কাঠঠোকরা
দপ্তর থেকে ইস্যু করা পাশ দেখিয়ে শেষ মুহূর্তেও একটা বার্থ পেয়ে গেল হরিপদ। এই ট্রেনের নাম দার্জিলিং মেল। আগে ছাড়ত সন্ধেবেলায়, এখন দশটার পরে। নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত যায়। অর্থাৎ কাল ট্রেন থেকে নেমে আবার তাকে বাস ধরতে হবে।
বারোটা বছর যেন হুস করে চলে গেল।
চালসার মোড়ে ফটিকের মুদির দোকানে গিয়েছিল হরিপদ। লিস্ট অনুযায়ী জিনিস কিনতে হবে। লিস্ট ধরিয়ে দিয়ে বিড়ি বের করে কানের কাছে টিপতেই কথাগুলো শুনতে পেল, ‘আমার যদি স্বাস্থ্য ভালো থাকত তাহলে জলপাইগুড়িতে চলে যেতাম।’
দ্বিতীয়জন বলল, ‘দূর। অত কষ্ট আমাদের জন্যে নয়। মিলিটারিতে ঢুকবে পাঞ্জাবি, গোর্খারা। আমাদের জন্যে কেরানির চাকরি ভালো।’
দুজনকেই চেনে হরিপদ। কাজকর্ম নেই, দিনরাত মোড়ে দাঁড়িয়ে আড্ডা মারে। সে জিজ্ঞাসা করল, ‘কী ব্যাপার গোরাদা?’
প্রথমজন বলল, ‘আজ এগারটা থেকে জলপাইগুড়ির চাঁদমারির মাঠে মিলিটারিতে সেপাই-এর চাকরির জন্যে লোক নেবে। খাওয়া-থাকা ফ্রি, প্লাস মাইনে। তোমার তো চেহারা ভালো। যাও না, কপালে থাকলে চাকরি পেয়ে যেতে পারো। আর কতকাল লোকের বাড়িতে চাকর হয়ে থাকবে!’
কথাটা একটুও ভালো লাগেনি হরিপদর। তাকে চাকর হিসাবে দ্যাখে না বুড়ো কর্তা। বুড়ো কর্তার মেয়ে, যিনি বিয়ে-থা করেননি, স্কুলে দিদিমণির কাজ করেন, সবাই তাঁকে বড়দি বলে তাই হরিপদও বড়দি বলে ডাকে, খুবই স্নেহ করেন। সেই আট বছর বয়সে বাবা-মায়ের সঙ্গে পূর্ববঙ্গ থেকে সীমান্ত পেরিয়ে এপারে আসার সময় সে দলছুট হয়ে গিয়েছিল। আজ অবধি নিজের বাবা-মাকে খুঁজে পায়নি। চ্যাংড়াবান্ধা থেকে চালসা চলে এসেছিল বাসে চেপে। খিদের জ্বালায় এবং ভয়ে কাঁদছিল ও রাস্তায় দাঁড়িয়ে। লোকজন অনেক প্রশ্ন করেও হদিশ না পেয়ে বুড়ো কর্তার কাছে পৌঁছে দিয়েছিল। বুড়ো কর্তা বলেছিলেন, ‘দেখে-শুনে চোর-ছ্যাঁচোড় বলে মনে হচ্ছে না। প্রকৃতই উদ্বাস্তু। থাক এ-বাড়িতে।’ দিদিমণি-মেয়েকে ডেকে বলেছিলেন, ‘দ্যাখো, মানুষ করতে পারো কিনা।’
হ্যাঁ, নাম সই করা আর অ আ ক খ এবং এ বি সি ডি-র বেশি বিদ্যে মেরে-ধরেও শেখাতে পারেননি বড়দি। কিন্তু ফাইফরমাস খাটার ব্যাপারে দক্ষতা দেখাতে লাগল হরিপদ। তেরো চৌদ্দতে ওই বাড়ির অপরিহার্য হয়ে উঠল। সংসারের যাবতীয় কাজের দায়িত্ব তখন থেকে তার ওপর। সেই সঙ্গে তার স্বাস্থ্য বৃদ্ধি পেল। বুড়ো কর্তা তাকে ব্যায়াম করতে শেখালেন। চৌদ্দ বছরেই তাকে সতেরো বলে মনে হত। বিড়ি খাওয়া ছাড়া আর কোনও শখ নেই। বুড়ো কর্তা প্রত্যেক মাসের এক তারিখে তার হাতে দশটা টাকা দিতেন। বলতেন, ‘পরিশ্রম করছ তার বদলে পারিশ্রমিক তোমার প্রাপ্য।’ কিন্তু বড়দি সেটা নিয়ে পাঁচটা টাকা দিয়ে বলতেন, ‘এটা তোর নামে পোস্ট অফিসে জমাব।’
সে বড় সুখের দিন ছিল। পাঁচ টাকায় রাজার মতো থাকা যেত। দুটো টাকার বিড়িতেই মাস চলে যেত। বাকি তিনটে টাকা খরচ করার জায়গা পাওয়া যেত না। সবই তো বাড়িতে পাওয়া যেত। মাসে চারদিন সোওয়া পাঁচ আনার টিকিট কেটে সিনেমা দেখতে শুরু করল সে। আর সেখানেই বাসন্তীর সঙ্গে আলাপ।
সে সিনেমা দেখতে যেত প্রত্যেক শুক্রবার ম্যাটিনি শো-তে। ওই সময় বুড়ো কর্তা ঘুমোন। বড়দি স্কুলে থাকেন। হাতের কাজ শেষ। তাই পাজামা শার্ট পরে সিনেমা হলে পৌঁছে সোওয়া পাঁচ আনার লাইনে দাঁড়িয়ে যেত। কিন্তু সেদিন গিয়ে দেখল তেমন দর্শক নেই। সামান্য ভিড়। একজন মধ্যবয়সিনী আর তরুণী একপাশেদাঁড়িয়ে আছে। হরিপদর মনে হল সিনেমাটা ভালো নয় বলে লোকে দেখতে আসেনি। সে কী করবে ভাবছিল এই সময় ওই মধ্যবয়সিনী এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনি কি টিকিট কিনবেন?’
সতেরো বছরের অভিজ্ঞতায় কেউ তাকে আপনি বলেনি। সে ঘাবড়ে গিয়ে মাথা নেড়েছিল, ‘না-না। আমি সোওয়া পাঁচ আনায় সিনেমা দেখি।’
‘আহা। আপনার কাছে টিকিটের দাম চাইছি নাকি! একটা টিকিট বেশি হয়েছে। কাউন্টার ফেরত নেবে না। কাকে বিক্রি করব, সেই লোক কেমন হবে, অন্ধকারে পাশে বসবে তো, তাই বাসন্তী আপনাকে দেখে বলল, বউদি, ওকে সরল বলে মনে হচ্ছে।’ মধ্যবয়সিনী বললেন। বিনা পয়সায় সিনেমা দেখার সুযোগ কে ছাড়ে! মধ্যবয়সিনী তার হাতে টিকিট গুঁজে দিয়ে
সঙ্গিনীকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলেন। সোওয়া পাঁচ আনা যখন বেঁচে গেল তখন সিনেমা হলের পাশের দোকান থেকে একটা চারমিনার সিগারেট দুই পয়সা দিয়ে কিনে ফেলল হরিপদ। বিড়ির বদলে সিগারেট ধরিয়ে নিজেকে বেশ সম্ভ্রান্ত বলে মনে হল।
হলে ঢোকামাত্র আলো নিভে গেল। লোক হয়নি বলে যারা টর্চ জ্বেলে সিট দেখিয়ে দেয় তারাও নেই ধারে কাছে। সোওয়া পাঁচ আনায় নাম্বার থাকে না, যে যেখানে পারে বসে পড়ে। কিন্তু দশ আনার টিকিটে–
‘এই যে, এদিকে, এখানে।’
ডাক শুনে তাকাল হরিপদ। একেবারে প্রান্ত-সিটে বসে আছেন মহিলা, পাশে মেয়েটি। আধা অন্ধকারে হাতড়ে-হাতড়ে সিটে গিয়ে বসতেই নাকে পাউডারের গন্ধ পেল হরিপদ। গন্ধটা আসলে মেয়েটির শরীর থেকে। সে দু-হাত গুটিয়ে একটু সরে বসল যাতে মেয়েটির শরীর দূরত্বে থাকে।
এখন সরকারি খবর দেখাচ্ছে। ইংরেজিতে ধারাবিবরণী চলছে যার বিন্দুবিসর্গ সে বুঝবে না। মেয়েটি বলল, ‘আপনি ভালো ভাবে বসুন না।’
‘ঠিক আছি।’
মধ্যবয়সিনী হাসলেন, ‘একে ঠিক বলে বুঝি! মনে হচ্ছে আমাদের অসুখ আছে, ছোঁয়া বাঁচাচ্ছেন আপনি!’
সোজা হল হরিপদ।
মধ্যবয়সিনী জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনার নাম?’
‘হরিপদ।’
‘ওর নাম বাসন্তী, আমি ওর বউদি।’
সিনেমা আরম্ভ হল। জঙ্গলের রাজার মেয়ে সখীদের নিয়ে গান গায়, খেলা করে। কিন্তু ছেলে দেখলেই খেপে গিয়ে তাড়া করে, শাস্তি দেয়। বাসন্তীর পাশে বসে হরিপদর বেশ লজ্জা করছিল, রাজকন্যার পরনের পোশাক যতটা না থাকলে নয় ততটা থাকায়। কোনও ছেলে তাকে প্রেম। নিবেদন করতে এলেই তাকে শাস্তি দিত রাজকন্যা।
‘কী নিষ্ঠুর!’ ফিসফিস করে বলেছিল বাসন্তী।
‘হুঁ।’ মাথা নেড়েছিল হরিপদ। ‘সব মেয়েই ওরকম না।’ বাসন্তী কানের কাছে মুখ এনে বলেছিল।
‘আমি জানি না।’
‘সেকি! জীবনে কোনও মেয়ে আসেনি?’
‘না।‘
বাসন্তী সেকথা তার বউদিকে জানাতেই চাপা হাসি শুনতে পেল হরিপদ। হঠাৎ বাসন্তীর ডান হাত অন্ধকারে হরিপদর বাঁ-হাত ধরল। ওরকম নরম তুলতুলে হাতের স্পর্শ জীবনে কখনও পায়নি। সে। ঠিক সেই সময় জঙ্গলের পাশের নদীতে কাঠ ধরে ভেসে আসা নায়কের জ্ঞানহীন শরীর আবিষ্কার করে ফেলল রাজকন্যার সখীরা। খবর পেয়ে রাজকন্যা এল। এই অবস্থায় কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। ভেজা পোশাক খুলে নায়ককে জাগাতে চেষ্টা চলল। কিন্তু পোশাক খোলার পর নায়কের সুগঠিত শরীর দেখে রাজকন্যার মুখ-চোখ বদলে গেল। পাশে বসে সে বুকে ঠোঁট ছোঁয়াতেই নায়কের জ্ঞান ফিরে এল। সঙ্গে-সঙ্গে বাসন্তী হরিপদর হাত টেনে তুলে নিজের বুকে ছুঁইয়ে আবার নামিয়ে আনল পায়ের ওপর। হরিপদর কান ঝাঁঝাঁ করে উঠেছিল। শরীরের সব রক্ত তখন তার মুখে। ওদিকে জ্ঞান ফিরে আসার পরে নায়ক রাজকন্যার প্রেম প্রত্যাখ্যান করল। সে দ্বীপ থেকে চলে যেতে চায়, কিন্তু রাজকন্যা তাকে ছাড়তে নারাজ।
‘বাসন্তী! উঠে আয়। উঠে আয় বলছি।’
অন্ধকারে কেউ একজন চাপা গলায় গর্জন করতেই বাসন্তী স্প্রিং-এর মতো উঠে হনহন করে বেরিয়ে গেল হল থেকে। সেই লোকটাও চলল ওর পেছন-পেছন।
হরিপদ খুব ঘাবড়ে গেল। সে যে মেয়েটার হাত ধরেনি, মেয়েটাই তার হাত ধরেছিল একথা। নিশ্চয়ই লোকটা জানবে না। কিন্তু অন্ধকারে কি লোকটা দেখতে পেয়েছিল? নিশ্চয়ই বাসন্তীর বাবা জানত না মেয়ে সিনেমা দেখতে এসেছে। লোকটা যদি তাকে চিনতে পারে তাহলে নিশ্চয়ই দিদিমণির কাছে নালিশ করবে। হাত-পা শিরশির করতে লাগল তার। সে চটপট হল থেকে বেরিয়ে যেতে চাইল। ঠিক তখনই মধ্যবয়সিনী বললেন, ‘চিন্তার কিছু নেই। তুমি এপাশে সরে বসো।’
‘লোকটা কে?’
‘বাসন্তীর মামা। হাড়ে বজ্জাত লোক। আমার ওপর খুব রাগ তাই ভাগনিকে ধমকে নিয়ে গেল।’ খুকখুক শব্দে হাসলেন মধ্যবয়সিনী।
‘আপনার ওপর রাগ কেন?’
‘বামন হয়ে চাঁদ ধরতে চাইলে আছাড় খেতেই হবে।’ মধ্যবয়সিনী হাসলেন, ‘আরে! এখনও তুমি ওখানে বসে আছ? লোকে কী ভাববে?’
অতএব বাধ্য হল হরিপদ। কানের কাছে মুখ এনে মধ্যবয়সিনী বললেন, ‘তুমি আমাকে বউদি বলে ডেকো।’
পুরো সিনেমা দ্যাখা হল না। হাফ টাইমে বউদি বললেন, ‘ভাল্লাগছেনা। তুমি কি পুরোটা দেখতে চাও?’
মাথা নেড়েছিল, ‘না।’
‘তাহলে চলো, বাড়ি যাই।’
বাইরে বেরিয়ে বউদি বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘চলো, আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসবে। বেশি দূর নয়, আধঘণ্টা লাগবে।’
বাসে চেপে নাগরাকাটায় পৌঁছাবার আগেই বউদি নেমে পড়লেন। পাশেই ফরেস্টের কোয়ার্টার্স। বেশ নির্জন জায়গা। কোয়ার্টার্সের পাশে কাঠের বাগানওয়ালা বাড়ি।
গেট খুলে ভেতরে ঢোকামাত্র একটা টেকো লম্বা লোক বেরিয়ে এল, ‘কী ব্যাপার, সিনেমা দেখলে না?’
‘ইস! কী বিশ্রি ছবি! বসে থাকা যায় না।‘
‘এটি কে?’
‘হরিপদ। খুব ভালো ছেলে।’ বউদি বললেন।
‘হরিপদ কী?’ লোকটা জিজ্ঞাসা করল।
‘হরিপদ ভট্টাচার্য।’ জবাব দিয়েছিল সে।
‘ও বামুনের ছেলে। বয়স কত?
‘সতেরো।’
‘তাই। এখনও গোঁফ-দাড়ি ওঠেনি। শোনো, আমাকে এখনই মালবাজারে যেতে হবে। কাজ
আছে।’
‘বেশি গিলো না।’
‘না-না।’
লোকটা বেরিয়ে গেল।
বউদি হাসলেন, ‘কাঠের ব্যাবসা করে। মালবাজারে যায় মাল খেতে।’
বাইরের ঘরে বসে বউদি জিজ্ঞাসা করল, ‘তা বলো, বাসন্তীকে কেমন লাগল?
‘ভালো।’
‘প্রেম-প্রেম করে পাগল হয়ে গিয়েছে মেয়েটা অথচ কোনও ছেলেকেই ওর পছন্দ হচ্ছিল না। তোমাকে আজ দেখামাত্র আমাকে বলল আলাপ করিয়ে দাও। দেখলাম, তোমার সঙ্গে মানাবে।’ বউদি হাসলেন, ‘কী খাবে বলো?’
‘কিছু না। আমি এখন বাড়ি যাব।’ হরিপদ বলল।
‘বাড়িতে কে-কে আছেন?’
‘দিদিমণি, বড়বাবু।’
‘বড়বাবু?’ বউদি অবাক হলেন, ‘বড়বাবু মানে?’
‘ওঁকে সবাই বড়বাবু বলে। অনেক বয়স হয়েছে তো। আগে এদিকের জমিদার ছিলেন। দিদিমণি ওঁর মেয়ে। বিয়ে করেননি, স্কুলে পড়ান।’ হরিপদ বলল।
‘তোমার সঙ্গে কী সম্পর্ক?’ বউদির কপালে ভাঁজ পড়ল।
‘আমি ওঁদের সব। আমার ওপর ওঁরা নির্ভর করেন।’
‘তোমার বাবা-মা কোথায়?’
‘জানি না। পাকিস্তান থেকে আসার সময় আমি হারিয়ে গেছি।’
‘মেয়েটা মরল! এখন কী করি!’ বিড়বিড় করলেন বউদি, ‘শোনো, তোমার এই পরিচয় যেন বাসন্তী জানতে না পারে। ও তোমাকে বিয়ে করতে চাইবে কিন্তু তুমি খাওয়াবে কী? কাজকর্ম করো না, পেটেও বিদ্যে নেই। আমি ভেবেছিলাম তুমি কলেজে পড়ো। শুধু চেহারা থাকলেই কি হয়? বরং চেষ্টা করবে বাসন্তীকে এড়িয়ে যেতে।’
‘আমার সঙ্গে ওর দেখাই হবে না। কোথায় থাকে তাই জানি না।’
‘মেয়েমানুষের মনে প্রেম এলে ঠিক খুঁজে বের করে। একবার তো দেখলাম তোমার হাত তুলে বুকে ছোঁয়াল। আগে রোজগার করো, টাকা জমাও তারপর এগোবে।
‘ঠিক আছে।’ হরিপদ উঠে দাঁড়াল।
সে যখন বারান্দায় চলে এসেছে তখন বউদি পেছন থেকে ডাকলেন, ‘শোনো, সামনের রবিবারের দুপুরে এখানে এসো তো।’
‘কেন?’
‘বাসন্তীর আসার কথা। একটু ফস্টিনস্টি করে ও যদি সুখ পায়, তো পাক। আমার হয়েছে জ্বালা।’
কেমন ঘোরের মধ্যে কেটে গিয়েছিল কয়েক দিন। দিদিমণির সন্দেহ হয়েছিল। জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘অ্যাই, তোর কী হয়েছে রে?’
‘আমার? কেন? কিছু হয়নি তো।’
‘কিছু হয়নি? সবসময় অন্য কথা ভাবছিস। বাইরে-বাইরে আর আগের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছিস না। সবসময় অন্যমনস্ক হয়ে থাকছিস?’
‘না, ভাবছি এখন থেকে আমাকে রোজগার করতে হবে।’ বলেছিল সে।
দিদিমণি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘তোর কী মুরোদ আছে রে রোজগার করবি?
কথাটা শুনে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সে তো কিছুই জানে না। পেটে বিদ্যে নেই কিন্তু গাড়ি চালাতে পারে এমন লোক এখানে ড্রাইভারি করে টাকা বানাচ্ছে। ড্রাইভারিটা যদি শিখতে পারে! খালাসির চাকরি করলে বাসন্তী যে তাকে পাত্তা দেবে না একথা হরিপদ বোঝে।
বুড়ো কর্তার কাছে গিয়ে মনের কথা বলল হরিপদ।
বুড়ো কর্তা তাকালেন, ‘এ তো ভালো কথা। পুরুষমানুষের তো রোজগারের চেষ্টা করা উচিত। ঠিক আছে, কথা বলব। চা-বাগানের গাড়ির খালাসির চাকরি পেলে ড্রাইভারের কাছ থেকে শিখে নিতে পারবে।’
আনন্দ হল খুব। প্রথম দিকে যদিও খালাসি হয়ে ঢুকতে হবে কিন্তু সেটা খুব বেশি হলে বছর খানেকের জন্যে। তারপর চা-বাগানের ড্রাইভারের পাকা চাকরি, কোয়ার্টার্স, আঃ।
*
পরের রবিবার দুপুরে বউদির বাড়িতে গিয়ে দরজায় শব্দ করল হরিপদ। কীরকম ভয় অথচ আনন্দ একসঙ্গে তাকে জড়িয়ে ধরেছিল। দরজা খুলল বাসন্তী, ‘এসো। তাড়াতাড়ি ভেতরে এসো না।’
ভেতরে ঢুকে হরিপদ জিজ্ঞাসা করল, ‘কেন?’
‘কেউ যদি দেখে ফেলে কী ভাববে! বউদি তো বাড়িতে নেই।’
‘নেই? কেন?’ ঘাবড়ে গেল হরিপদ।
‘বানারহাটে গিয়েছে বাবার সঙ্গে দেখা করতে।’
‘ও।’
‘চলো, ভেতরের ঘরে গিয়ে বসি। বউদি বলে গিয়েছে কেউ এলে তুই জানলা দিয়ে কথা বলবি, হরিপদকে যেন কেউ দেখতে না পায়।’ হাসল বাসন্তী।
ওর পেছন-পেছন ভেতরের ঘরে এসে দেখল একটা খাটে সুন্দর বিছানা পাতা আছে। তার একপাশেবসে পা ঝুলিয়ে বাসন্তী বলল, ‘তোমার সব ভালো শুধু নামটা ছাড়া।’
‘আমি কী করব।’
‘সত্যি, তোমার তো হাত নেই। আচ্ছা, সেদিন তুমি কিছু মনে করোনি তো? আমার মামাটা ওরকম। রাগলে চাঁড়াল। তোমাকে চিনতে পারেনি। কে তুমি জিজ্ঞাসা করছিল, আমি বলেছি। চিনি না। টিকিট কেটে যারা সিনেমা দেখতে যায় তাদের সবাইকে আমি কী করে চিনব!’ হেসে গড়িয়ে পড়ল বাসন্তী। তারপর সোজা হয়ে বসে গম্ভীর মুখ করে বলল, ‘আই লাভ ইউ।’
মাথা থেকে পা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বয়ে গেল। এই তিনটে ইংরেজি শব্দ সিনেমা দেখার দৌলতে
হরিপদর জানা।
বাসন্তী জিজ্ঞাসা করল, ‘তুমি?’
মাথা নাড়ল হরিপদ ‘হ্যাঁ।’ বলতে খুব আনন্দ হল।
‘আমাকে বিয়ে করবে তো?’
‘বিয়ে?’
‘আমি যাকে ভালোবাসব তাকে আমাকে বিয়ে করতে হবে।’
‘কিন্তু আমি তো এখনও রোজগার করি না।’
‘করো। একবছর টাইম দিলাম। তোমাকে ভালো লেগেছে বলে টাইম দিচ্ছি। নইলে আমার হ্যাঁ শুনতে চার-পাঁচজন লাইন দিয়ে আছে। একবছর পরে রোজগার করে বিয়ে করতে পারবে তো? তাহলে আমি সীতার মতো প্রতীক্ষা করব।’ বেণী নাড়াচাড়া করতে-করতে বলল বাসন্তী।
‘হ্যাঁ, পারব।’ বেশ জোরে জবাব দিল হরিপদ।
‘তুমি দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে কথা বলছ কেন? এখানে এসে বসো।’ হাত দিয়ে বিছানার একটা জায়গা দেখিয়ে দিল বাসন্তী।
হরিপদ পায়ে-পায়ে এসে বসল। দুজনের মধ্যে দূরত্ব আধ হাত।
বাসন্তী বলল, ‘সবাই বলে আমি ঠোঁটকাটা। সত্যি কথা স্পষ্ট বলা ভালো, তাই না?
‘হুঁ।‘
‘তাহলে বলি। বিয়ের আগে তুমি আমার গায়ে হাত দেবে না।’
‘ও!’
‘সিনেমার হিরোদের মতো অসভ্যতা যদি করতে হয় বিয়ের পরে করবে। তবে আমার ইচ্ছে হলে আমি হাত দিতে পারি। তখন তোমাকে একদম বাচ্চা হয়ে থাকতে হবে। রাজি।’
‘হুঁ।‘
‘তুমি খুব ভালো।’
এই সময় বাইরের দরজায় আওয়াজ হল। বাসন্তী উঠে দাঁড়াল, ‘চুপ করে বসে থাকো। আমি দেখছি কে এল!’
বাসন্তী প্রায় উড়ে গেল। ফিরেও এল চটপট, ‘সব্বোনাশ হয়েছে। বাবা এসেছে। আমি বলে
এসেছিলাম মাকে যে বউদির কাছে যাচ্ছি। সত্যি কিনা দেখতে এসেছে। তুমি, তুমি, পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাও। ওদিকে জঙ্গল আছে, আড়ালে-আড়ালে চলে যাবে। সামনের রবিবারের পরের রবিবার এখানে এসো।’
ঝটপট দরজা খুলে দিল বাসন্তী। হরিপদ পা বাড়াতেই হাত ধরে টানল সে। হরিপদ দাঁড়িয়ে পড়তেই কাঠঠোকরার মতো দুটো ঠোঁট ওর ঠোঁটে ঠুকে দরজা বন্ধ করল। জঙ্গলে ঢোকার পর হরিপদ শিহরিত। সে বারংবার নিজের ঠোঁট আঙুলে ছুঁয়ে নিচ্ছিল। ওরকম চুমু খাওয়ায় তার ঠোঁট টনটন করলেও নিজেকে নায়ক বলে মনে হচ্ছিল।
রাত্রে গোরাদার কথা মনে এল। জলপাইগুড়ির চাঁদমারির মাঠে মিলিটারিরা চাকরি দিচ্ছে। গোরাদা বলেছিল তার যে চেহারা তাতে চাকরিটা হয়ে যাবে। এই তল্লাটে তো একটাও মিলিটারি নেই কিন্তু ড্রাইভার প্রচুর। সে ড্রাইভার হলে লোকে ডাকবে তাকে হরি ড্রাইভার বলে। এমন কিছু আহামরি ব্যাপার নয়। কিন্তু মিলিটারিতে চাকরি করলে লোকে সমীহ করতে বাধ্য। সিনেমায় সে। দেখেছে। কিন্তু গোরাদার মুখে খবরটা সে শুনেছে বেশ কয়েকদিন হল। এখনও কি ওরা চাকরি দিচ্ছে? দেওয়া নিশ্চয়ই শেষ হয়ে গেছে। মন খারাপ হয়ে গেল হরিপদর। চাকরিটা পেলে একবছর কেন, ছ-মাসের মধ্যে বাসন্তীকে বিয়ে করে ফেলত সে।
পরের সকালে মোড়ে যেতেই গোরাদাকে দেখতে পেয়ে খুশি হল হরিপদ। তার প্রশ্ন শুনে গোরাদা খ্যাখ্যা করে হাসল, ‘তুই বেটা একটা গাধা। এতদিন ধরে ওরা জলপাইগুলির চাঁদমারিতে বসে থাকবে চাকরি দেওয়ার জন্যে?’
‘চলে গেল?’ মিইয়ে গেল হরিপদ।
‘এক জায়গায় কেন থাকবে? ঘুরে-ঘুরে লোক খুঁজছে। এই তো, আজও ওরা সেবকের কাছে মিলিটারি ক্যাম্পে লোক নেবে।’ গোরাদা বলল।
পকেটে দশটা টাকা ছিল। হরিপদ দেখল একটা বাস এসে দাঁড়াল যেটা সেবক ব্রিজ হয়ে শিলিগুড়িতে যাবে। দৌড়ে গিয়ে উঠে বসল সে বাসে। কন্ডাকটারকে জিজ্ঞাসা করল, ‘এটা সেবকের কাছে মিলিটারি ক্যাম্পের কাছে যাবে?’
‘যাবে।’
অনেক শারীরিক পরীক্ষা, দৌড়, লাফের পর একজন বাঙালি অফিসার তার নাম-ঠিকানা লিখে ফর্ম এগিয়ে দিল সই করার জন্যে। কাঁপা-কাঁপা হাতে সই করল হরিপদ। খাওয়া-দাওয়া, থাকা এবং ইউনিফর্ম বিনা পয়সায়। মাস গেলে একশো পঁয়তাল্লিশটাকা বারো আনা ছয় মাস পর্যন্ত। ততদিন ট্রেনিং চলবে। ট্রেনিং-এ পাশ করলে মাইনে বাড়বে। কিন্তু ট্রেনে উঠতে হবে আজ বিকেলে। অফিসার তাকে রেলের পাশ ধরিয়ে দিলেন সঙ্গে তিরিশটাকা, রাস্তায় খাওয়ার জন্যে। আজই ট্রেন ধরে যেতে হবে মীরাটে।
‘মীরাট? সেটা কোথায়?’
‘ওছ। ওখানে দাঁড়াও। আজ যারা রিক্রুট হয়েছে তাদের নিয়ে গাড়ি যাচ্ছে স্টেশনে। ওদের সঙ্গে চলে গেলে মীরাট কোথায় দেখতে পাবে। সেখানেই ট্রেনিং হবে।’
‘আজই যেতে হবে?’ হঠাৎ চৈতন্য ফিরল হরিপদর।
‘হ্যাঁ। না গেলে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট বের করা হবে তোমার নামে। জেলে যেতে হবে।’
তখন দুপুর দুটো। খিদেয় পেট চোঁ-চোঁ করছে। ওদিকে বাড়িতে নিশ্চয়ই এতক্ষণে হইচই পড়ে গেছে। কোথাও খুঁজে না পেয়ে মাথায় হাত দিয়েছে বড়দি। আজ যদি মীরাটে যেতে হয় তাহলে খবরও পাবে না ওরা। মীরাট থেকে কি সামনের রবিবার ফেরা যাবে?রবিবার তো সব চাকরিতেই ছুটির দিন। একবার ভাবল, দরকার নেই চাকরির। ফিরেই যাই। সঙ্গে-সঙ্গে বাসন্তীর মুখ মনে পড়ল। বিয়ের আগে ওকে ছোঁয়া যাবে না। বিয়ে করতে হলে চাকরি চাই। তাছাড়া ফিরে গেলে মিলিটারিরা তাকে ধরে এনে জেলে পুরে দেবে।
সেই সন্ধেবেলায় ট্রেনে বসে হরিপদ তারই মতো চাকরিতে ঢোকা শিলিগুড়ির একটি ছেলের মুখে শুনতে পেল মীরাটে পৌঁছাতে তিনরাত দু-দিন লেগে যাবে। আগামী একবছরের মধ্যে বাড়ি ফেরা যাবে না। মনে হয়েছিল ট্রেন থেকে লাফিয়ে পড়তে। একবছর তাকে না দেখতে পেয়ে বাসন্তী যদি অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলে?
আজ ফেরার ট্রেনে বসে মনে হচ্ছিল, বারোটা বছর যেন হুশ করে কেটে গেছে। প্রথমে মীরাট, তারপর পাকিস্তান-সীমান্ত। শেষে জাহাজে চেপে মধ্য এশিয়ায়। জাতিসংঘের শান্তিবাহিনিতে ভারতীয় সেনা হিসেবে থেকেছে এতকাল। বছরের ছুটি নেয়নি। নিলেও ঘুরে বেড়িয়েছে। আশেপাশে। ধীরে-ধীরে পালটে গেছে হরিপদ। তাকে এখন সবাই হ্যারি বলে ডাকে, সে খুশিও হয়। বারো বছর পর তার চাকরি শেষ। অনেক-অনেক টাকা জমে গেছে ইতিমধ্যে। তা ছাড়া প্রাক্তন জোয়ান হিসেবে ব্যাবসা করলে সরকারি সুযোগ পাবে, পাবে কোনও সংস্থায়। সিকিউরিটির চাকরি। সবে তিরিশে পড়া শরীরটা এখন লোহার মতো শক্ত, হিলহিলে।
বড়দি তাকে দেখে কী বলবে?বুড়ো কর্তা কি বেঁচে আছে? দুবাই থেকে একটা চিঠি লিখেছিল সে। বাংলা-ইংরেজিতে মিলে মিশে লেখা চিঠিতে বড়দিকে সব জানিয়ে ক্ষমা চেয়েছিল। সেই চিঠির কোনও উত্তর সে পায়নি।
শিলিগুড়ি থেকে বাস বদলে যখন সে চালসায় পৌঁছাল তখন দুপুর। দুটো বড় স্যুটকেশ নিয়ে বাস থেকে নেমে সে হতভম্ব। একদম বদলে গিয়েছে জায়গাটা। কত দোকান, কত ঘরবাড়ি। একটা রিকশাওয়ালা চলে এল পাশে, যাবেন বাবু?’
স্যুটকেস নিয়ে রিকশায় উঠল হরিপদ। ওই তো বংশীদার চায়ের দোকান। সে রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘বংশীদা কেমন আছে?
‘কোন বংশী? চা-ওয়ালা?’
‘হ্যাঁ।’
‘মরে গেছে। চার-পাঁচ বছর আগে। দোকান কিনেছে গোরাদা।’
‘গোরাদা? গোরাদা চা-ওয়ালা হয়ে গেছে?
‘আপনি চেনেন?’ প্যাডেল ঘোরাতে-ঘোরাতে জিজ্ঞাসা করল রিকশাওয়ালা।
‘বাঁ-দিক দিয়ে চলো। আমি বারো বছর আগে এখানে থাকতাম।’
‘বাপস। এরমধ্যে যে কত লোক মরে গেছে।’
বাড়ির সামনে রিকশা দাঁড় করাল হরিপদ। বিরাট বাড়িটার সব দরজা-জানলা বন্ধ। বহুদিন মেরামত দূরের কথা, রং করা হয়নি। ‘এই বাড়িতে যাবেন নাকি?’ রিকশাওয়ালা জিজ্ঞাসা করল।
‘হ্যাঁ।’
‘বাড়িতে তো কেউ নেই।’
‘তার মানে?’ হাঁ হয়ে গেল হরিপদ।
‘পাঁচ বছর হল এরকম তালাবন্ধ পড়ে আছে।’
‘বুড়ো কর্তা?’
তিনি গত হয়েছেন বহুঁকাল আগে। পাঁচ বছর আগে বাড়িতে ডাকাতি হয়। মাঝরাত্তিরে। দিদিমণিকে ডাকাতরা মেরে পালিয়ে যায়। পুলিশ আসে পরের দিন। বডি তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় দরজায় তালা দিয়ে গেছে। আর কেউ আসেনি। তা আপনি যদি ওদের কেউ হন তাহলে থানায় চলেন।’ রিকশাওয়ালা বলল।
ওপাশ থেকে এক প্রৌঢ় আসছিলেন। হরিপদ চিনতে পারল, জগন্নাথ কাকা।
রিকশাওয়ালা তাঁকে ডাকল, ‘ইনি এ-বাড়িতে এসেছিলেন।’
‘কে? মানে, পরিচয়টা?’
‘আমি হরিপদ।’
‘হরিপদ? ও হো, তুমি! তুমি তো পালিয়ে গিয়েছিলে।’
মুখ নামাল হরিপদ। জগন্নাথবাবু বললেন, ‘তুমি থাকলে দিদিমণি এমন অঘোরে মারা যেত না। মাঝরাত্রে ডাকাত এসেছিল। আমরা কেউ টের পাইনি।’
‘দরজা ভেঙেছিল?’
‘না। বোধহয় চেনা লোকের নাম বলেছিল। তাই শুনে দিদিমণি দরজা খুলে দিয়েছিলেন। কিছু মনে করো না, লোকে বলে তোমার নাম বলেছিল ডাকাতরা।’
‘সেকি! আমি তো তখন দুবাইতে ছিলাম।’
‘তা থাকতে পারো। কেউ যদি নাম ব্যবহার করে তো কি করা যাবে।’ জগন্নাথবাবু বললেন তুমি বরং থানায় যাও, ওরা যদি এখানে থাকতে দেয় তো দেবে।’
রিকশা ঘুরিয়ে বাসস্ট্যান্ডে এল হরিপদ। মনে হচ্ছিল তার পৃথিবী এখন ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। কী হবে থানায় গিয়ে! যদি পুলিশ অনুমতিও দেয় তাহলে ওই বাড়িতে সে একা কী করবে? কিন্তু। সত্যি কি ডাকাতরা তার নাম বলে দরজা খুলিয়েছিল? তার নাম জানবে কী করে? এটা নেহাতই লোকের কল্পনা।
দরজা খুললেন যে প্রবীণা তিনিই যে বউদি তা ঠাহর করতে সময় লাগল। পরিচয় দিতে অনেক চেষ্টায় মনে করতে পারলেন মহিলা, ‘ও। তুমি? এতকাল কোথায় ছিলে? সঙ্গে স্যুটকেশ দেখছি। তোমার সেই মেয়ে, বাসন্তী, এখন জোড়হাটে। ছেলেপিলে নিয়ে সংসার করছে? তাতে কী! ভাত ছড়ালে কাকের অভাব হয় নাকি? আমার হাতে গোটা চারেক আছে। তারা শরীর চাইলে শরীর দেবে হাজার টাকায়, মন দেবে না বোকা বাসন্তীর মতো!’
স্যুটকেশদুটো নিয়ে হাইওয়ের পাশে চলে এল হরিপদ। দূরে বাস দেখা যাচ্ছে। কোথাকার বাস, কোথায় যাচ্ছে জানার দরকার বোধ করল না। উঠে পড়ল।