কাঠকয়লার আগুন – ২২

বাইশ

অনেকটা বমি করল সদানন্দর বউ। কিন্তু তা সত্ত্বেও তার নাড়ি স্বাভাবিক হচ্ছিল না। সদানন্দর নিয়ে আসা ব্যাগ থেকে ওষুধ বের করে গুলে খাইয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্তচাপ স্বাভাবিকের ধারেকাছে নেই। শেষ পর্যন্ত বনবিহারী বললেন, ‘ওকে এখনই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া দরকার।’

সদানন্দ হকচকিয়ে গেল, ‘হাসপাতাল!’

‘এখনই নিয়ে যান।’

‘কিন্তু যেতে তো অনেক সময় লাগবে। ওকে তো বাসে নিয়ে যাওয়া যাবে না, গাড়ি ভাড়া করতে হবে। ততক্ষণ—!’

বনবিহারী উঠে দাঁড়ালেন। ‘ততক্ষণ উনি ঠিক থাকবেন।’

সদানন্দ হাতজোড় করল, ‘ডাক্তারবাবু, আপনিও চলুন আমাদের সঙ্গে।’

বনবিহারী মাথা নাড়লেন, ‘না ভাই, কয়েকটা জরুরি কাজ আছে, আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়।’

‘তাহলে আমি যতক্ষণ গাড়ি না নিয়ে আসছি ততক্ষণ এখানে থাকুন।’ সদানন্দ কাতর গলায় অনুরোধ করায় বনবিহারী আবার বসলেন।

আলমারি খুলে দ্রুত টাকাপয়সা নিয়ে বেরিয়ে গেল সদানন্দ।

সে স্ত্রীলোকটি তখনও সদানন্দর বউয়ের পাশে দাঁড়িয়েছিল, সে বলল, ‘খুব ভালো হল। এই রুগিকে হাসপাতালে দেওয়াই উচিত। ডাক্তারবাবু, আপনি তো আছেন, আমি সংসার ফেলে চলে এসেছি, আমি যাই।’

বনবিহারী কিছু বললেন না। স্ত্রীলোকটি সদানন্দর বউয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, ‘চিন্তা কোরো না, কালই ভালো হয়ে বাড়ি নিয়ে আসবে। চলি।’

স্ত্রীলোকটি চলে গেলে সদানন্দর বউ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকল কিছুক্ষণ। বাইরের বাগানের গাছে ঘুঘু ডাকছে। বনবিহারীর মন স্থির হচ্ছিল না। এতক্ষণে সন্তানকে নিশ্চয়ই থানায় নিয়ে গেছে বড়বাবু। কিন্তু ওর শরীরের যে অবস্থা তাতে বেশিক্ষণ বসে থাকাও সম্ভব নয়। ওকে যদি পুলিশ হাসপাতালে ভরতি করে দেয় তাহলে—! বনবিহারী ভাবলেন, এখান থেকে বেরিয়ে আবার থানায় গিয়ে বড়বাবুকে ওই অনুরোধ করবেন। কাগজে পড়েছেন, কত বড় বড় অপরাধীকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে রাখা হয় চিকিৎসার জন্যে। অবশ্য পুলিশ তখন পাহারা দেয়।

‘ডাক্তারবাবু!’ সদানন্দর বউ দুর্বল গলায় বলল।

সামনে তাকালেন বনবিহারী। সদানন্দর বউ খানিকটা সরে এসেছে।

‘হ্যাঁ!’ বনবিহারী বললেন।

‘আমি কি মরে যাব?’ কাতর গলায় বলল সদানন্দর বউ।

‘দূর! হাসপাতালে গেলে ওরা পাম্প করে পেটে যা আছে তা বের করে দেবে। বিকেলেই চলে আসতে বলবে।’ বনবিহারী হাসলেন।

‘কিন্তু আমার বুকে এরকম হচ্ছে কেন?’

‘কী হচ্ছে?’

‘চাপ লাগছে, ব্যথা করছে। আপনি কিছু করুন।’

বনবিহারী ব্যাগ থেকে স্টেথো বের করে একপ্রান্ত কানে লাগিয়ে অন্যপ্রান্ত সদানন্দর বউয়ের বুকে সামান্য চেপে পরীক্ষা করতে চাইলেন। কয়েক সেকেন্ড পরে ওটা সরিয়ে রেখে বললেন, ‘কই, আমি তো অন্যরকম কিছু পাচ্ছি না।’

‘করছে। এই এখানটায়। দেখুন।’ হাত বাড়িয়ে বনবিহারীর ডান হাত টেনে নিয়ে জামার ভেতরে ঢুকিয়ে স্তনের ওপর রাখল সদানন্দের বউ। একটু হকচকিয়ে গেলেও বনবিহারী স্তন স্পর্শ করে বললেন, ‘না কিছু হয়নি। মনের ভুল।’

হাতটা চেপে রেখেছিল সদানন্দের বউ শক্ত করে। বলল, ‘আমার শরীর কি খুব খারাপ, বলুন, খুব খারাপ?’

‘এ কথা কেন?’

‘আপনার যে একটুও ইচ্ছে করছে না আদর করতে!’

বনবিহারী এক মুহূর্তের জন্য দুর্বল হলেন, ‘এই অসুস্থতার সময়—!’

‘মোটেই না। আমি একটুও অসুস্থ নই। আমাকে আদর করুন।’

‘কী বলছেন আপনি?’

‘আপনি কিছু বোঝেন না কেন? আপনাকে পাওয়ার জন্য আমি কত কী করেছি! যেচে আপনাকে খাবার পাঠিয়েছি।’

‘আপনি যে বললেন কীসব শেকড় খেয়েছেন!’

হাসল সদানন্দের বউ, ‘মিথ্যে বলেছি। পেটের যন্ত্রণার কথা বললে কাউকে প্রমাণ দিতে হয় না। তাই বলে আপনাকে ডাকতে ওকে পাঠিয়েছিলাম। বিধাতার ইচ্ছে ছিল বলে আপনি নিজেই চলে এসেছেন। আমাকে আদর করুন, যা ইচ্ছে হয় তাই করুন। আমি আপনার দাসী হয়ে সারাজীবন থাকব।’ পাগলের মতো বনবিহারীর হাত দুই স্তনের ওপর নিয়ে গিয়ে চেপে ধরল সদানন্দের বউ।

বনবিহারী বললেন, ‘তারপর?’

লাজুক হাসি হাসল সদানন্দের বউ, ‘আমার কোলে ছেলে আসবে।’

এবার জোর করে হাত সরিয়ে নিলেন বনবিহারী। ঠিক তখনই বাইরে গাড়ির আওয়াজ হল। বনবিহারী বললেন, ‘তাহলে আপনাকে হাসপাতালে যেতে হবে না।’

‘আপনি কি ওকে সত্যি কথা বলে দেবেন?’

প্রশ্নটা করা মাত্র সদানন্দর গলা পাওয়া গেল। ‘গাড়ি এনেছি। ও কি নিজে হেঁটে গাড়িতে উঠতে পারবে?’

‘তার দরকার হবে না।’ বনবিহারী বললেন।

‘মানে?’

‘একটু আগে অনেকটা বমি করেছেন। ভেতরে যা ছিল তার সবটাই বেরিয়ে গেছে। এখন একটু ঘুমালেই ঠিক হয়ে যাবেন। ওঁকে আর হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে না।’ বনবিহারী কথাগুলো বলতে বলতে লক্ষ করলেন সদানন্দের বউয়ের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটেই মিলিয়ে গেল। সদানন্দ বলল, ‘উঃ। খুব বাঁচান বাঁচা গেল।’

‘আমি চলি।’ বনবিহারী পা বাড়াতেই সদানন্দ বলল, ‘ডাক্তারবাবু, আপনার ফি—!’

‘এখন থাক। আসছি।’

‘তাহলে গাড়িটা আপনাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসুক।’

‘দরকার হবে না।’

রিকশা ছিল না। হনহনিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন বনবিহারী। তিনি বয়স্ক মানুষ। ঠিক সময়ে বিয়ে করলে ছেলেমেয়ের বিয়েও হয়ে যেত, দাদুও হতে পারতেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও সদানন্দের বউ তাঁকে এতদিন ধরে কামনা করেছে? এটা কী করে সম্ভব! সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ল মামণির মুখ। তার বয়স তো সদানন্দের বউয়ের চেয়েও কম। এদের সবার কি মাথা খারাপ হয়ে গেল! শ্বাস ফেললেন বনবিহারী। তারপরেই মনে পড়ল, সদানন্দের বউ যখন তাঁর হাত বুকে চেপে ধরেছিল, তখন অস্বস্তির সঙ্গে একদম অন্যরকম অনুভূতি শরীরে ছড়িয়ে পড়ছিল। ব্যাপারটা খুবই খারাপ কিন্তু অনুভূতিটা তো আপনা-আপনি এসেছিল এবং সেটা খারাপ লাগেনি।

বাজার-এলাকা পেরিয়ে বাড়ির রাস্তা ধরতেই দূর থেকে চোখে পড়ল পুলিশের গাড়িটাকে। রাস্তার একপাশে গাড়িটাকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। বনবিহারী কাছে পৌঁছাতেই দরজা খুলে নেমে এলেন বড়বাবু, ‘এই যে ডাক্তারবাবু, আপনার জন্যে অপেক্ষা করে আছি।’

‘আমার জন্যে?’ ধক করে উঠল বনবিহারীর বুক।

‘আমার সঙ্গে এই ইতর রসিকতা করা কি আপনার পক্ষে শোভন?’

‘বুঝতে পারছি না।’

‘ছেলেটাকে বাড়ি থেকে পাচার করে দিয়ে থানায় গিয়েছিলেন খবর দিতে। ভেবেছিলেন এতে লাঠি ভাঙবে না কিন্তু সাপ মরবে।’

‘আমি কাউকে কোথাও পাচার করিনি।’

‘আলবত করেছেন। সে নাকি খুব অসুস্থ, কথা বলার অবস্থায় নেই। কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন তাকে?’ গলা চড়ালেন বড়বাবু।

নির্জন রাস্তায় দাঁড়িয়ে হঠাৎ শক্ত হয়ে গেলেন বনবিহারী। ‘আপনি আমাকে অপমান করছেন।’

‘অপমান? পুলিশকে ভুল তথ্য দিয়ে হ্যারাস করার অপরাধে আমি আপনাকে অ্যারেস্ট করতে পারি তা জানেন?’

‘আমি আপনাকে একটিও ভুল তথ্য দিইনি। আপনার কাছে যাওয়ার আগে দেখে গিয়েছিলাম সে অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতে শুয়ে আছে।’

‘তাহলে কোথায় সরিয়ে দিয়েছেন, বলুন।’

‘বারবার এক কথা জিজ্ঞাসা করছেন কেন?’

‘অ। আপনার চাকর বলল সে কিছুই জানে না। বাড়িতে আর একজন মহিলা ঘোমটা টেনে বসে রইল। সবাই ষড়যন্ত্রের শরিক। ঠিক আছে, আপনি কবে বাইরে যাচ্ছেন?’ বড়বাবু জিজ্ঞাসা করলেন।

‘কেন?’

‘ইমেডিয়েটলি চলে যান। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে। আর হ্যাঁ, যেখানে যাবেন এভরি অলটারনেটিভ ডে আমাকে ফোন করবেন। গাড়ি থেকে একটা কাগজ টেনে নিয়ে তাতে নাম্বার লিখে বনবিহারীকে দিলেন বড়বাবু, ‘আপনি একজন ডাক্তার, পাবলিক রেসপেক্ট করে বলে সিরিয়াস স্টেপ নিলাম না। যান।’

গাড়িটা চলে গেলেও বনবিহারী কিছুক্ষণ নড়তে পারলেন না।

দরজা খুলল কালীচরণ। বনবিহারীর মুখ দেখে চমকে উঠল সে, ‘একী! কী হয়েছে আপনার?’

কথা না বলে বাইরের ঘরের চেয়ারে বসে পড়লেন বনবিহারী। কালীচরণ ছুটে ভেতরে গিয়ে এক গ্লাস জল নিয়ে এল। সেটা একটানে শেষ করে দিয়ে শ্বাস ফেললেন বনবিহারী। তারপর জিজ্ঞাসা করলেন, ‘সে কোথায়?’

মাথা নাড়ল কালীচরণ, ‘বিশ্বাস করুন আমি জানি না।’

‘মিথ্যে কথা।’

‘না বাবু, মিথ্যে নয়’

‘কালী, সত্যি কথা বলো নয়তো এবাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও। একবার তুমি আমাকে জব্দ করতে নিজে থেকে গিয়েছিলে, এবার আমি তোমাকে যেতে বলছি।’

‘আপনি যা শাস্তি দিতে চান দিন, কিন্তু আমি মিথ্যে বলছি না।’ কেঁদে ফেলল কালীচরণ। চোখের জল মুছল।

‘যে ছেলেকে বিছানায় দেখে আমি বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম তার অবস্থা এমন ছিল না যে হেঁটে গটগট করে নিজেই চলে যাবে।’ বনবিহারী বললেন।

‘পুলিশ যখন ওকে খুঁজে পেল না তখন আমিও এই কথা ভাবছিলাম।’

‘ঠিক কী হয়েছিল?’

‘আমি কাজ করছিলাম। মামণিকে বলেছিলাম ঘর ঝাঁট দিতে। সে তাই করছিল। হঠাৎ বাইরে গাড়ির শব্দ। কে এল দেখতে আমি জানলা দিয়ে উঁকি দিতেই দেখলাম পুলিশের বড়বাবু গাড়ি থেকে নামছেন। আমি তাড়াতাড়ি ভেতরে গিয়ে মামণিকে চেঁচিয়ে বলেছিলাম পুলিশ এসেছে। তারপর দরজায় শব্দ হতে ধীরে-সুস্থে গিয়ে দরজা খুলি। বড়বাবু প্রথমেই বললেন, ‘ছেলেটাকে এনে দাও, তাহলে ভেতরে ঢুকতে হবে না।’

‘আমি বলে ফেলেছিলাম, ‘ওর খুব অসুখ, ওকে মারবেন না।’

বড়বাবু জোরসে ধমক দিলেন। আমি বাধ্য হয়ে সন্তানের ঘরে গেলাম। গিয়ে দেখলাম সে বিছানায় নেই। বাথরুমেও নেই। আমার দেরি হচ্ছে দেখে বড়বাবু ঢুকে পড়লেন ভেতরে। তাঁকে সত্যি কথাটা বললাম। তিনি বিশ্বাস করলেন না। পুরো বাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজলেন। তারপর আমাকে চড় মেরে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস?’

আমি ওঁর পা ধরে বললাম, ‘একটু আগে শুয়েছিল, কোথায় গেল জানি না।’

উনি তখন উঠোনের ওপাশের খোলা দরজা দিয়ে বাইরে গিয়ে খোঁজাখুঁজি করলেন। তারপর ফিরে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ডাক্তার বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগেই তাকে সরিয়ে দিয়েছিস, না?’

আমি মাথা নেড়ে না বললে আবার ধমক দিলেন। বললেন, ‘যদি দরকার হয় তোকে প্রশ্ন করলে তুই হ্যাঁ বলবি।’ ঢোঁক গিলল কালীচরণ।

‘মামণি তখন কী করছিল?’ বনবিহারী জিজ্ঞাসা করলেন।

‘সে তখন ঝাঁটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। ঘোমটায় মুখ ঢেকে রেখেছিল, তাকে দেখে বড়বাবু জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এটি কে?’

বললাম, ‘বাসন মাজে, কাপড় কাচে, ঘর মোছে।’

‘বয়স কত?’

‘জানি না। ওদের বয়স বোঝা যায় না।’

উনি মাথা নাড়লেন। তারপর জিজ্ঞাসা করলেন মামণিকে, ‘ছেলেটা কোথায় তা জানো?’ সে মাথা নেড়ে না বলতেই তিনি চ্যাঁচালেন, ‘সব চক্রান্ত। তারপর বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন।’

বনবিহারী বললেন, ‘কিন্তু ওই শরীর নিয়ে ছেলেটা গেল কোথায়?’

কালীচরণ বলল, ‘বড়বাবুর গাড়ি চলে যাওয়ার পর আমি পেছনের দরজা দিয়ে সেই জঙ্গল পর্যন্ত ঘুরে দেখে এসেছি, কোথাও তার দেখা পাইনি।’

‘আজ যদি সে ধরা দিত তাহলে বোধহয় ওর জীবনটা রক্ষা পেত।’

‘আমার মনে হয় আর সে ফিরে আসবে না।’ কালীচরণ বলল।

‘কিন্তু যাবে কোথায়? ওইরকম শরীর নিয়ে কতদূর যেতে পারবে! ধরা পড়বেই।’ বনবিহারী বললেন, ‘আমার আর কিছু করার নেই।’

‘বাবু চলুন। কোথাও চলে যাই।’

‘হ্যাঁ। পুলিশ আমাকে শাসিয়েছে যেন এখান থেকে কিছুদিনের জন্যে বাইরে যাই। কালী, তৈরি হও। আজই আমরা বেরিয়ে যাব।’ বনবিহারী বললেন।

‘আজই?’ কালীচরণ অস্বস্তিতে পড়ল।

‘যেতে যখন হবেই তখন দেরি করে কী লাভ! বনবিহারী উঠলেন।

‘কী কী নেব সঙ্গে?’

‘যা, যা না নিলে চলবে না তাই নাও। বাড়ি তালাবন্দি থাকবে। চোর ঢুকবে। সেটা ভেবে যা হোক সঙ্গে নাও।’

‘কোথায় যাবেন?’

‘ভেবে দেখছি।’

‘মামণি—।’

‘তাকে জিজ্ঞাসা করো সে আমাদের সঙ্গে যেতে চায় কিনা। না চাইলে যেখানে ইচ্ছে সেখানে চলে যাক।’ বনবিহারী বললেন।

‘কোথায় যাবে? যাওয়ার তো জায়গা নেই।’ কালীচরণ বলল।

‘কার কী জায়গা আছে তা কেউ বলতে পারে না কালীচরণ। আমরা শেষ বাস ধরে নীচের শহরে যাব। সেখান থেকে রাতের ট্রেন ধরতে হবে।’

বনবিহারী ভেতরের ঘরে পা বাড়াতেই দেখলেন মামণি দাঁড়িয়ে আছে। তাকে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইতেই সে খপ করে বনবিহারীর হাত ধরে গোঁ-গোঁ করে কিছু বলতে লাগল। হাত ছাড়াতে পারছিলেন না বনবিহারী।

পেছন থেকে কালীচরণ ধমক দিল, ‘ছাড়, হাত ছাড়!’

এবার হাত ছাড়ল মামণি। তারপর ডানহাত বারবার বুকের ওপর রেখে কিছু বোঝাতে চাইল। শেষে ছুটে গেল বনবিহারীর ঘরে। কাগজে দ্রুত কিছু লিখে বনবিহারীর সামনে চলে এসে কাগজটা তুলে ধরল। তাতে সে লিখেছে, ‘আমিও যাব।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *