1 of 2

কাউণ্ট কোবরা – ৩৬

ছত্রিশ

মধ্য ভিয়েনার সরু এক রাস্তার ধারে মার্সিডিয গাড়িটা রাখল লুদভিগ কেইলম্যান। একটু দূরেই ছোট এক হোটেল। উল্টো দিকেই ভিয়েনা স্টেট অপেরা হাউস। গাড়ি থেকে নেমে লুদভিগকে নিয়ে হোটেলের দিকে পা বাড়াল রানা। ও চেয়েছে লিয়ার সঙ্গে লুদভিগের দেখা হোক শহরের ব্যস্ত এলাকায়। তাতে কমবে বিপদের ঝুঁকি। শুধু তাই নয়, লিয়াকে কেউ চিনে ফেললেও চট্ করে ছুটে আসবে না অটোগ্রাফ নেয়ার জন্যে। মিউযিক তারকারা ভিয়েনার এদিকে সাধারণ মানুষের জন্যে নতুন কোনও আকর্ষণ নয়।

স্যাচার ক্যাফেতে গিজগিজ করছে অসংখ্য মানুষ। সামনে ক্রিসমাসের ছুটি, তাই কেনাকাটার ফাঁকে অনেকেই নাম করা এই ক্যাফেতে এসে সকালের কফি বা দু’একটা কেক খেয়ে আবারও বেরিয়ে যাচ্ছে। পেছনের কোণে একটা টেবিলে লুদভিগকে নিয়ে এল রানা।

‘এমিলিয়া বেকার কোথায়?’ চেয়ারে বসে জানতে চাইল সার্জেন্ট। ভেবেছে অপেক্ষা করছে মেয়েটা। তবে আশপাশে নেই সে। বিরক্ত বোধ করছে লুদভিগ। এ ধরনের হৈ-চৈ ভরা জায়গা দু’চোখে দেখতে পারে না।

‘একঘণ্টা পর দেখা হবে,’ বলল রানা, ‘এরই ভেতর ওকে নিয়ে ফিরব।’

ভুরু কুঁচকে ফেলল লুদভিগ। ‘কপাল!’

‘তোমার ওপর চোখ রাখবে আমার লোক,’ মিথ্যা বলল রানা, ‘তুমি কোথাও ফোন করলে, বা কারও সঙ্গে যোগাযোগ করলে, জেনে যাব। সেক্ষেত্রে আমাকে আর দেখবে না। অবশ্য দূর থেকে গুলিটা করব তোমার বুকে বা মাথায়। আমার কথা বুঝতে পেরেছ?’

‘পরিষ্কার। এত সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দেয়ায় ধন্যবাদ!’

মৃদু হাসল রানা। ‘সতর্ক না হয়ে উপায় নেই, লুদভিগ।’ উপমহাদেশীয় লোকটা বিদায় নিতেই বিরক্ত চোখে মেন্যু দেখল লুদভিগ। কিছুক্ষণ পর কালো কফি ও মাখন দেয়া বিস্কুটের অর্ডার দিল। খুব ধীরে পেরোল পরের একটা ঘণ্টা। রানা সম্পর্কে বেশ কিছু ধারণা জন্মে গেল তার মনে।

লুদভিগ জানে না, ক্যাফে থেকে বেরিয়ে অ্যালবার্টিনা প্রাসাদের কাছে ট্রামে উঠেছে রানা। দানিউব ক্যানেলের ওদিকে সস্তা এক হোটেলে ওর জন্যে অপেক্ষা করছে লিয়া।

লুদভিগ চতুর্থ কফির কাপ শেষ করেছে, এমনসময় স্যাচার ক্যাফেতে লিয়াকে নিয়ে ঢুকল রানা। ওর টেবিলের দিকে সুন্দরী এক মেয়ে আসছে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে শুভেচ্ছা জানাল ডিটেকটিভ সার্জেন্ট। রানার দিকে চেয়ে বলল, ‘আমি ভেবেছি তুমি আর ফিরবে না।’

‘আরেকবার কফি?’ জানতে চাইল রানা।

‘পায়ের বুড়ো আঙুল থেকে গলা পর্যন্ত কফিতে ভরে গেছে,’ মাথা নাড়ল লুদভিগ। ‘আর নয়।’

সানগ্লাস খুলে টেবিলে রাখল লিয়া। দীর্ঘ চুল এখন পনিটেইল করা। মাথায় উলের হ্যাট। লিয়ার পাশের সিটে বসল রানা।

কৌতূহলী চোখে লুদভিগকে দেখছে লিয়া। ‘ভুল না হয়ে থাকলে আমার ভাইয়ের ব্যাপারে কিছু তথ্য দেবেন আপনি।’

‘প্রথম থেকে লিয়াকে বলো,’ জানাল রানা।

অতীত থেকে শুরু করল লুদভিগ। মাঝে মাঝে ব্যাখ্যা দিচ্ছে নানান ঘটনার। মন দিয়ে শুনছে লিয়া। মেরি বার্নলে বা জেনিসা ব্রোসেট নামের মেয়েটার সঙ্গে কীভাবে আবারও দেখা হলো, খুলে বলল লুদভিগ। এ-ও জানাল, ওই দুটো নামই ছিল নকল। মেরি বার্নলে অধ্যায় তৈরি করা হয়েছিল হত্যাকাণ্ড আড়াল করতে। পকেট থেকে নাইন এমএম গুলির খোসা ভরা প্লাস্টিকের ব্যাগ টেবিলে রাখল সে। গম্ভীর কণ্ঠে বলল, ‘ওই লেকের তীরে পেয়েছি গুলির এসব খোসা।’

ওগুলো দেখে জানতে চাইল লিয়া, ‘একটা কথা বুঝতে পারছি না। আমার ভাই তো মারা গেছে পানিতে ডুবে, তা হলে গুলির কথা উঠছে কেন?’

‘কারণ, বেকারের পায়ের কাছে গুলি করে ফাটিয়ে দেয়া হয় লেকের বরফের মেঝে। ফলে তলিয়ে গিয়ে মৃত্যু হয় তার।’

দৃশ্যটা ভাবতে গিয়ে চোখ বুজে ফেলল লিয়া। ফ্যাকাসে হয়েছে দু’গাল। ওর কাঁধে হাত রেখে নীরবে শক্তি জোগাতে চাইল রানা।

একটু পর লুদভিগ জানাল, অ্যালেক বেকারের কেসটা আবারও চালু করতে চেয়েছিল। কিন্তু এর ফলে ওকে ভয় দেখাতে স্কুল থেকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাওয়া হয় ওর মেয়েকে। শুধু তাই নয়, মাত্র একদিনের ভেতর অবসরে পাঠানো হয় ওর বহু বছরের চেনা পুলিশ চিফকে। তার বদলে যাকে বসিয়ে দেয়া হয় ওই অফিসে, হাজারবার অনুরোধ করলেও নতুন করে ওই কেস চালু করবে না সে।

উদ্বিগ্ন হয়ে জানতে চাইল লিয়া, ‘এমিলি এখন কোথায়?’

‘নিরাপদ জায়গায়। ওর কোনও বিপদ হবে না।’

‘কানে জখমওয়ালা লোকটার ব্যাপারে আমাকে বলেছ, এবার তার কথা ওকেও জানাও,’ বলল রানা।

এমিলির কাছ থেকে যেসব তথ্য পেয়েছে, লিয়াকে জানাল লুদভিগ।

সব শুনে বিস্ফারিত চোখে রানাকে দেখল লিয়া। নিচু গলায় বলল, ‘কানের লতি ছেঁড়া লোকটা ছিল অ্যালেকের ভিডিয়ো ক্লিপে!’

‘কীসের ভিডিয়ো ক্লিপ?’ জানতে চাইল লুদভিগ।

‘নির্জন জায়গায় কমপিউটার দরকার,’ বলল রানা। ‘সহজেই পাব,’ জানাল লুদভিগ। চেয়ার ছেড়ে চলে গেল ক্যাশ কাউন্টারে। নিজের পুলিশ আইডি দেখিয়ে ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলল। পাঁচ মিনিট পর হোটেলের পেছনে রানা, লিয়া ও লুদভিগের জন্যে ছোট এক কনফারেন্স রুম ছেড়ে দেয়া হলো। দীর্ঘ টেবিলের ধারে বসে কমপিউটারের ড্রাইভে সিডি-রম ভরল রানা।

নীরবে ভিডিয়ো ক্লিপ দেখতে লাগল লুদভিগ। শেষ দিকে মানুষটার জিভ কেটে নেয়ার পর পেটে ছোরা ঢুকিয়ে দেয়া দেখে কুঁচকে গেল তার দুই ভুরু। দৃশ্যগুলো দেখবে না বলে আগেই টেবিল ছেড়ে জানালার কাছে গিয়ে বাইরে যানবাহনের গতিবিধি দেখছে লিয়া।

পুরো ভিডিয়ো ক্লিপ শেষে বড় করে শ্বাস নিল লুদভিগ। বেসুরো কণ্ঠে জানতে চাইল, ‘রানা, তোমার ধারণা এই ঘটনা ঘটেছে ভিয়েনায়?’

‘সময়টা খেয়াল করো,’ বলল রানা, ‘ফিল্ম তৈরি হয়েছে অ্যালেক মারা যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে। মন্দিরটা ভিয়েনা থেকে বেশি দূরে নয়। বিশাল পুরনো কোনও বাড়ির করিডোর দেখেছ।’

‘খুন হওয়া লোকটাকে চেনা-চেনা লাগছে,’ বলল লুদভিগ, ‘কোথাও না কোথাও দেখেছি। তবে ঠিক মনে পড়ছে না।’

‘আর পেছনের দিকে কানে ক্ষত হওয়া লোকটা?’ জানতে চাইল রানা।

ধীরে ধীরে মাথা দোলাল লুদভিগ। ‘এমিলির কাছ থেকে যতটা জেনেছি, ওই একই লোক কিডন্যাপ করেছিল ওকে।’

‘আরেকটা প্রশ্ন,’ বলল রানা, ‘কোবরা নামটা শুনে তোমার কিছু মনে পড়ছে?’

‘না। সাপের নামে নাম এমন কাউকে আমি চিনি না।’

‘আসল নাম নয়,’ বলল রানা।

‘ডিস্কে আরও কিছু আছে?’ জানতে চাইল লুদভিগ। ‘কয়েকটা ছবি।’

‘দেখাও। হয়তো বেরিয়ে আসবে নতুন কিছু।’

ভিডিয়ো ক্লিপ সরিয়ে মনিটরে ইমেজ আনল রানা। এক এক করে ছবি দেখতে গিয়ে মাথা নাড়ছে লুদভিগ। তবে একটু পর হঠাৎ করেই বলল, ‘একমিনিট! পিছিয়ে যাও! অন্যকিছু দেখতে পেয়েছি!’

সামনে ডাবল টুলে বসে পিয়ানো বাজাচ্ছে অ্যালেক। পার্টি চলছে বড় কোনও ঘরে। চোখ সরু করে ছবির দিকে চেয়ে আছে ডিটেকটিভ সার্জেন্ট। সাগর কলার মত পুরু আঙুল রাখল অ্যালেকের পাশের পিয়ানিস্টের ওপর। চাপা স্বরে বলল, ‘ওকে চিনি। নাম জোসেফ গ্রাফহসলার।’

মাত্র একবার তাকে দেখেছে লুদভিগ। সিলিং ফ্যানের দণ্ড থেকে দড়িতে ঝুলছিল লাশ। তবে সে যে জোসেফ গ্রাফহসলার, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

‘একটু খুলে বলো,’ অনুরোধ করল রানা।

‘মিউযিকের ছাত্র ছিল জোসেফ,’ বলল সার্জেন্ট,

‘জানতাম না সে অ্যালেক বেকারের বন্ধু।’

‘আমরা তার সঙ্গে কথা বলতে পারব?’ জানালার কাছ থেকে জানতে চাইল লিয়া।

‘সম্ভব নয়,’ বলল লুদভিগ।

‘কেন?’ জানতে চাইল রানা। ‘মারা গেছে?’

মৃদু মাথা দোলাল সার্জেন্ট। ‘রহস্যজনকভাবে ওই একই রাতে মারা গেছে সে-ও।’

‘একই রাতে,’ বিড়বিড় করল লিয়া। ফিরে এসে বসল চেয়ারে।

মেয়েটার চোখে কষ্ট দেখেও যা বলার সরাসরি জানাল লুদভিগ, ‘ধরে নেয়া হয়েছে আত্মহত্যা করেছে সে। কিন্তু ওই কেসে সন্তুষ্ট হতে পারিনি। খোঁজ নেয়ার সুযোগও দেয়া হয়নি আমাকে। ব্যাপারটা ছিল খুবই সন্দেহজনক।’

‘কী কারণে সন্দেহজনক?’ জানতে চাইল রানা।

‘বহু আত্মহত্যা দেখেছি,’ বলল লুদভিগ। ‘তাদের কোন না কোন কারণ থাকে আত্মহত্যা করার। কিন্তু জোসেফ গ্রাফহসলারের কোনও কারণ ছিল না। অন্তত আমি খুঁজে পাইনি। বরং বলা উচিত, বেঁচে থাকার যথেষ্ট কারণ ছিল তার। তা ছাড়া, পর পর দুটো কাকতালীয় ঘটনা হজম করতে পারিনি। একই রাতে মারা গেল দু’জন মিউযিশিয়ান। তা-ও

একইসময়ে। মাঝে মাত্র কয়েক কিলোমিটার ব্যবধান। একজন মরল দুর্ঘটনায়, অন্যজন আত্মহত্যা করল কারণ ছাড়াই। গোটা ব্যাপারটা কিন্তু খুবই অস্বাভাবিক।’

‘এখন জানা যাচ্ছে অ্যালেককে চিনত সে,’ যোগ করল রানা।

মাথা দোলাল লুদভিগ। এ কারণে ব্যাপারটা আরও বেশি রহস্যজনক। মৃত্যুদুটোর ভেতর কোন না কোন সম্পর্ক আছে। জোসেফের কাছে অপেরার টিকেট পেয়েছিলাম।’ লিয়ার দিকে তাকাল সার্জেন্ট। ওই দিন ভিয়েনায় প্রথমবারের মত অপেরায় দেখানোর কথা ছিল আপনার অভিনীত ম্যাকবেথ।’

‘বাতিল করেছি সেই শো,’ বলল লিয়া। ‘রিহার্সেল চলছে, এমনসময় খবর এল মারা গেছে আমার ভাই।’

‘ও-দুটো ছিল প্রাইভেট স্টাটসোপার বক্সের টিকেট,’ বলল লুদভিগ। ‘কিনতে গেলে লাগবে ব্রিফকেস ভরা ইউরো। কিন্তু জোসেফের মত সাধারণ একজন ছাত্রের পক্ষে ওই টিকেট কেনা কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। তার আর্থিক দিকটা তদন্ত করে দেখেছি। পারিবারিকভাবে সচ্ছল ছিল না। তখন মনে হলো, কেউ না কেউ উপহার হিসেবে টিকেট দুটো দিয়েছে। কিন্তু জোসেফকে কে দিল টিকেট, তা আর জানতে পারিনি।’

‘অ্যালেক দিয়ে থাকতে পারে,’ বলল লিয়া। ‘ও ভাই বলে আমার যে-কোনও পারফর্মেন্সের সময় ফ্রি টিকেট পেত। জোসেফের কাছে টিকেট থাকাটা অস্বাভাবিক নয়।’

‘তা হলে ধরে নেব পরস্পরকে ভাল করেই চিনত তারা,’ বলল লুদভিগ।

‘কখনও জোসেফের কথা বলেনি অ্যালেক, জানাল লিয়া, ‘তবে তার মানে এই নয় যে ওর সব বন্ধুকে আমি চিনতাম।’

‘ধরে নিলাম জরুরি কিছু জেনে যাওয়ায় খুন হয় অ্যালেক, কিন্তু সেক্ষেত্রে কেন খুন হলো জোসেফ?’ বলল রানা।

‘কারণ ওরা দু’জনই হয়তো ওই মন্দিরে সেই লোকের মৃত্যুটা দেখে ফেলে,’ বলল লিয়া।

মাথা নাড়ল রানা। ‘এটা পরিষ্কার, ওই ক্লিপ তুলেছে মাত্র একজন। একা ওখানে ছিল অ্যালেক। ওরা দলে দু’জন হলে তাদের কথা শুনতে পেতাম। বা অ্যালেক দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় জোসেফের ছবিও দেখতাম।’

‘হয়তো জরুরি কিছু জেনে যায় গ্রাফহসলার,’ বলল লিয়া, ‘তাকে হয়তো সব খুলে বলেছিল অ্যালেক। বা দেখিয়েছিল ভিডিয়ো ক্লিপ।’

‘হয়তো,’ বলল রানা। ‘তবে আমার মনে হয় না কাউকে ক্লিপ দেখাবার সময় পেয়েছে অ্যালেক। হয়তো ফোনে কথা বলে থাকতে পারে।’

‘বা একই সঙ্গে কোনও পরিকল্পনা করেছিল ওরা।’

লিয়ার কথাটা ভেবে দেখল রানা। ‘আমাদের আরও তথ্য দরকার। কথা বলতে চাই গ্রাফহসলার পরিবারের সঙ্গে।’

‘পুলিশকে যা বলেছে, তার বেশি কিছু জানাতে পারবে না,’ বলল লুদভিগ।

‘তবুও কথা বলব।’ কী যেন ভেবে নিয়ে একটু পর বলল রানা, ‘এরার অন্য প্রসঙ্গ: তোমার মেয়ে এমিলিকে কোথায় সরিয়ে দিয়েছ?’

মৃদু হাসল ডিটেকটিভ সার্জেন্ট। ‘তার মানে, পরস্পরকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছি আমরা, তাই না?’

‘নইলে তোমাকে এখানে আনতাম না,’ বলল রানা, ‘অনেক আগেই লাশ হয়ে যেতে গাড়ির ভেতর।’

‘ধন্যবাদ,’ তিক্ত হাসল লুদভিগ। ‘ঠিক আছে। এমিলি আছে একটা কনভেন্টে। ওটার মাদার সুপিরিয়র হচ্ছেন আমার পুরনো এক বান্ধবী।’

‘জায়গাটা কি খুব কাছে?’

‘না, এই দেশেই নয়,’ বলল লুদভিগ, ‘সীমান্ত পেরিয়ে যেতে হবে স্লোভেনিয়ায়। গাড়িতে করে যেতে লাগবে অন্তত পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা। জায়গাটা পাহাড়ে।’

‘নিরাপদ?’

‘নিঃসন্দেহে। কেউ জানে না ওখানে আছে আমার সেই বান্ধবী। এমন কী কলিগরাও জানে না জায়গাটার কথা।’

সরাসরি লুদভিগের চোখে তাকাল রানা। ‘ওখানে কি লিয়াকে রাখা যাবে?’

‘কী বললে?’ মুহূর্তে রেগে গেল লিয়া।

কোনও জবাব দিল না রানা।

কী যেন ভাবছে লুদভিগ। একটু পর মাথা দোলাল। ‘আমি তো কোনও সমস্যা দেখি না।’

‘গুড,’ বলল রানা। ঘুরে তাকাল লিয়ার দিকে। ‘এবার আরও বড় বিপদে পড়ছি। সব শেষ হওয়া পর্যন্ত নিরাপদ কোথাও তোমাকে রাখতে চাই।’

‘আগেও এসব নিয়ে কথা হয়েছে,’ তপ্ত স্বরে বলল লিয়া। ‘আমি কোথাও যাব না।’

কঠোর হলো রানার চোখের চাহনি। নিচু গলায় বলল, ‘তোমাকে বলেছি আয়ারল্যাণ্ডে যাও। তুমি গেলে না। এরপর তোমার কথা রাখতে গিয়ে কী ধরনের বিপদ হয়েছে, সেটা ভাল করেই তুমি জানো।’

‘আমাকে কোথাও সরিয়ে দেবে, তা হবে না, মাথা নাড়ল লিয়া। ‘আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব। নির্জন কোথাও দিনের পর দিন অপেক্ষা করব তোমার ফোনের জন্যে, সে আশার গুড়ে বালি।’

‘সেক্ষেত্রে জরুরি সিদ্ধান্ত নিতে হবে তোমাকে,’ বলল রানা, ‘হয় আমার মত করে শেষ করব গোটা ব্যাপারটা, নইলে বাদ দেব সবই। সেক্ষেত্রে তুমি আবারও ভাড়া করবে স্টেরয়েড ভরা আরেকদল বাঁদরকে। তবে তার ফলাফল ভাল না-ও হতে পারে।’

লুদভিগ বুঝে গেল, ভীষণ রেগে গেছে যুবক। তাতে কাজও হলো। মুখ নিচু করে নিল লিয়া। একটু পর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘আমি পাগল হয়ে যাব, রানা। সর্বক্ষণ দুশ্চিন্তা হবে তোমার জন্যে।’

‘কিন্তু তুমি থাকবে নিরাপদে,’ বলল রানা। ‘আর তুমি বিপদে না থাকলে মনোযোগ দিয়ে নিজের কাজ করতে পারব আমি।’

‘রানা ঠিকই বলেছে,’ সায় দিল লুদভিগ।

আবারও দীর্ঘশ্বাস ফেলল লিয়া। রানার দিকে তাকাল। ‘ঠিক আছে, তুমিই জিতলে।’

লুদভিগকে বলল রানা, ‘তা হলে জানিয়ে দাও কোন্ পথে ওই কনভেন্টে যাব।’

হাসল সার্জেন্ট। ‘আরও ভাল কিছু করব।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *