1 of 2

কুকুরদল – ৩২

অধ্যায় ৩২

শিয়াকে নিয়ে হোটেল ওয়ারিশানের সামনে মুহিব-শামীম যখন থামলো তখন প্রায় বিকাল। প্রথমেই সিঙ্গেল একটা রুম সাত দিনের জন্য নিয়ে নিলো শিয়া। তারপর লাগেজ রেখে এলো তিনতলার সামনের দিকের রুমটায়। আর তর সইছিলো না কারোই, হুড়মুড় করে আবারও নিচে নেমে এলো ওরা। যতো দ্রুত পা চালানো যায় চালিয়ে ঢুকে পড়লো পাশের চিল থাই রেস্তোঁরায় তিন মিনিট ধরে কেবল অর্ডারই দিলো ওরা। সকাল থেকে পেটে দানাপানি কিছু পড়েনি দুই বন্ধুর। আর শিয়ার ক্ষিধে পেয়েছে যাত্রাজনিত কারণে। মেয়েটি মনে হয় কয়েকদিন আগে রাতের ঢাকায় ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নিয়ে আর ভাবছে না। শামীমের পাজরের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনাও করেনি সে, তবে স্বভাবসুলভ রাগ রাগ ভাবটাও অনুপস্থিত। তার প্রাণচাঞ্চল্যের ভিন্ন অর্থ বের করলো মুহিবের লেখকসত্তা।

ভাইয়ের হত্যাকারীর ব্যবস্থা নিজ হাতে করার মতো একটা সুযোগ পেয়ে একেবারেই শান্ত হয়ে গেছে মেয়েটা! ‘অ্যাকশনে’ নেমেই তার মাথা পরিস্কার হয়ে গেছে। শিয়া যেন হঠকারীমূলক কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে বসতে না পারে সেদিকে একটা চোখ রাখার জন্য নিজেকে আবারও মনে করিয়ে দিলো মুহিব।

ওদের কেউ-ই অবশ্য জানলো না, রাস্তার অন্যপাশে লক্কড়মার্কা একটা টয়োটা অ্যালিয়ন পার্ক করা আছে। তার ভেতরে অসীম ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করছে একজন মানুষ। ওয়েটার যখন তাদের বিল নিয়ে আসছিলো, গাড়িটা স্টার্ট নেয়। ক্যাম্পাসের দিকে গাঁড়ি হাঁকিয়েছিলো নির্ঝর। জাকি বলেছে তার এখানে আপাতত কাজ শেষ।

ভরপেট খাওয়া শেষে নিচের সিগারেটের দোকান থেকে একটা ডানহিল কিনে আগুন ধরালো মুহিব। এরকম একটা মুহূর্তেই মনে হয় জীবন কতোই না সুন্দর, ভাবছিলো সে। শামীমকে এরকম কিছু বলতে যাচ্ছিলো, দেখলো বন্ধুর কানে ফোন। কারও সাথে কথা বলছে সে। চোখেমুখে চাপা উত্তেজনা। কাজেই পূর্ণ মনোযোগ সিগারেটে দেওয়ার চেষ্টা করলো মুহিব।

শিয়া পাবলিক প্লেসেই একটা গোল্ডলিফ ধরিয়ে ফেলেছে দেখে মনোযোগ পুরোপুরি টুটে গেলো অবশ্য।

“করছেন কি? এই মফস্বলে সাধারণ মানুষ মেয়েদের স্মোকিং খুব বাজেভাবে দেখে।”

“তাদের চোদার সময় বের করতে পারছি না। সরি।” সরাসরি উত্তর দিলো শিয়া।

এরপর আসলে কথা চলে না। এই মেয়ের মধ্যে চক্ষুলজ্জার কোনো ব্যাপার নেই, নেই বিনয়ের ন্যূনতম প্রকাশ। উদ্ধতভাবটা তার সাথে খুব যায়, তবে মুহিবের পর্যবেক্ষণী দৃষ্টিতে অন্য একটা বিষয় খটকা লাগছে। প্রথম যেবার শিয়ার সঙ্গে তার দেখা হয়েছিলো, ধানমণ্ডির বিকেলে-তখনও এমন এক আগুন সে লক্ষ্য করেছে। এই চরিত্রটি স্ফূলিঙ্গের মতো জ্বলতে এসেছে, ধীরলয়ে যাত্রার স্বভাব এর নেই। তবে প্রথম দেখায় যে ধরণের আগুন সে দেখেছিলো আজকের আগুনের সঙ্গে তার ফারাক আছে। এই আগুন কেমন যেন নিয়ন্ত্রিত, প্রায় বলা চলে শিয়ার ভেতরের আগুনকে কেউ যত্ন করে একটা আকার দিয়েছে।

ডানহিলে কয়েকবার জোরে টান দিয়ে মাথা থেকে অর্থহীন চিন্তাগুলো দূর করার চেষ্টা করলো মুহিব। আগুনের আবার আকার কি? বরং শিয়ার শ্যামবর্ণের সঙ্গে মেলামেশা করা চুলগুলো বিকেল-সূর্যের হলদেটে আলোয় চিকচিক করছে, সেই সৌন্দর্যের আগুন বিশ্লেষণ করা বেশি সহজ।

“হা করে তাকিয়ে না থেকে যেটা বলার বলে ফেলুন।” উদ্ধত বুক মুহিবের দিকে সামান্য এগিয়ে দিয়ে কর্তৃত্বপরায়ণ সুরে জানতে চাইলো শিয়া।

তোফায়েল-রেদোয়ানকে লোকেট করা মাত্রই আপনাকে জানাবো আমরা। তাদের দু’জনকে অনুসরণ করার জন্য আমরা দুইজন আছি।” শিয়ার চোখ উৎসাহে জ্বলে উঠতে দেখে মাথা নাড়লো মুহিব, “আমি আর শামীম। আপনি চাইলে তখন আসতে পারে আমাদের সাথে। তবে আমি রেকমেন্ড করবো একাকি ওদের কারও পেছনে লাগবেন না। তোফায়েল–রেদোয়ান নিশাচর। তারা সাধারণত রাতেই বের হয়-ফূর্তি ইত্যাদি করে। যদিও আমরা তাদের যে ধাক্কাটা দিয়েছি তারপর ফূর্তির দিকে তাদের মন থাকার কথা না।”

“তারা নিশাচর। সো হোয়াট?” গোল্ডলিফটা পায়ের নিচে ফেলে পিষে ফেললো শিয়া। চারপাশের মানুষ আড়চোখে তাকাচ্ছে ওদের দিকে। মেয়েটি তাদের পুরোপুরি উপেক্ষা করছে। মুহিবও তাকে অনুসরণ করার চেষ্টা করলো। সুবিধে বিশেষ হলো না। মানুষের ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকা আর ‘বিচার দিনের দৃষ্টি’ পতনকে অগ্রাহ্য করে বেশিক্ষণ থাকা যায় না।

“শুনেছি তারা কোন বারে গিয়ে মাঝে মধ্যে ফূর্তি-ফূর্তি করে। মেয়েদের সাথে অনৈতিক মেলামেশা আরকি। ঐ সব এলাকায় আপনার যাওয়া নিরাপদ না। আমি আর শামীম দেখবো রাতের ব্যাপারটা। দিনের বেলায় লিটুকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবো। টাকা তোলার ব্যাপার আছে। তখন আপনি ওদের ওপর নজর রাখতে পারেন।”

কাঁধ ঝাঁকালো শিয়া, মনে হয় মুহিবের বেশিরভাগ কথাই সে শুনতে পায়নি।

“মেয়ে নিয়ে ফূর্তি করে বললেন তো? এরা কি ফ্যামিলি গার্ল, নাকি প্রস্টিটিউট?”

“দুটোই হতে পারে।”

স্বতঃস্ফূর্ত ভঙ্গিতে জানতে চাইলো শিয়া, “এই শহরে মাগিপাড়াটা কোনদিকে?”

খুব কাছ থেকে যাওয়া এক পথচারীর কান-চোখ লাল হয়ে গেছে। জিভ কেটে সরে পড়লো একদিকে। তাকে অনুসরণ করবে কি না ভাবতে শুরু করেছে মুহিব।

“বলবেন না, নাকি জানেন না?”

“লালখালিতে একটা আছে। আমার জানামতে ঐটাই একমাত্র মাগিপাড়া শহরের।” তাড়াতাড়ি বলল মুহিব।

“গুড। আজকে রাতে ঐদিকে যাবো আমি, যখন আপনারা একজন রেদোয়ান আর আরেকজন তোফায়েলের পেছনে ব্যস্ত থাকবেন।”

প্রমাদ গুণলো মুহিব। এই মেয়ে হয়তো জুজিৎসু বা কারাতে জানে। শক্ত ধাঁচের নিজেকে রক্ষা করতে জানা মেয়ে হলেই যে মাগিপাড়া তাদের জন্য রাতের বেলায় নিরাপদ এমন তো নয়। তবে শিয়ার শক্ত চাউনি বুঝিয়ে দিলো এখানে আলোচনার কোনো স্থান নেই।

শামীমের ফোনে কথা বলা শেষ হয়েছে। ওদের দিকে হাসিমুখে এগিয়ে এলো সে। এরকম হাসি মানুষ হাসে এইচএসসি-তে গোল্ডেন ফাইভ পাওয়ার সংবাদ জানার পর, নয়তো স্ত্রীর বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে। পরিস্কার বিজয়ের হাসি।

“খবরটা বল।” শামীমের বাড়তি নাটুকেপনা ঠেকানোর জন্য সোজাসাপ্টা জানতে চাইলো মুহিব।

“জাকি ভাইয়ের সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম না? শামসভাইয়ের বিষয়টা নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম যে মনে আছে?”

“মনে থাকবে না কেন?” বিরক্ত হলো মুহিব। ড্রামা কিং শামীম তার নাটক শুরু করে দিয়েছে। আসল কথা না বলে অযথা ঝুলিয়ে রাখার চেষ্টা করা।

“জাকি ভাই এতোদিনে ইন্টারভিউ দিতে রাজি হয়েছেন। আশা করা যায় শামস হত্যার ব্যাপারে কোনো আলো ফেলতে পারবে এটা। আরও একবার প্রসঙ্গটা নিয়ে নাড়া চাড়া করার সুযোগ যখন পাচ্ছি থামা চলবে না। পয়ত্রিশ ক্রেডিটের আন্দোলনের সঙ্গে মার্ডারের জাস্টিফিকেশন যোগ করে দেওয়ার মতো আবেগ তুলে ফেলতে হবে।”

শামীমের মতো উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে পারলো না মুহিব। নিচু গলায় জানতে চাইলো, “এতোদিন পর? তূর্ণার হাত নাই তো?”

“হু কেয়ারস? আমরা সাবধানে থাকবো। চল।”

“এখনই?”

“হ্যাঁ। ছয়টার সময় অ্যাপয়ন্টমেন্ট দিয়েছে। এই সুযোগ প্রতিদিন পাওয়া যাবে না। ছয় মাস পর একবার পাওয়া গেছে। চল চল।”

শিয়া এগিয়ে এলো ওদের দিকে, “কোথায় যাচ্ছেন?”

“চেঞ্জ অব প্ল্যান। আজকে তোফায়েল-রেদোয়ান প্রজেক্ট বন্ধ। জাকি ভাই আমাদের শিডিউল দিয়েছেন। আনসার্টেইন তোফায়েলের পিছে না ঘুরে সার্টেইন জাকি ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলা যাক। দেখি কিছু বের করতে পারি কি না।”

“জাকি ভাইয়ের সাথে আমিও কথা বলতে পারি।”

“তা পারেন না। আপনি শামসভাইয়ের ছোটবোন। আপনার সঙ্গে তিনি খোলাখুলি অনেক কিছুই বলবেন না। আমাদের বলবেন।”

এই যুক্তিটা মেনে না নিয়ে উপায় রইলো না শিয়ার। মেয়েটি এতো সহজে কিছু মেনে নেবে তা ওরা কেউ-ই আশা করেনি। স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো একসাথে। তবে শিয়ার পরের কথাটা ওদের কারোই পছন্দ হলো না।

“ফাইন। তাহলে জাকি ভাইয়ের সাথে দেখা করে আসুন। আমি বরং আজ রাতে যাচ্ছি তোফায়েলের পেছনে।”

“এটা—” শামীম শুরু করেছিলো, তাকে ইশারায় থামিয়ে দিলো মুহিব।”ফাইন। আমরা তাদের লোকেশন জানা মাত্রই আপনাকে টেক্সট করে দেবো। কথা দিতে হবে, সাবধানে থাকবেন।

“মাগিপাড়ায় রাতের বেলা ঢু মারার গ্র্যান্ডপ্ল্যান থেকে এটা অনেক অনেক গুণ ভালো অন্তত, ভাবলো মুহিব।

*

শেরে বাংলা হলের ভেতর অনেকদিন পর ঢুকলো ওরা। ভেতরে ঢোকার সময় একে অন্যকে কনুই দিয়ে খোঁচা দিতে দিতে মনে করিয়ে দিলো, আর বেশিদিন নেই। এই হলেই অ্যালোট পাওয়ার কথা ওদের। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে হল লাইফ আলাদা রকম আনন্দ। এটা পাওয়ার জন্য অনেকদিন ধরেই উন্মুখ হয়ে আছে ওরা। অবশেষে সেই দিন কাছিয়ে আসছে।

তিনশ চার নম্বর রুমে জাকি ভাইয়ের গুহা। অনেকের বিশ্বাস জাকি ভাই হতে যাচ্ছে ভবিষ্যৎ সভাপতি। সন্দেহাতীতভাবে তার রুমমেট নির্ঝর ভাই আর মঞ্জুর ভাই হবেন দুই সহ-সভাপতি। এই ঘরটা তখন পাতিনেতাদের সকাল বিকাল হাজিরা দেওয়ার জায়গা হবে। পাতিনেতাদের মক্কা!

সভাপতির পদটা তোফায়েলের পকেটে না গিয়ে জাকি ভাইয়ের হলেই খুশি হবে মুহিব। সম্ভবত ক্যাম্পাসের অর্ধেক সাধারণ ছাত্র এতে করে হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে। তবে সাধারণ ছাত্রদের ইচ্ছে-অনিচ্ছায় তো আর ছাত্র সংগঠনের সভাপতি নির্বাচন হয় না। জাকি ভাই অন্য ‘সভাপতি দের মতো কাড়ি কাড়ি টাকার মালিক হয়েই ক্যাম্পাসের বাইরে বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে মৌজমাস্তি করে থাকবেন বলে মুহিবের বিশ্বাস হয় না। এই লোক পদ পেলেও এখানেই থাকবে। এই শেরে বাংলা হলে। তিনশ চার নম্বর রুমে। একারণেই জাকিকে শ্রদ্ধা করে মানুষ।

দরজা টোকা দিতেই খুলে গেলো। লম্বা ঝুটি করার মতো চুল এখন অগোছালো, অনেকগুলো গুচ্ছ জাকির কপালের ওপর স্বাধীনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকা পড়েছে কপালের কাটাদাগটা। তবে পুরোপুরি নয়। একাহারা দেহটা সরিয়ে ভেতরে ঢোকার ব্যবস্থা করে দিলো ভবিষ্যৎ ছাত্রনেতা।

ঘরের ভেতরটা খানিক অন্ধকার, এক কোণে একটা টেবিল ল্যাম্প ছাড়া আলোর আর কোনো উৎস নেই। চোখ পিটপিট করে অন্ধকার সয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলো ওরা। তিনটা টেবিল আর তিনটা খাট। বিলাসবহুল জীবনযাত্রার চিহ্ন নেই। মদের বোতল নেই। গাঁজার গন্ধ নেই। এটা কি আদৌ একজন সরকারদলীয় ছাত্রনেতার কামরা?

ওদের অবাক হয়ে চারপাশ দেখার সুযোগ নিয়ে নিজের খাটে আয়েশ করে বসে পড়েছে জাকি। তাকে টেবিল ল্যাম্পের আলোয় ভালো মতো দেখা গেলো। অন্ধকারে এক সাদা ভুত। সাদা শার্ট, বোতাম সবগুলো খোলা, কালো প্যান্ট। কপালে কৃত্রিম ভাঁজ। হাতে একটা স্মার্টফোন।

অস্ফূট একটা শব্দ করলো শামীম। তার দিকে ঘুরতে গিয়ে কামরায় উপস্থিত দ্বিতীয় মানুষটার দিকে চোখ পড়লো মুহিবের। পেটানো শরীর, এই মুহূর্তে খালি গায়ে বসে আছে সে। অন্ধকারে তার সুগঠিত দেহ আবছাভাবে দেখা যাচ্ছে। বাইরের আলো থেকে আসার পর তাকে প্রথমে নজরেই পড়েনি ওদের। ঘরের আলোকিত কোণে তার না থাকার কারণটা স্পষ্ট হলো হাতের দিকে চোখ পড়তে।

আবছা আলোতেও বিশালদর্শন পিস্তলটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।

“আমার ফ্রেন্ড মঞ্জুরকে তো চেনোই।” যেন কিছুই ঘটেনি এভাবে বলল জাকি।”এইদিকে চলে আসো তোমরা। তোমাদের সাথে অনেক আলাপ আছে।”

টেবিল ল্যাম্পের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। শামীম চাপা গলায় একবার বলল মুহিবের কথায় নাচতে গিয়েই তাকে এই বিপদে পড়তে হয়েছে বা এমন কিছু। তবে পিস্তলের মুখে দাঁড়িয়ে উন্নত শিরে উচ্চ করা যায় না রব!

ফোনটা তাদের দিকে বাড়িয়ে দিলো জাকি, স্ক্রিনে হোটেল ওয়ারিশানের সামনে ওদের তিনজনের হাই-ডিটেইলস ছবি। অবাক হওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেললো ওরা।

“তারপর? তোমাদের লগে শামসের বোন কি করে?”

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *