পনেরো
বার-কাউন্টারের পেছন-দেয়ালে সারি দেয়া বোতলের উপর চোখ বোলাল মাসুদ রানা। খদ্দের পেয়ে আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে এসেছে বারম্যান।
এক পাইন্ট শিভাস রিগাল হবে?’ ক্লান্ত স্বরে বলল রানা।
মাথা দুলিয়ে ঘুরে দাঁড়াল বারম্যান। একটু পর রানার সামনে রাখল সুন্দর সবুজ একটা বোতল। বিল মিটিয়ে বোতল হাতে আবারও দোতলায় ফিরল রানা। ঘরের দরজা খুলে দেখল এরই ভেতর জেগে গেছে লিয়া। কার সঙ্গে যেন কথা বলছে ফোনে। ঘুমের ওষুধের প্রভাবে চোখ খুলে রাখতে পারছে না। কাকে যেন ধন্যবাদ জানিয়ে গুডবাই বলে দামি স্মার্টফোন রাখল বালিশের পাশে।
‘কার ফোন?’ জানতে চাইল রানা। ‘পুলিশ।’
‘তুমি ফোন করেছিলে?’ চমকে গেলেও বিস্ময় গোপন করল রানা।
‘না, ওরাই ফোন করেছে।’
‘ওই একই লোক, হচিন্সটন হলে যে ফোন করেছিল?’ মৃদু মাথা দোলাল লিয়া।
‘কী জানতে চেয়েছে?’
‘কোথায় আছি। তবে, খুনের ব্যাপারে কিছুই বলিনি।’ আঙুল তুলে ল্যাপটপ দেখাল লিয়া। ‘এটাও জানে না, কী আছে ওর ভেতর।’
গম্ভীর রানা জানতে চাইল, ‘কতক্ষণ কথা বলেছ?’
‘বেশিক্ষণ নয়। দুই কি তিন মিনিট। …কেন?’
‘জিনিসপত্র গুছিয়ে নাও, লিয়া। এখান থেকে চলে যেতে হবে।’ ল্যাপটপ থেকে ডিস্ক ইজেক্ট করল রানা। ওটা কেস-এ পুরে রাখল নিজের প্যান্টের পকেটে। দ্রুত হাতে ল্যাপটপ ভরল চামড়ার ব্যাগে। ব্যাকপ্যাকে গেল মোয়ার্টের ফাইল। বাথরুম থেকে তোয়ালে এনে ভাল করে মুছল রুমে ওদের স্পর্শ করা জায়গাগুলো।
‘হঠাৎ কী হলো, রানা? এভাবে চলে যেতে হবে কেন?’
‘তোমার ফোনটা দাও।’
রানার হাতে স্মার্টফোন দিল লিয়া। ডিভাইসটা অফ করে নিজের পকেটে পুরল রানা। ‘প্রথম সুযোগে নির্জন কোথাও ফেলে দেব।’
‘কিন্তু ওই ফোন খুব দরকারি,’ আপত্তি তুলল লিয়া। ‘জরুরি সব ফোন নম্বর আছে কল লিস্টে!’
‘ওটা আর সঙ্গে রাখতে পারবে না, লিয়া,’ বলল রানা। ‘পরে তোমাকে সব বুঝিয়ে বলব।’
পাঁচ মিনিটের ভেতর লিয়াকে নিয়ে নিচতলায় নেমে এল রানা। কাউন্টারে নগদ টাকায় মিটিয়ে দিল বিল।
ওরা গাড়ির কাছে পৌঁছুতেই লিয়া জানতে চাইল, ‘কী হয়েছে, রানা? তুমি তো কিছুই বলছ না!’
লিয়া প্যাসেঞ্জার সিটে উঠতেই টিভিআর-এর ইঞ্জিন চালু করল রানা। পার্কিং লট ছেড়ে ঢুকল ড্রাইভওয়েতে। পাথর বিছানো পথে খড়মড় শব্দ তুলছে টুস্কানের চওড়া চার চাকা। দু’পাশে পাইন গাছের সারি। গেটের দিকে যাওয়ার আগে রিয়ার ভিউ মিররে চোখ রাখল রানা।
হোটেলের দ্বিতীয় গেট দিয়ে ঢুকছে কালো দুটো রেঞ্জ রোভার। লাইসেন্স প্লেট প্রাইভেট। দুই গাড়ির কাঁচগুলো টিন্টেড। ঝলমল করছে জ্বলন্ত হেডলাইট। কড়া ব্রেক কষে হোটেল ভবনের সামনে থামল। ঝট্ করে খুলে গেল আট দরজা। রিয়ার ভিউ মিরর ঠিক করে নিল রানা। গাড়িদুটো থেকে নেমেছে ছয়জন লোক। তাদের হাঁটার ভেতর আর্মির পেশাদারী ঋজু ভঙ্গি।
নিঃশব্দে চলে যেতে পারলে ভাল হতো, বুঝতে পারছে রানা। কিন্তু স্পোর্টস কারের ইঞ্জিন সবসময় অতিরিক্ত আওয়াজ তোলে। গর্জনটা শুনে টুস্কানের দিকে ঘুরে তাকাল লোকগুলো। একজন আঙুল তাক করল রানাদের দিকে। ঘুরে রেঞ্জ রোভারের দিকে ছুটল তারা।
‘গাড়িটা কার নামে রেজিস্ট্রি করা?’ জানতে চাইল রানা।
‘আমার নামে। তুমি কিন্তু এখনও বললে না…’
রানা অ্যাক্সেলারেটর মেঝেতে চেপে ধরতেই বিকট গর্জন ছাড়ল ইঞ্জিন। বনবন করে ঘুরল চার চাকা। সিটে সেঁটে গেল ওরা। তীরবেগে রাস্তায় বেরোল টুস্কান।
আবারও ওদেরকে খুঁজে নিয়েছে এরা, এটা কাকতালীয় ব্যাপার হতে পারে না। ইঞ্জিনের কর্কশ শব্দের ওপর দিয়ে বলল রানা, তোমার ফোন ট্র্যাক করে আবারও আমাদের কাছে পৌঁছে গেছে ওরা।’
ফ্যাকাসে হয়ে গেল লিয়ার মুখ। ‘কিন্তু এরা কারা? পুলিশ?’
‘হয়তো পুলিশ। অথবা অন্য কোনও দল। তাদের সঙ্গে লেনদেনের সম্পর্ক আছে পুলিশের। ফোন কোম্পানির গোপন তথ্য ওই দলের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে সে।’
‘কে সেই লোক?’ দুর্বল স্বরে বলল লিয়া।
জবাব দিল না রানা। এগিয়ে চলেছে ঝড়ের বেগে। এক শ’ গজ পেছনে দুই রেঞ্জ রোভার। নির্জন, নীরব গ্রাম্যপথ পেছনে ফেলে শহুরে পথে শত গাড়ির ভিড়ে সামিল হলো ওরা। কয়েকটা গাড়িকে পাশ কাটালেও সামনে থেকে আসছে একের পর এক দ্রুতগামী ট্রাক, লরি, প্রাইভেট কার। দু’সারি গাড়ির মাঝের সামান্য ফাঁক দিয়ে ওভারটেক করা কঠিন। একটা অক্সফোর্ড টিউব কোচ পেছনে ফেলে রিয়ার ভিউ মিররে চোখ রাখল রানা। ঝুঁকি নিয়ে ছুটছে দুই রেঞ্জ রোভারের ড্রাইভাররাও। দূরে হর্নের কর্কশ আওয়াজ।
দু’হাতে সিটের কিনারা খামচে ধরেছে লিয়া। ভীত কণ্ঠে বলল, ‘আমরা আসলে কোথায় চলেছি, রানা?’
‘একবার শহরে পৌঁছুলে হয়তো ওদেরকে খসিয়ে দিতে পারব,’ বলল রানা, ‘অক্সফোর্ড সিটি ভাল করেই চিনি।’
অক্সফোর্ডের পুবপ্রান্তে হেডিংটন হিলে পৌঁছুতে না পৌঁছুতেই পেছনে কালো দুই রেঞ্জ রোভার দেখতে পেল রানা। ওগুলো মাত্র দশ-বারোটা গাড়ির পেছনে। টিলা থেকে নামতেই লাল হলো সেইণ্ট ক্লেমেন্ট্স সড়কের ট্রাফিক বাতি।
‘ওই যে পুলিশ,’ তর্জনী তুলে ওদিকটা দেখাল লিয়া।
পুলিশের গাড়ি দেখেছে রানা। ‘এখন ওদের কাছ থেকে কোনও সাহায্য পাওয়া যাবে না।’ রাস্তার একদিক ঘিরে রেখেছে তারা। ওখানে অ্যাম্বুলেন্স। জায়গাটা শামুকের গতি তুলে পার হচ্ছে গাড়ির সারি। একের পর এক গাড়িকে ওভারটেক করছে দুই রেঞ্জ রোভার। পেছনে হর্নের বিশ্রী আওয়াজ।
রানার সামনে চারটে গাড়ি। কিন্তু হাত তুলে সেগুলোকে থামিয়ে দিল এক পুলিশ। দুর্ঘটনার এলাকা পাশ কাটিয়ে এবার আসবে বিপরীত দিকের গাড়ি। সিটে ঘুরে পেছনে তাকাল রানা। খুব কাছে পৌঁছে গেছে দুই রেঞ্জ রোভার। ‘ওরা আসছে,’ বিস্ফারিত চোখে রানাকে দেখল লিয়া কী করবে ভাবছে রানা।
এইমাত্র খুলে গেল দুই রেঞ্জ রোভারের প্যাসেঞ্জার ডোর। তিক্ত চেহারায় নেমেছে তিনজন লোক। হেঁটে আসছে দ্রুত। বড়জোর বিশ গজ দূরে টিভিআর গাড়িটা।
সামনে বেড়ে পথের ধারে টুস্কান রাখল রানা। ইগনিশন থেকে চাবি নিয়ে খুলল পাশের দরজা। ব্যাকপ্যাক তুলে নিয়ে অন্য হাতে ধরল লিয়ার কবজি।
‘নেমে পড়ো!’
গাড়ি থেকে নামল লিয়া। রুক্ষ পথে ছুটে চলল ওরা। পেছনে পড়ছে সারি দেয়া দোকানের কাঁচের জানালা। এক আহত সাইক্লিস্টকে স্ট্রেচারে তুলে অ্যাম্বুলেন্সে ভরছে মেডিকরা। নর্দমায় পড়ে আছে ভাঙা সাইকেল। ভিড়টাকে পাশ কাটিয়ে ছুটছে রানা ও লিয়া। পেছনে দৌড়াতে শুরু করেছে সেই তিন লোকও।
অ্যাক্সিডেন্ট দেখতে থেমে পড়া দর্শকদের ভিড়ভাট্টা পার হয়ে দোকানগুলোর পাশ দিয়ে দৌড়ে চলেছে রানা ও লিয়া। সামনেই প্লেইন-এর রাউণ্ডঅ্যাবাউট। রানার মনে পড়ল, ওটা মিশেছে ম্যাগডালেন সেতু আর হাই স্ট্রিটে। সে-পথে গেলে ওরা পৌঁছুবে শহরের যিরো পয়েন্টে।
পেছনে গাড়িগুলোর মাঝ দিয়ে ছুটে আসছে লোকগুলো। প্লেইন পেরোলেই বড় এক ওয়াইনের দোকান। এইমাত্র ওটার জানালার পাশে স্কুটার রেখে নেমেছে এক ছাত্র। সোজা ঢুকল ওয়াইন শপে। স্কুটারের সিটের পাশে ঝুলছে হেলমেট। ইগনিশনে রয়ে গেছে চাবি।
হ্যাঁচকা টানে হালকা মেশিনটা জানালার কাছ থেকে সরাল রানা। মুহূর্তে সিটে চেপে চালু করল ইঞ্জিন। পেছন- সিটে বসে পড়ল লিয়া। নিজের স্কুটারের ইঞ্জিনের আওয়াজ শুনে ঘুরে তাকাল ছাত্র। পরক্ষণে ছুটে বেরোল দোকান থেকে। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে: ‘চোর-চোর-চোর-চোর! আমার বাইক নিয়ে গেল!’
ততক্ষণে স্কুটার নিয়ে দশ গজ সরে গেছে রানা। পথ জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে ছাত্র, তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ছোটার গতি বাড়াল পেছনের সেই তিন অনুসরণকারী। পকেট থেকে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে কার সঙ্গে যেন কথা বলছে তাদের একজন।
সেইণ্ট ক্লেমেন্ট্স সড়কের গাড়িগুলোয় ধাক্কা-গুঁতো মেরে ছুটে এল দুই রেঞ্জ রোভার। ওদের টালমাটাল অবস্থা দেখে দোকানে ঢুকে আত্মরক্ষা করল পুলিশের লোক।
স্কুটারের থ্রটল মুচড়ে ধরেছে রানা। সেলাই মেশিনের মত খির-খির আওয়াজ তুলছে দুর্বল ইঞ্জিন। লাল-সবুজ রঙের বাস, হলদে ট্যাক্সি আর ব্যক্তিগত হরেক জাতের গাড়ির মাঝ দিয়ে ছুটছে রানা। পেছনে পড়ল প্লেইন। দেখতে না দেখতে ম্যাগডালেন সেতুতে উঠল স্কুটার। প্রাণপণে রানার কোমর জড়িয়ে ধরেছে লিয়া। দূরে পুলিশের গাড়ির সাইরেন। কাঁধের ওপর দিয়ে পেছনে দেখল রানা। ঝোড়ো বেগে আসছে রেঞ্জ রোভার। ওগুলোকে ধাওয়া করছে পুলিশের গাড়ি, মাথায় ঝিলমিল করছে নীল ভালো।
সামনে লাল বাতি জ্বলতেই থেমে গেছে গাড়ির সারি। পাশের ফুটপাথে লাফিয়ে উঠল স্কুটার। আবারও থ্রটল মুচড়ে ধরল রানা। দ্রুতগতি স্কুটার বেপরোয়াভাবে আসছে দেখে ছিটকে সরে যাচ্ছে পথচারীরা। কড়া চোখে দেখছে বেয়াক্কেলে যুবক-যুবতীকে। কেউ কেউ অকথ্য গালিও দিচ্ছে। ফুটপাথ ধরে এগিয়ে হাই স্ট্রিটের মাঝে পৌঁছে গেল চোরাই স্কুটার।
সামনেই খুলে গেল একটা দোকানের কাঁচের দরজা। প্যারাম্বুলেটার নিয়ে বেরোল নব্য এক মা। কম্বলে মুড়িয়ে রেখেছে ফুটফুটে সাদা বাচ্চাটাকে। অন্যদিকে চেয়ে আছে মা। ঘাড় ফিরিয়ে তুমুল বেগে স্কুটার আসতে দেখে ফ্যাকাসে হয়ে গেল বেচারির মুখ। বোয়াল মাছের মত মস্ত এক হাঁ করল—এখুনি বাজিয়ে দেবে সাইরেন।
কড়া ব্রেক কষতেই একসাথে পিছলে গেল দুই চাকা। পা নামিয়ে ভারসাম্য রাখতে চাইল রানা। কিন্তু ওদের তলা থেকে সরে গেল স্কুটার। ফুটপাথে বেকায়দাভাবে পড়ল রানা ও লিয়া। ফুটপাথ থেকে নেমে কাত হয়ে ছ্যার ছ্যার আওয়াজে বড় এক ডাবল ডেকার বাসের নিচে নাক গুঁজল স্কুটার। ব্রেক কষে থামল বাস। বিশ্রী আওয়াজে চাকার নিচে চুরমার হয়েছে স্কুটারের প্লাস্টিক বডি।
ধড়মড় করে উঠে দাঁড়িয়ে কাঁধে ব্যাকপ্যাক ঝুলিয়ে নিল রানা। অন্যহাতে টেনে তুলল লিয়াকে। বেচারির হাঁটুর কাছে ছিঁড়ে গেছে জিন্সের প্যান্ট। বিপরীতমুখী দুই সারি গাড়ির মাঝ দিয়ে হর্ন বাজিয়ে তেড়ে এল দুই রেঞ্জ রোভার। রানা ও লিয়ার কাছ থেকে ওগুলো আছে বড়জোর পঁচিশ গজ দূরে।
হাত ধরে দিয়াকে নিয়ে ঝেড়ে দৌড় দিল রানা। হাই স্ট্রিট শেষ হলে সামনেই কয়েকটা লোহার বোলার্ড। ওগুলোর জন্যে ওদিকে যেতে পারবে না কোনও গাড়ি। সামনে কোবল পাথরে ছাওয়া লেন। ওটা পেছনে ফেলে র্যাডক্লিফ ক্যামেরা ও হার্টফোর্ড কলেজ পেরোল রানা ও লিয়া।
বোলার্ডগুলোর সামনে থামল দুই রেঞ্জ রোভার। গাড়ি থেকে নামল ছয়জন লোক। দেরি না করে ধাওয়া করল রানা ও লিয়াকে।
কাছে পৌঁছে গেছে পুলিশের সাইরেন।
লিয়াকে নিয়ে ছুটতে ছুটতে গ্র্যাণ্ড বডলিয়ান লাইব্রেরির পাশ কাটিয়ে ব্রড স্ট্রিটে পৌছুল রানা। সামনেই বিখ্যাত শেলডোনিয়ান থিয়েটার। প্রতিদিন এখানে হয় ক্লাসিক কনসার্ট। টিকেটের জন্যে কাউন্টারের সামনে ভিড় করেছে একদল সঙ্গীতভক্ত। তাদেরকে পাশ কাটাল ওরা। তবে লিয়াকে চিনতে পেরে ঝলমল করে উঠল এক মেয়ের মুখ। কনুই দিয়ে গুঁতো দিল বন্ধুর কোমরে। ‘ওই দেখো! স্বয়ং এমিলিয়া বেকার!’
কথাটা চেঁচিয়ে বলেছে মেয়েটা।
মুহূর্তে শতখানেক মানুষের জটলার মাঝে আটকা পড়ল রানা ও লিয়া। শ্রোতাদের মুখে আন্তরিক হাসি। সবার চাই অটোগ্রাফ। কারও খেয়াল নেই ভয়ে শুকিয়ে গেছে গায়িকার মুখ। পরনের জিন্সের প্যান্ট হাঁটুর কাছে ছেঁড়া। চারপাশে ঝলসে উঠছে মোবাইল ক্যামেরার ফ্ল্যাশের উজ্জ্বল সাদা আলো।
বহু দূর ছুটে হাঁফাতে হাঁফাতে ভিড়ের ওদিকে দুই টার্গেটকে খুঁজছে সেই ছয় কিডন্যাপার। রাস্তার কোনা ঘুরে পুলিশের গাড়ি পৌঁছে যেতেই আলাদা হয়ে গেল তারা। রাস্তা পার হয়ে ব্ল্যাক-ওয়েল বইয়ের দোকানের জানালায় থেমে বই দেখার ভান করল তাদের দু’জন। দু’জন গিয়ে উঠল গ্র্যাণ্ড বডলিয়ান লাইব্রেরির উঁচু সিঁড়িতে। রাস্তার মোড়ে আলাপের ভঙ্গি করছে দলের শেষ দু’জন। পাশ কাটিয়ে পুলিশের গাড়ি চলে যেতেই আবারও চারপাশে তাকাল তারা।
লিয়ার হাত ধরে ভিড় ঠেলে বেরোল রানা। ধীরগতি এক পুলিশের গাড়ির দিকে চলেছে। একবার ঘুরে পেছনে তাকাল রানা। আবারও জড় হয়েছে ছয় কিডন্যাপার। দ্রুত হেঁটে আসছে ওদের দিকে।
ব্রড স্ট্রিট ও কর্ন মার্কেটের বাঁক ঘুরে ভিড়ের ভেতর পড়ল রানা ও লিয়া। সামনে ক্রিসমাস, কেনাকাটার হুলস্থুল চলছে কাস্টোমারদের ভেতর। খুব ব্যস্ত দোকানিরা। একটু দূরে ট্যাক্সি র্যাঙ্ক দেখে লিয়ার হাত ধরে ওদিকে চলল রানা।
একমিনিট পেরোবার আগেই ট্যাক্সিতে চাপল ওরা। পেছন জানালা দিয়ে রানা দেখল, খুব রেগে গেছে ছয় জোয়ান। তখনই ঝাঁকি দিয়ে রওনা হলো ওদের ট্যাক্সি। একটু পর হবু কিডন্যাপারদের আর দেখতে পেল না ওরা।