ষণকারী ম্লেচ্ছগণের সাথে ভয়ংকর যুদ্ধ করে সেই ম্লেচ্ছগণের হাতে পিতা মৃত্যুবরণ করেছিলেন। একথা সেখানে পরম প্রসিদ্ধ হয়েছিল।।১২-১৩।।
মাতুলেনাদ্য কথিতং নবীনং মরণং তয়োঃ। চেৎসত্যং বচনং তস্য পৌরুষং মম পশ্যত।।১৪।। ইত্যুক্ত্বা তান্স কৃষ্ণাংশো মাতরং প্রাহ সত্বরম্। হেতুং চ বৰ্ণয়ামাস ভাষিতং চ মহীপতেঃ।।১৫।। শ্রুত্বা বজ্রসমং বাক্যং রুরোদ জননী তদা। নোত্তরং প্রদদৌ মাতা পতি দুঃখেন দুঃখিতা।।১৬।। জ্ঞাত্বা পিতৃবধং শ্রুত্বা জম্বুকং শিবকিঙ্করম্। মনসা স চ কৃষ্ণাংশস্তুষ্টাব পরমেশ্বরীম্।।১৭।। জয় জয় জয় জগদম্ব ভবানি হ্যখিললোক সুরপিতৃমুনিখানি। ত্বয়া ততং সচরাচরমেব বিশ্বং পাতমিদং হৃতমেব।।১৮।। ইতি ধ্যাত্বা স কৃষ্ণাংশঃ সুম্বাপ নিজসদ্মনি। তদা ভগবতী তুষ্টা তালনং বলবত্তরম্। মোহয়িত্বাশু তৎপার্শ্বে প্রেষয়ামাস সর্বগা।।১৯।।
মাতুল আজ তাদের দুইজনের মৃত্যুর নতুন এক ইতিহাস বললেন, যদি সেই বচন সত্য হয় তাহলে আমার পৌরুষ দেখো।।১৪।।
কৃষ্ণাংশ এই কথা বলে শুঘ্র মাতাকে তার কারণ এবং মহীপতির কথা বললেন। সেকথা শ্রবণ করে তার মাতা রোদন করতে লাগলেন। পতির দুঃখে দুঃখিত মাতা নিরুত্তর রইলেন।।১৫-১৬।।
পিতার বধের কাহিনী শ্রবণ করে জম্বুককে শিবকিংকর জেনে মনে মনে কৃষ্ণাংশ পরমেশ্বরীর ধ্যান করতে লাগলেন।।১৭।।
হে জগদম্বা, সমগ্ৰলোক সুর-পিতৃ এবং মুনিগণের জননী আপনার জয় হোক। আপনি এই চরাচর বিশ্বের সৃষ্টিকর্ত্রী এবং আপনিই বিশ্বের পূর্ণরক্ষাকর্ত্রী তথা সংহারকর্ত্রী। এইরূপ ধ্যান করে কৃষ্ণাংশ নিজগৃহে শয়ন করলেন। অতএব ভগবতী প্রসন্নচিত্তে অধিক বলবান্ তালনকে মোহাবিষ্ট করে তার পাশে প্রেরণ করলেন।।১৮-১৯।।
চতুর্লক্ষবলৈঃ সার্দ্ধ তালনঃ শীঘ্রমাগতঃ। স্বসৈন্যং চোদয়ামাস চৈকলক্ষং মহাবলম্।।২০।। বলখানিস্তদা প্রাপ্তশ্চৈকলক্ষবলান্বিতঃ। অনুজং তত্ৰ সংস্থাপ্য শিরীষাখ্যে মহাবলঃ।।২১।। সজ্জীভূতান্সমালোক্য তানুদ্যানে সসৈন্যকান্। ভীতঃ পরিমলো রাজা কৃষ্ণাংশং প্রতি চাযযৌ।।২২।। বিহ্বলং নৃপমালোক্য কৃষ্ণাংশোহহশ্চাসযন্মুদা।।২৩। লক্ষসৈন্যং তদীয়ং চ গৃহীত্বা চাধিপোহ ভবৎ। শতঘ্ন্যঃ পঞ্চসাহস্রা নানাবর্ণাঃ সুবাহনাঃ।।২৪।। পতাকাঃ পঞ্চসাহস্রাঃ সাহস্রং কাষ্ঠকারিণঃ। গজা দশসহস্রাশ্চ রথাঃ পঞ্চসহস্রকাঃ।।২৫।। ত্রিলক্ষাশ্চ হয়াঃ সর্ব উষ্ট্রা দশসহস্ৰকাঃ। শেষা পদাতয়ো জ্ঞেয়াস্তস্মিন্সৈন্যে ভয়ানকে।।২৬।।
চারলক্ষ সেনা সঙ্গে নিয়ে তালন শীঘ্র সেখানে এলেন এবং মহাবলবান্ একলক্ষ সেনাকে প্রেরণ করলেন।। ২০।।
সেই সময় একলক্ষ সেনা সমন্বিত বলখানিও প্রাপ্ত হলেন। মহাবল নিজত্রাতাকে শিরীষাখ্যপুরে সংস্থাপিত করলেন।।২১।।
সজ্জীভূত নিজ সৈনিকগণকে উদ্যানে দেখে ভীত পরিমল কৃষ্ণাংশের কাছে গেলেন।।২২।।
সেই নৃপতিকে অত্যন্ত বিহ্বল দেখে কৃষ্ণাংশ আনন্দের সঙ্গে আশ্বস্ত করে, নিজের একলক্ষ সেনা নিয়ে অধিপ হয়ে গেলেন, পঞ্চসহস্র শতঘ্নী তথা অনেক বর্ণ বাহন, পাঁচহাজার রথ, তিনলক্ষ অশ্ব, দশসহস্র উট এবং পদাতিক সৈন্য সেই ভীষণ সেনা দলে ছিল।। ২৩-২৬।।
তালনশ্চ সমাযাতঃ সর্বসেনাধিপোহ ভবৎ। দেবসিংহো রথানাং চ সর্বেষামীশ্চরোহ ভবৎ।।২৭।। বলখানিহানাং চ সর্বেষামধিপোহ ভবৎ। পত্তীনাং চৈব সবৈর্ষাং কৃষ্ণাংশ শ্চাধিপোহ ভবৎ।।২৮।। নত্বা তে মলনাং ভূপো দত্ত্বা দানান্যনেকশঃ। সমাযযুশ্চ তে সর্বে দক্ষিণাশাং বলান্বিতাঃ।।২৯।। পক্ষমাত্রগতঃ কালো মার্গে তস্মিন্ননৈষিণাম্। ছিত্তা তত্র বনং ঘোরং নানাকন্টকসংযুতম্। সেনাং নিবাসমাসুনির্ভয়াস্তে মহাবলাঃ।।৩০ ।। দেবসিংহমতেনৈব যোগিনস্তে তদাভবন্। নর্তকশ্চৈব কৃষ্ণাংশশ্চাহ্লাদো ডমরুপ্রিয়ঃ।।৩১।। মডুধারী তদা দেবো বীণাধারী চ তলনঃ। বৎসজঃ কাস্যধারী চ বলখানিমহাবলঃ।।৩২।।
তালন সেই সমগ্র সেনার অধিপ হলেন, দেবসেন সমস্ত রথ, বলখানি সমস্ত অশ্ব, আহ্লাদ সমস্ত গজের অধিপ হলেন। এছাড়া সমগ্র পদাতিক সৈন্য দলের অধিপ কৃষ্ণাংশ স্বয়ং ছিলেন। তাঁরা মললাকে প্রণাম করে এবং প্রভূত সম্পদদান করার ফলে তিনি সকল সেনা সঙ্গে নিয়ে দক্ষিণ দিকে চলে এলেন।।২৭-২৯।।
সেই যুদ্ধে যোগদান করতে ইচ্ছুক রাজগণ পথে একপক্ষকাল ব্যতীত করলেন। তারপর সেখানে কাঁটাযুক্ত ঘনবন পরিস্কার করে সেনা নিবাস প্রস্তুত করলেন। এইরূপ সেই মহাবলীগণ নির্ভয় রইলেন।।৩০ ।।
দেবসিংহের কথায় সকলে মহাযোগীরূপ ধারণ করলেন। কৃষ্ণাংশ পরমাহ্লাদে ডমরুর নিয়ে নৃত্য করতে লাগলেন, দেবসিংহ মডুধারণ করলেন, তালন বীণা ধারণ করলেন, বৎস এবং বলখানি বীণাধারণ করলেন।।৩১-৩২।।
মাতুরগ্রে স্থিতা স্তে বৈ নতুঃ প্রেমবিহবলাঃ। মোহিতা দেবকী চাসীন্ন জ্ঞাতং তত্র কারণম্।।৩৩।। মোহিতাং মাতরং দৃষ্ট্বা পরং হর্ষপাযযুঃ। তদা তাং কথয়ামাসুবয়ং তে তনয়া হি ভোঃ।।৩৪।। নত্বা তাং প্রযযুঃ সর্বৈ পুরীং মাহিষ্মতীং শুভাম্। নগরং মোহয়ামাসুর্বাদ্যগান বিশারদাঃ।।৩৫।। দূত্যা সার্দ্ধং রিপোর্গেহং যযুস্তে কার্যতৎপরাঃ। নৃত্যগানসুবাদ্যৈশ্চ রাজ্ঞাস্তে মোহনে রতাঃ।।৩৬।। বিসংজ্ঞাং মহিষীং কৃত্বা কৃষ্ণাংশ সর্বমোহনঃ। প্রাপ্তবামস্তত্র যত্রাসৌ তসুতা বিজয়ৈষিণী।।৩৭।। দৃষ্ট্বা সা সুদরং রূপং শ্যামাঙ্গং পুরুষোত্তমম্। মুমোহ বশমাপন্না মৈথুনার্থং সমুদ্যতা।।৩৮।।
তারা সকলে মাতার কাছে এসে প্রেম বিহ্বল হয়ে নৃত্য করতে লাগলেন। দেবকী মোহিত হলেও কোনো কারণ জানাতে পারলেন না।।৩৩।।
মাতাকে মোহিত হতে দেখে তাদের পরম হর্ষ হয়েছিল। সেই সময় তারা বললেন –”আমরা আপনার পুত্র।” সকলে তাঁকে প্রণাম করে শুভ মাহিষ্মতীপুরীতে প্রস্থান করলেন। বাদ্যকর ও গীতিকারগণ সম্পূর্ণ নগর মোহিত করলেন।।৩৪-৩৫।।
কার্য তৎপর দূতীর সাথে প্রাসাদে প্রবেশ করে গান ও সুন্দর বাদ্যের দ্বারা রাজাকে মোহিত করে রাণীকে সংজ্ঞাহীন করে পেললেন। তারপর তার পুত্রী বিজয়ৈষিণীর কাছে গেলেন। বিজয়ৈষিণী তার পুরুষোত্তম শ্যাম অঙ্গ দর্শন করে মৈথুনার্থে উদ্যত হলেন।।৩৬-৩৮।।
দষ্টা তথা গতাং নারীং কৃষ্ণাংশ শ্লম্নয়াগিরা। শত্রোভেদং চ পপ্ৰচ্ছ কামিনীং মদবিহ্বলাম্।।৩৯।। সাহ ভো দেবকীপুত্র যদি পাণি গ্রহীষ্যসি। তহি তে কথয়িষ্যামি পিতৃভেদং হি দারুণম্।।৪০।। তথেত্যুক্ত্বা স বলবাঁস্তস্যাঃপাণি গৃহীতবান্। জ্ঞাত্বা ভেদং রিপো সর্বং তামাস্বাস্য যযৌমুদা।। ৪১।। এতস্মিন্নস্তরে রাজ্ঞী বাধিতা প্রাহ যোগিনম্। দেশরাজপ্রিয়াহারং নবলক্ষস্য মূল্যকম্। তুভ্যং দাস্যামি সন্তুষ্টা নৃত্যগানবিমোহিতা।।৪২।। ইতি শ্রুত্বা বৎসসুতস্তাং প্রশস্য গৃহীতবান্। প্রযযৌ বন্ধুভিঃ সার্দ্ধং জম্বুকে যত্র তিষ্ঠতি।। ৪৩।। ননত তত্র কৃষ্ণাংশো বলখানিরগায়ত। আহ্লাদস্তালনো দেবো দৰ্বাদ্যগতোমুর্দা।।৪৪।।
সেই নারী এই প্রকার দশা দেখে অত্যন্ত শ্লক্ষবাণীর দ্বারা কৃষ্ণাংশ শত্রুর ভেদ জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন–যদি আপনি আমার পাণি গ্রহণ করেন, তাহলে আমি পিতার সমস্ত ভেদ বলে দেব।কৃষ্ণাংশ তার কথা মেনে নিয়ে পাণি গ্রহণ করলেন। এইভাবে শত্রুর সমস্ত ভেদ জেনে তাকে আশ্বস্ত করে কৃষ্ণাংশ সেখান থেকে চলে গেলেন।।৩৯-৪১।।
এরমধ্যে বাধিতা যোগীকে রাণী বললেন–দেশরাজ প্রিয়ার হারের মূল্য নয়লক্ষ, সেটি আমি তোমাকে প্রদান করব। কারণ তোমার নৃত্য-গানে আমি বিশেষরূপে মোহিত হয়েছি। একথা শ্রবণ করে বৎস স্তুত প্রশংসাপূর্বক তা গ্রহণ করলেন এবং বন্ধুগণের সঙ্গে জম্বুকের কাছে গেলেন। কৃষ্ণাংশ সেখানে নৃত্য করলেন এবং আহ্লাদ-তালন-দেব মহানন্দে বাদ্য করেছিলেন।।৪২-৪৪।।
মোহিতোহভূন্নপস্তত্র কালিয়ঃ স্বজনৈঃ সহ। কামং বরয় কৃষ্ণাংগ যচ্চতে হৃদয়ে স্থিতম্।।৪৫।। ইতি শ্রুত্বা বচঃ সত্রোবলখানিমহাবলঃ। তমাহ ভো মহীপাল লক্ষাবর্তির্বরাঙ্গণা। স্ববিদ্যাং দর্শয়েন্মহ্যং তদা তৃপ্তিং ব্রজাম্যহম্।।৪৬। ইতি শ্রুত্বা তথা মত্বা লক্ষাবর্তি নৃপোত্তমঃ। সভায়াং নয়ামাস দেশরাজপ্রিয়াং তথা।।৪৭।। স বেশ্যা সুতমাহ্লাদং জ্ঞাত্বা যোগিত্বমাগতম্। রুরোদ তত্র দুঃখতা নেত্ৰাদশ্রুণি মুঞ্চতী।।৪৮।। রুদিতাং তাং সমালোক্য রুদন্নাহ্লাদ এব সঃ। স্বভূজৌ তাড়য়ামাস তৎপ্রিয়ার্থে মহাবলঃ।।৪৯।। কৃষ্ণাংশস্তত্র তং হারং তস্যা কন্ঠেপ্রদত্তবান্। উবাচ ক্রোধতাম্রক্ষস্তামাশ্বাস্য পুনঃ পুনঃ।। ৫০।। অহং চোদয়সিংহোহয়ং পিতৃবৈরার্থমাগতঃ। হনিষ্যামি রিপুং ভূপং সাত্মজং সবলং তথা।। ৫১।।
সেখানে কালিয় নৃপ মোহিত হয়ে কৃষ্ণাংশকে কর দিতে চাইলেন।।৪৫।। মহাবলবান্ বলখানি শত্রুর এরূপ বচন শ্রবণ করে তাঁকে বললেন–হে মহীপাল, লাক্ষাবর্ত্তী বারাঙ্গনা তার স্বীয় বিদ্যা আমাকে প্রদর্শন করলে আমি পূর্ণ তৃপ্তি লাভ করব। একথা শ্রবণ করে এবং তা গ্রহণ করে দেশরাজ প্ৰিয়া লক্ষবর্ত্তী সভাতে নৃত্য প্রদর্শন করলেন। ঐ বারাঙ্গনা যোগিত্বপ্রাপ্ত আহ্লাদসূতর পরিচয় জেনে দুঃখে কাতর হয়ে অশ্রুপাত করছিলেন।।৪৬-৪৮।
বারাঙ্গনাকে রোদন করতে দেখে আহ্লাদও রোদন করছিলেন। মহাবল নিজহস্তে তার প্রিয়াকে তাড়ন করেছিলেন। কৃষ্ণাংশ সেখানে সেই হার তার গলায় পরিয়ে দিলেন এবং ক্রোধে রক্তচক্ষু হয়ে তাকে বললেন আমি উদয়সিংহ পিতার বৈরীতার জন্য এখানে এসেছি। এখন আমি সপুত্ৰ শত্ৰু রাজাকে এবং তার সেনাদেরকে মেরে ফেলব।।৪৯-৫১।।
ইতি শ্রুত্বা বচস্তস্য কালিয়ো বলত্তরঃ। পিতুরাজ্ঞাং পুরস্কৃত্য শতব্যূহসমন্বিতঃ।।৫২।। তেষাং চ বন্ধনায়ৈব কপাটং সমরুদ্ধ সঃ। তাঞ্ছত্ৰন্সমনুজ্ঞায় পাশহস্তন্সশস্ত্রগান্।।৫৩।। স্বং স্বং খড়গং সমাকৃষ্য ক্ষত্ৰিয়াস্তে সমাঘ্নত। শতশূরে হতে তৈশ্চ কালিয়ো ভয়কাতরঃ।।৫৪।। ত্যক্ত্বা তাতং প্রদুদ্ৰাব তে তু গেহাদ্বহিৰ্যঃ। স্বসৈন্যং শীঘ্রমাসাদ্য যুদ্ধায় সমুপস্থিতৈঃ।।৫৫। কৃত্বা তু নর্মদাসেতুং নল্বমাত্ৰং সুপুষ্টিদম্। স্বসৈন্যং তারয়ামাস চতুরঙ্গসমন্বিতম্।।৫৬।। রুরোধ নগরীং সর্বা বলখানিবলৈযুতঃ। শতঘ্নীরগ্রতঃ কৃত্বা মহাশব্দকরীস্তদা। মাহিষ্মত্যাশ্চ হর্ম্যাণি পাওয়ামাস ভূতলে।।৫৭।। নরাশ্চ স্বকুলৈঃ সার্দ্ধং মুখ্যদ্রব্যসমন্বিতাঃ। বিন্ধ্যাদ্রেশ্চ গুহাং প্রাপ্য তত্রোযুভয়কাতরাঃ।।৫৮।। কালিয়স্তু গজানীকে পঞ্চশব্দগজে স্থিতঃ। হস্তিপা দশসাহস্রা যুদ্ধায় সমুপাযঃ।।৫৯।। তস্যানুজ সূর্যবর্মা ত্ৰিলক্ষৈস্তরগৈতঃ। তুন্দিলশ্চ রথৈঃ সার্দ্ধং রথস্থশ্চ সহস্রকৈঃ।।৬০।। রঙ্কণো বঙ্কণশ্চোভো চতুলক্ষ পদাতিভিঃ। জন্মতুস্তৌ মহাম্লচ্ছৌ ম্লেচ্ছভূপসহস্ৰকৈঃ। দাক্ষিণাত্যগ্রাম পাস্তে তৌ পুরস্কৃত্য সংযযুঃ।।৬১।। উভে সেনে সমাসাদ্য যুদ্ধায় সমুপস্থিতে। তয়োশ্চ তুমলং যুদ্ধমভবল্লোমহর্ষণম্।।৬২।। ত্রিযামে রুধিরেস্তেষাং নদী প্রাবর্তত দ্রুতম্। দৃষ্ট্বাংস্নজাং নদীং ঘোরাং মাংসকদমবাহিনাম্। বলখানিরমেয়াত্মা খড়গ পাণির্নরোযযৌ।।৬৩।। ভল্লহস্তস্তদা দেবো মনোরথ হয়ে স্থিতঃ। বিন্দুলস্থশ্চ কৃষ্ণাংশ খড়েগনৈব রিপুহনম্।।৬৪। আহ্লাদশ্চ গদাহস্তঃ পোথয়ামাস বাহিনীম্। রূপণো নাম শূদ্রশ্চ শক্তিহস্তোন্যহত্রিপূন্। তালনো হস্তিনিস্ত্রিশো মাহিষ্মত্যাং হনন্যযৌ।।৬৫।।
তাঁর এইরূপ বচন শ্রবণ করে বলবান্ কালিয় পিতার আজ্ঞা পেয়ে শতব্যূহ সমন্বিত হয়ে তাকে বন্ধন করার উদ্দেশ্যে দ্বার বন্ধ করলেন। তখন শত্রুগণকে চিহ্নিত করে খড়্গের দ্বারা কৃষ্ণাংশ এবং তার সহযোদ্ধাগণ হত্যা করল। শতশূরকে মারা যেতে দেখে কালিয় ভয় কাতর হয়ে গেল।।৫২-৫৮।।
কালিয় পিতাকে ত্যাগ করে পালিয়ে গেল। শীঘ্রই সে নিজ সেনা নিয়ে উপস্থিত হল। নর্মগাতীরে কৃষ্ণাংশ সেনা শিবির ছিল। সুপুষ্টিদায়ী নর্মদাতে নল্বমাত্র সেতু বন্ধু করে চতুরঙ্গ সেনা পার করে দিল।।৫৫-৫৬।।
বলখানি সেনা সমন্বিত হয়ে সম্পূর্ণ নগরী ভূলুণ্ঠিত করল। মনুষ্যগণ প্রয়োজনীয় জিনিস সঙ্গে নিয়ে ভয়ভীত হয়ে বিন্ধাচলের গুহাতে নিবাস করতে লাগলেন।।৫৭-৫৮।।
কালিয় পঞ্চশব্দ গজারূঢ় হয়ে এবং দশসহস্র হস্তিপ নিয়ে যুদ্ধ ক্ষেত্রে অবতীর্ণ হলেন। তার অনুজ সূর্যবর্মা তিনলক্ষ অশ্ব এবং তুন্দিল সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধ করতে এলেন। রংকণ এবং কংকণ এই দুই মহাম্লেচ্ছ চারলক্ষ পদাতিক সৈন্য এবং একলক্ষ ম্লেচ্ছ রাজার সঙ্গে যুদ্ধ ক্ষেত্রে গেলেন।। ৫৯-৬১।।
দুইপক্ষের সৈন্যদল যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে সেখানে উপস্থিত হল। দুপক্ষের ভীষণ রোমাঞ্চকারী তুমুল শব্দ উৎপন্ন হল। তিনপ্রহরের মধ্যে রুধিরের নদী সেখানে প্রবাহিত হয়। সেই রক্তের নদী এবং কদমরূপ মাংস দেখে অমোয়াত্মা বলখানি খড়্গহস্তে সেখানে এলেন।।৬২-৬৩।।
ভল্ল হস্তে দেব মনোরথ অশ্বারূঢ় হয়ে, কৃষ্ণাংশ বিন্দুল নামক অশ্বে আরোহণ করে খড়্গহস্তে শত্রু দমন করতে লাগলেন। আহ্লাদ গদার দ্বারা সেনাগণকে প্রোথিত করতে লাগলেন। রূপণ নামক শূদ্র হস্তের দ্বারা শত্রু হনন করতে লাগলেন। তালন হস্তি পৃষ্ঠে আরোহণ করে অত্যন্ত নির্দয়ভাবে নগরী মধ্যে শত্রু হনন করতে লাগলেন।।৬৪-৬৫।।
এবং মহাভয়ে জাতে রণে তস্মিন্মহাবলে। দুদ্রুবুঃ সর্বতো বীরাঃ পাহিত্যথাক্ৰবন্।।৬৬।। ফ্রভগ্নং স্ববলং দৃষ্ট্বা কালিয়ো বলখানিকম্। গজস্থস্তাড়য়ামাসে স্ববানৈস্তং মহাবলঃ।।৬৭।। হরিণী বড়বা তস্য জ্ঞাত্বা স্বায়িনমাতুরম্। গজোপরি সমাস্থায় স্বপাদৈস্তমপাতয়ৎ।।৬৮। পতিতে কালিয়ে বীরে পঞ্চশব্দো মহাগজঃ শৃঙ্খলৈস্তাড়য়ামাস শূরাংস্তান্মদত্তকান্।।৬৯।। মূৰ্চ্ছিতে পঞ্চশূরে তু রূপণো ভয়কাতরঃ। দেবকীং বর্ণয়ামাস যথাজাতং গজেন বৈ।।৭০।।
এইরূপ মহাবল ভয়ানক যুদ্ধ শুরু হলে সকল বীর ‘ত্রাহি ত্রাহি’ রব করে পলায়ন করতে লাগলেন। সেই সময় কালিয় নিজ সেনাদেরকে রণভঙ্গ হতে দেখে গজারূঢ় হয়ে বলখানিকে বাণের দ্বারা তাড়না করতে লাগলেন। তার হরিণী নামক ঘোটকী প্রভুকে সন্তস্ত্র দেখে গজোপরি উত্থিত হয়ে কালিয়কে ভূপতিত করল। বীর কালিয় পতিত হলে পঞ্চশব্দ নামক মহাগজ শুঁড়ের দ্বারা বীরগণের মধ্যে তাড়না করতে লাগল।।৬৬-৬৯।।
পঞ্চশুর মূর্ছিত হয়ে গেলে রূপণ ভয়ভীত হয়ে গজারূঢ় হয়ে দেবকীকে যথাপূর্বক বর্ণনা করলেন।।৭০।।
তদা তু দুঃখিতা দেবী দোলামারুহ্য সত্বরা। তং গজং চ সমাসাদ্য বর্ণয়ামাস কারণম্।।৭১।। গজরাজ নমস্তুভ্যং শত্রুদত্ত মহাবল। এতে পুত্রাস্তুতে বীর পালনীয়া যথা পিতুঃ।।৭২।। ইতি শ্রুত্বা দিব্য গজো দেবমায়াবিশারদঃ। দেবকীং শরণং প্রাপ্য ক্ষমস্বাগস্কৃতং মম্ঃ।।৭৩ ।। ইত্যুক্তে গজরাজে তু কৃষ্ণাংশো বলত্তরঃ। ত্যক্ত্বা মূৰ্চ্ছাং যযৌ যত্রাহ্লাদশ্চ মূৰ্চ্ছিতঃ।।৭৪।। তমুত্থাপ্য করস্পশেবলখানিসমন্বিতঃ। পিতৃগর্জং মহামত্তমাহ্লাদায় প্রদত্তবান্। করালমশ্বং দিব্যাঙ্গং রূপণায় তদা দদৌ।।৭৫। মূৰ্চ্ছিতং কালিয়ং শত্রুং বদ্ধা স নিগড়ৈদৃঢ়ৈঃ। সেনান্তং প্রেষয়ামাস বলখানির্মহাবলঃ।।৭৬।। সূর্যবর্মা তদা জ্ঞাত্বা বদ্ধং বন্ধুং চ কালিয়ম্। প্রযযৌ শত্রুসেনান্তং ক্রোধেন স্ফুরিয়াধরঃ।।৭৭।।
সেই সময় দেবকী প্রভূত দুঃখিত হয়ে শীঘ্র স্বয়ং দোলারূঢ় হয়ে গজের সমীপে এসে তার স্তব করতে লাগলেন, হে গজরাজ, হে শত্রুদত্ত মহাবল, তোমাকে আমার প্রণাম। হে বীর, এই তোমার পুত্র, একে তুমি পিতার ন্যায় অবশ্য পালন করবে।।৭১-৭২।।
এই কথা শ্রবণ করে দেবমায়া বিশারদ দিব্যগজ দেবকীর শরণ প্রাপ্ত হয়ে ক্ষমা প্রদর্শন করলেন।।৭৩।।
গজরাজকে একথা বলার পর বলবান্ কৃষ্ণাংশ মূৰ্চ্ছা ত্যাগ করে মূর্ছিত আহ্লাদের কাছে গেল। বলখানিকে সঙ্গে নিয়ে করস্পর্শে তাকে তুলে পিতার মহামত্তগজকে আহ্লাদকে দিয়েদিলেন এবং করাল অশ্ব রূপণকে দিয়ে দিলেন। তখন মূৰ্চ্ছিত কালিয়কে নিগড়ের দ্বারা বন্ধন করে বলখানি তাকে তার সেনাদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। তখন সূর্যবর্মা নিজ বন্ধুকে এইরূপ অবস্থায় দেখে সমুচিত বেশে শত্রু সেনার কাছে গেল।।৭৪-৭৭।।
তমায়ান্তং সমালোক্য তে বীরো যুদ্ধদুর্মদাঃ। রথস্থং মন্ডলীকৃত্য স্বংস্বমন্ত্রং সমাক্ষিপন্।।৭৮।। কুণ্ঠিতেহস্ত্ৰে তদা তেষাং বিস্মিতাস্তেহ ভবসুখে। চিন্তাং চ মহতীং প্রাপ্তঃ কথং বধ্যো ভবেদয়ম্।।৭৯।। তস্যাস্ত্রৈস্তে মহাবীরা ব্রহ্মার্তি ভয়পীড়িতাঃ। ত্যক্ত্বা যুদ্ধং পুনর্গত্বা রণং চক্রঃ পুনঃ পুনঃ।।৮০।। এবং কতি দিনান্যেব বভূব রণ উত্তমঃ।
আহ্লাদো বৎসজো দেবস্তালনো ভয়সংযুতঃ। কৃষ্ণাংশং শরণ জ্যুস্তেন বীরেণ মোহিতাঃ।।৮১।। কৃষ্ণস্তু তং তথা দষ্টা দেবীং বিশ্ববিমোহিনীম্। তুষ্ট। মনসা বীরো রাত্রিসূক্তং পঠহৃদি।।৮২।। তদা তুষ্টা জগদ্ধাত্রী দুর্গা দুর্গাতি নাশিণী। মোহয়িত্বা তু তং বীরং তত্রৈবান্তরধীয়তঃ।।৮৩।। নিদ্ৰয়া মোহিত দৃষ্ট্বা কৃষ্ণাংশস্তু মহাবলঃ। ববন্ধ নিগড়ৈস্তং চ দেবক্যন্তে সমাগমাৎ।।৮৪।।
যুদ্ধে দুর্মদবীরগণ তাকে আসতে দেখে নিজেদের মধ্যে মন্ডল তৈরী করে তাকে ঘিরে ফেলল এবং নিদ নিজ অস্ত্রের দ্বারা তাকে আঘাত করতে লাগল। তাঁদের অস্ত্রশস্ত্র কুণ্ঠিত হয়ে গেলে তাঁরা বিস্মিত হন এবং কি করে সূর্যবর্মাকে বধ করবেন এনিয়ে চিন্তান্বিত হন।।৭৮-৭৯।।
সূর্যবর্মার অস্ত্রে ক্ষতবিক্ষত হয়ে তাঁরা ভয়ভীত হন। যুদ্ধ ত্যাগ করে বারংবার তারা যুদ্ধ করতে থাকেন। এই প্রকার কতদিন ধরে হয়েছিল তখন তারা সব কৃষ্ণাংশের শরণে যান। কৃষ্ণাংশ তাদের এরূপ অবস্থা দেখে মনে মনে বিশ্বমোহিনী দেবীর স্তব করতে লাগলেন এবং বীরগণ রাত্রিসূক্ত পাঠ করতে লাগলেন। তখন জগদ্ধাত্রী, দুঃখবিনাশিনী দুর্গা প্রসন্ন হয়ে বীর সূর্যবর্মাকে মোহিত করে অন্তর্হিত হন।।৮০-৮৩।।
যখন তিনি নিদ্রাভিভূত হলেন তখন মহাবল কৃষ্ণাংশ তাকে দৃঢ়তার সঙ্গে নিগড়বদ্ধ করে দেবীর সমীপে নিয়ে গেলেন।।৮৪।।
তুন্দিলশ্চ তথা জ্ঞাত্বাবাতৃশোক পরিপ্লুতঃ। আজগাম হয়ারূঢ়ঃ খগড়হস্তো মহাবলঃ। রিপুসৈন্যস্য মধ্যে তু বহুশূরান তাড়য়ৎ।।৮৫।। মাহিষ্মত্যাশ্চ তে শূরা রংকণেন সমন্বিতাঃ। ততসৈন্যং ভঞ্জয়ামাসুস্তালনেন প্রপালিতম্।।৮৬।। প্রদ্রুতং স্বং বলং দৃষ্ট্বা তালনঃ পরিঘায়ুধঃ। শিরাংসিপোথয়ামাস ম্লেচ্ছানাং চ পৃথক পৃথক্।।৮৭। বঙ্কণং চ তথা হত্বা খড়েগনৈব চ রঙ্কণম্। তুন্দিলং চ তথা বদধ্বা দিনান্তে শিবিরং যযৌ।।৮৮।। কালিয়ে চ রিপৌ বদ্ধে সুবন্ধে সূর্যবর্মণি। তুন্দিলে চ তথা বদ্ধে রংকণে বংকণে হতে।।৮৯।। সহস্রং ম্লেচ্ছরাজানো হতশেষা বলন্বিতাঃ। পক্ষমাত্রমহোরাত্রং যুদ্ধং চক্রঃ সমস্ততঃ।।৯০।।
তুন্দিল ভ্রাতাকে ঐরূপ অবস্থায় দেখে শোকাতুর হয়ে খড়্গ হস্তে অশ্বারোহনপূর্বক সেখানে আগত হলেন। শত্রু মেলার মধ্যে তিনি অনেক বীর যোদ্ধাকে হত্যা করেন।।৮৫।।
মাহিষ্মতী নগরীতে তুন্দিল রংকনকে সঙ্গে নিয়ে তালনের সেনা ভঞ্জন করেছিলেন। তালন তার সেনাদের পলায়ন করতে দেখে তিনি পরিঘ অস্ত্রের দ্বারা ম্লেচ্ছগণের মস্তক ছিন্নভিন্ন করেছিলেন।।৮৬-৮৭।।
কংকন এবং রংকনকেও খড়্গের দ্বারা হত্যা করলেন এবং তুন্দিলকে বেঁধে নিয়ে দিনান্তে শিবিরে ফিরে এলেন।।৮৮।।
কালিয়, সূর্যবর্মা, তুন্দিল শত্রুগণের বধ্য জেনে এবং কংকন ও রংকনকে মৃত দেখে অবশিষ্ট একসহস্র ম্লেচ্ছ রাজা অবশিষ্ট সেনাদের সঙ্গে নিয়ে এক পক্ষকাল যুদ্ধ করেছিল।।৮৯-৯০।।
প্রত্যহং তালনো বীর সেনাপতিরমর্ষণঃ। ষষ্টিং ভূপাঞ্জঘানাশু শত্রুসৈন্যভয়ঙ্করঃ।।৯১।। ভয়ভীতা রিপোঃ শূরা হতা ভূপা হতৌজসঃ। হতশেষা যযুর্গের্হমৰ্দ্ধসৈন্যা ভয়াতুরাঃ।।৯২। জম্বুকস্তু তথা শ্রুত্বা দুঃখিতো গেহমাযযৌ। ব্রতং হ্যনশণং কৃত্বা রাত্রৌ শোচন্নশেত সঃ।।৯৩।। নিশীথে সমনুপ্রাপ্তে তৎসুতা বিঝয়ৈষিনী। পূর্ণা তু সা কলা জ্ঞেয়া রাধায়া ব্রজবাসিনী।।৯৪।। আশ্বাস্য পিতরং তং চ যযৌ মায়াবিশারদা। রক্ষকাঞ্ছিবিরাণাংচ মোহয়িত্বা সমাযযৌ।।৯৫।। ভ্রাতরো তত্র গত্বাসৌ যত্র সর্বানবোধয়ৎ। কৃত্বা সা রাক্ষসীং মায়াং পঞ্চবীরা নমোহয়ৎ।।৯৬।। নিরস্ত্রকবচান্বন্ধুনতিদোলাং সমারুহৎ। পিতুংরতিকমাসাদ্য তস্মৈ ভ্রাতৃন্দদৌ মুদা।।৯৭।।
প্রতিদিন বীর তালন এবং অমর্ষণ সেনাপতিকে ষাট হাজার সেনাকে শীঘ্র হত্যা করলেন, কারণ তারা শত্রু সেনার কাছে মহাভয়ংকর ছিলেন।।৯১।।
ভয়বীত যত্রু সেনার নৃপতিগণ মারা গেল পর অবশিষ্ট সেনা ভয়াতুর হয়ে পলায়ন করেছিল। জম্বুক একথা শ্রবণ করে পরমদুখে নিজ গৃহে ফিরে এসেছিল। তিনি অনশন ব্রত রালন করে বিনিদ্র রজনী যাপন করতে লাগলেন। অর্ধ রাত্রির পরে তার কন্যা বিজয়ৈষিণী রাধার ব্রজনিবাসের পূর্ণ কলা জানতে ইচ্ছা করলেন।।৯২-৯৪।।
মায়া বিশারদ সেনা কন্যা পিতাকে আশ্বাস দিয়ে চলে গেলেন। ঐ শিবিরের রক্ষককে মোহিত করে চলে এলেন। শিবিরে এসে তাঁর ভ্রাতাদের কাছে গিয়ে তাদের বোধিত হয়ে পঞ্চবীরকে রাক্ষসী মায়াতে মোহিত করলেন। নিরস্ত্রকবচ সকল বন্ধুগণকে দোল দিয়ে পিতার প্রসন্নতা ফিরিয়ে আনতে ভ্রাতাদের তার কাছে অর্পণ করলেন।।৯৫-৯৭।।
প্রভাতে বোধিতাঃ সর্বে স্নানধ্যানাদিকাঃ ক্রিয়াঃ। কৃত্বা যযু রিপো শালাং দৃষ্টবন্তো ন তাংস্তদা।।৯৮।। বভূবুদুঃখিতাঃ সর্বে কিমিদং কারণং কথম্। তানুবাচ তদা দেবঃ প্রাপ্তঃ হ্যত্র রিপোঃ সুতা।।৯৯।। কৃত্বা সা রাক্ষসীং মায়াং হৃত্বা তাগ্নেহমায়যৌ। তস্মাদূয়ং ময়া সার্দ্ধং গত্বা যত্রৈব তদগুরুঃ।।১০০।। বিধ্যোপরি মহারণ্যে নানাসত্তনিষেবিতে। কুটীরং তস্য তত্রৈত্র ব্রাম্নৈবৈলবিলী হি সঃ। যোগসিদ্ধিযুতঃ কামী রাক্ষসেভ্যো হি নির্ভয়ঃ।।১০১।। জম্বুকস্য সুতা তত্র প্রত্যহং স্বজনৈৰ্যতা। একাকিনী চ সা রাত্রৌ স্বং গুরুং তমরীরমৎ।। ১০২।। কৃতেয়ং চৈলবিলিনা মায়া মনুজমোহিনী। কার্যসিদ্ধিং গমিষ্যামো গত্বা তং পুরুষাধমম্। ইতি শ্রুত্বা তু চত্বারো বিনাহ্লন্দং যযুবনম্।।১০৩।।
প্রাতঃকালে সকলে জেগে উঠে স্নান, ধ্যানাদি ক্রিয়া করার পর গৃহে তুন্দিলকে কেউ দেখতে পেলেন না। তখন সকলে দুঃখিত হয়ে চিন্তা করলেন নিশ্চয় এর কোনো কারণ আছে। সেই সময় তাকে দেব বললেন, রাত্রে শত্ৰুকন্যা এসেছিল। তিনি রাক্ষসী মায়াবলে তাকে হরণ করে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। এখন তোমরা আমার সাথে তার গুরুর কাছে চল।।৯৮-১০০।।
বিন্ধ্যাচলের উপর বিশাল বনে অনেক প্রকার পিশাচাদি বসবাস করে সেখানে তার কুটীর। তার নাম ঐলীবিলী। তিনি যোগসিদ্ধ কালী এবং রাক্ষসদের সঙ্গে সদা নির্ভয়ে বাস করে।। ১০১।।
জম্বুকসূতা প্রত্যহ স্বজনবর্গের সাখে বা একলা সেখানে গিয়ে নিজ গুরুকে রমণ করেন। ঐ ঐলীবিলী মনুষ্যকে মোহিক করার মায়া করেছেন। সেই অধমপুরুষের কাছে গিয়ে আমরা কার্য সিদ্ধি করব। এইকথা শ্রবণ করে আহ্লাদ ছাড়া বাকী চারজন বনে গেল।।১০২-১০৩।।
গীতনৃত্যপ্রবাদ্যৈশ্চ মোহয়িত্বা চ তং দিনে। বাসং চক্রুশ্চ তত্রৈব ধূতং মায়াবিশারদম্।। ১০৪।। স তু পূর্বভবে দৈত্যশ্চিত্রো নাম মহাসুরঃ। বাণকন্যামুষাং নিত্যমবাঞ্ছচ্ছিব পূজকঃ। জাত ঐলবিলী নাম পক্ষপূজী স বেগবান্।।১০৫।। তয়োমধ্যে প্রামাণোহয়ং বিবাহো মে যদা ভবেৎ। তদাহং ত্বাং ভজিষ্যামি সংত্যক্ত্বোদ্বাহিতং পতিম্।।১০৬।। হতে তস্মিন্মহাধূর্তে গত্বা সংমগ্রামমূৰ্দ্ধনি। জম্বুকস্য যযুদুর্গং দৃষ্ট্বা তে তং সমারুহন্। হত্বা তত্র স্থিতাম্বীরাঞ্ছতম্য পরিখাকৃতাঃ।।১০৭।। তদা তু জম্বুকো রাজা শিবদত্তবরো বলী। জিত্বা পঞ্চ মহাবীরান্বদূধা তান্নি গডৈদৃঢ়ৈঃ।। শৈবং যজ্ঞং চ কৃতবাংস্তেষাং নাম্নোপবৃংহিতম্।।১০৮।
দিনে নৃত্য, গীত, বাদ্যের দ্বারা তাকে মোহিত করে রাত্রে সেখানেই তারা থেকে গেলেন। ধূৰ্ত্ত ঐলীবিলী পূর্ব জন্মে চিত্র নামক মহাসুর ছিলেন। তিনি শিবপূজা করে বাণকন্যা ঊষাকে পাবার ইচ্ছা করেছিল। বর্তমানে তিনি পক্ষপূজী ঐলীবিলী নামে উৎপন্ন হয়েছেন।।১০৪-১০৫।।
তাদের দুইজনের মধ্যে প্রমাণ ছিল যে, তাদের বিবাহ হলে বাণকন্যা তার পতিকে ত্যাগ করে ঐলীবিলীর সেবা করবে।।১০৬।।
সেই মহাধূৰ্ত্তকে হত্যা করে তারা জুম্বকের দুর্গে প্রবেশ করল। তত্রস্থিত বীরগণকে হত্যা করে তারা সেখানে শতঘ্নী পরিখা তৈরী করল। সেই সময় শিববরে বলীয়ান রাজা জন্তুক সেই পঞ্চবীরকে জয় করে শৃঙ্খলাবদ্ধ করেছিল এবং তাদের নামে উপবৃংহিত শৈবযজ্ঞ করেছিল।।১০৭-১০৮।।
রূপেণস্তু তথা জ্ঞাত্বা দেবকীং প্রত্যবর্ণয়ৎ। তদা তু দুঃখিতা দেবী ভবানীং ভয়হারিণীম্। মনসা চ জগামাশু শরণ্যাং শরণং সতী।। ১০৯।। তদা তুষ্টা জগাদ্ধাত্রী স্বপ্রান্তে তামবর্ণয়ৎ। অহো দেবকি কল্যাণি পুত্রশোকং ত্যজধুনা।।১১০।। যদা তু জম্বুকো রাজা শিবদত্তবরে বলী। হেমং কর্তা স মন্দাত্মা তেষাং চ বলিহে তবে।।১১১।। মোহয়িত্বা তদাহং তং মোচয়িত্বা চ তে সুতান্। বিজয়ং তে প্ৰদাস্যামি মা চ শোকে মনঃ বৃথাঃ।।১১২ ইতি শ্রুত্বা সতী দেবী নমস্কৃত্য মহেশ্বরীম্। পূজয়ামাস বিধিবস্তু পদীপোপহারকৈঃ।।১১৩।।
রূপণ এই বৃত্তান্ত জানতে পেরে দেবকীর স্তব করেছিল। তখন দুঃখিত দেবী ভয়দূরকারী মাতা ভবানীকে একমনে ধ্যান করেছিল কারণ তিনিই হলেন বড় আশ্রয় এবং শীঘ্র রক্ষিকা।।১০৯।।
জগন্মাতা প্রসন্ন দেবকীকে স্বপ্নান্তে বলেছিলেন- হে দেবকী, হে কল্যাণী, এখন তুমি পুত্র শোক পরিত্যাগ কর। রাজা জম্বুক ভগবান্ শিবের বরে বলীয়ান্ হলেও যজ্ঞে তোমার পুত্রদের বলি দেওয়ার সময় সেই সদাত্মাকে বলি দিয়ে আমি তোমার পুত্রদের মুক্ত করে বিজয় তোমাকে অর্পণ করব। এখন মনে শোক ত্যাগ কর।।১১০-১১২।।
দেবকী একথা শ্রবণ করে মহেশ্বরীকে প্রণাম করে ধূপ-দীপসহ বিধিপূর্বক তার পূজা করেছিলেন।।১১৩।।
এতস্মিন্নন্তরে রাজা দেবমায়াবিমোহিতঃ। সুধাপ তত্ৰ হোমান্তে তে চ জাতো হ্যবন্ধনাঃ।।১১৪।। তৈর্বদ্ধো জম্বুকো রাজা নিগডৈরায় সৈ দৃঢ়ৈঃ। তে তং বদধ্ব য শীঘ্রং দেবকীং প্রতিনিৰ্ভয়াঃ।।১১৫। এতন্মিন্নস্তরে তত্র কালিয়াদ্যাস্ত্রয়ঃ সতাঃ। ত্রিলক্ষং সৈন্যমাদায় যুদ্ধায় সমুপাযঃ।।১১৬।। পুনযুদ্ধমভূদ্ধোরং সেনয়োরু ভয়োওদা। তালনাদ্যাশ্চ চাত্বারো হত্বা তাং রিপুবাহিনীম্।।১১৭। ত্রীত্রকোষ্ঠকীকৃত্য স্বশস্ত্রৈজয়ুরূজিতাঃ। এবং দিনানি কতিচিত্তত্র জাতো মহারণঃ।।১১৮।। কালিয়ো দুঃখিতে ভূত্বা সস্মায় মনসা হরম্। মোহনং মন্ত্রমাসাদ্য মোহয়ামাস তান্নিপূন্।।১১৯।। এত। স্মন্নন্তরে দেবী দেবকী পতিদেবতা। পাতিব্রত্যস্য পুণ্যেন সতান্তিকমুপাগতা।।১২০।।
ইতিমধ্যে দেবমায়ার দ্বারা বিমোহিত করে রাজা জম্বুক শয়ন করলেন, সেই সময় হোমান্তে কৃষ্ণাংশ প্রভৃতি বন্ধন রহিত হয়ে জম্বুককে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে নির্ভয়ে দেবকীর কাছে চলে গেলেন।।১১৪-১১৫।।
এরমধ্যে কালিয় প্রভৃতি জম্বুকের তিনপুত্র তিনলক্ষ সেনা নিয়ে যুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে সমুপস্থিত হলেন এবং দুইপক্ষের সেনার মধ্যে ঘোর যুদ্ধ হল। তালন প্রভৃতি বীর প্রচুর সেনা হত্যা করে সেই তিন শত্রুকে গৃহবন্দী করল। এ প্রকারে কিছুদিন মহাযুদ্ধ হল।।১১৬-১১৮।।
কালিয় অত্যন্ত দুঃখিত হয়ে ভগবান্ শ্রীহরির স্মরণ নিল এবং ভগবান্ শিবের থেকে মোহন মন্ত্র প্রাপ্ত হয়ে শত্রুগণকে মোহন করল।। ১১৯।।
বোধয়িত্বা তু কৃষ্ণাশং পঞ্চশব্দগজস্থিতম্। পুনস্তুষ্টাব জননীং সর্ববিশ্ববিমোহিনীম্। তদা তুষ্টা স্বয়ং দেবী বোধয়ামাস তাম্মুদা।।১২১।। আহ্লাদঃ সূর্যবর্মানং কালিয়ং চ ততেহনুজঃ। জঘানবলখানিস্তং তুন্দিলং জম্বুকাত্মজম্।।১২২।। তে তু পূর্বভবে বিপ্র জরাসন্ধঃ সকালিয়ঃ। দ্বিবিদো বানরঃ শূরঃ সূৰ্য্যবমেগহ চাভবৎ।।১২৩।। ত্রিশিরাস্তুন্দিলো জাতঃ শৃগালঃ স চা জম্বুকঃ। নিত্যবৈরকরাঃ সর্বে ভূপাশ্চাসন্মহীতলে।।১২৪।। হতেষু শত্রুপুত্রেষু দেবকী জম্বুকং রিপুম্। খড়েন তর্জয়ামাস পতিশোকপরায়ণা।।১২৫। কৃষ্ণাংশ শিরসী পিত্রোগৃহীত্বা স্নেহকাতরঃ। জম্বুকস্যৈব হৃদয়ে স্থাপয়ামাস বিহ্বলঃ।।১২৬।।
ইতিমধ্যে দেবী দেবকী নিজ পতিব্রত পুণ্যের বলে পুত্রগণের সমীপে উপগত হয়ে পঞ্চশব্দ গজস্থিত কৃষ্ণাংশকে বোধিত করেছিল। এরপর বিমোহিনী দেবীর স্তুতি করলে তিনি প্রসন্ন হয়ে সকলে বোধিত করলেন।।১২০-১২১।।
সংজ্ঞা ফিরে পেয়ে আহ্লাদ সূর্যবর্মাকে তার অনুজ কালিয়কে এবং বলখানি তুন্দিলকে হত্যা করল। হে বিপ্র, পূর্বজন্মে কালিয় জরাসন্ধ, সূর্যবর্মা শূর দ্বিবিদ এবং তুন্দিল ত্রিশির ছিলেন। তারা বর্তমানে ঐরূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং রাজা জম্বুক শৃগাল ছিলেন। এই সকল ভূপতিগণ পৃথিবীতে বৈরিতা সৃষ্টি করেছিলেন।।১২২-১২৪।
শত্রুপক্ষ হত হলে পতি শোকে কাতর দেবকী খড়ের দ্বারা জম্বুককে তর্জিত করেছিল।।১২৫।।
কৃষ্ণাংশ স্নেহ কাতর হয়ে পিতার শির গ্রহণ করে জম্বুকের হৃদয়ে স্থাপিত করেছিল।।১২৬।।
বিহস্যতৌ তদা তত্র প্রোচতুর্বচনং প্রিয়ম্। চিরং জীব হি কৃষ্ণাংশ গয়াং কুরু মহামতে। ইতি বাণী তয়োর্জাতা বলিনোঃ প্রেতদেহয়োঃ।।১২৭। খড়্গহস্তা চেদয়ামাস স্বপুত্রান্থৰ্ষসংযুতা।।১২৮।। হে পুত্রাঃ স্বপিতঃ শত্ৰুং জম্বুকং পুরুষাধমম্। খন্ড খন্ডং চ তিলশঃ কৃত্বানন্দসমন্বিতাঃ।।১২৯।। সংচূৰ্ণয়ত তদগত্ৰং তত্তৈলৈৰ্মদনির্মিতৈঃ। স্মাস্যাম্যহং তথেত্যুত্ত্বা রুরোদ জননী ভূশম্।।১৩০।। তথা কৃত্বা তু তে পুত্ৰা মহিষীং সসুতাং তদা। বলখানিযুতাস্তত্রায় চক্রুশ্চ তৎক্রিয়াম্।।১৩১।। তদা পরিমলং রাজ্ঞী দৃষ্ট্বা স্বামিনমাতুরম্। মরণায়োন্মুখং বিপ্র পঞ্চতত্বমগমন্মুনে।।১৩২।। তৎসুতা খড়্গগমানীয় বলখানিভুজং পতি। কৃতিত্বা মূৰ্ছয়িত্বা তং তৎপক্ষানন্বধাবত।।১৩৩।।
তারা তখন সহাস্যে বলেছিল–হে কৃষ্ণাংশ, তুমি চিরকাল জীবিত থাক। হে মহামতি, এবার তুমি দয়া করে যাও। সেই দুই প্রেত একথাই বলেছিল।।১২৭।।
দেবকী শিলাযন্ত্রে শত্রুকে সংস্থাপিত করে আনন্দিত হয়ে পুত্রকে বলেছিল–হে পুত্র তোমার পিতার শত্রু পুরুষাধম এই জম্বুককে তিলের ন্যায় খন্ডখন্ড করে তার গাত্র চূর্ণ কর।। ১২৮-১২৯।।
তার দ্বারা মহা নির্মিত তৈলে আমি স্নান করব। একথা বলে জননী প্রভূত রোদন করেছিল।।১৩০।।
তার পুত্রগণ সেকাজ করে জম্বুকের পুত্রের মহিষীকে সেখানে ডেকে পারলৌকিত ক্রিয়াকার্য করেছিল।।১৩১।।
মহিষী স্বামাকে মরণোন্মুখ দেখে সেখানে পঞ্চত্ব প্রাপ্ত হয়েছিল। তার পুত্রী খড়েগর দ্বারা বলখানির হস্ত ছেদন করে পলায়ন করল।।১৩২-১৩৩।।
তলনং দেবসিংহং চ রামাশং চ তথাবিধম্। কৃত্বান্যাংশ্চ তথা শত্ৰুন গচ্ছৎকলকত্তরা।।১৩৪।। কৃষ্ণাংশং মোহয়িত্বাশু মায়য়া চ সমাহরৎ। হতে তত্র শতে শূরে বলখানিরমর্ষিতঃ। তচ্ছিরশ্চ সমাহৃত্য চিতায়াং চ সমাক্ষিপ।।১৩৫।। তদা বাণী সমুৎপন্না বলখানে শৃণুম্ব ভোঃ। অবধ্যা চ সদা নারী ত্বয়া বধ্যা হ্যর্মিণঃ।।১৩৬।। ফলমস্য বিবাহে স্বে ভোক্তব্যং পাপকর্মণঃ। ইতি শ্রুত্বা তদা দুঃখী বলখানিযযৌ পুরম্।।১৩৭।। ততস্তু সৈনিকাঃ সর্বে মহাহৰ্ষসমন্বিতাঃ। শতোষ্ট্র ভারবাহ্যানি লুন্ঠয়িত্বা ধনানি চ।। ১৩৮।। মহাবতীং সমাজগুঃ কৃতকৃত্যত্বমাগতাঃ। হতশেষৈশ্চাৰ্দ্ধসৈন্যৈঃ সহিতা গেহমাযযুঃ।।১৩৯।।
তখন দেবসিংহ এবং রামাংশকে ঐরূপ করে অন্য শত্রুগণ চলে গিয়েছিল।।১৩৪।।
কৃষ্ণাংশকে মায়া মোহিত করে সমাহিত করল। সেখানে একশত শূর হত হলে বলখানি অমর্ষিত হয়ে গেল এবং তার শিরগ্রহণ করে চিতাতে ফেলে দিল।।১৩৫।।
সেই সময় আকাশে দৈববাণী হল হে বলখানি শোনো নারী সর্বদা অবধ্য। তুমি নারী হত্যা করে অধর্ম করেছো। এর ফল তোমাকে বিবাহের দ্বারা ভোগ করতে হবে। একথা শ্রবণ করে বলখানি পরম দুঃখে গৃহে চলে গেলেন।।১৩৬-১৩৭।।
অনন্তর সমস্ত সৈনিক মহাহর্ষে একশ উটের বহনযোগ্য ধনসম্পদ লুঠ করে কৃতকৃত্য প্রাপ্ত হল। যারা জীবিত ছিল তারা অবশিষ্ট সেনার সঙ্গে নিজগৃহে ফিরে গেল।।১৩৮-১৩৯।।