আনন্দময়ীর আগমনে , আনন্দে গিয়েছে দেশ ছেয়ে । হেরো ওই ধনীর দুয়ারে দাঁড়াইয়া কাঙালিনী মেয়ে । উৎসবের হাসি - কোলাহল শুনিতে পেয়েছে ভোরবেলা , নিরানন্দ গৃহ তেয়াগিয়া তাই আজ বাহির হইয়া আসিয়াছে ধনীর দুয়ারে দেখিবারে আনন্দের খেলা । বাজিতেছে উৎসবের বাঁশি , কানে তাই পশিতেছে আসি , ম্লান চোখে তাই ভাসিতেছে দুরাশার সুখের স্বপন ; চারি দিকে প্রভাতের আলো নয়নে লেগেছে বড়ো ভালো , আকাশেতে মেঘের মাঝারে শরতের কনক তপন । কত কে যে আসে , কত যায় , কেহ হাসে , কেহ গান গায় , কত বরনের বেশভূষা — ঝলকিছে কাঞ্চন - রতন , কত পরিজন দাসদাসী , পুষ্প পাতা কত রাশি রাশি চোখের উপরে পড়িতেছে মরীচিকা - ছবির মতন । হেরো তাই রহিয়াছে চেয়ে শূন্যমনা কাঙালিনী মেয়ে । শুনেছে সে , মা এসেছে ঘরে , তাই বিশ্ব আনন্দে ভেসেছে , মার মায়া পায় নি কখনো , মা কেমন দেখিতে এসেছে । তাই বুঝি আঁখি ছলছল , বাষ্পে ঢাকা নয়নের তারা ! চেয়ে যেন মার মুখ পানে বালিকা কাতর অভিমানে বলে , ‘ মা গো এ কেমন ধারা । এত বাঁশি , এত হাসিরাশি , এত তোর রতন - ভূষণ , তুই যদি আমার জননী , মোর কেন মলিন বসন !' ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েগুলি ভাইবোন করি গলাগলি , অঙ্গনেতে নাচিতেছে ওই ; বালিকা দুয়ারে হাত দিয়ে তাদের হেরিছে দাঁড়াইয়ে , ভাবিতেছে নিশ্বাস ফেলিয়ে — আমি তো ওদের কেহ নই । স্নেহ ক ' রে আমার জননী পরায়ে তো দেয় নি বসন , প্রভাতে কোলেতে করে নিয়ে মুছায়ে তো দেয় নি নয়ন । আপনার ভাই নেই বলে ওরে কি রে ডাকিবে না কেহ ? আর কারো জননী আসিয়া ওরে কি রে করিবে না স্নেহ ? ও কি শুধু দুয়ার ধরিয়া উৎসবের পানে রবে চেয়ে শূন্যমনা কাঙালিনী মেয়ে ? ওর প্রাণ আঁধার যখন করুণ শুনায় বড়ো বাঁশি , দুয়ারেতে সজল নয়ন , এ বড়ো নিষ্ঠুর হাসিরাশি । আজি এই উৎসবের দিনে কত লোক ফেলে অশ্রুধার , গেহ নেই , স্নেহ নেই , আহা , সংসারেতে কেহ নেই তার । শূন্য হাতে গৃহে যায় কেহ , ছেলেরা ছুটিয়া আসে কাছে , কী দিবে কিছুই নেই তার , চোখে শুধু অশ্রুজল আছে । অনাথ ছেলেরে কোলে নিবি জননীরা, আয় তোরা সব । মাতৃহারা মা যদি না পায় তবে আজ কিসের উৎসব ! দ্বারে যদি থাকে দাঁড়াইয়া ম্লানমুখ বিষাদে বিরস , তবে মিছে সহকার - শাখা তবে মিছে মঙ্গল - কলস ।