দাউ দাউ আগুন
কাঠকয়লার আগুন
1 of 2

কাঠকয়লার আগুন – ১৭

সতেরো

বাস থেকে নেমে রিকশা নিতে যাচ্ছিলেন বনবিহারী, পেছন থেকে কেউ ডাকল, ‘ডাক্তারবাবু।’ বনবিহারী পেছন ফিরে দেখলেন বছর বাইশের একটি ছেলে তাঁর দিকে এগিয়ে আসছে।

তিনি বললেন, ‘ঠিক চিনতে পারছি না ভাই?’

ছেলেটি বলল, ‘আপনি আমাকে কী করে চিনবেন? আমি আপনাকে দেখেছি। আপনি আগে যেখানে থাকতেন সেখানে আমার মাসিমার বাড়ি। একবার মেসোমশাইকে দেখতে মাসিমার বাড়িতে এসেছিলেন। আপনার ওষুধে সেরে গিয়েছিলেন মেসোমশাই।’

অস্বস্তি শুরু হয়ে গেল বনবিহারীর। এখন পর্যন্ত কেউ তাঁকে তাঁর আগের জায়গার উল্লেখ করে কথা বলেনি। মামণিকে নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার পর আর ওখানকার সঙ্গে সম্পর্ক রাখেননি। নিশ্চয়ই তাঁর সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন ওখানকার মানুষের মনে অতীতে পাক খেয়েছে। ভেবেছেন, সময় সব চাপা দিয়ে দেয়, এতদিনে তাই হয়েছে। এই ছেলে আবার কোত্থেকে ভূতের মতো উদয় হল।

বনবিহারী হাসলেন, ‘ও। তা হবে। বয়স হয়েছে আর তখন তুমি বেশ ছোট ছিলে বলে মনে পড়ছে না।’

‘সেটাই স্বাভাবিক। আপনি কি এখন ওপারের গঞ্জ থেকে আসছেন?’

‘হ্যাঁ। কেন?’

‘আপনি কি কিছু শুনে এসেছেন?’

‘কী ব্যাপার বলো তো?’

‘ওখানকার পুলিশ নাকি দুজন ছেলেকে গুলি করে মেরে ফেলেছে। একটু আগে খবরটা এল। এখনও পুলিশ এরকম বর্বর আচরণ করছে ভাবতে খারাপ লাগছে। বিশ্বাস হচ্ছে না। আপনি কি কিছু শুনেছেন?’

ছেলেটির মুখের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লেন বনবিহারী, ‘কানে এসেছে কথাটা। অত ভোরে সত্যি না মিথ্যে তা যাচাই করার সময় পাইনি। আচ্ছা, চলি।’

রিকশায় বসার পর অস্বস্তিটা বেড়ে গেল। এই ছেলেটা কে? তাঁকেই বা দুম করে এমন প্রশ্ন করল কেন? তা ছাড়া পুলিশের গুলিতে দুজন মারা গিয়েছে, এই খবরটা এত তাড়াতাড়ি এখানে পৌঁছে গেল? বনবিহারীর মনে হল, এই ছেলেটি ওই দলের একজন নয় তো!

হোস্টেলের সুপার স্কুলেরই একজন শিক্ষক। কাল রাত্রে বড়বাবু বাড়িতে এসে যা বলে গিয়েছিলেন তিনি সেই একই কথা বললেন।

বনবিহারী বিরক্ত গলায় বললেন, ‘আপনার হোস্টেলের একটি ছেলে কার সঙ্গে মিশছে সে-খবর আপনি রাখবেন না?’

‘দেখুন, এই হোস্টেল তো জেলখানা নয়। বিকেলে স্কুলের মাঠে ছেলেরা যখন খেলা করে তখন কেউ যদি গোপনে সরে পড়ে তাহলে তাকে ধরব কী করে? সে তো ফিরে আসছে ঠিক সময়ে, অন্য ছেলেদের সঙ্গে হোস্টেলে ফিরছে।’ সুপার বললেন।

‘কোথায় যেত সে?’

‘পাশেই নদীর ধারে একটা পোড়ো মন্দির আছে। স্কুলের মালি ওকে সেখানে বয়সে বড় ছেলেদের সঙ্গে ঢুকতে দেখেছে। তারপর ওকে অনেক প্রশ্ন করেছি, বলেছে নদী দেখতে নাকি ওর ভালো লাগে, তাই দেখতে যায়। কিন্তু গতকাল সকাল থেকে ও খায়নি। কারণ এখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে একজন দুষ্কৃতি মারা গিয়েছে। আমি ওর কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, একজন সমাজবিরোধীর মৃত্যুতে তুমি উপোস করছ?’

‘কী বলল সে?’

‘উলটে আমাকে জিজ্ঞাসা করল, আপনি কী করে জানলেন যে সে সমাজ বিরোধী?’

‘এরকম প্রশ্ন করতে সাহস পেল সে?’ বনবিহারী প্রশ্ন করলেন বেশ অবাক হয়ে।

‘হ্যাঁ।’ সুপার মাথা নাড়লেন, ‘আমি প্রিন্সিপালকে ব্যাপারটা জানালাম। কাল রাত্রে তিনি নিজে এসে ওর সঙ্গে কথা বলেছেন। ওর ঘর সার্চ করে একটা ডায়েরি পেয়েছেন। সেটা দেখে আপনাকে আসার জন্য খবর পাঠিয়েছেন।’

‘কী লেখা আছে ডায়েরিতে?’

‘ভয়ংকর লাইন। ও এখন সদ্য কিশোর। কিন্তু এইসব লেখার জন্য গভর্নমেন্ট ওকে দশ বছরের জেল দিতে পারে।’ সুপার খুব গম্ভীর গলায় বললেন।

বনবিহারী চোখ বন্ধ করে ভাবার চেষ্টা করলেন। কেবলই তাঁর মনে হচ্ছিল তিনি হেরে গেছেন। চোখ খুলে বললেন, ‘ডায়েরিটা দেখতে পারি?’

সুপার তাঁর ড্রয়ার খুলে একটা পুরোনো ডায়েরি বের করে সামনে রাখলেন। ওটাকে চিনতে পারলেন বনবিহারী। প্রতি বছর মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভরা কিছু না কিছু গিফট দিয়ে যায়। ডায়েরি ব্যবহার করেন না বনবিহারী। তিন-চার বছর আগেকার একটা ডায়েরি যে সন্তান নিয়েছে তা জানা ছিল না তাঁর।

ডায়েরির পাতা খুললেন বনবিহারী। তৃতীয় পাতায় বড় বড় অক্ষরে লেখা, ‘আমি চেয়ে দেখি প্রতিজ্ঞা প্রস্তুত ঘরে ঘরে,/দানবের সাথে আজ সংগ্রামের তরে।’

পরের পাতায়, ‘শোন রে মজুতদার,/ ফসল ফলানো মাটিতে রোপণ/করব তোকে এবার।’

মুখ তুললেন বনবিহারী, ‘এই লাইনগুলোর কথা বলছেন?’

‘হ্যাঁ। আপনার কি মনে হয় না একজন ছাত্র এসব লেখা লিখলে তাকে দেশদ্রোহী বললে মিথ্যে বলা হবে?’ সুপার চোখ ছোট করলেন।

ডায়েরিটা ফিরিয়ে দিলেন বনবিহারী, ‘আপনাদের প্রিন্সিপাল সাহেবও কি একই কথা বলেছেন?’

‘না। তিনি কিছু বলেননি, শুধু আপনাকে খবর দিতে বলেছেন।’

‘আপনি সুকান্ত ভট্টাচার্যের নাম শুনেছেন?’

‘তার মানে?’

‘একটি ছেলে যে মাত্র কুড়ি বছর নয় মাস বয়সে যক্ষ্মায় মারা গিয়েছিল। মারা যাওয়ার আগে সে কিছু কবিতা লিখেছিল। সেটা সাতচল্লিশ সালের মে মাস। প্রায় তেষট্টি বছর আগের কথা। তেষট্টি বছর পরে একটি কিশোর যদি তার ডায়েরিতে সুকান্তর লাইনগুলো লিখে রাখে তাহলে বলতেই হবে কবির কবিতা লেখা সার্থক। আপনি যদি সুকান্ত ভট্টাচার্যকে দেশদ্রোহী বলেন—।’

বনবিহারীকে থামিয়ে দিয়ে সুপার প্রশ্ন করেন, ‘এই লাইনগুলো সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার লাইন?’

‘আপনার বোধহয় বাংলা সাহিত্য ভালো করে পড়া নেই।’ উঠে দাঁড়ালেন বনবিহারী, ‘যাহোক, সন্তান নিশ্চয়ই হোস্টেলের নিয়ম ভেঙে অন্যায় করেছে। আমি তার সঙ্গে কথা বলতে চাই।’

‘আপনি তার আগে প্রিন্সিপালের সঙ্গে দেখা করুন।’ ঘড়ি দেখলেন সুপার, ‘আর মিনিট পনেরো অপেক্ষা করতে হবে আপনাকে।’

ঠিক পনেরো মিনিট পরে প্রিন্সিপালের মুখোমুখি হলেন বনবিহারী।

প্রিন্সিপাল স্পষ্ট বললেন, ‘আপনি যদি সন্তানের ভালো চান তাহলে ওকে এখান থেকে নিয়ে যান। আমি স্বীকার করছি এখানে আমরা যতটা কেয়ার নেওয়া দরকার ততটা নিতে পারছি না।’

বনবিহারী বললেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না ওর অপরাধ কী? সুপার আমাকে এই ডায়েরি দেখালেন। ওঁর ধারণা ছিল তাতে লাইনগুলো সন্তানই লিখেছে। অথচ সেগুলো বহু বছর আগে সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখা। অল্পবয়সে আমরাও সুকান্তর কবিতার লাইন মুখস্থ করে রাখতাম। একধরনের সাময়িক উত্তেজনা হত।’

প্রিন্সিপাল হাসলেন, ‘সুপার সম্ভবত সুকান্ত পড়েননি। না, ওই লেখাগুলোর জন্যে আমি কিছু বলছি না। যারা বলবে তারা সুকান্তকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে নিজে হাস্যাস্পদ হবে। আমার অভিযোগ ও খেলার নাম করে নদীর ধারের শিবমন্দিরে কাদের সঙ্গে আড্ডা মারতে যেত? তারা তো শুনেছি বয়সে অনেক বড়। তাদের একজন গতকাল পুলিশের সঙ্গে এনকাউন্টারে মারা গেছে। কোনও শিক্ষিত ভদ্র পরিবারের ছেলে কি পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে যাবে? আর সেই ছেলে মারা গিয়েছে বলে সন্তান তার প্রতি সহানুভূতিতে অনশন করবে? তার একটাই অর্থ, সে যে কোনওদিন পুলিশের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে! ওর এই আচরণ দেখে যদি আরও কিছু হোস্টেলের ছেলে উৎসাহিত হয় তাহলে আমাদের অবস্থা কী হবে তা বুঝতে পারছেন? আমি কি ভুল বলেছি?’

বনবিহারী মাথা নাড়লেন, সমর্থনের।

‘আমি ওর টান্সফার সার্টিফিকেট দিয়ে দিচ্ছি। ওকে বাড়িতে রেখে স্কুলের শেষ পরীক্ষায় বসতে দিন নয়তো বহু দূরের কোনও হোস্টেলে পাঠিয়ে দিন যেখানে ও এসব করার সুযোগ পাবে না।’ বেল টিপলেন প্রিন্সিপাল।

‘ওকে এখানে ডেকে পাঠাবেন? আমি কথা বলব।’ বনবিহারী বললেন।

বেলের আওয়াজ পেয়ে বেয়ারা ঘরে ঢুকতেই প্রিন্সিপাল তাকে বললেন হোস্টেল থেকে সন্তানকে নিয়ে আসতে।

বেয়ারা চলে গেলে বনবিহারী অনুনয় করলেন, ‘আমি ওর সঙ্গে কথা বলি। ওকে ভালো করে বোঝাই। যদি দেখি ও ভুল বুঝতে পারছে তাহলে আপনাকে অনুরোধ করব আর একবার ওকে সুযোগ দিতে। কারণ আমার বাড়িতে রেখে ওকে পড়ানো এখন একদম সম্ভব নয়।’

প্রিন্সিপাল কাঁধ নাচালেন, মুখে কিছু বললেন না।

একটু পরে বেয়ারা সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ঘরে ঢুকলে প্রিন্সিপাল পাশের দরজা দেখিয়ে বললেন, ‘আপনি ওর সঙ্গে ওই ঘরে বসে কথা বলতে পারেন।’

বনবিহারী উঠে পাশের ঘরে গেলেন। ঘরটি ছোট। দুটো চেয়ার রয়েছে, কোনও টেবিল নেই। চারপাশের আলমারিতে প্রচুর বই।

চেয়ারে বসতেই সন্তান ঘরে এল।

বনবিহারী বললেন, ‘বসো।’

সন্তান বসল। ওকে একটু রোগা এবং লম্বাটে বলে মনে হল বনবিহারীর।

‘আমি কেন এসেছি তা জানো?’

‘বুঝতে পারছি।’

‘তুমি নাকি একজন সমাজবিরোধী মারা গিয়েছে বলে অনশন করেছ?’

‘ক্ষুদিরাম, বাঘাযতীন, সূর্য সেনকে আমরা কী বলি?’

অবাক হলেন বনবিহারী। বললেন, ‘ওঁদের শহিদ বলা হয়। স্বাধীনতার জন্যে ওঁরা নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন।’

‘ইংরেজরা ওদের উগ্রপন্থী, সমাজবিরোধী বলত।’

‘এসব কথা তোমাকে কে শেখাল?’ উত্তেজিত হতে গিয়েও সামলে নিলেন বনবিহারী।

‘কে শেখাবে? বই পড়লেই জানা যায়।’

‘দ্যাখো, এসব নিয়ে ভাবনাচিন্তা করার জন্যে পরে অনেক সময় পাবে। তোমার একমাত্র কাজ পড়াশুনা করা। ভালোভাবে পাশ করে জয়েন্ট পরীক্ষায় বসবে যাতে তুমি ডাক্তারিটা পড়তে পারো। এদেশের গরিব মানুষদের একমাত্র ডাক্তাররাই সাহায্য করতে পারে। তোমাকে মানুষ করার চেষ্টা করেছি, সেই চেষ্টা বৃথা হোক আমি চাই না।’ বনবিহারী শ্বাস নিলেন, ‘তুমি যাদের সঙ্গে গোপনে মেলামেশা করো তারা তোমার থেকে বয়সে অনেক বড়। তাদের একজনকে পুলিশ মেরে ফেলেছে। যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। স্কুল চাইছে তোমাকে টান্সফার সার্টিফিকেট দিয়ে দিতে। আমি চাই তুমি আবার আগের মতো পড়াশুনায় মন দাও।’

‘আমি পড়াশুনায় ফাঁকি দিই না।’

‘জানি। কিন্তু অন্যদিকে মন দিও না।’

সন্তান জবাব না দিয়ে ছাদের দিকে তাকাল।

‘সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার বই কেউ কি তোমাকে দিয়েছে?’

‘হ্যাঁ।’

‘কে?’

‘সেটাও কি অপরাধ?’

‘একদম নয়।’

‘নতুন স্যার। সুজয়বাবু!’

‘আচ্ছা! ওঁর সঙ্গে কী করে দেখা হল?’

‘উনি কদিন আগে হোস্টেলে এসে দেখা করেছিলেন। তখন ওঁর হাতে বইটা ছিল। আমি চেয়ে নিয়েছি।’

‘কবিতাগুলো তোমার ভালো লাগে?’

‘হ্যাঁ। ব্রিটিশ আমলে শোষকদের বিরুদ্ধে লেখা কবিতাগুলোকে এখনও সত্যি বলে মনে হয়।’

‘তাহলে তুমি কি আমাকে কথা দিচ্ছ?’

বনবিহারীর প্রশ্নের জবাব প্রথমে না দিয়ে সন্তান তাঁর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল। তারপর বলল, ‘ঠিক আছে।’

খুশি হলেন বনবিহারী, ‘আমি এখনই প্রিন্সিপালকে অনুরোধ করব। আমি আশা করব তুমি কথার খেলাপ করবে না।’

‘একটা কথা জিজ্ঞাসা করতে চাই!’ হঠাৎ যেন সন্তানের কণ্ঠস্বর বদলে গেল।

‘নিশ্চয়ই, বলো।’

‘আপনি আমাকে কোত্থেকে পেয়েছিলেন?’

‘মানে?’

‘আপনি আমাকে আগে বলেছেন আমার বাবা-মাকে ভগবান নিয়ে গেছেন। তখন তাই বিশ্বাস করতাম। কালীচরণদা বলত আমার বাবা অল্প বয়সে মারা গিয়েছেন। মা তাঁর শোকে কোথাও হারিয়ে গিয়েছেন। এতদিন আমি ওঁদের নিয়ে মাথা ঘামাইনি। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি সত্যি কথাটা আমাকে বলা হয়নি।’

বুকের ভেতর আচমকা চাপ অনুভব করলেন বনবিহারী। তিনি জানতেন এই প্রশ্নটা তাঁকে কোনও না কোনওদিন সন্তান করবেই। কিন্তু সেটা এত তাড়াতাড়ি তা কল্পনা করেননি। এখন ও যে পরিস্থিতিতে আছে তাতে সব কথা বলা যাবে না। খুব দ্রুত ভেবে নিয়ে বনবিহারী বললেন, ‘কালীচরণ কিছুই জানে না। তোমার বাবা-মায়ের দুর্ঘটনার মৃত্যুর খবর পেয়ে আমি ছুটে গিয়েছিলাম। তোমাকে নিয়ে এসেছিলাম আমার কাছে। তখন তোমার কয়েকমাস বয়স। হাঁটতেও পারতে না।’

‘আপনি সত্যি কথা বলছেন না।’

‘এ কথা তোমার কেন মনে হচ্ছে?’

‘আপনি যখন সুন্দরবনে চলে গিয়েছিলেন তখন আমি ছাড়া আপনার সঙ্গে একজন মহিলা ছিল। সেখান থেকে সেই মহিলা কোথাও চলে যাওয়াতে আপনি আমাকে নিয়ে নতুন জায়গায় চলে আসেন। সেই মহিলা কে?’

‘এসব কথা তোমাকে কে বলেছে?’ সোজা হয়ে বসলেন বনবিহারী।

এই সময় বেয়ারা এসে দাঁড়াল দরজায়, ‘আপনাদের এঘরে ডাকছে।’

কয়েক সেকেন্ড উত্তরের জন্যে অপেক্ষা করেও না পেয়ে বনবিহারী আবার প্রিন্সিপালের ঘরে এলেন। দেখলেন প্রিন্সিপাল একা নন, তাঁর সামনে বসে আছেন একটি প্রৌঢ় ভদ্রলোক।

প্রিন্সিপাল বললেন, ‘ইনি ডক্টর বনবিহারী। বসুন ডাক্তারবাবু।’

ভদ্রলোক হাতজোড় করলেন, ‘নমস্কার।’ তারপর একটু দূরে দাঁড়ানো সন্তানের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তোমার নাম সন্তান? এরকম নাম আমি প্রথম শুনলাম।’

প্রিন্সিপাল বললেন, ‘ডাক্তারবাবু, ইনি রমেন দত্ত। আমাদের থানার সেকেন্ড অফিসার।’

রমেন দত্ত বললেন, ‘সন্তানকে আমি একটু থানায় নিয়ে যাচ্ছি।’

বনবিহারী চমকে উঠলেন, ‘কেন?’

‘এমন কিছু নয়। ওর বিরুদ্ধে আপাতত আমাদের কোনও অভিযোগ নেই। কিন্তু ওর কাছে কিছু তথ্য থাকতে পারে যা জানলে আমাদের উপকার হতে পারে।’

‘আপনি কি ওকে অ্যারেস্ট করছেন?’

‘না, না। একদম নয়। শুধু জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে নিয়ে যাচ্ছি।’

‘তেমন কিছু ব্যাপার হলে সেটা তো আপনি এখানেই করতে পারেন!’

‘না। তা পারি না। গতকালের ব্যাপারটা নিশ্চয়ই শুনেছেন। তার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে আমরা ধরেছি। তাদের সামনেই ওকে প্রশ্ন করতে চাই।’ উঠে দাঁড়ালেন রমেন দত্ত, ‘এসো সন্তান।’ ভদ্রলোক এগিয়ে গিয়ে সন্তানের কনুই ধরে বললেন, ‘চিন্তা করবেন না, মনে হয় বিকেলের মধ্যেই ও ফিরে আসবে।’

বনবিহারী উঠে দরজায় গিয়ে দেখলেন রমেন দত্ত সন্তানকে জিপের পেছনে সেপাইদের জিম্মায় দিয়ে নিজে সামনে বসলেন। জিপ চলে গেল।

প্রিন্সিপাল বললেন, ‘এরপরে আপনি কী আশা করছেন?’

বনবিহারী বললেন, ‘কিন্তু ও আমাকে কথা দিয়েছে, মন দিয়ে পড়াশুনা করবে। হোস্টেলের বাইরে যাবে না। ওকে আর একটা সুযোগ দিন, প্লিজ।’

প্রিন্সিপাল গম্ভীর হলেন, ‘এখন আর আমার হাতে নেই। স্কুলকমিটিকে জানাতে হবে। তাঁরা যা সিদ্ধান্ত নেন তা আপনাকে জানিয়ে দেব।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *