প্ৰথম খণ্ড - আদি পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
তৃতীয় পর্ব
দ্বিতীয় খণ্ড - চতুর্থ পর্ব
তৃতীয় খণ্ড
1 of 2

কীর্তিহাটের কড়চা – ৪.৪

গিরীন্দ্র ঘোষাল বীরেশ্বরকে তুমি বলেন। আজ তিনি রায় এস্টেটে এসেছেন পঁয়ত্রিশ বৎসর। বীরেশ্বরের জন্মও তখন হয়নি। সোমেশ্বর কীর্তিহাট থেকে যখন তান্ত্রিক শ্যামাকান্তের জলে ডুবে মৃত্যুর পর চলে আসেন তখন তিনি এসেছেন। মহিষাদলে গর্গ বাহাদুরদের এস্টেটে কাজ করতে করতে মহারাজা বাহাদুরের কোপদৃষ্টিতে প’ড়ে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন সোমেশ্বর রায়ের। বয়স ছিল তখন তরুণ। কিছু কিছু ইংরিজী শিখেছিলেন, পাটোয়ারী বংশের ছেলে। বাপ পিতামহ সকলেই গোমস্তা নায়েব ছিলেন। রায়দের এস্টেটে এসে সোমেশ্বরের আমলে তিনি অসাধারণ যোগ্যতার সঙ্গে জমিদারী চালিয়েছেন; পারমানেন্ট সেটেলমেন্টের নির্দিষ্ট ডৌল জমা—অর্থাৎ মহালের মোট আদায়ের উপর বৃদ্ধি করেছেন দু-দুবার, মাথট চলন করছেন মামুলী চাঁদা নাম দিয়ে। সব থেকে বড় কাজ করেছেন মহালের যত আবাদযোগ্য পতিত ছিল, সে পতিতগুলি ওইসব জঙ্গলের দুর্দান্ত চূয়াড়দের দিয়ে ভাঙিয়ে জমিতে পরিণত করেছেন। সেসব জমির উপর সেচের জন্য বাঁধ কাটিয়েছেন। ফলে জমিদারীর আয় দ্বিগুণে পরিণত হয়েছে। আর করেছেন, বেছে বেছে যেসব মহালে দুর্ধর্ষ প্রজার বাস, তাদের শাসন করতে না পেরে জমিদারেরা বিব্রত হয়েছে, সেইসব মহাল রায় এস্টেট থেকে খুব সস্তায় পত্তনী নিয়ে তাদের শাসন করে আয় এবং এলাকা দুই-ই বৃদ্ধি করেছেন। বীরেশ্বরের বাল্যবয়সে স্নেহবশে তাকে কোলেও ক’রেছেন। এবং তিনি সেকালে দুঃসাহসী সবল বালক বীরেশ্বরকে বড় ভালও বাসতেন। বলতেন—হ্যাঁ, এই তো বাঘ-বাচ্চা। এই তো খাঁটি জমিদার হবে। সুতরাং তুমি বলার তাঁর অধিকার ছিল। তবে পরে বীরেশ্বর সম্পর্কে তাঁর মত বদলেছিল। সোমেশ্বরের অন্তে তিনি কাজ ছেড়ে দেবেন ঠিক করেছিলেন; কিন্তু সোমেশ্বর তাঁকে মৃত্যুকালে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিয়েছিলেন যে বীরেশ্বর যতক্ষণ পর্যন্ত অমার্জনীয় অপরাধ না করবে ততক্ষণ তিনি কাজ ছাড়বেন না।

বিমলাকান্তকে সকলেই স্নেহ করত, তার সঙ্গে শ্রদ্ধাও করত, ঘোষালও করতেন। বিমলাকান্ত যখন বীরেশ্বরের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াবার জন্য স্বেচ্ছায় সব পরিত্যাগ করে চলে এলেন শুধু স্ত্রী বিমলার গহনা এবং তাঁকে দেওয়া টাকা নিয়ে, তখন ঘোষাল এবং স্মৃতিতীর্থ ভেবেছিলেন কাজ ছেড়ে দেবেন তাঁরা। কিন্তু বীরেশ্বর তাঁদের ডেকে বলেছিলেন—অন্যায় আমি করিনি ঘোষাল কাকা, স্মৃতিতীর্থর্মশায়। আমাদের বংশের দেবোত্তরে জামাই সেবায়েত হবেন এ হয় না। বাবা বিবাহের সময় অর্ধেক সম্পত্তি তাঁকে দিতে চেয়েছিলেন, সে তাঁর প্রাপ্য। বিমলাকান্ত চলে গেল, তার অংশ সে নিক। নেব না বলে সে মহত্ত্ব দেখাতে চেয়েছে। তার কারণ সে জানে ওই কমলাকান্তই সব পাবে। সে ভবিষ্যতের কথা, ভবিষ্যতে যা হয় হবে। আপনি আমাদের নিজস্ব সম্পত্তি দুভাগ করে তার আদায় যেমন দেখছেন দেখুন। খরচ বাদ দিয়ে লাভের টাকা বিমলাকান্তকে পাঠিয়ে দিন। তার সঙ্গে আমার বিবাদ কেন এ আপনাদের জানার ইচ্ছে থাকলেও জানতে চাইবেন না। আপনারা তাকে দেবতা মনে করেন, সাধু মনে করেন, করুন। আমার মতে সে মহাপাপী, সে শয়তান, আমার দিদির মাথাখারাপ তার জন্যে। একটা চালকলা-বাঁধা ভটচাজ বংশের ছেলে—নাতি—তাকে সহ্য করতে পারবে কেন রায়বংশের মেয়ে। কিন্তু সেসব কথা থাক। আমার অমার্জনীয় অপরাধ, এটা বিমলাকান্তের কাছে হতে পারে, কিন্তু আপনার কাছে নয়। বলুন বিবেচনা ক’রে বুকে হাত দিয়ে। যদি তা বলতে পারেন, আমি কিছু বলব না।

তা বলতে পারেন নি ঘোষাল।

ঘোষালের সঙ্গে আরও একজন ছিলেন, তিনি কালীমায়ের এবং রাজরাজেশ্বরের পূজক, রায়দের গুরুবংশের সন্তান রামব্রহ্ম স্মৃতিতীর্থ।

প্রশ্ন দুজনকেই করেছিলেন বীরেশ্বর। তাঁরা এর উত্তর দিতে পারেন নি। বীরেশ্বর বলে- ছিলেন–বলুন, আপনাদের অসম্মান করেছি? কি অন্যায় হয়েছে আমার আপনাদের কাছে?

রামব্রহ্ম স্মৃতিতীর্থ বলেছিলেন—কিন্তু বিমলাকান্তের প্রতি আক্রোশ তোমার অহেতুক। ধর্মবিচারে এ অন্যায়। আমরা মানুষ তো। এ অন্যায়ই বা আমরা দেখব কেমন করে? আমার পক্ষে এ সহ্য করা অত্যন্ত কষ্টকর! বিশেষ করে, আমি তোমাদের সংসারে বেতনভোগী পূজকই শুধু নই, তোমার পিতার গুরুবংশের জ্ঞাতি। তোমার স্ত্রী আমার কাছে দীক্ষা নিয়েছিলেন।

রাগে বীরেশ্বরের মুখ লাল হয়ে উঠেছিল। আত্মসংবরণের জন্যই তিনি কয়েক মুহূর্ত চুপ করে ছিলেন, তারপর বলেছিলেন—অকারণ ওইসব কথা তুলে কি লাভ বলুন? আমার স্ত্রী—। আবার চুপ ক’রে গিয়েছিলেন বীরেশ্বর। তারপর আবার বলেছিলেন—তিনি দীক্ষা নিয়েছিলেন, আপনি তাঁর গুরু। আমি ধর্ম ঈশ্বর মানি না। দীক্ষা আমি নিই নি, সুতরাং ও-দাবী আমার কাছে নাই করলেন। সম্পত্তি দেবোত্তর, বাবার দলিল অনুসারে দেবতার সেবাপুজা চালালে তবেই তার সেবাইত হিসেবে আমি সম্পত্তির মালিক। সত্য বলতে তার জন্যেই সেবাপূজা চালিয়ে যাই। ওসবে বিশ্বাস আমার নেই। এবং আমি সরে এলে বিমলাকান্ত নিষ্কণ্টক হয়ে দেবোত্তরের মালিক হবে, সেই কারণে ওটা আঁকড়ে ধরে আছি আমি। আমি জানি, আপনি বিশেষ ক’রে বিমলাকান্তের পক্ষপাতী। আমাকে খুব ভালচক্ষে দেখেন না। কিন্তু আপনাকে আমি একটি কারণে শ্রদ্ধা করি। আপনি সত্যবাদী আর নির্লোভ। বাবার কাছে তাঁর মৃত্যুর সময় কথা দিয়েছি আপনাদের সম্ভ্রম আমি হানি করব না। সে সম্ভ্রম হানি আমি করি নি করব না। আমি কথা দিচ্ছি, আমি কলকাতা গিয়ে বাস করব। এখানকার পূজাসেবা আপনারা চালাবেন। আমি হস্তক্ষেপ করব না। বিমলাকান্তের সঙ্গে আমার সম্পর্ক যাই হোক, আপনারাও তা নিয়ে কথা বলবেন না। বিবাহ আমি আর করব না। সম্পত্তি আপনাদের ওই বিমলাকান্তের পুত্রের হাতেই যাবে। আপনারা সেটা রক্ষা করে যান।

বীরেশ্বরের কীর্তিহাট ছেড়ে আসার এটাও একটা কারণ।

সেই অবধি গিরীন্দ্র ঘোষালই সম্পত্তি পরিচালনা করে আসছেন। তিন মাস অন্তর হিসাব আসে। মাসে মাসে রিপোর্ট আসে। বীরেশ্বর দেখেন সই ক’রে দেন এই পর্যন্ত। গিরীন্দ্র ঘোষালের পরিচালনায় এস্টেটের আয় প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।

* * *

গিরীন্দ্র ঘোষাল ঘরে ঢুকে বললেন—ভাল আছ তো বাবা?

বীরেশ্বর বললেন—বসুন। ভাল আছি বই কি। তবে বোধ হয় মোটা হয়ে যাচ্ছি একটু। হাসলেন।

গিরীন্দ্র বললেন—কিছু মেদ হওয়া ভাল।

বীরেশ্বর বললেন—এখানে তো ওখানকার মতো ঘোড়ায় পাঁচ-দশ মাইল ছুটবার সুবিধে নেই। ওখানে কুস্তি করতাম এখানে এসে তাও হয় না। সকালে উঠতে দেরী হয়, সন্ধ্যেতে আজ মিটিং, কাল এঁর বাড়ি নেমন্তন্ন, পরশু ওঁর বাড়ী। বিকেল থেকে সাজগোছ। হয় না। সাঁতার কাটারও সুযোগ নেই। গঙ্গার জলে স্নানে নোনা ধরে বলে।

গিরীন্দ্র বললেন—তা মোটা একটু হলেই বা। দেখতে তো ভাল লাগছে।

বীরেশ্বর হাসলেন। তারপর বললেন—হঠাৎ এলেন এমনভাবে, ওখানে কোন গোলমাল ঘটেছে নাকি?

—না—না। আমাদের গোলমাল কিছু নয়। তবে মহিষাদলের বড়ই বিভ্রাট। ঘোষ নায়েব বললে—ব্যাপারটা তুমি জান দেখলাম, সংবাদপ্রভাকরে ছাপা খবরটায় তুমি দাগ দিয়ে রেখেছ।

—শীলরা দখল করতে গিয়েছিল!

—হ্যাঁ। দখলও একরকম করেছে। মহারাজ লক্ষণপ্রসাদ রাজবাড়ীতে ছিলেন না। ওঁর মা মহারাণীসাহেবা ছিলেন। তিনি ফটক বন্ধ করে রেখেছিলেন। লোকজনও যথেষ্ট ছিল। শীলেদের লোক সেরিফের সারজেন্ট-টারজেন্ট নিয়ে গিয়েও ঠিক ভরসা পায়নি। শেষে ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবকে মেদিনীপুর থেকে এনে দখল নিয়েছে। মহারাণীসাহেবা দেওয়ান রামনারান গিরির বাড়ীতে উঠেছেন। এখন শীলেরা এই সম্পত্তি বিক্রী করবে; খবর পেয়েই আমি লোক পাঠিয়েছি, নিজে এসেছি তোমার কাছে। এ সম্পত্তি তো ছাড়া হবে না বাবা। চার-পাঁচ লাখ পেলেই শীলেরা ছেড়ে দেবে সম্পত্তি।

বীরেশ্বর চুপ ক’রে থাকলেন।

ঘোষাল বললেন—কাঁসাইয়ের ওপারে লাট কীর্তিহাটের তিনখানা মৌজা, তার ওপার থেকে একনাগাড় মহিষাদলের এস্টেট। ঘরের বাইরে খামারবাড়ীর মত লাগোয়া পরগনা। এ হাতছাড়া করলে, আর কখনও হবে না।

বীরেশ্বর রায় এবার বলেন-না ঘোষালমশায়, একমত হতে পারলাম না।

—কেন?

—মহিষাদলের ওঁরা সর্বস্বান্ত হবেন, আমি কিনব, এ হয় না। না। জমিদাররা এ দেশে এতেই মরছে মরবে। একজন জমিদার ফকীর হবে আর আমি রাজা হব, এটা বড় খারাপ ব্যাপার। ল্যান্ডহোল্ডারস অ্যাসোসিয়েশনে আমি ক’বারই বলেছি এ নিয়ে। বলেছি, এসব ক্ষেত্রে জমিদারদের উচিত বিপন্ন জমিদারকে রক্ষা করা। তা ছাড়া প্রাচীন বংশ। এটা উচিত হবে না। অন্তত আমি পারব না। আরও কথা আছে, এতবড় জমিদারী, অনেক টাকা রেভেন্যু। আদায় হোক-না-হোক জমিদারকে দাখিল করতে হবে। প্রজার কাছে খাজনা আদায় আগে হপ্তম পঞ্চম ছিল, তখন একরকম করে হত। ধরে এনে, মেরে, পিটে বুকে বাঁশ দিয়ে, মাঠের ধান ক্রোক ক’রে আদায় হত। এখন সব উঠে যাচ্ছে।

—উঠে গেলেও আছে এবং থাকবে। তা ছাড়া জমিদারী রাজত্ব দাপের, ও বাপের নয়। যার লাঠি তার মাটি। যার দাপ তার সাতখুন মাপ। প্রজাকে চিরকাল ঠেঙিয়ে খাজনা আদায় হয়, নাহলে হয় না, রায়ত চাষীসে দাতা নেহি, লেকিন—বিনা জুতিসে দেতা নেহি। ওসবের জন্যে ভেবো না। আর প্রতিবেশী, পাশের জমিদার রাজা, এইসব বলছ তুমি; বেশ তুমি না হয় না নিলে, কিন্তু নেবে তো একজন।

বীরেশ্বর বললেন-এর জন্য শীলদের যা দুর্নাম হয়েছে তার নমুনা তো কাগজে দেখছেন। কলকাতাতেও সুদখোর কুচক্রী বলে খুব দুর্নাম রটেছে।

—কিন্তু জন রবিনসন নিলে কি আমাদের খুব সুবিধে হবে বাবা?

চমকে উঠলেন বীরেশ্বর। —জন রবিনসন? জনি?

—হাঁ, রবিনসন সাহেব। যার শীল যার নোড়া তার ভাঙি দাঁতের গোড়া—এই জাতই হল ওই লালমুখোরা। বাবা, মীরজাফরই বলতে গেলে যুদ্ধ জেতালে। বিশ তিরিশ হাজার নবাবী ফৌজ। ঠুটো জগন্নাথ করে রেখে দিলে, তবে না কেলাইব সাহেব জিতলে! আর দেখ তাকেই শেষে ঠেলে ফেলে গোটা দেশ দখল ক’রে নিলে। ব্যবসা নিয়ে ছিল রবিনসন, কত্তাবাবু এখান থেকে নিয়ে গেলেন, নীলকুঠীর জন্যে টাকা দরকার যুগিয়েছেন। একটা কুঠী থেকে দুটো হল। টাকা রায়বাড়ীর। সুদ অবিশ্যি দিয়েছে। কিন্তু লাভ? লাভ তো মোটা করেছে। এখন ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাবে। শীলবাবুরা মহিষাদল মামলায় ডিক্রীতে দখল নিয়েছে শুনে জনি সাহেব কথা চালাচ্ছে। জমিদারী কিনবে। পাকা করবে ব্যবসা। মেদিনীপুর জমিদারী কোম্পানী নামে জমিদারী কোম্পানীও হচ্ছে।

বীরেশ্বর আবার আপন মনে যেন নিজেকেই জিজ্ঞাসা করলেন—জন রবিনসন জমিদার হবে?

ঘোষাল বললেন—কথা চলছে আমি দেখে এসেছি। আমিও লোক পাঠিয়েছিলাম। বলেছি—আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত যেন কথা পাকা করবেন না। তা অবিশ্যি করবেন না শীলেরা। ওঁরা মহাজন, টাকা বোঝেন; চোটাচুটি হলে দাম বাড়বে, এ জানেন। তুমি না বলো না বাবা। মহিষাদলের মহারাজা দেশের মানুষ; দেশের মানুষের সঙ্গে পারা যায়, পারা যাবে। আর এই লালমুখোরা যদি মহারাজার জায়গায় চেপে বসে তবে কীর্তিহাটে আমাদের ইজ্জত বাঁচিয়ে বাস করা দায় হবে।

বীরেশ্বর বললেন—হুঁ।

ঘোষাল বললেন—তোমার উপর জন সাহেব এখন খুব গরম। কি হয়েছিল বাঘ শিকারে গিয়ে সে জান তোমরা। তবে দেশে রটেছে, জন সাহেব বাঘ মারতে গিয়ে বাঘের হাঁকে ভিরমী খেয়ে পড়ে গিয়েছিল, তুমি বাঘ মেরে তাকে বাঁচিয়েছ। লোকে এই নিয়ে জন সাহেবের নামে ছড়া বেঁধেছে—“মামী মারলে হাঁক, জন বললে বাপ। পেন্টুল গেল ভিজে। রায় মারলে মামীকে বললে ধোপা বামীকে, সায়েবের পেন্টুলটা সোটার জলে সিজে।” হেসে ফেললেন ঘোষাল, বললেন—বাঘকে তো গাঁও গাঁওলায় লোকজনে মামা বলে! তা সেটা নাকি বাঘিনী ছিল, তাই বলে মামী। সাহেব মেদিনীপুর গিয়েছিল, সেখানেও খবর রটেছে। কারা নাকি চেঁচিয়ে বলেছে, মামী, বেটা এসেছে গো। ও মামী! জন সাহেব তাকে মারতে গিয়েছিল। সে এক কাণ্ড। তা সব রাগ গিয়ে পড়েছে তোমার ওপর। জমিদারী কিনে ঝগড়াঝাঁটি করবারই যে মতলব সায়েবের তাতে কোন সন্দেহ নাই। সায়েব যদি ওই জমিদারী কেনে, তবে শেষ পর্যন্ত কীর্তিহাট রক্ষা করা দায় হবে। রাঘব বোয়াল নয়, ওরা কুমীর।

দুহাত কপালে ঠেকিয়ে প্রণাম করে ঘোষাল বললেন—শুনি রাণীভবানী বলেছিলেন পলাশীর আগে, যে, খাল কেটে কুমীর এনো না। তা তিনি তো সাক্ষাৎ ভগবতীর অংশ ছিলেন, তাঁর বাক্যি কি মিথ্যে হয়? এ বাবা কুমীরকে ঢুকতে দেওয়া হবে!

বীরেশ্বর বললেন—ভেবে দেখি!

ঠিক এই সময়ে হাত আড়াই লম্বা দেওয়াল ঘড়িতে মিষ্টি আওয়াজে ঘণ্টা বাজতে লাগল। ঘড়ির দিকে তাকালেন বীরেশ্বর। সাতটা বাজছে। ঘরে ঘরে আলো জ্বেলে দিচ্ছে চাকরেরা। বড় একটা আঁকশিতে জড়ানো তেলে ভিজানো ন্যাকড়ায় জ্বালা আগুন—দেওয়াল- গিরি-ঝাড়লণ্ঠনের মোমবাতিতে ঠেকিয়ে জ্বেলে দিচ্ছে।

মাথার উপর জোড়া টানাপাখা টেনেই চলেছে পাংখাবরদার। আজ বেশ ঠাণ্ডা পড়েছে। প্রবল জলঝড়ের পর চমৎকার আবহাওয়া। পাখার হাওয়া আজ না হলেও চলে। মশার উপদ্রবটা এই জ্যৈষ্ঠের দশ-পনের দিন প্রচণ্ড কাঠফাটা রৌদ্রে মরে গেছে। যে কটা ছিল, তা আজকের জলঝড়ে গেল। তবে আজ পোকার উপদ্রব এরই মধ্যে থেকে শুরু হয়েছে। পাখা গজানো উই আর ডেয়ো পিঁপড়ে এরই মধ্যে আলোর ছটা পেয়ে ঘরে ঢুকে উড়ে বেড়াচ্ছে।

বীরেশ্বর তাকিয়ে পোকা ওড়া দেখছিলেন। ঘোষাল বললেন—তা হলে আমি এখন নিচে গিয়ে জিরুই। কিন্তু কালই আমাকে ফিরতে হবে। শীলদের বলে এসেছি, তিন-চার দিনের মধ্যেই খবর দোব।

যেতে যেতে দরজার মুখে ফিরে দাঁড়ালেন ঘোষাল। বললেন—ভালো ক’রে ভেবে দেখো বাবা। তামাম হিন্দুস্থানটা এই বেটা বড়লাট ডালহৌসি কেমন ক’রে খেয়ে ফেললে তা ভেবে দেখো। এরপর এই চুনোপুঁটী সাহেবগুলানও এমনি করে তামাম জমিদারী গিলবে, এ আমি বলে দিলাম বাবা।

বীরেশ্বর রায় দাঁড়িয়েই রইলেন। অন্যমনস্ক হয়ে গেছেন। মন একবার বলছে-কিনে ফেল মহিষাদলের জমিদারী। বাবু বীরেশ্বর রায় থেকে রাজা বীরেশ্বর রায় হও। দুর্দান্ত গৌরবে বেঁচে থেকে ভোগ ক’রে নাও। যত পার। টাকা আছে, ভোগে বাধা নেই, ভোগ তোমার পায়ের তলায় গড়াচ্ছে; হীরা-জহরৎ, বড় বড় ঘোড়া, ভাল ভাল গাড়ী, মদ, মেয়ে মানুষ সবই হতে পারে টাকায়। ইংরেজ বেশ্যা এসেছে, হোটেলে থাকে তারা। টাকা ফেললে তাদেরও পাওয়া যায়। কিন্তু হাজার হাজার লোকের সেলাম প্রণাম এ পাওয়া যায় না টাকায়। এই সেলাম প্রণামের সুখ ওসব সুখের চেয়েও বড় সুখ।

কিনে ফেল। ওতে আর দ্বিধা কর না। রাজা-না- মহারাজ বীরেশ্বর রায় বাহাদুর অব কীর্তিহাট! লাটসাহেবের দরবারে নিমন্ত্রণ পেতে ওকালতি তদ্বির করতে হবে না। লাটের খাতা আছে, যাদের নিমন্ত্রণ করতে হবে তার তালিকা আছে তাতে! তাতে মহারাজা অব কীর্তিহাটের নাম উঠে যাবে।

বীরেশ্বর রায় বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন।

.

সামনে পুবদিকের আকাশে পুর্ণিমার চাঁদ উঠছে। আজ স্নানযাত্রা গেল। আজ পূর্ণিমা। বিকেলের সে রাশি রাশি জমাট কালো মেঘের অবশেষ আর কয়েক টুকরো মাত্র জলে-ধোয়া আকাশে ভেসে যাচ্ছে দক্ষিণ থেকে উত্তরে। পুবদিকে সোনালী রঙের পূর্ণ চাঁদ একখানা বড় সোনার থালার মত নতুন বড়াশড়কের ওপাশে—ডিহি শেয়ালদহ আর ডিহি এন্টালীর সীমানার ওপাশে—ধীরে ধীরে আকাশে উপরে উঠছে। অকস্মাৎ তিনি অধীর অস্থির হয়ে উঠলেন। পূর্ণিমা তাঁর কাছে অত্যন্ত পীড়াদায়ক। ভবানীকে বিবাহ করে তিনি কলকাতার এই বাড়ীতে এসে উঠেছিলেন এমনি পূর্ণিমার দিনে। সেদিন ফুলশয্যার কথা। কিন্তু হয় নি, হয়েছিল পরের দিন। কারণ উদ্যোগ হয়ে ওঠে নি। তবে বাড়ীর মেয়েরা একটা আনন্দের আসর বসিয়েছিল। বীরেশ্বর রায় গান শুনে মুগ্ধ হয়ে যেচে বিয়ে করেছে, সে নিয়ে মেয়ে-মহলে তো বিস্ময়ের শেষ ছিল না। শুধু মেয়েমহলেই বা কেন, পুরুষদের মধ্যে বন্ধুবান্ধব যারাই শুনেছিল, তারাই বিস্ময়প্রকাশ করেছিল। এ নিয়ে কথা হয়েছিল অনেক। মেয়েরা বীরেশ্বর রায়কে ধরেছিল আমরা বউয়ের গান শুনব। বন্ধুবান্ধবেরা বলেছিল-কি বীরেশ্বর, তুমি নাকি কিন্নরী বিয়ে করে এনেছ? কিন্তু গান শোনাও!

বীরেশ্বর, তখন নবীন তরুণ বীরেশ্বর, পত্নীগৌরবে এবং আনন্দে পরিপূর্ণ, তিনিও মনে মনে চাচ্ছিলেন শোনাতে কিন্তু সে তো তিনি নিজে পারেন না। বাবা যে বর্তমান।

বলেছিলেন—তা আমাকে বললে কি হবে? বাবাকে বল!

সোমেশ্বর রায়কেই বা কে বলবে? বলেছিলেন তাঁর সম্পর্কীয়া এক ভগ্নী। রাজকুমারী কাত্যায়নীর আমল থেকেই এ বাড়ীর পোষ্য। কাত্যায়নীর মোসায়েবী করতেন। তাঁর পর বাড়ীর গৃহিণীর দায়দায়িত্ব তিনিই চালান। তিনি এসে সোমেশ্বরকে বলেছিলেন। সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন বিমলাকে, মুখপাত করে।

সোমেশ্বর ভাবিত হয়েছিলেন—রায়বংশ জমিদারবংশ, সেই বাড়ীর বউ গান শোনাবে, সেটা কি রকম হবে? জামাই বিমলাকান্তকে ডেকে পরামর্শ করেছিলেন, তাই তো গো বাবাজী, এ কি ক’রে হয়? মানে রায়বংশের বউ গান না হয় গাইতে পারে, কিন্তু সে গান দশজনকে শোনাবে, কি ক’রে হয়? সেটা কি উচিত হবে?

বিমলাকান্তের নিজেরও কৌতূহলের সীমা ছিল না। সঙ্গীতজ্ঞ বাপের ছেলে তিনি, উত্তরা- ধিকারসূত্রে সঙ্গীতে দখল তাঁর জন্মগত কিন্তু এ চর্চা সে ইচ্ছে করেই করেনি। তার মাতামহ বারণ করে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন-ও যেন বিমলাকান্ত না শেখে।

মাতামহের মৃত্যুর সময় বিমলাকান্ত ছোট ছিলেন। মাতামহী কথাটা তাকে প্রায় দুবেলাই বলতেন। গানের জ্ঞান নিয়ে যে জন্মায়—অনুরাগও তার জ্ঞানের সঙ্গে সহজাত। ছোট বিমলাকান্ত পুজোর সময় ঢাক বাজলেই দুটো কাঠি নিয়ে টিন বা কাঠ বাজাতে শুরু করতেন। কখনও একলা থাকলেই যা কিছু হোক নিয়ে তার উপর আঙুল দিয়ে শব্দ তুলে বাজনা বাজাতেন। কখনও গান ভাঁজতেন। মাতামহীর চোখে পড়লেই বলতেন—ও করতে নেই ভাই। ও করো না। ওতেই তোমার মায়ের কপাল তোমার কপাল খেয়েছে। বাপ বাউণ্ডুলে হয়ে চলে গেল। ও আর তুমি করো না।

একটু বড় হলে—অর্থাৎ সাত আট বছর থেকেই তিনি প্রশ্ন করতেন—কেন দিদিমা?

দিদিমা তাঁর বাপের কথা বলতেন, এবং সঙ্গে সঙ্গে বলতেন, তোমার দাদামশাই আমাকে বলে গিয়েচেন—দেখো গিন্নি, বিমল যেন ও পথ না ধরে। ওই পথকেই আমার ভয়। ও ধরলে আর কিছু হবে না! ও হল মদ ওর কাছে। বুঝেছ!

কথাটা শুনে শুনে তাঁর মনের মধ্যে গান সম্বন্ধে একটা আতঙ্কের মত কিছু জন্মে গিয়ে- ছিল। গান শুনলেই তাঁর মন যেন বাতাসের বেগে আগুনের মত ছুটতে চাইত। কিন্তু মনকে তিনি নির্বাপিত আগুনের মতো ক’রে হিম হয়ে বসে থাকতেন। এ আগুন নেভে না—ক্রমে ক্রমে বাতাসে আঙরার আগুনের মত ঝিকমিক করে উঠত, কিন্তু ইন্ধন তিনি যোগাতেন না। শ্বশুর সোমেশ্বর রায় ওস্তাদ রেখেছিলেন-বীরেশ্বর গান শিখতেন, কিন্তু বিমলাকান্ত বলতেন, না। ও আমার দিদিমার নিষেধ আছে। মধ্যে মধ্যে বড় ওস্তাদ এলে সে আসরের একপাশে বসে গান শুনতেন। বেশী ভাল লাগলে কয়েক দিন খুব উন্মনা হয়ে যেতেন। কিন্তু বীরেশ্বর বিয়ে ক’রে এনেছে—মেয়ের গান শুনে—এই কথা শুনে তাঁরও কৌতূহলের অন্ত ছিল না। শুনবার জন্যে তাঁরও প্রবল আগ্রহ হয়েছিল। মনেও সেদিন আনন্দের ছোঁয়াচ লেগেছিল। বীরেশ্বর তাঁর শ্যালক, সে বিবাহ করেছে। শ্যালকের বিবাহ! তা ছাড়াও বীরেশ্বর তাঁকে চালকলা-বাঁধা ভটচাজ বামুনের ছেলে,—ভীরু-শান্ত বলে যতই অবজ্ঞা করুন—বিমলাকান্ত তা করতেন না। তিনি বয়সে সম্পর্কে বড় ছিলেন, স্নেহ করতেন। কিন্তু শান্ত অথচ গম্ভীর চরিত্রের জন্য তাঁর সঙ্গে উল্লাসে হুল্লোড়ে মাততে পারতেন না। কিন্তু বিবাহের একটা রঙ আছে। সে রঙ শুধু বর-কনের মনেই লাগে না—পরিবারের পাড়ার আত্মীয়স্বজন সকল জনেরই মনকে রাঙিয়ে দেয় হোলির আবীরের মত।

বউটিকেও বড় ভাল লেগেছিল বিমলাকান্তের। গৌরী নয়, কিন্তু শ্যামবর্ণ রঙে মেয়েটি অপরূপ দেখতে। বার বার বলেছিলেন—ভারী ভাল বউ হয়েছে। ভারী ভাল। বীরা ভাই, তুমি জহুরী বটে। একেবারে খনি থেকে মণি—সমুদ্রে ডুবে মুক্তা খুঁজে বের করেছ। তারপর গানের কথা যা শুনলাম—মানে বীরাবাবু, তুমি মুগ্ধ হয়েছ যে গানে সে গান সে গলা যে কি তা অন্যে না বুঝুক আমি বুঝছি।

বীরেশ্বর বলেছিলেন—জামাইবাবু, আপনাকে তা হ’লে গোপনে একটা কথা বলি!

.

তখনকার কালে ভগ্নীপতিকে উপাধি ধরে তাতে মশাই যোগ করে সম্বোধনের রেওয়াজ ছিল। কিন্তু ভট্চাজ মশাই কথাটা জমিদারপুত্র-ইংরিজীনবীশ বীরেশ্বর রায়ের কানে বড় কটু ঠেকতো—মনে হত বুঝি পুরুত বা পুজুরী বামুনকে ডাকছেন। তাই বীরেশ্বর রায় ভগ্নীপতিকে জামাইবাবু বলতেন। জামাইবাবু বা ভগ্নীপতিকে দাদা বলার রেওয়াজ তখন ওঠেনি। তিনি সেদিন বিমলাকান্তকে বাসরঘরে গানের পালায় তাঁর নিজের গানে কালাকে ‘ক্লা’ করে মান বাঁচানোর কথাটা বলে বলেছিলেন—একটা মজার ব্যাপার জামাইবাবু, কখন যে ও বাজনার দুনের মধ্যে আমার ভুল করিয়ে দিলে, আমি বুঝতেই পারিনি, ঠিক তেহাইয়ের কাছ বরাবর এসে আমাকে সাবধান ক’রে দিলে হুঁ বলে একটা ইশারা দিয়ে, আমি ভাবলাম গেলাম। কিন্তু চট্‌ করে কালাকে ‘ক্লা’ ক’রে খাটিয়ে মেরে দিলাম। তা–কি সহবৎ ওর। বললে না যে ভুল আমার হল। বললে ও নিজে হেরেছে।

বিমলাকান্ত অবাক হয়ে বলেছিলেন—বল কি?

–এক বিন্দু বাড়ীয়ে বলিনি! একদিন ঘর বন্ধ করে গান শুনবেন। দেখবেন।

তখন বাড়িতে গান শোনার আগ্রহ পূর্ণিমার কোটালের বানের মত ডাক শুরু করে জাগতে শুরু করেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটা বীরেশ্বরের এলাকা পার হয়ে সোমেশ্বরের দরবারে এসে আছড়ে পড়েছে।

শ্বশুরেরও ইচ্ছে ছিল শুনতে। ঘরের বাইরে বা পাশের ঘরে বসে বউমার গান শুনবেন। কি এমন গায় যাতে তাঁর মদমত্ত হাতীর মত ছেলে বীরা একেবারে মোহিত হয়ে পড়ল। পুরোহিত রামব্রহ্ম স্মৃতিতীর্থ খবরটা শুনে হেসে বলেছিলেন—রায় মশায়, সংস্কৃত কাব্যে মদমত্ত অরণ্য-কুঞ্জর বশীভূত করা এক বাঁশির কথা শুনেছি। বধূটির কণ্ঠে তা হ’লে সেই বংশীধ্বনি বাজে। শ্রীমান বীরেশ্বর তো আমাদের মদশ্রাবী-দিকহস্তী গো। সোমেশ্বর হেসেছিলেন।

বাড়ীর মেয়েদের আবদার শুনে তাঁর সে ইচ্ছে প্রবল হয়েছিল,—তবুও বিমলাকান্তকে ডেকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন—তাই তো বাবাজী, এটা কি ঠিক হবে?

সব থেকে সমীহ ছিল তাঁর এই জামাইটিকে। যে ছেলে একালে যেকালে তান্ত্রিকেরা লতাসাধন করেন—ভৈরবী নিয়ে ঘোরেন, গৃহস্থদের রক্ষিতা থাকে, জমিদার ধনীদের বাঈজী থাকে—নাচগান জানা সেবাদাসী রাখলে শ্বশুরবাড়ীর রাজ-ঐশ্বর্য ছেড়ে পালায়, তাকে সমীহ না করে উপায় কি?

বিমলাকান্তও এক নিশ্বাসে সম্মতি দিতে পারেন নি—চক্ষুলজ্জা হয়েছিল। বলেছিলেন—হ্যাঁ, তা—।

—ওই তো! মানে রায়বাড়ীর নতুন বউ গান শোনাবে—! বিমলাকান্ত বলেছিলেন—অনুমতি করেন তো বলি।

—বল। জিজ্ঞাসাই তো করছি!

—দেখুন, রায়বাড়ীর বউয়ের মুখও তো আজকে ছাড়া কাল বা পরশু থেকে বাইরের লোক দেখতে পাবে না। কিন্তু আজ -তারপর কাল ফুলশয্যা লোকজন আসবেন, বউয়ের মুখ আজ কাল তো সবাই দেখবেন। তা-বউ গান জানেন—গান শুনে বীরেশ্বরভায়া বিবাহ করেছেন—এ ক্ষেত্রে বউ যদি আজ বাছাবাছি আপনারজনের মধ্যে গান শোনান, তাতে দোষের কিছু হবে বলে তো মনে হয় না।

সোমেশ্বর জামাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন—চমৎকার বলেছ। তুমি চমৎকার বলেছ। হ্যাঁ, তা হ’লে গাইতে পারেন। নিশ্চয় গাইতে পারেন। তোমরা ব্যবস্থা কর। তবে বাছাবাছা আপনার লোক। অন্দরের দরজা বন্ধ থাকবে। বাইরের লোকজন চলে যাবার পর বুঝেছ, দোতলায় হলঘরে-আসর করে গান শুনতে পার!

সেদিনও ছিল পূর্ণিমা তিথি।

ভবানী গান গেয়ে শুনিয়েছিল। বীরেশ্বর তানপুরা ধরিয়েছিলেন বিমলাকান্তকে। বলে- ছিলেন—উঁহু, আজ না বললে শুনব না।

নিজে তবলায় সঙ্গত করেছিলেন। বরাত করেছিলেন ভবানীকে, তুমি সেই গৌরী লউটি যায়ে, রোয়ে রোয়ে—, সেই গানটা গাও!

তাই গেয়েছিল ভবানী।

এই বারান্দায় পূর্ণিমার জ্যোৎস্না পড়েছিল।

বীরেশ্বর রায় আজও পূর্ণিমার চাঁদের দিকে তাকিয়ে অধীর অস্থির হয়ে উঠলেন। তাড়া- তাড়ি এসে ঘরে ঢুকে তিনি চাকরকে ডেকে বললেন-হুইস্কি নিয়ে আয়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *